সৃতির শহরটাতে আজও জম কালো রং এ সেঝেছে।সময়ের সাথে কতো কিছুই না বদলে যাই । এইতো কয়েক বছর আগের কথা মিথিলার সাথে দেখা হয়েছিলো এই পথের মাঝেই। ভোরের দিকে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে ভাল লাগে ইমরানের। সকালের নিববতা দেখতে কেমন যেন অন্য রকম লাগা কাজ করে।
সকালের কুয়াশায় সাইকেল নিয়ে ঘোরার মজাই আলাদা। ফাকা রাস্তা তাই একটু জোরেই চালাচ্ছিলাম এর মাঝেই মোর ঘুরতেই হটাৎ একটা সাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেলাম। অনেকটা লেগেছেও, উঠতে যেয়ে দেখি একটা মেয়ে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে যাবো তার আগেই সাইকেল নিয়ে মেয়েটা চলে গেল।
অনেকটা অবাক হলাম এতো সকালে কোন মেয়ে সাইকেল নিয়ে কেনোইবা বের হবে।কিন্তু ধাক্কা খেয়েও যে কিছু না বকা দিয়ে চলে গেলো এটাতো ভাবতেই পারিনি।
সেদিনের মতো চলে আসলাম পরদিন ঠিক ভোরে আবার বের হলাম সেই রাস্তায়। কিন্তু মেয়েটাকে আজ দেখতে পারলাম না। আর না ঘুরে বাসায় চলে আসলাম এসে, ফ্রেস হয়ে ভারসির্টির দিকে রওনা হলাম। কেন জানি ক্লাসে মনই বসছিলো না, মেয়েটার কথাই মনে হচ্ছিলো তাই ২ টা ক্লাস করেই চলে যাচ্ছিলাম।কিন্তু চারুকলা ডিপাটমেন্টের সামনে কয়েক জনের ভিড় দেখে এগিয়ে গেলাম । দেখি কয়েকজন ছবি আকায় ব্যস্ত আর সবাই তাই তাকিয়ে দেখছে।চলে আসতে যাবো ঠিক তখনই সেই সাইকেল চালানো মেয়েটাকে দেখতে পাই। সেখানো খোজ নিয়ে জানতে পারি মেয়েটার নাম মিথিলা চারুকলার ২য় বর্ষের ছাত্রী।আকা শেষে সবাই চলে যাচ্ছিলো এর মাঝেই মিথিলার সামনে যেয়ে দাড়ালাম।
ইমরান:আপনার সাথে কিছু কথা বলা যাবে।
মিথিলা:(ইশারায় বললো কি)
ইমরান:আসলে কাল আপনার সাইকেলের সাথে না দেখে ধাক্কা
খাওয়ার জন্য সরি।
মিথিলা:(আবার ইশারায়, ঠিক আছে বুঝালো)
আর কিছু বলতে যাবো এর মাঝেই ওর বান্ধবী রিক্সায় করে এসে মিথিলাকে নিয়ে চলে গেলো। কিছুটা অবাক হলাম কোন কথাই তো বললো না এই ভেবে।
সেদিনের মতো চলে আসলাম তবে অনেক প্রশ্নোই মনে উকি দিচ্ছিলো । কিন্তু উওর খুজে পাচ্ছিলাম না পরদিন একটু আগেই চলে আসলাম ভারসির্টিতে।
এসে ওর সকল তথ্য খুজতে শুরু করলাম মিথিলার বান্ধবীদের কাছ থেকে। যতো দূর জানলাম আমার ধারনা ঠিক ছিলো, মিথিলা কথা বলতে পারে না।
কিন্তু এটা জন্ম থেকে নয়, ছোট বেলায় ওর মা মারা যাওয়ার সময় এতোটাই স্কড হয়ে গেছিলো যে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি।সেই থেকেই কথা বলতে পারে না।
কিন্তু মিথিলার আকা ছবিগুলো যেন না বলা কথাও বলে দেয় রংতুলির ভাষায়।এভাবেই আলাদা একটা মায়া জন্ম হতে থাকলো মিথিলার উপর।
আস্তে আস্তেই মিথিলার সাথে বন্ধুত্বটাও হয়ে যায়। কিন্তু কিছু শর্ত জুড়ে দেয় বন্ধুত্বের মাঝে।ওর পিছু নেয়া যাবে না, ছবি আকার সময় বিরক্ত করা যাবে না,
ক্লাস ফাকি দিয়ে দেখা করতে আসা যাবে না এই আরকি সবটাই মেনে নিয়েছিলাম।এভাবেই বন্ধুত্বের হাত ধরে কেটে গেলো ২ বছর।এর মাঝে মিথিলাকে ভালবেসে ফেলেছি অনেক ভাবেই বুঝাতে চেয়েছি কেন জানি মিথিলার সামনে গেলেই সবটা গুলিয়ে যেতো। আমারো ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো তখন চাকরীর খোজে একটু ব্যস্ত হয়ে পরলাম । এদিকে মিথিলাও কেন জানি এরিয়ে চলতে শুরু করলো যদিও প্রথমে বুঝতাম না। কিন্তু হটাৎ করেই ম্যাসেজ করে জানালো আজ দেখা করতে
পারবা, আমিও হা বলেদিলাম। ম্যাসেজেই পার্কে যাওয়ার সময়টা পাঠিয়ে দিলো, যথা সময়ে পৌছে গেলাম । যেয়ে দেখি মিথিলা আগেই বসে আছে কাছে যেতেই একটা
চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। অনেক বার ডাকলাম কিন্তু পিছু ফিরলো না, চিরকুট খুলে পড়তে শুরু করলাম।
মিথিলা:আমি বিদেশ চলে যাচ্ছি ইমরান এখন থেকে ওখানেই থাকবো।
তোমার অনুভূতিগুলো আমার কাছেও অজানা নয় । কিন্তু সব বুঝেও না বুঝে থাকতাম এর পিছেও কিছু কারন ছিলো। তুমি হয়তো ভাবছো কতোটা স্বার্থপর আমি কিন্তু প্রিয় মানুষের ভাল চাওয়াটা তো ভূলের কিছু নয়। জীবনের পথে কতো সম্পর্কতেই না আমরা সবাই জড়াই। তার মানে তো এই নয় যে সবটাই পূর্নতা পাবে।
ভেবে নিয়ো এটাও একটা ভূল ছিলো। সেদিনের পর থেকে মিথিলাকে আর খুজে পাইনি অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু ফলাফল শূন্য। এভাবেই হারিয়ে গেছিলো মিথিলা নামের মেয়েটি আমার জীবন থেকে। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর বিয়েই করবো না। কিন্তু নিয়তিতে হয়তো অন্য কিছুই লেখা ছিলো। মিথিলা চলে যাওয়ার পর একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে জব পেয়ে যাই। ৩ বছরের মধ্যেই ভাল পজিশনে চলে যাই তাই ভবিষৎ নিয়ে ওতোটাও ভাবা লাগেনি। এর মাঝেই বিদেশী একটা ক্লাইনেটের সাথে মিটিং পরে বিকেলে। তাই সব ফাইল রেডি করে প্রেজেন্টেশন করতে যাবো তখন হটাৎ চিরোচেনা চেহারা দেখে যেন থমকে যাই, আরে এতো মিথিলা।
তার চেয়ে বেশী অবাক হই মিথিলার কথা বলা শুনে। যদিও একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম মিটিং এর ১ঘন্টা কিন্তু ঘোর কাটলো মিটিং শেষে।
মিথিলা:এই ভাবে হাবলুর মতো কি দেখছো ইমরান?
ইমরান:আসলেই কি তুমি নাকি কল্পনা?
মিথিলা:কল্পনা নয় সত্যি।
ইমরান:তুমি কথা বলতে পারছো কিভাবে?
মিথিলা:বিদেশে যেয়ে উন্নতো চিকিৎসার ফলে নিজের
অস্তিতো ফিরে পেয়েছি।
আমার কথা ছাড়ো, শুনলাম বিয়ে করছো না কারন কি?
ইমরান:তুমি জানলে কিভাবে?
মিথিলা:দেশে এসে তোমার সব খোজ খবর নিয়ে জানতে
পারলাম দেবদাস হয়ে বসে আছো বিষয় কি?
ইমরান:যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম তারই তো সময় হলো না
আমায় নিয়ে ভাবার, তাই স্বপ্নে পথ চলা বাদ দিছি।
মিথিলা:এতোই যখন ভালবাসতে কখনো তো সাহস করে
বলতেও দেখিনি।
ইমরান:সাহসটা না হয় কম ছিলো কিন্তু বুঝিয়েছি তো অনেক
ভাবেই তবে এগুলো বলে এখন কি লাভ বলো।
মিথিলা:অপূর্নতা দিয়ে ভালবাসা পেলেও তা পূর্নতা পায় না ইমরান।
তুমি জানতে আমি কথা বলতে পারতাম না।
আর আমার প্রিয় মানুষটাকে আমি কখনোই অপূর্ন দেখতে চাইনি।তাইতো এতো আড়ালে গিয়েছিলাম যে ভালবাসার ছায়াটাও যেন না স্পর্শ করতে পারে।
ইমরান:ভালবাসাটাই সবাইকে পূর্নতা এনে দেয় তাইতো এই অপূর্নতার সাথী হয়ে তোমাকেই চাই।