নীল! রান্না হয়ে গেছে বাবা, টেবিলে খাবার দিয়েছি খেতে আই।
নীলের কোনো সাড়া নেই, নীলের মা আবারো নীলকে ডাকলো।
.
>>নীল! নীল… ডেকেই যাচ্ছে নীলের মা।
.
স্মার্ট ওবং মেধাবী ছাত্র নীল। ছোট বেলা থেকেই সে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে, ছেলেকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা, বাবা মায়ের ইচ্ছা পুড়ন করার স্বপ্ন নিয়েই নীল পড়ালেখা করছে।
.
নীল একটা মেয়েকে খুব ভালবাসে কিন্তু বলতে পারে না, প্রায় এক বছর হয়ে গেলো বলতেই পারে না তার ভালবাসার কথা।
.
আজ পহেলা বৈশাখ, ঠিক করলো যেভাবে হোক আজকে বলতেই হবে। আমি, আমি তোমাকে ভালবাসি প্রিয়া।
.
না, ওর নাম তো আমি জানি, ওর নাম তো প্রিয়া না, ওর নাম রিমি, তাহলে কেনো ওকে আমি প্রিয়া বলবো?
ভাবতে লাগলাম কিভাবে প্রপোজ করা যায়।
.
>> এই আসিক? (নীল)
>> কি! কিছু বলবি?(আসিক)
>> বলার জন্যই তো ডাক দিলাম।
>> কি বলবি বল।
>> তুই তো জানিস আমি রিমিকে ভালবাসি কিন্তু বলতে পারি না, তুই একটু বলে দিবি?
>> হুম আমি জানি তবে আমি বলতে পারবো না ভাই। আমি গেলাম।
>> আরে শোন না, শোন তুই ওকে গিয়ে বলবি যে নীল তোমাকে ডাকছে।
>> তোদের জ্বালায় আর বাঁচি না, আমি গেলাম। (আসিক হাটা শুরু করলো)
>> আরে শালা দাড়া!(পিছন থেকে শার্ট ধরে) বলবি কি না বল? (শার্টের কলার ধরে)
>> আচ্ছা আচ্ছা বলবো শার্ট ছাড়, শার্ট ছিঁড়ে যাবে তো।
>> ছিঁড়লে নতুন একটা কিনে দিবো। তুই আগে যা, ওকে আসতে বল।
>> আচ্ছা একঘণ্টার মধ্যে চলে আসবে।
>> ওকে।
>> আমি যায় এখন, তুই অপেক্ষা কর।
>> এই শোন?
>> কি?
>> সরি।
>> সরি কেনো? শালা বললাম তাই।
>> ইসস, আর ভাব মাড়তে হবে না, আমি যায়?
এই বলে চলে গেলো আসিক, দাঁড়িয়ে আছে নীল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে, রিমি আসলে কি বলবো ওকে? রিমি কি আমাকে গ্রহণ করবে নাকি ফেরত দিবে? একমুঠ ফুল হাতে নিয়ে হাটু গেরে বসে বলবো, ভালবাসি রিমি, খুব ভালবাসি তোমাকে, তুমি ফিরিয়ে দিও না আমাকে।
.
যাহ কি ভাবছি আমি এসব? যা হওয়ার হবে, আগে তো সামনে আসুক।
.
নীল ভাবতে ভাবতে চলে গেলো ফুলের দোকানে, আট টা লাল গোলাপ ফুল কিনবে,
এক টা I
চার টা Love
বাকি তিন টা হবে You
.
আট টা লাল গোলাম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীল, লাল গোলাপ নীলের পছন্দ না, নীলের পছন্দ সাদা গোলাম, কিন্তু ভালবাসার মানুষকে প্রপোজ করার সময় সাদা গোলাপ দিলে কেমন দেখায়? সাদা গোলাপ দিলে হবে না, লাল গোলাপ দিতে হবে, কয়েকবার গোলাপের ঘ্রাণ শুখলো নীল।
.
রিমি এখনো আসছে না কেনো, অপেক্ষার প্রহর জেনো শেষ হচ্ছে না। ওই শালা আসিক মনে হয় এখনো বলে নাই রিমিকে। সব সময়ই এরকম করে, একটা কথা বললে শুনতেই চায় না, আরে অন্য সময় না শুনলি আকজে তো শোন।
.
অপেক্ষা করেই যাচ্ছে নীল। আসিকের সময় দেওয়া একঘণ্টা পেরিয়ে আরো চল্লিশ মিনিট অতিক্রম করলো, এমন সময় পিছন থেকে কারো কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালো নীল।
.
>> আপনি আমাকে ডেকেছেন?(রিমি)
>> হ্যা ডেকেছি।(নীল)
>> কি বলবেন বলেন?
কি দিয়ে শুরু করবে নীল কিছুই ভেবে পাচ্ছে না, সব কিছুই জেনো এলোমেলো হবে গেছে, কি বলবে নীল?
.
ভাবতে ভাবতে হাটু গেড়ে বসে পরলো রিমির সামনে চোখ দুইটা বন্ধ করে ফুলের তুরা সামনে নিয়ে বলতে লাগলো ভালবাসি রিমি, বিষণ ভালবাসি তোমাকে…
.
ভাবতে পারছে না রিমি, কি হচ্ছে তার সাথে এসব? তাকিয়ে আছে সবাই, সবাই না পুরো পূথিবী তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে রিমি, এ জেনো এক লাল লজ্জাবতী দাঁড়িয়ে আছে।
.
রিমি ফুলের তুরা হাতে নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে পথ চলতে শুরু করলো, নীল ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে রিমির দিকে। শুরু হলো তাদের নতুন প্রেমের অধ্যায়…
.
প্রতিদিন ঘুরতে যাওয়া, ফোনে কথা বলা চলতে লাগলো এক মুহূর্তও থাকতে পারে না কথা না বলে, দুজনের কথা বলা শেষ হয়, পাঁছ-দশ মিনিট পর আবার ফোন দেয়। ভালোই চলতে লাগলো দুজনের জীবন,
.
রিমির জন্মদিন ২২জুন, কিভাবে উইশ করবে নীল তাকে। ২১জুন রাত ১১:৩০ মিনিটে এসে নীল হাজির রিমিদের বাড়ির পিছন জানালার পাশে, ফোন দিচ্ছে রিমিকে, ফোন বেজেই যাচ্ছে রিসিভ করার কোনো খবর নেই, এদিকে প্রায় ১২ টা বেজে যাচ্ছে, অনেক বার ফোন দেওয়ার পর ফোন রিসিভ করলো রিমি…
.
>> কি হয়েছে তোমার হুম? ফোন রিসিভ করছো না কেনো(নীল)
>> ঘুমে ছিলাম বাবু(ঘুম ঘুম কন্ঠে বলছে রিমি)
>> ও আচ্ছা ঠিক আছে, একটু পিছন জানালার কাছে আসো তো।
>> মানে কি কোথায় তুমি এখন?
>> আহা এতো মানে বুঝা লাগবে না, আসতে বলছি আসো।
রিমি ছুটে গেলো জানালার কাছে, হাতে একটা কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীল। ভুলেই গেছিলো রিমি আজ যে তার জন্মদিন, কেক দেখে মনে পরলো। কিন্তু এতো রাতে এইরকম পাগলামির কোনো মানে হয়?
>> কি পাগলামি করছো এসব?
>> হুম আমি পাগল, তোমার জন্য পাগল আমি, এখন কথা না বলে বাহিরে আসো।
>> এখন বাহিরে যেতে পারবো না।
>> আচ্ছা আসতে হবে না।
নীল এগিয়ে গেলো জানালার কাছে, বাহির থেকে জানালার কাছে কেক ধরে রিমিকে বললো কেক কাঁটতে। রিমি কেক কেঁটে খাইয়ে দিলো নীলকে, নীল খাইয়ে দিলো রিমিকে।
.
কিছু দিন পরের কথা…
.
>> কিরে নীল কালকে দেখলাম রিমিকে কার সাথে জেনো হাত ধরে ঘুরছে।(আসিক)
নীল আসিকের কলার ধরে বললো,
>> ওকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবি না।(নীল)
>> বাজে কথা না, আমি যা দেখালাম তাই বললাম।
নীলের ছোট বেলার বন্ধু আসিক ও কেনোই বা মিথ্যা কথা বলতে যাবে নীলের কাছে? শার্টের কলার ছেরে দিলো নীল, আসিকে কথা বিশ্বাস হচ্ছে না নীলের, বাসায় চলে গেলো নীল।
.
পরের দিন কলেজে আসে নীল, রিমিকে দেখে একটা ছেলের হাত ধরে হাসতে হাসতে চলে গেলো, পাশে যে নীল দাঁড়িয়ে ছিলো সেদিকে কোনো খেয়ালই করলো না, নীল ভাবতে লাগলো, তার মানে কি রিমি আমার সাথে প্রতারণা করছে, ভালবাসার অভিনয় করছে আমার সাথে? কোথায় কম ছিলো আমার ভালবাসা, তিব্র যন্ত্রণা অনুভব করছে নীল, না না এই যন্ত্রণা সহ্য করার না, এ যন্ত্রণা নিয়ে বেচে থাকা যায় না।
.
আত্নহত্যা যে মহা পাপ এক নিমিষেই ভুলে গেলো নীল, সিদ্ধান্ত নিলো আত্নহত্যা করবে সে, এই যন্ত্রণা থেকে তো বাঁচা যাবে।
.
নীলের মা ডেকেই যাচ্ছে নীলকে, কিন্তু কিভাবে সে মায়ের ডাকে সাড়া দিবে তার খাঁচায় তো প্রান পাখি আর নেই, তাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে।
>> নীল, নীল? নীলের মার মনের ভিতর কেমন জেনো লাগলো, ছুতে চলে গেলো নীলের রুমে, নীলকে দেখেই চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে পরে গেলো নীলের মা, চিৎকার শুনে ছুটে আসলো নীলের বাবা।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক