অফুরন্ত ভালবাসা

অবশেষে নানা মিয়া এক উর্বশী মেয়ের সাথে হসাইনের বিয়ে ঠিক করে ফেলে। অবশ্য এই মুহূর্তে হুসাইনের বিয়ে করার কোন ইচ্ছা নেই, কারণ বেচলর লাইফটা সে খুব ভাল ইঞ্জয় করতাছে। সকাল বেলা ক্লাস, দুপুর বেলা বিছানায় সুয়ে সুয়ে মোবাইলে মুভি দেখা, সন্ধ্যা বেলা হাজী হোটেলে চিকেন পার্টি, রাত্রে বেলা ফেইসবুকিং, LIFE IS SO BEAUTIFUL এর মধ্যে আবার বিয়ে শাদীর ভেজাল করার দরকার কি হুসাইনের মত আপাতত তাইই। কিন্তু ওর নানার একটাই কথা মরার আগে নাতবৌ দেইখা যাইতে চাই।

হুসাইন ঠিক করেছিল মেয়ে কে দেখেই না বলে দিবে, কিন্তু শারিফার ঝর্ণার পানির মত স্বচ্ছ কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারে নাই। নিজের থেকেই সে বিয়েয়ের জন্য সম্মতি দিয়ে দেয়। হুসাইনের নানা চব্বিশ ঘণ্টার ভিতরে অলিমা ছাড়া বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করে ফেলে। শারিফা আর হুসাইন দুইজনেই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে, একজন গ্রামে আরেকজন ঢাকায়। বিয়ে টা হুসাইনের জন্য আকস্মিক হলেও শারিফার জন্য তেমন ছিলনা,, কারন ওকে আগেই হুসাইনের কথা বলা হয়েছে এবং ছবিও দেখেছে, এ জন্য ও আগে থেকেই বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রিপেয়ারড ছিল। কিন্তু দুজনেই বিয়ের পড়বে বলে সম্মত হয়।

কিছু দিন পর হুসাইন ঘরে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে মুভি দেখছিল, এমন সময় ঘরে হুসাইনের আম্মা প্রবেশ করে,
হুসাইনের আম্মা= কিরে তোর মামার সাথে দেখা হইছে,
হুসাইন= না
হুসাইনের আম্মা= দুপুরে খেয়ে তোর মামার বাসায় যা, কত গুলা কাঁঠাল দিবে, নিয়া আসবি।
হুসাইন= ঠিক আছে, ভারা দেও।
হুসাইনের আম্মা= তোর মামার বাসায় যাইতে আবার ভারা লাগে, হেটে যা।

দুপুরের খাবারের পর একটু বিশ্রাম নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে দেয়া একটা নীল চেক সার্ট পড়ে হুসাইন মামার বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। হুসাইনের খুব ভাল হাটার অভ্যাস আছে, পায়ে হেটে আধা ঘণ্টার পথ ও কখন যানবাহনে চড়ে না। যাওয়ার পথে রাস্তার বাম পাশে একটা গার্লস কলেজ পড়ে, স্কুল কলেজের সামনে হুসাইন বেশি একটা দাড়ায় না, কারণ এখানে মেয়েদের ভিড় থাকে, তার উপরে হুসাইন একটু লাজুক। মাথা নিচু করে দ্রুত হাঁটতে থাকে। এমন সময় পিছন থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠ ডাক দেয় “এই যে একটু দাঁড়ান”
হুসাইন পিছনে তাকিয়ে দেখে সাদা নেকাব পড়া একটা মেয়ে ওর দিকে দৌড়ে আসছে। কাছে আসতেই হাপাতে হাপাতে জিজ্ঞেস করে “আমাকে চিনছেন”
হুসাইন= তুমি শারিফা না??
শারিফা= হুম্ম, কিভাবে চিনলেন আমাকে??
হুসাইন= তোমার চোখ দুটো অনেক সুন্দর, এমন মায়াবী চোখ আমি কখন দেখি নাই, তোমার চোখ কি রং বদলায়??
শারিফা একটু লজ্জা পায়, কোন উত্তর করে না, ওর বড় বড় নিঃশ্বাসের বাতাশ হুসাইনের শরীরে পরছে। ও আবারও প্রশ্ন করে “আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন??”
হুসাইন= নাহ, আমি তো মামার বাসায় জাচ্ছিলাম।
শারিফা একটু লজ্জা পায়, এই লজ্জা টা একটু ভিন্ন, এটা প্রত্যাক্ষিত হওয়ার লজ্জা, এটা আশা ভঙ্গের লজ্জা যেটা মুখে বলা যায় না। শারিফা ভাবছিল হুসাইন ওর সাথে দেখা করতে আসছে। শারিফা চুপ করে আছে, হুসাইন আবার প্রশ্ন করে “তুমি আমাকে এতো দূর থেকে চিনলে কি ভাবে??”
শারিফা= আসলে আপনার সার্ট টা দেখে চিনসি, এইটা আমি পছন্দ করেছিলাম।
হুসাইন= সার্ট টা অনেক সুন্দর হইছে, তোমার পছন্দ আছে।
এমন সময় শারিফার বান্ধবীরাও হাজীর
১ম বান্ধবি= কিরে এতো জোরে দৌড় দিলি কেন??
২য় বান্ধবি= বয়ফ্রেন্ড পাইয়া বেস্ট ফ্রেন্ড রে ভুইল্লা গেলি
শারিফা= চুপ, বয়ফ্রেন্ড না আমার হাসবেন্ড।।
১ম বান্ধবি= আরে একই তো কথা বিয়ার আগে বয়ফ্রেন্ড বিয়ার পর হাসবেন্ড, জিনিস তো একই।
২য় বান্ধবি= দুলা ভাই একটা আইস ক্রিম খাওয়ান।
হুসাইন= আমি তোমার দুলা ভাই না, ফাও কথা বলবা না।
২য় বান্ধবি= কিজে বলেন না, আমাদের বান্ধবিকে নিয়া গেলেন, আর এখন এই কথা।
হুসাইন= নেকামি কইর না, তোমগো বান্ধবিরে তোমরা নিয়া যাও।
শারিফা ওদের কথা শুনে মুখের উপর হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
২য় বান্ধবি= এখন তো এই কথা বলবেন ই, কারণ পাখি তো খাচায় এসে পরছে।
এমন সময় পাশ থেকে শারিফা বলে উঠে “এই থাম, তোরা যা আমি আসছি”
শারিফা= কিছু মনে করবেন না, ওরা দুষ্টামি করছে
হুসাইন= আমি জানি, আমিও দুষ্টামিই করছি। এখন আমি যাই।

শারিফা খুবি মিষ্টি এবং লাজুক একটা মেয়ে, কিন্তু যার সাথে একবার মিশে যায় তাকে দেখিয়ে দেয় সে কতবর দুষ্টের শিরমনি। শারিফাকে বিদায় দিয়ে হুসাইন সামনে হাটা শুরু করে, হাঁটতে থাকে আর শারিফাকে নিয়ে ভাবতে থাকে, হঠাৎ মনে মনে বলা শুরু করে= ইস মোবাইল নাম্বার টা নেয়া হল না, ফেইসবুক ইউস করে কিনা সেটাও তো জানা হল না। আমি আসলেই একটা ফরমালিন।

কিছু দিন পর হুসাইন ঢাকায় ফিরে আসে, হোস্টেলে ঢুকতেই বন্ধুরা যে যার মত হরর স্টোরি শুনাতে শুরু করে, এক জন বলে= এক সপ্তাহের ছুটি নিয়া দুই সপ্তাহ থাইকা আইছ, তোমার খবর আছে চান্দু,। আবার আরেক জন এসে বলে= তরে সিউর হোস্টেল থেকে বের করে দিবে। কিন্তু হুসাইনের কোন টেনশন নাই কারণ সে এভারেস্ট জয় করে আসছে ( আই মিন বিয়ে করে আসছে) আর এটা হল টিচার ভালো করেই জানে। হুসাইন রুমে ঢুকেই দেখে ওর চকির উপর মাসুদের লুঙ্গি, লুঙ্গি টা হাতে নিয়া মাসুদের মুখে মারে। মাসুদ হুসাইনের রুমমেট আবার ক্লাসমেটও। পাশ থেকে হুসাইনের আরেক রুমমেট মামুন বলে উঠে= আইতে না আইতেই বান্দরের লাফালাফি শুরু অইয়া গেসে

হুসাইন কোন রিপ্লাই করে না। সে ব্যাগ, টেবিল, বিছানা পত্র না গুছিয়েই শুয়ে পড়ে।
মামুন আর মাসুদ ভাবে হুসাইনের হয়ত মন খারাপ, বাড়িতে খারাপ কিছু হইছে।
বিকালে হুসাইন ঘুম থেকে উঠলে মামুন আর মাসুদ ওকে জিজ্ঞেস করে= কিরে দোস্ত তোর কি হইছে
হুসাইন= আরে তেমন কিছু হয় নাই, জাস্ট আমি সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়ে গেসি
মামুন= মানে??
হুসাইন = মানে আমার বিয়ে হয়ে গেছে
মাসুদ= কি কস মামা!! ভাব টাতো এমন ধরসছ, যেন তোর বউ মইরা গেছে।
মামুন= তাইলে তো আজকে সন্ধ্যায় হাজী হোটেল চিকেন পার্টি হইব প্লাস গরুর গোস্তের তেহারি। পকেট তো তোর গরম আছেই।।

হস্টেলে আসছে এক সপ্তাহ হয়ে গেছে, এই কয়দিন পড়ালেখা, খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ভালোই চলছে, কিন্তু যখনি একটু অন্যমনস্ক হয় তখনি শারিফার কথা মনে পড়ে, চোখের সামনে ভেসে উঠে দিঘির জলের মত স্বচ্ছ কাজল কালো বড় বড় চোখ। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন ভালবাসার মানুষ কে নিয়ে চিন্তা করতেও ভালো লাগে, ওর নাম বার বার উচ্চারণ করতেও ভালো লাগে। হঠাৎ মোবাইলের দুইটা টুন টুন শব্দ হয়। মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখে ফেইসবুক থেকে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসছে, নাম শারিফা ইসলাম বীথি। নাম টা পড়েই হুসাইনের হার্ট জোরে জোরে পাম্পিং করা শুরু করে। এটা কি সেই শারিফা?? যাকে হুসাইন ভালবাসে। কোন কিছু না দেখেই কনফার্ম করে ফেলে। কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা ম্যাসেজ আসল
শারিফা= কেমন আছেন??
হুসাইন= কে তুমি??
শারিফা= নিজের বউ কেও চিনেন না!!
হুসাইন= তুমি কি সত্যিই শারিফা??
শারিফা= না, আমি পেতনী। ভয় পাইছেন??
হুসাইন= নাহ, তুমি পেতনী হইলে আমি ভেম্পায়ার, সোঁ ভয় পাওয়ার কিছু নাই। আমার আইডি পাইছ কিভাবে??
শারিফা= আপনার ছোট বনের কাছ থেকে নিয়েছি।
হুসাইন= আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তুমি শারিফা। একটা ছবি দেও।

সাথে সাথে শারিফা একটা ফটো সেন্ট করে দেয়। হুসাইন শারিফার ফটোর দিকে তাকিয়ে আছে, শারিফার মাথায় একটা ধূসর রঙের স্কার্‌ট, ডাগর ডাগর চোখের নিষ্পাপ চাহনি, গোলাপি ঠোঁটে মৃদু হাঁসির আভা, চাদের মত মায়াবী মুখমণ্ডল। হুসাইন এক পলকে শারিফার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। হুসাইন একটু পর পর মোবাইল অন করে ছবিটা দেখে, এমন কি রাত্রে বেলা ছবিটা দেখতে দেখতে ঘুমাইয়াও গেছে।

***
রাত বার টার দিকে নেট ব্রাউজ করতে করতে মাসুদের মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যায়, মাসুদ হুসাইনের মাথার কাছে যায়, ডিম লাইটের নিভু নিভু আলোতে বিছানা হাতরিয়ে হুসাইনের মোবাইল টা খুজে বের করে। পাওয়ার বাটন ক্লিক করে মোবাইলের লক ওপেন করতেই শারিফার ছবি ভেসে উঠে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে হুসাইন নিঃশব্দে একটা মুচকি হাসি দেয়।
পরের দিন শারিফা হুসাইন কে ম্যাসেজ দেয়
শারিফা= জানেন আজকে একটা এক্সাইটেড কাজ করেছি।
হুসাইন = কি কাজ করছ??
শারিফা= আমার ভাবি ঘুমিয়ে ছিল, উনার নাকের নিচে লিপ লাইনার দিয়ে মোছ একে দিয়েছি।
হুসাইন= এগুলা তো বাচ্চারা করে, তুমি কি বাচ্চা নাকি??
শারিফা= হুম, আমি শিশু, আপনে তো বুড়া। আমি ওয়েট করছি ভাবি ঘুম থেকে উঠলে কি হয়, সেই সিচুয়েশন টা দেখার জন্য আমি আরও এক্সাইটেড।
হুসাইন= কি আবার হবে, তোমার ভাবি ঘুম থেকে উঠবে, কারো সামনে পরবে, সে বলব তোমার মুখে এসব কি? তোমার ভাবি আয়না দেখবে আর বলবে কোন শয়তান এই কাজ টা করছে। এর পর মুখ ধুয়ে ফেলবে। বাস কাহিনী খতম।
শারিফা= না, এমন হবে না।
হুসাইন= তো কেমন হবে??
শারিফা = ভাবি ঘুম থেকে উঠবে ভাইয়ার সামনে পরবে, ভাইয়া বলবে এই শয়তান এগুলা কি মুখে? আর কয়টা বকা দি্বে। এর পর ভাবি মুখ ধুয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করবে এটা কে করছে?
শারিফা যেমন বলছে ঠিক তেমন ই ঘটেছে। এই কারণে হুসাইন কে ম্যাসেজ দিয়ে ঘটনার আপডেট জানিয়ে দেয়।
শারিফা= দেখলেন তো আমার থিঙ্কিং পাওয়ার।
হুসাইন= হুম, তুমি অনেক চালাক। আচ্ছা বলত সবচেয়ে চালাক প্রাণীর নাম কি??
শারিফা= ডলফিন, DOLPHIN IS CLAVER LIKE ME
হুসাইন= ওকে, I LIKE YOU
শারিফা= আমি বলছি আমাকে লাইক করতে
হুসাইন= তুমি না বললে LIKE ME
শারিফা= আমি বলছি, ডলফিন আমার মত চালাক
হুসাইন= না, তুমি এই কথা বল নাই, এখন ও আছে ম্যাসেজ টা, তুমি LIKE ME বলছ।
শারিফা= হুম, বলছি, আপনে বেশি বুঝেন। একটা শয়তান, বান্দর ফরমালিন।
হুসাইন= হাসির ইম

এমন সময় বাস্তবেও হুসাইন মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। অনেকক্ষণ যাবত মামুন হুসাইন কে লক্ষ করছিল, হুসাইন একা একা মুচকি হাসছে। মামুন এইবার বলেই ফেলে
মামুন= কিরে তুই কি পাগল হইলি নাকি, একা একা হাসতেছিস।
হুসাইন= নারে দোস্ত একটা হাঁসির সিনেমার কথা মনে পরে গেছে।
মামুন= আমরা তোর মত বলদ না, আমরা বুঝি তুই কার কথা মনে কইরা হাসতেছিস। চালা চালা সময় এখন তোদের।
হুসাইন= দোস্ত হিংসা করিছ না, তোর লাইফে একটা হুর পরি আইব, দেহিছ।
মামুন= আগে তো নিজের ঢোল পিডা, পরে আমার চিন্তা কর।
হুসাইন= আমি তো আমার ঢোলই পিডাইতেছিলাম, তুইত বাম হাত ঢুকাইলি।
হুসাইন আবার শারিফা কে ম্যাসেজ দেয়,
হুসাইন= তোমার কারণে আমার ফ্রেন্ড আমারে পাগল বলছে, তোমার ম্যাসেজ পইরা হাসতাছিলাম, আর ও বলে আমি নাকি পাগল হয়ে গেছি।
শারিফা= এতো সত্য কথা কিভাবে বলল, ওরে দুইটা আচার দেন।
হুসাইন= হুম দিমু নে।

পরের দিন সন্ধ্যাবেলা প্রচণ্ড বৃষ্টি, হুসাইন বারান্দা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে, একটু দূরে মাসুদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে। হুসাইন ভাবছে এই মুহূর্তে হয়ত শারিফা জানালার পাশে বসে বাড়ির অন্য মহিলা সদস্যদের সাথে জোড়ে গান ছেরে ভীষণ আড্ডা দিচ্ছে। এমন সময় মামুন ও হল সুপার কাসেম হুজুর হুসাইনের কাছে এসে দাড়ায়। হুসাইনের কোন খেয়াল নেই ওর পাসে কে দাড়িয়ে আছে। হুসাইন আনমনে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পানি হাতে নিয়া কাসেম হুজুরের মুখে মারে। কাসেম হুজুর জোরে চিৎকার দিয়ে বলেচ= এই বেয়াদব, তুই আমার গায়ে পানি মারলি কেন??
হুসাইন অপ্রস্তুত ভাবে বলতে শুরু করে= সরি হুজুর, আমি ইচ্ছা করে মারি নাই, আমি ভাবছিলাম মাসুদ।
কাসেম হুজুর= তো তুই মাসুদের গায়ে পানি মারবি কেন??
হুসাইন= আসলে হুজুর আমি খেয়াল করি নাই।
কাসেম হুজুর= খেয়াল থাকে কই, বাড়িত কি বউ রাইখা আইছছ??
এই কথা বলার সাথে সাথে সবাই হাসতে শুরু করে। পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পেরে কাসেম হুজুর ও হাসতে শুরু করে।
কাসেম হুজুর= সত্যিই তো, তুই তো বাড়িতে বউ রাইখা আইছছই।
হুসাইন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
কাসেমে হুজুর= আহা, বেটা বউ এর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
সবাই আবারো হাসতে শুরু করে, এমন সময় মাসুদ বলতে শুরু করে=জি হুজুর মাথাটা পুরা গেছে, রাত্রে বেলা বউ এর ছবি দেখতে দেখতে ঘুমায়। মামুন ও বলতে শুরু করে= জি হুজুর, প্রায় ই বউ এর কথা মনে করে একা একা হাসে। হুসাইন মনে মনে বলে= দুইটায় সুযোগে বাঁশ দিতাছে।
কাসেম হুজুর= বলিস কিরে, ওর অবস্থা তো পুরা সিরিয়াস।
মাসুদ= ওরে আইসিইউ তে নেয়া লাগবো
কাসেম হুজুর= আরে নাহ, ওরে ওর বউ এর কাছে পাঠান লাগবো। যা বেটা আগামি সপ্তাহে তোর তিন দিন ছুটি মঞ্জুর।
সবাই হাসতাছে, হুসাইন ও খুব খুশি। মাসুদ হুসাইনের কানের কাছে এসে বলে= দেখসছ দোস্ত কেমনে তরে ছুটি পাওয়াইয়া দিলাম।
হুসাইন= ছুটি পাওয়াইয়া দিছছ, না বাঁশ দিছছ।
মাসুদ= ছি দোস্ত, তোর আমি বাঁশ দিতে পারি।
হুসাইন= না পারছ না, সুযোগ পাইলে ছারছ না।

হুসাইন শারিফাকে সাপ্রাইজ দেয়ার জন্য আগে আগে ওদের কলেজের গেটের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। হুসাইনের যেই অবস্থা শারিফার অবস্থা তার থেকে কম না। আজকাল শারিফা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হুসাইন কে কল্পনা করে, হুসাইন ওকে পিছন দিক থেকে জরিয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে ভালবাসার কথা বলে। একা একা হুসাইন কে নিয়ে ভাবে। ডাইরির পাতায় রঙিন কলম দিয়ে হৃদয় একে তার ভিতর সুন্দর করে হুসাইনের নাম লিখে। হুসাইনের নাম লেখাতেও একটা আলাদা সুখ অনুভব করে শারিফা।

শারিফা প্রাচী মেডামের ক্লাসে অন্যমনস্ক হয়ে হুসাইনের কথা ভাবছে। প্রাচী মেডাম খুবি রাগি একজন মহিলা, ঘোর পুরুষ বিরোধী, আবার বিবাহ প্রথার বিরোধিতা ও করেন। জিবনে তিন বার বিয়ে করছেন, কিন্তু কোন বিয়েই টেকেনি। ভার্সিটিতে থাকতে লিভিং রিলেশনশিপেও জড়িত ছিলেন। ভীষণ ফেমিনিস্ট টাইপের মহিলা। বেশির ভাগ সময় পাংশু বর্ণের শাড়ী ও কপালে বড় লাল টিপ পরেন, কখন কখন চন্দনের ফোটাও পরেন। উনার বেশির ভাগ লেকচারেই “পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ” কথাটার উল্লেখ থাকবেই থাকবে। প্রাচী মেডাম শারিফার বিয়ে সম্পর্কে সব কিছুই জানেন। শারিফা কে অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে = এই মেয়ে বাইরে তাকিয়ে কি দেখ, পড়া লেখা তো করতে মনে চায়না, কলেজে এসে শুধু ছেলেদের কে চেহারা দেখাও। নিজে তো গল্লায় গেছো অন্যদেরকেও নিজের সাথে নিচ্ছ।
এই বলে শারিফাকে কতগুলো কঠিন কঠিন প্রশ্ন করে, যে গুলোর উত্তর করা হঠাৎ করে কারো পক্ষেই সম্ভব না। শারিফা একটা প্রশ্নেরও দিতে পারেনা।
প্রাচী মেডাম= পারবে কিভাবে? কলেজে তো আর পড়তে আসো না, আসো ছেলে ঘুরাইতে।
এমন সময় ঘণ্টা পরে, মেডাম ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়, পিছনে পিছনে শারিফাও ব্যাগ গুছিয়ে কলেজ থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যায়। হুসাইন শারিফাকে কাঁদতে দেখে কিছুটা অবাক হয়। ও পিছন দিক থেকে শারিফাকে ডাক দেয়। শারিফা পিছনে তাকিয়ে দেখে হুসাইন। হুসাইন শারিফার সামনে গিয়ে দাড়ায়।
হুসাইন = কি বেপার তুমি কাদছ কেন???
শারিফা কাঁদতে কাঁদতে বলে= আজকে প্রাচী মেডাম আমাকে অনেক অপমান করছে, অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন করেছে। আমি কোনটার উত্তর দিতে পারি নাই।
হুসাইনের প্রচণ্ড রাগ হয়, রাগের কারণে ওর হাত পা কাপতে থাকে। ও কোন ভাবে নিজের রাগ সংবরণ করে শারিফাকে বুঝায়
হুসাইন= আরে, প্রাচী মেডাম তো এমনি, তার কথায় আবার কাঁদতে হয় নাকি।
শারিফা= আপনি প্রাচী মেডাম কে চিনেন??
হুসাইন= প্রাচী মেডাম কে আবার কেনা চিনে। এলাকার নাম্বার ওয়ান ফেমিনিস্ট এবং এন্টিম্যান
শারিফা= এন্টম্যান??
হুসাইন= এন্টম্যান না এন্টিম্যান। এন্টম্যান তো মারভেলস মুভি। এন্টিম্যান হোল পুরুষ বিরোধী মহিলা। এটা আমি আবিস্কার করছি।

শারিফা আর হুসাইন রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটছে, কিছু দূর যাওয়ার পর শারিফার বাবার সাথে দেখা হয়। শারিফার বাবা হুসাইন কে দেখে খুব খুশি হয়, তারপর দুইজন কে বাসায় নিয়ে যায়। হুসাইন আর হুসাইনের শ্বশুর দুইজন একসাথে খেতে বসে। পিছনে দাড়িয়ে শারিফা খাবার পরিবেশন করে। শারিফা ওর বাবাকে বলে
শারিফা= আব্বু মাসের ডাউল দিব
শারিফার বাবা= হুম, এক চামিচ দে। ওকেও দে
শারিফা হুসাইনের কাছে গিয়ে বলে= আপনাকে ডাউল দিব
হুসাইন = না, লাগবে না।
না বলা সত্ত্বেও শারিফা হুসাইনের প্লেটে দুই চামিচ ডাউল দিয়ে একটা মৃদু হাসি দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করে। শারিফার বাবা এই দৃশ্য দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে খাওয়ায় মনযোগ দেয়। হুসাইন শারিফার কান্ড দেখে ভাত মাখতে মাখতে ছোট্ট একটা হাসি দেয়।
দুইদিন পর হুসাইন বিছানায়া শুয়ে শুয়ে ভাবছে আগামিকাল সকালে শারিফার সাথে দেখা করে ঢাকায় ফিরে যাবে। এমন সময় মাসুদের ফোন আসে
হুসাইন= হ্যালো
মাসুদ= আগামিকাল সকাল দশটার আগে আইয়া পরিছ। সোনারগা যামু, পলাপাইন ঠিক হয়ে গেছে
হুসাইন= ড্রেসকোড কি??
মাসুদ= ময়লা জুব্বা।।
হুসাইন= কি!!! প্লিজ দোস্ত ড্রেসকোড চেঞ্জ কর
মাসুদ= তোর লাইগা আরমানি স্যুট অর্ডার করছি। সবাই এপ্রুভ দিসে তুই না করছ কেন??কথা কম ক, পকেট ভইরা টাকা লইয়ায়।
মাসুদ ফোনটা কেটে দেয়।
পরেরদিন শারিফা ম্যাসেজ দেয়
শারিফা= আপনে কোথায়
হুসাইন= ঢাকায়
শারিফা= আমার সাথে দেখা না করেই ঢাকা চলে গেছেন। একবার বললেন ও না।
হুসাইন= রাগ কর না, কুরবানির ঈদের ছুটিতে তোমাদের বাসায় যাবো।
শারিফা= আপনাকে দাওয়াত দিলে না আসবেন।
হুসাইন= সমস্যা নাই, হাতে মেহেদি দিয়ে ছবি পাঠাইয়া দিও।
শারিফা= হুম, হাতে দিমু, পায়ে দিমু, মাথায়ও দিমু
হুসাইন= মাথায় দেয়ার বয়স তোমার হয় নাই, মাথায় মেহেদি দেয় বুড়ারা
শারিফা= I WANT TO BE BURI
হুসাইন= I LIKE BURI
শারিফা= সত্যি, আমার একটা বুড়া দাদি আছে, আপনার সাথে খুব ভালো মানাইব।
হুসাইন= হুম, বুড়ীর এক ঠ্যাং কবরে আরেক ঠ্যাং কলার ছিলকার উপরে, তুমি চাও তার সাথে আমি লাইন মারি।
শারিফা= একটু লাইন মারলে সমস্যা কি। মানুষ তো মানুষের জন্যই
হুসাইন= আমি শুধু তোমার জন্য
শারিফা= আমার তো নিজেরই খাইয়া দাইয়া টাইম নাই, আবার আপনে?
হুসাইন= ঠিক আছে, তোমার দাদির সাথে লাইন মারমু, আগে বুড়ীর গালে স্ত্রিরির মেশিন দিয়া দুইটা ডলা দিয়।
শারিফা= কেন??
হুসাইন= আমি বুড়ীর নিরানব্বই টা ভাঁজ পরা গালে কিজ দিমু না।
শারিফা= হা হা হা
হুসাইন= তুমি হাস, আমার খুব খারাপ লাগতাছে, মন চাইতাছে তোমার কাছে চলে আসি।
শারিফা= একদম ঠিকই আছে, আমার সাথে দেখা না করে গেছেন কেন??
হুসাইন= আমার কান্না আসছে।
শারিফা= আরে আমি তো দুষ্টামি করে বললাম, আপনে কাদবেন না প্লিজ।
হুসাইন= আরে আমি তোমার জন্য কাদতেছি না, আমি পেয়াজ কাটতাছি, এই কারণে কাদতেছি, ঝাল মুরু বানামু।
শারিফা= শয়তান, বান্দর, ফরমালিন। আপনে এলাকায় আসেন, আপনেরে পিটাইয়া তারগাছ বানামু।

এভাবে চলতেই থাকবে, অফুরন্ত প্রেম।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত