প্রতিক্ষার অনুভূতি

শহুরে ধুলাবালি আর ইট পাথরের ভেতর সত্যি কারের বন্ধু ভালোবাসা পাওয়া খুবই কষ্টকর।এই শহরের মানুষগুলো যেন ইট পাথরের মতন নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে।আমার বাসা মিরপুর 12।আমাদের বাসার পাশে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ঐশী থাকে। ছোট বেলার খেলার সাথী, দু’জনের বয়সই এক হওয়ায় আমাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর।

ছোটবেলা থেকেই একসাথে মেলামেশার কারণে আমরা একে অন্যকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারতাম না।আমার খুব ভাল করে মনে আছে।আমি এবং ঐশী যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার খুব জ্বর হয়েছিল।আমাকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হয়েছিলো।তখন আমার অবস্থা দেখে ঐশী অনেক কান্নাকাটি করেছিল।

দুইদিন কিছু খাওয়া দাওয়া করেছিল না।দুইদিন পর আমি সুস্থ হওয়ার আমি বলার পর কিছু খাওয়া-দাওয়া করে।আমাদের পরিবারের সাথে ঐশীদের কোন আত্মীয়তা নাই।কিন্তু তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কেটি অনেক গভির। ঐশীদের সাথে আমাদের সাথে এতই ভালো সম্পর্ক ছিল।যে কোনদিন আমি ওদের বাড়িতে সারাদিন আড্ডা দিতাম খাওয়া দাওয়া করতাম।

কখনো ও আমাদের বাসায় এসে আড্ডা দিতো খাওয়া-দাওয়া করতো। কখন যে সময় পার হয়ে যেত ঠিকই পেতাম না। তবে যাইহোক,আমি কিন্তু ঐশীকে মনে মনে পছন্দ করতাম।বন্ধু হিসেবে ঠিক আছে। কিন্তু আমি ওকে ভালবাসতাম।ঐশী আমাকে পছন্দ করত কিনা জানিনা। এইচএসসি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার সময় আমাদের এক বন্ধু ঐশীকে প্রেম নিবেদন করেছিল
আমার এত পরিমান রাগ হয়েছিল।আমি ওরে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।এত পরিমান রাগ হওয়ার কারন হলো ঐশী আমাকে যখন এই কথা বলেছিল।তখন ওর চোখের কোনে পানি দেখতে পেয়েছিলাম।এটা দেখার পর কে সহ্য করতে পারে।যাইহোক অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলে কিছু করতে পারলাম না।
ঐশী জোর করে বাসায় নিয়ে গেল।এরপর ঐশী বাসায় নিয়ে গেল।এরপর ঐশী এবং আমার দুইজন এর কইদিন মন খারাপ ছিল।এরপর আমি নিজই ভাবলাম।ওর মন খারপ এর সময় আমি মন খারাপ করে থাকলে কোন সমাধান আসবে না। আমি ঐশীকে ফোন দিলাম।ফোন দিয়ে বল্লাম যে রেডি হয়ে নে।বাইরে যাবো কিছু খাওয়া দাওয়া করতে হবে।

বাসায় কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না।যাইহোক প্রথমে না করলে ও পরে আমার এই কথা শুনার পর রাজি হয়ে গেল।বাইরে গেলাম ঘোরাঘুরি করলাম এবং খাওয়া দাওয়া করে বাসায় চলে আসলাম।রিকশা করে বাসার সামনে এসে আমি ভারা দিয়ে বল্লাম তাহলে যা বাসায়।এই বলে আমি ও আমার বাসার দিকে যাচ্ছি।ঐশী আমার পেছন থেকে ডাক দিল।

আমি ঘুরতেই আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে বল্ল।আমি জানি কেন তুই আমাকে বাইরে নিয়ে গেছিস।তুই আমার বন্ধু।তুই আমার কলিজা।আমি ওর চোখ থেকে পানি মুছে দিয়ে বল্লাম।পাগলি মেয়ে তুই একটা।যা বাসায় যা।একথা বলার পর ও বাসার পথে হাঁটলো।ওর এমন কাহিনী দেখে আমার চোখের কোনে ও পানি চলে আসছে।কোন ভাবে পানিটা মুছে আমিও বাসার দিকে এগিয়ে গেলাম।

বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে।বালিশ এর উপর মাথা দিয়ে ভাবতে লাগলাম ঐশীর কথা।এমনি ভাবে ভাবতে কখন যে রাত গভির হয়েছে তা জানি না।আম্মু রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দেওয়ায় বাস্তবে ফিরে এলাম ভাবনার জগৎ থেকে।কোনভাবে কিছু খাওয়ার পরই রুমে চলে এলাম।এসে ফানটা নিয়ে ঐশীকে ফোন দিলাম।

ওপাশ থেকে বলে উঠল কিরে সন্ধা থেকে কোন খোঁজ খবর নাই।আমি বল্লাম এইতো বাসায় এসে ঘুৃমায় পড়েছিলাম।খাওয়া দাওয়া করছিস তুই।ঐশী বল্ল এইতো করলাম।তুই করছিস, আমি বল্লাম আমিও এই মাত্র করলাম।খাওয়া দাওয়া করেই তোরে ফোন দিলাম।ঐশীর সাথে আজকের মত এমন ভাবে কথা বলা এর আগে হয়নি।

যাইহোক আরও কিছু কথা বলে।ফোন রেখে দিলাম।এরপর বালিশে মাথা দিয়ে।ওরে নিয়ে ভাবতে লাগলাম।এমনটি এর আগে কখনো হয়নি।আজ ঐশীকে নিয়ে ভাবতে।আগের থেকে অনেক ভালো লাগছে।এমনিভাবে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ছি জানি না।সকাল ৯ টায় ঐশীর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো।ফোন রিসিভ করার পর।

ঐশী বল্ল কি ব্যাপার আলভি সাহেভ।আজ আপনার কি হয়েছে।ও আপনাদের তো বলাই হয়নি আমার নাম আলভি।আমি প্রতিদিন সকালে হয় ওদের বাসায় গিয়ে ওর ঘুম ভাঙ্গায় নাহয় ওর ফোনে ফোন দিয়ে আমি ঘুম ভঙ্গায়।আজ একটু আমার ঘুমটা বেশি হয়ে গেছে।কেন এমন হয়েছে তা জানি না।

ঐশী বল্ল তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বাসায় আয় একসাথে নাস্তা করবো।আমি তো অবাক যে আমার খাবার কেড়ে খেয়ে নেই।সে কিনা বলছে এই কথা।ফ্রেশ হয়ে বের হব।আম্মু বল্ল নাস্তা করবি না।আমি বল্লাম ঐশী ডাকসে নাস্তা করতে।একথা শোনার পর।আম্মু আর কিছু বল্ল না।ঐশীদের বাসায় গেলাম।আমি পুরায় অবাক এত নাস্তা।এরই মধ্যে আন্টি আসলো।আমি আন্টিকে বল্লাম এত নাস্তা কেন।

আন্টি বল্ল সব তেমার জন্য ঐশী নিজ হাতে করছে।আমার মাথা ঘুরছে।এই মেয়ে নিশ্চয় পাগলী হয়ে গেছে।না হলে এসব ওর দ্বারা সম্ভব কি করে।নাস্তার টেবিলে বসে শুনালাম সবার নাস্তা হয়ে গেছে।শুধু আমি আর ঐশী করতে বাকি আছি।আমি আর ও নাস্তা করতে বসলাম।আজ সব উল্ট।অন্য দিন ও আমার খাবার কেড়ে খায়।আর আজ আমাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যাকুল।সব কিছু নিজ হাতে তুলে তুলে খাওয়াই দিচ্ছে।.

এভাবে দিন দিন ঐশী কেন জানি আমার অনেক বেশি খেয়াল রাখতে শুরু করলো।কিছু থেকে কিছু হলেই কি অবস্থা।এভাবে চলতে থাকলো আমি ও ওর প্রতি অনেক বেশি দূর্বল হয়ে পড়লাম।এভাবে আর দিন যায় না।একটা সময় ভাবলাম আমার মনের কথা ওরে বলেই দিব।

যা হয় হবে।মনে মনে অনেক কিছু প্লান করলাম।এরপর ঐশীকে ফোন দিলাম।বল্লাম একটা কথা ছিল।তোর কি কাল সন্ধায় সময় আছে।ঐশী ওপার থেকে বল্ল কিরে আলভি তোর কি হয়েছে।এমন ভাবে কথা বলছিস কেন।কিছু হয়েছে তোর।আন্টি কিছু বলছে।আমি বল্লাম নারে তেমন কিছু না।আসলে এমনটি ভাবার কারন হল।

এর আগে কখনো ঐশীকে এভাবে বলা হয়নি।শুধু বলছি এখন বাইরে যেতে হবে বা কাল বাইরে যাবো।ওর যাবে হ্যা কি না।তা শুনার সময় নাই।আমি বলছি মানে যেতে হবে। যাইহোক আমি বল্লাম কাল সন্ধায় হাতিরঝিল আসবি তো।ঐশী বল্ল আমি একা যাবো নাকি।আমি বল্লাম হুম।আমর একটা ছোট কাজ আছে।ওটা শেষ করে। রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী

আমি তোর জন্য অপেক্ষা করবো।ঐশী বল্ল আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু তুই যদি দেরি করিস।তোর খবর আছে কিন্তু।আমি বল্লাম হবে না বাবা তুই চলে আছিস।ঐশী বল্ল ঠিক আছে।রাত তো আর যায় না।এভাবে অপেক্ষা করতে করতে।বিকালে ওর ফোন দিয়ে বল্লাম আমি যাচ্ছি।তুই ঠিক সময় চলে আছিস।ঐশী বল্ল আচ্ছা ঠিক আছে।

আমি বিকাল বেলা গিয়ে একটি সুন্দর আংটি ও কয়েকটি গোলাপ ফুল কিনলাম।ঠিক সন্ধায় আমি হাঁতিরঝিল পৌছে গেলাম।ঐশী ও একটু পর আসলো।পেছন থেকে ডাকলো আলভি।আমার হৃদযত্র এর স্পন্দন বেড়ে গেছে।অল্প কিছুক্ষণ এর ভেতর কি ঘটতে চলছে।আমি নিজে ও জানি না। আমি বল্লাম চলে এসেছিস।

কোন সম্যসা হয়নি তো।আলভি আমি এখন আর ছোট না।আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।এদিকে আয়।ও আমার কাছে আসলো।আমি ঐশীকে বল্লাম।ঐশী তুই একটু তোর চোখটি বন্ধ করবি।ঐশী বল্ল আলভি কি বলছিস।আমি অনুরোধ করলাম।ঐশী বল্ল ঠিক আছে কিন্তু বেশি সময় বন্ধ রাখতে পারবো না।আমি বল্লাম ঠিক আছে।

এবার ঐশী ওর চোখ বন্ধ করলো।আমিও বুকে সাহস নিয়ে ঐশীর সমানে হাঁটু গেড়ে বসে।ওর হাতটি ধরে।পেছন থেকে গোলাপ ফুল বের করে।ঐশীকে বল্লাম”ওগো নন্দিনি আমি তোমার প্রেমে দন্ডিত হয়েছি।এই ভালবাসার গোলাপ নিয়ে সেটা খন্ডিত করো” এরপর মুখ তুলে চেয়ে দেখি ঐশীর চোখে পানি।আমার হাত থেকে গোলাপ নিয়ে।আমার হাত ধরে টেনে তুলে জরিয়ে ধরে।কান্না করতে করতে বল্ল। রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী

পাগল নাকি তুই।এটা বলতে এতদিন নিলি কেন।আমি বল্লাম ভয়তে।যদি এটা শুনে রাগ করে তুই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করিস। এবার ঐশী বল্ল তোমার তো আমি বলছি।আমি রাগ করবো। এবার বল্লাম তোর হাতটি দেখি।ঐশী বল্ল কেন।আমি বল্লাম দিবি তো।এরপর হাত এগিয়ে দিল।

আমি ওর হাতের একটি আঙ্গুলে আংটি পড়িয়ে দিয়ে বল্লাম এটা আমার ভালবাসার ছোট্ট উপহার।এবার ঐশী আংটিতে একটা কিস করে বল্ল।এটা আমার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। এরপর ঐশীর হাতে হাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত