“লাভ-গুরুর প্রেম “

“লাভ-গুরুর প্রেম “

“দোস্ত এই যে মেয়েটা দেখছস। এটা তোদের ভাবি হয় ভাবি। আজ থেকে চোখে চোখে রাখবি। আর সম্মান দিয়ে কথা বলবি।”
এ ধরনের মন্তব্য প্রতিটি বন্ধু মহলের আড্ডায় প্রায় হয়ে থাকে। আর আমাদের আড্ডার সাথী “লাভ গুরু” তো আছেই। তার মুখে তো কোন কথাই আটকায় না। রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে তাকে নিয়ে কমেন্ট না করলে মনে হয় তার শান্তি হয় না। অবশ্য আমরাও যে ধোঁয়া তুলসি পাতা তা নই। আমরা প্রায় সময় গুরুর সাথে তাল মিলিয়ে মন্তব্য করি।
তবে হ্যাঁ,
আমাদের বড় গুন হলো। কোন মেয়েকে নিয়ে যাই মন্তব্য করবো তা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। মেয়েটির কান পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ নেই।
কিন্তু আজ আমাদের ভাবি (মেয়েটি) গুরুর সামনে এসে হাজির। মনে হয় গুরুর ভলিউম একটু বেশি ছিলো। যার কারনে মেয়েটি গুরুর মিষ্টি মধুর কথাটি শুনতে পায়। গুরুকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি….
মেয়ে_তো চলেন তাহলে!!
[গুরুর চোখ তো কপালে উঠে গেলো।]
গুরু_আপনি কে?! আর কোথায় যাবো?!

মেয়ে_কেনো একটু আগে বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর এখন আমাকেই ভুলে গেলেন?! এখন আমরা কাজী অফিসে যাবো। সম্পর্কটা তো বাস্তব করতে হবে।
গুরু_নাহ, মানে, সরি, আসলে একটু মজা করছিলাম।
মেয়ে_আমি কিছুই বুজিনা। এখন আপনি আমার সাথে কাজী অফিস যাবেন। এটাই ফাইনাল!!
গুরু হাত পা একটু একটু কাঁপতেছে। আজ কোন বিপদেই না পড়লো আল্লাহ্‌ ভালো জানে।
“গুরু যখন ক্লাস নাইনে তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে একটা মেয়েকে প্রপোজ করে। জবাবে মেয়েটি গুরুকে জুতা তুলে সম্বর্ধনা দিলো। অবশ্য গাল পর্যন্ত যায়নি। যাই হোক পিচ্ছি মেয়ে প্রেমের আর কি বুজে। গুরু নিজের সম্মান নিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করে।
গুরু যখন ইন্টার প্রথম বর্ষে তখন ক্লাস নাইনে পড়ুয়া মেয়েকে প্রপোজ করে। মেয়েটির জবাবে গুরু কিঞ্চিত আহত হয়। মেয়েটি বলে “তার নাকি সীট খালি নেই”
গুরু যখন অর্নাস প্রথম বর্ষে। তখন ইন্টার পড়ুয়া একটি মেয়েকে প্রপোজ করে। কপালে না থাকলে যা হয়। মেয়েটির নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তার কোন এক রিলেটিভেরর সাথে।
শেষ মেষ গুরু কঠিন সিদ্ধান্তে আসলো। আর নয় প্রপোজ করা আর নয় প্রেম। এখন থেকে অপরিচিত সব মেয়েই গুরুর ইয়ে “মানে বৌ” বলে ঘোষিত। আর আমরা পেলাম সরকারি অনেক গুলো ভাবি।”
যাই হোক,

আজকে আমাদের ভাবি (মেয়েটি) গুরুর চাকা যে পাঞ্চার করবে কে জানতো। গুরু অসহায়ের মতো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। আর মেয়েটিও গুরুর সামনে দজ্জাল বৌ এর মতো দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে গুরু বড় কোন আকাম করে বৌয়ের কাছে ধরা খাইছে এমনটা।
একটু পর মেয়েটি…….
মেয়ে_আপনাকে সবাই “লাভ গুরু” নামে ডাকে কেন?! কয়টা প্রেম করছেন?!
[গুরু তো এখন পুরাই শেষ। মেয়েটির কথায় আমরাও অবাক হই। গুরুকে “লাভ গুরু” নামে জানে এই মেয়ে জানলো কেমনে?! তাহলে মেয়েটি গুরুকে আগে থেকেই চিনে হয়তো।]
গুরু_আমাকে লাভ গুরু নামে ডাকে। আপনি কিভাবে জানেন?! কে আপনি?!

মেয়ে_আগে আমার কথার উত্তর দেন। প্রেম কয়টা করছে?! কয়জন মেয়ের জীবন নষ্ট করছেন।
গুরু_একটাও না। আর মেয়েদের জীবন নষ্ট করতে যাবো কেন?! কে আপনি?!
মেয়ে_আমি কে তা সময় হলে জানবেন। এখন যাচ্ছি, আর আশা করি এভাবে রাস্তায় মেয়েদের বৌ বলে পরিচয় করাবেন না। থাপ্পর খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এ কথা বলেই মেয়েটি হাঁটা শুরু করলো। আর আমরা সবাই হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছি। গুরু তো মনে হয় অন্য কোন জগতে চলে গেছে।
আজকের মতো সবাই আড্ডার সমাপ্ত ঘোষনা করলাম। কিন্তু সবার মাথায় একটি প্রশ্ন। কে এই মেয়ে?! কোন ভাবেই হিসেব মিলাতে পারছি না। কে হতে পারে এই মেয়ে। আমাদের কারো পরিচিত বলেও মনে হয় না।
আর গুরুর তো রিতিমত জ্ঞান হারানোর অবস্থা। এটা খুশিতে নাকি ভয়ে তা আমরা এখনো বুজতে পারছি না।
যাই হোক,
রাতে মেয়েটির কথা মাথা থেকে ঝেড়ে পেলে দিয়ে “আসরে” (বুজে নিয়েন) বসলাম। এক পর্যায় গুরু তার প্রেম সংক্রান্ত কথা আমাদের বলতে শুরু করলো।

জানিস,
আমি চাইলেই প্রেম করতে পারি। কিন্তু এখন আর প্রেমটেম করার মুড নাই। তবে আজকের মেয়েটাকে দেখার পর সিদ্ধান্ত আবার চেঞ্জ করলাম। মেয়েটাকে অনেক ভালো লাগছে রে। আবার যদি দেখা হয় মিস করবো না। কি বলিস তোরা?! আর আমার মনে হয় মেয়েটি আমাকে ভালো করেই জানে। তাই আজ এমন করছে।
[আমরা হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছি। এইতো কিছুদিন আগে গুরু প্রতিজ্ঞা করলো আর প্রেমের নামও নিবে না। আর আজ আবার কি বলে এসব।]
গুরু প্রেমেরর শেষ পরিনতি তো আগে থেকেই জানা আছে। বাট আজকের কাহিনিটা একটু ভিন্ন। তাই আমরাও মেয়েটা ভাবি হবে এই আশা বাঁধতে শুরু করলাম। গুরু তো সেই রুমান্টিক মুডে আছে। যা বলে বুজানো সম্ভব না।

একটু পরেই গুরুর মোবাইলে “এক লারকি কো দেখা যো এছা লাগা” গানটা বাজতে লাগলো। গুরু মোবাইলটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। প্রায় ১৫ মিনিট কার সাথে কথা বলার পর রুমে আসলো। দেখেই বুজা যাচ্ছে গুরুর মনটা ভিষন খারাপ। কি হইছে জানতে চাইলে গুরু বলে………
গুরু_দোস্ত, আজকে যে মেয়েটা দেখছস ঐটা মেয়ে না। ঐটা আমার ভাবি।
আমি_ঐ শালা, মেয়েটা তো আমাদের ভাবি। তোর ভাবি হবে কেন?!
গুরু_ঐটা আমারো ভাবি।
আমি_কাহিনি কি খুলে বল তো!!
গুরু_দুইমাস আগে আমার মামাতো ভাই বিয়ে করছে তা তো জানস। আমি যে রাগ করে বিয়েতে যাইনি।
আমি_হুম, তা উনার বাসা তো অনেক দূর। আর মেয়েটা কি….?!
গুরু_মেয়েটা মামাতো ভাইয়ের বৌ। এখানে খালার বাসায় বেড়াতে আসছে। আমাকে নাকি ছবিতে দেখছে। আর আজ রাস্তায় কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়। উনি আমাকে চিনতে পেরেই এমন মজা করছে।
গুরুর কথা গুলো শুনে হাসবো না কাঁদবো বুজতে পারছি না। হয়েও হলো না গুরুর প্রেম। এমনি করে, প্রেম না করেই আর কত চ্যাকা খাবে গুরু?!

গুরুর ব্যথায় ব্যতীত আমরা। এখন গুরুর হাতে গীটার। আর গীটারেরর টুংটাং শব্দে আমরা গাইতে আছি
বিয়া হইছে তাতে কি
চ্যাকা না হয় খেয়েছি
খুঁজে নেবো নতুন সুন্দরী
বি. দ্র:- মজা করে গুরুকে নিয়ে আবারো লেখলাম। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত