আমি অদৃতা অবন্তি, ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরি। চুপচাপ
এবং ভীতু টাইপের একটা মেয়ে। জীবনে আম্মু ছারা আর
কোন ভালো বন্ধু আমার ছিলোনা। তবে যখন কলেজে
ভর্তি হলাম তখন ৩-৪ টা মেয়ে বন্ধু জুটে গেলো। সবাই
দেখতাম সারাক্ষন Facebook, what’s app, imo এসবের কথা
বলতো। কিন্তু আমি এসবের ঘোড়ার ডিমও বুঝতাম। আর
এটা নিয়ে আমার বন্ধুরা খুব মজা নিতো।
.
অবশেষে একদিন তৃষা আমায় একটা ফেসবুক আইডি খুলে
দিলো। সেই সাথে কয়েকটি ফেসবুক পেজে লাইকও দিয়ে
দিলো। রাতের বেলা ঘুমানোর আগে প্রতিদিন ফেসবুকে
আসতাম এবং গল্প পরতাম। ভালো লাগলে দু-একটা
কমেন্টও করতাম। বন্ধু বলতে আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে তেমন
কেউ ছিলো না। তাই কারো সাথে চ্যাটিং করা হতো
না।
.
প্রতিদিন দু একটা করে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসতো কিন্তু
তৃষার নিষেধের কারণে আমি সে সব একসেপ্ট করতাম না।
একদিন রাতে ফেসবুকে ঢুকেছি। দেখি চারটা ফ্রেন্ড
রিকুয়েষ্ট। সব গুলোর এবাউট দেখে দেখে ডিলেট করে
দিলাম। শুধু একটা আইডি ছাড়া। আইডিটার নাম নিষ্পাপ
দিগন্ত। নামটা ভালো লাগায় তার এবাউট টা দেখলাম।
এবাউটের কথা গুলো খুব গোছালো। এবং সবচেয়ে আজব
বেপ্যার হচ্ছে ওর এবাউটের এবং পছন্দের প্রায় ৮০%
আমারও পছন্দ।
.
তাই রিকুয়েষ্ট টা একসেপ্ট করলাম। দিগন্তের সাথে
আমার কথা হতো না। কারণ ও যখন ফেসবুকে থাকতো তখন
আমি থাকতাম না। আর আমি থাকলে ও থাকতো না।
.
একদিন দেখলাম দিগন্ত আমায় মেসেজ করেছে।
.
: hi
: hlw
: কেমন আছেন?
: ভালো, আপনি?
: হুম ভালো, কি করেন ?
: ঘুমাবো, বায়।
: আপনি কি ঘুমাতে খুব পছন্দ করেন।
: হুম
.
বলেই পরের মেসেজের জন্য অপেক্ষা না করে
ডাটাকানেক্ট অফ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। ৪-৫ দিন পর
আবার একদিন দেখলাম দিগন্ত একটিভ। এবার আমি
মেসেজ করলাম। সেদিন আমাদের মধ্যে অনেক্ষন কথা
হলো। এবং আমরা ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। আমি মজা
করে দিগন্তোর নাম দাদা দিলাম। আর তাই ও আমায়
দাদি বলে ডাকা শুরু করলো।
.
আমরা ফেসবুকে আসার টাইম ঠিক করে নিলাম, প্রতিদিন
রাত ১১-১২ টা আমরা দুজনেই একটিভ থাকবো বলে কথা
হলো। শুরু হলো আমাদের বন্ধুত্ব। একদিন হঠাৎ দিগন্ত
আমার নাম্বার চাইলো। আমি তেমন কিছু না ভেবে ওকে
আমার নাম্বার টা দিয়ে দিলাম।
.
সেদিন রাতেই আমরা প্রথম ফোনে কথা বললাম এবং
দুজনেই দুজনার কন্ঠর উপর ক্রাশ খেলাম। কিন্তু কেউ
কাউকে তা বুঝতে দিলাম না।
.
দিগন্ত প্রায়ই আমায় ফোন দিতো, আমারা দুজনে কথা
বলতাম। আর ও আমায় সব সময় বাস্তবতা বুঝাতো। এবং সব
থেকে বেশি বুঝানোর চেষ্টা করতো ছেলে মানুষ কতটা
খারাপ হতে পারে, এবং ও বিভিন্ন সময় ওর বন্ধুদের
প্রেমের গল্প বলতো। এবং আমায় বুঝাতো বিয়ের আগে
প্রেম করা ভালো না। কারণ ছেলে মানুষ অনেক খারাপ,
তারা সুযোগ পেলে…………।
.
আমায় নিরুতসাহিতো করলেও ও প্রায়ই আমায় বলতো
যেনো ওকে একটা মেয়ে খুজে দেই। ওর সব বন্ধুরা নাকি
প্রেম করে, তাই ওরো জিএফ লাগবে।
.
(২৬-০৪-১৬)
প্রতিদিনের মত আজো কথা বলছি দিগন্তর সাথে। আমি
হয়তো বা এখন দিগন্তকে ভালোবেসে ফেলেছি। কারণ
আমি এখন প্রতিদিন ওর সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা
করি। একদিন কথা না হলে ভালো লাগে না। ওর শাসন আর
কেয়ার কে মিস করি। কিন্তু কখনো ওকে এসব বুঝতে দেই
না। কারণ ছেলে মানুষ নাকি যদি বুঝতে পারে কোন
মেয়ে তার প্রতি দূর্বল তবে, তারা সুযোগে সৎ ব্যবহার
করে।
.
কথা বলার এটা পর্যায়ে হঠাৎ করে দিগন্তে বলে
ফেললো দাদি আপনি কি আমার সাথে প্রেম করবেন।
আমি অবাক হয়ে যাই। এবং কিছুক্ষনের জন্য নিরব হয়ে
যাই। পরে ফাইজলামি মনে করে বিষয়টা এরিয়ে যাই।
.
এই ঘটনার একমাস পর দিগন্ত আমায় আবার প্রোপোজ
করে। আমি আর ওকে উপেক্ষা করতে না পেরে রাজি
হয়ে যাই।
.
দুমাস যেতে না যেতেই আমাদের রিলেশনের মোড়টা
অন্য দিকে ঘুরে গেলো। ও আর আমায় বেশি সময় দেয় না।
আগের মত শাসন বা কেয়ার কোনটাই করে না। সাপ্তাহে
দু এক দিন কথা হয়। আমি নিজের থেকে ফোন দিলে
বিরক্ত হয়।
.
ওর অবহেলা আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম। তাই ব্লেট
দিয়ে বাম হাতটা কাটি এবং এর একটা পিক ওকে
ফেসবুকে মেসেজ করে পাটাই দেই। সেদিনের পর থেকে
দিগন্ত আমার ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দেয়। আমি
ভেবে নিলাম দিগন্ত আর কোনদিন আমার সাথে কথা
বলবে না।
.
মাঝখানে আরো দুটি মাস কেটে গেলো। আমি দিগন্তর এ
রকম চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছিলাম না। এর মাঝে
আমার ফেসবুকে একটা ভালো বন্ধুও হয়ে গিয়েছিলো,
ছেলেটার নাম “হাসান”। হাসান খুবই ফাজিল টাইপের
ছেলে।
.
একদিন ওকে আমার লাইফের সব কথা খুলে বললাম।
হাসান আমায় বললো তোমার ভালোবাসা সত্যি হলে তা
একদিন তোমার কাছে ফিরে আসবে। তুমি একটা শেষ
চেষ্টা করে দেখতে পারো। হাসানের কথাটা শুনে রাতে
প্রায় দের মাস পর দিগন্তকে ফোন দিলাম। কিন্তু কলটা
রিসিভ করলো না ও….. নিজেকে খুব ছোট মনে হতে
লাগলো এবং মনে মনে হাসানকে হাজারটা গালি
দিলাম।
.
রাত দশটার পর দেখলাম আমার ফোনটা বাজছে। ফোন
হাতে নিয়ে নাম্বারটা দদেখেই আমার হৃদস্পন্দন বেরে
গেলো। আমার মনে হতে লাগলো আমি আমার স্বর্গ
ফিরে পেয়েছি। কলটা রিসিভ করলাম।
.
: কেমন আছো অবন্তি
: (কথাটা শুনেই আমি কেদে ফেললাম)
: কি হলো কাদছো কেনো।
: তুমি কেনো আমার সাথে এমনটা করলা দিগন্ত। আমি
তোমার কি ক্ষতি করে ছিলাম।
: হঠাৎ এ কথা কেনো বলছো
: তুমি কেনো আমার সাথে কথা বলো না দিগন্ত?
: সেদিন তোমার হাত কেটে ফেলাটা আমি সয্য করতে
পারিনি। আমি ভেবে ছিলাম তোমার সব কষ্টর জন্য আমি
দায়ী। আর তাই তোমার থেকে অনেক দুরে চলে যেতে
চাইছিলাম।
.
এরপর আমি ওকে ঘৃনা করি বলে কলটা কেটে দিয়ে
ছিলাম। কিন্তু থাকতে পারিনি ওকে ছাড়া। তাই আবার
ওর সাথে কথা বলেছি। মজার ব্যাপার হলো আমি ওর
অনেক ছবি দেখেছি কিন্তু ও এখন পর্যন্ত আমায়
দেখেনি। ও দেখতে খারাপ না, আবার কোন নায়কের মতও
না। ও যা তাকেই আমার চলবে। আগামীকাল আমার প্রথম
বারের মত জাতীয় যাদু ঘরে দেখা করতে যাচ্ছি।…….. কি মনে হয় আমাদের ভালোবাসাটা কি
টিকবে। নাকি প্রথম দেখায় শেষ হয়ে যাবে…..???
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক