লাফাতে লাফাতে পাশের বাসার আন্টির কাছে যেয়ে বললাম আন্টি পেয়াজ দেনতো ঘরে পেয়াজ নাই।
পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলাম সুদর্শন এক যুবক সোফায় বসে গেম খেলছে আর বলছে ওই ওরে ধর ও যেনো পালাইতে না পারে, আরে আমারে সেফ কর এট্যাক দিয়ে দিলোতো। আমার মনে তখন ক্রিং ক্রিং করে প্রেমের ঘন্টি বেজে উঠলো। হাউ সুইট, আন্টির যে এতো সুন্দর একটা ছেলে আছে জানতাম নাতো।
বেশ কিছুদিন হলো আন্টি আমাদের বাসায় আসেন না। কেনো আসেন না সেই কাহিনী আজ আমার কাছে পরিষ্কার হলো। আন্টির ছেলে রাজশাহী থেকে বাসায় এসেছে লকডাউনের ছুটিতে,এই হলো কারন। এর আগে প্রায় রোজই আন্টি আমাদের বাসায় এসে আমার সাথে গল্পগুজব করতেন আর আমাকে বলতেন, কি সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকিস মাঝে মধ্যে আমাদের বাসায় যেতেও তো পারিস! তোর আঙ্কেল থাকে অফিসে তোর ভাইয়া পড়াশোনার খাতিরে থাকে রাজশাহী আর আমি সারাক্ষণ বাসায় একা একা বোরিং ফিল করি।
এতো বলা সত্ত্বেও আমি কখনোই আন্টির বাসায় গল্প করতে যেতাম না,কারণ মোবাইল রেখে দু-দন্ড থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু নাহ, আজ থেকে ভেবেছি রোজ আন্টির বাসায় তিনবার করে যাবো তার সাথে গল্পগুজব করতে। এতোদিন অনেক অমান্য করেছি তার কথা, কিন্তু আর করা যাবেনা শত হলেও মুরব্বি মানুষ বলে কথা। তাদের কথা অমান্য করতে নেই। এখন রোজ আন্টির বাসায় তিন বেলা করে যাই তার সাথে গল্পগুজব করি, পাশাপাশি তাকে রান্নার কাজেও সাহায্য করে দেই। সেদিনতো সব রান্না নিজ হাতেই করে দিলাম। আন্টি খুশি হয়ে বললেন তোর মা তোকে শুধু
শুধুই বকে, এইতো কি সুন্দর রান্না করছে মেয়েটা, আহা সোনা মেয়ে আমার। আমি মনে মনে ভাবলাম ও আপনি বুঝবেন না আন্টি সবই মন জয় করার ধান্দা আমি যে কি মাকাল ফল তা আমার আম্মাজান ভালো করেই জানেন। আমাকে বকে কি আর স্বাদে!
খেতে বসে আন্টির ছেলে বললো;
—বাহ চমৎকার হয়েছেতো মাংসটা, পুচকে তো ভালো রান্না করতে পারে মা।
আমি খানিক লজ্জা পেয়ে বিড়বিড় করে বললাম;
—পারমানেন্টলি ঘরে নিয়ে আসেন রোজ ভালো ভালো রেঁধে খাওয়াবো।
আন্টি না বুঝতে পেরে বললেন কি বিড়বিড় করছিস হিমু জোড়ে বল শুনিনাতো।
— না মানে আন্টি বলছিলাম আপনার তো আর বয়স কম হয়নি এবার ভাইয়াকে বিয়েটা করিয়ে দিলেই তো
পারেন। আপনারও একটু বিশ্রাম নেওয়া হবে। আর বউ এসে ভালো ভালো রেঁধে খাওয়াবে।
আন্টি তখন হাহুতাশ করতে করতে বললেন বিয়েতো করাবো মা এই যুগে ভালো মেয়ে পাওয়া মুশকিল।
আমি মনে মনে ফুঁসে উঠে ভাবলাম; হ্যা তা পাবা কিভাবে? চোখের সামনে ভালো মেয়ে রেখে দূরে
খুঁজলে ভালো মেয়ে পাবা না ছাই পাবা ছাই।
আন্টি আজ ডেকে বললেন তোকে তোর ভাইয়া ডাকে হিমু, কি যেনো জরুরি কথা বলবে। আর তখনই আমার মনে বেজে উঠলো ভারতীয় বাংলা মুভির গান “” আজ আমার মনটা ওরে পেখম তুইলা নাচেরে নাচেরে; সে যাইহোক ভোঁ দৌড় দিয়ে আন্টির ছেলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে
বললাম বান্দা হাজির, হুকুম করুন জাহাপনা। তিনি মিটিমিটি হাসছেন, কিছুক্ষন হেসে লজ্জা পাওয়া
ভঙ্গিতে বললেন ;
— তুমি কিছু মনে না করলে তোমাকে একটা কথা বলবো আমি।
– আরে জলদি বলেন আমি তো শুনতেই চাই কতদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি শোনার জন্য (মনেমনে)
—আসলে তুমি কি ভাববে সেটাই বুঝতে পারতেছিনা তার জন্যই ইতস্তত বোধ করছি।
–ধূর কিছুই মনে করবোনা আপনি বলেন এই আমি চোখ বন্ধ করে আছি (কিছুটা লজ্জা পেয়ে)
— আসলে আমার গফের জন্মদিন। ও ওর গিফট চায় আর জন্মদিনের দিনই তাকে গিফট দিতে হবে এটাই তার বায়না। আসলে তুমি তো মেয়ে মানুষ মেয়েদের পছন্দ অপছন্দ বুঝবে তাই এই ব্যাপারটা তোমার উপর ছেড়ে দিতে চাচ্ছি তুমি একটু বুদ্ধি দাও প্লিজ।
এই কথা শোনার পর আমার মাথায় মনে হলো তিনটা ঠাডা পড়ছে। হৃদয় পোড়ার গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো চারিদিক।
বিদ্যুৎছটায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে আর হঠাৎ করেই থেমে গেলো হৃদয় মন্দিরের ঘন্টা। এ আমায় কি শোনালিরে হাদারাম।
সব দূঃখ কষ্ট মনের মধ্যে চেপে রেখে বললাম ”
–পেইন্টিং, মেয়েরা নিজের ছবি পেইন্টিং খুব পছন্দ করে ভাইয়া। আমার একজন আর্টিষ্ট বন্ধু আছে আপনি চাইলে ওকে বলবো এঁকে দিতে আর ডেলিভারির ঝামেলা আপনাকে করতে হবেনা আপনি আমাকে ঠিকানা বলে দিলে ওকে দিয়েই ডেলিভারি করিয়ে দিবো। আপনি শুধু টোটাল খরচ বহন করবেন।
— থ্যাংকয়্যু পুচকু, ঝামেলা থেকে বাঁচালে আমাকে আর শোনো সাথে কিছু চকলেটও দিয়ে দিতে বইলো ঠিকাছে!
–আচ্ছা; আপনার গফকে বলে রাখবেন সারপ্রাইজ গিফট আছে তার জন্য। তাহলে খুশি বেশি হবে।
বন্ধুকে ফোন করে বললাম মেসেঞ্জারে একটা ছবি পাঠিয়েছি ওইটা দেখে এঁকে দিবি। আর হ্যা, এমন ভাবে আঁকবি যেন প্রথম দর্শন করার সাথে সাথেই মেয়েটা ব্রেকাপ করে দেয় ছেলেটার সাথে। বন্ধু আমার বললো তথাস্তু মহারানী তুই বসে বসে চিল কর কাজ হয়ে যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। ছবি এঁকে ফ্রেমে বাধানো হয়েছে চকলেটের বদলে দেওয়া হয়েছে কতগুলো জীবন্ত তেলাপোকা আর টিকটিকি তারপর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যথাযথ ঠিকানায়। কোনো ভুল ত্রুটি হয়নি, আমি আবার এক কথার মানুষ কিনা! তিন দিন ধরে আন্টি এসে বলে যাচ্ছেন, হিমু তোকে তোর ভাইয়া ডাকে কি যেন জরুরি কথা বলবে। আমি মনে মনে ভাবি আর গেছি তোমাদের বাসায়।
(সমাপ্ত)