তানিশা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, নাসিফের সাথে এই বাসাতে সে আর থাকবে না। কারন একজন বিরক্তিকর দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষের সাথে প্রেম করা যায়, তবে সংসার করা যায় না। তানিশা আজকাল ভেবে অবাক হয়ে যায় কেন এই মানুষটার প্রেমে পড়েছিল সে? কেনই বা বিয়ে করলো?
প্রতিদিন সামান্য ব্যাপার নিয়ে নাসিফ ও তানিশার ঝগড়া হয়। আজ সকালেও হয়েছে। ঝগড়ার বিষয়- কে নিশানকে স্কুল থেকে নিয়ে আসবে?
-নাসিফ, আমার আজ একটা সেমিনার আছে। তুমি নিশানকে স্কুল থেকে নিয়ে এসো।
=তোমার কি ধারনা আমি চাকরী করি না?
-এভাবে কথা বলছো কেন? প্রতিদিন তো আমিই ওকে নিয়ে আসি। আজ নাহয় তুমিই আনলে। সমস্যা কী?
=আমার অনেক কাজ আছে। আমি পারবো না। তুমি চাকরি টাকরি বাদ দাও।
-বাদ দিবো মানে? এমনি এমনি লেখাপড়া শিখছি?
=চাকরি করার এত শখ, তাহলে বাচ্চা নিছো কেন? তখন খেয়াল ছিল না?
-নাসিফ বাড়াবাড়ি করো না। ঠিকভাবে কথা বলো। তুমি নিশানকে আনতে যাবা কিনা বলো?
=না।
-ওকে গো টু হেল।
=নরকেই তো আছি। যত্তসব।
দুজনই মাথা গরম করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। ওদিকে স্কুলে তখন ছোট্ট নিশানকে ম্যাম জিজ্ঞস করলো, “নিশান, তোমাকে কে বেশি আদর করে? আম্মু নাকি আব্বু?”
বাবা মায়ের ঝগড়া দেখে বড় হওয়া নিশান মাথা চুলকায়। প্রশ্নটা বোধহয় সে বুঝতে পারেনি…
নিশানের স্কুল ছুটি হয় সকাল ১১টায়। সাড়ে ১০টায় স্কুলের গেটে ঠিক দশ বছর আগের মত আজ দেখা হয়ে গেলো নাসিফ ও তানিশার। অতীতের মত সেই উচ্ছাস নেই। দুজনার চোখেমুখেই এক ধরনের অপরাধবোধ।
তানিশা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো, “তুমি আসছো কেন?”
নাসিফ বললো, “এমনি। স্কুলে ভর্তি হতে আসলাম। আবার স্কুলে পড়ার শখ হইছে।”
-সেটাই দরকার। ভদ্রতা দায়িত্বজ্ঞান সব আবার শেখানো লাগবে।
=সেমিনারে না গেলে সমস্যা হবে না?
-তাতে তোমার কী? চাকরি ছেড়ে দিছি
=পাগল তুমি??? সত্যি ছেড়ে দিছো?
-না।
=গুড। আচ্ছা কতদিন পর আমাদের এভাবে দেখা হলো, তাই না? অথচ আগের মত কোনো এক্সাইটমেন্ট নাই।
-হুম। প্রতিদিন দেখতে পাও তো, তাই পানসে হয়ে গেছে সব।
=এখানেও ঝগড়া করবা?
-জানি না
=আই এম রিয়েলি সরি।
-ঘরের মধ্যে খোজ নাই, রাস্তায় প্রেম উথলে উঠতেছে! হাস্যকর।
=আইসক্রীম খাবা?
-খাবো।
নাসিফ দুটো আইসক্রীম কিনলো। সূর্যের তাপে গললো আইসক্রীম, দুজনের চোখের নীরব আলাপনে গললো জমানো সব রাগ অভিমান।
ক্লাসরুম থেকে বেরিয়েই নিশান দেখতে পেল তার বাবা মা দুজনেই হাসতে হাসতে গল্প করছে। নিশানের জন্য বিরল একটা দৃশ্য। দৌড় দিলো বাবা মার দিকে…
তবে ঠিক তখনই তানিশা আর নাসিফের আবারো কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেলো। বিষয়ঃ কে নিশানকে কোলে নেবে?
নিশান হেসে বললো, “তোমরা ঠিক করো কে কোলে নিবা। আমি তানিয়া ম্যামকে একটা কথা বলে আসি!”
তানিশা আর নাসিফ একসাথে প্রশ্ন করলো, “কি কথা?”
নিশান উত্তরে বললো, “একটা প্রশ্নের উত্তর! তোমাদের বলা যাবে না!”,