শীতের সকালে

শীতের সকালে

শীতের সকালের বৃষ্টি মানে আরো ১ ঘন্টা বেশি ঘুমানোর সুযোগ পাওয়া। আমিও এর বিপরীত নই তাই ৯ টা বাজে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘড়ি দেখে ঘুম দিলাম। তখনই অনুভব করলাম আমি নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। তাই চোখ খুলে তাকাতেই দেখি তুহিন আমার নাক চেপে ধরছে। আমি কোন রকমে তুহিনের হাতটা সরিয়ে শ্বাস নিতে লাগলাম। এমন বেয়াদব বন্ধু যেন কোন শত্রুরও না থাকে। আর তুহিনের পাশে নিত্তিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমরা এই তিনজনে মিলে একটা গ্রুপ। আমি রাগ দেখিয়ে জানতে চাইলাম…
— ওই তুহিন তুই আমার নাক চেপে ধরলি কেন?
— কেন তুই জানিস না কারো ঘুম ভাঙ্গানোর ঔষুধ হলো তার নাক চেপে ধরে এক থেকে পাঁচ গুণে দেখো। তাহলেই তার ঘুম ভেঙ্গে যাবে।
— তাই বলে আমার সাথে এমন করবি? যদি বাচ্চাটার কিছু হয়ে যেতো।
— ওরে বাবা এখানে বাচ্চা কে?
— কেন আমি?
— তুই বাচ্চা। তোরে বাচ্চা বললে তো সমগ্র শিশুকূলকে অপমান করা হবে।
— হুহহ আমি বাচ্চাই।
— হইছে এবার বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে যা। (নিত্তিয়া বলল)
— কেন? এত্তো সকালে আবার কোথায় যাবো?
— তোরে মারতে নিয়ে যাবো। এবার যা তো।
— আচ্ছা যাচ্ছি।তোরা ১০ মিনিট ওয়েট কর আর আমি ১ ঘন্টায় রেডি হয়ে আসছি।
— যা তারাতারি।

দুইটা পেইনের কারনে আর আরামের ঘুমটা ঘুমানো হয় নি। কিন্তু এই গুলো আজ যাবে কোথায়? সাথে করে তো ভার্সিটির ব্যাগ নিয়ে আসছে।কিন্তু আমি শিউর যে ওদের ব্যাগে বই নেই। কারন, ওরা আজও এত্তো ভাল হয় নি যে ব্যাগে এতো বই নিয়ে ভার্সিটি যাবে। তবে হয়ত তুহিন নয়ত নিত্তিয়ার কোন রিলেটিভের বাসায় বেড়াতে যাবে। যদি তাই হয় তাহলে তো একটু স্মার্ট ভাবেই ভাব নিতে হবে। তাই ভেবে আমিও বাথরুমে ১ ঘন্টা লাগিয়ে দিলাম আর দুইটা বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানো শুরু করছে। আমি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই নিত্তিয়া বলল….
— কিরে তুই ফ্রেশ হচ্ছিলি নাকি মুখে ফেশিয়াল করছিলি যে এতো সময় লাগে?
— আয় হায় সবই কে নিজের মত ভাবিস কেন নিত্তিয়া? এখন যদি একটু স্টাইল নিয়ে রাস্তায় না বের হই তাহলে দুই চারটার বাবা হলে কি স্টাইল করবো?
— মারো মারো যত খুশি স্টাইল মারো। গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পর সব হাওয়া বের হয়ে যাবে।( তুহিন বলল)
— মানে আমরা কোথায় যাচ্ছি?( কৌতুহলি হয়ে আমি প্রশ্ন করলাম)
— এখন যা তো ব্যাগ ঘুছিয়ে নে। গেলেই বুঝতে পারবি।
— ভাই আর যা হোক কোন ভূতুরে বাড়িতে নিয়ে যাইস না। আমি তাহলে পটল তুলবো।
— ভাই তুই কেন যে আমার মনের কথা বুঝে ফেলিস তাই তো রাজ তোরে এত্তো ভাল লাগে।( তুহিন হাঁসতে হাঁসতে বলল)
— মানে কি? আমরা কি ভূতুরে বাসায় যাচ্ছি?
— আরে না না। তুই তারাতারি রেডি হয়ে নে তো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হতে লাগলাম। যদিও ওই হারামী গুলো আমায় এমন বাসায় নিয়ে যায় তাই আমার ব্যাগে ৫টা দিয়াশলাই আর ৫টা মোমবাতি নিয়ে নিলাম। ওই দুইটার তো একটার ও ভূতের ভয় নেই কিন্তু আমি অনেক ভয় পাই ভূত কে?
আমার ব্যাগ ঘুছানো শেষে আমাদের এখানের সবাই সকালের নাস্তা করে বেড়িয়ে পড়লাম।

তুহিন নিজের বাইক নিয়ে আসছে তাই আমাদের কোথাও যাওয়ার ভাড়া লাগে না। ওর বাইক দিয়েই যেতে লাগলাম। তুহিন বাইক চালাচ্ছে, আমি মাঝে আর নিত্তিয়া পিছনে বসেছে।
তুহিন আমাদের জেলার পাশ দিয়ে একটা গ্রামের দিকের রাস্তা ধরলো। আমার হার্টবিট আপাতত মাইকেল জ্যাকশনের নাচ দেওয়া শুরু করেছে। ভয়ে ভয়ে তুহিনের কাছে জানতে চাইলাম।
— ভাই আমরা কই যাচ্ছি?
— তোর ভয় ভাঙ্গাতে।
— মানে?
— এই গ্রামের শেষের দিকের একটা জঙ্গল রয়েছে আর ওইখানে নাকি একটা পুরাতন দুতলা দালান আছে।
— ও আমরা বুঝি ওই দালান দর্শন করেই চলে আসবো।
— জ্বী না। আমরা আজ রাত ওইখানেই থাকবো।
— বাবা আর মা তোমরা ভাল থেকো। তোমাদের ছেলে আজ ভূতের ডিনার হতে যাচ্ছে। (উপরের দিকে তাকিয়ে বললাম)
তখনই তুহিন আমায় ধমক দিয়ে বলল…
— রাজ তুই নিত্তিয়াকে দেখে কিছু শিখে নে। ও মেয়ে হয়ে ভয় পাচ্ছে না আর তুই একটা ছেলে হয় কি আবোল তাবোল বলছিস।
— ও নিত্তিয়া বুঝি মেয়ে। আগে জানতাম না তো।
কথা বলা শেষ না হতেই পিছন থেকেই নিত্তিয়া আমার মাথায় থাপ্পড় দিলো।
— ওই মারিস কেন আমায়? আমি কি ভুল বললাম? তুই বল তো আজ পর্যন্ত ভার্সিটিতে এসে কোন লাভ লেটার পাইছিস।
— তুই আছিস না। তোর গলায় ঝুলে যাবো তাই কারো লাভ লেটারের অপেক্ষাও করি নি।
— ও তাই না। আজ রাতে তো ভূতও তোকে দেখে বিয়ে করার ইচ্ছা ভুলে যাবে।
— ওই গাধা ভূতেরা বুঝি বিয়ে করে।
— কি জানি? আজও কখনো ভেবে দেখি নি।
— রাজ তুই সত্যিই অনেক ভীতু।
— হুহহ আর তুই সাহসের ছ্যাড়া কাঁথা।
নিত্তিয়ার সাথে এ রকম ঝগড়া করতে করতে অনেক গাছের লতাপাতার বাড়ি খেয়ে ভূতুরে বাসার সামনে এসে থামলাম। আমার অলরেডি হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। এই বাসার ভিতরে গেলে না জানি কি হয়? আর অন্য দিকে আসতে না আসতেই নিত্তিয়া সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পরলো। হায়রে কপাল, আমি কাদের সাথে আসলাম। যদি কখনো ভুলবশত হয়েও ভূতের সামনে পরি তাহলে নিত্তিয়া হয়ত ভূতের সাথে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিবে । আর তুহিন নিজের বাইক পরিষ্কার করছে কারন রাস্তা দিয়ে আসার সময় বাইকে ধুলাবালি লেগে বাইকের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।

আমি, নিত্তিয়া আর তুহিন এখন এক সাথে দরজা খুলবো বলে দাঁড়িয়ে আছি। তখনই দরজার ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হচ্ছে, এই বাসার ভিতরে শুধু একজন নয় বরং কয়েকজন মিলেই আছে। তবে ওদের কথা বার্তা গুলো তো ভূতের মত লাগছে না। তখন আমি তুহিনকে বললাম….
— দোস্ত ভূতেরা কি ভিতরে দুপুরের খাবার খাচ্ছে নাকি?
— রাজ চুপ কর তো। এখানে এখন সিরিয়াস মোমেন্ট চলছে।
— ওকে আমিও সিরিয়াস।
আর কথা না বাড়িয়ে বাসার পিছনের দিকে গেলাম। হয়ত সেদিকে কোন জানালা থাকবে সেই আশায়। কিন্তু আমার মনে এখন একটা প্রশ্ন হলো আমরা যে এখানে আসছি ভিতরের লোক গুলো কি বুঝে নি? হয়ত বা বুঝে নি আবার হয়ত বুঝেছে। তবে যাই হোক, দেখি তুহিন কি করে?পিছনের দিকে কোন দরজা বা জানালা না পেয়ে আবার সামনের দিকে আসলাম। তারপর তিনজন মিলে ভিতরে কি হচ্ছে জানার জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম? তখন ভিতর থেকে একটা কথা শুনতে পেলাম। আর কথাটা ছিল ” ব্যাগ গুলো মেঝেতেই মাটি চাপা দিয়ে রাখ নয়ত কেউ বুঝে ফেলবে। ” এই কথাটা শুনতে পাওয়ার পর আরও কৌতুহলী হয়ে গেলাম। কিন্তু একটু পর কয়েকজনের হাঁটার আওয়াজ শুনতে পেলাম তাই আমি আর নিত্তিয়া ভাবলাম বাসার পেছনে চলে যাই কিন্তু আমি পিছনে যাওয়ার সময় দেখি তুহিন আমাদের সাথে নাই আর তুহিনের বাইকও নাই। তাহলে তুহিন কি আমাদের রেখে চলে গেল?
যখন দরজা খুলল তখনই পিছন থেকে কেউ একজন টান দিয়ে আমায় সরিয়ে নিলো। পিছনে তাকাতেই দেখি তুহিন। আমি অনেকটা রেগে আস্তে আস্তে বললাম….
— আমাদের রেখে কই গেছিলি?
— বাইকটা সরিয়ে পিছনে নিয়ে গেলাম দোস্ত। আর তোরা কি ভাবলি আমি তোদের একা রেখে চলে গেছি।
— না তা নয় তবে ভয় পাইছি।
— আরে গাধা আমি জেনে বুঝেই তোদের এখানে নিয়ে এসেছি। আগে লোক গুলোকে যেতে দে। এরপর সব বলছি।
— ওকে।
এরপর লোক গুলোর যাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। এদিকে আমার অনেক ক্ষুধা লেগে গেছে কিন্তু লোক গুলোর যাওয়ার নাম নেই। নাকি ওরা এখানেই থাকবে। আমি তুহিনকে বললাম…
— ভাই খুব ক্ষুধা লাগছে তো। এখানে যখন নিয়েই আসলি এবার খাবারের ব্যবস্থাটা করে দে।
— জানতাম তোর তারাতারিই ক্ষুধা লেগে যাবে। আরে আমরা কেউ তো এখনো খাই নি।
— ভাই তোদের সাথে কি আমার তুলনা?
— এই নে রুটি খা। ( তুহিন তার ব্যাগ থেকে আমাদের জন্য রুটি আর কলা বের করে দিলো)
— এবার বল তো তোর এখানে আসার কারনটা কি? আর এতো মানুষ থাকতে আমাকে আর নিত্তিয়াকেই নিয়ে আসার কারন কি?
— এই বাসায় ৩ জন শিশু পাচারকারী আছে।আর এদের কয়েকবার আমার ভাই ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমি চাই এবার আমি ওদের ধরতে।
— ও বুঝলাম কিন্তু এখানে আমাকে আর নিত্তিয়ার মত দুইটা বাচ্চাকে নিয়ে আসার মানে কি?
— এখানে যে তিনজন লোক আছে তারা মেয়েদের প্রতি আকর্ষিত তাই নিত্তিয়াকে নিয়ে এসেছি আর তোকে এনেছি নিত্তিয়ার বডি গার্ডের মত থাকার জন্য।
— এটা কিন্তু ঠিক না। ওদের কাছে অস্ত্র থাকতে পারে। এখানে নিত্তিয়াকে ভিতরে পাঠানোটা ঠিক হবে না।
— ওদের কাছে অস্ত্র থাকতে পারে না বরং অস্ত্র আছে। আর নিত্তিয়া ওদের সামনে যাবে তোকে কে বলল?
— তাহলে?
— রাজ তোর মনে আছে আমরা যখন বাইক দিয়ে আসছিলাম তখন তুই নিত্তিয়াকে বলে ছিলি নিত্তিয়াকে দেখলে ভূতেরাও বিয়ের কথা ভুলে যাবে?
— হুমম বলে ছিলাম কিন্তু ওই কথার সাথে এখানে কিসের সম্পর্ক?
— শুধু সম্পর্ক না বরং বড় ধরনের সম্পর্ক। কারন, ভিতরে মেয়ে হিসেবে নিত্তিয়া যাবে না বরং তুই যাবি।
— আমি মানে? আমাকে কি মেয়ে মনে হয়?
— তোরে তো ভার্সিটিতে সবাই কিউট ডাকে তাই একটু আমাদের সামনেও কিউটের পরিচয় দে। আর নিত্তিয়া ছেলে সেঁঝে তোর পাশে থাকবে। মনে করবি তুই যাত্রা পালায় নাচিস আর নিত্তিয়া ঢোল বাজিয়ে গান গায়।
— তুহিন এটা কি ঠিক হচ্ছে? যদি কেউ ধরে ফেলে তাহলে তো পুরু উপরে পাঠিয়ে দিবে।
— ওরা তোকে বুঝার আগে আমি খেলার ঘুটি টা পাল্টে দিবো।
— ওকে কিন্তু সাবধানে।

আর কোন কথা না বলে আমাকে তুহিন আর নিত্তিয়া মিলে মেয়ে সাঁঝাতে লাগলো। শাড়ীটা পরার পর মনে হচ্ছে হায় রে কি কপাল আমার?
আমি তুহিন আর নিত্তিয়ার ব্যাগটা নিয়ে সন্ধেহ করলাম আর এই দুই ব্যাগে শুধু আমাকে সাজানোর জিনিস। আমাকে সাজানো শেষ করে নিত্তিয়া একটা জ্যাকেট পরলো আর আলগা দাড়ি লাগালো। যখন আমাকে আয়না দেখানো হলো তখন মনে হচ্ছে কেউ বুঝি আমায় পাউরুটির মত ছিড়ছে।আমি আর নিত্তিয়া ভিতরে ডুকবো কিন্তু তুহিন বাইরে থেকে কি করবে?
— তুহিন আমি সবার সামনে নাচবো আর নিত্তিয়া গান গাইবে আর তুই কি করবি? চল তুই না হয় ভিডিও করিস।
— হারামী আমাকেই সব থেকে বড় কাজ করতে হবে। তুই তিনজন লোককে নিয়ে দুতলায় তলায় যাবি।আর আমি নিচ তলায় সার্চ করবো। কারন ওরা শিশু পাচারকারীর সাথে সাথে ডাকাতও। ওরা মানুষের জিনিস পত্র নিয়ে আসে। আর যতদূর মনে হয় ওরা বলে ছিল ব্যাগ গুলো মেঝের নিচে লুকিয়ে রাখতে তাই ব্যাগ গুলো এক তলার মেঝের নিচেই হবে। তোরা দুতলায় ওদের নিয়ে মাস্তি করবি আর আমি নিচে তলাশী চালাবো।আর হা এই নে ছোট রেডিও কারন নিত্তিয়ার গলা তো ছেলের মত না তাই নিত্তিয়া রেডিও বাজাবে আর তুই নাচবি।
— ওকে।

সব প্ল্যান বুঝাতে বুঝাতে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমি আর নিত্তিয়া তুহিনের কথা মত দরজার সামনে গেলাম। কিন্তু শাড়ী পড়ে হাঁটতেই তো পারছিলাম না। আবার নাকি আমায় নাঁচতে হবে। নিত্তিয়া তো আপাতত ছেলে সেঝেছে তাই তাই সে দরজার মাঝে টুকা দিলো আর আমি ছোট একটা ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভিতরের লোক গুলো তো আর জানে না এই ঘুমটার নিচে যে কি খেমটা দাঁড়িয়ে আছে। আমি তো ভাবলাম কেউ হয়ত ভিতর থেকে জানতে চাইবে কে এসেছি কিন্তু না বরং সরাসরি দরজা খুলে দিলো তবে হাতে একটা পিস্তল। তখন লোকটি বলল…
— এখানে কি চাই?
— আসলে এই সামনের রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ জঙ্গলের রাস্তায় রাত নেমে আসায় আর বোনজি কে নিয়ে যেতে পারলাম না। ও অন্ধকারকে খুব ভয় পায় তো। আর তাছাড়া আজকালকের মানুষও ভালো না। তাই রাতটা থাকার জন্য যদি একটু আশ্রয় দিতেন। ( নিত্তিয়া আমাকে দেখিয়ে কথা গুলো বলল)
— আচ্ছা তোমরা দাঁড়াও আমি ভিতর থেকে কথা বলে আসি।
— আচ্ছা।
আমাদের সাথে একটা ব্যাগও ছিল আর এতে তুহিন রেডিওটা দিয়েছে। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর লোকটা আসলো। আর বলল…
— আচ্ছা ভিতরে আসো।
— ধন্যবাদ জনাব।
আমি আর নিত্তিয়া ভিতরে গিয়ে ভাল ভাবে নিচতলাটা দেখলাম। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেঝেটার এমন অবস্থা যে দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষন আগে হয়ত এখানে কিছু চাপা দেওয়া হয়েছে। আমি আর নিত্তিয়া সবার সামনে গেলাম। সামনে নিত্তিয়া দাঁড়িয়ে আর আমি নিত্তিয়ার পিছনেই দাঁড়িয়ে আছি। ওদের মাঝে একটা লোক বলল…
— তোমাদের ব্যাগে কি?
— আসলে ব্যাগে একটা রেডিও আছে। আমরা তো যাত্রা পালা করি আর এটা বাজিয়ে আমার এই বোনজি নাচে।
— ও তা এই বোনজির নামটা কি?
— ওর নাম হলো রোজিনা।
— শালার কি কপাল আমার? রাজ থেকে সোজা রোজিনা হয়ে গেলাম।( ভিড় ভিড় করে আমি বললাম)
কথাটা বলেই আমি ঠোটেঁ কামড় দিলাম। আরে এটা আমি কি করলাম? তখন একটা লোক বলল….
— রোজিনা বোনজি কি কিছু বলছে?
— আরে না না। ও বলছে যে যদি টাকা দাও তাহলে আপনাদের সামনেও নাচবে।
— ও তাহলে শুরু হয়ে যাক গান।
তখন আমি গলাটাকে একটু মেয়েলী বানিয়ে বললাম….
— এই যে বাবুরা, আমার একটা শর্ত আছে?
— কী শর্ত?
— আমি এক তলায় খাই না, এক তলায় ঘুমায় না তাই এক তলায়ও নাচি না। দুতলায় হলে নাচতে পারি।
— ওকে আমরা জানি।

ওরা আমাকে নিয়ে দুতলায় চলে আসলো। কিন্তু নিত্তিয়া একটু লেট করে আসলো। তারপর একটা গান ছাড়া হলো আর আমার নাচতে হলো। ওই তিনটা লোকও আমার সাথে নাচতে শুরু করে দিছে। ওরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করেও পারছে না। কারন আমার হাতের বাড়ি লাগছে ওদের উপর। আর এই দিকে নিত্তিয়া রেডিও এর সম্পূর্ণ সাউন্ড দিয়ে দিছে।
এভাবে প্রায় ১৫টা গানে আমাকে টানা নাচতে হলো।আমার এদিকে পায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। আজ বুঝতে পারছি মেয়েরা শাড়ী পড়তে অনেক সমস্যা হয়। ওদের কাছে ৩ টা পিস্তল ছিল কিন্তু নিত্তিয়া সেই গুলো নিয়ে জ্যাকেটের মাঝে লুকিয়ে নেয়। আমি তো মনে মনে তুহিনকে বকতেছি কারন আমাদের এখানে পাঠিয়ে নিজে জানি নিচে কি করছে?

প্রায় ২০ মিনিট পর তুহিন নিজে সহ আরো কয়েকজন পুলিশ নিয়ে এসে হাজির। আর নিত্তিয়া গান অফ করে দিলো। তার মানে সব কাজ হয়ে গেছে। নিত্তিয়ার গানের সাউন্ড বাড়ানোর কারন এখন বুঝলাম। ডাকাতের তিনজনই হাত উপরে করলো। আর আমিও শাড়ী খুলতে লাগলাম। ওরা আমাকে দেখে আরো অবাক হলো। ওরা আরো চমকে গেল আমার আসল চেহারা দেখে। তখন তুহিন বলল..
— কিরে এবার তাহলে তোদের ধরা পড়তেই হলো। অনেক রাজত্ব করেছিস এবার জেলে চল।
— তোমরা কারা?
— যে দুইজনকে দেখলি একজন রাজ ও অন্যজন নিত্তিয়া। দুজনেই ইন্সপেক্টর অব ক্রাইম ব্রো। তোদের জন্য রাজকে নাচতে হলো।
— বাহ্ ভালই প্ল্যান ছিল কিন্তু আমাদের ধরা এতো সহজ নয়।
কথাটা বলার সাথে সাথে একটা পুলিশের থেকে পিস্তল নিয়ে সে নিত্তিয়ার দিকে গুলি করলো কিন্তু আমি নিত্তিয়াকে হাত দিয়ে সরাতে গিয়ে গুলিটা আমার হাতে লাগলো। তুহিন সাথে সাথে ওই ডাকাতের মাথায় গুলি করলো। আর বাকি দুইজনকে গ্রেফতার করলো। আসলে আমাদের প্রথম থেকে সবটাই প্ল্যান ছিল যে মিডিয়া না বুঝতে পারে। কারন গত দুইবার মিডিয়ার আগাম খবরের জন্য ওরা পালিয়ে ছিল।
আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় আর গুলিটা বার করা হয়। তারপর তুহিন আর নিত্তিয়া আসে। তখন তুহিন বলল…
— বাইকে উঠে তো নিত্তিয়াকে নিয়ে কত কথাই বললি কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই নিত্তিয়ার জন্য গুলিও খেলি। পুরো বাংলা সিনেমা।
— জানি না এতো কিছু তবে ওকে বাঁচানোটা আমার কর্তব্য ছিল।
— শুধু কি কর্তব্যই ছিল। ( নিত্তিয়া বলল)
— জানি না।
— ও আচ্ছা তাহলে আগামী কোন একশনে যাই তখন বুঝাবো শুধু কর্তব্য নাকি অন্যকিছু।
— ওরে বাব্বা এখানে দেখি মান অভিমান চলছে। তোরা প্রেম কর আর আমি গেলাম। ( তুহিন বলেই চলে গেল)
নিত্তিয়াও চলে যেতে যাবে তখন আমি ওর হাতটা ধরে কিছু বললাম যা শুনে ও আর গেল না ” নিত্তিয়া সব কিছু প্রকাশ করা যায় না শুধু অনুভব করে নিতে হয়। ” নিত্তিয়া এখন আমার পাশে বসে আছে আর আমি নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে রাখছি।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত