সাদা চিরকুট

ইরফান কে রাস্তার মোড়ে পেয়েই আদ্রিতা ইরফানের কলার চেপে ধরে বলে,প্রতারক, ধোঁকাবাজ। তিন তিনটি বছর আমার সাথে প্রেম করলি আর এখন গত ছয় মাস ধরে তোর কোন খুঁজ নাই?
ওহ আদ্রিতা রাস্তায় এসব কি করছো?

একদম চুপ।তুই একটা প্রতারক বুঝলি? এ কথা বলেই ইরফানের গালে এক সাথে একের পর এক চড় মারতে লাগলো।

ইরফান ঘটনার আকষ্মিকতায় একদম বোকা হয়ে গেল!কি ঘটছে আমার সাথে এসব? আর আমি কি সত্যি আদ্রিতার সাথে প্রতারণা করেছি?

রাস্তার সমস্ত মানুষ দাঁড়িয়ে একটি মেয়ের দ্বারা একটি ছেলের লাঞ্চিত হওয়ার দৃশ্য দেখছে।
সবাই বলাবলি করছে,নিশ্চয় ছেলেটা কোন দোষ করেছে নতুবা মেয়েটি এতোটা ক্ষেপলো কেন?
মেয়েটি ঠিক কাজই করছে।

ইরফানের কাঁন্না পাচ্ছে কিন্তু কাঁন্নাও করতে পারছে না।কাঁন্না চেপে রেখেছে তবুও চোখ থেকে অশ্রু টপ টপ করে পড়তে লাগলো।

আদ্রিতা বললো,তুই একদম নাটক করবি না বুঝলি? তোরা ছেলেরা এমনি।মেয়েদের সাথে টাইম পাস করে চলে যাস যখন নতুন কাউকে পেয়ে যাস।

কিন্তু আমি সে রকম কোন মেয়ে নই বুঝলি? প্রতারণার সাজা তোকে আমি নিজেই দিব।এ কথা বলেই আদ্রিতা ইরফানের মুখে থুথু মেরে দিল।তুই আমার থুথুরও যোগ্য না তবুও তোকে থুথু মারলাম যাতে সারা জীবন মনে থাকে।

প্লিজ আদ্রিতা আমাকে বলার সুযোগ তো দাও।
চুপ চিটার।তোকে আর কোন সুযোগ দেওয়া হবে না।বরং আমি পুলিশের কাছে ফোন দিচ্ছি ওরা এসে তেকে নিয়ে যাবে।

দেখো আদ্রিতা তুমি কিন্তু বড্ড ভুল করছো।
এই বললাম না তোকে চুপ থাকতে।তোর কোন কথাই আজ আমি শুনবো না।
বল কেন আমার সাথে চিট করলি? আর বর্তমানে কোন মেয়ের সাথে প্রেমের নাটক করছিস?
এ কথা বলে আদ্রিতা আরো কয়েকটা চড় মারলো ইরফান কে।

ইরফান পারছে না শুধু চিৎকার করে কাঁদতে।ইরফানের গাল দুটি লাল হয়ে আছে আদ্রিতার চড়ে।তবুও আদ্রিতা ইরফানের কলার ধরে আছে।
লোকজন বলছে,ম্যাম শালাকে আমাদের হাতে দিয়ে দেন গণধোলাই দেয়।
না আপনাদের লাগবে না।ওকে শিক্ষা দিতে আমিই যতেষ্ট।
বাঙালি চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানে না কিন্তু গণধোলাইয়ের বেলাই উস্তাদ!

আদ্রিতা শোন,আমি কোন মেয়ে -টেয়ের সাথে প্রেম করছি না। প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস করো।
চুপ প্রতারক!

আমার নাম তোর মুখে আনবি না।তোকে আমি অনেক ভালোবাসতাম কিন্তু তুই আমার সাথে চিট করলি।

ঘৃনা হচ্ছে তোর মতো অমানুষ কে আমি ভালোবেসে। জাস্ট একটু ওয়েট কর পুলিশ রাস্তায় আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে থানার এস আই পুলিশের দলবল নিয়ে হাজির।
হ্যা ম্যাম বলুন কি ব্যাপার?
স্যার এই প্রতারক কে এ মুহূর্তে এরেস্ট করে নিয়ে যান।আপনি নিশ্চয় জানেন থানার ওসি আমার আব্বু হয়।
হ্যা জানি তো।
ওর নাম ইরফান। আমার সাথে তিন বছর রিলেশন করে গত ছয় মাস ধরে সে উদাও ছিল।আমার সাথে সে চিটিং করেছে অফিসার।

প্লিজ এরেস্ট হিম…
সরি ম্যাম। ইরফান ভাই কে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি।উনি কোন প্রতারক বা চিটার নন।আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে।

কি বলছেন যত্তসব!
বলছি না ওকে এরেস্ট করতে।
সরি ম্যাম ইরফান কে গ্রেফতার করলে আমাদের কারোই চাকরি থাকবে না।
চাকরি থাকবে না মানে কী এসবের?
হ্যা ম্যাম আমাদের চাকরি থাকবে না।
নিশ্চয় সে আপনাকে ঘুষ দিয়ে রেখেছে।
না ম্যাম এসব কিছু না।আসলে আপনি যাকে এরেস্ট করতে বলছেন সে কোন সাধারণত ঘরের ইরফান নয়।

মানে কী এসবের? এ প্রতারক কে এক্ষুনি এরেস্ট করুন নতুবা আব্বু কে ফোন দিব।
ইরফানের পিতা আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার । সো বুঝতেই পারছেন আমাদের পক্ষে ইরফান কে গ্রেফতার করা পসিবল না।আমরা এখন যাচ্ছি। আর শোনেন ম্যাম!ইরফান বললে,আমরা আপনাকে এরেস্ট করতে পারি।কিন্তু ইরফান কে না।

এ কথা শুনে আদ্রিতার যেন হুশ ফিরে এলো। আমি এতক্ষণ কার গায়ে হাত তুললাম।অ চাইলে তো আমাকে তো গ্রেফতার করাতে পারেই বরং আমার আব্বুর চাকরি পর্যন্ত খেয়ে দিতে পারে।
আদ্রিতা এখন চুপসে গেছে। ইরফানের পিতা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহলে আমাকে জানায়নি কেন?

ইরফান অশ্রু শিক্ত চোখে আদ্রিতার সামনে থেকে চলে গেল।
আদ্রিতা দেখতে পেল ইরফানের পেকেট থেকে কিছু একটা পড়লো। হ্যা ছোট একটা সাদা চিরকুট।যেখানে লেখা ছিল।

প্রিয় আদ্রিতা,আমার ক্ষণিকের এ জীবনে তোমাকে আর জড়াতে চাই না।মেডিকেল টেস্টের সময় আমার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছে আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না।

তাই ইচ্ছে করেই তোমার থেকে দূরে সরে গেলাম।যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।জানি তুমি আমার ওপর অনেক রেগে আছো তবুও এ দূরত্ব তোমার ভালোর জন্যই।তোমাকে বড্ড ভালোবাসি পাগলি।আর যদি কভু জানতে পারো আমি বেঁচে নেই তবে কোন এক ক্ষণে আমার সমাধিতে এসে একবার ভালোবাসি বলে যেয়ো। আমি তা শুনতে পাবো।ভালো থাকবে…

আদ্রিতা চিৎকার মেরে মাটিতে বসে পড়ে।এ আমি কি করলাম? না জেনে না বুঝে ইরফান কে কষ্ট দিলাম? আমার যে কোন ক্ষমা নেই।ইরফান প্লিজ ফরগিভ মি…

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত