-কি করছো একা দাঁড়িয়ে?
-তুমি এখানে।
-হুম,তো?
-না কিছুনা।
-রাগ করে আছো?
-কার ওপরে?
-আমার।
-রফি কখনো মেয়েদের ওপর রাগ করে থাকেনা।
-হইছে বুঝছি।
-(নিশ্চুপ)
-কিছু বলছোনাযে?
-কি বলবো।
-খাইছো?
-না।
-কেনো?
-এমনি।
-নিচে গিয়ে খাবে চলো।
-সেটা তুমি বলার কে?
-তবেরে..আমি কে না।ভবিষ্যতে যদি তুই বাপ হয়ে থাকিস তবে আমি সেই বাচ্চার মা।
-কিইইইইইই।[চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে]
-এই যা,বাই মিস্টেক।[জিভে কামড় দিয়ে]
-ওকে।
-সরি।
-for what?
-এইযে আজ তোমার পাশে বসে বরযাত্রী যাইনি।
-তো এতে সরি বলার কি আছে?
-জানি তুমি এর জন্য রাগ করে আছো।
-একবার বললামনা আমি রাগ করে নেই।
-আচ্ছা আচ্ছা,তুমি দুই মিনিট দাঁড়াও আমি আসছি।
.
তারপর নিধি ছাদ থেকে নেমে চলে গেলো।
আমি তখন চাঁদের দিকে তাকিয়ে আজকের কথাগুলো আরো একবার ভাবতে লাগলাম। নিধির জোরাজুরিতে ওর ভাইয়ের
বিয়েতে বরযাত্রী যেতে রাজি হলাম।শর্ত ছিলো ও পাশে বসে যাবে। কিন্তু গাড়িতে উঠে বালিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ প্রকাশ করে ওর
ফুপ্পির পাশে গিয়ে বসে গেলো। যেটা কোনোভাবে হৃদয়ের মাঝখানটায় গভীরভাবে আঘাত করে,যার কারণ মাঝ পথেই চলন্ত গাড়ি থামিয়ে নেমে যাই।
-ওই আকাশের দিকে ওমন ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?
(নিধির ডাকে ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে পা রাখলাম)
-একটা চাঁদের চারিপাশ ঘিরেথাকা একরাশ তারা।
-হইছে,এবার হা করো।[প্লেটেকরে খাবার হাতে]
-আমায় দেখে কি বাচ্চা ছেলে মনে হয়?
-হিহিহি,তুমিতো বাচ্চাই।
-ওই ভাগোতো।
-আগে খেয়ে নাও।
-একবার বলছি খাবোনা।
-খেয়ে নিলে দশটা পাপ্পি দিতে দিতাম।
-ভালো অফার,বাট আই এম সরি।
-পা টিপে দিতাম।
-কাজ হবেনা।
-লাস্ট,জড়িয়ে ধরতে দিতাম।
-পরে ভেবে দেখবো।
-ওকে তুমি ভাবতে থাকো,আমি গেলাম।
-না,দাঁড়াও।
-বলো।
-কিসটা কি কপালে নাকি ঠোঁটে?
-যেখানে তোমার ইচ্ছা।
-ওকে আমি রাজি।কিন্তু তোমার সাথে ব্রেকআপ।
-সেটা পরে দেখাযাবে।
তারপর বালিকা নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিতে লাগলো।
আর আমি মেয়েটার মায়াবী মুখের দিকে চেয়ে রইলাম।
.
কোনো এক আঁধার কালো রাতে,দূর থেকে চাঁদের কিছু অংশ উকিমেরে আছে।আর সেই চাঁদকে ঘিরে লক্ষ-কোটি তারা চাঁদের
সাথে তাল মিলিয়েছে। ঠিক তাঁর একটু নিচে ছাদে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে খুব যত্নসহকারে একটা ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছে। তখনি নিধির কথা মনে পড়লো,মেয়েটা খেয়েছেতো!
-নিধি।
-হুম।
-তুমি খেয়েছো?
-পরে খেয়েনিবো।
-বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কিছু খেয়েছিলে?
-তোমায় ভালোবাসার পর তোমার আগে কখনো খেয়েছি!
-পানি দাওতো।
নিধির থেকে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে একি প্লেটে মেয়েটাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।
মেয়েটার চোখ তখন কোনো এক কারণে পানি ঝরিয়ে দিলো।
-কান্না করছো কেনো?
-আমি তো তোমার পাশেই বসতে চেয়েছিলাম,কিন্তু ফুপ্পি কতো জোরাজুর করলো।তাই বসতে পারিনি।I’m sorry Rofi,I’m really sorry.
-হইছে এবার থামো।
তারপর খাওয়াদাওয়া শেষ করে দুজন ছাদেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় রইলাম সবার ঘুমের।
*
দুই বাড়ির সবাই যখন ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো গভীর রাতে নিধিকে সাথেকরে গাড়ি নিয়ে তখন ঘুরতে বেড়িয়ে পরলাম। শুনশান
রাস্তায় ফুল স্প্রিডে গাড়ি চলতে লাগলো,দুটি মানুষের মনে তখন বইতে লাগলো খুশির আভাস। চলতে চলতে গাড়ি এসে থামলো
নদীর ধারে। গাড়ি থেকে নেমে নিধিকে সাথে করে নির্জন পরিবেশে নদীর তীর দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। চারিপাশে তাকাতেই যখন
গা ঝিম দিয়ে উঠে নিধির মুখের মায়াটা তখন মনটা শীতল করে দেয়। হাঁটতে হাঁটতে নদীর তীরে সাজানো ব্রেঞ্চে এসে নিধির
কোলে মাথা রেখে নদীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। যেখানে পানিতে আকাশের চাঁদ-তারার অবিকল দৃশ্য ঢেউয়ের সাথে উঁচু-নিচু হচ্ছে।
-রফি।
-হুম।
-একটা পংখীরাজ ঘোড়ায় চরে আমি আর তুমি আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছি,আমাদের উড়ে যাওয়া সেই প্রতিচ্ছবি পানিতে ভেসে উঠছে।ওয়াও কত্ত দারুণ হতো তাইনা।
-হুম,কিন্তু আমি অন্যকিছু ভাবছি।
-কি ভাবছো?
-দশটা পাপ্পি কি এখন দিবো নাকি কাল।
-এখনি দাও।
-হাতটা দেখি।
তারপর বালিকার দুইহাতে দুইটা পাপ্পি দিয়ে দিলাম।
-মাথাটা একটু নিচু করোতো…
বালিকা মাথা নিচু করতেই কপালে একটা পাপ্পি দিলাম,তারপর দুই গালে দুইটা।
-বাকি পাঁচটা কাল দিই?
-না এখনি।
-তবে কাল কি হবে?
-কালকেরটা কাল দেখা যাবে।
-আর কি চাই।
বলেই উঠে দাঁড়ালাম।
নিধি তখন জুতা খুলে পায়ের ওপর পা রেখে দাঁড়ালো। আমি দুই হাত দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে একটা পাপ্পি দিলাম। তারপর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁটের ছোঁয়া মিলিয়ে দিলাম।
.
লাইটের আলো হঠাৎ দুজনকে ঠিকভাবে দাঁড়াতে বাধ্য করলো। সামনে তাকিয়ে খেয়াল করলাম বাইক আসছে। নিধি ঘাবরেগিয়ে হাতটা শক্তকরে জড়িয়ে ধরলো। বাইকটা সোজা আমাদের সামনে এসে থামলো।
-সুমুন্দি তুই!
-তুই এখানে কেনো?
-তোর বোনকে নদীর হাওয়া খাওয়াতে নিয়ে আসলাম।
-ইংগেজমেন্ট করছিস বিয়ে না।একটু কম কম ঘুর।
-তুই তোর নতুন বউয়েরটা ভাব।
-ওকে থাক ভাই,তোদের ভাবিরে একটু হাওয়া খাওয়াইয়ে নিয়ে আসি।
*
তারপর একজন বউ,অন্যজন হার্ফ বউ নিয়ে দুইপথের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।।
………………………………….সমাপ্ত……………………………….