কিছু কিছু সময়, আমার উনি মানে আমার বৌ প্রান্তি এর ব্যাবহার দেখলে অবাক না হয়ে পারি না । আমার রাগটাও একটু বেশী । মাঝে মাঝে রাগও হয়ে যায় ।
গত রাতে একটা পার্টি ছিলো । অফিসের বাৎসরিক পার্টি । অনেক কাপল আসছিলো । আমি আর প্রান্তিও গেছিলাম । ৯ টার দিক খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম । তারপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম ।
আসার সময়ই দেখলাম প্রান্তি মুখ গোমড়া করে বসে আছে । তখন আর কিছু বললাম না ।
বাসাই ফিরে ফ্রেশ হলাম । তারপর রুমে গিয়ে দেখি, প্রান্তি অন্য দিক তাকিয়ে মুখ গোমরা করে বসে আছে ।
কি ম্যাডাম, কি হল আপনার~ আমি বললাম ।
কিছু বলল না প্রান্তি ।
আমি আবারও বললাম,
কিছু হয়ছে নাকি ? না আমি আবার কিছু করছি ?
তবুও কিছু বলল না ।
এবার মেজাজটা একটু গরম হয়ে গেল । কিন্তু মেজাজ শান্ত করে, আমি প্রান্তির কাছে গিয়ে বললাম,
কিছু হয়ছে ? কোন সমস্যা হলে না বললে বুঝবো কেমন করে ।
এখনও চুপ করে বসে থাকলো ।
প্রান্তির কাঁধে হাত দিলাম । এক ঝটকা মেরে আমার হাত নামিয়ে দিল ।
আজকের মুডটা অনেক ভালো ছিলো । কিন্তু আর সম্ভব না । মেজাজ অনেক গরম হয়ে গেল ।
ধমকের দিয়ে বললাম,
চুপ করে আছো কেন ? এতক্ষন ধরে কথা বলছি কানে যাচ্ছে না ?
প্রান্তি তখন বলল,
আমার সাথে তো রেগেই কথা বলবা । আর পার্টিতে অতগুলো মেয়ের সাথে দাড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছিলে ।
এতক্ষন যে ভাল করে কত কথা বললাম তখন কানে গেল না । – এবারো জোরেই বললাম ।
অতগুলো মেয়ের সাথে তোমার কথা কি ?? ( প্রান্তি )
সকলে আমার কলিক বা জুনিয়র ছিল । শুধু মেয়ে ছিল না তো, মেয়েদের হাসবেন্ড আর অনেক ছেলেও ছিলো । (আমি)
ছেলেদের স্ত্রী ছিলো না ? (প্রান্তি)
ছিলো, তো ?(আমি)
তাহলে আমাকে তোমার সাথে
রাখলে না কেন ? (প্রান্তি)
এই কথা শুনে আমি নিজেই বেকুব হয়ে গেলাম । বললাম,
তুমি নিজেইতো এমডি স্যারের বৌ এর সাথে গল্প করতে করতে চলে গেলে ।
তা তুমি আটকাবা না ? (প্রান্তি)
আমি কি আর জানতাম, আমি কলিকদের সাথে গল্প করবো আর তুমি এই ইস্যু নিয়ে ঝগড়া করবে । (আমি)
কি বললে তুমি ? ( বলে দুই হাত এগিয়ে এলো প্রান্তি)
আমি আবার কি ভুল বললাম তাই ভাবতে লাগলাম ।
প্রান্তি আমার দিকে রাক্ষসীর মত তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
কি বললে আমি ঝগড়া করছি ? আমি ঝগড়াটে ?
তো ঝগড়া করছো, না আমার গুনগান গাচ্ছ ?(আমি)
আমি আগাগোড়ায় ঝগড়া বেশি করতে পারি না । স্কুল কলজে আমার সাথে কারো ঝগড়া বাঁধলে কিছু কথা বলে মারামারী শুরু করে দিতাম ।
প্রান্তির সাথে তো ঝগড়া করে কখনোই পারবো না ।
আবার, মারতেও তো পারবো না ।
শেষে আমিই বললাম,
ভুল হয়ে গেছে । মাপ করে দেন । আমার বাবা মা আপনার হাতে তুলে দিছে আপনি যা বলবেন তাই শুনতে হবে ।
প্রান্তি তবুও রাগে গজগজ করতে লাগলো ।
রাত অনেক হয়ছে । এখন না ঘুমোলে আর সকালে অফিস করতে পারবো না ।
জল খেয়ে শুয়ে পরলাম ।
তারপর বাঁধলো আরেক ঝামেলা । হাল্কা শীত, কম্বল একটা । প্রান্তি শুয়ে ওর দিকে কম্বল টেনে নিলো ।
আমি আবার কম্বল টেনে নিয়ে
বললাম,
কম্বল টানছো কেন ?
শীত শুধু তোমারই লাগে, আমার লাগে না ? – বলে, প্রান্তি আবার কম্বল টেনে নিল ।
আমি কিছু না বলে, পুরো কম্বলটায় প্রান্তির দিকে ছুঁড়ে দিলাম ।
আমার কম্বল লাগবে না, কাল আমার কম্বল আমি কিনে আনবো ।
বলে কম্বল আমার গায়ের ওপর ছুড়ে দিল ।
আমার মেজাজ অনেক গরম হয়ে ছিলো । কম্বল আমি নিচে ফেলে দিলাম ।
কাল সকালে থেকে আবার কেমন যুদ্ধ বাঁধবে, তা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরছি তা মনে নাই ।
সকালে প্রান্তি প্রতিদিনের মতই ডেকে দিলো । চোখ থেকে ঘুম গেলে, উঠে বসলাম ।
তখন রাতের কথা মনে পরতেই আমি অবাক, কাল রাতের কোন ইফেক্টই মনে হচ্ছে আজ নেই ।
গরম জল দিছি, উঠে স্নান করে নাও ।
প্রতিদিনের মত স্নান করে, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম ।
মনে করলাম টাই কি বেঁধে দিবে । না.. আমিই বেঁধে নিবো ?
ভাবতে ভাবতেই প্রান্তি এসে টাই টা বেঁধে দিলো ।
তারপর বলল,
কাল রাতের জন্য সরি ।
আমি আবার বললাম,
কাল রাতে যেন কি হয়ছিলো ?
ভুলে গেলেই ভালো । (প্রান্তি)
আমিও সরি । (আমি)
আর শোন কোন মেয়ের দিকে তাকাবা না । আর কথাও বলবা না । (প্রান্তি)
হুম । বলে অফিসের দিকে হাটলাম ।
আসলে প্রান্তি আমাকে অনেক ভালবাসে । কাল রাতে যে অগ্নিমুর্তি ধারন
করেছিল । সে আজ পুরোই অন্যরকম । মেয়েদের মন নাকি উপরওলা বোঝে না, তাহলে আমি বুঝবো কেমন করে ।
তবে বুঝার চেস্টা করতে হবে ।
মনে অনেক শান্তি লাগছে । অনেকটা হাসি মুখ নিয়ে অফিসে ঢুকলাম ।
ঢুকতেই শান্তা বলল,
কী ভাইয়া মন খুব ভালো মনে হচ্ছে । মুখে খুব হাসি দেখছি ।
এ কথা শুনে মনে একটা জাগলো । আজ রাতে প্রন্তিকে প্রশ্ন করবো,
কোন মেয়ে যদি কিছু জিগ্গাসা করে, তাহলে তার উত্তর দেওয়া আর কথা বলা কি এক হবে ?
যদি এক হয় তাহলে, তার দিকে না তাকিয়ে কথা বলা অভদ্রতা হবে না ???