আজ কলেজ যাবো না, তাই আরাম করে ঘুমাচ্ছিলাম।
এর মাঝেই আমার সুখে এক বালতি পানি দিয়ে ফোনটা বেজে উঠলো।
মেজাজটা পুরাই গরম হয়ে গেল ভাবলাম ধরবো না কিন্তু রিং যে থামছেই না।
আবশেষে ফোনটা হতে নিলাম।
নিলয়:মামা তুই কোই?
ইমরান:চান্দে আইসা হানিমুন করতেছি।
নিলয়:মামা ফাজলামি রাখ, বিরাট ঝামেলাই ফাইসা গেছি।
ইমরান:তুই আর তোর ঝামেলার কাথাই আগুন, সামনে পাইলে তরেই
এক বালতি পানিতে চুবামু।
নিলয়:মামা খেপস ক্যারে, তুই এখন কলেজে না আসলে আরো ফাইসা যামু একটু জলদি আয়।
ইমরান:পারুম না এখন ঘুমামু ।
নিলয়:প্লিজ মামা জলদি আয়, আর ব্রেকফাস্ট করার দরকার নাই আমি খাওয়ামু তাও তাড়াতাড়ি আয়।
ইমরান:ওকে থাক আইতেছি ।
যার সাথে কথা বলছিলাম সে আমার ছোট কালের দোস্ত।
কিন্তু কিপ্টার হাড্ডি বলা চলে, ছোট থেকে বড় হইছি কয়দিন খাওয়াইছে মনে নাই।
কিন্তু আমার পকেটে আগুন লাগানো ওস্তাদ, যেখানেই যাবে একটা ঝামেলা বাধিয়েই ছাড়বে।
আর তখন আমার নামটাই আগে মনে পরে তাই তাড়াতাড়ি উঠে ব্রাশ করেই কলেজের দিকে ছুটলাম ।
এসেই দেখি গভীর চিন্তাই বসে আছে ।
ইমরান:কি হইছে রে?
নিলয়:আরে বলিস না, পুরাই ফাইসা গেছি ।
ইমরান:আরে বেটা বলবি তো কি হইছে?
নিলয়:তুই তো জানস অবনীরে আমি ভালবাসি, আজ একটা চিঠি লিখে একটা বাচ্চারে দিয়ে পাঠাইছি ।
ইমরান:এতো ভাল কথা ।
নিলয়:আরে আগে পুরাটা শোন, দিতে বলছিলাম সাদা ড্রেস পরা অবনীকে কিন্তু দিছে মালিহাকে এইবার বোঝ কি আবস্থা ।
ইমরান:হায়, হায় দেয়ার আর মাইয়া পাইলো না, তোরে পাইলে তো পুরাই চাইবা খাইবো।
নিলয়:এখন তোরেই সামলাতে হইবো নইলে বলমু তুই চিঠি দিতে কইছোস।
ইমরান:তোরে লাথি মাইরা ড্রেনে ফেইলা দিমু। দাড়া ভাবতে দে কি করা যায় ।
এর মাঝেই ক্লাস শেষ, আর মালিহা ঝগড়ুটি যেন কারেন্টের গতিতে আসছে আমাদের দিকে ।
বলে রাখা ভাল, মালিহা হচ্ছে আমাদের কলেজের সব চাইতে বদমেজাজি আর বদরাগী একটা মেয়ে।
আর তার হাতেই কিনা লাভ লেটার পরছে,
আজ যে কপালে শনি আছে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এসেই।
মালিহা:এই চিঠি দুই জনের মধ্যে কে দিয়েছে ??
নিলয়:কে আবার ইমরান…(বলেই দিলো দৌড়)
মালিহা:আপনার সহস তো কম নয় লাভ লেটার দিয়ে বেরাচ্ছেন।
ইমরান:লাভ লেটার যে আমি আপনাকে দিয়েছি সেটা কিভাবে বুঝলেন, চিঠির নাম
দেখলেই তো পারেন ।
মালিহা:এতোটা বোকামো যে করবেন না সেটা চিঠি দেখেই বুঝছি, তাই নামটাও নাই।
ইমরান:আসলে চিঠিটা অবনীর জন্য ভূল করে আপনার ড্রেস সাদা হওয়াই বাচ্চাটা আপনাকে দিছে ।
মালিহা:বাহ নাটক তো ভালই পারেন দেখছি, যেই ধরা পরে যাবেন অমনি আরাকটা মেয়ের নাম নিচ্ছেন।
ইমরান:আমি যে আপনাকে চিঠি দিবো তার ও তো একটা করন থাকতে হবে।
আপনাকে ভালবাসা তো দূরের থাক সবাই তো কথা
বলতেই ভয় পায়, এই বুঝি ঝগড়া শুরু করেন।
মালিহা:যতো সব ফালতু ছেলে, আর কোন দিন এগুলো দেখলে পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিবো।
বলেই হনহন করে চলে গেল, মনে হলো মাথার উপর দিয়ে ঝড় চলে যাচ্ছে।
মালিহা রাগী হলেও কেন জানি ওর রাগী চেহারা দেখতে অনেক মায়াবী লাগে।
আমার লাইফের ফাস্ট ক্রাশ মালিহা, কলেজের প্রথম দিনেই মালিহার প্রেম ছিলিপ খেয়েছিলাম।
আর সেই থেকেই ওর পাশে পাশেই থাকি, এটা সে বুঝতে পেরেছিল।
কিন্তু কিভাবে ঝামেলাটা লাগাবে সেই সুযোগটাই খুজছিল আর আজ সুযোগ পেয়ে কথা শুনিয়ে দিয়ে গেল।
কিন্তু নিলয়কে আর খুজেই পাচ্ছি না, অনেক খোজার পর দেখি কেন্টিনে বসে আরাম করে নাস্তা করছে ।
ইমরান:ওই গন্ডারের হাড্ডি আমারে ফাসাইয়া দৌড় দিলি কেন?
নিলয়:আরে তোর তো সুবিধা করে দিলাম আগে শুধু জানতো যে তুই মালিহারে ভালবাসিস,
এখন লিখিতো প্রমানও পাইয়া গেল।
ইমরান:তাইলে ইচ্ছা করেই আমারে ফাসাইছিস।
নিলয়:প্লানটা অবনীর আর কাজটা আমাকেই করতে হলো, যতো হলেও বন্ধু বলে কথা ।
মনে তো হচ্ছে শালারে লাথি মাইরা চান্দে পাঠাইয়া দেই কিন্তু উপাই নাই ।
আর মালিহাকে প্রোপজ করার প্লান যে আমার মাথাই আসেনি তা কিন্তু নয় ।
ওর রাগী ভাবটার জন্যই ভয় লাগে, কি বলতে না কি বলে দেয় ।
এভাবেই চলছিলো মালিহার সাথে লুকিয়ে প্রেম করা। কিছুদিন পর
নিলয়ের গালফেন্ড অবনীকে দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিলে মালিহা না করে দেয় ।
আর ইমরানকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে যদিও বিষয়টা কষ্ট দিতো ।
তবুও দূরে থেকেই মালিহার সব খবর রাখতো ইমরান ।
সকালে কলেজে এসেই ইমরান, নিলয় আর অবনী আড্ডা দিচ্ছিলো ।
এর মাঝেই কলেজ গেটে একটা বিকট শব্দ, মনে হলো এক্সিডেন্ট হইছে সবাই সেটাই দেখতে যাচ্ছে।
নিলয় উঠে সেদিকেই দৌড় দিলো কিছুক্ষনের মধ্যেই হাপাতে, হাপাতে আসলো আমাদের দিকে।
এসেই কিছু না বলেই টানতে, টানতে নিয়ে গেলো যেয়ে দেখি মালিহা রক্তাতো অবস্থায় রাস্তায় পরে আছে।
আর ওকে ঘিরে সবাই জমা হয়েছে, শুনলাম রিক্সা করে আসার সময় একটা মিনি ট্রাক এসে ধাক্কা দেয় রিক্সাকে।
মালিহাকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসে ইমরান আর নিলয়। অনেক রক্ত পরে গেছে ।
তাই অনেক ক্লিনিক, হাসপাতালে ঘুরে রক্ত জোগাড় করে দেয়।
এর মাঝেই মালিহার আব্বু আম্মু চলে আসে। পুরা ৪৮ ঘন্টা পর মালিহার জ্ঞান ফেরে।
আজ ১ মাস পর মালিহা কলেজে আসছে ওকে লুকিয়ে, লুকিয়ে দেখছিলাম এর মাঝেই নিলয় চলে আসে।
নিলয়:কি মামা লুকিয়ে থেকে আর কয়দিন চলবি?
ইমরান:যতোদিন যায়, অবনী কোই?
নিলয়:মালিহার সাথে গল্প করছে ।
এর মাঝেই অবনী এসে বললো মালিহা তোরে ডাকছে কি যেন বলবো ।
ইমরান ভাবছে লুকিয়ে, লুকিয়ে দেখাটা বুঝি ধরে ফেলছে।
তাইলে তো আজ আবার মাথার উপর দিয়ে ঝড় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ভয়ে ভয়ে মালিহার পাশে এসে দাড়ায়ে।
ইমরান:কি জন্য ডাকছেন?
মালিহা:আপনার নামে অভিযোগ আছে?
ইমরান:আসলে আমি কিন্তু কিছু করিনি ।
মালিহা:লুকিয়ে, লুকিয়ে তাহলে কাকে দেখা হচ্ছিলো?
ইমরান:পুরানো অভ্যাস তো তার উপর অনেক দিন পর আপনাকে দেখলাম,
আচ্ছা আর তাকাবো না ।
মালিহা:কেন আপনাকে কি তাকাতে মানা করছি?
ইমরান:না মানে ।
মালিহা:লুকিয়ে ভালবাসতে পারেন, কেন বলতে ভয় পান?
ইমরান:হুম একটু, একটু ।
মালিহা:যদি ভালবাসতে বলি সামনে এসে তাহলেও কি ভয় পাবেন।
ইমরান:ভালবাসি বলেই তো এতো লুকোচুরি, যদি হাতটা দাও আর হারাতে দিবো না ।
মালিহা: আচ্ছা আর লুকিয়ে নয় ভালবাসাতে হবে সারাটা জীবন ধরে।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক