:-না,আমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে পারবো না।(আমি)
:-কেন?(আম্মু)
:-মেয়েটাকে না দেখে আমি কি করে বিয়ে করবো?আমার ও তো পছন্দের ব্যাপার-স্যাপার আছে নাকি?
:-হুমম,তা আছে।কিন্তু মেয়েটি কোন পুরুষের সাথে দেখা করতে পারবে না,সেটা ও বলে দিয়েছে।আর মেয়েটাকে তো আমি দেখেছি।ও কে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।তোর সাথে ওকে খুব মানাবে।
:-কিন্তু আম্মু,মেয়েটির সাথে আমি কি করে চলবো,বলো?মেয়েটি এখনো আদি যুগে পড়ে আছে।মেয়েটার মাঝে আমি আধুনিকতার কোন কিছুই দেখতেছি না।
:-তোর কিছুই দেখা লাগবে না।আমি বলছি,তোর সাথে ঐ মেয়েটারই বিয়ে হবে।
রুমে প্রবেশ করেই কথাটা বললো,আব্বু।
:-কিন্তু আব্বু,
:-কোন কিন্তু নয়,যেখানে তোর আম্মু মেয়েটাকে দেখে পছন্দ করেছে,সেখানে তো তোর কোন কথাই থাকতে পারে না।আচ্ছা,তোর আম্মুর উপর কি তোর বিস্বাস নেই?
আমাকে থামিয়ে কথাটা বললো আব্বু।
:-আব্বু,তুমি কি যে বলো না?আম্মুর উপর আমার অগাধ বিস্বাস আছে।আর আমি তো সারাজীবন তোমাদের বিস্বাসের উপর চলে এই পর্যন্ত এসেছি।
:-তাহলে আর কি?এই বিস্বাসটাও রাখ যে,তোর আম্মু,তোর ভালোর জন্যই মেয়েটাকে পছন্দ করেছে।
:-আচ্চা,আব্বু-আম্মু,তোমরা যেটা ভালো মনে করো সেটাই করো।
:-বাবা,তুই কি আমাদের উপর অসন্তোষ হয়ে কথাটা বলেছিস?(আম্মু)
:-আম্মু,তুমি কি যে বলো না?আমি কেন,তোমাদের উপর অসন্তোষ হবো,বলো?
:-আমি জানি,আমার ছেলে কখনো আমাদের উপর অসন্তোষ হবে না।
এই বলে আব্বু আমার কাঁধে হাত রাখলো।
:-আচ্ছা,তাহলে আর কি?আমরা আগামীকাল মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে তোদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে আসবো।(আম্মু)
:-…….(আমি)
জবাবে আমি কিছু না বলে চুপ থাকলাম।
অতঃপর আম্মু আর আব্বু আমার রুম রুম থেকে বাহির হয়ে গেলো।
মাথায় কিছুই নিতে পারছি না।
তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
কি আর বলবো?আপনাদের।
এমন একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,হয়েছে বলতে কি?আমার আম্মু-আব্বু আমি শহরে থাকা অবস্থায় মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে সবঠিক করে এসেছে।এতদিন শুধু আমার আসার অপেক্ষায় ছিলো।
তো যাইহোক,যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,সে মেয়ের ব্যাপারে আমি আম্মুর কাছ থেকে জানতে চাইলে,আম্মু বলে মেয়েটা নাকি সবদিক দিয়ে পর্দাশীল।মেয়েটা সহজে কারো সাথে নাকি দেখা করেনা।আর করতে চায় ও না।আর আমি রাজি থাকলে নাকি শীঘ্রই আমার সাথে ওর বিয়ে হবে।এরপরে উপরের এই কথাটুকুই হয়।”
আমার মনে হয় আপনাদের সাথে আমার পরিচিত হওয়া দরকার।
তাহলে শুনুন,
আমি মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাজু
মা-বাবার একমাত্র সন্তান।
পড়া-লেখা সম্পুর্ণ শেষ করতে পারি নাই।
তারপরেও আব্বুর চেষ্টায় একটা সরকারি চাকরি পেয়ে যাই।
আর সেই চাকরী সুত্রে আমি শহরে আর আব্বু-আম্মু গ্রামে থাকে।
আপাদতে পরিচয় পর্ব এইটুকুই থাক।
ওহ হো,আপনাদের তো আমি বলতেই ভুলে গেছি,
আসলে আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে,তার নাম হলো,জান্নাতুল মাওয়া।সে আমাদের পাশের গ্রামে থাকে।
যাইহোক,আমি আর শুয়ে না বিছানা ছেড়ে উঠে রাতের ডিনার শেষ করে আবার রুমে এসে শুয়ে পড়ি।
পরদিন সকালে,
:-রাজু,নাস্তা সেরে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
টেবিলে বসে নাস্তা করতেছি।
তখনই আব্বু কথাটা বললো।
:-কেন?আব্বু।(আমি)
:-কেন আবার?আমরা এখন ওদের(জান্নাতদের)বাড়ির উর্দেশ্যয় বাহির হবো।(আব্বু)
:-ও,তা আমার কাছে কিই?
:-তোর কাছে কি মানে?তুই না গেলে কেমনে হবে?বল।
:-আচ্চা,ঠিক আছে।তোমরাও রেডি হয়ে নাও।
অতঃপর নাস্তা সেরে,আমি রেডি হয়ে নিলাম।
এরপর আমি,আব্বু আর আম্মু মিলে রওয়ানা দিলাম জান্নাতদের বাসার উর্দেশ্য।
অবশেষে আর কি?
জান্নাতদের বাড়িতে গিয়ে,আমার আর জান্নাতের বিয়ের তারিখ ঠিক করে আব্বু-আম্মুসহ আমরা বাড়িতে চলে আসলাম।
আগামী পরশু আমার আর জান্নাতের বিয়ে।
সত্যি বলতে কি?জান্নাতদের বাড়ির পরিবেশ দেখে,আমার মনটা শীতল হাওয়ায় ভরে গেলো।যেন আমি জান্নাতেই প্রবেশ করেছিলাম।
সকলের আচার-ব্যবহারে আমি মুগ্ধই হয়ে গিয়েছিলাম।
:-কিরে রাজু,কেমন লাগলো জান্নাতদের বাড়িতে গিয়ে?
বিছানায় শুয়ে শুয়ে জান্নাতদের পরিবারের কথা ভাবছিলাম।তখন আম্মু রুমে প্রবেশ করেই কথাটা বললো।
:-আম্মু,আমার খুব ভালোই লাগলো।তোমার কেমন লেগেছে?
সোজা হয়ে উঠে বসতে বসতে বললাম আমি।
:-আমার ও খুব ভালো লেগেছে।এখন খেতে চল।
:-হুমম,চলো।
অতঃপর দুপুরের খাবার খেতে টেবিলের দিকে গেলাম,আমি।
কেটে যেতে লাগলো সময়।
অবশেষে আর কি?
অপেক্ষার প্রহর শেষ করে উপস্থিত হলো,আমার বিয়ের দিনটা।
হুমম,আজকে আমার বিয়ে।
সাধারণত,ছোট-খাটো অনুষ্টান আয়োজনের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো আমার আর জান্নাতের বিয়ে।
কিছুক্ষন আগে আমি বউ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছালাম।
বিভিন্ন নিয়ম-কানুন পালনের মাধ্যমে আম্মু বউ কে ঘরে তুললেন।
রাত এখন সাড়ে দশটা বাজতে চলেছে।
আমি এখনো বারান্দায় দাড়িয়ে আছি।
:-কিরে,বারান্দায় দাড়িয়ে আছিস কেন?(আম্মু)
:-না মানে এমনি,ভালো লাগছে না।তাই।(আমি)
:-ও,এখন যা রুমে যা।
:-হুমম,যাচ্ছি।
অতঃপর আম্মু আমার সামনে থেকে চলে গেলে আমি আর বাহিরে দাড়িয়ে থাকলাম না।
রুমের দিকে গেলাম।
মাথাটা ভীষন ব্যথা করছে।
তাই রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলাম।
জান্নাতের দিকে তাকালাম।
দেখি ও নামাজ পড়ছে।
সত্যি বলতে কি?
জান্নাতকে আমি যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।
:-আসসালামু-আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে জান্নাতের কথা ভাবতেছি।তখনই সুমধুর কন্ঠে সালামটা আমার কানে ভেসে এলো।
সালামের জবাব দিয়ে আমি মাথা তুলে জান্নাতের দিকে তাকালাম।
:-আপনি অমন করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন কেন?(জান্নাত)
আমি কিছু না বলে একফলকে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছি।ওর মুখে মুখোস পরা।আমি এই প্রথম জান্নাতের কন্ঠস্বর শুনেছি।
মেয়েটার কন্ঠস্বর শুনে আশ্চার্য হয়ে গেলাম।
কারও কন্ঠস্বর যে এতটা মধুর হয় সেটা আমার জানা ছিলো না।
:-আসলে মাথাটা একটু ব্যথা করছে।(আমি)
:-তাহলে এখানে বসে আছেন কেন?চলুন,বিছানার দিকে।
এই বলে জান্নাত আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো বিছানার দিকে।
:-আপনি সোজা হয়ে শুয়ে থাকেন।আমি আপনার মাথাটা টিপে দিতেছি।(জান্নাত)
:-কিন্তু,
:-আপনি চুপচাপ শুয়ে থাকেন তো।
আমাকে থামিয়ে কথাটা বললো,জান্নাত।
আমিও আর কিছু না বলে,চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।
অমনি,জান্নাত আমার পাশে বসে আমার অনিচ্ছা সত্বেও আমার মাথা টিপে দিতে লাগলো।
আমিও চোখ বুঁজে জান্নাতের হাতের পরম স্পর্শ উপভোগ করতে লাগলাম।
:-কেমন বোধ করছেন?
মাথা টিপতে টিপতে বললো,জান্নাত।
:-ভালো।(আমি)
:-আলহামদুলিল্লাহ,
আশ্চর্য ব্যাপার হলেও সত্যি যে,জান্নাতের হাতের স্পর্শ পেয়ে আমার মাথা ব্যথাটা উধাও।
:-আপনি এমন কেন?
সোজা হয়ে উঠে বসতে বসতে বললাম,আমি।
:-কেমন?
:-আপনি এখনও যে পর্দা মেনে চলেন।
:-আসতাগফিরুল্লাহ,পর্দা হলো নারীদের জীবনের একটা অন্যতম অংশ।
:-যেমন?
:-আচ্ছা,আমি তো এখন থেকে আপনার স্ত্রী।তাইনা?
:-হুমম।
:-আমি যদি পর্দা ছাড়া আপনার সাথে কোথাও যাওয়ার জন্য বাহির হই,সকলে আমার দিকে তাকাবে না আপনার দিকে?
:-অবশ্যই,আপনার দিকে।
কিছুসময় ভেবে নিয়ে বললাম,আমি।
:-সেটা কি আপনার ভালো লাগবে?
:-অবশ্যই,না।
:-তেমনি আমারও।আমি চাই না যে,কেউ অপর্দাশীল অবস্থায় আমাকে দেখে,আমার স্বামীর হক নষ্ট করে।তাই আমি পর্দা করে চলি।
:-……….(আমি)
আমি কিছু না বলে চুপ থাকলাম।
:-আচ্ছা,আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছেন?(জান্নাত)
:-মানে?(অবাক হয়ে)
:-মানে হলো,আপনি যদি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে থাকেন।তাহলে আমি কিছু বলতাম।
:-আপনি আমার স্ত্রী।এখানে মানা না মানার কিছু নেই।
:-তারপরেও..
:-বলুন,
:-তাহলে শুনুন,আমি আপনার স্ত্রী।আজ থেকে আমার সবকিছুর দায়িত্ব আপনার।আপনি আমাকে যেভাবে রাখবেন,আমি সেভাবেই থাকবো।
:-হুমম,
:-আমি আপনার মা-বাবাকে আমার মা-বাবার মত সম্মান,শ্রদ্ধা ও সেবা করবো।বলতে পারেন,আপনার মা-বাবা হলেন আজকে থেকে আমার মা-বাবা।
:-………(আমি)
:-আমি এই সংসারটা পরিপুর্নভাবে সাজিয়ে তুলার চেষ্টা করবো।শুধু আপনাকে আমার পাশে থাকতে হবে।
:-………(আমি)
:-আর আপনাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত আদায় করতে হবে।কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা আমাদের জীবনটাকে সাজিয়ে তুলবো।
:-………(আমি)
আমি কিছু না বলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে ওর কথা গুলো,শুনতেছি।যে কথাগুলো আমার বলার কথা সেই কথাগুলো এখন জান্নাতই আমাকে বলে দিতেছে।
:-আপনার কাছে আমার একটাই চাওয়া আছে(জান্নাত)
:-কি?
:-বেশি কিছু না।সেটা হলো,আমাদের জীবনে যত দুঃখ কষ্টই আসুক না কেন,আপনি কিন্তু আমাকে আপনার পবিত্র ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করবেন না।
:-হুমম,আমি আমার সব ভালোবাসা দিয়ে,আপনাকে আগলে রাখবো।
:-……..(জান্নাত)
জান্নাত কিছু না বলে মাথানিছু করে ফেললো।
:-আপনি চেন্জ করে আসেন।(আমি)
:-হুমম।
এই বলে জান্নাত চেন্জ করতে গেলো।
এমন একজন মেয়েকে জীবনসংগী হিসেবে পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া,
তিনি আমাকে এমন একটা মেয়েকে আমার স্ত্রী হিসেবে দেওয়ার জন্য।
আর সেই সংগে আম্মুকেও ধন্যবাদ জানাই।
এমন একটা মেয়েকে আমার জীবনের সাথে জুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
:-কি ভাবতেছেন?
ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে কথাটা বললো,জান্নাত।
:-হুমম,
এই বলে আমি মাথা তুলে জান্নাতের দিকে তাকালাম।
:-একি,আপনি আমার দিকে অমনভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
আমাকে হালকা একটা ঝাঁকি দিয়ে বললো জান্নাত।
:-কি হলো?
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম।
:-কি আবার হবে?আমার দিকে আপনি এভাবে তাকিয়ে ছিলেন তো তাই।
:-ওহহ,
এই বলে আমি মাথানিছু করে ফেললাম।
সত্যি বলতে কি?
জান্নাত চেন্জ করে মুখোসহীন আমার সামনে আসলে আমি ওর দিকে তাকালাম।
আর ওর দিকে তাকিয়েই তো আমি মুগ্ধ হয়ে যাই ওর সৌন্দর্যে।ওর দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকায় ও আমাকে এসব কথা বললো।
:-জানেন,আল্লাহ তায়ালা আমাকে যে সৌন্দর্যতা দান করেছেন,সেই সৌন্দর্যতা কয়েকজন মহিলা এবং আমার আম্মু-আব্বু,চাচা এবং দাদা ছাড়া আর কেউই দেখে নাই।এখন শুধু আপনি দেখেছেন।(এক নাগাড়ে কথা গুলো বললো,জান্নাত)
:-…….(আমি)
আমি কিছু না বলে চুপ থাকলাম।
:-আর এখন আমি,সেই সৌন্দর্যতা আপনার কাছে সপে দিলাম।
এই বলে জান্নাত আমার পাশে এসে বসলো।
জান্নাতের কাধে আমি হাত রাখলাম।
:-জানেন,আমি আপনার প্রতিটা কথা-বার্তায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।আমি কথা দিলাম,আপনার জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে আপনি আমাকে আপনার পাশে পাবেন।যদি আল্লাহ তায়ালা,আমাকে সেই সৌভাগ্যতা দান করেন।
:-হুমম,
এই বলে জান্নাত আমার বুকে মাথা রাখলো।
আমিও ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে,ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
………………………………………..সমাপ্ত……………………………………….