কলেজের মাঠে একপাশে গিয়ে বসে আছি। আমি আবির। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আর তখনই আমার এক দোস্ত আসলো দৌড়ে,,
– আবির,, চল তাড়াতাড়ি।
– কই?
– কই মানে!!! তোর জান পাখি আইসা পড়ছে।
– বৃষ্টি আইছে?
– হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি ফুলের তোড়া নিয়ে আয়।
– খাড়া আইতাছি।
.
এখন আমি যামু বৃষ্টি নামের অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়া মেয়েকে প্রপোজ করতে। যেদিন ও প্রথম এ কলেজে আসে সেদিন আমি ওর উপর ক্রাশ খাই, তারপর রাতে ওর
কথা ভাবতে ভাবতে প্রেমে পরে যাই। তাই এখন আমি ওকে প্রপোজ করতে যাব। তিন মাস ধরে শুধু সপ্নই দেখে যাচ্ছি ওকে নিয়ে, এখনো বলার সাহস পায়নি, তাই আজ বলবো।
কপালে কি আছে কে জানে?
.
তারপর গিয়ে দেখি ললনা, বান্ধবী ছেড়ে একা একা বই হাতে মাঠের কোণে দাড়িয়ে আছে, এইতো সুবর্ণ সুযোগ,,
– বৃষ্টি শুনো,
– হ্যাঁ, বলুন।
– কিভাবে যে বলি?
– আপনি কে? আমাকে কি বলতে চান?
– হোয়াট,,? এতদিন ধরে আমি তোমাকে ভালবাসি আর তুমি আমাকে চিনো না?
– হোয়াট????
– না মানে!!! (এইরে মাথা গরম করে কি বললাম এটা এখনই,,,, যাক, যা বলার তাই বলছি)
– মানে কি?
– যেটা শুনছো ওটাই।
– আপনার নাম?
– আবির।
– ক্লাস ?
– অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
– ওহ্ হ্যাঁ,, আপনি তো আমার সিনিয়র, আর বড়দের কথা তো রাখতেই হয় তাই না,,, আমি তো আর আপনাকে এখন ফিরিয়ে দিতে পারি না খালি হাতে। কিছু না কিছু দিতেই হবে।
– দাও দাও,, শুধু আই লাভ ইউ ২, এটা বলে দিলেই হবে।
– আচ্ছা দিচ্ছি। ( জুতা খুলছে)
– জুতা খুলছো কেন?
– এটা দিয়েই তো দেব।
– ভাগ আবির ভাগ।
.
ও মাই গড, কি মাইয়ারে? ভাবছি সত্যি সত্যি ভালবাসি বলবো। যেভাবে সিনিয়র বলে সম্মান করছিল, কিন্তু পরে যে এমন হবে এটা ভাবিনি। এখন কি করবো? ও যদি
আবারও ওর সামনে গেলে এমন ষাঁড়ের মতো তেড়ে আসে তাহলে নিশ্চিত আমি ওর হাতে মারা যাব।
.
বুদ্ধি বের করতে হবে বস বুদ্ধি,, কিন্তু কি বুদ্ধি বের করবো? আর কিভাবে?
.
– শিমুল, দোস্ত খাড়া,,
– কি হইছে?
– আজ যদি দৌড় না দিতাম আমার সম্মান ডুবিয়ে দিতো বৃষ্টি।
– ক্যা,, বৃষ্টির মাঝে ঝড় উঠছিল নাকি যে তোর প্যান্ট শার্ট খুলিয়া নিয়া যাইবো। হাহাহা,,
– আব্বে হারামজাদা, ঘুসি দিয়া দাত উড়াইয়া দিমু কিন্তু। কেমনে কি করুম তাই বল,,, আমারে মারতে জুতা নিয়া আইছিল।
– বেশ বেশ,, পেছনে লেগে থাক, কোনো ভাবেই হার মানবি না, ও যা করার করুক আর যা হওয়ার হোক। একটা কথা মনে রাখবি,, কৌশিস করণে ওয়ালাকি কাভি হার নেহি হতা হে,
– ঠিকই তো বলছস,, যে চেষ্টা করে তার হার কোনো দিন হয় না।
– লেগে থাক,,,
.
কলেজ ছুটির সময় গেটের সামনে গেলাম। এতদিন ওর পেছনে লাগি নাই,, ওর সামনেও যাইনি, কিন্তু এখন থেকে যাব। নাহলে পাব না ওকে। তারপর কিছুক্ষণ পর দেখি বের হলো কয়েকজন বান্ধবী শুদ্ধ।
.
তাই আমি ওর পেছনে যেতে লাগলাম। ওর বাসা বেশী দূরে না,, কলেজ থেকে মাত্র ৬ মিনিট লাগে হেটে যেতে, তাই ও হেটেই যায়। আর আমার লাগে ১০ মিনিট, কিন্তু এর আগে আমি গাড়িতে গেছি কিন্তু এখন থেকে হেটেই যাব। শুধু বৃষ্টির জন্য।
.
তারপর ওর পেছন পেছন যেতে লাগলাম। একটু যেতেই ওর বান্ধবী গুলো চলে গেল। তারপর আমিও ওর সাথে সাথে যেতে শুরু করলাম,,
– আবার আপনি আসছেন?
– না এসে থাকতে পারলাম না।
– উফফফ,,
– গরম লাগছে? আইসক্রিম খাবে?
– আপনার মাথা।
– এহ্,, আমার মাথা দিতে পারুম না, নইলে প্রেম করুম কেমনে?
– আপনি যাবেন?
– চলো তোমার বাসায় যাই,, বিয়ের পাকা কথা সেরে আসবো।
– আপনার সাহস তো কম না।
– একটু বেশীই আছে।
– পারলে যান দেখি।
– সময় হলে যাব। আর তুমিই বা কি? কালকে হলেও আমাকে ভালবাসবে আর পরশু হলেও আমাকে, তবে আজকে কেন ভালবাসছো না?
– ঘোড়ার ডিম।
– ওহ্,, ঘোড়ার ডিম খাবে? কিন্তু ঘোড়ার ডিম পাব কই এখন?
– তুই যা আমার সামনে থেকে ( চিৎকার দিয়ে বললো)
.
অতঃপর আমি দিলাম দৌড়। নইলে আবার ওর চিৎকার শুনে লোক আসলে সমস্যায় পরে যাব। এটা কি হলো,,,, আমি দৌড়ে চলে আসলাম আর ও খিলখিল করে হাসছে কেন? বোধ হয় মজা পাইছে,, তাই হবে।
.
ইয়েস। লাইনে আসছে,, ওকে এরপর প্রতিদিন এক টুকরো হাসি উপহার দিব, তাতে যদি আমাকে ভালবাসে তাহলে ভালো, নয়তো আমার কপাল খারাপ। এখন ওর ফোন নাম্বারটা আনতে হবে, যেকোনো ভাবে।
.
পরের দিন সকালে কলেজে গিয়ে,,
– এই বৃষ্টি শুনো,,
– হিহিহি, বলেন।
– হাসছো কেন?
– না এমনি।
– আরে বলো।
– আমার সাথে প্রেম করবেন?
– এহ্,,,, ( এটা কি হলো? আমার পৃথিবী উল্টো দিকে ঘুরছে রে)
– বলুন।
– হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি তো সেটাই চাইছি।
– তবে এক শর্ত আছে।
– বলো বলো।
– আমাকে যদি একটা ঘোড়ার ডিম এনে দিতে পারেন, তাহলে আমি আপনাকে শুধু ভালবাসবো না, সারাজীবন বউ হয়ে আমি আপনার পাশে থাকবো।
– ( অতঃপর আমি বেহুঁশ)
.
জ্ঞান ফিরলো পানির ঝাপটায়। দেখি রিদয় আমার মুখে পানি দিচ্ছে আর বৃষ্টি দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে,,
– কি হইলো আবির সাহেব?
– কেমন যেন আমার চারপাশে শুধু ঘোড়ার ডিম ঘুরছিল তাই একটাও ধরতে না পেরে বেহুঁশ হয়ে গেছিলাম।
– হিহিহি হাহাহা।
– হাসছো কেন?
– তাড়াতাড়ি ঘোড়ার ডিম এনে দিন, নয়তো আমার সপ্ন ছেড়ে দিন।
– ওই অবাস্তব ডিম আমি পাব কই।
– আপনিই তো বলছেন,, আমাকে ঘোড়ার ডিম খাওয়াবেন, সো আমি এখন ডিম খাব।
– হাঁসের ডিম বা মুরগির ডিমে হবে না?
– আমার ঘোড়ার ডিম চাই, তারপর আপনি আমাকে পাবেন।
‘- আমি এখন ডিম পাব কই?
– সেটা আপনার ব্যপার। ( ক্লাসে চলে গেল)
.
এই মাইয়া তো ভালো শয়তান। আমাকে এ কোন প্যাচে ফেলে গেল রে? আমি এখন মুক্তি পাব কেমনে। আর ওকেই বা পাব কিভাবে? তারপর ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাস চলার সময় আর ওর সাথে কথা বলতে পারবো না, আবার ছুটির সময় ধরতে হবে।
.
ছুটির পর, রাস্তায়, আজ এতো ধমক দিচ্ছে না,,চুপচাপ হেটে যাচ্ছে, আমিও কিছু বলছি না,,
– বৃষ্টি,
– উম,
– অন্য কোনো শর্ত দেওয়া যায় না?
– না,
– ঘোড়ার ডিম বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। ঘোড়া ডিম দেয় না, ঘোড়া বাচ্চা দেয়।
– সেটা তো আর আমি জানি না,, আপনি আমাকে
বলছেন, ঘোড়ার ডিম খাওয়াবেন, এখন ডিম আনেন।
– প্লিজ বৃষ্টি, একটু বোঝার চেষ্টা করো।
– জ্বী হবে না, যদি না পারেন তাইলে বলে দিন আমি পারবো না।
– তাইলে তো তুমি আমাকে ভালবাসবে না।
– হুম। বায়,, আমার বাসার কাছে এসে গেছি।
..তারপর বৃষ্টি চলে গেল। আর আমি ধীর পায়ে চলতে লাগলাম।
.
হে আল্লাহ আমি এ কোন সমস্যায় পড়লাম। এ থেকে এখন কিভাবে বের হবো? যাকে এতটা ভালবাসি সে যদি এমন পাগলী টাইপের কথা বলে তাহলে আমি ওকে পাব কিভাবে?
.
পরের দিন ছুটির সময়,,
– বৃষ্টি তোমার নাম্বার দাও তো।
– কেন?
– দাও না।
– আচ্ছা নিন,,, 017…………………কিন্তু শুধু যখন ঘোড়ার ডিম পাবেন তখন ফোন দিবেন, তাছাড়া না।
– আবার ঘোড়ার ডিম?
– ওটা ছাড়া যে, আমি আপনাকে ভালবাসবো না।
– টুনটুনির ডিম এনে দিলে হবে? আমাদের বাসায় অনেক টুনটুনি আছে আর ওরা অনেক গুলো ডিম পারছে।
– হেহেহে, হবে না।
– তাহলে তো আর কিছু করার থাকে না।
– তাহলে আমার পিছু ছেড়ে দিন।
– না,,,,,,
– তাহলে ডিম আনুন।
– আচ্ছা দেখছি,,
.
তারপর বাসায় এসে দিলাম একটা ঝাক্কাস ঘুম। রাতে,,,
– হ্যালো,
– আপনি কে?
– আবির।
– ওহ্, ডিম পাইছেন?
– না।
– তাহলে ফোন দিছেন কেন? আমি তো না করছি ফোন দিতে।
– প্লিজ বৃষ্টি এমন করো না।
– কেমন করলাম?
– ডিমের আশা ছেড়ে দাও, ওটা নেয় কোনো জায়গায়।
– তাহলে আপনি আমার আশা ছেড়ে দিন।
– উফফফ,, আচ্ছা, তুমি বলো ওটা কই গেলে পাব তাহলেই আমি ওটা সেখান থেকেই আনবো।
– আপনি বরং পরীদের দেশে যান।
– কিইইইই?
– হ্যাঁ,,,
– এই তুমি কি বাচ্চা রয়ে গেছো নাকি? কি সব আবোলতাবোল কথা বলো, পরীদের দেশ পাব কই?
– হিহিহি, আপনি জানেন।
– আমি জানি না, তুমি বলো।
– আমিও জানি না।
– তাইলে বললে কেমনে পরীদের দেশে যেতে।
– ওমনি,, আপনি যা করার করুন,, গুড নাইট, টুট, টুট, টুট, ( ফোন কেটে দিল)
.
আমি এ কাকে ভালবাসলাম? এ মেয়ে তো নিশ্চিত একটা পাগল। পাগল ছাড়া আর কিচ্ছু না। নয়তো এমন আজব আজব কথা বলে। যেগুলো বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। আর থাকলেও সেখানে যাওয়া অসম্ভব। এ মেয়ে আমাকে সেখানে যেতে বলে। এখন কি যে করি।
.
কেটে গেল, ৪ মাস,,,
.
আমি আজও ঘোড়ার ডিম খুজছি, কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। এখনো বৃষ্টির পেছনে পরে আছি। তবুও ওর মন গলাতে পারলাম না।
.
সেই সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন আমি ওকে বুঝানোর চেষ্টা করছি, ঘোড়ার ডিম নেই। আমি ওটা আনতে পারবো না। সকালে কলেজে এসে আর কলেজ ছুটির সময় আবার রাতে প্রতিদিন ফোন করে ওকে বুঝানোর চেষ্টা করছি, এটা অসম্ভব। কিন্তু ও বুঝতে চায়নি।
.
আর কতদিন এভাবে সয্য করা যায়? দিনরাত ওর পেছনে পরে আছি শুধু একটা কথা বুঝানোর জন্য আর সেটা হলো, ঘোড়ার ডিম নেই, কিন্তু ও বুঝতে চায় না। এই ৪ মাস ধরে শুধু এটা বুঝানোর জন্যই ওর পেছনে পরে আছি।
.
তাই ভাবলাম কাল ওকে কতগুলো রঙিন কাচের চুড়িকিনে হাতে পড়িয়ে দিব। দেখি ওর মন কিছুটা গলে কিনা,,
.
পরের দিন খুব সকালে কলেজের জন্য বের হয়ে গেলাম। অবশ্য আমি এখন কলেজে যাব না। আমি যাব বাজারে চুড়ি কিনতে, তারপর যাব কলেজে। তাই সিয়াম কে ফোন দিলাম আমার সাথে যেতে। ও বাসার সামনে এসে পড়লো,, তারপর দুজন মিলে রিক্সা করে বাজারে গেলাম।
.
তারপর বাজারে গিয়ে এক দোকানে গেলাম। সেখানে সব এক কালারের চুড়ি, তাই ভালো লাগলো না, অন্য দোকানে গেলাম। সেখানে গিয়ে অনেক গুলো বিভিন্ন রকমের রঙিন চুড়ি কিনলাম।
.
– আবির শুন,
– বল,
– তুই রাস্তার ওপাশে গিয়ে রিক্সা ঠিক কর, আমি ভেতরের দোকান থেকে একটা বেল্ট কিনে আসি।
– আচ্ছা, তাড়াতাড়ি, আয়।
.
তারপর আমি চুড়ি গুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে নিচু হয়ে দোকান থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামলাম। এগুলো পড়লে বৃষ্টিকে কত সুন্দরই না লাগবে ভাবতেই খুশি খুশি লাগে।
.
ওরে মা রে, গেছি রে,, ওই হারামজাদা টেম্পু দেইখ্যা চালাতে পারস না,,,
অতঃপর একটা টেম্পুর সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথা ফেটে ওখানে রাস্তায়ই পরে গেলাম। আর কাচের চুড়ি গুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। তারপর আর কিছু মনে নাই।
.
জ্ঞান যখন ফিরলো তখন দেখি রাত হয়ে গেছে। আর আমি তখন আমাদের এলাকার হাসপাতালে ভর্তি। আমার পাশে আছে সিয়াম, বাবা আর মা, মা তখন কান্না করছিল। ..( ঠাস)
.
– সিয়াম মারলি ক্যা? ( ধীর গলায় বললাম)
– দেখে চলতে পারিস না?
– ওই একটু চুড়ি গুলো দেখে হাঁটছিলাম।
– যত্তোসব।
– আমার চুড়ি কই?
– এতো কিছু পরও চুড়ির চিন্তা মাথা থেকে যাইনি?
– চুড়ি দে।
– এইনে।
– এগুলো কি? এগুলো তো ভাঙা চুড়ি।
– তুই যেগুলো কিনে ছিলি সেগুলোই এগুলো।
– ভাঙলো কেমনে?
– গাড়ির চাপা খেয়ে।
– ওহ্,,, বৃষ্টি জানে আমার কথা?
– এখনো জানে না। আর বলেও লাভ নাই।
– কেন?
– এই চারমাস ধরে ঘুরছিস ওর পেছনে, তার আগে থেকেই তো ওকে ভালোবাসিস তবুও তো তোকে পাত্তা দেয় না, আর কিসের ঘোড়ার ডিম খোঁজতে দিছে যত্তোসব।
– হু,,
– এখন থাক, দশ বারো দিন,,
– আমার ফোন,,
– ভেঙে গেছে।
– ওহ্।
.
আর কি করবো এখন। হাসপাতালেই থাকতে হবে কতদিন। সকাল বেলা মা বাবা সিয়াম সবাই চলে গেল। আর আমি শুয়েই রইলাম। হাতে তো স্যালাইন দিয়েই রাখছে।আবার দুপুর বেলা মা আসলো সাথে সিয়ামও আসলো, দেখে আবার চলে গেল।
.
এভাবে আট দিন চলে গেল। আর দুই দিন পর ছুটি পাব।
.
এদিকে তো আবার বৃষ্টি এখন ঘোড়ার ডিম ছেড়ে যাকে ঘোড়ার ডিম খোঁজতে পাঠিয়েছিলো তাকে নিয়ে পরছে। আজ আট দিন হয়ে গেল তবুও আবিরের কোনো খোঁজ নেই। ওকে ফোন দিল ” কিন্তু বন্ধ বলছে। খুব টেনশন হতে লাগলো।
.
আমিও যে ওই ঘোড়াটাকেই ভালবেসে ফেলেছি, এখন কই পাব ওকে। ও হ্যাঁ,, ওর বন্ধুকে জিগেস করি,,,
– এইযে সিয়াম ভাইয়া শুনুন,,
– বলো।
– আবির কই?
– কেন?
– বলুন না।
– এই নাও,,
– এগুলো তো ভাঙা চুড়ি। এগুলো দিয়ে কি করবো।
– আবির ঘোড়ার ডিম খুজতে গেছিলো। কিন্তু ঘোড়ার ডিম পায়নি, তাই চুড়ি আনতে গেছিলো।
– কিন্তু এই ভাঙা চুড়ি?
– না, ভালো দেখেই আনছিল কিন্তু আসার সময় ওর এক্সিডেন্ট হইছিলো তাই চুড়ি গুলো রাস্তায় পরে ভেঙে গেছিলো।
– এক্সিডেন্ট!!!!! মানে,,
– এক্সিডেন্ট জানো না,,, গাড়ি দূর্ঘটনা ঘটেছিল,, যত্তোসব ( এই বলে সিয়াম চলে যেতে লাগলো)
– ভাইয়া দাড়ান একটু,
– আবার কি হইছে?
– আবির কই এখন কেমন আছে? (কান্না করে দিছে)
– আরে কাঁদছো কেন? তোমাকে বিরক্ত করার আপদ প্রায়ই মুক্তি পাইছিল।
– এমন ভাবে বলবেন না প্লিজ, বলুন না ও কেমন আছে?
– ভালো আছে। দুদিন পরই দেখতে পারবে। যাও এখন,
.
তারপর সিয়াম চলে গেল, আর বৃষ্টি বসে বসে কাদতেঁ লাগলো, নিজেকে আজ খুব অপরাধী লাগছে ওর। একটা ছেলে এতদিন ধরে ওর পেছনে ভালবেসে ঘুরঘুর করছে। আর ওর জন্য চুড়ি কিনবে বলে নিজে মরতে বসেছিল।
.
কয়েক দিন পর,,,,
.
আজ একটু সুস্থ লাগছে, তিন দিন আগে ছুটি পাইছি। তাই আজ অনেক ভালো আছি। কাল কলেজ যাব। মাথায় এখনো ব্যান্ডেজ আছে। ওটা কোনো সমস্যা না, তবুও যাব।
.
কাল সকালে কলেজের দিকে রওনা হলাম। কলেজ গিয়ে দেখি বৃষ্টি মাঠের একপাশে অন্য দিকে মুখ করে বসে আছে। তাই ওর পেছনে গিয়ে দাড়ালাম,,,
– বৃষ্টি স্যরি,, আমি ঘোড়ার ডিম আনতে পারিনি। ক্ষমা করে দিও, আর বিরক্ত করবো না।
– তোমার ঘোড়ার ডিম আনতে হবে না। ফাজিল কোথাকার,, দেখে শুনে চলতে পারো না?
– এই এই কি করছো? ছাড়ো। জড়িয়ে ধরেছো কেন?
– একদম ছাড়বো না। খুব ভালো লাগে নিজেকে কষ্ট দিতে আর আমাকেও?
– তোমাকে আবার কষ্ট দিলাম কেমনে?
– বুঝে না এখন।
– বুঝিয়ে দাও।
– ঘোড়ার ডিম বুঝাবো।
– এখন ঘোড়ার ডিম ছাড়াই ভালবাসলে?
– তাছাড়া আর উপায় নেই। এ কয়দিন আসো নাই তাই খুব মিস করছিলাম, তখন ভালবেসে ফেলছি।
– ঘোড়ার ডিম আনতে যাই এখন?
– আমার কাছ থেকে একটু দূরে যাবে তো ঠ্যাং কেটে দিব।
– ওকে ওকে।
– এখন প্রপোজ করো।
– কি দিয়ে করবো?
– ঘোড়ার ডিম দিয়ে, হিহিহি,,
– ঘোড়ার ডিম পাব কই?
– তোমার মাথা,, যত্তোসব।
– আমার মাথা দিয়ে প্রপোজ করি?
– ওইইইইই তোমাকে আমি আজকে,,
– ধরতে পারবে না,,
.
.
………অতঃপর শুরু হলো, দুটি টুনটুনির একসাথে উড়া উড়ি।…….