নন্দিনী

নন্দিনী

ক্লাশ ছুটির পর প্রাইভেটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পড়ার কোনো ইচ্ছে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। খুব ক্লান্ত লাগছিলো ক্লাশ করতে। তাই স্যারকে বললাম,
:- স্যার আজ প্রাইভেট না পড়লে হয় না?
:-কেন? কোনো সমস্যা? (স্যার)
:- স্যার, আমি কাল সকালে প্রাইভেট পড়বো, আজ যাই
:- ঠিক আছে যাও।
প্রাইভেট না পড়েই বাড়িতে গিয়ে একটা ঘুম দিলাম। সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙ্গে গেল ফোনের শব্দে। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি জাহিদ ফোন করেছে, ফোন রিসিভ করেই দিলাম ঝাড়ি,
:- জাহিইদ্দার বাচ্চা, ফোন দেওয়ার সময় পাস না আর, দিলি তো ঘুমটা ভেঙ্গে
:- স্যরি, স্যরি জানু
:- রাখ তোর জানু। ঘুমটা শেষ করে দিলি
:- আচ্ছা ঠিক আছে শোন, আমার গণিত নোট টা পাচ্ছি না। তোর গণিত নোটটা একটু দিবি প্লিজ?
:- এখানে এত রিকুয়েস্ট করার কি আছে? বাড়িতে এসে নিয়ে যা।
:- Thank You জানু, রাখছি।
ফোনটা রেখে আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।
ওহ হো এবার আমার পরিচয়টা দেই। আমি প্রিয়া, ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আর এতক্ষণ যার সাথে কথা বলছিলাম সে আমার একমাত্র বেস্টু জাহিদ। আমরা একসাথেই পড়ি। ক্লাশ নাইন থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয়।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি, জাহিদ আমার রুমটা চারদিকে ঘুরে দেখছে।
:- কী দেখছিস? (আমি)
:- তোর রুমটা। আচ্ছা প্রিয়া, তোর বেডরুমটা এত সুন্দর করে সাজানো আগে তো বলিসনি।
:- হাদারাম, এটা বলার কি আছে? তুই এর আগে বেডরুমে আসিসনি তাই দেখিসনি। তুই বস, আমি কফি নিয়ে আসি।
:- আচ্ছা যা।
…..
:- জাহিদ এই নে তোর কফি
:- প্রিয়া, ভালো লেগেছে!
:- কী?
:- দেয়ালে টাঙানো তোর ছবিটা। কিন্তু ছবিতে নন্দিনী লেখা কেন? তোর নাম তো প্রিয়া।
আমি কিছু বললাম না, শুধু মুচকি একটা হাসি দিয়ে ওকে গণিত নোটটা নিলাম।
পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে আমি আর আমার ফ্রেন্ড মাহিয়া প্রাইভেটে যাচ্ছিলাম। প্রচুর শীত লাগছিলো, তবে শীতের কুয়াশাটা দারুণ লাগছিলো। কেমন যেন প্রাইভেটে যেতে ইচ্ছে হলো না। মাহিয়াকে বললামঃ-
:- চল আজ প্রাইভেট পড়বো না (আমি)
:- ঠিক আছে (মাহিয়া)
তারপর দুজনে মিলে আড্ডা দিয়ে যথাসময়ে কলেজ যাচ্ছিলাম। রাস্তায় জাহিদের সাথে দেখা।
:- কীরে প্রাইভেটে আসলিনা কেন? (জাহিদ)
:- গিয়েছিলাম, তুই দেখিসনি।
:- দেখ ফাজলামো করবিনা একদম। জানিস প্রাইভেটে আজ নতুন একটা স্যার আসছিলো। শুনলাম সে নাকি আমাদের প্রিন্সিপালের ছেলে।
:- তো? এখন কি আমি নাচবো? কীসব খবর যে নিয়ে আসিস! সর ক্লাশে যাবো।
ক্লাশে যাচ্ছিলাম তখন পেছন থেকে জাহিদের ডাক,
:- নন্দিনী……
ডাকটা শুনে দাড়িয়ে গেলাম
:- কে নন্দিনী? আমি নন্দিনী না। এই নামে আর ডাকবি না। (আমি)
বলেই চলে আসলাম
:- তুই যাই বলিস না কেন, তোকে আমি নন্দিনী বলেই ডাকবো (জাহিদ)
কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই খেলাম এক ধাক্কা। ভাগ্যিস একটুর জন্য পড়ে যাইনি । মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। রেগে লোকটাকে ইচ্ছেমত বকলাম,
:- চোখে দেখেননা, নাকি? চারচোখ নিয়ে তো ঘুড়েন, তাও দেখেন না? চোখের মাথা খেয়েছেন নাকি? হাতির মত শরীরটা নিয়ে ধাক্কা যে দিলেন, যদি পড়ে যেতাম
পাশের থেকে জাহিদ বললো,,
:- এই তুই কাকে কি বলছিস?
:- তুই থাম, তার হয়ে তোকে আর ওকালতি করতে হবেনা
লোকটা কিছু না বলে তাকিয়ে আছে।
:- ঐ হ্যালো, ঐভাবে কি দেখছেন? স্যরিটা ও বলতে পারেন না??
আরে আজব, আমার কি রূপ জালিয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন
:- (চুপ)
:- ধুর যত্তসব!!!
বিরক্ত হয়ে ক্লাশে চলে গেলাম। ক্লাশ শুরু হলো। স্যার ও ক্লাশে ঢুকলেন। কিন্তু এ কি!! এটা কে!! সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিচ্ছে কেন!! একমাত্র আমিই বসে রইলাম। তবে কি এইটাই স্যার!!
এসব ভাবছিলাম, এর মধ্যেই,,
:- স্যার ক্লাশে ঢুকলে যে দাঁড়িয়ে সালাম দিতে হয়, জানো না? (স্যার)
:- আ…আপনি?
:- হ্যাঁ আমি, চিনতে পেরেছো? কিন্তু তুমি যে তোতলা সেটা তো জানতাম না।
মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা। ইচ্ছে করছে স্যারের চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলি। পারলে এখনি জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতাম ।
কোনোরকমে সেদিন ক্লাশ করে বাড়িতে আসলাম। সন্ধ্যায় ফেবুতে গিয়ে দেখি, জাহিদ গল্প লিখেছে। এতে অবশ্য আমি অবাক হইনি কারণ জাহিদ যে খুব ভালো গল্প লিখে তা আমি জানি। অবাক হয়েছি কারণ গল্পের নাম নন্দিনী। নন্দিনীকে নিয়ে গল্প লিখেছে। জাহিদকে নক দিলাম,
:- কীরে কি গল্প লিখছিস এইটা?
:- কেন, তোকে নিয়ে গল্প লিখেছি। ভালো হয়নি?
:- পাবনায় কি সিট বুকিং করতে হবে নাকি তোর জন্য?
:- যদি ডক্টর তুই হস, তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই।
:- বাড়িতে কি জানে?
:- এখনো বলিনি, তবে তুই বললে আজি তোর আর আমার বিয়ের কথাটা বলে দিবো।
:- উফ গাধা: তুই যে পাগল ঐটা বাড়িতে জানে নাকি জিজ্ঞেস করেছি।
:- আমি তো তোর জন্য পাগল। লাভ ইউ নন্দিনী
:- কচু খাইয়া মর তুই, বাই
ফেবু থেকে বেড়িয়ে নাস্তা করে পড়তে বসলাম। তখনি একটা অচেনা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসলো, “একটু বেলকুনিতে আসবে”
আমি ভেবেছি, এইটা হয়তো জাহিদ ফাজলামো করছে, তাই কোনো রেসপন্স করিনি। রাত্রে খেয়ে ঘুমুতে গেলাম। ঘুম থেকে ওঠতে লেট হয়ে গেছে। আল্লাহ্ এখন কি হবে? তাড়াহুরো করে ফ্রেশ হয়ে কলেজে গেলাম। গিয়ে দেখি ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে। ক্লাশ নিচ্ছে আবার সেই নতুন স্যারটা।
:- এত লেট কেন? (স্যার)
:- ঘুম থেকে ওঠতে লেট হয়ে গেছে। (আমি)
:- ঠিক আছে। এখন বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকো।
ইশশ! কী স্যাররে বাবা, একটু দয়া মায়া ও নেই। এত শীতে কেউ বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখে।
মনে মনে স্যারের গুষ্টির ষষ্ঠি পূজা করছি . এরমধ্যেই প্রিন্সিপ্যাল স্যার হাজির
:- কী হয়েছে মামনী, শীতের মধ্যে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? (প্রিন্সিপ্যাল)
:- স্যার দাঁড় করিয়ে রেখেছে
:- কোন স্যার, চলোতো দেখি।
……
:- তানিফ তুমি প্রিয়াকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখছো কেন? (প্রিন্সিপ্যাল)
:- লেট করেছে তাই শাস্তি দিয়েছি (তানিফ স্যার)
:- ঠিক আছে এখন ভেতরে যেতে দাও।
ক্লাশ শেষ করেই হনহন করে বাড়ি যাচ্ছিলাম। রাগে পুরো শরীর জ্বলছে। জাহিইদ্দার বাচ্চা ঘুমে বিরক্ত করতে পারে আর আজ একটা ফোন করতে পারলো না , হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে আমার হাত ধরলো!!
পেছনে তাকিয়ে দেখি জাহিদ।
:- আমার হাত ছাড়!
:- স্যরি নন্দিনী
:- কে নন্দিনী? হাতটা ছাড়
:- না ছাড়বোনা।
জোর করে হাতটা ছাড়িয়ে বাড়িতে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে।
সন্ধ্যায়, ঘুম থেকে ওঠে দেখি তানিফ স্যার, প্রিন্সিপ্যাল স্যার, আরো কয়েকজন মহিলা আর ছোট বাচ্চা আমাদের বাড়িতে। কিন্তু ওরা আমাদের বাড়ি কেন? বিচার দিতে আসলো নাকি আবার!!! কিন্তু আমি তো কোনো দুস্টুমি করিনি। তবে কি লেট করে গিয়েছি তাই? কিন্তু তাহলে এত মানুষ কেন আসবে!! উফ না আর ভাবতে পারছিনা!
বসে বসে কথাগুলো ভাবছিলাম, এরমধ্যেই আম্মু তানিফ স্যারকে নিয়ে আমার রুমে আসলো। আম্মু চলে যাওয়ার পর, উনি বললেন,,
:- সবকিছু কেমন রহস্য লাগছে, তাই না?
:- (চুপ)
:- আচ্ছা, শুনো তাহলে আমি বলি, কলেজে যেদিন তুমি প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নীল শাড়ি পড়ে এসেছিল, সেদিন আমি আব্বুর ( প্রিন্সিপ্যাল) সাথে তোমাদের কলেজের সেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানেই তোমাকে প্রথম দেখি আর ভালো লাগে। পরে তোমার কথা বাড়িতে বলি আর সবাই রাজি হয়। আর আমি ঐ দুইদিন কলেজে টিচার হয়ে গিয়েছিলাম শুধু তোমার জন্য। তোমাকে কাছ থেকে দেখার জন্য। আজ তোমাদের বাড়িতে এসেছি তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক করার জন্য। আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রিয়া
:- কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
:- কেন?
:- কারণ আপনি আমাকে আজ বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখছিলেন।
:- তুমিও তো আমাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখছো!
:- কী!! আমি? কবে শুনি?
:- কেন, তোমাকে যেদিন ফোনে ম্যাসেজ দিয়ে বললাম বেলকুনিতে আসতে। তুমি তো আসলেনা। জানো, আমি প্রায় ৫ ঘন্টা শীতের মধ্যে বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
:- ওহ, এই ব্যাপার?
:- জ্বী ম্যাডাম, এই ব্যাপার! এবার প্লিজ বিয়েতে রাজি হয়ে যান
:- ঠিক আছে আমি রাজি, যদি আমার বাবা মা রাজি থাকে।
:- সত্যি?
:- হ্যাঁ সত্যি।
:- লাভ ইউ প্রিয়া (জড়িয়ে ধরে)
:- লাভ ইউ টু
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর জাহিদকে ইনভাইট করার জন্য বিয়ের কার্ড নিয়ে ওর বাড়িতে গেলাম।
:- এই নে (আমি)
:- কি এইটা?
:- আমার বিয়ের কার্ড।
:- মানে? আবার দুস্টুমি করছিস তুই?
:- ইহুম, একদম না।
বিয়ের কার্ডটা হাতে নেওয়ার পর ওর চোখের পানি টলমল করছিলো।
:- আমার বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু আম্মু তোকে দিছে। আর হ্যাঁ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। ঐটা বিয়ের দিন দেবো। (আমি)
……
কিছুদিন পর তানিফের সাথে আমার বিয়েটা হয়ে গেলো। জাহিদ সেদিন রাতে ছাদে বসে কাঁদছিলো।
জাহিদের কাঁধে হাত রাখতেই, জাহিদ অবাক হয়ে বললো,
:- তুই? তুই এত রাতে এখানে কেন? তুইনা বউ সেজেছিলি, তাহলে এখন সাধারণ ড্রেসে কেন? আর আজ তো তোর বাসর রাত, তুই এখানে কি করছিস? যাসনি তুই? (জাহিদ)
:- এত প্রশ্ন একসাথে করলে কি করে উত্তর দেবো? আগে বলো তুমি ছাদে বসে কাঁদছিলে কেন?
:- তুই তো স্বার্থপরের মত বিয়ে করে নিলি। আমাকে ছেড়ে চলে গেলি
:- কই বিয়ে করেছি? তোমার নন্দিনী তোমারই আছে।
:- মানে?
:- এই চিঠিটা পড়ো
চিঠিটা পড়ে জাহিদ অবাক হয়ে যায়, কি বলবে বুঝতে পারছেনা….
চিঠিতে লিখা ছিল এরকম…
জাহিইদ্দা,
কিছুই বুঝতে পারছিস না, তাইনা? আরে গাধা সেদিন তুই আমার বেডরুমে যার ছবি দেখেছিলি ঐটা আমার না নন্দিনীর। নন্দিনী আর আমি যমজ বোন। নন্দিনীকে আমি তোর কথা সব বলেছি। তোর ছবিও দেখিয়েছি। নন্দিনী হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতো তাই তুই নন্দিনীকে আগে দেখিসনি।
নন্দিনীকে নিয়ে তুই যতগুলো গল্প লিখেছিস নন্দিনী সবগুলো গল্প পড়েছে। নন্দিনীও তোকে ভালোবাসে।
আর বলেছিলাম না, তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে? এইটাই তোর সারপ্রাইজ! তোর নন্দিনী।
(প্রিয়া)
:- তার মানে তুমিই নন্দিনী? (জাহিদ)
:- হ্যাঁ আমিই নন্দিনী। প্রিয়া আমাকে তোমার কথা সব বলেছে। আমিও তোমাকে ভালোবাসি জাহিদ।
.
জাহিদ কি বলবে বুঝতে পারছেনা। জাহিদ নন্দিনীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাবেনা তো নন্দিনী?
:- কখনো না।
নন্দিনীও জাহিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
সারাজীবন অটুট থাকুক জাহিদ নন্দিনীর ভালোবাসা!
.
……………………………..সমাপ্ত।……………………..

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত