নমস্কার বন্ধুর , আমি নিরব ।
আজ আপনাদের শোনাবো ভালোবাসার ছোট্ট একটা গল্প । ভাল লাগলে নিচে কমেন্ট করবেন এবং লাইক দিয়ে আমাকে আরো গল্প লেখার জন্য অনুপ্রেরণা দেবেন , ধন্যবাদ ।
” ভালোবাসা ”
‘আমাদের জীবনে ভালোবাসা খুব দরকার , কারণ ভালোবাসার শক্তির কাছে এই পৃথিবীর সমস্ত শক্তি হার মনে ‘ – কথা টা লিখে নিজের ডাইরি টা বন্ধ করলাম । আসলে এটা আমার দৈনিক কাজ বা হবি ও বলা যায় । প্রতিদিন রাতে আমি ঘুমাতে যাবার আগে এই রকম ছোট ছোট লাইন আমার ডাইরি তে লিখে ঘুমাই । আসলে এই একটা লাইন আমার জীবনের ঐ দিনটি তে কি ঘটলো তার প্রতিছবি বহন করে । আজ আমার জীবনে এমন অনুভূতি কারণ আমার কলেজের রিতা আমার ভালোবাসা আজ আমাকে প্রপোজ করেছে ।
আচ্ছা এবার তাহলে পরিচয় পর্ব টা সেরে ফেলি । আমি মনে অরূপ সেন শর্মা , কলকাতা মেডিকেল কলেজের 3rd year এর ছাত্র এবং কলকাতার সবথেকে বড় হস্পিটাল চেন এর একমাত্র উত্তরাধীকরি । আর রিতা মনে রিতা মুখার্জী হল আমার কলেজের 1st year এর ছাত্রী ।
আমি বড়লোক হবার জন্য এবং দেখতে স্মার্ট ও সুন্দর হবার জন্য আমার কলেজের প্রতিটা মেয়ে চাইতো যে আমি তাদের বয় ফ্রেন্ড হই । এই তিন বছরে বেশ কিছু প্রোপোজাল ও পেয়েছি । তবে ওসব দিকে কখনো মাথা দিইনি । আসলে প্রেম করব বলে কোন খেয়াল কখনো আমার মাথা তেই আসেনি , বা এমন টও বলা যেতে পারে যে অমন কাউ কে পাই নি যাকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে । তবে রিতা কে দেখার পর থেকে যেন আমার মনের মধ্যে একটা ভাল লাগা জন্মায় । আমাদের প্রথম দেখা হয় আমাদের কলেজের ফেস্ট এর দিন । সবুজ রঙের একটা চুড়িদার পরে মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের ‘ভালবেসে সখী’ গানটা গাইছিল । শুনে মনে হবে আজকের এই মডার্ন দিনে ফেস্ট এর সময় অমন পুরাতন রবি ঠাকুরের গান , কিন্তু সেই গান যতক্ষণ চলেছিল ততক্ষণ যেন সবাই মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে ছিল । গান শেষ হলে সকল কে ধন্যবাদ জানিয়ে সে মঞ্চ থেকে নেমে যায় । প্রথম নজড়েই যেন তার প্রেমে পরে যাই আমি । ভাবতে পারেন আমার মতন কাজ পাগল ছেলে , যে সারাক্ষণ তার পড়াশোনা আর রুগী দেখা নিয়ে পরে থাকে সেই আমি সেদিন পাগলে মতন সব পড়াশোনা রুগী দেখা ছেড়ে দিয়ে তার মুখের কথা চিন্তা করেছি গোটা রাত ধরে । পরের দিন সকালে কলেজে গিয়ে রিতার সম্বন্ধে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম যে সে প্রথম বর্ষের ছাত্রী । তার পর থেকে দিন গুলো বেশ ভালই কাটছিল । রোজ রাতে রিতাকে স্বপ্নে আমার সাথে ঘুরতে দেখতাম ভালোবাসার কথা বলতে দেখতাম আর সকালে লুকিয়ে লুকিয়ে রিতার সুন্দর মুখটাকে দেখতাম । ধীরে ধীরে সময় যত এগোতে লাগলো আমার মনের মধ্যে রিতা আর ভিতরে প্রবেশ করতে থাকলো । যখন বুজতে পারলাম যে আমি রিতার প্রেমে পড়েছি তখন ঠিক করলাম যে রিতা কে একদিন বলেই দেব । সেই মতন কাজ শুরু করলাম । প্রথমে রিতাকে নিজের বন্ধু বানালাম । তবে দেখতাম রিতা বেশ আমাকে ইগ্নোর করেই চলত । কেন তা বুঝতে পারতাম না । একটু একটু করে সময় এগোতে থাকলো । রিতা আর আমার মধ্যে বন্ধুতের সম্পর্ক টা বেশ অনেকটা এগিয়ে গেল । এখন আমরা খুব ভাল বন্ধু , ঐ যাকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড । রিতা এখন আমার সাথে বেশ ফ্রী , আর আমাকে ইগ্নোর করে চলে না । তাই ঠিক করলাম এত দূর যখন এগিয়েছি এবার আমার মনের কথাটা রিতা কে বলে দিই । ভাবনা অনুসারে একদিন কলেজ এর পরে রিতা কে কলেজ এর পাশের ক্যাফে তে ডাকলাম । রিতা কোন কিছুই না ভেবে চলে এল । বেশ কিছু ক্ষণ ধরে গল্প করার পর রিতা কে বললাম ‘ রিতা তোকে একটা কথা বলব ? ‘ ; রিতা বলল, ‘ হুম বল না কি বলবি ‘ ; আমি, ‘ রিতা আমি তোকে ভালবাসি , তুই …. ‘ ( আমি আর কিছু বলার আগেই রিতা আমাকে বলল ) ‘ অরূপ আমি তোকে আমার ভাল বন্ধু ভাবতাম , কিন্তু তুইও আর সবার মতন এই মতলবে আমার বন্ধু হলি ?? তাহলে শোন আর সবার জন্য আমার যা উত্তর তর জন্যও আমার তাই উত্তর অর্থাৎ না । আমাকে কে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিতা ক্যাফে এর বাইরে বেরিয়ে গেল । আমিও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলাম । কি আর করব ? যদিও আমি হার মানি নি । এর পরেও অনেকবার অনেক রকম ভাবে চেষ্টা করেছি রিতা কে নিজের করার কিন্তু সফল হই নি ।
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল । আমি আর সেরকম কোন কথা বলি না রিতার সাথে , না সেও আমার সাথে কোনরকম কথা বলেনা , সবসময় আমাকে এড়িয়ে চলে । ওর থেকে আমি দূরে চলে এসেছি ঠিকই কিন্তু এখন ওকে ভুলতে পারিনি । আমি বাড়িতেও সব বলেছি মা বাবা দুজনেই জানেন রিতার কথা । তারা আমাকে বলেছেন যে যদি রিতা আমাকে বিয়ে করার জন্য মানে আমার ইন্টার্ন শেষ করা অবধি তাহলে তাদের কোনো অসুবিধা নাই রিতা কে নিজের বাড়ির বউ করে আনতে , আর যদি না মনে তাহলে তাদের পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করতে হবে । আমিও তাদের এই কথার উপরে আর কোন কথা বলি নি ।
বেশ কিছু দিন হল কলেজ এ শুনলাম যে অভীক নামের একটি ছেলে , যাকে ক্যাম্পাস এর সকলে বখাটে এবং নোংরা চরিত্রের ছেলে মানে সে নাকি রিতা কে কু প্রস্তাব দিয়েছে । কথা টা শুনে তো আমার মাথায় আগুন ধরে গেল কিন্তু যে আমাকে এই খবর টা দিল সে বলল, ‘ ভাই ভাই এত উত্তেজিত হস না , রিতা অভীক এর কথার উত্তরে ওর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরেছে ‘ । এই কথা শুনে মনে মনে বেশ শান্তি পেলাম , রাগ টও একটু কোমল ।
একদিন রাতে আমি আমার বিএমডাব্লিউ গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলাম । অমন সময় দেখলাম রাস্তায় কয়েকটা ছেলে একটা মেয়ে কে ঘিরে রেখেছে । দেখে তো মনে হল যে ওরা মেয়ে টাকে বিরক্ত করছে । এরকম একটা কাজ নিজের চোখের সামনে হতে দেখে কি আর নিজেকে আটকে রাখা যায় বলুন ? তাই তারা তড়ি গাড়িটা পার্ক করে ঐ ছেলেগুলোর দিকে গেলাম । গিয়ে যা দেখলাম তা আমি স্বপ্নেও কোন দিন আশা করি নি । সেই মেয়েটি আর কেও নয় আমার রিতা আর যে ছেলে গুলো তাকে জালাতন করছিল তারা হল কলেজের অভীক আর ওর সঙ্গোপাঙ্গরা । রিতা আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল । রিতা নিচু ভয় মাখা কন্ঠে আমাকে বলল, ‘ অরূপ আমাকে বাঁচাও ‘ । তখনই মাতাল অভীক আমাকে বলল, ‘ এই অরূপ রিতা কে ছাড় , ও শুধু আমার , আজ আমি ওকে ভোগ করব , তারপর বিয়ে করব আর আমার দাসী করে রাখবো । এই কথাটা শুনে তো আমার মাথায় আগুন চোর গেল । আমি রিতার হাত ছড়িয়ে অভীক কে প্রচন্ড পেটাতে শুরু করলাম । অভীক এর যখন অধমরা অবস্থা তখন অভীক কে বাঁচাতে ওর দলে একটা ছেলে পিছন থেকে ছুরি দিয়ে আমাকে আঘাত করল । সঙ্গে সঙ্গে আমি অভীক কে ছেড়ে দিয়ে দেখলাম আমার কাঁধ থেকে রক্ত বেরিয়ে গোটা শার্ট টাকে লাল করে দিয়েছে । এরই মধ্যে বাকি ছেলে গুলো অভীক কে নিয়ে পালিয়েছে । রিতা আমার ক্ষতর দিকে তাকিয়ে শুধু কেঁদে যাচ্ছে , কোন কথা বলছে না । রিতার অমন অবস্থা দেখে আমি বেশ শান্ত গলায় বললাম, ‘চল আমাকে হস্পিটালএ নিয়ে চল ‘ । রিতা তখনো কিছু বলল না । যখন আমি ওর একটু কাছে গেলাম ও আমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে শুরু করল । আমি অনেক কষ্টে ওকে থামিয়ে আমাদের হস্পিটালএ পৌছলাম এবং সেখানে আমার ট্রীটমেন্ট শুরু হল । ইতিমধ্যে আমার বাবা মা খবর টা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসেছে হস্পিটালএ । বাবা এসেই প্রথমে আমাকে চেক করে বললেন তেমন কিছু হয়নি , কিছু দিন আরাম করলে ঠিক হয়ে যাবে । মা কিছু টা শান্ত হয়ে দেখলেন যে আমার ওয়ার্ড এর সামনে বসে একটা মেয়ে শুধু কেঁদেই চলেছে । মা রিতার কাছে গিয়ে রিতাকে কি হয়েছে জানতে চাইলে রিতা বলে, ‘ এন্টি ঐ যে বেডে যে ছেলে টা রয়েছে অরূপ ওও আমাকে ভালোবাস্ত আর আমি ওকে রিজেক্ট করেছিলাম , কিন্তু তা সত্তেও ও আজ নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আমকে বাঁচাল । আমার জন্য আজ ওর এই অবস্থা , আমি নিজেকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারব না । ‘ মা , ‘ ও তুমি তাহলে রিতা , আমার অরূপের ভালোবাসা । আসলে জানত ও তোমাকে খুব ভালোবাসে । আর একটা কথা তুমি বিনা কারণে এমন ভাবে কাঁদছো কেন ? কেঁদো না একদম । কারণ আমি আমার ছেলে কে চিনি , আজ যদি তুমি ওখানে না থাকতে তাহলেও ও একই কাজ করত । তাই নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ কর । ‘ রিতা ,’ কি ? অরূপ আপনার ছেলে ?’ মা ,’ হুম মা , অরূপ আমার ছেলে । ‘ রিতা এর পর আর কিছু বলতে পাড়লো না ।
বেশ কিছু দিন পর আমি একটু সুস্থ হয়ে আবার কলেজ জয়েন করলাম , রিতা আমাকে একা দেখা করার জন্য ডাকে সেই ক্যাফে টা তেই । আমি গেলে রিতা আমাকে প্রপোজ করল । কিন্তু আমি রিতা কে বললাম ,’ রিতা আমি তোমাকে ভালবেসেছি নিজের জন্য ,মনথেকে , প্রানথেকে । আমি তোমার উপকার করেছি বলে তুই আমার ঋণ শোধ করতে নিজেকে আমাকে সপে দিচ্ছো । কিন্তু আমি তো তা চায়নি । আমি তো চেয়েছি তুমি আমকে ভালোবাসবে , মনথেকে আমাকে স্বীকার করবে । যেমনটা আমি করেছি , নাকি আমার ঋণ শোধ করবে । তাই আমি তোমার প্রোপোজাল অ্যাক্সেপ্ট করতে পারলাম না । সরি আমাকে ক্ষমা করে দিও । যদি কোনদিন আমাকে মন থেকে ভালোবাসতে পারো তাহলে আবার আমার কাছে এস , আমি তোমাকে আমার করে নেব । আজ আসি । ‘ এই বলে আমি ক্যাফে থেকে বেরিয়ে চলে এলাম । এই ঘটনার কিছুদিন পর আমাদের কলেজের ফেস্ট ছিল । এটা এই কলেজের আমার শেষ ফেস্ট । কারণ আর চার মাস পরে আমার ইন্টার্ন শেষ আর আমি কলেজ থেকে বিদায় নেব । তবে জানতাম না যে এই ফেস্ট টা আমার জীবনের সবথেকে সুন্দর ফেস্ট হবে । প্রথমবার এর মতো এবারেও রিতা ফেস্ট এ গান গাইতে এল । তবে এবারে গানটা আলাদা । অরিজিত সিং এর গাওয়া ‘ জনম জনম ‘ । বেশ অবাক হলাম রিতার মুখে হিন্দি গান শুনে । গান শেষ হল তবে রিতা স্টেজ থেকে নমল না । স্টেজ দাড়িয়ে সকল কে ধন্যবাদ জানানোর পর সকলের সামনে কোমল কন্ঠে আমার উদ্দেশে বলল ‘ অরূপ আমি তোমাকে ভালবসি । ‘ বলে স্টেজ থেকে নিচে নেমে গেল আর সঙ্গে থাকলো বাকি ছাত্র ছাত্রী দের হাততালি । যখন বুঝলাম রিতা এবার আমাকে সকলের সামনে নিজের মন থেকে প্রপোজ করেছে , নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না । রিতার কাছে গিয়ে ওকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম ।
(৫ বছর পর )
আজ আমার আর রিতার বিয়ে । বাবা মা তাদের দেওয়া কথা রেখেছে , রিতার বাবার ও কোন আপত্তি নাই এই বিয়ে তে । তাই আজ আমাদের এক হবার দিন , আজ আমাদের ভালোবাসা উথযাপনের দিন । আপনার আমাদেরকে আশীর্বাদ করুন যাতে করে এই ভাবেই চিরকাল আমরা একে ওপর এর সাথে , একে ওপর এর জন্য বেঁচে থাকতে পরি , কোনদিন যেন আমাদের মধ্যে ভালোবাসা কমে না যায় ।
বন্ধুর আজকের জন্য তাহলে বিদায় । 😃😃