নারীর অনুভূতি

প্রতিরাতে আমার স্ত্রী আমাকে টর্চার করে আবার নিজেই কান্না করে। আমার নামে অভিযোগ করে। আমি নাকি তার মন বুঝিনা। আমি নাকি তার চাওয়া পাওয়ার মূল্য দেই না।

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে তার হাসিমুখটা আমারও খুব দেখতে ইচ্ছে করে। সে অভিযোগ করে আমি তার হাসির কারণ হতে পারিনি। কথা রাখতে পারিনি। আমি যখন বিয়ের প্রথম প্রথম তাকে আদর করে কিছু খাওয়াতে যেতাম সে মুখটা সরিয়ে নিত। একবার আঙুর খাওয়াতে গিয়ে সে এমন করায় আমি রাগে আঙুর ফেলে দিয়েছিলাম। বিয়ের প্রথম তিনদিন তাকে তার নিজ হাতে খেতে দেইনি। পাগলের মতো ভালোবেসেছি। কোনো কাজে মন বসাতে পারতাম না তার জন্য। হাজার বছর বাঁচতে চেয়েছি তাকে বুকে নিয়ে।

সংসারের বড় ছেলে আমি। বিয়ের এক বছরের মাথায় বাবা মারা যায়। ৮ সদস্যবিশিষ্ট পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়ে। নতুন ব্যবসায় লাভের মুখ এখনও দেখিনি। এদিকে নিজের সংসার ওদিকে পরিবার। বিয়ের সময় ধার করা পাওনাদারের ধারের টাকা শোধ দিতে না দিতেই আবার ধারদেনা করে বোনের বিয়ে দিয়েছি। ৪ টা ভাইবোনের পড়াশুনার খরচ চালিয়েছি। মায়ের চিকিৎসার খরচ যুগিয়েছি। এসব করতে করতে আমি স্ত্রীর প্রতি যত্নহীন হয়ে যাই। দায়িত্ব করে কোনরকম দিন পার করি শুধু। আস্তে আস্তে নিজের আবেগ অনুভূতি কোথায় হারাতে থাকে আমি জানিনা।

আমার বদলে যাওয়া তাকে কষ্ট দিতে থাকে। তার হাসিমুখ আমার বদলে যাওয়া রুপের কাছে কদাকার হতে থাকে।তার ছোট ছোট চাওয়া আমি পূরণ করতে পারিনা। এখন আর তাকে আমি আদর করে খাইয়ে দিতে পারি না। অভিমান করে দুরে সরে গেলেও আমার খারাপ লাগেনা। আমি তার মান ভাঙাইনা।মনে হয় আমি হাপ ছেড়ে বাঁচি। আমি যেভাবে চেয়েছি সেভাবে পাইনি তাকে।

ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতির ঊর্ধেও অনেক সময় জীবনসঙ্গীনিকে সহঢাল হয়ে একসাথে জীবন যুদ্ধে পথ চলতে হয়।আমি একাই সে পথ পাড়ি দিয়েছি। সে শুধু তার ন্যাকামো সস্তা আবেগ দিয়ে জীবনদর্শন দেখিয়েছে আমায়।আমিও খুব চেয়েছি কেউ সহমর্মি হয়ে আমার ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মনের সঙ্গী হোক,নির্ভরতার একটি হাত এসে আমার হাতটি ধরুক। পাইনি আমি।আমরা দুজন এক ঘরে,এক বিছানায় থাকলেও মনের দিক থেকে দু’জন দু’মেরুতে অবস্থান করেছি।

আমি সংসারের এত দায়িত্বের ভার একহাতে সামলাতে হিমসিম খাই। ব্যবসায় দু’বার লস খাই। পায়ের নিচের মাটি, মাথার উপরে ছাদ আর পেটে ভাত না থাকলে ভালোবাসা,আবেগ, অনুভূতি সবই যে মূল্যহীন তা আমার স্ত্রী বুঝতে চায়না। আমার আবেগ, অনুভূতি বাস্তবতার কাছে সেই কবে থেকে শেষ হতে শুরু করেছে আমি টের পাইনি। সে অনেক আবেগী মানুষ। কথায় কথায় তার ভালোবাসাপূর্ণ আবেগ আমার টানাপোড়নের কাছে বিরক্তিকর। আমার চাই টাকা! অনেক টাকা!

আমার থিউরি টাকা হলে এসব সস্তা আবেগকে প্রশয় দেয়া যায়। টাকা না থাকলে ভালাবাসা তিক্ততায় রুপ নেয়। কই আমার পকেটে টাকা আছে কিনা তার খবর তো কেউ নেয় না! সবাই সবার প্রয়োজন পূরণে আমার মাথা চিবিয়ে খায়। কই তখন তো কেউ বলেনা, “খাবার লাগবেনা। দুধ,চিনি,চাপাতি,চাল,ডাল,তেল,আলু,পেয়াজ, মাছ,মাংস কিচ্ছু লাগবেনা। ভালোবাসা খেয়েই থাকবো,তাতেই পেট ভরবে,কিচ্ছু লাগবেনা শুধু প্রিয় তোমার মুখখানি দেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দেব”! কই কেউ তো বলেনা,”তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে! অনেক খাটুনি করে ক্লান্ত তুমি,ঘুমাও একটু শান্তিতে।”

ক্লান্ত হয়ে ঘুম এসে পড়ায়ও দোষ! আমি নাকি জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষ। বিছানায় গেলেই নাক ডেকে ঘুমাই। আর তার দিকে তাকানোর সময় আমার নাই। কাজ,খাওয়া,ঘুমই নাকি আমার কাজ। ঘুমের মাঝখান থেকে প্রায় রাতে আমাকে ডেকে উঠায় তার আবেগীয় গল্প শুনাতে সাথে ছিদকাদুনিদের ভ্যা ভ্যা তো আছেই। সে একবারও ভাবে না এভাবে হঠাৎ ঘুম ভাঙলে ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই টর্চার আমি অনেকদিন সহ্য করে একদিন আর পারিনি। তাকে কিছু কড়া কথা বলেছি। সে প্রায় মূর্ছা যাবার অবস্থা। বড় রকমের কষ্ট পেয়েছে সে। তার কষ্ট আমার কষ্টের চেয়ে বড় মনে হয়নি আমার। তাই আমি তার কষ্টে নিজেকে জরাইনি। এত জালা আমার ভালো লাগেনা।

আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। হয়তো তার চাওয়া পাওয়া আমি সত্যি বুঝিনা কিংবা বুঝেও আমার সেই অনুভূতি জাগ্রত হয় না। দিনের পর দিন আমাকে যে না বুঝে স্বার্থপরের মতো নিজেকে, নিজের চাওয়াগুলোকে আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছে আজ আর আমার তাকে বুঝতে ইচ্ছা করেনা।

তবে এই সত্যি আমাকে মানতে হবে যে, জগতে আর দশটা নারীর মতো তার কোনো বিলাস বাসনা নেই। নিত্য প্রয়োজন পুরণের পর শুধু তার ছোট ছোট আল্লাদি আবেগ পুরণে ব্যর্থ আমি।আমার কাছে এসব মেকি লাগে।
আমি সেসব পুরুষদের কথা খুব ভাবি যারা স্ত্রীর বিলাসবাসনায় প্রতিনিয়ত নিজেকে কোরবানি দিচ্ছে,কিভাবে তারা এত ধৈর্য পায়! যেখানে আমি খুব কম চাওয়া মানুষকে তুস্ট করতে পারছিনা।

সবাই নারীকে প্রাধান্য দেয়। পুরুষকেই দোষ দেয়। আমরাও কিন্তু মানুষ! আমাদেরও মন আছে! আমাদের ভেতরও কাঁদে। সে কান্না বাস্তবতার কশাঘাতে মিইয়ে যায়। আমরাও চাই স্ত্রী তথা জীবনসঙ্গী আমাদের মনের মূল্য দিক,সহমর্মি হয়ে কাছে থাকুক,সহঢাল হয়ে শক্তি দিক।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত