“মামা, চা বানান তো”।
রাস্তার পাশের এই চায়ের দোকানটাকে “টং” নামে আখ্যায়িত করা যায় কি না তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এদিকটাতে আসলে এখানে আসা হয়। চা ভালো করে। ভালো চায়ের জন্য অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতেও আমি রাজি আছি। চা মানে তো এই নয় যে গরম পানি নিলাম আর চিনি, দুধ মিশিয়ে নাড়াচাড়া করলাম। সে যাই হোক, এখানে বসার জায়গার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যে দুটি বেঞ্চ রাখা আছে তা কখনো শূন্য দেখিনি আমি। এমন স্থানে কোন নারী কন্ঠের “মামা, চা বানান তো” শোনাটা বিস্ময়করই। আমি নারী কন্ঠের উৎসের দিকে তাকাই। তার হাতে ততক্ষণে শোভা পাচ্ছে ধূমায়িত চায়ের কাপ। আমি আশা করেছিলাম তার সাথে আরো কাউকে দেখতে পাবো। ফ্রেন্ডস অর বয়ফ্রেন্ড। একা না অন্তত। কিন্তু আমাকে আরো একবার বিস্মিত হতে হলো। এরকম পুরুষ গিজগিজে চায়ের দোকানে কোন মেয়ের চা খাওয়া কল্পনা করা আমার পক্ষে একটু কঠিনই। নারীবাদিরা হয়তো ভ্রু কুচকাতে পারেন। বলতে পারেন, আমার চিন্তা ভাবনা নারী বিরোধী, যে কারণে একটা মেয়ের সামান্য চা খাওয়া নিয়ে এত কথা বলছি। কিন্তু বাস্তবতা? আমরা কি আসলেই মেয়েদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি, যেখানে ভর দুপুরে কোন না কোন পুরুষের বক্র চাহুনি বা কটূক্তি এড়িয়ে নিশ্চিন্তে চা খাওয়া যেতে পারে?
নাহ! বেকার মানুষদের আসলে ধরে ধরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যারা আছেন তাদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিৎ। বেকার মানুষরা আর কিছু করুক আর না করুক, অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তা-ভাবনা ভালো করতে পারে। এবং সেসব চিন্তা-ভাবনা যে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতার মত তা এখন বেকার না থাকলে বুঝতাম না। এক চা খাওয়া নিয়েই কত কিছু ভেবে ফেললাম। চা মানবী যে ততক্ষণে চা শেষ করে, চায়ের বিল মিটিয়ে ফেরার পথ ধরেছেন তা আমি বেশ খানিকক্ষণ পর বুঝতে পারলাম।
চা মানবীর সাথে কথা বলার ইচ্ছা জেগেছিলো। কিন্তু হুট করে তো একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলা যায় না। চলে যাওয়াটা তাই ভালোই হয়েছে এক অর্থে।
আমি চায়ের বিল দিয়ে উঠে পড়ি। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। বিকেলে একটা চাকরির ইন্টারভ্যু এর খোঁজ নিতে হবে।
(২) চা মানবীর কথা ততদিনে ভুলেই গিয়েছিলাম। চাকরির ইন্টারভ্যু নিয়ে এক সপ্তাহ টানা ছোটাছুটি করলে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এই টানা ছোটাছুটির ফলাফল যদি হয় শূন্য তখন ভুলে না যাওয়াটা বোধ হয় অস্বাভাবিক। আমার ধারণা, ছেলেদের জীবনের কঠিন সময়ের একটি হচ্ছে এইচ.এস.সি পরীক্ষা পরবর্তি এডমিশন টেস্টে ভাগ্যের মারপ্যাচে কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়া এবং অন্যটি হলো পড়ালেখা পরবর্তি সময়ে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েও চাকরির দেখা না পাওয়া। এই দুই ক্যাটাগরির ছেলেরা বাবা মায়ের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আমি যদিও এখনো সে লেভেলে যাই নি, তবুও নিজের ভেতর কেমন একটা অস্বস্তি কাজ করে। কবে যেন বাবার কাছে হাত পাততে হয়!
আমার এই চরম দুঃসময়ে চা মানবীর সাথে আবার দেখা হয়ে যায় এক রোদ ঝলসানো দুপুরে। সেই পুরোনো স্থানেই। সেদিন ভিড় একটু কম ছিলো। একটা বেঞ্চ ফাঁকাই ছিলো। চায়ের কাপ হাতে কোন এক গভীর চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলাম হয়তো। আরো খানিকটা ডুবে যেতে যেতেই শুনতে পেলাম সেই কন্ঠ,
“মামা, চা বানান তো।” নাহ, এখন ডুবলে চলে না। চিন্তা-ভাবনা সরিয়ে চোখ তুলে তাকাতেই তাকে দেখতে পাই। গোল গাল ছোট একটা মুখ। ভর দুপুরের তাপে সে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম শিশিরের মত জমে আছে।
চায়ের কাপ হাতে একটু দূরে সরে গিয়েছে সে। সেদিন হঠাৎ কি হয়েছিলো আমার জানিনা। হয়তো টানা এক সপ্তাহর ছোটাছুটিতে জীবনের উপর, নিজের উপর এক ধরনের বিরক্তি অথবা হতাশা জন্মেছিলো। ভর দুপুরের রোদের সংস্পর্শে এসে তাই “কি আছে জীবনে” অথবা “কিছুতেই কিছু যায় আসে না” টাইপের একটা ভাব জেগে উঠেছিলো। ফলাফলস্বরুপ আমি তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠি,
“বসুন না!”
একটু অবাক হয়েছিলো কি? কি জানি! তবে সাথে সাথেই বলে উঠলো,
“না, না, সমস্যা নাই। দাঁড়িয়ে চা খেয়ে অভ্যাস আছে আমার। দাঁড়িয়ে অথবা হেঁটে হেঁটে চা খাওয়ার ভেতর এক ধরনের আনন্দ আছে”।
রাত দুপুরে মানুষকে নিশিতে পায়। ভরদুপুরে পায় কিনা আমার জানা নেই। তবে সেদিন দুপুরটা ঠিক স্বাভাবিক ছিল না। নিশিতে না পেলেও নিশির মত কিছুতে পেয়েছিলো হয়তো। তা না হলে আমি চা মানবীর হাসি দেখে কিভাবে বলে উঠি, “আমি তাহলে আপনার মত একটু দাঁড়িয়ে চা খেয়ে দেখি, কেমন আনন্দ পাওয়া যায়।”
কি করছি বা কি বলছি তা বুঝে ওঠার আগেই আমি অনুভব করি আমি চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছি!
চা মানবীর হাসিতে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। হাসি থামলে সে বলে,
“আপনি তো বেশ মজার মানুষ। প্রায় আসেন নাকি এখানে?”
মজার মানুষ কিনা জানি না। কেউ বলেনি কখনো এমন। এই মুহূর্তে ঠিক মজার কিছু করেছি কিনা তাও বুঝতে পারছি না। তবে বুঝতে পারছি, এতক্ষণের স্বাভাবিক পৃথিবীটা যেন হঠাৎ করে দুলে উঠেছে। সূর্য তার উত্তাপ বাড়িয়েছে যেন কয়েক গুন। কোন রকমে আমতা আমতা করে বলি,
“না, মাঝে মাঝে আসা হয়”।
আমি বুঝতে পারি আমার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে। অন্য কোন জগৎ থেকে যেন হঠাৎ এখানে এসে পড়েছি। চা মানবীর সাথে কথা বলা অথবা চা হাতে দাঁড়িয়ে পড়া মানুষটা যেন আমি নই। অন্য কেউ। যার সাথে আমার পরিচয় নেই। ছিলো না কখনো।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গলা ভিজিয়ে নিই। কথা খুঁজে পাই না। কিন্তু হুট করে এখন কথা থামিয়ে দেওয়া অভদ্রতা। তাই জিজ্ঞেস করি,
“আপনি কি প্রায় আসেন?”
“যেদিন দুপুরে ক্লাস থাকে, সেদিন আসি। ক্লাস শেষে টিউশনি। টিউশনিতে যাওয়ার আগে এক কাপ চা খেয়ে যাই ঘুম তাড়ানোর জন্য। স্টুডেন্টের সামনে ঘুমিয়ে পড়া তো ভালো কথা নয়!”
চা মানবী হাসে। চায়ের কাপে ঝিমিয়ে পড়া ধোঁয়ার কুন্ডলী সেই হাসির সাথে মিলে মিশে এক তীব্র ঘোরের সৃষ্টি করে। আমি নেশা ধরা চোখে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে থাকি।
“আচ্ছা, আসি”।
আমার ঘোর কাটে যখন সে চায়ের কাপ বেঞ্চের উপর রেখে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। চা মানবী কি “আসি” বলার সময় হেসেছিলো? আশা করেছিলো আমি ভদ্রতা সূচক কিছু বলবো? আমার নিজেকে কান্ডজ্ঞানহীন নিরেট বোকা মনে হয়। আমি বেঞ্চের উপর চা মানবীর রেখে যাওয়া চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে থাকি।
(৩) তার নামটা জানতে পারি, তানিশা। অবশ্য এতটুকুই এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি। ঐ দিনের পর ওদিকটাতে যাওয়া বেড়ে যায় আমার। প্রিয় পাঠক নিশ্চয় ভাবছেন মেয়েটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি আমি?
না, তেমন কিছু নয়। কাজের কারনেই যাওয়া পড়ে ওদিকটাতে। তানিশার সাথে দেখাও হয়ে যায় মাঝেমধ্যে। কথায় কথায় সেদিন নাম জানতে পারলাম, তানিশা সাবরিন।
তানিশা নামের যে দু একটা মেয়েকে আমি চিনি, তারা টারজানের ফিমেল ভার্সন। আমার এক কাজিনের মেয়ে এবং অন্যজন আমার এক সময়ের স্টুডেন্ট। দুজনের নামই তানিশা এবং দুজনই ফিমেল টারজান। ভাঙ্গাচোরা, হইহুল্লোড় কোন কিছুতেই তারা কম নয়।
চা মানবীর নাম জানার পর আমি তাকে এই দুই তানিশার কথা বলি। বলি একজন কিভাবে জানালার পর্দা ধরে ঝুলতে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে রক্তারক্তি অবস্থার তৈরি করেছিলো। আর অন্যজন একুরিয়ামের মাছদের মুক্ত করার মিশন এক হাতে এবং অন্য হাতে হাতুড়ি নিয়ে একুরিয়ামের গ্লাসে হাত পা কেটে কি অবস্থা করেছিলো।
তানিশা এসব শুনে হাসে। হাসতে হাসতেই বলে, “আমি কিন্তু এমন না! এরকম হলে বোটানির মত সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে পারতাম না।”
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না বোটানির সাথে দস্যিপনার কি সংযোগ অথবা বিরোধ। তবে এতটুকু বুঝতে পারি, তানিশা বোটানির মত কাঠখোট্টা সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছে।
(৪) ওদিকটাতে যাওয়া বাড়ে আমার। চায়ের কাপে গল্প বাড়ে। স্টুডেন্ট, ভার্সিটি, পরীক্ষা, ক্লাস নিয়ে কথা বলে তানিশা। আমি মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে বসে থাকি। হাত নেড়ে নেড়ে সে যখন কথা বলে তখন তার চোখে মুখে বাচ্চা সুলভ কি যেন একটা খেলা করে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি।
ততদিনে আমার জানার বিষয় বেড়েছে। আমি জেনে গিয়েছি, চা তার প্রিয় বস্তু। সকালে ঘুম থেকে উঠে তার নাস্তায় আর কিছু থাকুক না থাকুক, চা থাকতেই হবে। চায়ে পরোটা ভিজিয়ে খাওয়াও তার প্রিয়! রবীন্দ্রসঙ্গীতে ডুবে থাকতে ভালো লাগে তার। রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং শ্রাবণী সেনে সে মুগ্ধ থাকে। বইয়ের বিষয়ে সর্বভুক। আরো জানি, হাঁটতে ভালো লাগে তার। হাঁটাহাঁটি বিষয়ে একবার বলেছিলো,
“হাঁটতে ভালো লাগে আমার। রাস্তায় কত ধরনের মানুষ! এক একজন এক এক রকম। একজন রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটছে তো একজন উপরের দিকে তাকিয়ে। খুব দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে কেউ হয়তো দাঁড়িয়ে পড়লো রাস্তা খোঁড়া দেখতে। ভুলেই বসলো হয়তো তার কোথায়ো যাওয়ার কথা ছিল, কোন কাজ ছিল। কত কি দেখার আছে রাস্তায়! আপনি যদি রিক্সা বা গাড়িতে করে যান তাহলে অনেক কিছুই মিস করবেন, কিন্তু যদি হাঁটেন তাহলে প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু দেখতে পাবেন। আমার তো ইছে করে সারাদিন হাঁটি!”
বলা বাহুল্য, সেদিন থেকে আমার হাঁটার পরিমাণ বেড়েছে! আমি চেষ্টা করি তানিশার “কত কি” দেখার। আমার ইচ্ছে হয় একদিন তানিশার সাথে হাঁটি। তানিশাকে সাথে নিয়ে হাঁটি। দেখতে ইচ্ছে হয় ও কি দেখে। বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গেছেন যা বোঝার? জ্বী, যা ভাবছেন তাই। আমি আপতিত, ভূপাতিত যা বলেন তাই হয়েছি।
(৫) বলবো বলবো করেও বলা হচ্ছেনা। পিঠের পেছনে কিছু করি এমন একটা দেয়াল অন্তত দরকার। আরো একটু সময় প্রয়োজন। আর এসব কথা হুটহাট বলেই বা কি করে? একটা উপলক্ষ্য অথবা একটা উপলক্ষ্যময় দিন তো দরকার। হাতের কাছে তেমন কোন দিন নেই। পহেলা বৈশাখ, সে ও মাসখানেক দূরবর্তী এক দিন। একদিক দিয়ে অবশ্য ভালো হয়েছে। সময় পাওয়া যাবে। সময় পাওয়া যাবে ওর সম্পর্কে আরো জানার। সময় পাওয়া যাবে নিজের সম্পর্কে কিছু গুছিয়ে বলার।
আগে কাজ নিয়েই আসতাম অথবা কাজের কারনে আসতাম। এখন কাজের প্রয়োজন পড়ে না। দুপুরটাতে এখানেই থাকা হয়। তানিশা একদিন পর পর এখানে আসে। আমিও একদিন পর পর এখানে বসে থাকি। তানিশা অবশ্য জানে এদিকে কাজেই আসা হয় আমার। জানুক। কেন এসে বসে থাকি সে কথা পরে জানলেও হবে।
“একটা সারপ্রাইজ আছে!”
আমি চমকে উঠি। তানিশা এত জোরে পেছন থেকে “সারপ্রাইজ আছে” বলে চিৎকার করে ওঠে, চমকে উঠতেই হয়!
“বলুন, বলুন”।
আমি মুখে হাসি টেনে বলি।
“বাইরে যাচ্ছি। বেলজিয়াম। স্কলারশিপ!”
তাড়াহুড়ো করে বলে তানিশা। তানিশার মুখ জুড়ে হাসির ঝলক দেখি আমি। আমি মুগ্ধ হই। ঘোর লাগা হাসি। আমিও যেন ঘোরের মাঝে তলিয়ে যাই। তানিশা কি বলছে তা যেন আমার কানে পৌছাতে পারছে না। আমার স্বত্তাজুড়ে একটা হাসি ছুটে বেড়াচ্ছে শুধু।
“স্কলারশিপের স্বপ্ন ছিলো অনেক দিনের জানেন? হয়ে যাবে বুঝিনি!”
আমার কি জানতে চাওয়া উচিৎ, স্কলারশিপ বিষয়ে আগে কেন কোন কথা আমাকে বলেনি সে? জানতে চাইবো কি?
নাহ! কেন জানতে চাইবো? তার সাথে আমার কি সম্পর্ক? আমি বুঝতে পারি, আমার সাথে তার গল্প জমলেও তার সাথে আমার গল্প জমে নি। তানিশা তখনো বলে যাচ্ছে,
“পাসপোর্ট করা আছে। অন্যান্য কাজগুলো ভালোই ভালোই শেষ হলেই হয়…….”
আমি তানিশাকে থামিয়ে দিয়ে বলি, “চা খাবেন?”
তানিশা কি একটু অবাক হলো? না কি আমার দেখার ভুল? হয়তো, হয়তো বা না।
তানিশা চলে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে নয়, রিক্সায় করে যাচ্ছে। একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে রিক্সাটা। আমি ঠিক ঠিক জানি, তানিশার সাথে আমার আর দেখা হবে না, আমার সাথে তানিশার আর দেখা হবে না।
ভর দুপুরের রোদের প্রখরতায় আমি যেন আবার ঘোরের মাঝে চলে যাই। আমার খুব ইচ্ছে করে, দৌড়ে রিক্সাটার কাছে গিয়ে বলি,
“তানিশা, আমার দেওয়া তোমার একটা নাম আছে, জানো? চা মানবী। আচ্ছা চা মানবী, তুমি কি আমার সাথে আজ সারাদিন হাঁটবে? একটা দিন? আমার অনেক কিছু বলার ছিলো…….”
কিন্তু রিক্সার কাছে যাওয়া হয় না আমার। অজস্র জড়তার হাত আমার পা চেপে ধরে। আমি বরং চায়ের অর্ডার দিই। কেমন এক ঘোর কাতুরে কন্ঠে বলি,
“মেয়েটা যে কাপে চা খেয়েছে সেই কাপেই দিও”।
তপ্ত রোদে তানিশার রেখে যাওয়া চায়ের কাপ হাতে নদীর মত একেবেকে চলে যাওয়া রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে আমি তানিশার হারিয়ে যাওয়া রিক্সাটা খুঁজি। ভর দুপুরে হারিয়ে যাওয়া তানিশাকে খুঁজি।
…… সমাপ্ত ……
