সকাল ১০টায় হঠ্যাৎ করে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো আবির এর ফোনে।
-হ্যালো কে?
-ওই কত্তা এতক্ষণ কোথায় ছিলি?
-ইয়ে মানে,,আপনি কে?
-ওওওও,,এখন তো ভুলে যাবি তাই না।
-আসলে সত্যি বলতে আপনি কে?
-কলেজে আয় তারপর বুঝবি আমি কে।
-আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে মনে হয়।
-এত কথা বুঝি না ১০:৩০ এর আগে যেন কলেজে তোকে পাই। টু টু টু টু…… ফোন টা কেঁটে দিল।
. আবির কিছুই বুঝতে পারলো না।আর বুঝার চেষ্ঠা ও করলো না,কারণ ওর এই রকম কোন মেয়ে বন্ধু নাই। ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাএ আবির।কলেজে ভর্তি হইছে যে বেশি দিন হয় নি।১০:৩০ এ আবিরের ক্লাস আছে তাই কলেজের দিকে রওনা দিল।১০ মিনিট পর আবার একই নাম্বার থেকে কল আসলো।
-হ্যালো।
-ওই কুত্তা এখনও আসলি না যে।
-আগে বলছি আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
-তোর কিন্তু আজ খবর আছে কইলাম।
-আপনার সমস্যা কি বলেন তো?
-সমস্যা তো তোর আমার না।
-আপনি নাম্বার টা একটু চেক করে দেখেন তো কার কাছে কল দিছেন। এটা বলে কলটা কেটে দিল আবির।আর ক্লাসে ডুকে গেল।
.
ক্লাসের সবচেয়ে শান্ত ছেলে আবির। কারো সাথে তেমন কোন কথা হয় না।আর তার পরিচিত কেউ নেই তার সাথে।গ্রাম থেকে ভাল রেজাল্ট করে কলেজে চান্স পাইছে তাই আর হাত ছাড়া করতে চায় নি।মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আবির।মা বাবার একমাএ ছেলে,তাই ওকে নিয়ে আসা টাও একটু বেশি।স্কুল লাইফে থাকতে যে রকম পড়া লিখার প্রতি মনোযোগী ছিল ঠিক তেমনি কলেজ লাইফে ও।প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকে। ১টায় কলেজ শেষে বাসার দিকে রওনা দিবে এমন সময় পিছন থেকে একটা মেয়েলী ডাক দিল।
-এই যে হ্যালো, মি.আবির।
-হুম বলেন।
-কেমন আছো?
-ভাল আছি।আপনি?
-হুম ভাল।
-আচ্ছা।
আর কিছু না বলে আবার বাসার দিকে চলতে লাগলো আবির। আবার পিছন থেকে ডাক দিলো।
.
-এই যে হ্যালো
-হুম
-তোমাকে যেতে বলছি আমি।
-আর কিছু বলবেন নাকি
-না।
-আচ্ছা
-ওই দাড়াও।
-হুম বলেন।
-আমাকে চিনো?
-না তো
-কি বল!! আমরা একি সাথে ক্লাস করি আর তুমি বলছো চিনো না
-আসলে আমি একটু এ রকম।
-আচ্ছা,আমি হিমু
-ও,সুন্দর
-কী??
-আপনার নাম।
-ধন্যবাদ। তুমি তো আবির।
-হুম।আচ্ছা এবার আসি।
-কই যাও দাড়াও।
-আর কিছু বলবেন।
-না,যাও।মজা করছিলাম।
,
বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে খাওয়ার খেতে যাবে এমন সময় সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো।
-হ্যালো
-আসলে আমি সকালের জন্য দুঃখিত।আমি আমার ফেন্ডের কাছে কল দিছিলাম আর নাম্বার ভুল হয়ে আপনার কাছে চলে গেছে।সরি।
-না ঠিক আছে,
-তো আপনার নাম টা জানতে পারি।
-আবির।
-ও।কি করছেন?
-তেমন কিছু না।
-আচ্ছা,রাখি।
-হুম।
,
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার ফোনে একটা মেসেজ।মেসেজ টা না দেখে ফ্রেস হতে চলে গেল। ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে কলেজের দিকে রওনা হলো।ক্লাসে ডুকে প্রতিদিনের মত একা একা বসে পড়ছিল আবির।তখন হিমু এসে বলল
-এই যে মি.আবির
-হুম।
-আমি কি তোমার সাথে বসতে পারি?
-………(কিছুই বললনা)
-বসবো??
-আচ্ছা।
-কি পড়ছেন।
-তেমন কিছু না।
-একটা কথা বলি.
-হুম,
-তুমি এ রকম লাজুক টাইপের কেন?
-………..(কিছুই বললনা)
-একটা প্রশ্ন করছিলাম কিন্তু?
-এমনি।
-ওওও আচ্ছা।
-একটা রিকুয়েস্ট করবো রাখবে?
-রাখার মত হলে?
-তোমার ফেসবুক আইডি টা পেতে পারি
-আচ্ছা। আবির রহমান
-ওকে,আমি কিন্তু রিকুয়েস্ট দিবো
-আচ্ছা
,
ক্লাস শেষে বাসায় আসলো,রাতে ফেসবুক এ লগ ইন করে দেখে একটা রিকুয়েস্ট আসছে। রিকুয়েস্ট টা এক্সেপ্ট করলো।কিছুক্ষণ পর সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে কল।
-হ্যালো
-হুম বলেন
-কেমন আছো?
-ভাল, আপনি?
-হুম ভাল,কি করছেন এখন?
-কিছু না, আপনি?
-আমিও।একটা কথা বলবো?
-হুম বলেন?
-আপনার গার্লফেন্ড আছে?
-ইয়ে মানে না।
-বিশ্বাস হয় না।
-বিশ্বাস না হলে তো আমার কিছু করার নেই। এভাবে সেই অপরিচিত মেয়েটার সাথে প্রতিদিন কথা হতো আবিরের। আর কলেজে গেলে হিমুর সাথে।অনেক দিন চলতে লাগলো এ ভাবে। হঠ্যাৎ একদিন।আবিরের আম্মু কল দিয়ে বলল ওর আব্বুর শরীর টা নাকি খুব খারাপ তাই ওকে গ্রামে যেতে হবে। আর শুভ সাথে সাথে গ্রামের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল। প্রায় এক সপ্তাহ গ্রামে ছিল আবির,তারপর আবার শহরে চলে গেল।আর এ এক সপ্তাহ হিমুর সাথে আর অপরিচিত মেয়েটার সাথেও কোন কথা হলো না।ফোন টা অফ ছিল আবিরের। এক সপ্তাহ পর কলেজে গেল আবির। ক্লাসে ডুকবে এমন সময় আবির অনুভব করলো কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরছে।
-কোথায় ছিলে তুমি?(গম্ভির কন্ঠে)
-কি করছো হিমু।সবাই দেখছে তো।ছাড় আমাকে।
-আচ্ছা,এবার বল কোথায় ছিলে এত দিন
-গ্রামের বাড়িতে।
-আমাকে বলে যাও নি কেন।
-আসলে হঠ্যাৎ করে সব কিছু হয়ে গেল তাই আর বলা হয় নি।
-বুঝালাম, হঠ্যাৎ করে কিন্তু ফেসবুক এ একটা মেসেজ তো দিতে পারতে
-ফোনটা অফ ছিল।তাই আর পারি নি।
-আচ্ছা, চল ক্লাসে চল।
,
বাসায় যাওয়ার সাথে সাথে অপরিচিত সেই নাম্বার থেকে কল।
-হ্যালো
-কোথায় ছিলে এত দিন।তোমাকে আমি কত বার কল দিছি। কিন্তু তোমার ফোন ছিল।কিন্তু কেন।
-গ্রামের বাড়িতে গেছিলাম তো তাই।
-অনেক ধরে তোমাকে একটা কথা বলবো ভাবছিলাম।
-হুম বলেন?
-আমি তোমাকে ভালবাসি.
-কি?
-সত্যি আমি তোমাকে ভালবাসি
-কিন্তু আমি আপনাকে বাসি না, আপনাকে কোন দিন দেখিও নি।
-তুমি কি কাউকে ভালবাসো?
-না,কিন্তু একজনের প্রতি খুবই দুর্বল আমি।
-কে সে জানতে পারি।
-হিমু।
-ও তোমাকে বাসে?
-তা জানি না,আর জানতে ও চাই না।
-কেন?
-কারণ,আমি জানি ও আমাকে কখনও ভালবাসবে না।
-ও
-আপনি যদি আমাকে আর ফোন না দেন তাহলে আমি খুশি হবো।
-ওকে। ভাল থাকবে।
,
আবির যে দিন প্রথম হিমু কে দেখে সে দিন থেকে ওকে ভাল লাগে তার কাছে,কিন্তু ও কখন বলতে চায়নি কারণ যদি তাদের ফেন্ডশিপ টা নষ্ট হয়ে যায় সে জন্য।
,
পরের দিন কলেজে গেল আবির। কিন্তু হিমু কে দেখতে পেলো না।কলেজ শেষে বাসায় গিয়ে ফেসবুক মেসেজ দিলো।কিন্তু কোন রিফলাই ফেলো না।রাতে আবার মেসেজ দিলো কিন্তু তখন ও রিফলাই দিলো না।আর আবিরের কাছে হিমুর ফোন নাম্বার টা ও নাই। পরের দিন ও হিমু কলেজে আসেনি।এভাবে প্রায় চার থেকে পাঁচ দিন হিমু কলেজে আসে না।তারপর আবির হিমুর এক বান্ধবী কে জিজ্ঞেস করলো হিমুর কি হয়েছে কিন্তু ও কিছুই বললনা, তারপর হিমুর নাম্বার চাইলো,আর নাম্বার টাও নিলো। বাসায় এসে কল দিলো হিমুর কাছে।
-হ্যালো।
-হিমু তোমার কি হয়েছে?
-কিছু হয় নি তো
-তাহলে কলেজে আসছো না যে?
-এমনি।
-কেমন আছো তুমি?
-ভাল।তুমি?
-ভাল না।
-কেন কি হয়েছে?
-জানি না।
-ও
-কাল আমার সাথে দেখা করতে পারবা?
-আচ্ছা।
,
বিকাল ৪টায় তাদের দেখা করার কথা কিন্তু হিমুর কোন খবর নাই আধ ঘন্টা পর হিমু আসলো ।
-সরি, তোমাকে অনেক অপেক্ষা করালাম
-কোন সমস্যা নেই।
-কিছু বলবে।
-হুম।
-আমি জানি তুমি আমাকে কি বলতে চাও।
-মানে?
-তুমি বলবা তুমি আমাকে ভালবাস,কিন্তু আমার পক্ষে তা সম্ভব না।
-…………কিছু বলনা
-কিছু বল।
-ওকে, ভাল থেকো।
এই কথা বলে আবিরে চলে যাচ্ছে, তখন হিমু কল দিল।
-হুম বল
-একটু আবার আসবে?
-কেন?
-আসলে বুঝবা।
আবার গেল আবির।হিমু বলল
-বসো।
-কেন?
-আজব তো,বসার জন্য বলছি বসো।
-আচ্ছা।
কেউ কিছু বলছে না, হঠ্যাৎ করে আবিরের ফোনে কল
সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসলো।
“একটু কল দিবা প্লিজ”
,
কিছুক্ষণ পর আবিরে হিমু কে বলল,একটা কল দিতে হবে তুমি বসো আমি আসছি। কল দিল আবির।
-হ্যালো।
-কল দিতে কেন বলছো
-পিছনে তাকাও।
-কেন
-আরে বাবা তাকাও না।
পিছনে পিরে তো আবির অবাক। কারন ফোনে যে
মেয়েটার সাথে কথা বলছে ও হিমু।
-মানে তুমি হিমু?
-আরে গাধাঁ এত দিনে বুঝলাম।
-হুম।
-এদিকে আসো।
তারপর আবির হিমুর পাশে গিয়ে বসলো।আবির বললো
,
-আমাকে আগে বলনি কেন তুমি হিমু?
-তুমি জানতে চাইছিলা কখনো?
-……… কিছুই বললনা
-তোমার ফোনটা দেখি।
-কেন
-দিতে বলছি দাও।
-এটা কি?
“আমি হিমু”
-সত্যি আমি এটা দেখিনি।
-তো এখন তো দেখছো।
-হুম।
-কিছু বলবা না।
-বলে লাভ কি।
-একটা দিবো না।
-আচ্ছা বাবা,বলছি।
“আই লাভ ইউ”
-বাংলায় বল
-আমি তোমাকে ভালবাসি হিমু।
-আমিও।