শুরুতেই বিয়ের কথাবার্তা, আজ অভি আর অনিকার বিয়ের তারিখ ফাইনালের দিন।। অনিকা হল অভির বাবার পছন্দ করা মেয়ে ।
অভির একদম এই বিয়েতে মত নেই, তাও মত না থাকার স্বত্তে ও তার এই বিয়ে করতে হচ্ছে,।কারন ওর মতের চাইতে বাবাকে খুশি
রাখাটা প্রয়োজনীয়। কারন অভির বাবা একজন নামকরা হার্টএট্যাক রোগি । একটু উল্টা পাল্টা হলেই গ্যাচাং।
– আজ তাই সবাই অনিকার বাসায় এসেছে। যে যার মত করে বসে আছে, অভিকের টেনশন ভরা চেহেরা, আর মেয়ে না দেখার স্বত্তে ও
বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসা, সব মিলে বিরক্তিকর।
কিছুক্ষন যাওয়ার পর ভিতর থেকে অনিকাকে আনা হল সবার সামনে, সারা মাথায় ঘোমটা আর লাল শাড়ী পড়া যেন এক ডানা কাটা পরি দাড়িয়ে
আছে।
–অভি দেখে পুরাই –হা –!!!
অভি হারিয়ে গেল কল্পনার জগৎতে, কল্পনার আর বেশি ক্ষন ধরে রাখতে পারেনি, বাবার ডাক শুনে আবারও বাস্তবে ফিরতে হলো।
সবার আলাপ আলোচনা শেষ, বিয়ের তারিখ ও ঠিক হল, অভি তার বাবাকে বললো, –বাবা আমি ওর সাথে একটু কথা বলতে চায়,
–তারপর দুজনকে কথা বলার পাটিয়ে দেওয়া হল।
অতঃপর দুজন দুদিকে স্তব্ধ –কারো কোন সাড়া শব্দ নেই, মরা মানুষের মত দাড়িয়ে আছে দুটি মানুষ। সহ্যের সীমা পেরিয়ে অভি
— এই আপনি কি এই বিয়েতে রাজি? তখন থেকে চুপ চাপ কোন কথা নাই (অভি)
—— কথা কি কান পর্যন্ত পৌছায়নি? নাকি কানে শুনেন না?
বললতেই অনিকার রাগান্বিত কন্ঠে _ _
— আমি এই বিয়েতে মোটেই রাজিজি নয়
— আপনি জোড় করে আমায় বিয়ে করছেন হু (অনিকা)
— কী?!! আমার ও এই বিয়েতে একদম মত
নেই হুহ! বাবার হার্ট এট্যাক আছে তাই ওনাকে খুশি রাখার জন্য আমায় এই বিয়ে করতে হচ্ছে (অভি)
–ঠিক তেমন আমিও
— ঠিক আমিও বাবার
জন্য রাজি হয়েছি, (অনিকা)
— কারও সাথে কোন লাইন আছে নাকি? (অভি)
— না, নেই, আমার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নাই তাই, আপনার তো বিয়ে করার জন্য দরদ উতলিয়ে পড়ছে হুহ! ( আনিকা)
— আপনার বয়সস তো দেখতে ২৫ এর
কাছাকাছি, আর দু’বছর পর তো বুড়ি হবেন, সারা জিবন কি একা থাকার চিন্তা আছে নাকি? ( অভি)
— হা, দরকার হলে বুড়ি হবোই , আমি আগে নিজের পায়ে দাড়াতে চাই ( অনিকা)
–কিহ? আপনার নিজের পা নেই? তাহলে এত লম্বা লম্বা পা গুলো কার? ( অভি)
—- অভিকের কথা শুনে অনিকা মুচকি হেসে দিল,,,
আর বলল এই হাদারাম নিজের পায়ে দাড়ানো মানে চাকরি করা (অনিকা)
— ও, এই কথা,আপনি চাকরি করবেন কোন দুঃখে? আমি তো চাকরি করি, আমার রোজগারের টাকায় দুজনের মিটে যাবে।(অভি)
—চাকরি কি কেউ দুঃখে করে, আমি চাকরি করবো কারন আমার বরের টাকায় যেন আমাকে চলতে না হয়, ( অনিকা)
— কথাটা শুনেই বাবার কথা মনে পড়ে গেল অভিকের, এই কেমন মেয়ে পছন্দ করলো ও মোর খোদা —
— আই মিষ্টার কিছু বললেন? ( অনিকা)
— জ্বী না, – তাহলে বিয়ে করার পর চাকরি করতে পারবেন, আমার অফিসে আপনাকে একটা জব করার সুযোগ দিব, –(অভি)
— না, বিয়ের পর আর জবব করা হবেনা তখন সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, আর আপনার অফিসে ক্যান জব করুম? ( অনিকা)
— ক্যান? আমার অফিসে জব করা যাবে না এটা কি কোন ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে নাকি হুম? (অভি)
–চুপ থাকেন —, বেশি কথা বলেন(অনিকা)
—……………….. ( কোন কথা নাই)
—- আচ্ছা আপনার কোনন গার্লফ্রেন্ডনাই তো? ( অনিকা)
–…………………………. ( চুপ)
—,আই, কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না? ( অনিকা)
—আপনিই তো চুপ থাকতে বলেছেন, আমার কি দোষ ( অভি)
–চুপ থাকা মানে কথা কম বলতে বললাম,
একেবারে বোবা হয়ে থাকতে বলি নি ( অনিকা)
–হ্যা, জ্বী মানে না, কোন গার্লফ্রেন্ড নাই (অভি)
–ওকে , রাত হয়ে যাচ্ছে বাড়ি যান, এই বলে ওদের কথোপোকথোন শেষ হল সেদিনের মত ।
আজ ফেব্রুয়ারিরর ১৪ তারিখ , অভি আর অনিকার বিয়ের সব কাজ ঠিক ঠাক মত হয়ে বিয়ে সম্পূর্ণ হল।
— বাসর রাত অনিকাকে অসহ্য সুন্দর রুপে সাজিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে । বাহির থেকে অভি এসে দরজা আটকালো।
তারপর মাথা থেকে পাপড়ি খুলে অনিকাকে বলে — কি আর করার দুজন একি জালে আটকা পড়লাম, না ছাওয়ার সত্বে ও বিয়েটা করতে হলো –!
মন খারাপ করিয়েন না– আর ভয় পাবার দরকার নেই – এই বলে কাথা বালিশশ নিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লো অভি, আর অনিকা এসব দেখে কাদছে, কেমন মানুষ ওনি , আজ এমন দিনে কেউ মাটিতে ঘুমোই?
অনেক অভিমান নিয়ে সেদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ে অনিকা।
সকাল হলো ,
— ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে অভি চা হাতে দাড়িয়ে আছে, এই দেখে অনিকা তাড়াহুড়া করে বলে উঠে একি দাড়িয়ে আছেন কেন? বসুন বসুন –!
— আপনার জন্য চা বানিয়ে এনেছি (অভি)
— শুধু শুধু কষ্ট না করলেও পারতেন, আমি নিজেই খেয়ে নিতে পারতাম ( অনিকা)
–আরে , বাড়ির নতুন বউ বলে কথা যত্ন তো একটু নিতেই হবে তাই না? ( অভি)
এই বলে চা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে চলে যায় অভি ( কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে অনিকা চা খাচ্ছে কিনা)
—- হুম অনিকা খাচ্ছে! আজ অনিকা খুব খুশি, এমন একটা বর পেয়ে যে তার এত কেয়ারিং করে, হবেই তো মেয়েরা এর চাইতে বেশি কি চায় আর?
কিন্তু আপসোস একটাই অনিকা কোনমতেই বলতে পারছে না সে অভিকে কতটা ভলোবেসে ফেলেছে।
আজ অভিকের ঘরে ওর সব ছেলে মেয়ে সব বন্ধু এসেছে, নতুন বউ দেখার জন্য।
অভি ওদের সাথে অনেক মজা করছে, আর কয়েক টা মেয়ে ফ্রেন্ড ওর হাত ধরে ধরে কথা বলছে।
অনিকা এসব দেখে রাগে ফুলছে। ইচ্ছে করছে মেয়েগুলোকে গলা টিপে ধরতে, অনিকা এসব চিন্তা করতে করতে অভি ডাক দিলো অনিকাকে।
— এই যে ওরা আপনাকে ডাকছে, এইদিকে আসেন
—তারপর ওদের সাথে অনিকাকে পরিচয় করিয়ে দিল।
মাঝ থেকে ওর একটা ফাজিল বন্ধু বলে উঠে…..
এই অভি তোর ইশার কি খবর? ( আন্দাজে রাগানোর জন্য )
— মানে? কোন ইশা? (অভি)
— ওই যে ওই মেয়েটা, আচ্ছা বাদ দে, তোর যখন বিয়া হইয়া গেছে এসব বলে লাভ নাই
ইশার নাম শুনেই অনিকা স্তব্ধ হয়ে গেল, চুপ করে সবার সামনে থেকে চলে গেল, রুমে ডুকেই সাথে সাথে দরজা আটকে দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদঁছে ।
অনিকার রিয়েক্ট দেখে ওর বন্ধুরা সব অভিকে বলে দুস্ত আইজকা তোর কপালে শনি আছে।
রাত অনেকটা হলো যে যার মত বাসায় চলে গেল।
অভি ফ্রেস হয়ে রুমের দরজা চাপ দিতেই দেখে দরজা ভেতর থেকে আটকানো –দু তিন বার চাপ দেওয়ার পর ও দরজা খুলছে না।
—– এই যে কি হলো আপনার? হঠাৎ দরজা বন্ধ করলেন যে? (অভি)
— প্লিজ দরজা খুলুন,, কি হলো আপনার বলবেন তো নাকি? প্লিজ দরজা খুলুন —!
এতবার ডাকার পর অনিকা যখন দরজা খুলছে না অভি ভাবলো একটা টিপস্ দি ,
–আচ্ছা আপনার দরজা খুলা লাগবে না, আমি বাইরে চলে যাচ্ছি, এত রাতে আমার যা হবার হবে –!
— কথাটা শুনেই আর রাগ আটকাইতে না পেরে দৌড়ে এসে দরজা খুলে অনিকা।
টিপস কাজে লাগাতেই, অভি মনে মনে হোহোহো করে হাসতে থাকে,,
— অনিকার দিকে তাকাতেই দেখছে চোখের পানিতে ওর পুরো গাল ভিজে গেছে। ওর এমন কান্না দেখে অভির ভেতরটাও কেঁদে উঠলো।
— এই কি হলো আপনার? আপনি এই ভাবে নাকের পানি চোখের পানি এক করছেন কেন,্? ( অভি)
কান্না থামান বলছি, এই ভাবে কাদঁলে আমি বের হয়ে যাবো….!
—- হুম শুধু বের হইয়ে যাবার ভয় দেখান তাই না? ভালোইতো শিখছেন ( কেদে কেদে)
–ওই ইশা কে?( ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে বলে,)
— কোন ইশা? আচ্ছা তাহলে এই কারন ( মনে মনে)
— কে আবার আপনার গার্লফ্রেন্ড, বিয়ের
আগে বলছিলেন কোন গার্লফ্রেন্ড নাই, আর এখন সব তাইনা ( কান্নার জল মুছে মুছে)
— আচ্ছা আগে কান্না থামান না, এভাবে কাদঁতে হয়? (অভি)
— আগে বলতে বলছি কে অই মেয়ে টা (অনিকা)
— আরে কেউ না ওই মেয়েটা, ওরা ফাইজলামি করছে (অভি)
—- আমায় মাথায় হাত দিয়ে বলেন তো, ( অনিকা)
—- এই দিলাম, কোন ইশা টিশা আমি চিনিনা ( অভি)
কথাটা শুনেই অনিকা অভি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আজ মনে হয় আর ছাড়া ছাড়ি হবে না, এই জড়িয়ে ধরা সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে,।
—-এই যে হয়ছে এবার ছাড়ুন — এত শক্ত করে ধরলে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না তো,,,,,
—- নিঃশ্বাস নিতে হবে না,,, আমি ছাড়বোনা আপনাকে —!
——- অনিকা কিছু একটা বলার জন্য এখনো জড়িয়ে ধরে আছে, কিন্তু পারছে না…..!
অনিকা ভাবছে শুধু ভালোবাসি বললে ভালোবাসা হয়না, অনিকা অভিকে এই ভাবে নিয়ে সারাজীবন কাটাতে চায়, একটু ভালোবাসার ভাগ ও কাওকে দিতে চায়না।
হয়তো অনিকা অভিকে ভালোবাসি বলতে পারছে না, তবুও ওর এই রাগ অভিমান ইমোশন, এগুলো ভালোবাসা কথাটা ছেয়ে কম কিসে?