১ম কিস্তিঃ
সেই কখন থেকে ফারহান বউয়ের চিমটি সহ্য করে আসছে। এত চিমটি কাটে কেন চিমটি রানী।
ও আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলো,
— চিমটি দাও কেন?
— ও ভাই, আপনাদের বাড়ি আর কতদূর?
— বাড়ি যাচ্ছি না, শহরে বাসায় যাচ্ছি।
— তাহলে বাসা আসে না কেন?
— কি ঝামেলা! তুমি চুপ থাকো।
আবার চিমটি শুরু। এই মেয়ে তো দেখি জ্বলিয়ে মারবে।
আজ ফারহানের বিয়ে হয়েছে মৌমির সাথে। বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়ে। ওর শর্ত ছিলো বাসা থেকে এসে বিয়ে করবো আবার বাসায় চলে যাবো।
ফারহান আর মৌমিদের বাড়ি একি গ্রাম এ। কিন্তু পড়ালেখার জন্য ফারহান ছোটবেলা থেকেই শহরে খালার বাসায় ছিলো। গ্রামের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনা। যেহেতু ফারহান বিয়েতে রাজি হয়েছে তাই উনারাও ওর শর্ত মানলেন। ফারহান এখন একটা মাল্টিনেশনাল কোম্পানি তে চাকরি করে। ভাল বেতন, খুব ভালো এবং বড় বাসা নিয়েছে। যাতে বউ তার সারা বাসা হইচই করে ভরিয়ে রাখে।
আজ বিয়ে হয়েছে ফারহান রা মৌমিকে নিয়ে বাসায় আসছে। আর এই ফাকে মৌমি ফারহান কে চিমটি কাটছে।
উফফ্ অসহ্য!!
একটু পরে ওরা বাসায় চলে আসলো। রাত অনেক হয়েছে ফারহান ও বাসর ঘরে ঢুকলো…
ওমা! মৌমি একটা লাল ফ্রক পরেছে। আর চুলে লাল ফিতা দিয়ে বেনি করছে।
সে রুমে আসার পর মৌমি জিজ্ঞেস করলো তুমি কেন এখানে আসছো ভাই? আম্মু কে ডাকো নাহলে পানি ঢেলে দেবো তোমার গায়ে।
ওমা! মেয়ে কয়কি…! (Short SO Sorry)
২য় কিস্তিঃ
কেন এটা আমার রুম, আমি আসবো না?
ফারহান বললো।
— না আসতে পারবা না। নাহলে ঘুমাইলে পেচ্ছাব করে দেবো।
— ছিঃ কি বলো এসব..? তুমি বড় হইছো না?
— ও ভাই যাও, আমি আমার আম্মুর সাথে থাকবো। তুমি এখান থেকে যাও।
কি ব্যাপার রে বাবা। এত্ত বড় মেয়ে শরম হায়া নাই, প্রথম থেকে তুমি তুমি করছে। তার উপর ভাইতো ডাকছেই এখন বলে পস্রাব করবে। কি যে করি…
ফারহান বললো, মৌমি তোমাকে আমি কিছু কথা বলবো তারপর চলে যাবো। প্লিজ বসো।
— কি কথা? বসবো না। দরজায় দাঁড়িয়ে বলো, নাহলে কিন্তু…
— আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে মিসেস চিমটি রানী বলছি।
— আ-আ-আ তুমি আমাকে চিমটি রানী কেন বলছো?
— হায়রে আল্লাহ! আচ্ছা তুমি সোনামনি। ঠিক আছে!? এখন আমার কথা শুনবা?
— তুমি আমাকে কাঁদাইছো… আগে আমার কান্না থামাও।
— ওরে বাপরে কিভাবে কান্না থামাবো? কি ঝামেলায় পড়লাম… ভাবছে ফারহান।
— আচ্ছা বলো তুমি কি চাও?
আমাকে চকলেট দাও, আর আম্মুর মতো আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দাও। আমার ঘুম পেয়েছে।
— ওহ্। যাক মায়ের কথা ভুলে গেছে আপাতত এই ঘরে থাকতে পারছি।
— ঠিক আছে ঠিক আছে। কিন্তু চকলেট তো এখন নাই অন্য কিছু দেই?
— নাআআআআআ।
আবার কান্না শুরু। বাবারে কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।
— আচ্ছা আইস্ক্রিম খাইবা? এনে দেই?
কান্না বন্ধ করে ফিক করে হেসে দিল মৌমি। আইস্ক্রিম আমার খুব প্রিয়। আম্মু বেশি খেতে দেয়না। তুমি আইস্ক্রিম দিবা আমায়?
— হুমম। ভালো মেয়ের মত বসো। আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি।
ফারহান নিচে গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে আসলো। আইসক্রিম ওর ও ভালো লাগে তাই সবসময় ফ্রিজ এ রাখে। কে জানতো আজ তাকে এই আইসক্রিম বউর মত বিপদ থেকে রক্ষা করবে।
ফারহান রুমে এসে মৌমি কে আইসক্রিম দিয়ে বেড এ বসালো। তারপর বললো আইসক্রিম খেয়ে খেয়ে আমার কথা শুনো।
— হুমম।
— আচ্ছা তুমি আমাকে ভাই ভাই ডাকো কেন?
— আমার আগের আম্মু বলেছে এখানে আসলে আরেকটা আম্মু পাবো। আমার আগের আম্মুর ছেলেকে ভাইয়া ডাকতাম তো। তাই তুমি এখনকার আম্মুর ছেলে বলে তোমাকেও ভাই ডাকি। আচ্ছা ভাই ডাকলে রাগ করলে ভাইয়া ই ডাকবো। ঠিকাচে?
— এসব তোমাকে কে শিখিয়েছে? একটু রেগে জিজ্ঞেস করলো ফারহান।
— আবার তুমি রাগ করো….
— আচ্ছা আর রাগ করছি না। বলো তো এসব কে বলছে?
— আমি এখানে আসতে চাইনি তো। তাই আম্মু বলেচে মেয়েরা বড় হলে তাদের আরেকটা বাড়ি হয়। সেখানেও আব্বু আম্মু থাকে, ভাইবোন থাকে। আচ্ছা তুমি কি আমার বড়?
বলে কি মেয়েটা অলরেডি ১০/১৫ বছরের বড় আমি। ভাবলো ফারহান।
— আচ্ছা আমি এখন যা বলবো শুনবে?
— কি আইসক্রিম খেতে খেতে বললো মৌমি।
— মেয়েদের আরেকটা যে বাড়ি হয়, সেটা তার স্বামির বাড়ি। আর এইযে আমি, আমি তোমার ভাই নয়। তোমার স্বামী।
— তাহলে এখন থেকে কি স্বামী বলে ডাকবো?
— তোমার যা ইচ্ছা তাই ডাকো, ফাজিল মেয়ে কোথাকার।
— আ-আ-আআআ….
— ওরে বাবা, এই মেয়ে চুপ চুপ বলে ফারহান ওর মুখ চেপে ধরলো। আচ্ছা আর ঝাড়ি দেবো না। এবার এদিকে আসো সোনামনি..
বলে ফারহান ওকে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাঁড় করালো।
— দেখো তো আমার মৌমি সোনা বড় হয়েছে না ছোট রয়েছে।
— আমি বড় হয়ে গেচি। সুন্দর ও হইচি।
— হুমম। তাহলে বড় মেয়েরা কি কাঁদে?
— না, আর কাঁদবো না।
— বড় মেয়েরা কথাও শুনে। এখন থেকে আমার কথা শুনবা তো?
— হুমম।
— তাহলে শুনো, আমরা স্বামী স্ত্রী, তাই এক রুমে থাকবো। নাহলে মানুষ আমাদের পঁচা বলবে, হবে না?
— হবে, তবে যখন আমার আম্মুর কথা মনে পড়বে, তখন আম্মুকে যা বলতাম তোমাকেও তাই বলবো, আব্বুর কথা মনে পড়লে আব্বুর সাথে যেভাবে কথা বলতাম তাই বলবো। ভাইয়ার সাথেও কথা বলবো, আপ্পির সাথেও। আর মিনার এর সাথে যা বলতাম তোমাকেও তাই বলবো। মাইর দিবো। হবে..?
— ওকে হবে।
চলো এখন ঘুমাবে। আর এসব ফ্রক পরছো কেন? কাপড় নাই আর?
— আচে তো। আমি ফ্রক পরি বাড়িতে।
— ইশশ্। আচ্ছা আসো।
তারপর ফারহান মৌমিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে মায়ের দরজায় নক করলো। মা যেন তার জন্যই অপেক্ষা করছেন।
— এসব কি মা? আমার জীবন তো জ্বালিয়ে মারবে এই মেয়েটা। কি নিয়ে আসছো?
— বাবা আমরা যে ছোটবেলায় কথা দিয়ে রেখেছি। তখন কি জানতাম মেয়েটা এত অবুঝ থাকবে?
ওয়াদার খেলাপ করতে পারিনি তাই নিয়ে আসছি যদি তোর দ্বারা কিছু হয়।
— কি বলছো মা? বুঝিয়ে বলো।
— তুই তো জানিস আমাদের এলাকায় মৌমিদের বাড়ি। হাজ্বী বাড়ি এবং ভালো ব্যবহার বলে তাদের কত সুনাম। ছোটবেলা থেকেই তোর বাবা আর আলতাফ সাহেব বন্ধু ছিলেন। সম্পর্ক পাকা করার জন্য মৌমির জন্মের সময় তোর বাবা তোদের বিয়ে ঠিক করে ফেললেন। আস্তে আস্তে মৌমি বড় হতে লাগলো কিন্তু ও ছোট বাচ্চা দের মত আচরন করতো। ওর এই আচরনের জন্য ওকে স্কুল মক্তবে ও পাঠানো হয়নি। ও এখন ১৮ বছরের মেয়ে কিন্তু ওর মানসিক বয়স ৭/৮ বছরের বেশি নয়। ডাক্তার বলেছে এটা এক ধরনের রোগ। তবে চেষ্টা করলে আস্তে আস্তে ভালো করা যেতে পারে। ও বালিগা হওয়ার পর থেকেই মৌমির বাবা মা আমাদের চাপ দিচ্ছিলেন। তাই ১৮ হওয়ার পর নিয়ে আসলাম। তুই বল বাবা আমরা ওয়াদা রক্ষা করে কি ভুল করলাম?
— না মা ওয়াদার খেলাপকারী তো মুনাফিক। আর আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের এমন হতে দিবো না। আচ্ছা ঠিক আছে মা তুমি ঘুমাও।
ফারহান মন খারাপ করে রুমে চলে আসলো। হয়তো এটাই আমার তাকদির।
ফজরের সময় ঘুম ভাঙতেই ফারহান দেখলো মৌমি তাকে জড়িয়ে ধরে তার উপর পা তুলে ঘুমিয়ে আছে। যে মেয়ে উপরে পস্রাব করে দেবে বলেছে সে এখন দিব্যি পা তুলে আছে। মৌমির মুখের দিকে তাকালো ফারহান। কি নিষ্পাপ মায়াবী মুখ। এই মুখে কোন পাপের দাগ লাগেনি। নিমিষে ওকে ভালোবেসে ফেললো ফারহান। এই মুখ শুধু আমার, আমার পিচ্চি বউ। হুমম আমি একে ভালো করবো, পড়ালেখা শিখাবো। তারপর আস্তে করে হাত পা সরিয়ে ও ওজু করে নামাজ শেষ করলো। অনেক রাত জেগে থাকতে হয়েছে পিচ্চিটার জন্য এখন একটু ঘুমাই, সকালে উঠতে হবে।
কালতো অফিস নেই, তাই সে ৯টার এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু কোথায় ঘুমাবে ধপাস শব্দ হতেই চেয়ে দেখে মৌমি বিছানার নিচে পড়ে গেছে। ও তুলতে যাবে, আম্মু বলে ও গড়িয়ে ঘুমের মধ্য বিছানার একেবারে নিচে চলে গেলো।
কি মুসকিল রে বাবা। একে নিয়ে তো পারা যাবে না। এখন তুলতে গেলেই আবার জেগে যাবে। তাই ও এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
হঠাৎ গায়ে ঠান্ডা লাগতেই উঠে দেখে মেয়েটা যত্ন করে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পানি ঢালছে।
— এসব কি করছো মৌমি?
— রাতে আমাকে বিচানা থেকে ফেলচিলা কেন?
— আমি কোথায় ফেললাম তুমি নিজেই পড়েছো।
— তুমি এতবড় ছেলে এই বিচানায় ঘুমালে তো আমার জায়গা হবে না। তোমার জন্যই পড়েছি।
— ধূর, কিচ্ছু ভাল্লাগে না। বলে ভিজা গায়ে ফারহান নিচে চলে আসলো।
বাসা ভর্তি মানুষ। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে ও অবাক। মায়ের পাশে গিয়ে বললো কি হয়েছে আম্মু? সবাই এভাবে তাকাচ্ছে কেন?
নাস্তা দাও ক্ষিদে লাগছে। তাকিয়ে দেখে মা ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
ফারহানের বোন বললো ভাইয়া তুই আয়নার সামনে যা।
ফারহান দৌড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দেখলো। সারা মুখে লিপস্টিক। লিপস্টিক দিয়ে দাঁড়ি গোফ আঁকা। চোখের উপর, গালে, কপালে সব জায়গায় লিপস্টিক। “আজ তো তোকে ছাড়ছি না পাগলি!” বলে উপরে দৌড় দিল ফারহান। মা পিছন থেকে ডাক দিলেন কিছু করিস না ফারহান, মেয়েটা বুঝেনি।
একটু পরে মৌমি কাঁদতে কাঁদতে নিচে আসলো। মেহমানরা তাকে দেখে আগের চেয়ে আরও বেশি অবাক।
৩য় কিস্তিঃ
মৌমি কাঁদতে কাঁদতে ফারহানের আম্মুর পাশে এসে দাঁড়ালো। ওর সমস্ত মুখে কাঁজল লেপটানো, চুল ও এলোমেলো। ফারহান আর কিছু খুজে না পেয়ে ওকে কালো পেত্নী বানিয়ে দিয়েছে।
ফারহানের মা জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে এসব কে করেছে?
— স্বামী করেচে আম্মু। আমি আর ঐ রাক্ষসটার কাছে যাবো না। আমি তোমার কাচে থাকবো।
— আচ্ছা আমার কাছেই থাকবে মামনি। কিন্তু এখন চলো। তোমার মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
— না আমি যাবো না। বলেই আবার কান্না শুরু করে দিল।
উনি ওকে পাশে বসিয়ে বললেন, ছিঃ মা কাঁদেনা। দেখো তোমার মুখ কত বিশ্রী লাগছে। কত মেহমান আসছে, তুমিও এ বাড়িতে নতুন আসছো সবাই তোমাকে পঁচা মেয়ে বলবে।
— না, না না।
— আচ্ছা আমার সুন্দর মামনি টা কি সাজবে না?
— তুমি সাজিয়ে দাও।
— তুমি রুমে আসো সাজিয়ে দেবো। আর ঐ বাঁদরটাকেও একটু শাস্তি দিবো।
আম্মু মৌমিকে নিয়ে ফারহানের রুমে ঢুকলেন।
ফারহান তখন মুখ মুছতে মুছতে একটা টিস্যু বক্স শেষ করে ফেলছে।
— এভাবে যাবে না, মুখ ধোয়ে আয়। আর একেও নিয়ে যা। এসব কি করছিস ওর সাথে?
— আবার ফাজিল মেয়েটাকে এখানে আনছো কেন? ফারহান রেগে বললো।
— কেন ও তো এখন এ রুমেই থাকবে । এখন ওকে রেডি করাও।
— মা.., পেত্নীটাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। মোড খারাপ করে দিয়েছে।
— দেখো ফারহান, আমি তোমাকে কাল রাত্রে সব বলছি। এরপর ও এমন করলে….
— আচ্ছা ঠিক আছে মা। আমি দেখছি।
— হুমম, মনে থাকে যেন। আমি গেলাম বাহিরে অনেক কাজ আছে। মৌমির বাড়ির লোকজন এসে যাবে।
উনি চলে যাওয়ার পর ফারহান বললো, দিয়েছো তো আমার জীবনের ১৩টা বাজিয়ে। এই বুড়ীটা নাকি পিচ্চি সেজেছে। আজ ওর ১৩টা আমি বাজাবো।
— এই পিচ্চি চল বাথরুমে চল।
— তুমি আমাকে বকা দিচ্চ কেন? আমি আম্মু কে বলে দেবো
— দেব এক চড়, আম্মু কোথায় পাবি। উনি আমার আম্মু তোর না।
— আ-আআ- আমার আগের আম্মু বলেচে এখন উনি আমার আম্মু।
— কেন তোর আগের আম্মু কি বাসি হয়ে গেছে?
মৌমি ওর দিকে তাকিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। ফারহানের এসব দেখে কষ্ট লাগলো। কারও কান্না ও সহ্য করতে পারে না।
তাই ফারহান বললো, ঠিক আছে সোনামনি আমার, পিচ্চি বউ আমার কাঁদে না। চলো তোমার মুখ মোছিয়ে দেই।
ফারহান মৌমিকে ওয়াশরুমে এনে বললো তোমার মুখ ধোয়ে ফেলো। আমি আমার মুখ ধুচ্ছি।
ফারহানের মুখ ধোয়া শেষ হলে দেখলো মৌমি আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলো, কি মুখ ধোচ্ছো না যে?
— পারিনা।
— পারোনা!!! কি পারো তুমি?
— আমি না খেলতে পারি, আইসক্রিম খেতে পারি। তুমি খাইবা?,
— কি যে করবো আল্লাহ!
আচ্ছা আমার পাশে আসো। তারপর ফারহান যত্ন করেই ওর হাতমুখ ধুইয়ে দিলো। তারপর হাতমুখ মুছিয়ে দিয়ে জামা চেইঞ্জ করার কথা বললো।
মৌমি খুশি হয়ে আরেকটা নীল ফ্রক বেছে নিল পরার জন্য। ফারহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এত বড় মেয়ে বাচ্চাদের মত ফ্রক পরবে?!!
— এই এই কি করছো থামো, এখানে কাপড় খুলছো কেন? আর তুমি ফ্রক ছাড়া কিছু পরতে পারোনা..?
— এখানে কাপড় খুললে কি হইচে?
এই মেয়েটাকে কিছু বুঝানো যাবেনা, এটা ভেবে ফারহান বললো, তুমি শাড়ি পরতে পারো না?
— না। শাড়ি কেন পরবো? শাড়ি তো পরে আম্মুরা।
— হুমম তুমি তো এখন ও পিচ্চি। দাঁড়াও, বলে ফারহান ওকে নীল রঙের একটা লং ফ্রক দিলো। ভাগ্যিস কয়েকটা লং ফ্রক এনেছিলো।
— এটা পরে নাও, আর এইগুলো গহনা, চুড়ি সাথে পরে নিও।
— আমি পারিনা।
— খেতে পারো তাইনা? ডেরস মেয়ে পারোটা কি?
—আআআআআআআ……
আরে থামো থামো, ঠিক আছে তুমি সোনামনি। কোনমতে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো ফারহান।
তারপর বেরিয়ে এসে ওর ছোটবোনকে ডেকে মৌমির কাছে যেতে বলে। ২জন বিউটি এক্সপার্ট কে খবর দিয়ে আনলো। তারপর ও শান্তি মাথায় অন্য রুমে গিয়ে নেবি ব্লু কালারের কোট পরে ড্রেস-আপ করে বেরিয়ে আসলো।
ওর সব বন্ধুরাও ততক্ষণে এসে গেছে।
সবাই ওকে বউয়ের কথা জিজ্ঞেস করছে। কি বলবে ও… কিছুই তো বলার নেই। আজ নিজের ভাগ্যের কাছে হার মেনে গেছে।
এমন সময় ফারিয়া মৌমিকে নিয়ে নিচে নামলো।
সবাই তাকিয়ে আছে, এত্ত সুন্দর মেয়ে..!!
ওর বন্ধুরা বললো, দোস্ত জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকেনা। এরকম একটা বউ থাকলে। বউ না ছাই, বলে ফারহান তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো, মৌমি এত সুন্দর একটা মেয়ে..!! এত মায়াবী চেহারা আমার বউয়ের! এই মেয়েটা কে দেখলে কে বলবে, ও কতটা অবুঝ। ওর মন আকাশে স্বপ্নের ঘুড়ি হয়ে যেন মৌমি বিচরন করতে লাগলো।
মনে হলো, যুগ যুগ ধরে এই মেয়েটার অপেক্ষায় ছিল সে।
পাশে থেকে আরেকজন বলছে, “মেয়েটার চুলগুলা দেখো কি সুন্দর।”
ওর কানে এ কথা যেতেই ফারিয়া আর মৌমির পাশে গিয়ে বললো,
— ফারিয়া ওকে হিজাব বেধে আনিস নি কেন? দেখছিস না কত মানুষ চেয়ে আছে? ওর গোনাহ হচ্ছে না?
— ভাইয়া আমি চেষ্টা করছি। কিন্তু ও বাঁধতে দেয়নি।
— ও বাধা দিলে কি হইছে? গোনাহ হচ্ছে না?
বলে ফারহান মৌমির গায়ের ওড়নাটা একেবারে কপালের সামনে এনে রাখলো। আর মৌমিকে বললো,
— খবরদার ওড়না ফেলবে না। নাহলে আইসক্রিম দিবো না।
ও ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
— ও স্বামী এখন দাও না। এখন আইসক্রিম দাও আমি খাবো।
— মেহমান যাওয়ার পর দেবো। আর স্বামী নয় ফারহান ডাকবা। ঠিক আছে?
— ঠিকাচে।
মৌমিদের বাড়ির সবাই ও আসলেন।
অনেক আদর আপ্যায়ন, আনন্দ হলো। যাওয়ার সময় সবাই মৌমিকে খুঁজছে, পাচ্ছে না। ফারহান বুঝলো কই আছে তাই ও তাড়াতাড়ি করে রুমে এসে দেখে মৌমি বিছানায় পা তুলে বসে বসে দুই হাতে দুইটা আইসক্রিম নিয়ে খাচ্ছে। ওর সারামুখে ক্রিম লাগানো।
— এসব কি মৌমি? সবাই তোমাকে খুঁজছে আর তুমি এখানে আইসক্রিম খাচ্ছো! পেলে কোথায়?
— ফিজ এ পাইচি।
— তোমাকে কে এনে দিলো? আর ঠান্ডা লাগবে তো? চলো নিচে চলো, পরে আইস্ক্রিম খাবে। এখন সবাই চলে যাচ্ছে।
মৌমিকে জোর করে নিয়ে আসলো ফারহান। সবার সাথে বিদায়ের পর, মৌমি উপরের দিকে দৌড় দিল। সবাই মনে করলো মেয়েটার কান্না পাইছে তাই চলে গেছে।
কিন্তু ফারহান তো জানে ও কেন গেছে। ও তাড়াতাড়ি মৌমির পিছনে দৌড়ে আসলো। কিন্তু রুমের ভিতরে ঢুকেই ধপাস…..!
বাবারে, গেলামরে! কোমর মনে হয় শেষ। এদিকে মৌমি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে।
— এই পিচ্চি! কি হলো হাসো কেন? আইসক্রিম তুমি ফেলেছো?
— রাগ করিস না ভাইয়া, নাহলে আম্মু বকা দেবে। আমি তোকে চকলেট এনে দেবো।
— কি-কি বলছো? মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি?
মৌমি এসে ওকে কাতুকুতু দিতে লাগলো আর হাসতে লাগলো।
— এই মেয়ে? কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন?
— তুমি না কাল বললে, একবার ছোটভাই, একবার বড় ভাই, আব্বু আম্মুর মত হবে? আমি তোমাকে সব বলবো? তাই এখন ছোটভাই বানালাম। বাড়িতে ওকে এভাবে ফেলে দিই, হি হি হি।
— চুপ! চুপ পেত্নী কোথাকার? এত বড় ছেলেকে কেউ ফেলে?
— তুমি পঁচা, খালি বকা দাও।
বলে মৌমি জুতাসহ বিছানায় উঠে গেলো।
— কি করছো তুমি?
বলতেই মৌমি ফারহানের দিকে আইসক্রিম ছুড়ে মারলো।
— দেখো মৌমি, এমন করে না। বেড এ কেউ জুতা পরে উঠে না। নামো, তোমাকে আর বকা দেবো না।
— কান ধরো!
— কি? তবে রে মেয়ে!!!
বলে ফারহান বেড উঠলো ওকে ধরার জন্য। মৌমি দৌড় দিতে গিয়ে ফারহান যেখানে পড়ছিল সেখানে সেও ধপাস করে পড়ে গেলো।
আম্মু গো…. বলে এমন জোরে মেয়েটা চিৎকার দিল বাড়ির সবাই একটু পরে এসে হাজির।
ফারহানের আম্মু এসে জিজ্ঞেস করলেন,
— কি ব্যাপার ফারহান, ও পড়লো কেমনে?
— আমাকে ফেলার জন্য আইসক্রিম ঢালছিল। গলে গেছে সারাটা। তাই ও পড়ছে।
— না আম্মু, ও আমাকে ফেলচে। ও আমারে মারার জন্য দৌড়াইছে।
ফারহান মনে মনে বললো, দাঁড়াও মেয়ে মজা দেখাবো। বিচার দেওয়ার সময় সব মনে থাকে, সব পারো আর এখন পারো না।
“ফারহান এটা তুই ঠিক করিস নি” বলে আম্মু মৌমিকে নিয়ে চলে গেলেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফারহান দেখলো মৌমি তার পাশে কান ধরে বসে আছে।
ও অবাক হয়ে গেলো।
— কি ব্যাপার?
— রাতে যে ভাইয়াকে ফেলছিলাম সেজন্য কান ধরছি বড় ভাইয়া!!
এই মেয়ে যেভাবে ভাই ডাকা শুরু করছে, দুইদিন পর না আব্বু আম্মু ডাকা শুরু করে আল্লাহ তুমি রক্ষা করো। ফারহান এসব মনে মনে ভাবছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি সরো, আমি উঠবো।
— না আগে চা খাও।
চা মুখে দিয়েই ফারহান কুলি করে ফেলে দিল। ও মাগো, মানুষ চা এ এতো লবন দেয়?
এই মেয়ে চা কে বানাইছে?
— আমি , আমি পারি তো।
— লবন কয় চামচ দিছো?
— লবন দেই নাই চিনি দুই চামচ দিচি। আরও এক চামচ আনবো?
আনতে হবে না। এ চা তুমি খাও।
— আমি!!
— হ্যা তুমি! চুপচাপ খাও। ফারহানের রাগী মুখ দেখে ভয়ে সমস্ত চা এক চুমুকে খেয়ে ফেললো মৌমি।
ফারহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আশ্চর্য!! খেলো কিভাবে এই চা!!
আর তখনই মৌমি এত লবন সহ্য করতে না পেরে ফারহানের উপরেই বমি করে দিলো।
৪র্থ কিস্তিঃ
ফারহান মৌমির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
— এটা কি করেছো?
কিন্তু মৌমি কোন কথাই বলতে পারছে না। ও আবার বমি শুরু করলো। ফারহান ওর অবস্থা দেখে ওকে পাঁজাকোলা করে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো। হাতমুখ ধুইয়ে দিয়ে রুমে এনে বেড পরিস্কার করে বেডে শুইয়ে দিলো।
— চুপচাপ ঘুমাও, আর কোন কথা নয়। আমি এসব পরিস্কার করে আসছি। খুব মহান কাজ করেছো।
তারপর সে ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসলো।
এসে দেখে মৌমি উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে শাড়ি বের করেছে পরার জন্য।
— এই এসব কি?
— তুমি রাগ করেচো তো তাই শাড়ি পরতে চাইলাম।
— আজব! রাগের সাথে শাড়ির কি সম্পর্ক?
নাও দুধ টা খেয়ে নাও। সকাল থেকে কিছু খাইছো?
— না, রাতে ফেলে দিচিলাম তো। তাই সকালে উঠেই চা নিয়ে আসলাম।
— খুব মহান কাজ করেছো। এখন দুধ খাও। তুমি শাড়ি পরে হাঁটতে পারবে না। আমি ড্রেস বের করে দিচ্ছি।
ফারহান চাকরি তে ঢুকার পর থেকে নিজের মনের মহারাণীর জন্য অনেক কিছু কিনে রেখেছে। কিন্তু মহারাণী…! জীবনে আসলো তো পেত্নী একটা..!
ফারহান ওকে সালোয়ার কামিজ এনে দিলো পরার জন্য। তারপর নিচে নাস্তা নেওয়ার জন্য আসলো। ফারহান উপরে এসে দেখে মৌমি যে শাড়ি বের করছিল সেটাই গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে পরতে পারেনি বলে। সমস্ত মুখে, মেইআপ দিয়ে সং সেজে আছে।
— মৌমি! আমি তোমাকে জামা পরতে দিলাম না..? এসব কি করেছো..?
— আমি শাড়ি পরচি।
বলে মৌমি বসা থেকে উঠতে গেলে শাড়ি নিচে পড়ে গেলো। ” এ বাবা এগুলা শাড়ি পরা?” ফারহান চোখ বন্ধ করে গিয়ে ওর গায়ে শাড়িটা জড়িয়ে বসিয়ে দিয়ে মা কে ডাক দিলো।
— দেখে যাও মা, তোমার গুনধর বউ শাড়ি পরে সেজেছে।
মা উপরে এসে ওর অবস্থা দেখে ‘থ’ হয়ে গেলেন।
উনি ফারহান কে বললেন, — যা ফারিয়া কে ডেকে নিয়ে আয়। আমি দেখছি।
ফারিয়া এসে ওকে সালোয়ার কামিজ পরিয়ে ঠিক করে দিল।
ফারহান নিচে বসে চিন্তা করছে, কি জিদ্দি মেয়েরে বাবা! যা বলবে তাই করে ছাড়বে। এখন ওর জন্য শাড়ি পরানো শিখতে হবে দেখছি। আরও না জানি কতকিছু শিখতে হবে। আল্লাহ তুমি আমাকে রহম করো, ধৈর্য দাও।
মেহমানরাও আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছেন সবাই। বিকাল পর্যন্ত বাসা ফাঁকা হয়ে গেলো একেবারে। কিন্তু ফারহান এর ভিতরে একবার ও বাসায় যায়নি। বাইরে বাইরে সারাদিন কাটিয়ে এসেছে। সন্ধায় ও বাসায় এসে ঢুকলে মা বকাবকি করলেন।
— কোথায় ছিলি সারাদিন? কাল বিয়ে করেছিস আর আজ তুই টো টো করে ঘুরে বেড়াচ্ছিস?
— কি করবো মা? ওই পাগলটার পাগলামি সহ্য করবো?
— ফারহান মুখ সামলিয়ে কথা বলো। ও পাগল নয়, ও তোমার বিয়ে করা বউ।
একপাশ থেকে ফারহানের বাবা বলে উঠলেন।
ফারহান কিছু না বলে মাথা নিচু করে রুমের দিকে যেতে লাগলো। হঠাৎ ধাক্কা লাগলো মৌমির সাথে আর মৌমি পড়ে গিয়ে কান্না শুরু করে দিল। মৌমি দৌড় দিয়ে আসছিল তাই টাল সামলাতে না পেরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে। ওর কান্না শুনে আম্মু এসে আবার বললেন,
— কি শুরু করলে? আবার মারা শুরু করেছিস?
— মা এই মেয়েটা আমার সাথে ধাক্কা খাইছে আমি না। নিজে বিপদ ডেকে আনে আর পরে আমাকে ফাঁসায়।
বলে ও রুমে চলে গেলো। তিনি মৌমির কান্না থামিয়ে ওকে আবার রুমে দিয়ে আসলেন।
— তুমি কি আমার উপর রাগ করেচো?
— কেন রাগ করবো? তুমি তো পিচ্চি কিছু বুঝনা। রাগের কি দরকার..?
— আমি তোমাকে কবিতা শুনাই তাহলে রাগ চলে যাবে।
— কি কবিতা..?
— গোল করনা গোল করনা ছোটন ঘুমায় খাটে…
তারপর মনে হয় খাট নিয়ে গেচে।
ফারহান ওর কবিতা বলা দেখে হাসতে হাসতে বসে পড়লো।
— কেন? কে নিছে খাট?
ওর হাসি দেখে মৌমি ও হেসে দিলো।
— ভুলে গেচি তো তাই। ভাইয়া নিয়েচে। এই স্বামী তুমি আমার সাথে পুতুল খেলবা? মৌমি ভাবলো ওর রাগ কমে গেছে, আম্মুকে তো এসব বলে রাগ ভাঙায়।
— বলছি না স্বামী ডাকবে না? ফারহান ডাকবে। কি? এখনও পুতুল খেলো?
— ঠিকাচে, ফারহান ডাকবো। খেলবা পুতুল? কালকে আমাদের বিয়ের মত আমিও পুতুলের বিয়ে দেবো।
ফারহান মনে মনে ভাবলো, এই সুযোগে যদি কিছু বুঝানো যায়।
ও বললো, হুমম খেলবো,
—তার আগে বলো কালকে তুমি কি বলেছিলে?
— কি বলবো?
— আরে গাধী, কাজী সাহেব কি তোমায় কবুল বলতে বলে নাই?
— হুমম। আম্মু বলচিল কবুল বললে আমি সুন্দর বাড়ি পাবো, ভালো আম্মু পাবো, তাই বলেচি। আচ্চা আবার কবুল বললে কি আরেকটা আম্মু পাবো?
— চুপ। এসব বলতে নেই কবুল একবার বলে। চলো আমরা খেলি।
বলে ফারহান ওকে বিয়ের সিস্টেমটা খেলার মাধ্যমে দেখাল। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী একই বিছানায় ঘুমায়, বউ রান্না করে স্বামীকে খাওয়ায় এসব।
কিন্তু ও তো জানলো না নিজেরই সর্বনাশ করলো।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে মৌমি ফারহানের জন্য চা নিয়ে গেলো।
ফারহান চা দেখে বললো, না বাবা আমি চা খাচ্ছি না।
— আম্মু দিয়েচে তো।
— মা বানাইছে..?
— হুমমমম।
–ওকে বলে কাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কে বানাইছে? একটু কড়া গলায় বললো ফারহান।
— আম্মু বানাই দিচে। সকালে চিনি কম হইচিল তাই আমি আরেক চামচ চিনি দিচি।
— তোমাকে দিতে কে বলেছে?
এই মেয়ে তুমি কিছু বুঝনা? না না বুঝার ভান করো কোনটা?
— আমি কিন্তু কেঁদে ফেলবো।
— হুমম কাঁদো, কাঁদো। এটাই তো পারো।
বলে ও নিচে নেমে এসে মা কে চা খেয়ে দেখতে বললো।
মা খেয়ে বললেন কে করছে এসব? মৌমি?
— মেজাজ খারাপ, করে দিয়েছে মেয়েটি। আরেক কাপ চা দাও।
— মেয়েটা এত অবুঝ জানা ছিলনা ফারহান। তুই রাগ করিস না। দেখবি একদিন ও সবচেয়ে ভালো, লক্ষি বউ হবে।
— ভালো! লক্ষি! ও..?!
— বাবা রাগ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। যা এখন শুয়ে পড় আগামীকাল ওদের বাড়ি যেতে হবে। আমরা ও কাল চলে যাবো।
— মা কি বলছো? তোমরা চলে গেলে এই মেয়েকে আমি কিভাবে সামলাবো?
— নিজের বিষয় নিজেই সামলাতে হবে। দেখো আমরা সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো না। তাই তুমি নিজেকে শক্ত করো। তুমি আমার ছেলে। তোমাকে আমি শিখিয়েছি মেয়েদের কিভাবে সম্মান দিতে হয়। কিভাবে নিজের স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়, সংসার সামলাতে হয়।
— ঠিক আছে মা। আমাকে এক মাসের সময় দিতে হবে, আমি কিছু কাজ করবো, প্রস্তুতি নেবো।
— নাহ্ তোমাকে এত সময় দেওয়া যাবে না তুমি যা করতে চাও পনের দিনের ভিতরে করো।
— ওকে মা। বলে ফারহান চিন্তিত মনে তার রুমে চলে আসলো।
আজও আবার মৌমি ফ্রক পরেছে। এই মেয়েটা কবে বুঝবে ও বড় হয়েছে। মনে অনেক চিন্তা নিয়ে ও ঘুমাতে গেলো। মৌমিকে বললো, এসে শুয়ে পড়ো।
— তুমি আমায় কবিতা শুনাবে?
— এত রাত্রে..?
— শুনাওনা ফারহান, গোল করোনা গোল করোনা…
— আচ্ছা আসো, শুনাচ্ছি।
হঠাৎ অদ্ভুদ কারনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ফারহানের। দেখে মৌমি ভয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে আর কাঁপছে।
— কি হয়েছে মৌমি? কাঁপছো কেন? ভয় পেয়েছো?
— লাইট নাই, ভু–ভুত। বলে মৌমি কান্না শুরু করে দিল।
— না না ভুত ফুত কিচ্ছিু নেই। আমি এক্ষুনি লাইট অন করছি। ফারহান উঠতে গেলে মৌমি তাকে আরও জড়িয়ে ধরলো। ইশ্ এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেলনা বলে ফারহান মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে কোনমতে ওকে সাথে নিয়ে গিয়ে লাইট অন করলো।
— কি হয়েছে মৌমি? জেগে গেলে কেন? আর তুমি ভয় পাচ্ছিলে কেন?
— আমি হিসু করবো।
ফারহান হাসতে হাসতে বললো, ও এই কথা?
আচ্ছা যাও টয়লেট এ যাও।
— ভুত যদি আসে?
— না না লাইট অন তো। লাইট অন থাকলে ভুত আসেনা। আর আমি তো আছি যাও।
— তুমি টয়লেট এর কাছে আসো, নাহলে আমি এখানে করবো।
— ওরে বাপরে.. জলদি চলো। আমি টয়লেট এর পাশেই থাকবো।
ফারহান আর লাইট অফ করলো না। এখন থেকে আলোর মাঝেই তাকে ঘুমাতে হবে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাশ ফিরে শুলো।
— আচ্ছা ভুত যদি আসে, তুমি কি করবা?
— ভুত বলে কিছু নাই ঘুমাও।
— যদি এসে আমাকে মারে? আমি ঘুমাবো না
— আচ্ছা ওকে। ভুত আসলে দুজনে মিলে ভুত কে খুব মারবো। এখন ঘুমাও।
মৌমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
কিন্তু সকালে উঠে আরেক ঝামেলা শুরু করে দিল মৌমি।
৫ম কিস্তিঃ
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই মৌমি রান্না ঘরে গেলো নাস্তা বানানোর জন্য।
রাত্রের বেলা ফারহানের কথা ওর মনে গেঁথে গেছে। স্বামীকে রান্না করে খাওয়াতে হয়।
কি নাস্তা বানাবে কিছু তো জানেও না চিনেও না। প্রথমেি ময়দার প্যাকেট নজরে পড়লো। ও তাড়াতাড়ি করে প্যাকেট খুলতে গিয়ে অর্ধেক নিচে আর অর্ধেক ওর উপরে। কোন মতে একটা বাটির মধ্যে ময়দা নিয়ে পরোটা বানানোর জন্য ময়দায় পানি ঢাললো। কিন্তু কোনমতেই তা রুটি বেলার মত হলো না। উল্টো মনে হলো পানির মধ্যে কিছু ময়দা ঢালা হয়েছে। নাহ এইটা বাদ এখন আরেকটা শুরু করি। এবার ও ডিম দিয়ে অমলেট বানাতে গেলো। কয়েকটা ডিম একটা পাত্রে নিয়ে ডিমের খোসা সহ ভেঙ্গে মিক্স করে ফেললো। এখন আগুন করতে হবে, কিন্তু আগুন কিভাবে করে? থাক শুধু ডিম হলেই চলবে। এখন কয়েকটা ফল কাটা দরকার, আপেল আর আম নিয়ে কাটতে বসলো। কিন্তু কখন যে ওর হাত কাটছে সেটাই টের পেলো না। ও অনেক খুশী আজ নাস্তা বানাচ্ছে। কোন মতে খোসা সহ আম আর আপেল কেটে একটা প্লেট এ নিল। তারপর ডিম আর ফল গুলা নিয়ে উপরে গিয়ে ফারহান কে ডাকলো। ফারহান ওকে দেখেই লাফ দিয়ে বিছানায় বসলো। কথা না শুনলে চিনতেই পারতো না যে ও মৌমি। সারা শরীরে ময়দা মাখানো, চুলের মধ্যে ময়দা ডিম লেগে আছে হাত থেকে রক্ত জামায় মুখে লেগে আছে। ফারহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
–ফারহান তোমার জন্য নাস্তা বানাইছি।
— নাস্তা? তোমার হাতে?
— হুমম, তুমি না কাল বলেছিলে বউ রা নাস্তা বানায়।
— এই সেরেছে…!
— এই দেখো ডিম আর ফল নিয়ে আসছি। বলে টেবিলে রাখলো।
— তোমার এসব কি অবস্থা? আর হাতে রক্ত কেন?
এতক্ষণে মৌমির নিজের দিকে খেয়াল হলো। নিজের দিকে তাকিয়ে আর হাতের রক্ত দেখে আম্মু বলে এক চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে গেলো।
মৌমি পড়ে যাচ্ছে দেখে ফারহান লাফ দিয়ে গিয়ে মৌমিকে ধরলো। তারপর এই অবস্থায়ই বেড শুয়ালো। হাতের কাটা জায়গা দেখে কীট বক্স এনে হাত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করতে লাগলো। ততক্ষণে ফারহানের আম্মু আর ফারিয়া এসে গেছে।
— কি এসব ফারহান?
— মা তোমার বউকে কাল কিছু বুঝিয়েছিলাম যে বউ হলে রান্নাবান্না করতে হয়। এই হচ্ছে তার প্রমান। দেখি কি নাস্তা বলে ফারিয়া উকি দিলো বাটি আর প্লেট এর উপর। ও বাটির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ফ্লোর এ বসে গেলো।
— কি ব্যাপার ফারিয়া? এত হাসছিস কেন? বলে উনিও উকি দিয়ে দেখে হাসতে লাগলেন। ফারহান দুজনের হাসি দেখে কি জন্য এত হাসছেন দেখার জন্য বাটি টা হাতে নিলো।
— মা আমি হাসবো না কাঁদবো বলে বাটি নিয়ে সেখানেই বসে গেলো।
ভাইয়া ভাগ্যিস ভাবি তোমায় এগুলা খাওয়ায়নি বলে ও আরও জোরে হাসতে লাগলো। ওদের হাসির শব্দেই মৌমির জ্ঞান ফিরে এলো। ওর দিকে তাকিয়ে ফারিয়ার তো আর হাসি থামে না। এদিকে মৌমি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে না পেরে কেঁদে ফেললো।
— এই মেয়ে কাঁদবে না বলছি। মা আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাবো। বলে ফারহান মৌমিকে নিয়ে বাথরুম এ ঢুকলো।
— ফারিয়া, একে গোসল করিয়ে রেডি করা। আমি নিচে যাচ্ছি বলে আম্মু ফারহান কে ডেকে নিচে নাস্তা বানানোর জন্য চলে গেলেন।
সবাই দুপুরবেলা গ্রামে মৌমিদের বাড়িতে এসে পৌছলো। মৌমির মা দৌড়ে এসে মৌমিকে জড়িয়ে ধরলেন। সবার চোখে মুখে আনন্দ আর কান্না। হঠাৎ তিনি হাতে ব্যান্ডেজ দেখে আঁতকে উঠলেন।
— কি হয়েছে আমার মেয়ের?
— না তেমন কিছু না। ও সবার আগে উঠে রান্নাঘরে নাস্তা বানাতে গেছিল। তারপর সবকিছু বলে ফারহানের মা হাসতে লাগলেন। ওর এসব কান্ডকারখানা শুনে সবাই হাসলো। হঠাৎ মৌমির মা ফারহানের মায়ের হাতে ধরে বললেন। কি করে যে কৃতজ্ঞতা জানাবো বুঝতে পারছি না বোন। তুমি আমার মেয়েকে গ্রহন করে কতটা যে আমার উপকার করেছো।
— ইশ্! এসব বলিও না তো। আমরা তো আগেরই সম্পর্কে আবদ্ধ। এখন নাহয় আরেকটা করলাম। এসব বলপ লজ্জা দিওনা।
— লজ্জা তো আমার লাগছে বোন তোমাদের ও কতটা বিরক্ত করছে। কি করবো বলো কত চেষ্টা করেছি কিচ্ছু করতে পারলাম না।
— আমরা ওর বিষয় গুলা উপভোগ করি। আর চিন্তা করতে হবে না। আমার ছেলে আছে না? ও সব ঠিক করে দেবে। কিরে ফারহান কিছু বলছিস না যে?
ফারহান এ কথা শুনে মায়ের দিকে তাকিয়ে পরে শাশুড়িরর দিকে তাকিয়ে বললো জ্বি মা আপনি কিছু চিন্তা করবেন না।
আর মনে মনে বললো জীবনটা তো তেনা তেনা করে দিলো। আর বাকি জীবন যে কি করবে। সবাই ওদেরকে আদর আপ্যায়ন করতে লাগলো। ও মনে মনে খুজতে লাগলো মৌমি গেলো কই?
মৌমি এসেই বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে খেলা শুরু করেছে। ওর আচরনে মনে হলো অনেকদিন পর আসছে এ বাড়িতে।
ফারহান আর মৌমি ছাড়া সবাই ফারহান দের বাড়ি চলে গেলো।
সন্ধার পরে মৌমির সব চাচাতো ভাইবোন ফারহান কে নিয়ে গল্প করছে কিন্তু মৌমি কে দেখা যাচ্ছে না। দিন থেকে ওকে দেখেনি। তাই মৌমির চাচাতো বোন কে জিজ্ঞেস করলো একটু মৌমিকে ডেকে দিন তো।
— দুলাভাই আপনি আপনি করছেন কেন? আর ওই পাগলী কে দিয়ে কি করবেন? আমরা আছিনা গল্প করার জন্য? বলে হু হু করে হেসে উঠলো। ওর সাথে বাকি সবাই ও হাসা শুরু করলো। ফারহান ওদের এই ধরনের আচরন দেখে খুব কষ্ট অনুভব করলো।
ও বললো আপনি ওকে পাগলী বলছেন কেন? আর এভাবে হাসছেন কেন?
ওরা বললো, “পাগলী কে পাগলী বলবো না তো কি বলবো?
ওদের আচরন দেখে রাগে ফারহান ওখান থেকে উঠে মৌমির মায়ের রুমে চলে আসলো।
— মা মৌমি কোথায়?
— কেন বাবা কি হয়েছে? ও তো ওর ভাইয়ার রুমে গল্প করছে। তুমি এতো রেগে গেছো কেন? বসো নাও পানি নাও।
— মা এ বাড়ির ছেলেমেয়েরা মৌমিকে কি পাগলী বলে ডাকে? পানি পান করে বললো।
— হ্যা বাবা। ওকে আমি আমার কাছেই এজন্য আগলে রাখি। যৌত পরিবার তো তাই কাউকে কিছু বলে ঝগড়া করতে চাইনা। ওরা সবসময় ওকে নিয়ে মজা করে। ওকে ভয় দেখায় ছোট বাচ্চাদের মত বিপদে ফেলে সুযোগ পেলেই। আমার মেয়েটা বড় অসহায় বাবা। বলে উনি চোখের পানি মুছলেন। মৌমির ছোটভাই ও আসলো এই সময়। ১৪/১৫ বছর বয়স হবে। সেও বললো, জ্বি দুলাভাই এজন্য আমি সবসময় আপুর খেলনা পুতুল সাজি, ছোট বাচ্চা হয়ে ওর সাথে খেলি।
ফারহান এসব শুনে কিচ্ছু বললো না। মনের ভিতর কোথাও যেন তীর বিধলো। ও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো তোমরা যারা ওকে পাগলী ভাবছো। আমি তোমাদের সামনে তোমাদের চেয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন করে সামনে এনে দাঁড় করাবো। তারপর বললো ঠিক আছে মা। ও গল্প করুক ডাকার দরকার নেই।
রাতের খাবারের পর ও একটু বাইরে হাঁটাহাটি করছিল। রাতের তারাভরা আকাশ আর দূরের চাঁদকে ওর খুব ভাল লাগে। মনে হয় যেন সমস্ত আকাশ ওকে দেখছে। আকাশের দিকে তাকালে ওর নিজেকে বড় ক্ষুদ্র লাগে। আল্লাহ কত সুন্দর করে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। কত শত গ্রহ নক্ষত্র, নক্ষত্র পুঞ্জ। তার মধ্যে ছোট এই পৃথিবীর এই ক্ষুদ্র মানুষ গুলো কত ক্ষুদ্র। তারপরেও আল্লাহ আমাদের শ্রেষ্ট করেছেন। আমাদের প্রতি আল্লাহর কত দয়া মায়া। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে ভাবতে অজান্তেই মুখ ফুটে বেরিয়ে আসলো আলহামদুলিল্লাহ্।
রাত অনেক হয়ে গেছে দেখে ও রুমে আসলো। রুমে এসে দেখে কেউ একজন দুধ আর একটা কাগজ চাপা দিয়ে রেখেছে। কাগজ টা হাতে নিয়ে পড়লো ওই অকর্মার ঢেকি পাগলী কে ছেড়ে দাও। আমার মেয়েকে বিয়ে করো অনেক টাকা পাবে, সাথে আরও অনেক কিছু।
কে লিখলো এসব? এ বাড়িতে আমার পিচ্চিটার শত্রু কে? সবাই একে নিয়ে এতো টানাটানি করছে কেন?
ওর মনে হলো সন্ধার সময় ওই মেয়েটা বেশি গা গেঁসাগেঁসি করছিল মনে হয়। ওর মা কি এমন করলো?
ফারহান আর দুধটা খেলো না। শুয়ে শুয়ে সে মোবাইলে মৌমির ছবি দেখছে আর হাসছে। এতদিন থেকে তাদের বাড়িতে মৌমি যা যা করছে ফারহা তার সবকিছুর ছবি তুলে রাখছে। আচ্ছা মৌমি কি ঘুমিয়ে গেছে? মনে হয় মায়ের সাথেই ঘুমিয়েছে। ও ও এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।
ফজরের নামাজ পড়ে ফারহান বসে বসে চিঠির কথা ভাবছে। এমন সময় মৌমি চা নাস্তা নিয়ে আসলো। মৌমিকে এতক্ষণ পর দেখে মনে একটা স্বস্তি ফিরে আসলো।
— কাল থেকে যে একবার ও সামনে আসলে না? স্বামীর কথা মনে পড়েনি?
— পড়েচে তো। খেললাম যে তাই।
— চা নাস্তা কে বানিয়েছে?
— আম্মু বানিয়েচে। আমাকে বললো নিয়ে আসতে
— তুমি চা এ কিছু মিশিয়েছো?
— না না আজ আর কিচু দেইনি।
— ঠিক আছে বসো। নাস্তা খাও আমার সাথে।
— না না, আমি আম্মুর সাথে খাবো।
— আচ্ছা আচ্ছা খেও। এখন বলো তুমি কি আমার সাথে যাবে?
— না, আমি আমার বাড়িতে থাকবো। তুমিও সবার মত আমাকে মারো।
— ওরা কারা? কে মারে? তুমি তোমার এখনকার আম্মুর কাছে যাবেনা? উনি যে তোমার জন্য কাঁদবেন।
মৌমি কিছু না বলে মায়ের কাছে চলে গেলো।
ফারহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নাস্তা খেতে লাগলো। এই সময় সেই মেয়েটা এসে বললো, দেখলেন তো দুলাভাই, কেমন পাগলী? এখন ও সময় আছে একে বিদায় করে দিন।
— আচ্ছা ধরো বিদায় করে দিলাম। তাতে আপনার কি লাভ?
— ইয়ে না মানে…
— মানে মানে করছেন কেন?
আর কাল রাত্রে কে চিঠিটা লিখেছে?
— চিঠি!! জানিনা। বলে তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো।
সেদিন দুপুরে ফারহান মৌমি কে নিয়ে তাদের বাড়িতে চলে আসলো। মৌমি আসতে চায়নি, কিন্তু ফারহান ও ওকে ঐ বাড়িতে রেখে আসতে চায়নি। অনেক বুঝিয়ে মৌমির মা মৌমিকে পাঠালেন। কিন্তু মৌমি অনেক কান্নাকাটি করলো এমন কি আসার পথে সারাক্ষণ কাঁদলো। বাড়িতে এসে কান্না থামিয়ে অনেক বুঝালো।
ফারহান ওকে রেখে পরদিন ই শহরে চলে আসলো। মা বাবাকে বুঝিয়ে আসলো যে মৌমিকে তার কাছে এনে রাখতে হলে এবং ঠিক করতে হলে ওকে কিছু কাজ করতে হবে।
সামনে ফারহানের অনেক কাজ, অনেক দায়িত্ব। মৌমিকে ভাল করার দায়িত্ব, পিচ্চি বউকে বড় করার দায়িত্ব।
ফারহান এসে রান্না কোর্স, বিউটিশিয়ান কোর্স, আর বাচ্চা দের ট্রেনিং দেওয়ার কোর্সে ভর্তি হলো।
৬ষ্ঠ কিস্তিঃ
পনেরদিন হয়ে গেলো। ফারহান নিয়মিত তার অফিস করছে। বাড়িতে এসে আবার নিজের শিখা বিষয় গুলো প্রেকটিস করা। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার জন্য বাড়িতে ফোন ও করতে পারছে না। মা বারবার ফোন করেছেন।
জিজ্ঞেস করছেন, কবে আসবে, কবে মৌমিকে নিয়ে যাবে, সবাই কানাঘুসা করছে ফারহান বউ রেখে চলে গেছে। এই বউ কে আর নেবে না।
এর মধ্যে মৌমি দুইবার বাবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসছে।
ওখানেও কানাঘুসা হচ্ছে। অবশ্য ওই বাড়ির কিছু লোক খুশী ও হয়েছে।
মা বলেছেন মৌমি কয়েকবার ওর কথা জিজ্ঞেস ও করেছে।
আশ্চর্য! মৌমি আমার কথা জিজ্ঞেস ও করে!! ফারহান এসব ভাবছে। আর দুইদিন পরে গিয়ে নিয়ে আসবো ওকে।
কিন্তু শনিবার সকাল বেলা ফারহানের মা ফোন করে বললেন মৌমি কে পাওয়া যাচ্ছে না।
ফারহান তো অবাক, এই বোকা মেয়েটা কোথায় যাবে..?
ঠিক আছে মা আমি আসছি। ও অফিস থেকে সোজা গ্রামের বাড়ি রওনা দিলো। দুই বাড়িতে যেন মাতম শুরু হয়েছে। মৌমির মা আর ফারহানের মা ফারহান কে দোষারোপ করছেন। ও যদি মৌমিকে রেখে না যেত তাহলে আজ এই অবস্থা হত না।
সকাল গড়িয়ে বিকাল হলো মৌমি কে কোন জায়গায় পাওয়া গেলোনা।
এখন সত্যিই ফারহানের নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে। ওর নিষ্পাপ কান্নাভরা মুখটা মনে পড়ছে। না জানি মেয়েটা কোথায় আছে। কাউকে কিছু বলতে পারবে না। নিজের ঠিকানাও মেয়েটা জানেনা।
আল্লাহ তুমি রহম করো। মৌমিকে ফিরিয়ে দাও।
সন্ধার সময় দুই বাড়ির সবাই বসে আছে। কি করবে কোথায় খুজবে? ও গ্রাম ছাড়া আর কোথাও যায়নি কোনদিন। সমস্ত এলাকা খোজা হয়ে গেছে।
ফারহান মৌমির চাচাতো বোনকে দেখলো মিটিমিটি হাসছে।
ওর গা জ্বলা শুরু হয়ে গেলো।
মা আমি যাচ্ছি দেখি শহরে খোজে থানায় ডায়রি করে বাসায় যাবো। দেখি কি হয়। কাল ওর ছবি দিয়ে আমার পরিচিত সবাইকে খোজার জন্য লাগিয়ে দেবো।
বলে ও সবাইকে সালাম করে বাসায় আসার জন্য বাইক ছাড়লো।
রাত ১০টা, সব জায়গায় খোজাখোজি করে ব্যর্থ হয়ে ও বাসায় ফিরলো।
কিছুর আওয়াজ আসছে যেন। কি ব্যাপার? দরজার সামনে থেকে কারো কান্নার আওয়াজ আসছে যেন। বলে ও এগিয়ে গেলো
— ফারহান দরজা খোল। ওরা আমাকে বলেচে তোমাকে বিয়ে করে ফেলবে। আমি আর দুষ্টুমি করবো না। আমি ভালো হয়ে যাবো, দরজা খোল। আমার ভয় লাগছে। ভুত আসবে দরজা খোল।
এই কথা শুনে যেন ওর হাতুড়ী পেটা শুরু হলো।
মৌমি? এখানে কিভাবে আসলো। আহারে কতক্ষণ থেকে যে এসে বসে আছে।
ও দৌড়ে এসে মৌমি বলে ডাক দিলো। মৌমি ফারহানকে দেখে এসে জড়িয়ে ধরলো। এই প্রথম ফারহান বুঝতে পারলো, ভালবাসার টান কি? আর স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক কে আল্লাহ কেন এত মজবুত করে বানিয়েছেন।
মৌমি ও ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেই আছে
আর বলছে, কেন দরজা খোলনি? আমি ভয় পাচ্চিলাম যে।
— পাগলি মেয়ে আমি ঘরের ভিতর থাকলে তো দরজা খুলবো। তোমাকে খুজতে গিয়েছিলাম। তুমি কখন এখানে আসছো?
— আমি? দিনে এসেচি। এখানে বসে চিলাম। আমার কত ক্ষুদা লাগচে।
— আর বসতে হবে না সোনা। তুমি চলো, তোমাকে আমি আজ নিজ হাতে খাওয়াবো।
বলে ফারহান ওকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
বাড়িতে সবাইকে ফোন করে জানালো যে মৌমি তার কাছে বাসায় এসে গেছে। চিন্তা করতে হবে না। তারপর সকালের খাবার যা রান্না করা ছিলো ফ্রিজ থেকে খুলে গরম করে ওকে নিজ হাতে খাওয়ালো। ওর খাওয়া দেখে চোখে পানি এসে গেলো। কতক্ষণ থেকে যে না খেয়ে আছে। খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে একমাস থেকে কিছু খায়নি।
খাওয়া শেষ হলে ফারহান মৌমিকে জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি বাড়ি থেকে কখন বের হইছো? সবাই যে তোমার জন্য চিন্তা করছে, আম্মু কাঁদছে সেটা জানো.?
— ঘুম থেকে উঠেই আম্মুর ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে চলে আসচি। আর তোমার ফটো।
— কেন আসছো? কেউ যদি তোমাকে ধরে নিয়ে যেত?
— হুহ, আমার কাচে চাকু আচে। কেটে দেবো কেউ আসলে। আর আসবো না? তুমি যে একবার ও যাওনি। আম্মু বলেচে বিয়ের পরে সব সময় তোমার সাথে থাকতে।
— সেজন্য তুমি এভাবে আসবে?
— ওই রাখি বলেচে তুমি আমায় ফেলে গেচো। আর ও তোমার কাচে আসবে বিয়ে করবে তোমাকে। তাই আমি আগে চলে আসচি। ওকে কাচে আসতেই দেবো না। এই চাকু নিয়ে পাহারা দেবো
ওর কথা শুনে ফারহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। এই অবুঝ মেয়েটিও তাকে নিয়ে কত চিন্তা করে। আর সে.?
সে তো একজন ভালো মানুষ, যার জ্ঞান বুদ্ধি বিবেচনা আছে। এতদিন তাকে ফেলে থাকা,ফোন না করা, কথা না বলা ঠিক হয়নি।
সে মৌমিকে জড়িয়ে ধরে কান্নাভরা কন্ঠে বললো,
— আর তোমাকে ফেলে আসবো না। সবসময় আমার সাথে থাকবে। আর ওই রাখির বাচ্চাকে আমি দেখে নেবো। আমার বউকে ভয় দেখায়।
— না না, তুমি ওর কাচে যেওনা। ও তোমাকে বিয়ে করে নেবে।
— আরে পাগলী তুমি আমার বউ, তো ও আমাকে কেমনে বিয়ে করবে?
— করবে না তো?
— না, ওকে আমাদের বাসায় আসতেই দেবো না। কিন্তু তোমাকে আমার সব কথা শুনতে হবে। শুনবে তো?
— হুমম। কিন্তু আইসক্রিম আর চকলেট দিতে হবে।
— দেবো, চলো এখন ঘুমাবে।
আজ থেকে ওর মিশন শুরু।
অফিস থেকে বিশেষ কারন দেখিয়ে এক মাসের ছুটি নিয়েছে ফারহান। ও অনেক ইন্টালিজেন্ট বলে কোম্পানি ওকে হাতছাড়া করতে চায়না, তাছাড়া ফারহান কখনও ছুটি নেয়নি। তাই অফিস তার ছুটি মঞ্জুর করলো।
ঘুম থেকে উঠেই দেখলো মৌমি সেই ফ্রক পরে আছে।
— মৌমি শাড়ি পরবে?
— শারি তো আমি পরতে পারিনা আমি।
— আমি পরাবো তোমাকে পরবে?
মৌমি তো খুশীতে আটখানা।
ফারহান হাতমুখ ধুয়ে আগে সকালের নাস্তা বানালো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ও মৌমিকে শাড়ি পরাতে বসলো। কিন্তু শাড়ি পরাবে কি মৌমি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরলো। ওর গায়ে হাত লাগায় কাতুকুতু লাগছিল। অনেক কষ্টে মৌমিকে চুপ করিয়ে যথাসম্ভব গায়ে হাত না লাগিয়ে শাড়ি পরাতে লাগলো। মৌমিকে নেবি ব্লু আর মিষ্টি কালারের শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে নিজের মনের মমত করে সাজালো। তারপর ফারহান ওকে বসিয়ে ওর ছবি তুললো যাতে এই মুহুর্ত টা ক্যামেরায় বন্ধি থাকে।
ফারহান যত দেখছে ততই যেন মন ভরছে না। এই বউটা শুধু আমার, শুধু আমি দেখবো ওকে। আল্লাহ এত সুন্দর করে ওকে সৃষ্টি করছেন। ওর দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছিল ফারহান।
— আমি হিসু দেবো। বলে মৌমি যেই উঠে হাটা শুরু করলো, শাড়ির সাথে পা জড়িয়ে হোচট খেয়ে পড়ে গেলো। ইশ্ একে নিয়ে যে কি করি, বলে ফারহান এসে ওকে ধরে তুললো।
কোনমতে হিসু দিয়ে এসে শাড়ি ধরে উপরে তুলে হাটতে লাগলো।
— এসব কি মৌমি? শাড়ি তুলে ধরে রেখেছো কেন?
— আবার যদি পড়ে যাই?
— আচ্ছা আসো আমি তোমাকে ধরে হাটাই। ফারহান ওকে ধরে ধরে হাটিয়ে দেখালো এভাবে হাটলে পড়বে না। কিন্তু কিছু সময়েই মৌমি শাড়িতে হাঁপিয়ে উঠলো।
আচ্ছা থাক আজ আর শাড়ি পরতে হবে না। ওকে সিম্পল ড্রেস পরালো যাতে কমফর্ট ফিল করে।
—
চলো রান্নাঘরে আজ ডিম ভাজি শিখাবো।
চুলায় কয়েকবার আগুন ধরিয়ে দেখালো ফারহান। কিন্তু মৌমি ভয়েই শেষ। গ্যাসের চুলায় আগুন হঠাৎ ধপ করে জ্বলে উঠে। মৌমি তো মায়ের সাথে গ্রামে লাকড়ির চুলা দেখে অভ্যস্ত। তাও অনেক কষ্টে ও চুলায় আগুন ধরানো শিখালো।
এর ফাকে ফাকে চললো গল্পে গল্পে ছড়া শিখানো, বর্ণমালা শিখানো।
দুইদিন পর মৌমি একা একা ডিম ভাজি করতে লাগলো। কিন্তু ডিম পুড়ে ছাই।
এই দুইদিনে ফারহান মনে হয় চল্লিশ পঞ্চাশ টা ডিম ভাজি করেছে মৌমি কে সাথে নিয়ে তাও রপ্ত করাতে পারেনি।
এক সপ্তাহ শেষ।
এখন কিছু কিছু সবকিছু রপ্ত করতে শিখেছে মৌমি। এত দ্রুত যে ও শিখবে ফারহান কল্পনাও করেনি।
আজ ফারহান পথশিশুদের নিয়ে তাদের বিয়ে সেলিব্রেট করবে। ওর পথশিশুদের কে খুব ভালো লাগে, দুঃখ লাগে। এদের জন্য কিছু করতে মন চায়। সবাই যদি এদের জন্য কিছু করতো, এদের সাহায্যে এগিয়ে যেত তাহলে এই শিশুদের রাস্তাঘাটে, রেল স্টেশনে, শুতে হতো না। প্রতিদিন মানুষের বিশেষ করে বড়লোক নামক কিছু হিংস্র প্রানীর লাথিগুতা খেয়ে বড় হতে হতো না।
মৌমিকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ওকে রুমে পড়তে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে রেখে ওই শিশুদের নিয়ে রুম সাজাতে লাগলো। এদিকে মৌমি ও তাকে যে এরচেয়ে বড় সারপ্রাইজ নিয়ে বসে আছে সেটা তো ফারহান জানে না।
৭ম কিস্তিঃ
সবাইকে নিয়ে ফারহান মনের মত করে বেলুন ফুল দিয়ে রুম সাজালো। ওদিকে বাহির থেকে অর্ডার দিয়ে খাবার, আইসক্রিম চকলেট এনে রেখেছে। বড় একটা কেক এর অর্ডার দিয়ে রেখেছে। বাবা মা বোন কে আসার জন্য বলছে। উনারা আসার সময় কেক নিয়ে আসছেন।
সব কিছু রেডি, এখন মৌমিকে সাজাতে হবে তাই ফারহান সবাইকে বলে উপরে যাওয়ার জন্য যেই পা বাড়ালো। উপরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
মৌমি ফারহানের গতকালের কিনে আনা বেগুনী রঙের শাড়ি ম্যাচ করা ব্লাউজ সাথে ম্যাচ করা গহনা পরে সেজে নিচে নামছে। এতো সুন্দর করে সাজছে ফারহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তো আছেই।
মৌমি এসব সাজগোজ কেমন করে পারলো? সো স্ট্রেঞ্জ!!!
মৌমি নিচে এসে ফারহানের বাবা মা কে সালাম করলো। উনারা অবাক এসব মৌমি শিখলো কোত্থেকে?!
যাক সবাই মিলে কেক কাটলো, পথশিশুদের খাবার দেওয়া হলো। তাদের জন্য একটা করে জামা এনেছিল ফারহান। এগুলো মৌমি কে দিয়ে সবার হাতে দিলো। আসলে পৃথিবী তে আমরা সবাই মানুষ। সবাই যদি উঁচুনিচু ভেদাভেদ না করে সবার সাথে মিশতাম। কিছুক্ষণের জন্য এইসব অসহায় শিশুদের জন্য কিছু করতাম তাহলে অন্তত পক্ষে ওরা একটু আনন্দের ছোয়া পেত। এসব ভাবছিল ফারহান।
হঠাৎ ফারহানের মা সামনে এসে বললেন,
— কি রে, কি ভাবছিস?
— না মা কিছু না। এই বাচ্চাদের কথা ভাবছি।
— হুমম। আসলেই ওরা খুব খুশী হয়েছে।
— দেখোনা মা, ওরা খুব খুশি হয়েছে। এই অসহায় বাচ্চা গুলো সামান্যতে কত খুশী হয়।
— আমরা যদি এদের দিকে একটু ধ্যান দিতাম।.. থাক বাবা তুই মন খারাপ করিস না। তুই তো তোর সাধ্যমত চেষ্টা করছিস।
— আচ্ছা মৌমি কি একা একা সাজছে? না তুই সাজাইছিস?
— না মা আমি তো ওকে পড়তে বলে নিচে এসেছিলাম। কি করে এত সুন্দর করে সাজলো ভেবে পাচ্ছি না।
— সত্যি তুই জানিস না?
— জানিনা যে তা নয়। ওকে সব শিখানোর চেষ্টা করছি। তারপর ফারহান মৌমিদের বাড়িতে চিঠি পাওয়া থেকে শুরু করে সব বললো।
— মৌমির সাথে কার এতো দুশমনী?
— জানিনা মা, আগে ওকে ভালো করি, তারপর জানবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, সন্ধা হয়ে এলো। আমরা এবার বাড়ি যাবো।
— মা আজ না গেলে হয়না?
— না বাবা বাড়িতে তো কেউ নেই। আর তুই তো জানিস ই এসব বাসায় থাকা আমার কাছে বন্ধী বন্ধী লাগে।
— আচ্ছা মা যাবে। আগে আসো এদের কে বিদায় দেই। তারপর সবাই কে আইসক্রিম দিয়ে বিদায় দিলো।
ফারহান মৌমিকে বাসায় রেখে ওদেরকে বিদায় দিতে এগুলো। মৌমি যেরকম অবস্থায় ছিলো সেভাবেই বসে বসে আইসক্রিম খেতে লাগলো। একটু পরে ফারহান এসে মৌমিকে আইসক্রিম খেতে দেখে বললো।
— বললাম না একটা খেতে, ঠান্ডা লেগে যাবে, আবার খাচ্ছো কেন?
— আম্মুর মত তুমিও না করো। তাই লুকিয়ে খাচ্চি।
— আমি কি আইসক্রিম আনিনা?
— এত বকা দেও কেন?
— আচ্ছা আর দিচ্ছি না। এখন বলো তুমি সাজ শিখলে কোত্থেকে?
— তুমি শিখাইচো যে। তাই আমি পারি।
— ভালো কথা। আমি খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু ছ এর জায়গায় চ বলো কেন?
বলো “শিখছি”
— শিখচি
— হয়নি বলো আবার “শিখছি”
— শিখচি
— হুমম…? রেগে বললো ফারহান।
— আমি পারি না। বকা দিলে কেঁদে ফেলবো।
— আচ্ছা যাও আর বকা দিচ্ছি না। চলো রুমে চলো বলে ফারহান ওকে কুলে নিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
মৌমি পড়ে যাবো পড়ে যাবো বলে চিৎকার করছে।
রুমে এনে ফারহান বললো, আমি কি তোমায় ফেলতে পারি?
তারপর ওর কাপড় চেইঞ্জ করে দিলো।
ফারহান মনে মনে ভাবছে, এই মেয়েটা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি তাও তো জানে না। মোহরানা ও কি বুঝাতে পারবো না।
যত দিন যাচ্ছে ফারহান যেন মৌমির রূপ সৌন্দর্য ছেলেমানুষি দেখে পাগল হচ্ছে। তাছাড়া ওর শারিরীক গঠন, ছোয়া সব যেন ওকে কি এক অজানা আকর্ষনে কাছে ডাকছে।
আমি কি কোন পাপ করছি? নাহ পাপ হবে কেন? ও তো আমার স্ত্রী।
যাক এসব নিয়ে এখন না ভাবলেও চলবে।
একটু রেস্ট নেওয়া দরকার, আজ অনেক দখল গেছে।
হঠাৎ একটা শব্দে ফারহানের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ও লাফ দিয়ে উঠে দেখলো লাইট অন কিন্তু মৌমি পাশে নেই। মৌমি মৌমি ডেকে বাথরুম চেক করলো। নাহ্ ওখানেও নেই। গেল কোথায়? ও নিচে নেমে আসলো। তাও মৌমি নেই। রান্নাঘরে এসে দেখে মৌমি বসে বসে কাঁদছে। কি হয়েছে তোমার? এখানে কেন?
— হাত পুড়চে।
— কিভাবে..?! দেখি? — ফারহান দেখলো অনেকখানী জায়গা পুড়ে গেছে। ও মৌমিকে তাড়াতাড়ি করে রুমে নিয়ে এসে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে মলম লাগিয়ে দিলো। এই মেয়ে যেকোন সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই ও আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে।
সেই কখন থেকে মৌমি কাঁদছে আর বলছে, “তুমি আমাকে বকা দেবে না।” তুমি আমাকে বকা দেবে না।”
— আরে বাবা বকা দিচ্ছি না। তুমি রান্নাঘরে কেন গিয়েছিলে?
আর হাত পুড়িয়েছো আমাকে বলো নি কেন?
— আমার ক্ষুদা লাগচে।
— আমাকে ডাকতে পারতে না?
তা কি করতে গিয়েছিলে?
— ডিম ভাজি।
— ও আচ্ছা, বউ আমার একা একা সবকিছু শিখার আর করার চেষ্টা করছে। ভালো। এখন বসো আমি কিছু বানিয়ে নিয়ে আসছি।
ফারহান গিয়ে বাইরে থেকে আনা বিরিয়ানি ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করে খাইয়ে ওকে ঘুম পাড়ালো।
ওর নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখটার দিকে শুধু থাকাতে ইচ্ছা করে।
পরদিন সকালে সব কিছু শেষ করে ফারহান ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাসায় আসলো। মৌমি টিভি দেখছে।
— কেমন আছো মৌমি?
— ভালো আচি।
— আমরা আজ বাইরে যাবো। তুমি যাবে?
— কোথায় যাবো। ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো মৌমি।
— আরে পাগলী ভয় পাচ্ছো কেন? বেড়াতে যাবো। রিসোর্ট এ। খুব সুন্দর জায়গা। কত ফুল, পাখি। তুমি সাতার পারো?
— বাড়িতে রেখে আসবে আমায়?
— তুমি কি বাড়িতে যেতে চাও?
— না না। আমি তোমার কাচে থাকবো। নাহলে রাখি চলে আসবে বলে মৌমি ওকে জড়িয়ে ধরলো।
অবুঝ একটা মেয়ে। কিন্তু কি মায়া আর হিংসা। নিজের স্বামী কে অন্য কারো হতে দেবে না।
চোখে পানি চলে আসলো ফারহানের। আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো। চলো এখন রেডি হবে।
ওরা রেডি হয়ে অনেক্ষণ বাহিরে ঘুরলো। দুপুরের খাবার রেস্টুরেন্ট এ খেয়ে। রিসোর্ট এর দিকে রওনা হলো। শহরের শেষপ্রান্তে মনোরম আর নিরিবিলি পরিবেশ এ রিসোর্ট টি বানানো হয়েছে। ফারহান দুইদিনের জন্য এখানে ঘুরতে এসেছে। একটু দূরে হওয়ায় আসতে আসতে সন্ধা হয়ে গেলো। ওরা ফ্রেস হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল। তারপর রুমের বাইরে লনে এসে বসে
— বলতো তোমাকে কেন সাজাচ্ছি?
— আমি বড় হয়ে গেচি তো। আর তুমি আমার স্বামী তাই সাজাচ্চ।
— না বোকা মেয়ে। তোমাকে আজ একটা জিনিস দেবো।
— কি?
— বিয়ের পরে স্বামী তার বউকে মোহরানা হিসাবে টাকা দেয় আমিও তোমাকে দেবো।
— টাকা দিবা? আমি কি টাকা দিয়ে আইসক্রিম খাবো?
— তোমার যা ইচ্ছা করিও। তারপর ওকে বসিয়ে ওর হাতে দেনমোহরের টাকা দিল।
— এত্ত টাকা..!!! কত আইসক্রিম খাবো? না এত টাকা না। ২০ টাকা দেও।
— ইশ্, দেনমোহর বুঝ?
— বুঝি তো, স্বামী ফুলের ঘরে আইসক্রিম খাওয়ার টাকা দেয়।
— তাই….!!! কি বুঝাবো মেয়ে টাকে.!! আচ্ছা যাও, সব টাকা তোমার, তুমি আইসক্রিম, ফুল, বেলুন, চকলেট কিনবে। ঠিক আছে?
— ঠিকাচে।
তাহলে চলো আমরা ঘুমাই বলে ফারহান লাইট অফ করতেই মৌমি ভুত আসবে বলে চিৎকার করে উঠলো। আরে না দাঁড়াও লাইট জ্বালাচ্ছি বলে ও ক্যান্ডল লাইট জ্বালালো।
যাহোক মেয়ে টা বুঝছে। ফারহান মৌমিকে জড়িয়ে ধরতেই মৌমি অসস্তি শুরু করলো।
ফারহান ওকে আদর করতে গেলে মৌমি এমন লাফ দিয়ে উঠলো।
— কি হলো মৌমি?
— তুমি এমন করো কেন?
আচ্ছা যাও করছি না। শুয়ে পড়ো।
মৌমি ফারহানকে ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো। ফারহান আস্তে আস্তে মৌমিকে একান্ত করে পাবার জন্য যেই জড়িয়ে ধরে…….
হঠাৎ মৌমি চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠলো। ফারহান হতভম্ব হয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো।
মৌমি ভয় পেয়ে ওকে ছাড়িয়ে ঘরের কোনে গিয়ে কাঁদতে লাগলো।
এ আমি কি করলাম? এ আমি কি করলাম একটা অবোধ মেয়ে কে এভাবে ভয় পাইয়ে দিলাম। ওর কান্না থামানোর জন্য যেই ফারহান বেড থেকে নেমে ওর দিকে এগুলো। মৌমি ভয়ে এমন কাজ করে বসলো যা ফারহান কল্পনা ও করেনি।
৮ম কিস্তিঃ
ফারহান মৌমির দিকে এগুতে গেলে মৌমি ফুলের টব তুলে ফারহানের দিকে ছুড়ে মারলো। ফারহানের কপাল ফেটে রক্ত পড়তে লাগলো।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো কপালে রক্ত। আবার ও চিৎকার দিয়ে মৌমি অজ্ঞান হয়ে গেলো।
পরপর দুবার চিৎকার শুনে রিসোর্ট এর লোকজন এসে ফারহানদের দরজায় এসে ধাক্কাতে লাগলো আর ডাকতে লাগলো।
ফারহান কি করবে এখন?
ও তাড়াতাড়ি করে মৌমি কে তুলে বেড এ শুইয়ে দরজা খুলে দিলো। ম্যানেজার জিজ্ঞেস করলো কি ব্যাপার? আপনাদের রুমে চিৎকার শুনলাম। তারউপর আপনার কপালে রক্ত?
— না কিছু না। পা পিছলে পড়ে গেছিলাম। তাই কপালে লেগে ফেটে গেছে। আমার স্ত্রী রক্ত ভয় পায়। ও রক্ত দেখে চিৎকার করেছে। আমি ম্যানেজ করছি। এত রাতে আপনাদের ঘুমে ব্যাঘাত করলাম বলে দুঃখিত।
— না না সমস্যা নেই। আসুন আপনাকে ব্যান্ডেজ করে দেই। প্রচুর রক্ত পড়ছে।
আসলেই রক্ত পড়ার কারনে ফারহানের দূর্বল লাগছিলো। ও আর না করলো। রুমের বাইরে আসলো। কীট বক্স এনে রিসোর্ট এর একজন কর্মী ওকে ব্যান্ডেজ করে দিল।
আপনারা যান এখন, আমার স্ত্রী একা একা ভয় পায়। আমি রুমে যাচ্ছি। ওদেরকে আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে ফারহান তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসলো।
ও মৌমির পাশে গিয়ে দেখে তখনও মৌমি অজ্ঞান। মৌমির চোখে মুখে পানি দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলো।
চোখ খুলে ওর পাশে ফারহান কে দেখে মৌমি লাফ দিয়ে সরে গেল।
— কি হয়েছে মৌমি?
এমন করছো কেন? আমি কি তোমাকে মারছি?
— তু-তুমি আমার পাশে আসচো কেন? পাশে আসবে না। সরো সরো নাহয় আমি চিমটি দেবো।
— চিমটি রানী, দেখো মেরে মাথা ফাটিয়েছো। আবার চিমটি দিবে বলছো।
— আমি মারচি তোমায়? আহারে, দেখি কি হয়েচে? বলে আবার এসে ফারহানের কপাল দেখতে লাগলো।
— আমি মারিনি তোমায়, তুমি আমায় বকা দিওনা। বলে কাঁদতে শুরু করলো মৌমি।
— আমি তোমাকে বকা দিছি? আসো অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও।
— আমি তোমার পাশে ঘুমাবো না। আমার আম্মুর কাচে যাবো।
— এত রাতে আম্মু কোথায় পাবো? আচ্ছা আমরা সকালেই চলে যাবো। এখন ঘুমাও।
মৌমি চুপ হয়ে বসে আছে দেখে ফারহান বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। এখন তো ঘুমাবে?
মৌমি কিছু না বলে শুয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর ফারহানের নিজেকে খুব ভারি ভারি লাগছে মনে হলো। কি ব্যাপার মাথায় সমস্যার কারনে নাকি?
চোখ মেলে তো অবাক। মৌমি ওকে জড়িয়ে ধরে ওর উপরে শুয়ে আছে। আর এজন্যই ভার লাগছে। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারিনা। একা ঘুমাতেও পারেনা আবার আমি পাশে থাকলেও সমস্যা। এখন ঘুম থেকে উঠার আগেই বেড এ নিয়ে রাখতে হবে। নাহয় তুলকালাম কান্ড ঘটাবে। ও যেই মৌমিকে নিয়ে উঠতে যাবে মৌমি জেগে গেলো।
— তুমি আমায় ধরচো? বলে আবার ফারহান কে ধাক্কা দিলো।
— এই মেয়ে কিছু বলছি না বলে যা ইচ্ছা করবে কি মনে করেছো হ্যা?
আমি নয় রাতে তুমি আমার উপর শুয়েছিলে। এত বড় পেত্নী আমার উপর ছিলে আমার কষ্ট লাগেনি?
— রাতে ভুত এসেচিলো। তাই আমি তোমার কাচে গিয়েচি। তুমি আমায় পেত্নী বলচো। বলে নাকি কান্না শুরু করলো।
— চুপ, আর কোন কথা নয়। ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেতে যাবো। রেডি হও।
বলে ও বাথরুমে ঢুকলো। ওকে পেত্নী বলছে ফারহান। কিছু একটা তো করতে হবে ভাবছে মৌমি। ও তাড়াতাড়ি কাপড় চেইঞ্জ করলো। তারপর ফ্রেস হয়ে এসে ভাবতে লাগলো কি করা যায়। হুমম পানির মধ্যে লবন দিবো।
মৌমি একগ্লাস পানি নিয়ে তাতে অনেক লবন ডাললো। এখন বুঝবে মজা স্বামীর বাচ্চা।
ফারহান সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করে। তারপর নাস্তা। তাই ও পানি মুখে দিলো। কিন্তু পরক্ষণে কুলি করে ফেললো।
— পানিতে লবন তুমি মিশিয়েছ?
— না না, আমি কিচু করিনি।
— আমার সাথে মিথ্যা বলছো?
— তুমি আমায় পেত্নী কেন বলচো। বলে আবার কান্না শুরু করলো।
— এই মেয়ে কান্না ছাড়া আর কিছু পারোনা? চুপ একদম চুপ। মুখ মুছে বাইরে চলো, নাস্তা করবো।
নাস্তা খাওয়ার পর ওরা বাইরে অনেক্ষণ ঘুরলো। মৌমি আইসক্রিম খাবে বায়না ধরলো। কিন্তু ঠান্ডা লাগবে তাই ফারহান ওকে একটার বেশি দিলো না। সেটা নিয়ে রাগ করে মৌমি বললো এখানে আর থাকবে না। ও এক্ষুণি বাড়ি যাবে। অনেক বুঝানোর পরও না শুনায় ফারহান সন্ধার দিকে বাসায় চলে আসলো।
রাতে চুপি চুপি মৌমি ফ্রিজ খুলে দেখলো কয়টা আইসক্রিম আছে। কিন্তু বেশি না। এখন এগুলো খাই সকালে আরও কিনে আনবো।
কিন্তু ৬/৭ টা আইসক্রিম খাওয়ায়ি ওর জ্বর এসে গেলো।
ফারহান সকালের নাস্তা বানিয়ে মৌমির জন্য রেখে বিশেষ প্রয়োজনে বসের কথায় অফিসে গেলো। মৌমিকে আর ডাকলো না।
মৌমি ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খাওয়া শেষ করে ফারহানের দেওয়া টাকা থেকে অনেকগুলো টাকা নিয়ে আইসক্রিম আনতে গেলো। ফারহান আইসক্রিম না দেওয়ায় মৌমি উল্টো হয়ে গেছে।
অনেকগুলো আইসক্রিম নিয়ে এসে ফ্রিজে রেখে বাকি গুলো নিয়ে ড্রইংরুমে সোফায় বসে খেতে লাগলো । একসময় ক্লান্তি জ্বর এসে শরীর নিস্তেজ হয়ে সেখানেই শুয়ে পড়লো।
সকাল ১১টা।
ফারহানের মনে যেন অশান্তি শুরু হয়েছে। কি যে করছে একা একা মেয়েটা। বস কে বলে ও বেরিয়ে আসলো অফিস থেকে।
বাসায় এসে দেখে মৌমি সোফায় শুয়ে আছে।
মৌমি, মৌমি” এসময় শুয়ে আছো কেন? কিন্তু মৌমির কোন সাড়া না পেয়ে দৌড়ে এসে ওর মাথায় হাত দিয়ে দেখলো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আর জ্বরের ঘোরে মৌমি বেহুশ হয়ে পড়ে আছে।
তাড়াতাড়ি ডাক্তার কে ফোন দিয়ে আসার কথা বলে ওকে নিয়ে রুমে আসলো। তারপর ওর মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলো।
এই মেয়ে কখন যে ঠিক হবে আল্লাহ। কি যে করছে হঠাৎ করে এত জ্বর আসলো কেন।
ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে ইনজেকশন দিলেন। আর বললেন, হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারনে এমন হয়েছে। এখন ঔষদ আর ইনজেকশন না দিলপ টাইফয়েড জ্বর ও হয়ে যেত
ঠিক মত সেবা যত্ন করুন। সুপ খাওয়ান আর ঔষদগুলো আনিয়ে নিন।
অনেক্ষণ পর মৌমির জ্ঞান ফিরে আসলো। কিন্তু জ্বরের ঘোরে উল্টাপাল্টা বকতে শুরু করলো। ফারহান ওর বন্ধুকে ফোন দিয়ে ঔষদগুলো নিয়ে আসার কথা বললো। আর বাড়িতে ফোন দিয়ে মা কে বললো একজন কাজের মহিলা নিয়ে যেন আজই আসেন। তারপর মৌমির অসুস্থতার কথা জানালো।
মৌমির জন্য গরম স্যুপ আর দুধ নিয়ে এসে দেখলো ও জ্বরের ঘুরে-
“আইসক্রিম খেতে না করচো তাই আরও খাবো, টাকা, আম্মু” এসব আবোলতাবোল যা ইচ্ছা বলছে। ও মৌমির মাথা মুছে দিলো। ততক্ষণে ফারহানের বন্ধু ও ঔষদ নিয়ে এসে গেছে। চামচ দিয়ে কিছু দুধ আর স্যুপ খাইয়ে ঔষদ খাওয়ালো।
ঔষদ খেতে আরও বিপত্তি। ও ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল জাতীয় ঔষদ ভয় পায়। কোনমতেই খাওয়ানো গেলোনা দেখে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে আবার সিরাপ জাতীয় ঔষদ আনিয়ে খাওয়ালো।
বিকালবেলা ঘাম দিয়ে কিছুটা কমার পর ফারহান ওকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি করে ঠান্ডা লাগিয়েছ? আইসক্রিম টাকা এসব কি বলছো জ্বরের ঘোরে?
— আমাকে আইসক্রিম দাওনি কেন কাল? তাই আইসক্রিম খাইচি অনেকগুলা।
— কোথায় পেয়েছো এত আইসক্রিম?
— তুমি যে টাকা দিয়েচিলে সেখান থেকে নিয়ে। রাতেও খাইচি। হুহ আমাকে না করা।
— জ্বর কি আমার হয়েছে? কত টাকা নিয়েছো? টাকার হিসাব পারো?
— না, জানিনা কত। বলে মাথা নিচু করলো।
ফারহান ড্রয়ার খুলে দেখলো ২০,০০০ টাকা মিসিং। তুমি এতটাকার আইসক্রিম কিনছো?
কোন দোকান থেকে?
— বাসার সামনের দোকান।
ফারহান ওকে আর কিছু না বলে সেই দোকানে আসলো।
দোকানদার তাকে দেখেই হেসে দিলো।
— আমি জানতাম ভাই আপনি আসবেন। আপনার টাকা আমি হেফাজতে রাখছি। বলে টাকা এগিয়ে দিলো।
— ধন্যবাদ ভাই। ওকে কয়টা আইসক্রিম দিয়েছেন?
— ভাবি এসে বললেন সব টাকার আইসক্রিম দিতে। শুনেই বুঝলাম কোন প্যাচ আছে। তাই টাকাগুলো রেখে প্রায় ৩০টার মত সবধরনের আইসক্রিম দিয়েছি। কেন কি হয়েছে?
— আপনি সর্বনাশ করছেন ভাই। আমার উপর রেগে সে সব গুলো আইসক্রিম খেয়ে জ্বরের ঘোরে বেহুশ হয়ে আছে। আচ্ছা এরপর থেকে আইসক্রিম নিতে আসলে ১/২ টার বেশি দিবেন না। এখন আপনার আইসক্রিম গুলোর দাম রাখুন।
দাম মিটিয়ে এসে ফ্রিজ খুলে দেখলো ফ্রিজে ১০টার মত আইসক্রিম। এত আইসক্রিম খেয়েছে?!
সন্ধার সময় মা, মৌমির মা আর রাখি আসলো ফারহানের বাসায়। ওকে দেখেই ফারহানের গা জ্বলা শুরু করলো।
আড়ালে মা কে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো একে কেন আনছো মা?
— কি করবো? কাজের মেয়েও পাইনি তাই মৌমির মা শুনে রাখি কে নিয়ে এসেছে।
ফারহান ভাবছে, এমনিতে মৌমি এই মেয়েকে ভয় পায়। এখন না জানি এই মেয়ে এখানে কি করবে।
৯ম কিস্তিঃ
ফারহান অফিস থেকে ছুটি নিয়ে দিন রাত মৌমির সেবা যত্ন করে শেষে ৪দিন পর মৌমি সুস্থ হলো। রাখি তো ফারহানের মৌমির প্রতি এত কেয়ার ভালোবাসা দেখেই জ্বলেপুড়ে শেষ। ফারহানের স্মার্ট নেস, আচরন, ভালো বেতন, সব দেখে রাখি আর রাখির মা ষড়যন্ত্র করে বসে আছে। যে করেই হোক মৌমি কে সরিয়ে ফারহানের বউ হতে হবে। সে জন্যই রাখির এখানে আসা।
যাহোক এই কয়দিন দুই মা আর ফারহান থাকায় রাখি কিছু করতে পারলো না। তাই সুযোগের অপেক্ষায় রইলো। মৌমি সুস্থ হওয়ার পর ফারহানের মা আর শাশুড়ি চলে গেলেন। রাখি শহর দেখার অজুহাতে আর মৌমিকে সঙ্গ দেওয়ার অজুহাতে থেকে গেলো।
সকাল বেলা ফারহান ঘুম থেকে উঠেই দেখলো রাখি রুমে নাস্তা নিয়ে হাজির।
— দুলাভাই, সোফায় শুয়েছেন কেন?
— রাতে গরম লাগছিল তাই। আপনি নাস্তা বানানোর কি দরকার আমিই বানাতাম। আপনি মেহমান মানুষ।
— কি যে বলেন দুলাভাই। আমি তো এ বাড়িরই মানুষ। সমস্যা কি?
— এ বাড়ির মানে..?
— বর্তমানে তো এ বাড়িতে আছি তাইনা?
— তা ঠিক।
— তাহলে আজ থেকে রান্নাবাড়া বাসার অন্যান্য সব কাজ আমি করবো। ঠিক আছে? আপনি আজ থেকে অফিসে যান।
ফারহান ভাবলো হয়তো মেয়েটা ঠিক হয়ে গেছে।
যাক আজ থেকে অফিসে জয়েন করি।
মৌমিকে নিজহাতে নাস্তা খাইয়ে বুঝালো যেন দুষ্টামি না করে। নিজের রুম যেন সে নিজে গুছিয়ে রাখে। অফিস থেকে এসে দেখবে, আর রাখি যা রান্না করে ওর সাথে থেকে তা শিখে। মৌমি সব মেনে নিল।
এদিকে রাখি এসব দেখে আরও বিগড়ে গেলো। যেভাবেই হোক মৌমির বাচ্চাকে সরাতে হবে ভাবলো।
রান্না ঘরে মৌমিকেও ডাকলো। মৌমি রুম গুছিয়ে নিজে ফ্রেস হয়ে আসলো রান্না ঘরে।
মৌমিকে রাখি ফারহান সম্পর্কে এটা সেটা জিজ্ঞাসা করলো। হঠাৎ করে মৌমির হাত নিয়ে ছুরি দিয়ে কেটে দিলো। মৌমি ভয়ে চিৎকার দিতেই বললো,
— চুপ, একদম চুপ। পালিয়ে এসেছিলি কেন পাগলী?
না করছিলাম না এখানে আসবি না।
মৌমি রক্ত দেখে জোরে কান্না শুরু করলো।
— রক্ত, ফারহান তুমি কই, রাখি আমায় কেটে দিচে।
— ওলে ওলে, আবার যদি ফারহান ডাকবি, গলা কেটে ফেলবো বুঝলি। আর বেশি ফারহানের পাশে গেলে ফারহানকে ও গ্যাচাং করে শেষ। বুঝেছিস?
— আমার স্বামীকে কিচু করবা না। আমি আম্মুকে বলে দেবো, ফারহান কেও বলবো।
— যদি ফারহান কে এসব বলিস, আর আমি হাত কেটেছি বলিস তাহলে তোকে, ফারহান কে, তোর আম্মু কে ও মেরে ফেলবো। এখন চুপ হয়ে বস ব্যান্ডেজ করে দেই।
মৌমি এক নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে।
ইশ্ ঝামেলা একটা, দাঁড়া তোর মুখ বন্ধ করছি।
তারপর চা বানিয়ো মৌমির চায়ের কাপে ঘুমের ঔষদ লুকিয়ে মিশালো। তারপর বললো, যা বলব শুনবি, নাহলে শেষ করে দেবো। চল রুমে চল চা খাবি।
মৌমি রুমে এসে চা খেয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লো।
ও ঘুমানোর পর রাখি রান্না শেষ করে মৌমির রুমে এসে সমস্ত রুমের সবকিছু দেখলো। রুম এলোমেলো করে রাখলো। তারপর মৌমিকে ফারহানের দেওয়া শাড়ি থেকে একটা শাড়ি পরে সাজগোজ করে ফারহানের আসার অপেক্ষা করলো।
দুপুরে ফারহান খেতে এসে আগে মৌমিকে ডাকতে গেলো।
পথ আগলে রাখি বললো
— দুলাভাই আপু ঘুমাচ্ছে আসুন না আমরা খেয়ে নিই।
— না রাখি, আমি মৌমিকে ছাড়া খাইনা। ওকে ডেকে তুলবো। তুমি টেবিলে খাবার দাও।
তারপর ওকে সরিয়ে ফারহান রুমে ঢুকলো।
একি রুমের অবস্থা এমন কেন? আর মৌমির হাতে ব্যান্ডেজ কেন। ও তাড়াতাড়ি মৌমির কাছে এসে ওকে ডাকলো। কিন্তু ঘুমের মধ্যে মৌমি একবার চোখ খুলে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
— মৌমি, মৌমি, তোমার কি হয়েছে? এভাবে ঘুমাচ্ছ কেন? উঠনা মৌমি..
— দুলাভাই আপু ঔষদ খেয়েছে তো। তাই হয়তো বেশি ঘুম পেয়েছে।
— ওর হাত কাটলো কেমনে?
— আপনি তো রান্নাঘরে যেতে বলেছিলেন। আমি না করার পরও তরকারি কাটতে গিয়ে হাত কাটছে। আমি ব্যান্ডেজ করে দিছি সমস্যা নেই। আপনি চলুন না।
— না, আর ওর হাত কাটলো সেটা আমাকে ফোনে বলেন নি কেন? আসার পর ও বলেন নি কেন?
— ইয়ে মানে, আপনি চিন্তা করবেন বলে। সরি.
— রুমের এমন অবস্থা কে করছে? আর আপনি কি কাপড় নিয়ে আসেন নি?
— আপ রুম ঠিক করছে, আমি বলছি হচ্ছে না, তাও শুনেনি। আর আপু আমাকে এটা পরতে দিয়েছে। কেন আপনি রাগ করছেন?
— নাহ্, ও যখন দিছে আপত্তি নেই আপনি যান আমি আসছি।
ফারহান মৌমির ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য বাথরুমে নিয়ে শাওয়ারের নিচে রাখলো। অনেকক্ষণ পর ঘুম ভাঙলে কাপর চেইনঞ্জ করে দিয়ে টেবিলে নিয়ে এসে নিজ হাতে খাওয়ালো।
এসব দেখে রাখি মনে মনে ভাবলো হাত ওর নয়, আমার কাটা উচিৎ ছিলো।
খাওয়ানোর পর মৌমিকে নিয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে জিজ্ঞেস করলো রুম কি তুমি এমন করছো? হাত কিভাবে কাটলো মৌমি?
মৌমি ভয়ে কিচ্ছু বললো না। শুধু ফারহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
কি হলো মৌমির? কেন এমন করছে?
অফিসে এসে ফারহান এসব ভাবছে।
পরদিন অফিস থেকে যাওয়ার পর দেখলো মৌমি দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে আছে। অনেক ডাকাডাকির পরও খুলছে না।
প্রায় ১৫ দিন হয়ে গেছে।
প্রতিদিন মৌমি একটা না এলটা পাগলামী করছে। ইদানিং ফারহান কে দেখলেই ভয় পায়
চিৎকার শুরু করে দেয়, ফারহান ওকে মেরে ফেলবে। ওর কাছে না আসতে। ফারহান ওর ভয় পাওয়া দেখে কাছে আসে না, অন্যরুমে থাকে। আর রাখি মৌমি কে নিয়ে থাকে।
কিছুদিন পর মৌমির অবস্থা আরও খারাপ, সারাদিন দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। কেউ ওকে মেরে ফেলবে, ফারহান কে মারবে, এ বাড়িতে ভুত আছে এসব বলে। নিজের গায়ে নিজে খামচি দেয়, চুল ছিড়ে ফেলে।
না এভাবে চলতে দেয়া যায়না। এর মধ্যে ফারহান কাজের মেয়েও খোজে পেয়েছে।
ফারহান সিদ্ধান্ত নিলো আজ রাখি কে নিয়ে ঘুরতে যাবে। রাখি তো এ কথা শুনে খুশীতে উড়ে উড়ে অবস্থা। ফারহান রাখিকে নিয়ে সারাদিন শহর ঘুরলো। আর এদিকে ফারহানের বন্ধু বাসার প্রতিটা রুমে সিসি ক্যামেরা ফিট করলো।
আরও দুইদিন পর মৌমির অবস্থা এত সূচনীয় হলো যে ওকে হাসপাতালের মানসিক বিভাগে এডমিট করতে হলো।
— চলো রাখি আমরা মৌমিকে আজ সবাই মিলে দেখে আসি।
— ওই পাগলী কে দেখে কি হবে?
— হুমম, কিছু তো হবে না। ও এমনিতে আরও পাগল হয়ে যাবে।
— আচ্ছা দুলাভাই, আমাদের বাড়িতে এক মৌমি ব্যতীত সব মেয়ে রা শিক্ষিত স্মার্ট। তো আপনি মৌমিকে কেন বিয়ে করলেন?
— আসলে আমি শুনছিলাম ও ও শিক্ষিত।
— হুহ পাগলীর আবার শিক্ষা।
— কিছু বললে?
— নাহ্। আচ্ছা আমাকে আপনার কেমন লাগে?
— কেমন আবার ভালো মেয়ে, অনার্স পড়োয়া, স্মার্ট, সুন্দরী। অনেক ভালো পাত্র তোমাকে বিয়ে করবে।
— আর আপনি?
— আমি কি?
— নাহ্, কিছু না। চলুন।
সেদিন ওরা বাসায় না থাকায় ফারহানের ফ্রেন্ড ক্যামেরার রিল গুলো খুলে নিল।
আর ফারহান রাতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে এত অবাক হলো যে বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।
আমাকে আজই সবাইকে এখানে আনতে হবে। আর মৌমির পাশে থাকতে হবেে।
ফারহান বাড়িতে ফোন করে সবাইকে আসার জন্য বলে হসপিটালে চলে আসলো।
ফারহান সারা রাত মৌমির হাত ধরে বসে থাকলো, আর কাঁদলো।
একটা অবুঝ মেয়েকে এত টা টর্চার কেউ করতে পারে? আর এত ভয় দেখাতে পারে? তাও আপন লোকেরা…? না জানি মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু আমি ওকে বুঝার চেষ্টা করিনি।
নিজের প্রতি রাগ উঠতে লাগলো। তোদের কাউকে আমি ছাড়বো না। এমন শাস্তি দেবো, সারাজীবন মনে রাখবি।
১০ম কিস্তিঃ
সকাল বেলা মৌমির ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার আগেই ফারহান ওর কেবিন থেকে চলে গেলো।
ডাক্তার পরীক্ষা করে জানিয়েছেন ওর শরীরে ড্রাগ পাওয়া গেছে। প্রচুর ভয় এবং শক পাওয়ার কারনে মৌমি পাগল হয়ে গেছে। এবং ওর অবস্থা এখন এত ক্রিটিক্যাল যে ফারহান সামনে আসলে যেকোন কিছু করে ফেলতে পারে।
আড়ালে গিয়ে এসব ভেবে চোখের পানি ফেলছিল ফারহান।
— কেমন আছেন দুলাভাই?
— হ্যা ভাল। গুড মরনিং। তুমি এত সকাল উঠে গেলে যে।
কোন মতে রাগ সামলে নিয়ে বললো ফারহান।
— হুমম, ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাই ভাবলাম আপনাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসি। আপু কেও তো দুধ খাওয়াতে হবে।
— কেন?
— আরে উনি তো খুব অসুস্থ। এত ঔষদ খাচ্ছেন প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে না?!
— তোমার কথা ঠিক। আচ্ছা দেও, আমি নার্স কে দিয়ে আসি খাওয়ানোর জন্য। আর তুমি বাইরে যাও। এখন বাসায় যেতে হবে জরুরী কথা আছে।
— ক্বি কথা? দুলাভাই..?
— আরে ভয় পাচ্ছো কেন? আমাদের বিয়ের কথা। তুমি তো এর অপেক্ষা করছিলে তাই না?
— জ্বি মানে…
— যাও তো। আর ভণিতা করতে হবে না।
তারপর ফারহান কেবিনে এসে নার্স এর হাতে নাস্তা গুলো দিয়ে বাইরে দুধ ফেলে দিল। আর নার্স কে বললো, আজ থেকে বাহিরের কোন খাবার, দুধ যেন মৌমিকে দোওয়া না হয়। যতই আপন লোক হোক।
— জ্বি স্যার।
ফারহান রাখিকে নিয়ে বাসায় আসলো। সবার আসতে এখন ও একঘন্টা দেরী হবে।
ও ফোন রেকর্ড অন করে পকেটে আগেই রেখে দিয়েছে।
— রাখি, তুমি আমাকে ভালবাসো?
— আপনি স্মার্ট, যোগ্যতাসম্পন্ন, ভালো তো যেকোন মেয়েই বাসবে।
— যেকোন মেয়ে নয়, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি।
— জ্বি, ভালবাসি।
— বিয়ে করতে চাও?
— ইয়ে মানে, মৌমি আপু?
— ওর বিষয় আমাকে ছেড়ে দাও। ও তো এখন পাগল। সো আমাদের আর কোন বাধা নেই। কি রাজি তো?
— জ্বি।
— এজন্য তোমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যদি দেও আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
— কি প্রশ্ন? আমি সব বলবো।
— বলো তো তোমার প্ল্যান এ আর কে কে ছিল? অবশ্য আমি দুজন কে চিনতে পারছি।
— কি কি বলছেন এসব? বলে রাখি পিছনে যেতে লাগলো। — যাচ্ছো কোথায়? তুমি কি মনে করছো তুমি এসব করে পার পেয়ে যাবে?
যা করছো বলে দাও, তাহলে কাউকে কিছু বলবো না।
আর না বললে তো বুঝতে পারছো।
রাখি ফারহানকে বলা শুরু করলো ওর মৌমিকে পাগল করার মিশন…
মৌমির বিয়ে আপনার মত একজনের সাথে হয়েছে সেটা আমি আর আম্মু মেনে নিতে পারিনি। আমার আম্মু আপনার আম্মুকে বিয়েটা না হওয়ার জন্য অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু উনি মানেন নি। ও ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছিল। তাই আমরা চাচাতো ভাইবোন রা মিলে ওকে খুব ভয় দেখাতাম, এটা ওটা করাতাম। বড়দের মত হতে দিতাম না। এভাবেই আমরা ওকে মানসিক ভাবে টর্চার করে, আর ওর ব্রেইন কে কাজে লাগিয়ে ছোট রেখে দেই। কিন্তু ওর বিয়ের পর আমার ভিতর জিদ চাপে যেভাবেই হোক ওকে পাগল করে ঘর ছাড়া করবো আর আমি এ ঘরের বউ হয়ে আসবো।
এ বাড়িতে যখন আসি তখন ই প্রস্তুতি নিয়ে আসি ওর জন্য আমার সব প্ল্যান রেডি ছিলো। হাত কাটা, শরীর পোড়ানো, ওর সামনে বউ সেজে ওকে বলা যে ফারহান তোকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে। তুই এ বাড়ি থেকে চলে যা। যায়নি, তাই যদি বলে দেয় সেজন্য আপনাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছি। কিন্তু পাগলী টা আপনাকে পাহারা দেওয়ার জন্য সবসময় আপনার পাশে থাকতো। এতে আমি আরও জেলাস ফিল করতাম। তারপর ওকে ড্রাগ দেওয়া শুরু করলাম। ড্রাগ নেওয়ার পর ও যখন নেশা গ্রস্ত থাকতো ওকে হরর মুভি দেখাতে শুরু করি। তারপর প্রতিদিন আপনি যাওয়ার পর, হরর সাউন্ড ঘরের সব রুমে সেট করি যাতে ও আরও ভয় পায়। আপনার রুমে তো আরও বেশি ভয়ংকর কাজ শুরু করলাম। এটা ওটা তার দিয়ে টেনে ভেঙ্গে দিতাম। আলতা বাথরুমে রেখে আসতাম। ও রক্ত মনে করে ভয় পেতো। একদিন আপনার রুমে সাজতে গিয়ে ড্রয়ারে অনেক টাকা পাই। এগুলো আমার ভাইকে দিয়ে ওর ফ্রেন্ড সহ এখানে আসতে বলি। পাশাপাশি বাসা ওরা ভাড়া নেয়। আম্মু ও ঐখানে আসেন। তারপর আপনার চেহারার স্কিন মাস্ক পরে আমার ভাই আর তার ফ্রেন্ড ওকে ভয় দেখাতে থাকে। মেরে ফেলার, কেটে ফেলার। আরও অনেক ধরনের। আস্তে আস্তে মৌমি আপনাকেও ভয় পেতে শুরু করে। চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্ধী করে ফেলে। আর আমি ও আম্মু এটাই চেয়েছিলাম।
— গত পরশু তোমার আম্মু কেন আসছিলেন?
— আ-আপনি কোথায় দেখলেন?
— তুমি কি মনে করেছো তুমি বেশি চালাক?
এরপরে কি হলো বলো?
— আম্মু সেদিন ড্রাগ নিয়ে এসেছিলেন। ওকে সেদিন অবার ডৌজ দেওয়ার কারনে বেশি পাগলামী করে আর এখন হসপিটাল।
— আর আজ আবার দুধের মধ্যে ড্রাগ মিশিয়ে নিয়ে গেছো তাইনা…?
— আপনি জানলেন কিভাবে?
— কারন যে মেয়ে মৌমিকে এত টর্চার করে, দুধে ড্রাগ মেশায়, সে কিভাবে ভালো দুধ নিয়ে যেতে পারে?
বাইরে গাড়ির থামার আওয়াজ পাওয়া গেলো।
— যাক উনারা এসে গেছেন।
— কারা? আপনি কাদের আসতে বলছেন?
— কেন তোমার আমার বিয়ে, দাওয়াত দিতে হবে না? রাতেই দিয়েছি। তাই এখন সবাই আসলেন।
উনারা সব আসার পরে, ফারহানের মা জিজ্ঞাসা করলেন মৌমি কোথায়?
— মা, আমার ভুলের জন্য মৌমি আজ পুরো পাগল হয়ে গেছে মা। আমি না করেছিলাম এই মেয়েকে এখানে নিয়ে এসোনা, তুমি শুনলেনা। বলে ফারহান চোখের পানি মুছলো।
তারপর সবাইকে সব কিছু বললো, সিসিটিভি ফোটেজ দেখানো হলো, সাথে রেকর্ড ও শুনালো। সব শুনে মৌমির বড় চাচা বললেন, এদের কে বাড়িতে জায়গা দেওয়া ভুল হবে। আজ থেকে আমার বাড়ি মা মেয়ের জায়গা নেই।
পরিবারের সম্মানের দিকে তাকিয়ে রাখিকে পুলিশ এ দেওয়া হলো না।
মৌমির কে দূরের একটা জয়গায় দুজন নার্স এর এবং মৌমির মায়ের তত্বাবধানে রাখা হলো।
আজ ছয়মাস হয়ে গেলো, মৌমি এখনও ভালো হয়নি। ফারহান ও ওর সামনে যায়নি। একে তো মৌমি ওকে ভয় পায় কাছে গেলে যদি আরও পাগল হয়ে যায়। তারউপর ফারহান কোন মুখে যাবে, মৌমিকে যে জেনেশুনে এক নাগিনীর হাতে ছেড়ে দিয়েছিল।
রবিবার সকালবেলা।
ফারহান অফিসে কাজ করছে।
— এক্সকিউজমি, আপনাদের অফিসে কোন পদ খালি আছে?
— কে বলছেন আপনি?
ফারহান তাকিয়ে দেখলো কালো বোরকা, নিকাব পরিহিতা একটা মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
— কি আছে কিনা বলেন আগে।
— আপনাকে এখানে কে ঢুকতে দিছে? যত্তসব।
— কেন আমার কি পা নেই নাকি? আমি হেটে এসে ঢুকেছি।
তা বসতে বলবেন না?
— দেখুন আমি আপনাকে চিনি না। এক্ষুণি বেরিয়ে যান। নাহলে দারোয়ান ডাকবো।
— আপনি না চিনলেও আমি তো আপনাকে চিনি মি. ফারহান বলে মেয়েটি ফারহানের কোলে এসে বসে গেলো।
— কি কি করছেন এসব অসভ্যতা?
দারোয়ান দারোয়ান…
— দারোয়ান কে যতই ডাকুন আসবে না। আচ্ছা আপনি কি আপনার স্ত্রীকে কখনও লিপকিস করেছেন?
— কি হচ্ছে কি এসব? নামুন বলছি।
— নামিয়ে দেবেন, না কোলে বসাবেন,
মৌমির স্বামি…?
বলে মেয়েটি নিকাব তুললো।
— তু তু তুমি? ইয়া আল্লাহ! এ কেমনে সম্ভব?
— আগে কিস করো তারপর শুনবে বলে মেয়েটি ফারহানকে জড়িয়ে ধরে…….।
ফারহান ও ওকে জড়িয়ে ধরে বললো- আমাদের একটা বেবি হবে ঠিক মৌমির মত, দুষ্টু, পাগলী আর কিউট।
— আর ফারহানের মত ভালো, ভালবাসার পাগল একটা ছেলেও চাই।
— জো হুকুম মহারাণী। এখন বাসায় চলো।
— কেন?
— বেবি আনার প্রস্তুতি নিতে হবে না?
— ছিঃ পাগল একটা।
— কেন? আমি কি অন্য মেয়েকে বলছি?
মেয়েটি কে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন?
আর না বুঝলেও বলে দিচ্ছি। মেয়েটি হচ্ছে ফারহানের মৌমি। ফারহানের প্রতি টান আর ভালোবাসা ওকে ভাল হতে বাধ্য করেছে।
কিভাবে হলো নাই বা বললাম।
আর রাখি… রাখিকে রুমে বন্ধী করে রাখা হয়েছে পাগলামীর জন্য। সারাক্ষণ ভয় পায় আর বলে কারা ওকে মেরে ফেলবে। ফারহান আসছে ওকে বিয়ে করার জন্য। ওকে বউ সাজতো হবে।
হয়তো এটা তার কর্মফল। আমাদের এই পৃথিবীতে জালিম আর জুলুমের বিস্তার। পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক হিংসা বিরোধ সবসময় লেগেই আছে। আর দূর্বলরা এই জুলুমের স্বীকার হয়। অনেক সময় এরা প্রতিবাদ করে কখনও কিছু বাধ্যবাধকতার জন্য করে না। কিন্তু ন্যায় বিচারক তো একজন। উনার আদালত থেকে কেউ মুক্তি পায় না।