স্বপ্ন কিংবা এক ঝুড়ি ভালোবাসার কথন

স্বপ্ন কিংবা এক ঝুড়ি ভালোবাসার কথন

আজ সকাল থেকেই শরীরটা কেমন যেন করছে । মাথার পেছনটাতে একটা ভোঁতা যন্ত্রণা ।ভেতরের সব কিছু মনে হচ্ছে বেরিয়ে । উঠি উঠি করেও বিছানা থেকে উঠা হচ্ছে না । অথচ ৮ টাই হসপিটাল এ ডিউটিতে যেতে হবে । ভালো লাগছে না ।

পাশে আসিফ ঘুমাচ্ছে । একেবারে ছোট বাচ্চার মতন , হাত পা গুটিয়ে। ওর দিকে তাকাতেই ভালো লাগা শুরু হল একটু একটু । ওর পাশে ফিরে ওর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম । আমি প্রায়ই এই কাজটা করি । ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগে । নাহ , আর শুয়ে থাকা যাবে না । ওর গালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে উঠে পরলাম বিছানা থেকে ।

ওর সাথে আমার পরিচয় খুব অদ্ভুত ভাবে । আমি একটু এলোমেলো , ছন্নছাড়া টাইপের । নিয়ম কানুনের থোড়াই কেয়ার করি । মেডিকেল কলেজের কড়া খাটুনির মধ্যেও আমি বেশ ফুর্তিতে থাকতাম । একদিন খুব শান্ত শিষ্ট টাইপের চশমা পড়া এক ছেলে সামনে এসে দাঁড়াল । খুব কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে ‘ তোমাকে ভালবাসি । তুমি আমার বউ হবা ? ‘ – বলেই হাতে একটা কাগজ গুঁজে মুহূর্তের মধ্যেই উধাও । আর আমি বোকার মতন কাগজ টা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম । আমি বুঝতে পারছিলাম না এর মধ্যে পালানোর কি হল !

হলে এসে কাগজটা খুললাম । বেশ গুছিয়ে লেখা খুব ছোট্ট একটা চিঠি । বোঝানর আপ্রাণ চেষ্টা সে আমাকে ভালবাসে । বেশ খানিকটা অবাক ই হলাম । আমার মতন এমন বোহেমিয়ানকে কেও ভালবাসতে পারে আমার ধারনার বাইরে ছিল । চিঠিটা নিয়ে বান্ধবীদের হাসাহাসি , টিপ্পনী তো চলছেই , সেই সাথে কলেজে যাওয়ার পথে কোন এক কোনে আসিফের করুন চেহারাই দাঁড়িয়ে থাকা । মায়াই লাগত । বেচারা !

কেমনে কেমনে জানি ভালবাসা হয়ে গেল । তারপর শুরু স্বপ্নের দিন গুলো । ফোনে সারাক্ষণ কুটুর কুটুর করা , স্বপ্ন দেখা ,এই যুগেও চিঠি লিখে পোস্ট করা , গান শুনানো – আরও কত কি ! কিন্তু পোলা ছিল পুরাই বদ । গান শুনাতেই চাইতনা । বহু সাধা সাধির পরে উনার মুখ খুলত । ও খুব ভালো গান গাইতে পারে ।আমি তন্ময় হয়ে শুনতাম ।

ওই বোকা বোকা চেহারার ছেলেটা কেমন করে জানি আমার সব কিছু গুছানো শুরু করল । সারাদিন আমার বকবক করা থেকে শুরু করে পাগলামি সব সহ্য করত । আমাকে আগলে রাখত ও । আমি ভেবে পেতাম না এই শ্যামলা রঙের সাধারণ চেহারার এই মেয়েটার মধ্যে কি পেল ও । জিজ্ঞেস করলে কিছু বলত না , হাসত শুধু ।

আমার পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর বাসায় জানাই । খুব অবাক হয়ে দেখলাম কোন কথাবার্তা ছাড়াই সবাই সবকিছু মেনে নিল । কোথায় ভেবেছিলাম সাহসী নায়িকার মতন পালিয়ে বিয়ে করব , তা না ! বিয়েটাও হয়ে গেল । তখন কি আর জানতাম ওই শয়তান পোলা ৩ বছর আগে থেকেই আম্মু বাপি কে পটিয়ে রেখেছে ! আর বাপি আম্মু ভালো মানুষের মতন কিছু জানেন না এমন ভান করে গেছেন ।

ভাবতে ভাবতে পেছন দিকে এসে দাঁড়াল ও চুপি চুপি । খুব মমতা নিয়ে আমার হাত টা ধরল , তারপর বুকে টেনে নিল ।

– ” আমার বিলাই একটা । ”

আমিতো হুঙ্কার দিয়ে একেবারে ঝগড়া করতে প্রস্তুত । ” কিইইই ? আমি বিলাই ?? ” ও আমাকে নড়তে দিল না । আমিও ওর কাঁধে মাথা রেখে মুচকি মুচকি হাসছি আর ভাবছি – যখন এই বোকা ছেলেটাকে বলব ছোট্ট একটা বাবু ওকে বাবাই ডাকার জন্যে আসছে , তখন পাগলটা কি করবে ! দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে ।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত