লাজুক বর

লাজুক বর

— কি হলো ছেলে মানুষের সামান্য গোসল করতে এত সময় লাগে?(আমি)
–……
— কই কিছু বলছ না কেন? আমিও তো গোসল করব নাকি!
— আপনি দরজার কাছে থাকবেন না, অন্য ঘরে চলে যান তাহলেই বের হবো। (জামাই মশাই)
— অ্যা……. আমি এখানে থাকলে কি অসুবিধা? তাড়াতাড়ি বের হও তো।
— অসুবিধা আছে।
–কি অসুবিধা ( কিছুটা অবাক হলাম?)
–এমনি।
— এমনি না বলো কি অসুবিধা!
— আসলে আমি গেঞ্জি নিয়ে wash room এ ঢুকি নাই।
— তো….!
— আমি খালি গায়ে বের হতে পারব না।
— কিহ্….!
( পাঠক আপনারাই বলেন হাসব না কাঁদব, উনি নিজের বউ এর সামনে খালি গয়ে আসতে নারাজ। আজ ধরে আমাদের বিয়ের ১৫ দিন হলো,কিন্তু উনি সবসময় আমার কাছ থেকে পালায় পালায় বেড়ায়। এতটাই লাজুক তিনি। ও হ্যা আমার আর আমার লাজুক জামাইয়ের পরিচয়টা দিয়ে দেই, আমি মেঘলা রহমান আঁখি। আমার লাজুক জামাই এর পরিচয় দিতে হবে? আচ্ছা দিয়েই দিই, এমন জামাই লাখে একটাও মিলবে কি না সন্ধেয়। এতক্ষন যে wash room এর ভিরত থেকে কথা বলতেছিল উনার নাম রাজিবুল হক রাহাত, উনিই আমার লাজুক জামাই)
— আচ্ছা আমি তোমার গেঞ্জিটা এনে দেই? (আমি)
— না না না আমি দরজা খুলতে পারব না (জামাই মশাই)
— আচ্ছা আমি তাহলে রুম থেকে চলে যাচ্ছি।
— শোনেন শোনেন..
— কি বলো..
— রুম থেকে বের হওয়ার সময় বেডরুমের দরজাটা শব্দ করে লাগিয়ে দিবেন, যেন আমি শব্দ শুনে নিশ্চিত হতে পারি আপনি বের হয়ে গেছেন।
— ওকে…
( হা হা কি আর করার বের হতেই হলো, যে পরিমান লাজুক উনি। জানেন সেই বাসর রাত থেকে উনার মুখ থেকে তুমি শব্দটা শোনার চেষ্টা করতেছি কিন্তু এখন অব্দি পারি নাই। বাসর রাতে যা যা কান্ড করেছেন উনি… হা হা থাক সেটা না হয় আর একদিন বলব। বিয়ের আগে যেদিন আমাকে উনি ও উনার পরিবার সহ আমাকে দেখতে এসেছিল, সে দিনেই তাকে দেখে তাঁর উপর ক্রাশ খাইসি, দেখে চোখ সরাতে পারতেছিলাম না কিন্তু উনি একবারের জন্য চোখ তুলে আমার দিকে তাকায় নি সারাক্ষন ফ্লোরের দিকে তাকায় ছিল, ইস কত ভাব। সেদিনই ভেবেছিলাম জীবনে প্রেম না করে ভালোই করেছি, এত সুন্দর শান্ত স্বভাবের একটা জামাই পাব তাই সেদিন থেকে রিয়ে পর্যন্ত ভালো মতো রাতে ঘুমাতে পারি নাই । তবে কে জানত যে উনি এত্তটা লাজুক প্রকৃতির! সামনাসামনি কথা বলার সাহস তার নাই,আড়াল থেকে যেমন কথা বলতে পারে আর সামনে আছলে শুধু মাথা নড়িয়ে হ্যা না উত্তর দেয়)
— কি হলো, কি খুজছ? (আমি)
— কিছু না (জামাই)
— কিছু না বললেই হলো তখন থেকে দেখতেছি কি যেন খুজছ..!কি টাই খুজে পাচ্ছ না? (একটু কড়া করে বললাম)
— হুম
— আমাকে বললেই তো হতো।
— হুম( মাথা নড়িয়ে)
— কি হুম হুম করতেছ হ্যা, এই আমার দিকে ঘুরো..
— কেন?
— ঘুরো বলতেছি (রাগীকন্ঠে)
–হুম
— এই তো লক্ষি ছেলে, ( উনি ঘুরেছেন আমার দিকে, একটু রাগ দেখালেই ভয় পায়, কিন্তু ঐ তাকিয়ে আাছে ফ্লোরের দিকে)
— এই এই কি করতেছেন আপনি? (সে)
— চুপ করে দাঁড়ায় থাকো, আমি তোমাকে টাই পরিয়ে দিচ্ছি, নিজে তো টাই…….
কথা শেষ করার আগেই আমার হাত থেকে টাই কেড়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। খুব রাগ লাগতেছে উনার উপর, উনি এমন কেন?
ইস সেই স্কুল লাইফেই শিখেছি টাই কিভাবে বাঁধতে হয়, কত স্বপ্ন ছিল আমার বর এর টাই আমিই বেধে দেব নিজ হাতে,আফিসে যাওয়ার আগ মুহুর্তে তার খুব কাছে যেতে পারব,, কিন্তু এখন তো সব স্বপ্নই বৃথা।
,
উনি আফিসে গেছেন, আমার আর কিছুই ভালো লাগতেছে না, এভাবে আর কত দিন? প্রতিটা মেয়েরই বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। বিয়ের পর নিজ হাতে সংসার গুছিয়ে নিবে সেই প্রতিক্ষায় থাকে প্রতিটি মেয়ের মন।আমার সব কিছু ঠিকই আছে, কিন্তু স্বপ্নের রাজকুমার কে নিয়েই যত সমস্যা। বুঝি না লাজুক হয় মেয়েরা কিন্তু উনি মেয়েদের থেকেও বেশি লাজুক। রান্না কর, বেলকুনির গাছগুলোতে পানি দেয়া আর উন্যাস পড়াই এখন নিত্য দিনের রুটিন হয়ে গেছে। নাহ্ আর সহ্য হচ্ছে না..
রাতে ঘুমানোর সময় ওকে ডাকলাম,
— শুনো তোমার কি একটু সময় হবে?(আমি)
— কেন? (সে)
— সময় হবে কি না বল? (রেগে গিয়ে বল্লাম)
— হুম হবে..! ( আবার ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলল সে)
— শুনো রাহাত (ইচ্ছে করেই নাম ধরে ডাকলাম) প্রতেকটা মেয়েরই কিছু স্বপ্ন থাকে নিজের স্বপ্নের মতো স্বামী খাুজে তারা। মনের ভেতর জমানো কথা গুলো বলার জন্য একজন সঙ্গি দরকার।একটা মেয়ের সবচেয়ে ভালো এবং কাছের সঙ্গী কে জানো? স্বামী, স্বামীই হলো সবচেয়ে কাছের সঙ্গী সে কেবল স্বামীই নয় বরং একজন বন্ধু, বেস্ট ফ্রেন্ড। যার হাত ধরেই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাটিয়ে দেয়া যায়, মনের সব কথাই খুলে বলা যায়।
–……()
সে আবার আগের মতোই চুপ। তাই আবার বলতে শুরু করলাম, কিন্তু তুমি! তুমি আছ তোমার লজ্জা নিয়ে, কিসের এত লজ্জা তোমার? বাড়িতে দুজন মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু তুমি তো মানুষের মধ্যেই পর না।
আমিও একটা মানুষ রাহাত, আমারো ইচ্ছে করে করো সাথে প্রাণ খুলে কথা বলতে গল্প করতে, সারাদিন কি চুপ করে থাকা যায়, কারো হাত ধরে সারারাত কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, কারো বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তুমি? হা হা তুমি শুচ্ছ শোফায় আর আমি বিছানায়, এভাবেই চলছে? কিন্তু আর কত দিন রাহাত? ( বলতে বলতে কেঁদেই দিলাম)
–……(সে নিশ্চুপ)
–আআ আমি আর পারছি না তোমার সংসার করতে। কাল সকালে আমাকে বাবার বাসায় নামায় দিয়ে তুমি অফিসে যাবা।তোমাকে কেউ আর বিরক্ত করব না। (কথা গুলো বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল,কারণ তাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি এই কয়েক দিনে, কিন্তু রাগ খোবটাকে আর কন্ট্রল রাখতে পরছি না)
–…….
সে আগের মতেই চুপ করে আছে, জানি আমি যতই কাঁদি তার কাছে আমার কান্নার কোনো মূল্য নেই। জানি তার মোন একটুও গলবে না। চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে আমার, খুব ব্যথাও করতেছে।……কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানি না। খুব ভোরেই ঘুম ভাঙ্গল পাশ ফিরে দেখি যে সে সোফায় নেই, হয়ত ফজরের নামায পড়ে এখনো মসজিদ থেকে ফেরে নাই। কি আর করব একটু পর ব্যগ গুছানো শুরু করব তাই একটু চোখ বুজলাম…
— কি হলো আবার ঘুমিয়ে গেলে??
— উমম(আমি)
— কি হলো উঠ,,,তোমার জন্য নিজ হাতে চা কফি দুটোই নিয়ে এসেছি কই নিবে না
(আমি কি স্বপ্ন দেখছি, সে আমাকে তুমি করে বললে আবার আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার চোখে চোখ রেখে)
— কি হলো মুখ হা করে আছো কেন? বিশ্বাস হচ্ছে না? (সে)
( আমি জেগে আছি না ঘোরের মধ্যে আছি সেটা নিশ্চিতের জন্য নিজের হাতে নিজেই চিমটি দিচ্ছি….)
— আরে আরে হাতে চিমটি দিচ্ছ কেন? ব্যথা পাবে তো? আমি তো সত্যই তোমার সামনেই দাঁড়ায় আছি (সে)
আরে আসো তো একটু ছাদে যাই বলেই সে আমার হাতে কফির মগটা ধরিয়ে দিয়ে আন্য হাতটা টানতে থাকল, এই প্রথম সে আমায় স্পর্শ করেছে, নিজের অনুভুতিটাকেই বিশ্বাস করতে পরছি না।
গায়ে একটা চাদর হাতে কফির মগটা নিয়ে ছাদে দাঁড়ায় আছি, সে আমার পাশেই আছে।
— কি হলো কফি খাচ্ছ না কেন? (আমার লাজুক জামাই)
–……(আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি)
— এই যে হ্যালো কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে?
— তোমার ঠান্ডা লাগতেছে না শুধু একটা টি শার্ট পরে আছ,,,(আমি)
— ঠান্ডা লাগুক, তাতে কার কি হুম, কেউ তো গায়ে চাদর দিয়ে দাড়িয়ে আছে, একবারেও কাছে টেনে নিচ্চে না, ( খুব অভিমানী সুরে বলল সে)
আর কিছু না ভেবেই তাঁর বুকে ঝাপিয়ে পড়লাম, সেও দু হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
দুজনেই দাড়িয়ে আছি এক চাদর জড়িয়ে, এক মগেই কফি খাচ্ছি দুজন, বাহ্ আমার লাজুক জামাই তো ভালোই কফি বানাতে পারে, কুয়াশাস চাদর আমাদেরকে আলাদা করেছে বাকি সমস্ত পৃথিবী থেকে। দুজনই শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে আছি, আমাদের দেহ থেকে আমাদের মন রয়েছে আরো কাছে। থাকুন না এভাবে মন্দ নয় বরং ভালোই লাগছে। এই স্পর্শ গুলোই চায় প্রতিটি নারী,,,,
,

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত