জানালার পাশে বসে আছি। প্রচন্ড গরম, এর ভিতরে য্যমে আটক যাত্রীর একজন আমি। বাসে জানালার পাশে বসার অনেক সুবিধা আছে। খোলা আকাশটা চোখের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। আর মানুষের ব্যস্ততা দেখে নিজের মতিষ্ককে ব্যস্ত রাখতে ভালোই লাগে। য্যমের কারণে একজায়গায় চল্লিশ মিনিট আটকে আছি। বাইরের ব্যস্ততা আর কি দেখবো এতো গরমে। আমি প্রায় গোসল করে ফেলেছি সমুদ্রের পানিতে, এমনভাবে ঘাম বেড়িয়ে ভিজে গেসে।
হঠ্যাৎ এক ধরনের উদ্ভট ভাবনা মাথায় উদ্ভব হলো। আচ্ছা যদি, যদি এখন আমায় জানালা দিয়ে কোন মেয়ে এসে দেখে বলে যে, তুমিই আমার স্বপ্নের সেই রাজকুমার। ধূর, রাজকুমার তো রুপকথায় থাকে। যদি এসে বলে তুমি আমার স্বপ্নের সেই পুরুষ যাকে আমি ভালোবেসে সব করতে পারি। আমি তখনি বলতাম, সব করতে পারবে যেহেতু তাহলে আমাকে এই য্যামের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে আমাকে এসির ভিতরে বাসায় পোছানোর ব্যবস্তা করো।
ভাবনার ইতি পরতেই দেখলাম রাস্তার বিপরীত থেকে একজন সুন্দরী রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়েটা রাস্তা পার হয়ে মনে হচ্ছে এই বাসের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু বাসে তো সিট নেই। এর ভীতর এই য্যামে এমন সুন্দরী দাড়িয়ে যাবে নাকি? মেয়েটা দেখছি আমার জানালার বাইরে এসে থামলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে একরাশ হাসি দিলো।
মেয়েটা আমাকে বললো,
– আপনি কোথায় যাচ্ছেন।
– উত্তরা। আপনি কে, চিনলাম না তো?
– আমি আপনাকে চিনি। আমাকে চিনবেন? তাহলে নেমে আসুন।
আর এই য্যামে বাসে কতক্ষণ বসে থাকবেন। আমার সাথে আসুন। আমি আমার গাড়ীতে করে পৌছে দিবো। মেয়ে বলে কি! গাড়ী? মেয়ের আবার গাড়ীও আছে! চিনা
পরিচয় নেই আর সে আমাকে গাড়ীতে করে পৌছে দিবে। আচ্ছা, এমনতো নয় এই মেয়েটা কোন ক্রাইমের সাথে জরিত। আমাকে ছিনতাই করে সব মেরে শেষে পালাবে। ছিনতাই করবে কি? মানিব্যাগে ২০০ টাকা আছে। তাহলে কি কিডন্যাপ? আমার বাবারতো এমন গাড়ী নেই যে আমাকে কিডন্যাপ করে মুক্তিপণ আদায় করতে পারবে। তবে ব্যপারটা আমার ভাবনার সাথে কিছুটা মিলে গেছে। কেমন আজগুবি লাগছে। আমার সিক্সথ সেন্স ভালোই।মেয়েটাকে দেখে মনে হয়না ক্রাইমের সাথে জরিত। চেহারা অনেক মায়াবী। রুপের যথেষ্ট বাহার। তাছাড়া এমন সুন্দরী মেয়ে ক্রাইম-টাইমের সাথে জরিত থাকবে বলে মনে হয় না। আবার হতেও পারে কারণ এই সময়কার মানুষজনকে আর বিশ্বাস করা যায়না। টিভির পর্দায় নিউজে দেখি কতো মেয়েই আজকাল খুনের দায়ে অপরাধী হচ্ছে। এই য্যামে বসে থেকে শরীর থেকে আর কতো নোনা পানি বের করবো। তার চেয়ে ভালো হবে মেয়ের সাথে যাই। যা হওয়ার হবে।মেয়ের আসল পরিচয় গাড়ীতে উঠার আগে জেনে নিবো।
আমার ভাবনা চিন্তার অন্তেই মেয়েটা বলে উঠলো,
– কি হলো?
– ঠিক আছে। তবে আপনার পরিচয়টা….
– আগে বাস থেকে নামুন।
বাস থেকে নেমে একপাশে দাড়ালাম। সুন্দরী মেয়েটাও
আমার পাশে এসে দাড়ালো। বললো,
– পাশেই একটা কফিসোপ আছে। সেখানে বসে আমরা ঠান্ড
হয়ে নিই। তারপর গাড়ীতে উঠবো
আমি সুযোগটা পেলাম। গাড়ীতে উঠার আগেই তার পরিচয় জানার
সুযোগ। তাই বললাম,
– সিউর! চলেন।
তারপর দুটো কোল্ড কফি নিলাম। স্ট্রো দিয়ে কফি টেনে
টেনে একটু পর থেমে বলছি,
– আপনার পরিচয়টা?
– আমার পরিচয়? আমার পরিচয় হলো, আমি প্রিয়া। পড়াশুনা করছি। থাকি
উত্তরা। আরো জানতে চান?
– আমাকে কি করে চিনেন?
– আপনাকেতো আমি অনেক আগেই জানি। আচ্ছা, তুমি করে
বলি। আপনিও তুমি করে বলেন প্লিজ…
– ঠিক আছে। বলো,
– তোমাকে আমি প্রায়ই স্বপ্নে দেখি। সেই পরিচিত একটা
স্বপ্ন। তাই মুখটা আমার চেনা হয়ে গেছে। তুমি আমার ক্রাশ।
তোমাকে আমি প্রায় স্বপ্নে দেখার পর চেহারাটা ভুলে যেতাম। কিন্তু আজ গাড়ীতে বসে তোমার দিকে দৃষ্টি পড়তেই মনে হলো এইতো সে ছেলে যে আমাকে স্বপ্নে নৌকায় নিয়ে ঘুরে। দুজন মিলে পানিতে পা ভিজাই। অবশ্য আমি কখনো নৌকাতে উঠিনি, সব স্বপ্মেই। তারপর তুমি আমাকে বাইকে করে শহরাটা ঘুরাও। আসলে সেই স্বপ্নের মানুষটা বাস্তবে থাকবে ভাবতে পারিনি তোমায় বাসে দেখেই বুঝতে পারলাম। এখন যেহেতু তোমায় বাস্তবে খুজে পেলাম তাহলে সহজে কি করে যেতে দিই। আচ্ছা, তোমার কি আমাকে দেখে মনে হয়েছে আমিও তোমার স্বপ্নে বা কল্পনাতে আসি।
– না, আমার এমন মনে হয়নি। কি আজব কথা বলছেন। আপনার একটা
স্বপ্নের দেখা মানুষটার সাথে আমি কি করে মিলে গেছি!
– আমিতো এর ব্যখা জানি না।
কফি শেষ। মেয়েটাই বিল পে করলো। অবশ্য আমি পে করতে চেয়েছিলাম। তবুও সে যেতেহু এতো পীড়াপীড়ি করলো। আমার মানিব্যগেও টাকা ছিলো মাত্র ২০০।
তারপর তার গাড়ীর সামনে গেলাম। গাড়ীটা বেশ চকচক করছে। নতুন কিনেছে বোধ হয়। মেয়েটা পিছন সিটের দড়জাটা খুলে বললো, “Enter” এসি চালু করা। তাহলে কল্পনা সত্যিই হলো, এসির নিচে করেই বাসা পর্যন্ত পৌছে যাবো।
মেয়েটা আমার গা ঘেষে এসে বললো,
– আচ্ছা তুমিতো অবিবাহিত। তোমার গার্লফ্রেন্ডও নেই খুব
সম্ভবত।
– অবিবাহিত তবে গার্লফ্রেন্ড আছে।
– না নেই, আমি জানি। আর শোন আমাকে বিয়ে করবে? আমি
আমার স্বপ্নের মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই।
– না, বললাম তো আমার আছে।
মেয়েটার বোধ হয় মানসিক সমস্যা আছে। কেমন উন্মাদ।
বললাম আমার গার্লফ্রেন্ড আছে তাও মুখের কথা বিশ্বাস করলো না। আবার কি সব বলছে, আমি তার স্বপ্নের জগতের সাথী। নিশ্চিত তার মাথায় গল্ডগল। তাছারা স্বপ্নে দেখা বাস্তবের এক ছেলেকে বিয়ের অফার করেছে, যাকে সে ভালো করে জানেও না। আমি চুপ করে রইলাম আর সে বাচালের পরিচয় দিয়ে বকবক করেই যাচ্ছে। মেয়েটাকে উন্মাদ মনে হয় না কিন্তু যখনই স্বপ্নের কথা বলে তখনই উন্মাদ মনে হয়। মেয়েটা আমার বাসা পর্যন্ত আসলো। আমি অনেক নিশেধ করা সত্বেও।
সেদিন রাতেই একটা কল আসলো। কলটা রিসিভ করতেই আমার ফোনের বিপরীতে একটা মেয়েলী কন্ঠের ধ্বনিটা কানে এসে পড়লো।
– হ্যলো!
– হ্যলো কে?
– আমি প্রিয়া।
– কোন প্রিয়া?
– আরে ঐ যে আজ তোমাকে গাড়ী করে দিয়ে আসলাম।
– তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথা থেকে?
– তোমার ফোন পকেট থেকে সীটে পড়েছিলো তখনই
নাম্বারটা সংগ্রহ করে আবার সীটে রেখে দিই।
– তুমিতো বেশ বুদ্ধিমতি?
– হুঁ, শোন কাল আবার গাড়ী নিয়ে সকাল ১০ টায় তোমার বাসার
নিচে থাকবো। কাল আমরা নদীর পারে যাবো। আর তোমার
সাথে নদীতে ঘুরবো।
– sorry! আমার সময় নেই।
– আমি ওঁতো বুঝি না থাকবোতো থাকবোই।
বলে লাইনটা কেটে যাওয়ার “টুট”টুট”টুট” শব্দ পেতেই আমিও
ফোনটা রেখে দিলাম।
সত্যি সত্যিই দেখছি সকাল ১০ টায় আমার বাসার নিচে চকচকে গাড়ীটা হাজির হয়ে একের পর এক হর্ণ বাজাচ্ছে। বারান্দায় এসে নিচে তাকে ইসারা দিয়ে বললাম আসছি। তারপর হলুদ টি-শার্টটা পড়ে বের হলাম। হলুদ রঙটাই আমার প্রিয়। নৌকা ভাড়া করলো ২ ঘন্টার আমাদের নদীতে ঘুরাবে। তা সেই মেয়ে নৌকায় পা দিতে দিতেই যেন স্বপ্নের দেশে এসে পড়েছে এমন আচরণ করছে। আমায় বললো, আমার হাতটা ধরবে। আমি বললাম, পারবো না এমন রাগী চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে টুপ করেই আমার হাতটা তার মুঠোতে পুষে নিল। আমার নিজেকে কেমন অসম্পূর্ণ লাগছে। তবুও পরিস্থিতি মানিয়ে নিলাম।
আমাকে আবর গাড়ী করে বাসায় নামিয়ে দিয়ে এলো। আবার এর পরের দিন আমায় বাধ্য করে বাসা থেকে বের করলো। আজ নাকি আমার সাথে রিক্সায় ঘুরবে। মেয়েটা হলুদ শাড়ী পড়ে আসলো। হয়তো সে স্বপ্নে দেখেছে আমার প্রিয় রং হলুদ। রিক্সা এসে কোন এক মার্কেটরর সামনে থামলো। নেমে আজ ভাড়াটা আমিই দিলাম। কারণ রিক্সা থেকে নেমেই সে তার শাড়ীর আচল নিয়ে নিয়ে বাতাসে উড়ানের চেষ্টা করছে। একবার আচল হাত দিয়ে এপাশ নিচ্ছে আরেকবার তার বিপরীত।
আমাকে নিয়ে মার্কেটের ভীতর ঢুকলো। ঢুকেই দেখি এটা বাইকের সো-রুম। বইকের দাম কষাকষি করছে। আমি বললাম, বাইক কার জন্য?
– তোমার জন্য।
– কি! আমি আসি, বায়…
অনেক বিভ্রান্ত হলাম। আমাকে পিছন থেকে হাতটা ধরলো। শক্ত করে ধরে আছে। মানুষের জন্য কিছু বলতে পারছিনা। তাকে বাইকে করে ঘুরিয়ে বাসায় দিয়ে আসতে বাধ্য হলাম। সে মনে হয় স্বপ্নে জেনেছে আমি বাইক চালাতে পারি। বাইকটা তার বাসায় পার্ক দিয়ে দিয়ে আসতে চাইলাম। সে বললো, তুমি বাইকটা রাখো। আমায় নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরবে। আমি বললাম, যদি অন্য কাউকে নিয়ে ঘুরি।
সে একটু বিরক্তি হয়েই বললো, ঘুরো, সমস্যা নাই।
তারপর বাইক নিয়ে সোজা তোমার কাছে আসলাম। চলো,
বাইকের পিছনে উঠো। এই তুমি কি করে ভাবলে ঐ মেয়ের কিনে দেয়া বাইকে আমি উঠবো। তুমি এতোদিন ওঁর সাথে ঘুরসো। যাও না এখন ওঁর সাথেই ঘুরে বেড়াও।
শোভা অনেক কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পারছি। কিন্তু আমিও নিরুপায়।
শোভা বললো,
– এই তুমি ওঁকে বলো নাই তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?
– বলেছিতো। দেখো না কেমন উন্মাদ, বিশ্বাসই করে না আমার
গার্লফ্রেন্ড আছে। সে নাকি স্বপ্নে দেখেছে আমার গার্লফ্রেন্ড নেই। আমিই তার বয়ফ্রেন্ড। শোভাকে অনেক পীড়াপীড়িতে বাইকে উঠালাম। বাইকটা গিয়ে থামালাম সেই মেয়ের বাসার সামনে তারপর মেয়েকে ফোন দিয়ে নিচে নামালাম।
মেয়েটা বললো,
– কি ব্যাপার? আর এই মেয়ে কে?
– বলেছিলাম না আমার গার্লফ্রেন্ড। এই নাও তোমার বাইকের চাবি।
শোভার হাত ধরে চলে আসলাম। মেয়েটা বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে ঠিক ওখানে দাড়িয়েই আমাদের চলে যাওয়া দেখছে।শোভা বলে উঠলো, মেয়েটাকে কষ্ট দিলা কেন? তুমি তার সাথে থাকতে।
শোন মেয়ের বাবার সাথে কথা বলেছি উঁনি বলেছেন, তার মেয়ের মানসিক সমস্যা আছে, এর আগেও অনেক ছেলের সাথে এমন করেছে। তার বাবা তার চিকিৎসা করছে। আমি ছাড়া অনেক ছেলে তার থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর আমিতো অনেক ছেলেদের একজন নই। আমার একজন গার্লফ্রেন্ড ও আছে। আর সে তুমি।