আজব বৌ

আজব বৌ

বিয়েটা বেশ ধুমধাম করেই হলো। কিন্তু আমার মনে শান্তি নেই। ভয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকতে পারছিনা। এত ভয় আমি ভুত জ্বীন কেও পাইনি। যতটা ওই সিংহীকে ভয় পাচ্ছি। আমি বাসরঘরের দরজায় দাড়িয়ে আছি , আমার ইতস্তত দেখে বন্ধুরা এলো। আমি মনে মনে একটু স্বস্তি পেলাম। যাক, অন্তত সবাই মিলে এখন তাস পেটানো যাবে। বন্ধুদের মধ্য থেকে সজীব এসে বললো,
:- কিরে দোস্ত! বউ তোর ঘরের ভিতরে। তুই এখনও বাইরে যে?
:- আরে দোস্ত তোদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চল সবাই তাস পেটাবো।
ওদের মধ্য থেকে রফিক বললো,
:- তোরা সবাই তাস পেটা। আমি ওর বউয়ের সাথে গিয়ে বাসর করি।
সজীবের বদমাইশি কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। সবাই আমাকে জোরপুর্বক বাসরঘরে ধাক্কা মেরে ঢুকিয়ে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো। সিংহীটা বিছানায় বসে গরগর করছে, যেন একটু পরেই আমাকে খেয়ে ফেলবে। আমি ভয়ে দরজায় সজোরে লাথি মারছি। কেউ দরজা খুললো না। আমার তখন বেহুঁশ হবার উপক্রম।
বিয়ের আগে সিংহীটার দুলাভাই এসে আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিলো। সিংহীটা নাকি ভীষণ রাগী আর জেদী।
আমি পিছনে একপলক চেয়ে দেখলাম সিংহীটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। সিংহীটা আমাকে হাত ঈশারা করে ডাকলো। আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম। যতই কাছে গেলাম, ততই আবিষ্কার করলাম সিংহীটা মানুষের মতো দেখতে। আমি যখন তার দশহাত দুরে। কখন সে চেঁচিয়ে আমাকে বললো,
:- এতক্ষণ সময় লাগে আসতে? আমি কতক্ষণ ধরে বসে আছি।
:- জ্বী, বাইরে একটু কাজ ছিলো।
:- কিসের এতো কাজ আপনার?
:- বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
:- ওনাদের সাথে তো রোজই আড্ডা দেন। আজকেও আড্ডা দিতে হবে?
:- আহা, এতো রাগের কি আছে?
:- রাগের কি আছে মানে? আমাকে একা এতক্ষণ শীতের রাতে বসিয়ে রেখে আপনি বাইরে আড্ডা দিচ্ছেন?
:- আপনাকে কি কেউ বলেছে এতক্ষণ বসে থাকতে? আপনি লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লেই তো হতো।
:- শুয়ে পড়লেই হতো? তাই না?
বলেই সিংহীটা দুম করে শুয়ে পড়লো। আমি রুমে অস্বস্তি বোধ করছিলাম। বাইরে থেকে দরজা লাগানো। নইলে এতক্ষণে বের হয়ে যেতাম। উপায়ান্তর না দেখে আমি সোফায় শুয়ে পড়লাম। সে রাতে সিংহীটা ঘুমোয়নি। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছিলো। গভীর রাতে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ ও স্পষ্ট শুনতে পারা যায়। ব্যপারটা আমার কাছে খুবই বাজে লেগেছিলো। এই পর্যায়ে তাকে আর সিংহী বলতেও খারাপ লাগছে। তার একটা সুন্দর নাম আছে “নবনী”। নবনীর কাজলটানা চোখগুলো আমার ভীষণ প্রিয়। নবনীকে আমার পছন্দ হয়নি তা নয়। সমস্যা হলো আমি কখনও বউয়ের আচল ধরে থাকতে চাইনা। আমি সবসময় মুক্ত থাকতে চাই। নিজের ইচ্ছেমত চলতে চাই।
বউয়ের এটা করোনা, ওটা করোনা এসব শুনতে রাজী নই। ভাবছেন তাহলে বিয়ে কেন করলাম?
মা ভীষণ অসুস্থ। তাই বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি। এরপর বাকীটা ইতিহাস।
.
খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস আমার নেই। ঘুমের মধ্যেই খেয়াল করলাম হঠাৎ ঠান্ডা পানির ছিটা এসে লাগলো। লাফ দিয়ে উঠে দেখি নবনী চা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে। নবনী আমার সামনে খুবই কম আসতো। সারাদিন নিজেকে কাজকর্মে ব্যস্ত রাখতো।
.
বিয়ের দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। নবনীর ভিতরে আবার সেই সিংহী ফিরে আসবে ভাবতে পারিনি। আমি সোফায় গিয়ে ঘুমোবো। ঠিক সেই মুহুর্তে সিংহী হুংকার দিয়ে উঠলো,
:- এই যে মিষ্টার। গতকাল প্রথম রাত বলে কিচ্ছু বলিনি। আসুন, বিছানায় এসে ঘুমোন।
:- কেন?
:- কেন মানে? শীতের রাত। সর্দি জ্বর হলে আপনার পিছনে খাটবে কে?
আমি ইতস্তত করতে করতে নবনীর গা থেকে লেপ টা কেড়ে নিয়ে গায়ে দিয়েছি, নবনী চেঁচিয়ে উঠলো,
:- আরে আরে! আমি কি গায়ে দেবো? আমার ঠান্ডা লাগবে তো।
আমি নবনীকে একটুখানি লেপ দিয়ে শুয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি। নবনীকে কি আসলেই সিংহী বলা ঠিক হচ্ছে? ওর ভিতরে কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব আছে, সেটা ও জোর করে আড়ালে রাখতে চেয়েও পারেনা। আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম নবনী লেপের তলায় আমার গা ঘেসে থাকার চেষ্টা করছে, আমি অনেক অসহায় বোধ করছি। শেষমেষ এই মেয়ের মোহ তে আমাকে কি হার মানতে হবে?
আমি নিরীহ প্রানীর মতো আত্মরক্ষার চেষ্টা করলাম। নবনী লেপ টা মাথামুড়ি দিয়ে আছে। আমি হালকা করে আমার গন্ধযুক্ত বায়ুত্যাগ করলাম। নবনী চেঁচিয়ে উঠলো,
:- ছিঃ বায়ু ত্যাগ করেছেন কেন?
:- আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরছেন কেন?
:- একশবার ধরবো। তাই বলে বায়ুত্যাগ করবেন?
:- আমার চাপ পেলে কি করবো? টয়লেটে গিয়ে বায়ুত্যাগ করবো?
:- আপনাকে লেপের তলায় ডাকাটাই ভুল হয়েছে। বের হন এক্ষুনি।
নবনী রেগে গেছে, রেগে গেলে ও লাথি গুতা সব একসাথে মারে। আমি লাথি গুতা সহ্য করতে না পেরে বের হয়ে গেলাম। তারপর আবার সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
ওহ আল্লাহ!!!! সমস্ত রাজ্যের ঠান্ডা আজ ঢেলে দিয়েছেন যেন। ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম। লেপের তলায় বায়ুত্যাগ করা উচিৎ হয়নি। নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরে দিয়েছি। আমি সোফা থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে লেপের ভিতরে ঢুকছি। নবনী চেঁচিয়ে উঠলো,
:- আবার আসছেন? বের হয়ে যান। নয়তো কামড় দেবো।
আমি নিরীহ প্রানীর মতো বের হয়ে গেলাম। আর অপেক্ষায় রইলাম কখন নবনী ঘুমায়। আর আমি টুপ করে লেপের ভিতরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। একসময় সেই মহেন্দ্রক্ষন এলো। নবনী ঘুমোলো। আর আমিও বিজয়ীর মতো হাসি মুখে লেপের ভিতরে গিয়ে ঢুকলাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলাম আমার লুঙ্গী নেই। নবনী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
:- কি হয়েছে? মুখ টা এমন ফ্যাকাশে হলো কেন?
:- আমার লুঙ্গী কই? লুঙ্গী নেই কেন?
:- আপনি ঘুমের ঘোরে এত জোরে বায়ুত্যাগ করছেন যে লুঙ্গী উড়ে গেছে।
আমার বুঝতে বাকি রইলোনা এটা নবনীর কাজ।
:- আমার লুঙ্গীটা দিন, আমি বাথরুম যাবো। খুব বাথরুম পেয়েছে।
:- লুঙ্গী ছাড়াই যাবেন। ইহা আপনার শাস্তি।
ও আল্লাহ বাচাও আমারে, এখন আফসোস করছি, লেপের তলায় না আসলেই ভালো হতো।
:- লুঙ্গীটা দিন প্লিজ।
:- উহুম, একদম না।
:- দিবেন না?
:- না।
আমার প্রচন্ড চাপ পেয়েছিলো। লজ্জা সব উড়ে গেছে আমার। তাই লুঙ্গী ছাড়াই লাফ মেরে উঠলাম। নবনী চোখ ঢেকে ফেললো। লাফ মেরে তো উঠলাম, কিন্তু বাথরুমে যাবো কি করে?
হারামিটা একটা কাপড়ও রুমে রাখেনি, কোথায় সরালো সব?
আমি উপায়ান্তর না দেখে নবনীর শাড়ীটা টান মেরে খুলে কোমরে বাধলাম। নবনী লেপের তলায় ঢুকে চেঁচিয়ে বললো,
:- বদমাশ আমার শাড়ি খুলেছেন কেন? আম্মুকে বলে দেবো।
:- আপনি আমার লুঙ্গী খুলেছেন কেন? আমিও আম্মুকে বলে দেবো।
আমি শাড়িটাই কোমরে জড়িয়ে দরজা টপকিয়ে দেখি শ্বশুরমশাই আর শ্বাশুড়ী আম্মা এসেছেন। আমি লজ্জায় বাইরে যেতে পারলাম না। এদিকে আমার যায় যায় অবস্থা। আমি দৌড়ে গিয়ে বৌয়ের পা ধরলাম,
:- বউ গো আমারে বাচান।
:- এক শর্তে বাচাতে পারি?
:- কি শর্ত?
:- আমাকে তুমি করে বলবেন।
:- আচ্ছা।
:- আর কখনও লেপের তলায় বায়ুত্যাগ করিয়েন না।
:- আচ্ছা করবোনা।
:- আর আমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের দিকে ভুলেও তাকাবেন না, নয়তো এখন লুঙ্গী নেই। পরে চোখ খুজে পাবেন না।
:- আচ্ছা। সব শুনবো সব, এবার তো লুঙ্গী এনে দেন?
:- আবার আপনি করে বলছেন?
:- সরি সরি, লুঙ্গী দাও, অবস্থা শেষ।
:- খাটের তলায় লাগেজের ভিতরে আছে।
আমি তড়িঘড়ি করে লুঙ্গি পরে সোজা বাথরুমে দৌড় লাগালাম। আল্লাহ এমন বৌ যেন শত্রুর ও হয়না।
.
ওইদিন আমার শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ী আম্মা বৌ কে নিয়ে গেলেন। আমাকেও যেতে জোরাজোরি করলেন, আমি পরে যাবো বলে কোনমতে বউয়ের হাত থেকে বাঁচলাম। নবনীর গায়ের গন্ধ টা বেশ মিষ্টি। রাতে শোবার সময় লেপ টা গায়ে দিতেই গন্ধ টা পেলাম। রাত প্রায় এগারোটা বাজে। আমি ওই সিংহীটাকে মিস করছি। কেন মিস করছি? আজব তো? নাহ, একা আর ভালো লাগছেনা। আমি বিছানা থেকে উঠে হাটতে শুরু করলাম। শ্বশুরবাড়ি হেটে যেতে আধাঘন্টা লাগে। খুব কাছেই। আমি কি তবে অবশেষে বউ পাগল হয়ে গেলাম?
.
আমি শ্বশুরবাড়ি পৌছে দরজায় কলিং বেল বাজাতেই নবনী এসে দরজা খুললো। দরজা খুলেই সে বললো,
:- আমি জানতাম আপনি আসবেন।
আমি চুপচাপ কোনও কথা না বলে নবনী কে জড়িয়ে ধরে বললাম,
:- ভীষন মিস করছিলাম তোমাকে।
:- ছাড়ো, আব্বু আম্মু দেখে ফেলবে।
আমি নবনীকে ছেড়ে দিলাম। নবনী বললো,
:- বাসায় খেয়ে এসেছো?
:- হুম। খেয়েছি। তুমি খেয়েছো?
:- হ্যাঁ! তা হঠাৎ মিস করছো যে?
:- ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি।
:- তাই?
আমি নবনীর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।
.
শুনেছি নারীরা মায়াবিনী হয়। আজ উপলব্ধি করলাম। সত্যিই কিছু কিছু নারী খুব সহজেই আপন করে নিতে জানে। নবনী তাদের মধ্যে একজন।
.

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত