>হাই
-হুম বলো
>কি করো?
-কাজ করি।
>দুপুরে খেয়েছো?
-সকালে খাইছি।
>আর দুপুরে?
-তুমি তো জানো আমি দুপুরে খাইনা।
>খাইনা বললেই হলো নাকি?আগে কি করছো জানিনা,কিন্তু এখন খেতে হবে।
-খাবার কোথায় পাবো এখন?
>দোকানে কি খাবারের অভাব?কিনে খাও।
-তুমি এমন কেনো করছো বলোতো?
>তুমি খাবে কি না বলো।
-বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবো।
>ওকে তাহলে আমিও খাবো না।
-তাহলে আমি বাসায় গিয়েও খাবোনা,কালকেও খাবোনা,তিনদিনেও খাবো না,খাবো না খাবো না খাবো না।
>তাহলে মরে যাবো।
-চুপ
>তাহলে বলো খাবে।
-হ্যাঁ খাবো।
>এইতো লক্ষী ছেলে।লাভ ইউ এত্তগুলো।
-লাভ ইউ টু পাগলি।
.
.
আমি আফসানা মিমি,পড়াশুনা কিছুই করিনা,ইন্টার কমপ্লিট করে আর পড়াশুনার কথা মাথাতেও আনি নাই,এর পেছনে অনেক কারন রয়েছে এগুলো নাই বা বললাম।মা নেই বাবার খুব আদুরে মেয়ে আমি,সারাদিন কোনো কাজ নাই তাই ফেইজবুক নিয়েই পরে থাকি।
.
.
কারন কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না আমার,সারাক্ষন একা একাই থাকি,তাই আমার ভালো কোনো বন্ধু ছিলো না কখনো।খুব একটা বের হই না বাসা থেকে।একাকিত্ব নিয়েই খুব ভালো সময় কাটছিলো আমার।
.
.
একদিন সুমি আপু(কাজিন) শপিং করবে তাই আমায় খুব করে বললো তার সাথে যেতে।আমার ও কিছু কেনাকাটা করার ছিলো তাই রাজি হলাম।দুজনই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলাম কেনাকাটার উদ্দেশ্যে।
.
.
আমি আর আপু গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম আর তখন দেখি একটা লোক নিচের দিকে তাকিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটতেছে তার উল্টো দিক থেকে একটা অটো তার বরাবরই যাচ্ছে কিন্তু সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই তার,সে চলছে যে চলছেই।অটোটা তার খুব কাছাকাছি চলে আসছে দেখে আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম।
.
.
-আপনার লাগেনি তো।(ছেলেটি)
>তার আগে বলুন আপনি কেমন মানুষ হ্যাঁ!রাস্তার মাঝখান দিয়ে কেউ এভাবে হাটে?আর একটুর জন্যই তো গেছিলেন গাড়ির নিচে।(আমি)
-আসলে আমি খেয়াল করিনি।
>খেয়াল করিনি মানে?যদি কিছু হয়ে যেত তখন কি করতেন?
-কি আর করতাম,যা হবার তাই হতো।
>উফফ,আপনি এমন কেয়ারলেস কেন বলুন তো?
-আসলে আমি এমনই।
>ধ্যাত,এনার মত পাগলের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই তাই আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
.
.
তার কিছুদিন পর..
রাতে শুয়ে শুয়ে নিউসফীড ঘাটছিলাম।ঠিক তখনই একটা মেসেজ আসলো।
-ধন্যবাদ(ছেলেটি)
>মানে?আপনি আমায় ধন্যবাদ কেনো দিচ্ছেন?(আমি)
-সেদিন আপনি আমায় এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে বাচাঁলেন, আপনাকে তো ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি আজ আপনাকে পেয়ে গেলাম তাই ধন্যবাদ দেওয়ার সুযোগটা মিস করলাম না।
>মানে আপনি সেই কেয়ারলেস ছেলেটি?
-হুম
>ওহ আচ্ছা
-আপনার নাম টা কি জানতে পারি?
>হুম,আমি আফসানা মিমি,আপনি নিশ্চই ফারিহান আহমেদ ফারাবি ?
-আপনি কি করে জানলেন?
>আপনার প্রোফাইল এ তো লিখা।
-ওহ আচ্ছা,ভালো থাকবেন।
>ওকে, আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন।আপনি তো আবার একটা কেয়ারলেস ছেলে।
-হুম চেষ্টা করবো।
.
. এভাবেই পাগলটার সাথে আমার কথা বলা শুরু হয়।প্রথম প্রথম ও মেসেজ দিত।তবে তেমন কিছু বলতো না,অন্যরকম একটা ছেলে ও,কম কথা বলে, কোনো রকম বাজে অভ্যাস নেই ওর,শুধু নিজের কেয়ারটুকু নিতে ভুলে যায় সে।সকালে খেলে দুপুরে খাবে না,দুপুরে খেলে রাতে খাবেনা,অসুখ হলে ঔষধ খাবেনা।নিজেকে নিয়ে একদম ভাবেনা।তাই ভাবলাম ওরে কেয়ার নেওয়ার দায়িত্বতা না হয় আমিই নিবো কিন্তু ওকে প্রথমে বুঝতে দেওয়া যাবেনা কিছু।
.
.
এফবিতে চ্যাটিং করার পাশাপাশি এখন ফোনেও কথা বলা শুরু হয়েছে।কিন্তু সেদিনের পর আর দেখা হয়নি আমাদের।ফারিহান নিজে থেকে বলেনি তাই আমিও বলিনি।
.
.
একদিন বসে বসে হুমায়ূন স্যারের লিখা গল্প হিমু সামগ্র বই পড়ছিলাম।আর তখনই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ফরিহানের নাম্বার।দেখে আমি অনেকটা অবাক হলাম কারন আমি খুব বেশি জোর না করলে ও আমায় কল দেয় না।আর আজ মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
.
.
>আসসালামু আলাইকুম(আমি)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।মিমি কেমন আছো।(এতদিনে আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে তাও আমার জোরাজোরিতে,সত্য
ি বলতে আমার কথাগুলো ও যেভাবেই হোউক রাখার চেষ্টা করে)
>হ্যাঁ ভালো,তুমি কেমন আছো?শরীর ঠিক আছে তো?
-হুম ভালো,কি করছো?
>এইতো বসে ছিলাম এখন তোমার সাথে কথা বলছি,তুমি কি করো?
-আমি হাটছি।
>খেয়েছো দুপুরে?
-না,খাওয়া হয়নি।
>কেনো খাওনি?তুমি কি আমার কথা শুনবে না কখনো?কেনোই বা শুনবা আমি তোমার কে হই।
-খাবো তো পাগলি বউ।
>কি বললা?(এই প্রথম ও আমায় পাগলি বউ বললো তবে কি আমি যা ভাবছি ও তাই ভাবছে?বুঝিনা ওকে,হয়তো মজা করেই বলছে)
-বললাম খাবো।
>এখনই খাবা,কয়টা বাজে এখন দেখছো?বিকেল চারটা।
-আচ্ছা খাবো তো(বলতে বলতে কাশতে লাগলো,কাল বলেছিলো ওর ঠান্ডা কাশি হইছে,তবে এতটা সেটা বুঝতে পারিনা)
>এই তুমি মেডিসিন নিয়েছো?
-না(নরম স্বরে বললো)
>তুমি কি কখনো ঠিক হবা না?এখনই লান্স করে মেডিসিন নিবা।নইলে দেখো আর কথা বলবো না।
-আচ্ছা পাগলি,আমি বাসায় যাই তারপরই খাবো।
>পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাসায় যাবা।
-আচ্ছা ঠিক আছে,তার আগে যা বলার জন্য ফোন দিয়েছি সেটা তো বলি।
>হুম বলো।
-কাল দেখা করতে পারবে আমার সাথে সকাল নয়টায় সেই রাস্তার পাশে।
>আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তো মহা খুশি,কিন্তু ওকে বুঝতে দিলাম না স্বাভাবিক ভাবেই বললাম তাই।
.
.
ওর সাথে কথা বলতে বলতে একসময় খুব কাছের মানুষ মনে হতে লাগলো।খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে,ইচ্ছে করে খুব ভালোবাসতে।ওর কেয়ার করার দায়িত্ব নেওয়ার সাথে ওকে আমার দায়িত্বতাও দিতে ইচ্ছে করে।কিন্তু ওকে বুঝতে দেই নি এখনো।আজ কি আমার ইচ্ছেটা পূরন হতে যাচ্ছে?নাহ আমি একটু বেশি বেশি ভাবছি।
.
.
তারপর রাতে এফবিতে কথা হল ওর সাথে।রাতে খেয়েছে কিনা জানতে চাওয়ায় বললো হ্যাঁ খেয়েছে আর আমার কথা মত মেডিসিন ও নিয়েছে,আমি জানি এখন ও আমার কথা রাখার আপ্রান চেষ্টা করে।তাই না খেয়ে থাকবে না।তারপর রাতে কথা শেষ করে দুজন গুড নাইট বলে বিছানায় শুয়ে পরলাম।কিন্তু কিছুতেই ঘুম পাচ্ছিলো না আমার।জানিনা ও কি জেগে আছে আমারই মত?নাহ ও হয়তো ঘুমাচ্ছে।কোনো ভাবে পার করলাম রাতটি।
.
.
তারপর সকাল হলো।খুব তারাতারি ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম।পাগলটা একদিন বলেছিলো লাল শাড়ি আর খোপায় লাল গোলাপ সাথে কপালে লাল টিপ পরলে নাকি অসম্ভব সুন্দর লাগে মেয়েদের।তবে ও ওর কল্পনায় দেখা মেয়ের উদ্দেশ্যে নাকি বলেছিলো।তাই আমি ওর সেই কল্পনায় দেখা মেয়ের মতই সাজলাম।জানিনা কেন দেখা করতে চাইছে তারপর ও ওর মনের মত করেই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
.
.
মনে মনে খুব আনন্দ হচ্ছিলো ফারিহানের সাথে দেখা হবে।সারা রাস্তা ওর কথাই মনে পরছিলো।একসময় পৌঁছে গেলাম নিজ গন্তব্যে।দেখি পাগলটা রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে গায়ে সাদা শার্ট,চুলগুলো একটু এলোমেলো,মুখ ভরা খোচা খোচা দাড়ি।হাতে কি যেন দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না।
.
.
পাগলটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে,ও হয়তো চিনতে পেড়েছে আমায়।দুজন দুপাশে।কিন্তু গাড়ির জন্য কেউ কারো সামনে যেতে পারছিলাম না।তারপর পাগলটা কল দিল আমায়।
.
-লাল শাড়িতে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে।
>তাই?দূর থেকে বুঝলে কি করে আমায় সুন্দর লাগছে?
-তুমি বুঝবে না।
>তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে পাগলা।
-গাড়ি আসা কেনো বন্ধ হচ্ছে না বলোতো।তোমার কাছে আসতেই পারছি না।
>একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি তোমার কাছে।
-না,তোমাকে আসতে হবে না।
আমি আসছি,বলে রাস্তার মাঝখানে চলে আসতেই কোথায় থেকে যেন একটা ট্রাক চলে আসলো পাগলের দিকে আর আমি এটা দেখতে পেয়ে দৌড়ে পাগলের সামনে যেতে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেলো।
.
.
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি হসপিটাল এর বেডে শুয়ে আছি, আর আমার মাথার পাশে পাগলটা বসে আছে।আমার বাবা,ভাইয়া,আত্ম
ীয়সজন সবাই এসেছে আমায় দেখতে,আমি ঠিক তখন ও বুঝতে পারলাম না সবাই আমায় কেন দেখতে আসছে আমার তো কিছু হয়নি।আমি তো ঠিক আছি।কিন্তু ওর চোখে পানি কেনো?
.
.
ফারিহানের চোখে পানি দেখে আমি জিজ্ঞাস করলাম।
>এই পাগল কাঁদছো কেনো?
এটা শুনে ও হাউমাউ করে কাদঁতে লাগলো,বাবা ও চোখ মুছতে মুছতে বাইরে চলে গেলো।তখন আমি উঠে বসতে গিয়ে অনুভব করলাম আমার ডান পা টা আর নেই।আমি পঙ্গু,আজ আমি আট দশটা মানুষের মত আর স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারবো না।চোখের কোনে পানি চলে এলো আমার।
-আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্থা হয়েছে।আমার এই কেয়ারলেসের ফল তোমাকে ভোগ করতে হচ্ছে মিমি।আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। এ কথা শুনে চিৎকার করে কাদঁতে ইচ্ছে করছে আমার কিন্তু না আমি কাঁদবো না।কারন আমার পাগলটাকে তো আমি বাঁচাতে পেরেছি এতেই আমি খুশি।আর আমার এ অবস্থার জন্য ও নিজেকে দায়ী করছে আর কষ্ট পাচ্ছে এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।
.
.
>আরে বোকা তোমার জন্য নয় আমার ভাগ্যে এটা লিখা ছিলো তাই তো এমন হইছে।তুমি কষ্ট পেওনা। কিন্তু আমার একটাই কষ্ট আমি তোমাকে কেয়ার করার দায়িত্বটা হারালাম।আজ থেকে তুমি নিজের খেয়াল রাখবা।ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবা।অসুখ হলে মেডিসিন নিবা।
-ঠিক তখনই পাগলটা আমার মুখ চেপে ধরে বললো।আই লাভ ইউ মিমি।আজ থেকে আমি শুধু আমার নয় তোমার দায়িত্বটাও আমি নিলাম।হ্যাঁ আজ আমি তোমাকে আমার মনের কথা টা বলার জন্যই ডেকেছিলাম তোমায়।কিন্তু
কি হয়ে গেলো।
>চুপ,,আমি ওর মুখে হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে আমার আছে এনে কানে কানে বললাম আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি ফারিহান।
.
হ্যাঁ আজ প্রায় তিন বছর হয়ে গেলো আমাদে বিয়ে হয়েছে। এখন পাগলটা শুধু নিজেরই নয় আমার ও খেয়াল রাখে খুব।আজ আর সে আর কেয়ারলেস নয়।নিজেও ভালো আছে আর আমাকেও খুব ভালো রেখে।খুব বেশি ভালোবাসি তাকে।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক