শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে যেটা প্রথমে দরকার সেটা হল চা । চা ছাড়া আমার ঘূমটা যেন ভাঙতেই চায় না ।কিন্তু এক কাপ চায়ের জন্য দিনটা যে এতটা রোমান্টিক হবে তা ভাবতেই পারিনী ।
-বউ বউ বউ
কি হয়েছে এমন ষাঁড়ের মত চেঁচাচ্ছো কেন
-আমার চা কোথায় ।এখন পর্যন্ত চা পেলাম না কেন
আজকে একটু স্পেশাল চা বানাচ্ছি ।একটু দেরি তো হবেই
-হ একটু মায়া মহব্বত দিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে এসো
অতঃপর বউ চা নিয়ে এল ।কিন্তু একি চায়ের রং এমন সাদা কেন । ভেবেছিলাম চা এ দুধের পরিমান বেশি হয়েছে । চায়ের কাচে চুমুক দিতেই
-একি চা না দিয়ে গরম জল দিলে কেন ।তাও আবার লবন দিয়ে ।ওয়াক থু……
নবাব সাহেব ঘরে চা চিনি কিছুই নেই ।
-থাক তাহলে আর চা খেয়ে কাজ নেই
কাজ নেই মানে কি ।যাও চা চিনি কিনে নিয়ে এসো
-আজকে থাক না । একদিন না খেলে কি হয় ।এই শীতের মধ্যে বাইরে যাব কিভাবে
তুই যাবি নাকি অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে
-যাচ্ছি যাচ্ছি
বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তা দিয়ে মোড়ের দোকানে যাচ্ছি ।ভাবছি বিয়েটা না করলে এই শীতের মধ্যে বাইরে যেতে হতো না ।ধুররর জীবনটা একেবারে তেজপাতা হয়ে গেছে । অতঃপর দোকানে এলাম
-মামা এক পাতা চা দেন তো
কি ব্যপার মিঞা ।এত সকালে চা কিনতে । তোমা তো মিঞা বেলা ১০টা না হলে দেখাই যায় না
-এটা আমার ভাগ্য । তাড়াতাড়ি চা দেন নিয়ে বাসায় যায় ।শীতে একেবারে বরফ হয়ে গেলাম ।
চা নিয়ে বাসায় ফিরে কলিং বেল চাপতেই বউ দরজা খুলে দিল ।
-এই নাও চা
চিনি কোথায়
-চিনিও আনতে হবে
-না মহারাজ আপনার জন্য লবন চায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।যাও তাড়াতাডি চিনি নিয়ে এসো
-এই শীতের মধ্যে আবার যেতে হবে ।না গেলে হয় না
চিনি না আনলে বাসায় ঢুকতে দিব না ।
সাথে সাথে দরজা বন্ধ হয়ে গেল ।অসহায় ছেলের মতো আবার গেলাম চিনি আনতে ।
কি মিঞা একবারই দেখা যায় না আর আজকে বারবার দেখা যাচ্ছে যে
-এইটা আমার কপাল ।বউয়ের জ্বালায় জীবন টা পুরাই তামা তামা হয়ে যাচ্ছে
কেন ,কি হয়ছে
-এত জেনে আপনার কি ।তাড়াতাড়ি চিনি দেন বাসায় যায় ।
এইবার একসাথে চা চিনি নিয়ে বাসায় যাচ্ছি । কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে গেল
-এই নাও তোমার চা আর চিনি
এগুলে রেখে ভিতরে গিয়ে একটু বসো আমি চা করে নিয়ে আসছি ।
কম্বলের নিচে গিয়ে শুয় পড়লাম ।আহ্ এখন একটু শান্তি লাগছে । হঠাত্ নিচে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হলো । নিচে গিয়ে দেখি বউ রান্নাঘরে পড়ে গেছে । তাড়াতাড়ি গিয়ে কোলে নিয়ে সোফাতে বসিয়ে মুখের উপর একটু জল ছিটিয়ে দিলাম ।ঠান্ডা জল ,তাই একবারেই কাজ হয়ে গেল ।বউয়ের জ্ঞান ফিরে এল ।
-তোমার কি হয়েছিল ।পড়ে গেলে কিভাবে ।
জানি না ।একটু বমি বমি লাগলো আর মাথা ঘুরে পরে গেলাম
ব্যপার সাংঘাতিক তাই উপর তলার ডাক্তারকে ডেকে আনলাম ।ডাক্তার বউকে দেখে যা বলল তাতে আমার লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছা করছিলো । কিন্তু প্যান্ট পড়ে থাকায় লুঙ্গি ডান্স দিতে পারলাম না । কারন আমি বাবা হতে যাচ্ছিলাম ।ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে বউয়ের কাছে এলাম ।
ডাক্তার কি বলল ।কী হয়েছে আমার
-তেমন কিছু না ।
তাহলে আমি গিয়ে চা করে নিয়ে আসি
-চুপচাপ শুয়ে থাকো ।একটা খুশির সংবাদ আছে
কি খূশির সংবাদ
-আরে তুমি মা হতে চলেছো
যাহ দুষ্টু ।আমার লজ্জা লাগে না বুঝি।
বউ লজ্জায় একেবারে লজ্জাবতী হয়ে গেছে ।অতঃপর আমি বউকে রেখে চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম । আজকের চায়ে একটু ভালবাসা মিশিয়ে দিয়েছি বলেই চায়ের খুব স্বাদ হয়েছে । এক কাপ চা খেয়ে নিলাম আর বাকি চা ২ কাপে ঢেলে নিয়ে বউয়ের কাছে গেলাম । একটা কাপ বউকে দিলাম আর ১টা কাপ ইচ্ছা করেই হাত থেকে ফেলে দিলাম । এমন ভাব করলাম যেন হাত ফসকে পড়ে গিয়েছে ।
-এই রে চা টা পড়ে গেল যে ।যাই আবার চা করে নিয়ে আসি
যেতে হবে না
-চা না খেলে আমার ঘুম ঘুম ভাব কাটে না ।তুমি শুয়ে থাকো আমি যায়
আরে আমার পাগল জামাই এই এক কাপ চা দুজনে ভাগাভাগি করে খাব
তারপর চা ভাগ করে খেলাম আর আমাদের সন্তানের নাম ঠিক করতে লাগলাম
…………………………………………………..সমাপ্ত…………………………………………….