অপরাধী

অপরাধী

– আজ অনেকদিন পর বাড়িতে যাচ্ছি। শেষ কবে বাড়িতে গিয়েছি তা প্রায় ভুলতে বসলাম। ভাগ্যিস রহিম চাচার মেয়ের বিয়ে। নয়তো তো বাড়িতে যাওয়াও হতো না। আমার বাবারা ৩ ভাই। তার মধ্যে আমার বাবা সবার বড়। আমাদের বাড়ির কর্তা বলতে গেলে বাবাই। ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়া মানে দীর্ঘ ৩ ঘন্টার বাস জার্নি। এমনিতে আমার বাসে যাতায়াত খারাপ লাগে না। কিন্তু আজ কেমন জানি শরীরটা গুলাচ্ছে। অবশ্য সকালে পরোটা খেয়েছিলাম তারি রিকেশন কিনা কে জানে। হতেও পারে। আমার পেট আবার খুব সেনসেটিভ অল্পতেই রেগে যায়। এমনিতে আমার সাথে রাগ করলেও আমার শরীরের অন্যান্য অর্গানের সাথে সে খুব মাই ডিয়ার টাইপ। কেননা দেখা গেছে পেট আমার উপর রাগ করলে ধীরে ধীরে অন্যান্য অর্গানও রাগতে শুরু করে। এটাকে আবার পেট খারাপ ভেবে ভুল করবেন না। আমার এসিডিটির সমস্যা আছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হলো। এখনো বাসের জানালায় বৃষ্টিকণা লেগে আছে। এখন আবার প্রচন্ড রোদ উঠেছে। প্রকৃতি বড়ই রহস্যময় হয়ে গেছে। কখনো রোদ আবার কখনো বৃষ্টি। ফোনটা হঠাৎ করেই শব্দ করতে শুরু করল। শরীরটায় কেমন যেন আলসেমি ভর করেছে। পকেট থেকে ফোনটাও বের করতে ইচ্ছে করছে না। তবুও কষ্ট করে বের করলাম। ফোনটা বের করে দেখলাম নীলা কল করেছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম নামটার দিকে। ঘোরলাগা চোখে।

– হ্যালো শান্ত! কেমন আছো তুমি?
– হ্যাঁ আমি ভালোই তুমি?
– আমি ভালো নেই!
– কেন?
– ওমা! তোমাকে এতগুলো দিন না দেখে থাকতে হবে।
– এতগুলো দিন কই? মাত্র ৭ টা দিনেরি তো ব্যাপার।

অনু কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ কানে ভেসে আছে। মেয়েটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে আমিও মেয়েটাকে ঠিক একি রকম ভালোবাসি। মেয়েটার সাথে সাক্ষাৎ টা বলতে গেলে একেবারে নাটকীয় ছিল। সেদিনের কথা আমার মাঝে মাঝেই মনে পড়ে। সেদিনো আজকের মতোই বৃষ্টি ছিল। আকাশটা ছিল ঘন কালো। থাক, অই দিনের কথাটা নাহয় আরেকদিন বললাম। আমি ফোনটা রেখে দেই। বাইরে আবার বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। এখন দিনের অবস্থা এমন হয়েছে যে কখন বৃষ্টি হবে আর কখন রোদ উঠবে তা আগে থেকে কিছুই বলা যায় না। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। জানালাটা কিছুটা খোলা রেখেছি সেই খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট আমার চোখ মুখ ভিজিয়ে দিচ্ছে। জানালাটা বন্ধ করে দিলাম নয়তো ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

– আমি ময়মনসিংহ সদরে এসে নামলাম। আশপাশটা অন্ধকার হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি পড়ার কারণে চারদিকে এক ধরণের স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। এখন রাত ৮ টা বাজে। খেয়াল করলাম রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে। এইখান থেকে একটা রিকশা নিলে সরাসরি বাড়িতে চলে যাওয়া যায় কিন্তু কেন জানি রিকশা নিতে মন চায়ছে না। তার চেয়ে বরং হাঁটতে থাকি। আমি হাটতে শুরু করলাম। আশেপাশে বেশ কোলাহল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন দোকান। এগুলোর মাঝে কাপড় আর খাবারের দোকানের সংখ্যায় বেশি। আবিষ্কার করলাম হাঁটতে খারাপ লাগছে না বরং বেশ ভালোই লাগছে। নিজেকে নতুন ভাবে চিনতে পারছি।

ঘন্টাখানিক হাটলাম। এরি মাঝে মা কয়েকবার কল করেছে। তাই আর বেশি দেরি করলাম না। একটা রিকশা নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম

– বাড়িতে বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। বেশ কিছু নিকট আত্বীয় ইতিমধ্যে এসেও পড়েছে। বাচ্চারা দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। চেঁচামেচি কোলাহল। বিয়ে বাড়ি যেমন হয় আর কি। বাইরে লাইটিং এর ব্যবস্থাও হয়েছে। কাল দিন পর গায়ে হলুদ। তারি আয়োজন হচ্ছে তুমুলভাবে। বাড়ির সামনেই মার সাথে দেখা। আমি অনেকদিন পর পর বাড়িতে আসি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে দেখে সবাই বেশ খাতির করে। বিশেষ করে আমার মা। খেয়াল করলাম তার চোখ ছলছল করছে। অনেকদিন পর দেখছে আমায়। আমি একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করি। ঈদ কিংবা পহেলা বৈশাখ ছাড়া বাড়িতে খুব একটা আসা হয় না। ফারিয়ার বিয়ে বলে ৫ দিনের ছুটি নিয়েছি। মা আমাকে সাথে করে নিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। আমাকে খাবার দিয়ে গভীর আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে রইল

– কিরে, তুই দিন দিন শুকাচ্ছিস কেন? ঢাকায় কি ঠিক মতো খাস না নাকি?

– কই শুকাচ্ছি মা?

– কই মানে। দেখ চোখগুলো দেখ কেমন ডেবে গেছে। চোখের নিচে আবার কালচে দাগও পড়েছে। ওইখানে কি ঘুমুচ না নাকি?

– কই ঘুমাই তো!

– নিজের খেয়াল যে কবে রাখতে শিখবি। মা একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আর আমি খেয়েই যাচ্ছি। কত দিন ধরে মায়ের হাতের রান্না খায় না।

– অনুকে কল করলাম অনেক রাত পরে। ফোনটায় চার্জ ছিল না। ফোনটা চার্জে দিয়ে বাইরে গিয়েছিলাম এসে দেখি অনু ১০টার মতো কল করেছে। ফোনটা অফ করে গেলেই হতো। নির্ঘাত মেয়েটা রাগ করে বসে আছে। না ভুল হয়েছে। মেয়েটাকে আগেই ফোন করে বলে দেয়া উচিত ছিল ফোনে চার্জ নেই।

ফোন রিং হচ্ছে অনু কল ধরছে না। যা ভেবেছিলাম হয়তো রাগ করে বসে আছে। ৩ বারের মাথায় কল ধরল।

– কি জন্যে কল করেছো আমাকে?

লক্ষ্য করলাম অনুর গলাটা কেমন ভারী ভারী লাগছে। তার মানে কি মেয়েটা কান্না কাটি করেছে। এত অল্পতে কান্না করার কি আছে। আমি কিছুটা হাসলাম মেয়েটার পাগলামি দেখে।

– তোমাকে কি জন্যে কল করি আমি?

– তোমাকে আমায় কল করতে হবে না। তুমি বিয়ে বাড়িতে গিয়েছো। আনন্দ কর। আমার কথা তোমার ভাবতে হবে না।

– রাগ করলে?

– আমি রাগলেই কি? আর না রাগলেই কি?

মেয়েটাকে আমি সত্যিই অনেক পছন্দ করি। এরকম একটা মেয়ের যোগ্যতা কি আমার আছে। এত ভালোবাসার সত্যিই কি আমি যোগ্য। যখন কেও কাউকে খুব ভালোবাসে তখন সেই ভালোবাসার মানুষটার জন্য দায়িত্বও অনেক বেড়ে যায়।

– আজ ফারিয়ার বিয়ে। সকাল থেকেই দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু হয়ে গেছে। উচ্চশব্দে গান বাজছে। সবাই নাচানাচি করছে। আমি একটু দূরে বসে আছি। কোলাহল আমার সবসময় খারাপ লাগে। চেষ্টা করি সবসময় কোলাহল থেকে বেঁচে থাকতে। রহিম চাচার হার্টের প্রবলেম। বেশি দৌঁড়াদৌঁড়ি করা তার জন্য নিষেধ তবুও তিনি বেশ দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। একটি মাত্র মেয়ের বিয়ে। দেখলাম বাবা তাকে নিষেধ করছেন কিন্তু কে শুনছে কার কথা। দুপুরে খাওয়ানোর জন্য তুমুলভাবে রান্না বান্না চলছে। বাবা, আর রহিম চাচা তদারকি করছে।

– দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই রহিম চাচার শরীর খারাপ হতে থাকে। বাবা চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।

– আমি বলেছিলাম তোকে এই শরীরে দৌঁড়াদৌঁড়ি করিস না! কে শুনে কার কথা।

মা গিয়ে বাবা কে ঠান্ডা করলো। আমি ভেবেছিলাম হয়তো অত্যাধিক দৌঁড়াদৌঁড়ির কারণে হাঁফিয়ে গিয়েছে। ঘরে শুয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেখা গেলো যা ভাবা হয়েছিলো চাচার অবস্থা তার চেয়েও অনেক খারাপ। শরীর প্রচন্ড রকম ভাবে ঘামছে। চাচি মাথায় পানি ঢালছে। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। খেয়াল করলাম চাচার বুক উপরে উঠে থেমে যাচ্ছে। খুব সম্ভবতো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বারবার শ্বাস ফুলে যাচ্ছে।

– রহিম চাচা ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগে ভর্তি। ডাক্তার বলেছে অত্যাধিক উত্তেজনার কারণে হার্ট এট্যাক হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কনা জনক। কিছুই বলা যাচ্ছে না। খবরটা পেয়ে বাড়ির সবাই কেমন যেন ভেঙে পড়ল। সবার চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। বাবা আর মেজো কাকা দূরে চুপটি করে বসে আছে। চাচি আর ফারিয়া কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। মা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু খুব একটা লাভ হচ্ছে না।সবার চোখেই শোকের ছায়া নেমে আসলো।

– রহিম চাচা মারা গেল সকাল ৬ টার দিকে। সবকিছু কেমন যেন উলটপালট হয়ে গেল। এদিকে যার সাথে ফারিয়ার বিয়ে হবার কথা ছিল তাদের বাড়ি থেকে খবর আসলো যে ফারিয়া নাকি অপয়া, অলক্ষী কেননা তার বিয়েতে তার বাবা মারা গেছে। তাই তারা ফারিয়ার সাথে তার ছেলের বিয়ে দিবে না। আমি কথাটা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। এই সময়েই এসে যে কেও একধরণের কথা বার্তায় বিশ্বাস করতে পারে তা আমার জানা ছিল না। একটা মানুষ কতটা নিচু হলে তার মাথায় এধরণের ধারণা আসতে পারে? মানুষগুলিএ প্রতি আমার ঘৃণা হতে থাকে।

চাচাকে কবর দেয়া হলো ৩ টায়। ফারিয়ার বিয়েতে তার বাবা মারা যাওয়ায় ফারিয়া যেন নিজেকে সত্যি সত্যি অলক্ষী ভাবছে। সকাল থেকে কিছুই খায়নি। মা জোর করেও কিছুই খাওয়াতে পারছে না। মেয়েটার জন্য আমার খারাপ লাগতে থাকে। এতটুকু একটা মেয়ে কিন্তু কি নিদারুণ মানসিক কষ্টের ভেতর দিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে। বাড়ির মাঝে একধরণের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুঝায় যাচ্ছে এই শোকের ছায়া বেশ কিছুদিন স্থায়ী হবে।

– আজ চাচার কুলখানি। বাড়ির সবাই অনেক ব্যস্ত। অনেক লোক আসছে। এতিমখানা থেকে ছাত্রদের খবর দেয়া হয়েছে। তারাও চলে এসেছে। মসজিদের ইমাম সাহেব বড় করে একটা মোনাজাত করলো। আমি সবার খাবার তদারকি করছি। রান্না করতে গিয়ে বারবার চাচির চোখ ভিজে যাচ্ছে। মা তাকে ধরে নিয়ে ঘরে শুয়িয়ে দিলো।

– অনেকদিন অনুর সাথে কথা হয় না। ভেবেছিলাম অনু খুব রাগ করবে। দেখা গেলো ভাবনাটা ভুল ছিল। অনু সবটা শুনে মোটেও রাগ করে নাই। বরং আমাকে সান্তনা দেয়া শুরু করলো। মেয়েটার প্রতি আমার ভালোবাসা যেন আরো কয়েকগুন বেড়ে গ্
গেল।

– বাড়ির সবার মাঝেই কেমন যেন একটা চুপচাপ অবস্থা বিরাজ করছে। কেও কারো সাথে তেমন কথা বলছে না। সবচেয়ে চুপচাপ হয়ে গেল ফারিয়া। সে যেন নিজেকেই এর জন্য দায়ী মনে করছে। এলাকা জোরে নানা রকম কথা উঠছে।একদিন বাবা আমাকে তার ঘরে ডাকলো। আমি বাবাকে যেমন সম্মান করি তেমনি ভয় পাই। বাবার কোনো কথার বাইরে কখনো যাইনি। আমি বাবার ঘরে গিয়ে বসলাম। বাবা বিছানায় শুয়ে ছিল। আমাকে দেখে উঠে বসলো। অনেকক্ষণ কেও কোনো কথা বললো না। ঘরময় এক অদ্ভুত নিরবতা ছেয়ে আছে। কেও কারো দিকে তাকাচ্ছে না। হয়তো কি বলবে তা মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছে।
তারপর হঠাৎ বলতে শুরু করলো
– শুন, তোর সাথে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
– হুম বলো

বাবা কথাটা বলতে কিছুটা সময় নিচ্ছে। কিছু সময় পর…,
– আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ফারিয়াকে তুই বিয়ে করবি।

কথাটা শুনে আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। বাবা এসব কি বলছে? আমি? আমি তো অন্য একজন কে ভালোবাসি। একজনকে ভালোবেসে অন্য একজন কে কিভাবে বিয়ে করা যায়?
– কিন্তু বাবা….
– কোনো কিন্তু নেই। আমার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। আমার কথা তোর শুনতে হবে
-কিন্তু বাবা! আমি……
– কি আমি?

আমি চুপ করে রইলাম। আর কিছুই বলতে পারলাম না বাবাকে। মুখ দিয়ে যেন কোন কথায় বেরোচ্ছে না। বাবা এটা কিভাবে করতে পারল?নিজের মতামত আরেকজনের উপর এভাবে কি সত্যিই চাপিয়ে দেয়া যায়? এমন না যে ফারিয়ার জন্য আমার মন খারাপ করছে না। তার জন্য আমার অনেক খারাপ লাগছে। কিন্তু তাই বলে কি? আমি তো একজনকে ভালবাসি. তার সাথে ঘর করার স্বপ্ন দেখি।একজনের সুখের জন্য আরেকজনকে কষ্ট দেয়া কি ঠিক? যদি এই কাজটি করি আমি আমি কি কখনো নিজেকে মাফ করতে পারব। না মাথায় কিছুই আসছে না। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মাথায় এক ধরণের ভোঁতা যন্ত্রনা হচ্ছে।

আমি একা একা ছাদে বসে আছি কিছুই ভালো লাগছে না। মায়ের সাথে বাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে একবার আলাপ করেছিলাম। বুঝলাম মা ও বাবার পক্ষে। বাবার পক্ষে থাকাটাই স্বাভাবিক। আজ আকাশটা মেঘলা। কিছুক্ষণ পর হয়তো বৃষ্টি আসবে। কেমন ঠান্ডা হাওয়া বইছে। দূরে কোথাও হয়তো বৃষ্টি হচ্ছে। আমি একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।

– কি করছো?
আমি বেশ চমকে গেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি ফারিয়া দাঁড়িয়ে।

– কিছু না এমনি দাঁড়িয়ে আছি। তুমি এখানে কি করছো?
– কিছু না খুব একা একা লাগছিলো তাই ভাবলাম ছাদে গিয়ে একটু দাঁড়াই। এসে দেখি তুমি একা একা দাঁড়িয়ে আছো। আচ্ছা একটা কথা বলবো?
– হুম বলো
– তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছো?

আমি কিছু বললাম না। চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার চোখ দুটো ছলছল করছে। ভাগ্যিস আশপাশটা অন্ধকার। নয়তো মেয়েটা চোখের জলটুকু দেখে ফেলতো। আমার অনুর জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটা আমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছিল। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কেও কাউকে ছেড়ে যাব না কিন্তু আজ কিনা আমাকেই প্রতিজ্ঞাটা ভাঙতে হলো। কেন? আমিই কেন?

– তুমি যদি বিয়ে করতে রাজি না হও তাহলে আমি কিছুই মনে করবো না। আমি কারো দয়ায় বাঁচতে চাই না। কেও আমাকে দয়া করে বিয়ে করেছে এটা আমি কখনো মেনে নিতে পারবো না।

ফারিয়া কথাগুলো বলে চলে গেল। আজ নিজেকে খুব একা একা লাগছে। আমার বাবাও হার্টের রোগী। রহিম চাচা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমি চায় না বাবাও ছেড়ে চলে যাক। আমি যদি ফারিয়াকে বিয়ে করতে রাজি না হই বাবার ওপর দিয়ে কি ধরণের ঝড় যাবে আমি বুঝতে পারছি। আজ আমি এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি যেখানে হয়তো আমাকে আমার ভালোবাসাকে বেছে নিতে হবে নতুবা আমার পরিবারকে। কাকে বেছে নিবো আমি? তাকে যে আমাকে তার নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে! না তাদেরকে যারা ছোটবেলা থেকে আমাকে আগলে রেখেছে। আমাকে এত কষ্ট করে বড়ো করেছে।

– আমি আমার পরিবারকেই বেছে নিলাম। নিজের ভালোবাসার জন্য এতো গুলো জীবনকে আমি নষ্ট করতে পারি না। ফারিয়ার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে গেল। আজও আকাশটা মেঘলা। যেন খুব করে বৃষ্টি হবে। কি শীতল বাতাস। আমার হৃদয়টার মতই শীতল। আজ কেন জানি খুব করে অনুর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা কি করছে কে জানে। আজ চোখ গুলো যেন কোনো বাধায় মানছে না। বাধ ভেঙে জল আসতে চাইছে। নিজেকে সামলাতে পারছি না যেন। নিজেকে কেন জানি খুব খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। কি দোষ করেছিলো মেয়েটা? কেন পরিস্থিতি আজ আমাকে এমন একটা জায়গায় দাঁড় করালো? আমিই বা কি দোষ করেছিলাম? কেমন জানি খালি খালি লাগছে।
বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। হোক খুব বৃষ্টি হোক। সব ভাসিয়ে নিয়ে যাক।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত