মেয়েদের ব্যাপারে আমার তেমন আগ্রহ ছিলনা কোন কালেই। তাই তনু যখন বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিল আমি তাতে উৎসাহ দেখালাম না। কেননা আমার চারপাশ দেখে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বুঝতে পেরেছি কোন তরুনীর বন্ধু হওয়া মোটেও গৌরবের ব্যাপার নয়। মেয়েরা তাদের বন্ধুদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতেই পছন্দ করে। তারপর ব্যবহার শেষে বিগলিত হাসি দিয়ে বলে, তুইতো আমার কেবলী ভাল বন্ধু মাত্র! অথচ দিনের পর দিন গরুর মত খাটানো হয়েছিল বন্ধু নামক বেচারাকে!
তনু কনুদিয়ে হালকা গুতা মেরে বললো, কিরে কি হলো তোর! কি ভাবছিস এত? ওর দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে বললাম, দ্যাখ আমার মোটেও কোন মেয়ের বন্ধু হবার ইচ্ছে নেই।
আমার এই কথাটায় ও মনে হল প্রস্তুত ছিলনা। বিস্মিত দৃষ্টি দিয়ে ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি কোন ভিন গ্রহের প্রানী! কিছুটা স্লেশ মাখানো কণ্ঠে বললো আজব!! ওর হাব-ভাব দেখে মনে হল আমি আফ্রিকার কোন জংগল থেকে এই মাত্র ওর সামনে এসে দাড়িয়েছি। তাৎচ্ছিল্য দেখিয়ে ঠোট বাকিয়ে বললো
: মামা, তুই আমারে চিনলিনা! জানিস সবুজ হইলে এতক্ষন আমারে কেফসিতে নিয়ে খাওনোর অফার করত! আর আনিসকে আমি বন্ধু না বানানোর পরও সে আমারে কত ফ্লেকিলোড দেয়?
আমি ওর কথায় তেমন আগ্রহ না দেখিয়ে কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললাম : শোন তনু, মামা শব্দটাকে তোরা বেশ স্মাটলি ব্যবহার করতে চাচ্ছিস তাই না? অথচ এটা কয়েক দিন আগেও আমরা রিকসাওয়ালা, বাদামওয়ালাদের ডাকতে ব্যবহার করতাম😆। খবরদার কখনো আমাকে মামা ডাকবি না। আর একটা কথা বলি আমি মোটেও তোর ফেসবুকের ওয়াল নয় যে যখন যা খুশি বলবি।
আমার এইসব আতেল সুলভ কথা-র্বাতা তনু আমলে নিলনা। বরং করুনা ভরা দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আমার খুব অস্বস্থি লাগতেছিল। মেয়েদের দৃষ্টি উপেক্ষা করার সাধ্য খুব কম পুরুষেরই থাকে। আমার খুব ইচ্ছে করছে ওর হাতটা ধরতে কিন্তু আমি তা করলাম না। আমার মনকে, আমার ইচ্ছেকে আমি নিয়ন্ত্রন করলাম। জানিনা কতক্ষন পারতাম তবে সেই পরিক্ষায় আমাকে যেতে হলনা।
তার আগেই তনু যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালো। আমি খেয়াল করলাম কালো জিন্স প্যান্ট এর সাথে সাদা ফতুয়ায় ওরে ভারি সুন্দর লাগছে। ও ওড়না পরে না। ওর রুচিবোধ অতি স্মাটনেস দেখে প্রায়ই আমার মনে হয় মেয়েটা যথেষ্ট বোকা। সুন্দরী মেয়েদের সম্যসা হল তারা প্রতেকেই ভাবে যে পুরো দুনিয়াটা তার পেছনে পেছনে ঘুরছে। তার জন্য সবাই পাগল।
এই ধারণা নিয়ে তারা বোকার মত আচরণ করে ঘুরে বেড়ায়। খেয়াল করছি রাগে তার বুক কাঁপছে। আমি তাতে বিচলিত হলাম না। কেননা তনু আমার গার্ল ফেরে- বা প্রেমিকা নয়। ওর রাগকে প্রশয় না দিয়ে বরং নিজেকে কেমন নায়ক নায়ক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে তনু আবার হয়ত আমার কাছে ফিরে আসবে।
আমি ওর প্রতিক্ষায় বসে আছি। বেশ কিছুক্ষন পর ওর ফিরে এল। লক্ষি মেয়ের মত চুপ করে পাশে বসে পড়ল। কিন্তু ওর চোখে রাজ্যর মেঘ দেখতে পেলাম। আমি কিছু বলতে গেলাম না,পাছে শ্রাবন নামে।
ক্যাম্পাস জুড়ে রঙিন প্রজাপতির মত তরুন-তরুনীরা ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। বাতাসে তাদের টুকরো কথা উচ্ছ্বল হাসির শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন যাবার পর আমি বললাম, চকবার খাবি?
তুই কেন খাওয়াবি! তুইতো আমার বয় ফেরে- না, তাইনা? দিয়াশলাইয়ের কাঠির মত হঠাৎ করেই জ্বলে উঠল তনু। ক্রোধ ভরা দৃষ্টি নিয়ে ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তনুর দিক তাকিয়ে মনে হল ও আরো কিছু কঠিন কথা খুজছে। সে বাক্য খুজে পাচ্ছেনা। রাগে ওর ঠোট কাঁপছে। লিপিষ্টিক বিহিন ওর ঠোটের রংটা বেশ মাদকীয়। পুরো ঠোট টা যেকোন যুবকের মাথা নষ্ট করে দেবার জন্য যথেষ্ট।
ও আসলে আমাকে ঘায়েল করে অপমান করে সুখ নেবার জন্যই ফিরে এসেছে। মেয়েরা হার সহ্য করতে পারে না। তারা সব সময় জিততে চায়। তনুর সম্যসা হল সে ভাষা খুজে পাচ্ছেনা। ঠিক কোন ভাষায় অপমান করলে আমি কষ্ট পাবো এটা ও খুজছে। বেচারীর জন্য মায়া লাগছে। ভাষার জন্য যুদ্ধ করা জাতি সঠিক সময়ে ভাষা খুজে পাবে না এটাতো হতে পারে না। আমি তাই ওরে ক্ষ্যাপানোর জন্যই বলি
ঃ কেন খাবি, আমিতো আর সবুজ নই, আনিস নই যে তোর জন্য আইসক্রিমের মত যত্রতত্র গলে পড়বো! হেংলার মত আ্যডাল্ড জোকস বলে তোকে হাসানোর চেষ্টা করবো। ও রাগে জ্বলে গিয়ে বলে, তুই হলি ক্যাম্পাসের সবচেয়ে জঘন্ন্য চিড়িয়া! তুই আসলে খুবই বাজে… ও তোতলাতে থাকে।
এমন মুহূর্তে আমাদের সামনে একটা টোকাই টাইপের ছেলের আগমন ঘটে। ছেলেটা বেশ কয়েকটা বকুল ফুলের ছোট মালা একটা কাঠির ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ও দুরে দাড়িয়ে এতক্ষন আমাদের ঝগড়া দেখতে ছিল।কেমন আছিস বাপ? ব্যবসাপাতি কেমন? এসব কি? ধমকে উঠে তনু।
ফুলের ব্যবসায়ি বালক হঠাৎ ধমক শুনে দৌড় দিল। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে আমি ছেলেটার দৌড়ানো দেখলাম। কেননা ওরা এত সহযে ভয় পাবার মত নয়। ওদের সবারী একটা দল আছে। ওরাই বরং যে কাউকে হেনস্তা করতে ওস্তাত। ছেলেটার পুরাতন জিন্সের প্যান্টার পেছনের পকেটের ৯০ পাসেন্ট ছিড়ে ঝুলে আছে। সে নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। তার পায়ে কোন সা-েল নেই। শরীরের অবস্থাও তেমন সুবিধের না। দেখে মায়া লাগল।
কি হলো , ঐ ছেলেটর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ?বুঝতে পারছিনা ছেলেটা কেন আমাকে ভয় পেল! তনু হেসে বললো, আসলে ও তোরে নয়, আমারে ভয় পেয়েছে। তনুর চোখ মুখ ঝলমল করছে। ভেবে পেলাম না একটা বাচ্চা ছেলে ভয় পাওয়ায় তনুর এত আনন্দ হচ্ছে কেন? আসলেই সুন্দরীদের মন বোঝা বেশ কঠিন!কয়েকদিন আগে ওরে এমন ধমক দিয়েছিলাম যে ও জীবনে আমার কাছে ঘেসবে না। হুম।
দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। তারপর উঠে গিয়ে ছেলেটার কাছে গিয়ে বললাম,আমারে তিনটা মালা দাও তো দেখি। সে মালা দেবার সময় বললো, ভাইয়া আপনি ঐ রাগী আপাকে মালা দিয়েন না, তাহলে কিন্তু সারা জীবন পস্তাইতে হইবো! খালি ধমক খাইবেন।আমি হাসলাম ওর কথা শুনে। তনুর হাতে বকুল ফুলের মালাটা দিতে ও বিরক্তি মুখে প্রশ্ন করলো, ওই ছেলেটার সাথে হাসি মুখে এতক্ষন ধরে কি আলাপ করলি? আমি তোরে খুব ভালবাসি কথাটা ওরে জানাতেই ছেলেটা বললো তুই নাকি অনেক লক্ষি গৃহবধু হবি! হাঃ হাঃ ..
আমি ভেবে ছিলাম আমার রসিকতায় ও রাগ করবে। কিন্তু আমাকে আশ্চর্য করতেই কিনা জানিনা ও এমন ভাব দেখালো যেন কিছুই বলিনি আমি! তনু বসা থেকে উঠে দাড়ালো। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুরে বাইক নিয়ে সবুজ দাড়িয়ে আছে। বুঝতে বাকি রইল না যে তনু সবুজের কাছেই যাচ্ছে। আমি বসে রইলাম। টি শার্ট পড়ে বেরুনো উচিৎ হয়নি, কেমন ঠা-া ঠা-া লাগছে। হঠাৎ করে রৌদ্যরা লুকিয়ে যাওয়ায় শীতল বাতাসে দগ্ধ হচ্ছি। ঠা-া বাতাশটা খুব লাগছে । এক কাপ চা খেতে পারলে ভাল হত।
তনু বেশ স্বাভাবিক গলায় বললো কি হলো বসে আছ কেন? উঠে আসো বলছি। বিস্মিত হয়ে তনুর মুখের দিকে তাকালাম। ব্যাপার কি,ও তুই থেকে আমাকে তুমি বলে ডাকতে শুরু করছে কেন? ফাজলামো করছে নাতো! আমি উঠে কি করবো? ঐযে তোর বয় ফেরে- সবুজ দাড়িয়ে আছে। কিছুটা টিটকারীর স্বরে বললাম আমি।
ও রাগলো না। আমার হাত ধরে বললো , তমাল তোমাকে আমার দরকার। তুমি খুবই বিস্বস্ত স্বামী হইবা এটা আমি নিশ্চিত। ও আমার হাত ধরায় এখন ঠা-া লাগছে। কেমন যেন নিজেকে ভারমুক্ত শূন্য শূন্য লাগছে। ভাল লাগছে খুব। আমি উঠে দাড়াতেই ও আমার শরীর ঘেসে দাড়ায়। ওর শরীরের উত্তাপে আমার কেমন যেন লাগে। কি পারফিউম ব্যাবহার করছে ও জানিনা। তবে পারফিউমের গন্ধেই বোধ হয় আমার মাথার ভেতর কেমন ঝিম ঝিম করছে।
তনু আমার হাত ধরে হাটছে। কেন যেন মনে হচ্ছে এভাবে হেটে ও যদি আমাকে জাহান্নামেও নিয়ে যায় তাতেও আমার কোন আপত্তি থাকা উচিৎ না। তুমি একটা অদ্ভূত ছেলে। জানো আগে করতে হয় বন্ধুত্ব তারপর প্রেম। শিখনি কিছুই। শুধু গোয়ারের মত মিছিল মিটিং নিয়ে আছ। সেদিন দেখলাম তুমি রাস্তায় দাড়িয়ে চিকা মারতেছো, ছিঃ!
অন্য কেউ আমার রাজনীতি করা নিয়ে ছিঃ বললৈ তার দুটো দাঁত ফেলে দিতাম। কিন্তু এখন আমি কিছুই বললাম না। আমি নিরর্থক হাসি। তুমি চিকা না মেরে কবিতা লিখলে ভাল করতে। তোমার ফেসবুকে একটা কবিতা পড়লাম। খুবই সুন্দর লিখা। আমি মুগ্ধ!
তনু হাটতে হাটতে একটা কাঁচে ঘেরা ফাষ্ট ফুডের দোকানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কম করে হলেও তিনশত টাকা দরকার। কিন্তু আমার পকেটে আছে মাত্র একশত পনেরো টাকা। কিছুটা আতংকিত হয়ে আমি সামনে তাকালাম। ওমা সামনে দেখি সবুজ। তারপর তারা দুইজন আমাকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে যায়। রেস্টুরেন্টে টেবিলের দুই পাশের দুটো করে চারটা চেয়ার ছিল। সবুজ বসল একটা চেয়ারে আমি আর তনু দুজনে পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসলাম। আমি তনুকে আমার পাশে বসতে বলি নাই। কিন্তু তনু নিজেই সবুজকে ছেড়ে এসে আমার পাশে বসলো।
রেস্টুরেন্টে সবুজ তিনটে পিজ্জা অর্ডার করল। কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় কেটে গেল রেস্টুরেন্টে। হঠাৎ করে তনু আমাকে এক টুকরো পিজ্জা খাইয়ে দিল সবুজের সামনে, কিন্তু আগে সে এভাবে কোনদিন সবুজকে নিজের হাত দিয়ে কোন কিছু খাওয়ায় নি। সবুজ আমাদের দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। __
তারপর অনেকদিন সবুজ আর তনুর মধ্যে কথা ছিল না। কিন্তু তনু সবুজ কে প্রায় কল করতো, মেসেঞ্জারে নক দিতো। কিন্তু সবুজের কোন উত্তর পাঠাতো না। আমি একদিন সবুজকে কল করে জিজ্ঞেস করি। “কিরে তনুর সাথে তোর কি হয়েছে”। ওই মুহূর্তে তনুও আমার সাথে ছিল, তখন সবুজ বলল, দেখ তুই আর তনু বন্ধু হিসেবে আছিস কিন্তু তোদের মনে একজন একজনের জন্য রয়েছে ভালোবাসার টান। তাই আমি তনুর সাথে ব্রেকআপ করলাম। আর শোন তুই তনুকে প্রপোজ কর। বলবি যে, “তনু আমি তোমাকে ভালোবাসি”।
এই কথাগুলো যখন আমি তনুকে বলি, তনু কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। তারপর হঠাৎ করে তনু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে আসলে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। যা এতদিন আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। আজ তা প্রকাশিত হল।
তারপর তনু আমাকে জোর করে বলল, “তুই আমাকে ভালোবাসিস। বল, বল আমি তোমাকে ভালোবাসি। ওইদিনই ফাস্ট আমি তনুকে বললাম, হ্যাঁ তনু আসলেই আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”একটি মিষ্টি ভালোবাসার রোমান্টিক গল্পের কাহিনীর সমাপ্তি ঘটলো”