অভিমানী ভালোবাসা

অভিমানী ভালোবাসা

দেখবো
.
না এত কথায় কথায় দেখতে হয়না।
.
না অল্প একটু দেখবো প্লিজ।
.
আচ্ছা এইটাই আজকের মত শেষ এর পর দেখতে চাইবা না।
.
কেনো এর পর দেখতে চাইবো না মানে? আমি
প্রতিদিন,প্রতি ক্ষণ দেখতে চাইবো। প্রতিটা ন্যানো-
সেকেন্ড আমার তোকে চাই।
.
কি তুমি আবার আমায় তুই বললে?
.
ভালোবাসাটা যখন সীমাহীন হয়ে যায়, তখন ই তো আমি
তোমায় তুই করে ডাকি।
.
হুম জানি, সীমাহীন না ছাই
.
বিশ্বাস করো সত্যি অনেক ভালোবাসি, এখন দেখবো।
.
আচ্ছা তোমার এই দেখবো, দেখবো টা কবে বলা শেষ
হবে বলতে পারো?
.
হুম পারি, যেদিন ওই একটা মোটা-পোটকা মেয়ে লাল
শাড়ি পড়ে বাপের বাড়ি থেকে ট্রাক ট্রাক মাল জিনিষ
নিয়ে আমার বাপের বাড়ি আসবে সেইদিনের পর থেকে
আর বলব না দেখবো। সেইদিন থেকে পারমিশন ছাড়াই
যখন মন চাইবে দেখে নিবো।
.
কি আমি মোটা? পোটকা? আমি ট্রাক ট্রাক মাল জিনিষ
নিয়ে তোর বাড়ি যাবো। আর পারমিশন নিবি না দেখতে?
যা কুত্তা ব্রেকাপ তোর সাথে, কখনো এসএমএস দিবি না।
সত্যি সত্যি ব্রেকাপ।
.
এই বলে অফলাইনে চলে যায়……… অধরা।
.
নিলয় চেয়ে আছে এসএমএস গুলির দিকে। জানে সে
এইবার আও ব্রেকাপ হবেনা, কেননা অধরা দুই সত্যি
বলেছে তিন সত্যি নয়। যখন এই পাগলিটাকে এসএমএস
দিবে একটু পর সব আগের মত হয়ে যাবে। হাজার বারের
উপরে চলে গেছে তাদের এই দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া আর
খুনসুটির।
.
পরিচয়টা হয়েছিলো খুব বড় না হলেও একটা ছোট ঝগড়ার
মধ্য দিয়ে। নিলয়রা যে বাসায় থাকত তার তৃতীয় তলায় এই
পাগলির বাবা বাসা ভাড়া নেন। প্রথম দিনে অধরাদের
বাসার মাল পত্র সব উপরের তলাত নিচ্ছে। তো কিছু লোক
মাল-জিনিষ নিয়ে উপরে গেছে। একটা ছোট বুক সেফ
ছিলো তা দুইজনে অনায়াসে নিতে পারবে।
.
নিলয় এই সময় বাসা থেকে বাইরে ফ্রেন্ডদের সাথে
আড্ডা দিতে বের হচ্ছিলো। অধরার বাবা নিলয়কে দেখে
বলল এই ছেলে শুনো। নিলয় বলল জি বলেন। অধরার বাবা
বলল আমার সাথে এই বুকশেলফ টা ধরে তৃতীয় তলায় দিয়ে
আসতো। নিলয়ের গেলো মেজাজ খারাপ হয়ে। একে তো
অপরিচিত এমন ভাবে বলছে যেন আমি ওনার কর্মচারী
তার উপরে হুকুম করছে। নিলয় ও কম যায়না, বলল কাকু
আমাকে কি আপনার মেয়ের জামাই পেয়েছেন যে হুকুম
করছেন।
.
এই একটু থেকেই শুরু তর্ক, এর পরেই আসলো অধরা। নিলয়
তো অধরাকে দেখে অবাক। প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়ে
বসলো। অধরা এসে জিজ্ঞেস করছে বাবা কি হয়েছে।
অধরার বাবা বলছে এই ছেলে বলে ও নাকি আমার মেয়ের
জামাই। এই টুকু শুনেই অধরা নিলয়কে ঝাড়তে শুরু করলো।
.
নিলয় দেখলো এ কি বাপ – মেয়ে দুইজন ই সমান পাগল।
অবস্থা খারাপ দেখে নিলয় কেটে পড়ে সেখান থেকে।
সারাদিন আড্ডা দিয়ে বাসায় আসলো সন্ধ্যার পড়ে।
বাসায় এসে দেখে সেই মেয়ে আর তার পাগল বাবা
তাদের বাসায় বসে দিব্বি গল্প করছে সাথে চা-নাস্তা
করছে। সাথে এক মহিলাও আছে। দেখে বুঝলো এই হোল
পাগলীটার মা। নিলয়কে দেখে অধরা বলে উঠলো বাবা
এইতো সেই বজ্জাত টা যে তোমাকে বলছিলো ও নাকি
তোমার জা……… এই বলেই থেমে গেলো।
.
নিলয় মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে রুমে গেলো। অধরার
বাবা তেমন কিছু আর বলেনা কথাটা এড়িয়ে যায়। এর
পরের দিন থেকে নিলয়ের সাথে প্রায় দেখা হতো
অধরার। কলেজে যাওয়ার পথে, ছাদে কিংবা সিঁড়ি
থেকে নামার সময়। দেখতে দেখতে প্রায় তিনটা মাস
কেটে যায়। একটু একটু পরিচিত হয়ে যায় তাদের।
.
নাম্বার দেওয়া নেওয়া অতঃপর কখন যে একে অপরকে
ভালোবেসে ফেলে কখনো বুঝতে পারেনা। অধরাকে
নিলয় ই একদিন বলে আমি না একজন কে ভালোবাসি।
অধরা জিজ্ঞেস করে কাকে। বলে ওই যে ঝগড়াটে
মেয়েটাকে যার বাবাকে বলেছিলাম আমি তার জামাই।
অধরা বলে আমি বাসি না। নিলয় জিজ্ঞেস করে কেনো?
অধরা বলে তুমিত বিয়ের আগেই আমার জামাই হয়ে গেছ।
.
নিলয়ের চিন্তার অবসান ঘটায় অধরার ফোন কল। বলে এত
সময় রাগ করে ছিলাম কল দিলে না কেনো? নিলয় বলে
ভাবতে ছিলাম সেই শুরু থেকে তোমার আমার কথা গুলি।
অধরা বলে থাক হইছে জানিত কোন মেয়ের কথা ভেবে
এখন আমার নাম দিচ্ছো। আর শোনো একটা সমস্যা হয়ে
গেছে। আমরা হয়ত এই বাসা ছেড়ে চলে যাব। আমার
ফাইনাল পরীক্ষার পড়েই।
.
নিলয় বলে মানে কই যাবে? আমি তোমায় ছাড়া থাকবো
কি করে? অধরার একটাই কথা এতদিন যে ভাবে ছিলে
সেই ভাবে থাকবে। নিলয় বলে পারবো না, অধরা বলে
বাদ দেও যখন আসবে সময় দেখা যাবে। এমনি করেই দিন
গুলি কাটছিলো তাদের।
.
দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষাও চলে আসে। নিলয়
একদিন বলে অধরা পরীক্ষা তো শেষ সামনেই ঈদ আমরা
এবার সবাই গ্রামে ঈদ করতে যাব। অধরা বলে আমরাও
ঈদের পর চলে যাব। নিলয় বলে ঠিকানা দাও। অধরা বলে
সময় হোক দিবো, আর না দিলে খুঁজে না পেলে আমায়
ভুলে যেও। নিলয় ভাবে অধরা হয়ত মজা করছে।
.
ঈদের আগের-দিন নিলয় অধরার সাথে দেখা করে বলে
আমি গ্রামে গেলাম সাবধানে থেকে, ফোন দিব
এসএমএস দিও। একলা ছাদে যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
অধরা বলে যাও যাও এসে দেখবা আমি নাই, আমিও চলে
গেছি। এই বলেই নিজের বাসার দিকে চলে যায়।
.
ঈদের ভিতর নিলয় আর অধরার কথা হলেও সমস্যা হয় ঈদের
পরের দিন। নিলয় এসএমএস দিচ্ছে যে তারা কালকে
ব্যাক করবে। আর অধরা বলে তারা আজকে বাসা ছেড়ে
চলে যাচ্ছে। নিলয় কিছু বলার আগেই অধরা তাকে
ফেসবুক থেকে এসএমএস ব্লক করে। নাম্বার ও ব্লক করে
দেয়। চিন্তায় পরে যায় নিলয়। ভাবে হয়প্ত রাগ করেছে।
কিন্তু না এইবার সারাদিন কেটে গেলেও অধরা কল
দেয়না, সে নিজে দিয়েও পাচ্ছে ব্লক।
.
নিলয় ভাবে অধরা তালে ধোঁকা দিলো না তো? পরের
দিন নিলয় বাসায় এসে দেখে অধরা দের বাসায় তালা
ঝুলছে। কেয়ারটেকারের কাছ এ জিজ্ঞেস করলো ওদের
বাসায় তালা কেনো? সে বলে তারা তো বাসা ছেড়ে
চলে গেছে। নিলয় ভেঙে পড়ে মানুষিক ভাবে। রুমে গিয়ে
কাঁদতে থাকে, কতটা কেঁদেছে শুধু সেই জানে। একটা
ছেলে যখন একটা মেয়ের জন্য সত্যিকার ভাবে কাঁদে
বুঝতে হয় পৃথিবীতে এখনো সত্যিকারের ভালোবাসা
বেচে আছে আর সেই ভালোবাসার সম্পর্কগুলির ভিতর ওই
ছেলেটার সম্পর্কটাও বিদ্যমান।
.
দুইদিন হতে চলল নিলয়ের খাওয়া নেই, ঘুম নেই সব কিছু
এলো মেলো। নিজের সাথে যখন আর পেড়ে উঠছে না তখন
নিলয় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সে সুইসাইড করবে। অধরাকে
খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে কি অপরাধ ছিলো তার।
খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে নিলয়ের। ভাবে
অধরাকে নিয়ে একটা পোষ্ট লিখবে এসএমএস তো আর
দিতে পারবে না তাই।
.
অধরাকে ম্যানশন করে একটা পোষ্ট লিখে শেষ লাইনে
লিখলো এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি, যেখানে থেকো
ভালো থেকো শুধু জানতে ইচ্ছে করে আমার অপরাধটা
কি ছিলো?
.
নিলয় পোষ্ট দিয়ে রুমের দরজা খুলে ছাদের দিকে যাবে
এই আশায় এর মাঝেই অধরার কল। ফোন রিসিভ করতেই
ওইপাশ থেকে অধরার ঝাড়ি শুরু। তুই কই যাস মরতে?
আমায় সাথে নিয়ে যা। যখন আমায় একা রেখে ঈদ করতে
গেলি আমার বুঝি খারাপ লাগেনি? আমার ও তো ইচ্ছে
ছিলো তোর সাথে ঈদ করার।
.
নিলয়কে বলে আমরা কালকে বাসায় আসছি খবরদার
খারাপ কিছু করবি না, করলে এসে তোরে আমি নিজেই
খুন করবো। নিলয় কাঁদছে আর অবুঝের মত কথা গুলি শুনছে।
একটা মেয়ে অভিমান করে এত কিছু করলো। নিলয়
জিজ্ঞেস করে কিন্তু তোরা বাসা থেকে নাকি একদম
চলে …. কেয়ারটেকার চাচা যে তাই বলল। অধরার জবাব
আমিই থাকে মিথ্যে বলতে ১০০ টাকা ঘুষ দিয়েছি।
.
দুই প্রান্তের দুই জন ই চুপ করে আছে। একটু পর দুইজনেও এক
সাথে বলে সরি। জিজ্ঞেস করে কেনো নিলয়ের জবাব
তোমার চাওয়া টা বুঝতে পারিনি, অধরাকে জিজ্ঞেস
করে তুমি সরি বললে কেনো। অধরার জবাব আমার
অভিমানে যদি তুমি সত্যি সুইসাইড করে বসতে? আর
কখনো এমন করবো না। খুব ভালোবাসি তোকে। নিলয় বলে
তুমিও তুই বললে? ভালোবাসাটা যখন সীমাহীন হয়ে যায়,
তখন তুমি থেকে তুই হয়ে যায়। তোমার থেকেইত শেখা।
.
আচ্ছা এখন রাখ বাবা-মা দেখছে তার ছেলেকে কাঁদতে,
এই দুইদিনের মার এখন খেয়ে আসি সাবধানে এসো…..
রাখি। এই বলেই ফোনটা রাখে নিলয়। আস্তে আস্তে করে
এগিয়ে যায় মায়ের রুমের দিকে আর ভাবতে থাকে
কেনো কাঁদতে ছিলো জিজ্ঞেস করলে কি জবাব দিবে……. !!!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত