:আপনি আমাকে প্রতিদিন ফলো করেন কেনো?
মেয়েটার কথায় থমকে দাঁড়ালাম।গোল ফ্রেমের চশমা পরিহিত মেয়েটি প্রশ্নটা আমাকেই করেছে।আমি হুসাইন।আপাতত পড়শুনা শেষ।মেয়েটির নাম অদ্রীতা।অনার্স
১ম বর্ষের ছাএী।অদ্রীতাকে প্রথম দেখেছিলাম কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে।অদ্রীতা নীল শাড়ি পড়ে এসেছিলো।নীল শাড়ি পড়লে মেয়েদের সবথেকে বেশি সুন্দর
লাগে সেটা সেদিন অদ্রীতাকে দেখে বুঝেছিলাম।প্রথম দেখাতেই অদ্রীতার প্রতি মনের চিলেকোঠায় ভালোবাসার জন্ন হয়েছিলো।নতুনদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের সাথে
আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো ।
:-কীহলো চুপ করে আছেন কেনো?(অদ্রীতা)
আমি সবসময়ই কম কথা বলি আর অদ্রীতার সামনে আসলে আরো কথা বলতে পারিনা।
:-আমি মানে–আমি।(আমি)
:-কী আমি আমি করছেন?
:-আমি আপনাকে ভালোবাসি।
কথাটা বলতে দেরী হলো কিন্তু আমার নরম লাগে থাপ্পর পড়তে দেরী হলোনা।
:-তোর সাহসতো কম না আমাকে প্রপোজ করিস?নিজের চেহারা কখনো আয়নাতে দেখেছিস?কালো ভূত একটা।আমাকে দেখ আমি কত সুন্দর।কত স্মাট।আমার
সাথে সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছেলেকেই মানায় তোর মত কালো গেয়ো ভূতকে নয়।এরপর থেকে যদি আমার আশেপাশে তোকে কখনো দেখেছি তাহলে ইভটিজিং কেস দিয়ে জেলের ভাত খাওয়াবো।(অদ্রীতা)
কথাগুলো বলে অদ্রীতা হনহন করে হাটতে হাটতে চলে গেলো।আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আচ্ছা আমি কালো বলে কি কাউকে ভালোবাসতে পারিনা?কালোরা কী মানুষ না?হয়তোবা।কালোরা যদি মানুষই হতো তাহলে সবাই এত অবহেলা করতোনা।
রাস্তায় মাঝে দাঁড়িয়ে থাকাটা নিরাপদ নয় তাই বাসায় চলে আসলাম।বাসায় আসতেই শুনতে পেলাম
:-কালো গেয়ো ভূত সারাদিন পর বাসায় ফিরেছে।তাড়াতাড়ি সবাই লাট সাহেবকে খেতে দে।
কথাটা বললো আমার বড় ভাইয়ের বউ।আমি কথার কোন উওর না দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।আব্বু আম্মু মারা যাবার পর থেকে আমাকে আর কেউ
ভালোবাসেনা।ভালোবাসেনা বললে ভুল হবে ভাইয়া প্রথম প্রথম বাসতো কিন্তু এখন আর বাসেনা।বড় ভাইয়াও ভাবির মত মাঝে মাঝে আমাকে কালো ভূত বলে।এসব
শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।যার বাবা মা পৃথিবীতে নেই সেই বোঝে বাবা মায়ের গুরুত্ব।
রুমে এসে দরজা আটকে দিলাম।আব্বু আর আম্মুর ছবিটা দেওয়ালে টানানো।এই ছবিটাই আমার সবথেকে কাছের বন্ধু।আমি কালো বলে কলেজের কেউ আমার সাথে বন্ধুত্বও করতে চাইনা।আব্বু আর আম্মুর ছবিটার কাছেই সব কথা শেয়ার করি।
:-আম্মু আমাকে কেনো তোমাদের সাথে নিয়ে গেলেনা?জানো আমি কালো বলে এই পৃথিবীর সব মানুষই আমাকে অবহেলা করে।জানো আম্মু একটা মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম কিন্তু সেও আমাকে আজ কালো গেয়ো ভূত বলেছে।
কথাগুলো ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম।জানি কোন উওর আসবেনা তবুও কেনো জানি সবসময় এই ছবিটার সামনেই সবকিছু বলি।আর একটা ডায়রি আছে।মাঝে মাঝে মনের অনুভূতির কিছু কথা লিখি ডায়রিটাতে।
প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে।সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি।সকালে ঘুম থেকে ওঠে ভাবির কাছে একবার খেতে চেয়েছিলাম তখন তিনি বললেন
:-কাম কাজের বেলায়তো কোন খোঁজ নেই কিন্তু খাওয়ার বেলায়তো ঠিকই আছো।আজ থেকে পড়ালেখা বাদ দিয়ে কাজে লেগে পড়ো নয়তো এই বাসায় খাওয়া বন্ধ।
কথাগুলো শুনে রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম।তারপর থেকে এই বিকেল অব্দি কিছু পড়েনি পেটে।কিছু খাওয়া হয়নি বললে ভুল হবে ১গ্লাস পানি আর
একটা রুটি খেয়েছিলাম।আস্তে আস্তে ক্ষুদা বেড়েই চলেছে তাই কোন উপায় না পেয়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেলাম।
রান্নাঘরে অনেক রকমের তরিতরকারি রান্না করা।হয়তো বাসায় কোন আত্মীয়স্বজন আসবে।আমি একপাশ থেকে খাবার নিয়ে খেয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম আবার।
রুমে আসতেই চিৎকারের আওয়াজ পেলাম।ভাবি চিৎকার করছে।আর চিৎকারের কারণও আমি জানি।রান্নাঘর থেকে খাবার খাওয়ায় উনি চিৎকার চেঁচামেচি করছেন।আমি সেদিকে কান না দিয়ে ডায়রি নিয়ে বসে গেলাম।কিছু লেখতে হবে।অনেকদিন হলো লেখা হয়ে ওঠেনা।
ডায়রিতে কলম ধরতেই পিছন থেকে কেউ আমাকে টান মারলো।চেয়ার থেকে ফ্লোরে পড়ে গেলাম। ফ্লোরে একটা কাঁচের গ্লাস ছিলো সেটা ভেঙ্গে হাতে আটকে গেলো।
:-এই তুই রান্না ঘর থেকে খাবার চুরি করে খেয়েছিস কেনো?নিজে কোন কাজ করবিনা শুধু অন্যের ঘাড়ের উপর বসে খাবি।এখনি বের হয়ে যা এই বাসা থেকে।(আমার
ভাই)
:-ভাইয়া তোমার যেমন এই বাড়িতে অধিকার আছে তেমন আমারো অধিকার আছে।(আমি)
:-রাখ তোর অধিকার।ভালোয় ভালোয় বের হয়ে যা নয়তো দারোয়ান ঢেকে ঘাড় থাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।
এখানে আর টিকতে পারবোনা আমি সেটা বুঝে গেছি।কারণ ওরা অনেক আর আমি একা।হাত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।ফ্লোর থেকে ওঠে নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।পকেটে থাকা রুমালটা বের করে হাতে শক্ত করে বেঁধে নিলাম যাতে রক্ত বের না হয়।
হাঁটতে হাঁটতে রেল স্টেশন এ আসলাম।এখানেই বসে থাকবো কিছু সময়।স্টেশন থেকে কেউ আমাকে তাড়িয়ে দিবেনা।ব্যাগ থেকে ডায়রিটা বের করে একটা পৃষ্ঠায় বড় একটা চিঠি লিখলাম।
প্রিয় অদ্রীতা,
প্রথমে আমার সালাম নিও।তোমাকে কিছু বলার জন্য এই চিঠিটা লেখা।প্রথমেই তোমাকে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইছি।আমি কালো গেয়ো ভূত জানি।কিন্তু এই কালো
গেয়ো ভূতটা তোমাকে খুব ভালোবাসে।প্রথম দেখাতেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। এরপর তোমাকে ফলো করা শুরু করি।জানো আমি কালো বলে আমাকে
কেউ দেখতে পারেনা।জানো আমার স্কুল কলেজ লাইফে কোন ফ্রেন্ড ছিলোনা। সবাই যখন ক্লাস শেষে টিফিনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো তখন আমি বসে বসে
কাঁদতাম। আমি ছোট থাকতে আব্বু আম্মু একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়।জানো আব্বু আম্মুর জন্য আমি আগে প্রতিটা রাতে কান্না করতাম।তারপর বড় ভাইয়ের কাছে
মানুষ হয়।ভাইয়া বিয়ে করে নতুন ভাবি নিয়ে আসে।প্রথম প্রথম নতুন ভাবি আমাকে অনেক আদর করতো কিন্তু কিছুদিন যেতেই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু
করে।প্রথম প্রথম ভাবতাম এখন খারাপ ব্যবহার করছে একসময় ভালো ব্যবহার করবে।কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিলো।আস্তে আস্তে আরো বেশি খারাপ ব্যবহার করতে
শুরু করে।আর আজ বাসা থেকেই বের করে।যেখানে আমার আপন মানুষই ভালোবাসেনা সেখানে তুমি কী করে ভালোবাসবে।যাইহোক।কখনো তোমাকে কষ্ট দিয়ে
থাকলে ক্ষমা করে দিও।কয়েকদিন আগে একটা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলাম।আজ সন্ধার পর রেজাল্ট দিবে।যদি চাকরিটা পেয়ে যায় তাহলে হয়তো এই পৃথিবীর বুকে
আরো কিছুদিন বেঁচে থাকবো।নয়তো কালকের পএিকায় আমার লাশের খবরটা থাকবে।ভালো থেকো।দোয়া করি জীবনে প্রতিটা ধাপে সফল হও।
ইতি
কালো গেয়ো ভূত
—-
চিঠিটা লেখা শেষে স্টেশন থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।এখন উদ্দেশ্য অদ্রীতাদের বাসা।অদ্রীতাদের বাসার দারোয়ানের কাছে চিঠিটা দিয়ে চলে আসবো।
রাত প্রায় ৮টার কাছাকাছি।এখনো স্টেশন এ বসে আছি।তখন অদ্রীতাদের বাসার দারোয়ানের কাছে চিঠিটা দিয়ে এসেছিলাম।বলেছিলাম অদ্রীতাকে চিঠিটা দিতে।
হয়তো অদ্রীতা চিঠিটা পড়ে ফেলেছে এতক্ষণে।আমার চাকরিটা হয়নি।একটু আগে একটা কম্পিউটারের দোকান থেকে শুনে এসেছি।কালকের সূর্যটা হয়তো আর
দেখা হবেনা।শেষবারের মত আব্বু আম্মুর ছবিটা ব্যাগ থেকে বের করে দেখে নিলাম।ডায়রিটা ব্যাগের এককোণে রেখে দিলাম।সাথে ছবিটাও।ব্যাগটা এখানেই রেখে
যাবো।আমি মরার পর ব্যাগটা যে পাবে সে ভিতরে থাকা জামাকাপড়গুলো ব্যবহার করতে পারবে।আমার কেনো জানি খুব হাসতে ইচ্ছে করছে আজ।আচ্ছা মানুষের মরার আগে কী এমন ভাবে হাসতে ইচ্ছে করে?আমার জানা নেই।
ওইতো একটা ট্রেন আসছে।ব্যাগটা এককোণে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।ট্রেনটা কাছাকাছি আসতেই ঝাঁপ দিলাম।
ট্রেনটা চলে গেলো।না আমি মরিনি।পিছন থেকে একটা মানুষ আমাকে আটকে গিয়েছে।মানুষটাকে আমি চিনি।খুব ভালো করেই চিনি।অদ্রীতা।হ্যাঁ অদ্রীতা এসেছে।জানিনা কেনো ও আমাকে বাঁচালো।ও করুণা দেখানোর জন্য এসেছে।
অদ্রীতা আমাকে টানতে টানতে স্টেশন থেকে একটু দুরে নিয়ে আসলো।
ঠাস ঠাস করে আমার দুই গালে দুইটা থাপ্পর মারলো অদ্রীতা।আমার কিছু বলার ক্ষমতা নেই তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম
:-ভালো যখন বাসো তখন আমাকে রেখে চলে যাচ্ছো কেনো?তুমি কালো বলে তোমাকে অপছন্দ করতাম কিন্তু তোমার চিঠিটা পড়ার পর নিজেকে আর আটকে রাখতে পারিনি।এক চিঠিই তোমার কাছে নিয়ে এসেছে আমাকে।(অদ্রীতা)
:-এটা ভালোবাসা নয়।করুণা।আমি কারো করুণার পাএ হতে চাইনা।(আমি)
:-আরেকটা বাজে কথা বললে থাপ্পর দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিবো।বেশি কথা বলা শিখে গেছে।
:-বাজে কথা না।আমি যা বলছি সত্যিই বলছি।
:-একদম চুপ থাকো।এখনি আমি তোমাকে বিয়ে করে প্রমাণ করে দিবো আমি করুণ করছিনা।
অদ্রীতার মুখে বিয়ে কথাটা শুনে অনেকটা অবাক হলাম।কিছু বুঝে ওঠার আগেই অদ্রীতা আমার হাত ধরে টানতে টানতে স্টেশনে নিয়ে আসলো।স্টেশন থেকে বের হতে যাবো তখন আমি বললাম
:-আমি ব্যাগটা নিয়ে আসি।
আমি ব্যাগ নিয়ে অদ্রীতার সাথে একটা কাজি অফিসে গেলাম।অদ্রীতা ফোন করে ওর কিছু ফ্রেন্ডদের ডাকলো।
আমি আর অদ্রীতা এখন দাঁড়িয়ে আছি অদ্রীতাদের বাসার সামনে।আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।অদ্রীতার বাবা আমাদের এ বিয়ে মেনে নিলেন না।আমাকে আর অদ্রীতাকে বাসা থেকে বের করে দিলেন।
–
আমি আর অদ্রীতা এখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।অদ্রীতা কাঁদছে।আমি কী বলে শান্তনা দিবো বুঝতেছিনা।
:-আমার জন্য তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো।তুমি চাইলে বাসায় ফিরে যেতে পারো।(আমি)
আমার কথা শুনে অদ্রীতা রাগী লুক নিয়ে আমার দিকে তাকালো।সত্যিই মেয়েরা খুব অদ্ভুদ।যেই মেয়ে এত সময় কাঁদছিলো সেই এখন রাগমাখা দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
:-তোমার কাছে কত টাকা আছে?(অদ্রীতা)
:-আমার কাছে টাকা নেই।(আমি)
:-আচ্ছা থাক লাগবেনা।আমার গলার চেন আর কানের দুলটা চলো বিক্রি করি।১০ হাজারের মত হবে।এতে আপাতত মাস চলে যাবে।১মাসের মধ্যে তুমি একটা চাকরী জোগার করে ফেলতে পারবে।
আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।কী বলা উচিত বুঝতেছিনা।আমি হাত দিয়ে অদ্রীতার চোখের পানি মুছে দিলাম।
:-রাত কিন্তু অনেক হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি চলো নাহলে সব দোকান বন্ধ হয়ে যাবে।(অদ্রীতা)
:-হুম চলো।(আমি)
শহরে সাধারণত রাত ১২ টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকে।একটা দোকানে গিয়ে অদ্রীতার গহনাগুলো বিক্রি করলাম।গহনাগুলো বিক্রি করার পর অদ্রীতা ওর একটা ফ্রেন্ডকে ফোন করে আমাদের জন্য বাসা ঠিক করতে বললো।
:-অদ্রীতা?(আমি)
:-হুম(অদ্রীতা)
:-তোমাকে একটু জরিয়ে ধরি?
:-না।
:-কেনো?
:-আশেপাশে অনেক মানুষ।
:-ও।
:-তোমার কাঁধে মাথা রাখি?
:-মানা করেছে কে?
একটা বেন্চের উপর দুজন বসে আছি।চাঁদের এসে পড়ছে অদ্রীতার মুখে।চাঁদের আলো অদ্রীতার মুখে অদ্ভুত এক আভা সৃষ্টি করেছে।অদ্রীতাকে যত দেখছি তত
বেশি ভালোবেসে ফেলছি।আমার ইচ্ছে করছে এখন অদ্রীতার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে কিন্তু সাহস হচ্ছেনা।আমার চিন্তা ভাবনার মাঝে ব্যাঘাত ঘটালো অদ্রীতার ফোন কল।কে যেনো ফোন করেছে।
অদ্রীতা কথা বললো ফোন রিচিভ করে।
:-আমাদের বাসা ঠিক হয়েছে।চলো।(অদ্রীতা)
:-চলো।(আমি)
অদ্রীতা একটা রিক্সা ঠিক করলো।রিক্সায় ওঠে অদ্রীতা রিক্সওয়ালাকে বলে দিলো কোথায় যেতে।
আমি আর অদ্রীতা এখন একটা রুমে বসে আছি।এই রুমটাই আমাদের থাকার জন্য ঠিক করা হয়েছে।মাসে ১৫০০ টাকা।একটা ছোট চৌকি পাতা।মুটামুটি দুইজন থাকা যাবে কোনরকম।অদ্রীতার ফ্রেন্ডের নাম নিলয়।সেই আমাদের সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
:-আমার ঘুম ধরেছে।(অদ্রীতা)
:-তো ঘুমাও।(আমি)
:-আমি এই শক্তে বেডে ঘুমাতে পারবোনা।
:-তাহলে কোথায় ঘুমাবে?
:-তোমার বুকের মাঝে ঘুমাবো।
:-হি হি হি হি।
:-হাসার কী হলো?
:-আমার বুক কী নরম?
:-জানিনা কিছু।আমি ঘুমাবো এখন।
:-আচ্ছা ঘুমাও।
আমি শুয়ে পড়লাম আর অদ্রীতা আমার বুকের উপর শুয়ে পরলো।অদ্রীতার গায়ের পারফিউমের গন্ধ আমার নাকে ভেসে আসছে। প্রথম কোন মেয়েকে এভাবে জরিয়ে ধরলাম তাই কিছুটা অসস্তি লাগছে।আবার ভালোও লাগছে।আমি অনেক ভাগ্যবান। অদ্রীতার মত একটা মেয়েকে পেয়ে।
:-ঘুমিয়ে গেছো?(আমি)
:-না।(অদ্রীতা)
:-একটা কথা বলি?
:-বলো।
:-রাগ করবে নাতো?
:-না।
:-তোমায় একটু আদর করবো।
:-মানা করেছে কে।
পরেরদিন সংসারের কিছু জিনিসপাতি কিনে আনলাম।আমার একটা চাকরির ব্যবস্থাও হয়েছে।অদ্রীতার ফ্রেন্ড ব্যবস্থা করে দিয়েছে।১০ হাজার বেতন।আমাদের
দুজনের মুটামুটি এতে ভালোই চলে যাবে।নিলয়ের কাছে আমরা দুজনই অনেক কৃতজ্ঞ। নিলয় যদি আমাদের সাহায্য না করতো তাহলে কী হতো জানিনা।
২ বছর পর।
আমি ইমারজেন্সী রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।অদ্রীতা মা হতে চলেছে।আমার খুব টেনশন হচ্ছে অদ্রীতাকে নিয়ে।আমি আজ বিসিএস ক্যাডার।অদ্রীতাকে বিয়ে
করার পর আমার বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছে ছিলোনা।কিন্তু অদ্রীতার কথার জন্য দিতে হয়।প্রথমে পিলি পরীক্ষায় টিকি।এরপর রির্টেন হয়।রির্টেনেও টিকে যায়।হয়তো
ভাগ্যটা ভালো ছিলো বলে ভাইবাতেও পাস করি।সবকিছুতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে অদ্রীতা।এখন আমাদের আর কোন অভাব নেই।অদ্রীতা আর পড়ালেখা করেনি।আমি বলেছিলাম পড়ালেখা করতে কিন্তু ও বলেছিলো
:-আমি চাকরী করে আপনাকে খাওয়াবো সেটা হবেনা।আপনি কষ্ট করবেন আর আমি বসে বসে খাবো।হি হি হি হি
আমি মুগ্ধ হয়ে সে হাসি দেখেছিলাম।অদ্রীতা আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার নাক টেনে বলেছিলো
:-পাগল একটা।আমি পড়ালেখা করে সময় নষ্ট করলে ঘরের কাজ কে করবে শুনি?
সেদিন অদ্রীতাকে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলাম আমি।
নার্সের ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।
:-আপনার মেয়ে হয়েছে।মা মেয়ে দুজনই ভালো আছে।(নার্স)
:-আলহামদুলিল্লাহ্।(আমি)
:-মিষ্টি নিয়ে আসুন।
:-আচ্ছা যাচ্ছি।আমি কী একবার ওদের দেখতে পারি?
:-অব্যশই।ভিতরে যান।
আমি ভিতরে গেলাম।অদ্রীতা শুয়ে আছে।আমাকে দেখে ও মুখ ঘুরিয়ে নিলো।আমি বুঝলাম মহারাণী অভিমান করেছে।আমি গিয়ে মহারাণীর পাশে বসলাম
:-মহারাণীর কী রাগ হয়েছে?(আমি)
:-নিশ্চুপ
:-কথা বলবেনা?
:-নিশ্চুপ।
অদ্রীতার এভাবে চুপ করে থাকার কারণটা আমি বুঝেছি।ও বলেছিলো ছেলে হবে।আর আমি বলেছিলাম মেয়ে হবে। আমার কথা ঠিক হয়েছে এই জন্য মহারাণী অভিমান করছে।তবে আমি জানি কীভাবে মহারাণীর রাগ ভাঙ্গাতে হয়।অদ্রীতার কপালে ছোট করে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলাম।
:-একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।(আমি)
:-কী সারপ্রাইজ।?(অদ্রীতা)
:-৫ মিনিট অপেক্ষা করো তাহলেই দেখতে পাবে।
আমি নিশিকে কোলে তুলে নিলাম।অদ্রীতা আগেই নাম ঠিক করে রেখেছিলো।মেয়েটা ঠিক ওর মায়ের মতই দেখতে হয়েছে।আমি কোলে নিতেই কান্না জুরে দিলো নিশি।
:-দেখো অদ্রীতা তোমার মেয়ে আমাকে পছন্দ করেনা। আমি কোলে নেওয়াতেই কান্না জুরে দিয়েছে।(আমি)
:-ঠং কত।দাও আমার কাছে দাও।(অদ্রীতা)
:-না আমার কাছে দাও জামাই।(অদ্রীতার আম্মু)
অদ্রীতা ওর বাবা মাকে দেখে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ওর বাবা মায়ের দিকে তাকাচ্ছে।
:-আম্মু,আব্বু তোমরা এখানে?(অদ্রীতা)
:-জামাই ফোন করে বললো তুই হাসপাতালে তাই তাড়তাড়ি চলে আসলাম।(অদ্রীতার আম্মু)
:-তোমরা চলে যাও।তোমাদের মেয়ে মরে গেছে।
:-আমাদের ক্ষমা করে দে মা।সেদিন তোকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম।(অদ্রীতার বাবা)
:-তুমি ওনাদের চলে যেতে বলো।(আমাকে উদ্দেশ্য করে)
:-অদ্রীতা তারা যখন নিজেদের ভুলটা বুঝতে পেরেয়ে তখন তুমি ক্ষমা করে দাও।আজকের দিনে কারো উপর অভিমান করে থেকোনা।(আমি)
:-তুমি বললে তাই ক্ষমা করলাম।(অদ্রীতা)
নিশিকে অদ্রীতার আম্মু কোলে তুলে নিলো।আমার শুশুর আর শাশুরী নিশিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অদ্রীতা আমাকে ইশারায় ওর কাছে ডাকলো।আমি গিয়ে অদ্রীতার মাথার কাছে বসলাম।
:-তোমাকে কী বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছিনা।আজ আমি অনেক খুশি।(অদ্রীতা)
:-ওই ধন্যবাদ দেওয়ার কী আছে শুনি?আমার বউয়ের জন্য আমি করবো নাতো কে করবে শুনি?তাছাড়া আজ আমি বড় হয়েছি শুধুমাএ তোমার জন্যই।ধন্যবাদতো তোমার প্রাপ্য।(আমি)
:-থাক হয়েছে আর বড় বড় কথা বলতে হবেনা।বাসায় যেয়ে নিই সব ফেরত দিবো।
:-কী ফেরত দিবে?
:-অনেকগুলো পাপ্পি দিবো।
:-এখন দাওনা একটা।
:-ওই দুষ্টু দেখছোনা আব্বু আম্মু আছে।
:-আচ্ছা।
আজ আমিও অনেক খুশি।অদ্রীতার জন্য কিছু করতে পেরেছি এই জন্য অনেক ভালো লাগছে।যে মেয়েটা আমার জন্য বাড়ি ছেড়েছে তার জন্য কিছু করতে পারা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।
আমি অদ্রীতা আর নিশি সবাই মিলে সুখেই আছি।
………………………………………….সমাপ্ত…………………………………………….