তোমার কথা ভেবে

তোমার কথা ভেবে

পিয়াস আমার পক্ষে আর মেনে নেয়া কিছুতেই পসিবল নয়।তোমার কথা ভেবে আমি এতো দিন সব সহ্য করেছি।কিন্তু আর না।
কি হয়েছে অনু?আমি মাত্র অফিস থেকে আসলাম আর তুমি এখন ই শুরু করে দিলে?বলো কি হয়েছে?
–তোমার মা কে আমি আর নিতে পারছি না। এখন প্লিজ তুমি একটু কিছু করো।
—মা আর আর কি করল?
–কি করেনি সেটা বলো?
—আরে কি করেছে সেটাই জানতে চাচ্ছি।
–তোমার কথাতে তোমার মায়ের জন্য ভোর সকালে উঠে তার জন্য ওজুর গরম পানি করে দেই।সব কাজ করি কিন্তু আর সম্ভব হচ্ছে না।
–মায়ের বয়স হয়েছে তাই ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে ঠান্ডা লাগবে তাই তো,,
আর মায়ের সব কাজ করার জন্য এক কাজের লোক রাখা আছে।উনি সকালে আসে না তাই তোমাকে বলেছি গরম পানি করে দিতে।
—হয়েছে হয়েছে তোমার মায়ের হয়ে আর সাফাই দিতে হবে না।আজ দুপুরবেলা রহিমা ছুটি নিয়েছিলো তোমার মাকে দুপুরের খাবার আমি দিয়েছিলাম।খেতে বসে কি করলো জানো?
—না বললে কি করে জানবো? প্লিজ কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো আমি অনেক টায়ার্ড।
–খেতে বমি করে দিলো।ছি: কি বিচ্ছিরি অবস্থা।তার পর আমাকে সব পরিষ্কার করতে হলো।এই ভাবে চললে তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।এখন তো বয়স্ক দের দেখা শোনা করার জন্য বিভিন্ন এনজিও রয়েছে।তুমি সেখানে তোমার মাকে রেখে আসো তারা ভালো করে দেখা শোনা করবে।
–তুমি কি মাকে নিজের মায়ের মতো ভেবেছো? প্রতিটি কথায় তোমার মা তোমার মা।আর মাকে বৃদ্ধাশ্রমে আমি বেচে থাকতে কখনওই না।
–তবে আমাকেই চলে যেতে হবে।
—সেটা তোমার ইচ্ছে।কিন্তু তুমি সব কিছু জানো তবুও আবার বলছি।খুব ছোট বয়সে বাবাকে হারাই।এর পর মা অনেক কষ্ট করে আমাকে বড় করে।এই যে আমি এই সুট বুট পরে ঘুরে বেড়াই তা আমার মায়ের জন্য।প্রতিটি সন্তান যখন জন্ম নেয় তখন বাবা মা তাদের কত যত্নে বড় করে।আর সেই বাবা মা কিনা একটা সময় বোঝা হয়ে যায়?
তুমি কি চাইবে তোমার বাবা মাকে কোন বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা হোক?
তখন অনুর ফোনে একটা কল আসে।
অনু কথা বলতে শুরু করে।ওকে কথা বলতে দেখে আমি গেলাম ফ্রেশ হতে।
কিছু ক্ষণ পরে এসে দেখি অনু কান্না করছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
—পিয়াস আমাকে মাফ করে দাও।আমার উচিত হয় নি মাকে নিয়ে এই সব কথা বলা, প্লিজ মাফ করে দাও।
–(বুঝতে পাড়লাম অনুতপ্ত হয়েছে)ঠিক আছে সমস্যা নেই।কান্না থামাও।মা -বাবা আমাদের খুব আপন জন।
—তোমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর কথা বলেছি কিন্তু তুমি রাজি হলে না আর আমার ভাই মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে শুধু মাত্র ভাবি একবার বলাতে।
তখন বিষয়টা বুঝতে পারলাম যে অনুর মা ফোন করেছিলো। আর বলেছে যে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে।
আমি অনুকে বলি তৈরি হয়ে নাও।
–এই রাতে কই যাবো?
—তোমাদের বাড়িতে।
–কেনো?
—আব্বা আর আম্মাকে আমাদের বাড়িতে আনব।ওনারা আমাদের কাছেই থাকবে।হয়ত তাদের প্রতিদিন রাজকীয় খাবার দিতে পারব না।নিজেরা যা ডাল ভাত খাই তা দিয়ে তাদের ও খাওয়াবো।
আমার যা ইনকাম হয় তা দিয়ে আমাদের ৫ জনের চলে যাবে।
তার পর অনুর চোখে পানি ছল ছল করতে লাগল।
আর কাদতে হবে না যাও রেডি হয়ে আসো।আমি মায়ের কাছে বলে আসি মা অনেক খুশি হবে।
মাকে বলতেই মা অনেক খুশি হলো আর বলল আমার একটা বান্ধুবী জুটল যার সাথে কথা বলতে পারব।
এর পর আমরা গিয়ে আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে নিয়ে এলাম।হয়ত তাদের রাজকীয় ভাবে রাখতে পারি না।কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালোবাসা অবিরাম।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত