অভিশপ্ত বাসর রাত !

পর্ব- ১

আজ সাবিহার বাসর রাত। ছোট বেলা থেকেই এ রাতের ব্যাপারে শুনতে শুনতে আর নিজের বন্ধু বান্ধব এর মুখে শুনতে শুনতে নিজেরই আজ কেমন ঘোর লাগছে, কেমন যেন কি হয় কি হয় অবস্থা। তাছাড়া আজ বিয়ের পর মিঃ মেহবুব ই ওর লাইফে প্রথম পুরুষ। ও হ্যা, মেহবুব ওর হাজবেন্ড এর নাম।

মেডিকেল এর পড়ার দরুন কোন দিন প্রেম ভালবাসা নিয়ে ভাবার সময় হয় নি সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া। কিন্তু অন্য সবার মত প্রকাশ না করলেও ও ঠিকই এই দিনটির জন্য অনেক অপেক্ষা করছে।

মেহবুব পেশায় একজন সেনাবাহিনী কর্মকর্তা। মা ববাবার ছোট ছেলে। সাবিহাও ছোট। উনি সাবিহার মেডিকেলের প্রফেসর এর ভাইয়ের ছেলে। সাবিহার বাবা স্যারের মুখে ছেলের বায়োডাটা শুনে আর তাদের পরিবার পরিজনের সাথে দেখা করে খুব পছন্দ করেছেন। স্যার সাবিহাকে ওর মেডিকেল লাইফ
থেকেই খুবই স্নেহ করত তো সাবিহাও স্যারের কথার অন্যথা না করেই ও বিয়ের মত দে আর যেহেতু ওর নিজস্ব কোন পছন্দও ছিল না তাই অমতের কারনও ছিল না। আর যতটুকু মেহবুবকে দেখেছে ওর ভালই মনে হয়েছে। বাসায় যে দিন দেখতে গিয়েছিল শুধু ওর শাশুড়ি আর বড় ননদ ই কথা বলছে। ওর দুলাভাই ওদের কথা বলতে বলেছিল কিন্তু সে রাজি হয় নি তো সাবিহার মনে যে টুকু আশা ছিল তাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে ভাবল যাক বেটা বিয়ের পর তো কথা বলবিই আগেই না হয় একটু
ভাব ধর।

বিছানায় বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবছিল ও এরই মেধ্য ওর বড় জা আর ননদ ঢুকল মেহবুবকে নিয়ে। বেটা রুমে ঢুকেই ওয়াশরুমে চলে গেল আর ওর জা আর ননদ ওর সাথে গল্প করা
শুরু করল।
-কি ভাবি কেমন লাগছে? দেখ আমি কিন্তু তোমার থেকে ছোট তো তুমি করেই বলব।
– তোমার যা ইচ্ছে ডাকতে পার কোন সমস্যা নেই।
-ভাবি আমার ভাই কিন্ত বিশিষ্ট ভাবিস্ট সে কিন্তু ভাব ধরবে তুমি তার ভাবের কোন পাত্তা দিবা না। সাবিহা মনে মনে ভাবল যাহ বাবা ও মেহবুব সম্পর্কে যা ভাবছিল তাই ই যাই হোক একটু পর তার প্রমাণ পাওয়া যাবে যে সে কতটুকু ভাব নেয়।
-ওই বেটা মেহবুব আমাকে ওনেক জালাতন করছে ছোটবেলা থেকে। এর শোধ কিন্তু আমি তোমার উপর থেকে নিব। বড় ভাবি হাসতে হাসতে বলল
– আচ্ছা তুই থাম এবার।
বেচারিকে একটু রিলাক্স হতে দে। আচ্ছা সাবিহা আমরা গেলাম তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আর হ্যা সকালে কিন্তু সব গল্প বলতে হবে।
একথা শুনে সাবিহা হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তারা চলে যাবার পর একা একা খাটে বসে আছে। ডাক্তারি লাইফে অনেক ক্রিটিকাল সমস্যা ফেস করছে কিন্তু এমন দিশেহারা হয় নি কিন্তু আজ কেমন জানি ফিলিংস হচ্ছে। আরও একা, মা বাবাকে ছেড়ে আসার কষ্ট তো আছেই। মনে হল যেন দুনিয়া হঠাৎ পালটে গেছে, সব থমকে গেছে। গত কয়েক দিনের কর্ম ব্যস্ততা পুরো শরীরে ভর করছে, একটু শুতে পারলে বাচেঁ কিন্তু ওই লোক এসে দেখে ও ঘুম তাহলে কেমন লাগবে এই ভাবতে ছিল ওমনি সে ওয়াশরুম হতে ফিরে এল। ওর মুখে ঘোমটা দেয়া তাই লোকটাকে পুরোপুরি দেখাও যাচ্ছিল না। পরে কিছু একটা আলমারি থেকে খুলে নিয়ে বারান্দায় গেল।
[6/5, 3:14 PM] Promity: প্রায় আধা ঘণ্টা পর একসময় এসে বসল বিছানায়, একটু কেশে নিয়ে মাতালে স্বরে বলল অনেক রাত হল তুমি সোফায় গিয়ে শোও অথবা কোন সমস্যা না থাকলে বিছানায়
ও শুতে পার।
সাবিহা কথাটা শুনে যত না অবাক তার থেকে বেশি হল তার গায়ের গন্ধ পেয়ে। মদের গন্ন্ধ!!!! সাবিহা বলল – আপনি ড্রিংকস করেছেন????
অমনি মেহবুব রেগে গিয়ে বলল – খবরদার বিয়ে করেছি বলে আমার উপর কখনই অধিকার প্রয়োগ
করবা না। সোফায় গিয়ে শুতে বলেছি গিয়ে শোও।
কথাটা শুনার পর ওর মনে হল ওর দুনিয়াটা পুরো অন্ধকার হয়ে গেছে। ভয়ে না লজ্জায় কাঁপতে কাঁপতে ও সোফায় কোন মতে গিয়ে শোয়। শুধু ভাবছে -এ কি হল???? আল্লাহ কেন ওর সাথে এমন
করল ও তো কাউকে ঠকায় নি তাহলে!!!! সে দিনের রাত ওর কেমন কাটল তা ওই আর ঐ সোফার বালিশটাই জানল। ওর জীবনের সব থেকে অভিশপ্ত রাত।………..

২য় পর্ব—

সাবিহা একসময় হাত দিয়ে দেখল ওর চোখের পানিতে সোফার কুশন ভিজে গেছে, ওপাশ ভয়ে ভয়ে ফিরে দেখল মেহবুব খাটে উলটো হয়ে ঘুমিয়ে আছে পুরো বিছানা জুড়ে। লোকটার উপর ওর রাগ ক্রমশ বাড়ছে তারথেকে রাগ হচ্ছে ওর স্যারের উপর। সে জেনেশুনে কিভাবে ওকে ওর হাতে
তুলে দিল। এখন ওর কি হবে, মা বাবাকে কি বলবে? তাদের কত স্বপ্ন ওকে নিয়ে, ওর নিজের কত স্বপ্ন ওর ছোট একটা সংসার হবে, বাচ্চাকাচ্চা হবে, সারাদিন কাজ সেরে রাতে স্বামীর বুকে
মাথা এলিয়ে ঘুমাবে, হসপিটালের গল্প বলবে, কোন রূগী কি বলছে তা বলবে, তার উপর ডাক্তারি করবে আরও কত কি,ওর সব ভালবাসা, ওর দেহ মন সব রেখে ছিল ওর স্বামীর জন্য কিন্তু
আজ একটা রাতের মধ্যে কি থেকে কি হল!!!! এসব ভাবতে ভাবতে ও কখন ঘুমিয়ে পরছিল নিজেই জানে না।
সকালে ঘুম ভাঙল একটা গম্ভীর আওয়াজে, চোখ খুলে দেখল মেহবুব তাকিয়ে আছে আর ওকে ডাকছে। ও ধরফর করে উঠে বসতেই আহ্ করে উঠল, সোফায় ঘুমানোর জন্য পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে আছে। মেহবুব দেখেও না দেখার ভান করে আরেকদিকে ফিরে বলল -নাস্তার টেবিলে যাও, সবাই
অপেক্ষা করছে। এই হুকুম শুনে রাগে ওর পুরো শরীরে আগুন লেগে গেল কিছু বলতে যাবে তখনি ওর জা এল।
-সাবিহা এখনও উঠো নি?? একি তুমি সোফায়? তখন ভাবি আর কিছু বলল না মনে হয় কিছু একটা আঁচ করেছে, বলল -ফ্রেশ হয়ে খেতে আস, তারপর তোমার হাতে আজ রান্না করাব দেখব আমার
ডা.দেবরানী কি কি রান্না করে খাওয়ায়।
ওদিকে মেহবুবের মন খুবই খারাপ। কি হতে কি হচ্ছে আসলে ও তো এমনটা চায় নি।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতেছিল। চাচার আবদারেই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে নইলে ও কখনই চায় নি রিতার পর ওর লাইফে কেউ আসুক, ও ওর ভালবাসা নিয়েই একা একা থাকতে চেয়েছিল থাকনা রিতা আজ অন্য জায়গায় সুখি, একটা অভিমান নিয়েই ও বাচঁতে চাইছিল। দীর্ঘ ৪/৫টা বছর ও এমন ভাবে আছে। ও তো লাইফটা কবেই শেষ করত যদি না ওর মা বাবা বেঁচে না থাকত। দিনের পর
দিন ও ভিতরে আর বাহিরে কঠিন থেকে কঠিন হইছে এখন আর কোন মেয়ে জাতিয় অনূভুতি ওকে স্পর্শ করে না হয়ত এটা সহজে পারছে ওর প্রফেশন এর জন্যই, যেখানে সব কিছু সিরিয়াস। আর ও চাইতই রিতাকে ভুলতে দিন রাত ব্যস্ত থাকতে আর যে জবে আছে এতে চাইলেই যে কেউ দিন রাত কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারে তো তেমন কষ্ট হত না কিন্তু রাতটা ছিল অসহ্য ওর জন্য। অনেক বিয়েই ও ইচ্ছে করে ভাঙছে কিন্তু এটা আর পারে নি চাচার জন্য আর মাও দিন দিন দূর্বল হয়ে
যাচ্ছে শুধুমাএ পরিবার এর দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছে। তারপরও আশা ছিল মেয়েটার পরিবার রাজি হবে না কারন ওর বয়স টা ৩৫পার হয়ে গিয়েছে, পরিবার চাইলেও এ যুগের মেয়েরা এত বয়সী
স্বামী চায় না আরও সে একজন ডা., শিক্ষিত রিজেক্ট করাটা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু না মেয়ে রাজি হয়েছে। আর ও জানে এর পিছনে ওর চাচারই হাত আছে। পরে ও চাইছিল মেয়েটার সাথে কথা বলতে কিন্তু ওর চাচা দেয় নি কারন চাচা জানত ও কথা বলতেই চায় বিয়ে ভাঙার জন্য। রাগ গিয়ে পড়ল সব মেয়েটার উপর। যখন ও কাবিন নামায় সই করছিল তখন মনে মনে বলছিল -মেয়ে রাজি তো
হয়েছ সবার কথা মত, এবার এই মেজরের পুড়ে যাওয়া লাইফে ঝলসানোর জন্য রেডি হও, ওয়েলকাম টু দ্যা হেল।

পর্ব- ৩

সাবিহা বাথরুমে গিয়ে অনেক কাঁদল, আয়নায় তাকিয়ে দেখল চোখ নাক মুখ ফুলে গেছে, চোখের
নিচে কালি জমেছে। খুব খুধাও লাগছে। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখল মেহবুব বিছানায় বসা, ওর দিকে তাকালোও না। ও আয়নার সামনে গিয়ে মাথা আচঁড়াতে ছিল তখনি লোকটার ফোন আসল, রুম দিয়ে বের হয়ে গেল যাওয়ার আগে দরজাটা জোরে শব্দ করে আটকিয়ে গেল যেন খুবই বিরক্ত। ডাইনিং রুমে যাবার পর সবাই ঘিরে ধরল, কত খাবার কিছুই খেতে ইচ্ছে করছিল না আড় চোখে তাকিয়ে দেখল মেহবুব কার সাথে যেন সোফায় বসে কথা বলছে হঠাৎ চোখাচোখি হল। এমন অবস্থা হল যেন
খাবার গলায় আটকে যাবে। ওর শাশুড়ি বলল- মা আস্তে খাও।
আহারে একদিনেই কেমন চেহারা হলে গেল।
মহিলার দিকে তাকাল সাবিহা, এত ভাল একজন মহিলার ছেলে এতটা বেয়াদব কিভাবে হয়???
সারা দিন কয় একবার ফোনটা হাতে নিয়েও আব্বু আম্মুকে ফোন দেয় নি, দুপুরবেলা কথা হবার সময় বলল ও ভাল আছে তারা যেন টেনশন না করে এছাড়া আর কি বা বলবে!!!? যদি শুনে তাদের নুতন জামাই বিয়ের রাতেই মদ খেয়ে ওর সাথে এমন ব্যবহার করেছে তারা মরে যাবে ওর টেনশন এ। কিভাবে ও বাচঁবে তখন?? জীবনটা তো শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেল। এবাড়ির প্রতিটা মানুষ খুব ভাল বিশেষ করে ওর শাশুড়ি, সব কিছু একটা দিনের মধ্যেই খুবই আপন ভাবে সবার সম্পর্কে বলল,সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তবে মানুষটা খুবই অসুস্থ কিন্তু তার কথা শুনবে কি সাবিহার জীবনটা যে একটা অসুস্থ মানুষ শেষ করে দিল তার কি হবে!!!? ওর খুবই খারাপ লাগছিল যে ও
মহিলার সাথে ঠিকমত কথাও বলছে না দেখে।

দুপুরবেলা খাবারের পরে ও রুমে গেল দেখল লোকটা নেই তো ও পুরো রুম ঘুরে ফিরে দেখল। কিছু ছবি দেয়ালে টানানো। মেহবুবের ক্যাডেট কলেজের,কেমন যেন পার্সোনালিটি সম্পন্ন চেহারা লোকটার।আলমারি খুলল এরই মেধ্য মেহবুব রুমে আসল, বলল-আমার পার্সোনাল জিনিসে তুমি হাত দাও কেন? এগুলা মোটেই লাইক করি না আমি আর তুমি কে?? শুধু কাগজ কলমের বিয়ে আমাদের এছাড়া আর কিছুই না। সাবিহা এই প্রথম কথা বলল -আপনি আমার সাথে এভাবে বাজে বিহেব কেন করছেন? আমি আগে জানলে কোনদিন এই বিয়েতে রাজি হতাম না। আপনি কি আমাকে বলবেন কি সমস্যা? মেহবুব কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি ওর বোন এসে চিৎকার করে বলল-ভাইয়া মায়ের কি যেন হইছে। তুই তাড়াতারি আয়।
মেহবুব ওর দিকে একটা রাগী দৃস্টি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, সাবিহাও পিছন পিছন গেল।
গিয়ে দেখে ওর মা বিছানায় শোয়া। সবাই জানে যে ও ডা. তাই ওকেই দেখতে বলল। ও প্রথম দেখাতেই বুঝল যে এটা হার্ট অ্যাটাক। বলল তাড়াতারি
হসপিটালে নিতে।তখন ও, ওর শ্বশুর আর
মেহবুবরা দুই
ভাই ওর মাকে নিয়ে হসপিটালে নিল।
হসপিটালে নেবার
পর,ওর শাশুড়ি কে ভর্তি করা হল প্রায় রাত ২
পর তাকে
শংকামুক্ত বলা হল। ওর শ্বশুর ওকে বার বার
ধন্যবাদ
দিচ্ছিল আজ ও না থাকলে কি না কি হত কে
জানে কিন্তু
ও এক বার যার ধন্যবাদ পেতে চাচ্ছিল সে
ওকে
দেখে বরং উলটো দিকে ফিরে তাকিয়ে
ছিল।
প্রতিবার ও মেহবুবের দিকে তাকায় আর ওর
কষ্টে
বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছিল। কি করবে, কি
বলবে কাকেই
বা বলবে!!! একটা দিনের মধ্যে এত করুন অবস্থা

নিতেই পারছিল না। তারপরও ও ওর শাশুড়ির
সেবায়
কোন এুটি করে নি। ওর কলিগরা এসে দেখা
করে
গেছে ওদের সাথে তারা মেহবুবের সাথে কথা
বলতে চাচ্ছিল। -কি রে তোমার মেজরের
সাথে
আলাপ করিয়ে দাও। কিন্তু ওই নিষেধ করল,
বলল- ওনার
মা আসুস্থ ত এখন পরিচয় করানো থাক পরে
দিবো।
আসলে ও চাচ্ছিল না এখনি সব সমস্যা সবাই
জানুক।
আগে ওর শাশুড়ি সুস্থ হোক। তার ছেলের কোন
ভাল মন্দ বোধ না থাকতে পারে কিন্তু ওর তো
আছে। একজন ডা. হিসেবে হোক বা মানুষ
হিসেবে। টানা এক সপ্তাহ পর ওর শাশুড়ি কে
বাসায় আনা
হয়। সাবিহা এই সময়টা ওনার পাশেই ছিল
সারাদিন ডিউটি করত
আর ফাকে ফাকে ওনার কাছে এসে বসত,
অনেক
গল্প করত মাঝে মধ্যে ওর ননদ আর জা আসত।
বাসায়
যেত যখন মেহবুব থাকত না রাতে আবার ফিরে
আসত। মেহবুব আসত প্রতিদিন আফিসের পর
রাতে,যতক্ষন থাকত মায়ের হাত ধরে বসে
থাকত। ওর
দিকে তাকাতোও না। তখন ও রুমের বাইরে চলে
যেত। ওর শাশুড়ি ডাকত বলত ওর ডিউটি আছে।
বিয়ের
পর থেকে ওর উপর দিয়ে যে ধকল যাচ্ছে
তাতে
যে অ সুস্থ আছে তার প্রধান কারন এই মহিলার
ভালবাসা
ও যতক্ষণ না খেত সেও খেত না। এই পরিবারের
সবাই ওর প্রতি কেয়ারি শুধু মেহবুব ছাড়া।
আর মেহবুবের বিয়ের প্রায়১মাস চলছে। ওর
শাশুড়ির
অসুস্থতার খবরে ওর বাবার বাড়ি হতে লোকজন
আসল তাকে দেখতে। ও ওর মা বাবাকে দেখে
কেঁদেছে খুব, তারা বার বার ওকে বুঝিয়েছে
যে
বিয়ের পরে এমন একটু কষ্ট হয় প্রথম প্রথম।
ওকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে বলল তারা। ও
কিভাবে
বুঝাবে আসলে সমস্যাটা কোথায়!! আসলে ও
এখনই এই পরিস্থিতিতে কাউকে কিছুই বলতে
চায় না। ও
শুধু একটা কথাই জানে যে ও ওর মা বাবার
অনেক
আদরের ছোট মেয়ে। ওর কোন খারাপ অবস্থা
তারা সহ্য করতে পারবে না। তারা মরে যাবে
ওর
টেনশনে আর ওর বড় বোন পাগল হয়ে যাবে।
তখন ও কি নিয়ে বাচঁবে!!!? মেহবুবের মায়ের
আসুস্থতার সময় ওর দুই বোন আর ওর ভাইয়ের
আস্থিরতা নিজের চোখে দেখেছে। একটু
হলেও বুঝতে পারছে মা বাবা হারানোর ভয়টা
কি জিনিস,
তাদের জন্য ও হাজারটা মেহবুবের কষ্ট সহ্য
করতে
রাজি। . সাবিহা সারাদিন হসপিটালে ব্যস্ত
থাকে, ইচ্ছে
করেই সারাদিন নিজেকে ব্যস্ত রাখে যাতে
করে
ওর মেজবুবের নিত্যকার খারাপ আচারন মনে
না পরে।
বাহিরেই খায়, রাতে বাসায় ফিরে তখন
নিজের পড়া বা
ওর ননদ জা বা শাশুড়ির সাথে গল্প করে
কাটায়। তারা ওর
আর মেহবুবের কথা শুনতে চায় কিন্তু ও কথা
ঘুরিয়ে
ফেলে। অনেক রাত করে মেহবুব বাড়ি ফিরত ও
তার
আগেই সোফায় শুয়ে পরত।কোন কোন দিন
রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরত, গন্ধে আর ভয়ে
চুপসে ও বারান্দায় চলে যেত। ওখানেই ঘুমিয়ে
পড়ত। আবার সকাল আটটার মধ্যে বাসা দিয়ে
বের
হয়ে যেত। ইচ্ছা করত না ওর বাড়ির খাবার
মুখে
দিতে। . মাঝে চেষ্টা করছে মেহবুবের সাথে
সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে কারন এভাবে
আর
কতদিন!!? কিন্তু ও এমন রাগী রাগী কথা বলত
ওর ইচ্ছাই
করত না লোকটার চেহারা দেখতে। মাঝে
ভাবল সব
ছেড়ে ছুড়ে ঢাকায় ওর বোনের বাসায় গিয়ে
থাকবে,আর আসবে না। পরে মেহবুবকে
ডির্ভোস দিয়ে খলনায় পোষ্টিং নিয়ে
বাবার বাসায়
চলে যাবে। ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে এতদিন
সহ্য
করছে কিন্তু তার ছেলে তো ওর ওর প্রতি কোন
মায়া দেখায় নাই তাহলে কেন সহ্য করবে
আর!!!
বন্ধুবান্ধব, মা বাবা, বোন, আত্মীয় সব্জন সবার
কাছে
মিথ্যা সুখী ভাব ধরতে গিয়ে আজ ও ক্লান্ত। .
এরই
মাঝে রাতে ওর শাশুড়ি আর শ্বশুর ওকে তাদের
রুমে ডাকল। -মা তোমাদের তো বিয়ের অনেক
দিন হল এরই মধ্যে তোমার শাশুড়ি অসুস্থ হল,
তোমার দিন রাত সেবার জোরেই তাকে ফিরে
পেলাম, বাসায় আসার পর মানুষের আসা
যাওয়া, তাদের
সামলানোর সাথে সাথে তোমার হসপিটালের
কাজ
করা নিশ্চই তুমি ক্লান্ত। আমার বিভিন্ন
কাজের মধ্যে
মনেই ছিল না আমার ঘরে নতুন একটা বউ
আসছে। -না
বাবা, আমি ঠিক আছি। -না মা এটা আমার
দায়িত্ব তোমার
খেয়াল করা। তোমার শাশুড়ি আর আমি চাই
তোমরা
কয়দিন ঢাকার বাইরে গিয়ে ঘুরে আস।
সাবিহার মনে হল
ওর মাথায় আকাশ ভেংগে পরল, কি বলে এই
লোক!!
দুনিয়ার সবথেকে খারাপ লোকটার সাথে
যাবে ও
ঘুরতে তাও যেত যদি ওরা একে ওপরকে মানত।
একবার মনে মনে ভাবল সব সমস্যার কথা বলবে
কিনা
পরে ভাবল থাক। -আচ্ছা মা, তুমি একটু
মেহবুবকে
ফোন দাও তো ওর ছুটির হিসেবটা মিলিয়েই
আমি
টিকিট কাটব। . এবার কি হবে ওর কাছে তো ঐ
লোকের নাম্বারও নেই। ও বলল যে আমি রুমে
গিয়ে ফোন দেই।বলেই দৌড়ে চলে আসল। ওর
শাশুড়ি হেসে ফেলল সে ভাবল হয়ত ও তাদের
সামনে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। ও রুমে এসে
চুপচাপ বসে রইল, এখন কি হবে!!!ওর কাছে তো
নাম্বারও নেই এসব ভাবতে ভাবতে ওর জায়ের
রুমে
গেল। ভাবিকে বলল-ভাবি তোমার দেবরের
নাম্বারটা
দেয়া যাবে?? আমি হারিয়ে ফেলেছি। ওর জা
মুচকি
হেসে বলল-সাবিহা আমি কিন্তু সব জানি
বোন। মা বাবা
দুপুরে আমার সামনেই তোমাদের ব্যাপারে
আলোচনা করেছে তোমার ভাইয়ার সাথে।
তোমাকে শুধু একটা কথাই বলব যে আমার
দেবরটা
কিন্তু খারাপ না, সময় ওকে খারাপ
বানিয়েছে। তুমি প্লিজ
একটু সময় নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।

পর্ব- ৪

রুমে গিয়ে ফোন দিল মেহবুবকে ওপাশ হতে
কিছুক্ষণ পর ফোন ধরল ও। -হ্যালো, আপনি কি
মেহবুব বলছেন? -জি, কে আপনি? -আমি
সাবিহা।
আপনার সাথে কথা বলার ছিল। বাবা
আপনাকে ফোন
দিতে বলেছে। -তুমি আমার নাম্বার কিভাবে
পেলে?
আর তোমার সাহস কিভাবে হয় আমাকে ফোন
দেয়ার? কথাটা শুনার সাথে সাথে ওর চোখে
পানি
চলে আসল। কিছু বলতে যাবে ওমনি দেখে ওর
শাশুড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে, ও সাথে সাথে ফোন
কেটে
দিল।ওর চোখে পানি দেখেই সে বুঝে
নিয়েছে। বলল- মা শোন মেহবুব আসলে ওকে
বলবি আমার রুমে আসতে। আর ও বকা দিলে তুই
কাঁদবি
কেন? আসলে ব্যস্ত থাকে তো তাই রাগ করছে।
বাসায় ফিরলে তুই উলটো ওকে বকা দিয়ে
দিবি। ওর
শাশুড়ি যাবার কিছুক্ষণ পর ওর জা আসল বুঝল
ওর মন ঠিক
করতে সেই পাঠিয়েছে। -এই সাবিহা আসো
তোমার প্যাকিং করে দেই। আরে উঠ তো। মুখ
কাল করে বসে থেক না। ও দৌড়ে গিয়ে দরজা
বন্ধ
করে দিয়ে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল।
আসলে ও এ একটা মাস যতটা কষ্ট পেয়েছে তা
মুখ
ফুটে কাউকে বলতে পারেনি আজ একটা
সান্ত্বনার
কাধ পেয়ে সব দুঃখ গুলো চেপে ধরেছে। সব
এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব বলল। ভাবি বলল-
দেখ
সাবিহা এটা ঠিক তোমার বয়স কম আর
মেহবুবের উচিৎ
ছিল তোমাকে সময় দিয়ে সব সমস্যাগুলো বলে
ফেলা। ও যদি সংসার নাই করতে চায় তাহলে
শুধু শুধু
তোমার জীবনটা কেন নষ্ট করল, তার মা আর
বাবাকে দেখানোর জন্য??? -ভাবি আমি কিছুই
বুঝতে
পারছি না। আজ এতটা খারাপ বিহেভ করল
ফোনে। আমি
কোনদিনও এতটা অপমানিত হই নি কারও
কাছে।তুমিই বল
আমি কি করব? -তুমি ধৈর্য হারা হয়ো না,
শান্ত হও।আমি
এব্যাপারে তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলব। –
উনি যদি রাগ
করে? -রাগ করলে করবে, তুমি একটা
এস্টাবলিসড
মেয়ে তুমি কেন ওকে ভয় পাবা?? ওর কোন
অধিকার নেই তোমার লাইফ নষ্ট করার। -আচ্ছা
ভাবি তুমি
যা ভাল মনে করার কর। কিন্তু আমি ঐ লোকের
সাথে কোথাও যাব না। -সাবিহা, পাগলের মত
কথা বল না।
যেহেতু একটা সময় পেয়েছ একটু কাছাকাছি
থেকে নিজেদের জানার সুযোগটা হাত ছাড়া
কর না।
আমি তো তোমাকে বলেছিই, আমার দেবর
ওতটাও
খারাপ না যতটা তুমি ভাবছ, তুমি নিজেই
একদিন আমাকে
বলবা দেখ। এই বলে ভাবি চলে গেল।সাবিহা
বিছানায়
বসে মনে মনে বলল-এটা তোমার ভুল ধারনা
ভাবি
তোমরা তো এই লোকের বাইরেরটা দেখ আর
আমি তো বন্ধ রুমে খারাপ আচারন গুলো দেখি।
সে কোনদিন বদলাবে না। নিজের মনেই একটা
দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসল। . ওদিকে মেহবুব
অফিসে রাগে অস্থির। এই মেয়ের এত সাহস,
ওকে
ফোন দিয়ে বলে যে বাবা ফোন দিতে বলছে।
ওকে ওর ওয়াইফের কোন মর্যাদাই দেয় নি
কেন
শুধু শুধু ওর বাড়িতে ও পরে আছে???ও তো
ভাবছিল
শিক্ষিত মেয়ে, নিজের সস্মান আছে। বিয়ের
ররাতে খারাপ বিহেবে পরদিনই চলে যাবে
কিন্তু না
সে যায় নি পরে ভাবছিল ওর মা অসুস্থতার
জন্য হয়ত
যায় নি, সে সুস্থ হলে চলে যাবে। নাহ আজ
একটা
মাস হল এখনও যাচ্ছে না। সাবিহা যখন
দিনরাত পরিশ্রম
করে ওর মাকে সুস্থ করে তুলল তখন ওর খুব ভাল
লাগছিল, আসলে ও তো এমন বউই চাইছিল যে
ওর মা
বাবাকে নিজের করে আগলে রাখবে। ওকে
একটা
ধন্যবাদ দিতে চাইছিল কিন্তু পরে ও হয়ত নরম
হয়ে
যাবে ওর প্রতি এই ভেবে আর দেয় নি আর ও
তো চায়ই ওকে তাড়াতে। ও শুধু মাএ বিয়ে
করেছে ওর মা বাবার জন্য। মেহবুবের মনের
ধারনা
সব মেয়েরা রিতার মত। সবার মনের মধ্যে
থাকে
কিভাবে পুরুষকে ফাঁদে ফেলানো যায়। যখন
আর
ভাল লাগবে না তখন ছেড়ে ছুড়ে অন্য দিকে
ঝুকবে।তাই তো আজ ওকে ও বাবার কথা বলে
ফোন দিছে, ওকে ওর প্রতি আকৃস্ট করার
ফন্দি।
কিন্তু ওর মনে কোন মেয়ের জন্য জায়গা নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে ও গাড়ি থেকে নামল,
বাসায়
ঢুকে সোজা ওর রুমে গিয়ে দেখল সাবিহা ওর
ব্যাগ
গুছাচ্ছে । দরজাটা আটকিয়ে ওর হাত ধরে
টেনে
বলল -তোমার এতবড় সাহস তুমি আমার মুখের
উপর
ফোন কেটে দিয়েছ। -তাহলে কি করব? আপনি
আমার সাথে কেন বাজে বিহেব করেছেন? –
বাজে বিহেব তো তুমি আরও দেখবা। খবরদার
আমাকে ক ন্টোল করার চেষ্টা ছেড়ে দাও। এই
বলতে বলতে মেহবুব ওর হাত জোরে চেপে
ধরল ও ব্যাথায় আহ্ করে উঠল আর চোখ দিয়ে
পানি
গড়িয়ে পড়ল।সাথে সাথে ও ওর হাত ছেড়ে
দিল।
তখন মেহবুব ওর দিকে ব্যাথাতুর দৃস্টিতে কয়েক
সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল। পরে সরি বলে
ওয়াশরুমে চলে গেল। হঠাৎ এই পরিবর্তন ওর
সাবিহার
মনে ধাক্কা দিল। . ওয়াশরুমে গিয়ে বেসিনের
আয়নায় মেহবুব নিজেকে দেখে ভাবল ওকি
সত্যি
এমন???!!! দিন দিন ও কঠিন হয়ে যাচ্ছে, দোষ
তো
সব রিতার যে ওকে ঠিক মত থাকতে দিচ্ছে না,
এই
মেয়েটার তো কোন দোষ নেই। আজ সাবিহার
কান্না সত্যি ওকে নাড়া দিয়ে গেছে। বাথরুম
হতে
বের হয়ে দেখে বাবা আর বড় ভাইয়া বসে
আছে।
-কি ব্যাপার হঠাৎ তোমরা? -তোর সাথে জরুরী
কথা
ছিল। বাবা বলল-তুই যে এখনও তোর মাথা হতে
ওই
মেয়ের চিন্তা নামাতে পারিস নি তা তো
জানতাম না। -কি
বলছ তোমরা? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
ভাইয়া
রেগে গিয়ে বলল-তুই নাকি প্রতিনিয়ত
সাবিহার সাথে
খারাপ ব্যবহার করিস?? -সাবিহা বলছে? –
সাবিহা কেন
বলবে? মা আজকে ওকে কাঁদতে দেখছ,তোর
ভাবি বিয়ের পরদিনই সকালে ওকে সোফায়
ঘুমুতে
দেখছে। মেহবুব ভাবছে এ সবই সাবিহার
শিখানো
কথা। ও ই বলছে মা আর ভাইয়াকে তারাই
বাবা আর
ভাইয়াকে পাঠিয়েছে। ভাইয়া আরও বলল-দেখ
মেহবুব তুই প্লিজ পিছনের কথা ভুলে যা, বিয়ে
করেছিস সব ভুলে সাবিহাকে নিয়ে সামনে
আগা। আর
কত বুঝাব তোকে, বয়স ও তো হল। তোর বন্ধুরা
বিয়ে শাদী করে সবাই কত ভাল আছে দেখ।
বাবা?
বলল-যাই হোক, আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
আমি
তোদের ব্যাংককের টিকিট কাটতে
চাচ্ছিলাম কিন্তু
এখন যা দেখছি আমি চাই তুই কালই দিমকয়েক
এর জন্য
সিলেট গিয়ে সাবিহাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়। –
আমার ছুটি
নেই, পারব না। -আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
তোর জন্য আমি অপরের মেয়ের সাথে অন্যায়
করতে পারব না। তোর যেতে হবেই। এই বলে
বাবা আর ভাইয়া চলে গেল। মেহবুব রাগে
ফুসঁতে
ফুসঁতে পুরো বাসায় সাবিহাকে খুজঁল কিন্তু
পেল না ও
নাইট ডিউটিতে হসপিটালে গেছে। মনে মনে
বলল
কোথায় আর যাবা?? আমার নামে নালিশ!!!
দেখে
নেব।
পরের দিন সকালে সাবিহা যখন বাসায় ফিরে
তখন ও
জানে না যে মেহবুব বাসায়,না জেনেই রুমে
ঢুকে
যায়। ঢুকে তো পুরো অবাক ও এই সময় বাসায়!!!
এদিকে এত কিছু হয়েছে ও জানেই না। সারা
রাত ডিউটি
করে ক্লান্ত।রুমে ঢুকে দেখে মেহবুব
ল্যাপটপে কাজ করছে। ওর দিকে তাকিয়ে
বলল-
আমার রুমে কেউ নক না করে ঢুকে তা মোটেই
পছন্দ না। -সরি, আমি জানতাম না আপনি রুমে।
ও ব্যাগ
রেখে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবে ওমনি মেহবুব ওর
হাতটা জোরে চেপে ধরে দেয়ালের উপর
ধাক্কা মেরে ফালালো।হঠাৎ এধরনের
ব্যবহারে ও
পুরো শকড তাছাড়া ও মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা
পেল।
মেহবুবের রাগী চেহারা দেখে ব্যাথার কথা
ভুলে
গেল। কিন্তু মেহবুবের ওদিকে হুস নেই, পাগলের
মত বলল, -আমি জীবনে মেয়ে দেখেছি
অনেক তোমার মত বেহায়া মেয়ে দেখিনি।
তুমি
আমার নামে নালিশ কর মায়ের কাছে? -কি
বলছেন
আপনি এসব??? -ওহ, এখন কিছু বুঝতে পারছ না,
না? যখন
তোমার মুখের উপর ডির্ভোস পেপার ছুড়ে
মারব
তখন বুঝবা। আমি এই মাএ আমার উকিলের
সাথে কথা
বলছি। খুব তাড়াতারি ডির্ভোস নোটিশ পেয়ে
যাবা। –
আপনার সাথ আমার ডির্ভোস না হলেও যে
আমি থাকব
না এটুকু আমি জানি। কিন্তু এই খারাপ
ব্যবহারের মানে কি??
-তোমাকে এতবড় সাহস কে দিসে? আমার মা,
ভাবি
এদের কাছে ছোট করার..। তারপর কিছুক্ষণ
থেমে বলল-তুমি চিনো আমাকে আমি কে? এক
নিমিষে আমি তোমাকে, তোমার ক্যারিয়ার,
ফিউচার সব
শেষ করে ফেলতে পারি। এবার আর সাবিহা
চুপ
করে থাকার কোন উপায়ই পেল না। ও চিৎকার
করে
বলল-ও তাই, আপনি কে?? বলুন তো? আপনি
আমার কি
হন?আপনাকে কে সাহস দিয়েছে আমার
ব্যাপারে
কথা বলার? আপনি কে শুনতে চান, আপনি
একটা খারাপ
মানুষ আমার কাছে আর কিছুই না। -আমি
খারাপ না??আর
তুমি? বিয়ের রাত থেকে আমি খারাপ বিহেব
করছি
চলে কেন যাচ্ছ না?জানো কোন মেয়েরা
এভাবে পুরুষের পিছনে পরে থাকে? -তাহলে
আপনি কেন আমাকে বিয়ে করে এনেছিলেন? –
মা
বাবার কথায়। -আপনি কি একটা অমানুষ??!!
আপনি আমার
জীবনটা নষ্ট করেছেন। -তোমাদের
মেয়েদের জীবন কখনই নষ্ট হয় না। তোমাদের
মত বেহায়া মেয়েদের জন্যই ছেলেদের
জীবন নষ্ট হয়।তুমি যদি ভাল হতা বা আত্ন
সস্মান থাকত
তাহলে বিয়ের পরদিনই চলে যেতা বা যেদিন
তোমার মা বাবা আসল সেদিন। এই কথা শুনার
পর সাবিহা
আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি।ও
কান্নায়
ভেঙে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে বলল-আমি কি
দোষ
করেছি যে আপনি আমাকে এই কথা গুলো
বললেন?আমি তো আপনার সংসার করার জন্যই
এসেছিলাম, আপনার বউ হয়ে থাকতে
চেয়েছিলাম
আর আপনি কিনা আমাকে খারাপ মেয়েদের
সাথে
তুলনা করলেন? ওর এই কথা মেহবুবের মনে
কোন আঁচই ফেলল না উলটো আর রেগে বলল
-ও তাই তুমি আমার বউ হতে চাও ওকে ফাইন
আসো,
বিছানায় আসো। বউ হও, আসো। এত ইচ্ছা
তোমার
যখন,আসো। এই বলে ওকে বিছানার উপর ছুড়ে
মারল মেহবুব। যেই ওর কাছে আসল সাবিহা
ওকে
ধাক্কা দিয়ে ফেলে হাপাতে হাপাতে উঠে
বলল-
চরম অসভ্য আপনি। আমি আর এক মূহুর্তও এখানে
থাকব না। এতদিন আপনার খারাপ চেহারাটা
দেখলাম আজ
আপনার পশুর মত চেহারাটা দেখতে পেলাম।
এই
বলে ও দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এল। দেখল
যে ড্রইং রুমে ওর জা আর ননদ গল্প করছে।
ভাবিকে বলল-ভাবি মাকে বলো আমি চলে
গেলাম।
এই বলে ও আর দাড়াঁল না কারন তাহলে তারা
নানা প্রশ্ন
করবে আর ঐ লোকটাও বের হয়ে এসে না
জানি
কি না কি বলে, যাই হোক ওর কোন আর ও
বাড়ির
প্রতি পরোয়া নেই। কে কি বলুক বা করুক কিছু
আসে যায় না। কাঠফাটা দুপুরবেলা কোথায়
যাবে???
ওর বোনের বাসায় যাবে না কারন ও চায় না
এখনি
ফ্যামিলিকে সব কিছু জানাতে, এমনিতেই ওর
শরীর,
মন ভাল না। তাদের হাজারটা প্রশ্নের সামনে
দাড়াঁনোর
সাহস বা মনের জোর নেই। নিজেকে একটু সময়
দিতে চায় ও।তাছাড়া রাত থেকে এক
নাগাড়ে ডিউটি,
সকালেও কিছুই খায় নি তারপর আবার এই
অবস্থা। ঠিককরল
ওর ছোটবেলার বান্ধবীর বাসায় যাবে যে ওর
বেস্ট ফ্রন্ড। ওকে সব মনের কথা খুলে বলে
ও। ও নিঃশ্চই এই কঠিন সময়ে ওকে বুঝবে।
সাবিহা দুপুরে ওর বান্ধবীর বাসায় গেল। বেল
চাপতেই ওর বান্ধবীর মা খুলল – আরে আমাদের
সাহেব যে।।। কি খবর মা কেমন আছ? এই বলে
তিনি
ওর পিছনে তাকালেন, বলল-জামাই কোথায়??
বলল-
আন্টি উনি নেই আমি একা আসছি। -আচ্ছা মা
ভিতরে
আস। ও তো গোসলে তুমি বস। বসতে বসতে
বলল-তোমার চেহারার একি অবস্থা? বিয়ের
পর
মেয়েরা আরও রূপসী হয়, তোমার গাল ভেঙে
গেছে পুরো। -আসলে আন্টি, হসপিটালে
অনেক?
প্রেশার যাচ্ছে। নিজের দিকে খেয়াল
দেবার
সুযোগ হচ্ছে না। -না মা তা বললে তো হয় না
মা,
মেয়েদের সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়। পরে
যখন বাচ্চাকাচ্চা হবে তখন কি হবে??? ও মনে
মনে
হেসে দিল ভাবল আর বাচ্চা!!! যে বাচ্চার
বাবা হবে
তারই তো ঠিক নেই। ভাবল যে ওর বান্ধবী
আসুক
তারপর একসাথে আন্টিকে জানাবে। ও বলল-
আন্টি
আমি মুমুর রুমে যাই খুব ক্লান্ত লাগছে। -আচ্ছা
মা যাও।
আমি বরং খাবার নিয়ে আসছি। ও রুমে ঢুকতে
ঢুকতে
মুমু বের হয়ে এল, ওকে দেখে সাবিহার কি হল
নিজেও জানে না। হুঁ হুঁ করে জড়িয়ে ধরে
কাদঁতে
শুরু করল।আন্টি কিছু একটা টটের পেয়ে রুমে
চলে আসল। মুমু আর ওর মা ওকে যতই সান্ত্বনা
দিচ্ছে ওর কান্নার পরিমান আরও বাড়তে
থাকল। পরে
কিছু সময় পর ও যখন স্বভাবিক হয়ে এল তখন সব
কিছু
প্রথম হতে বলতে শুরু করল। মেহবুব কি রকম
বিহেব করত,কেন এতদিন একসাথে ছিল, কাল
কি কি
হল,আজ সকালে কি হল সব। ওর কথা শুনতে
শুনতে
মুমু আর মুমুর মায়েরও চোখ ভিজে আসছিল। এক
সময় তারাও এই বিয়ের পরিনতির কথা শুনতে
শুনতে
নিঃচুপ হয়ে গিয়েছিল। পরে আন্টি বলল-তুই
একদম ঠিক
কাজ করেছিস মা। অনেক সাহস দেখিয়েছিস।
মুমু
বলল-তুই আর ফিরে যাবি না ওই লোকটার
কাছে।
বিয়ের দিনই আমি ভাবছিলাম লোকটা একটা
খাটাস। অন্য
সময় হলে মুমুর এই কথায় ও হেসে দিত কিন্তু
আজ
সত্যি মনে হল মেহবুব আসলেই ওর সাথে অনেক
অন্যায় করেছে। ও মনে মনে ভাবছিল যে
আসলেই উনার একটা তিক্ত অতীত আছে আর
তাই
বলেই তিনি কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারেন
না, ববিয়ে করেছে ফ্যামিলির চাপে পড়ে।
কিন্তু তাই
বলে এত খারাপ আচারন!!!! যা তা বলে, যা মুখে
আসে। সে কতটুকুই বা ওকে চিনে??? এক
ফোঁটাও না। আর যেভাবে ওকে বিছানায়
নেবার কথা
বলছিল তার পর তো ওর মনে তার প্রতি প্রচণ্ড
ঘৃনা
জন্মেছে। আন্টি বলল-এমনিতেই ছেলেটার বয়স
একটু বেশি, তোমার থেকে ওর ম্যাচিওরিটি
আছে।
ওর উচিৎ ছিল তোমার প্রতি ওর সহানুভূতি
দেখানো।
সংসার কি মুখের জিনিস!!? সাবিহা ভাবল-
সহানুভূতি!!!!বিছানায়
যেভাবে ছুড়ে মেরেছিল তাতেই ঐ লোকের
সহানুভূতি প্রকাশ পেয়ে গেছি আমি। -আচ্ছা
মা, তুমি
শোও। আমি বিকালে তোমার মা বাবার সাথে
কথা বলব।
কি বিশ্রাম নিবে ও?শান্তিতে কবে
ঘুমিয়েছে
নিজেই জানে না। গত একটা মাস হয় সোফায়
নাইলে
রাতে ডিউটিতে চেয়ারে। সারাদিন কাজ
শেষে যখন
মাথাটা এলিয়ে দিত টেবিলে ভাবত এই জীবন
কি
চেয়েছিলাম!!? তবুও শুধুমাত্র মা বাবার কথা
মনে করেই
রাত পার করত। যদি ওর ডিউটি নাও থাকত তাও
ওভার টাইম
করত যাতে ও বাড়িতে যতটা সম্ভব কম সময়
কাটানো
যায়। তাও ভাবত যাক ওর মা বাবা তো ভাল
আছে ও
শান্তিতে আছে এই ভেবে। কিন্তু আজকেই তো
তাদেরও বলতে হবে সব। কিভাবে তাদের
মনমরা মুখ
দেখবে!!? এই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল
একসময়। ……. ওদিকে সাবিহা বাসা থেকে
বের হয়ে
আসার পর ওর জা আর ননদ মেহবুবের রুমে গেল।

ও কোথায় গেল মেহবুব? কিছুক্ষন আগে না
ফিরল?
-চলে গেছে, আমি বের করে দিয়েছি। -বাহ্ এই
তো তুমি চাইতা, না?এখন খুশি খুব ও মেয়েটার
লাইফ
নষ্ট করে? -আমি কারও লাইফ নষ্ট করি নি। ও
একটা
ফালতু মেয়ে। বেহায়ার মত এখানে পরে ছিল।
কতবার যেতে বলেছি কেন যায় নি? আর তুমি
এর
মধ্যে পরো না ভাবি,আমি কোন মেয়েকে
কোনদিন মানব না আমার লাইফে। ভাবি আগে
থেকেই ধারনা করেছিল যে মেহবুব সাবিহার
উপর
ওর নালিশের শোধ নিবে কিন্তু তাই বলে
এভাবে
বাসা থেকে বের করে দেবে!!? ও আর দেরি না
করে ওর শাশুড়ির রুমে গেল তাদের সব বলল।
মেহবুবের ভাইকেও ফোন দিল বাসায় আসার
জন্য।
ওর শাশুর শাশুড়ি তো রাগে অস্থির। তারা
মেহবুবকে
অনেক বকাঝকা করল শেষে ওর শাশুড়ি বলল-তুই
আমার ছোট বউকে যেখান থেকে পারিস
নিয়ে
আয়, তুই আমার দিকে তাকিয়ে ওকে নিয়ে
আয়। –
তোমাদের দিকে তাকিয়ে ওকে বিয়ে করেছি
কিন্তু ওকে আমি মেনে নিতে পারব না। ওর
বাবা তখন
বলল-অন্যের মেয়েকে তুমি রাস্তায়
ফেলেছো এখন সাবিহার বাবার যে অপমান
আমাকে
সহ্য করতে হবে তা আমি কেন মেনে নিব???
তুমি
বাসা দিয়ে বের হও। এই কথাটা মেহবুবের খুব
লাগল।
ওর সস্মান আজ ওই ফালতু মেয়ের জন্য খারাপ
হল! ও
তখন রাগে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে
এল।
পাগলের মত গাড়ি চালাচ্ছে আর মদ খাচ্ছিল।
সামনে কি
আছে না আছে দেখছেই না, শুধু মাথার মধ্যে
সাবিহার রাগ কিরবির করছে..
মেহবুব গাড়ি চালাচ্ছে আর হর্ন দিয়ে
যাচচ্ছে। সামনে কে আছে না আছে
তা খেয়ালই নেই। মাথায় কোন হুশই ছিল
না একে তো সাবিহার উপর রাগ আরও সে
ড্রিংকস করছে।এরই মধ্যে ওর বড় ভাই
ফোন দিল।
-হ্যা ভাইয়া বল।
-তুই কোথায়? আর তোর গলা এমন
শুনাচ্ছে কেন?আমি বাসায় আসছি, তুই
তারাতারি আয় তো। আর হ্যা সাবিহাকে
যেখান থেকে পারিস নিয়ে আয়।
-সাবিহা আর সাবিহা। তোমরা কি পাইছ ওর
মাঝে???
– কি পাইছি তা তুই পরে বুঝবি। তুই ওকে
ফোন দে আর বাসায় নিয়ে আয়। আর
তুই ড্রিংকস করছিস না??
খবর দার গাড়ি চলাস না তাহলে -এই বলতে
না বলতেই ও পাশ হতে জোরে
আওয়াজ হল।
-হ্যালো মেহবুব, তুই ঠিক আছিস তো?
হ্যালো।
ওদিকে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে
বলতেই মেহবুবের গাড়ি একটা কাভার্ড
ভ্যানের সাথে ধাক্কা খায়। সিট বেল্ট বাধাঁ
না থাকায় স্টিয়ারিং হুইলে খুব জোড়ে ওর
মাথা আছড়ে পড়ে।মূহুর্তের মধ্যে মাথা
থেকে গল গল করে রক্ত বের হতে
থাকে। মেহবুব যখন অজ্ঞান হবে
হবে দেখে এক পুলিশ কনস্টেবল
আর কিছু লোক ওর গাড়ির কাচেঁ ধাক্কা
দিচ্ছে। এর পরে আর কিছুই দেখে নি।
ও জ্ঞান হারায়।
মেহবুবের যখন জ্ঞান যায় তখন, ওর
ফোনটা চালুই থাকে। বাইরের লোকজন
গাড়ির কাঁচ ভেঙে ওকে বের করে
করে আর ফোন ধরে ওর ভাইকে
আসতে বেলে।ভাল য অ্যাকসিডেন্ট
এর জায়গাটা ওদের বাসা হতে দূরে না। ওর
ভাই ফোনে সেই কনস্টেবলকে
হসপিটালের অ্যাড্রেস দিয়ে ওখানে
নিয়ে যেতে বলে। হসপিটালে যখন
বাসার সবাই পৌছাল দেখল ওকে ওটিতে
নিয়ে গেছে। ওর মা মেহবুব মেহবুব
বলে কান্না কাটি করছে।ওর বাবা ওর সাথে
খারাপ আচারনের জন্য আপসোস
করছে বার বার। ওর ভাবি তাদের সান্তনা
দিতে গিয়েও পারছে না।
ওদিকে সাবিহা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে,
এরই মধ্যে ওর ফোনটা বেজে উঠল
দেখে হসপিটালের ইমারজেন্সি হতে
ফোন। বলল-তাড়াতারি ওকে যেতে
হবে। ওদিকে মুমু ওকে যেতে দিতে
নারাজ।আন্টি বলল-মা তোর মন আর
শরীরের যে অবস্থা, কাজ দিয়ে
কয়দিন ছুটি নে। বলল-না আন্টি, কাজ
আছে দেখেই তো সব কস্ট গুলো
ভুলে থাকতে পারি, নিজের পায়ে নিজে
দঁাড়িয়ে আছি নইলে তো ত
মেহবুবের পায়ের নিচেই থাকতে হত।
নিজের সার্পোট নিজে করতে পারছি।
আন্টি বুজতে পারল, বলল-ঠিক আছে মা,
তুমি রাতে তারাতারি ফির। আমি তাহলে
তোমার মা বাবার সাথে তখন কথা বলব।
যখন মেহবুবের জ্ঞান ফিরল দেখে
হসপিটালের সাদা বিছানায় শোয়া। মাথাটা
প্রচণ্ড ব্যাথায় দগ দগ করছে, চোখও
খুলতে পারছে না।চোখ আধবোজা
অবস্থায় কোনরকম চারপাশটা দেখল।
ওর জ্ঞান ফিরছে দেখে নার্স ডা কে
খবর দিল। ডা এসে ওকে আবার ঘুমের
ঔষধ দিল।
নার্স যখন ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন
দিচ্ছিল ও তখন ডা. এর দিকে হা করে
তাকিয়ে ছিল। কারন সে ডা: অন্য কেউ না
-সাবিহা!!!

পর্ব- ৫
অভিশপ্ত বাসর

সাবিহা যখন বিকেলে হসপিটালে পৌছাল
ইমারজেন্সীতে যে রোগীর
ফলোআপ নিবে তার কেবিনের সামনে
পৌছেই দেখল ওর শাশুড়বাড়ির লোকজন
সবাই বসে আছে। খুব বিরক্ত হল ও কারন
ও বুঝছিল যে ওকে মানাতে এসেছে
তারা, তাছাড়া ও চায় না এখনি ওর পার্সোনাল
ব্যাপারে হসপিটালের কলিগরা জানুক,এতদিন
তো সংসারের নামে সবাইকে মিথ্যা
বলে আসছে, এখন যদি এই নাটক
দেখে তখন কি বলবে??? কিন্তু তাই
বলে এত লোকজন?? ওর শাশুড়িকে
কাঁদতে দেখে তার কাছে এগিয়ে
গেল। সবাই যখন ওকে দেখল ওর ননদ
ওকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল –
দেখো না ভাবি ভাইয়া এ্যাকসিডেন্ট
করেছে, মাথায় খুব ব্যাথা পেয়েছে।
ওর শাশুড়ি বলল-মা, তুই যখন এসেছিস
আমার মেহবুব সত্যিই এবার সুস্থ হবে।
আমাকে যেভাবে সুস্থ করছিলি, ওকেও
সুস্থ করে তোল মা।
-ডা.কি বলেছে?
-ভাবি, ডা. এখনও কিছু বলে নি শুধু
বলেছে প্রচুর রক্ত গেছে, জরুরী
ভাবে রক্ত দেয়া হইছে। তবে এখনও
জ্ঞান ফিরে নি।
-আচ্ছা আমি দেখছি।
এই বলে ও কেবিনে গেল, মেহবুব
বিছানায় শোয়া, এখনও জ্ঞান ফিরে নি।
-বাবাহ্, মেহবুব সাহেব! আপনার কথার ঝাঁঝ
কৈ গেল?আহারে আপনি আপনার সিংহাসন
ছেড়ে এই হসপিটালে কেন?আপনাকে
তো ভাব ছাড়া এভাবে মানায় না, ব্যাটা
শয়তান। বোঝ মজা এবার। —মনে মনে
ভাবতে ভাবতে বিছানার পাশে গেল।
পুরো ফলো আপ নিল, কন্ডিশন
আসলেই খারাপ। নার্সকে ঘুমের
ইঞ্জাকশন দিতে বলল।দেখল মেহবুব
চোখ হালকা খুলছে আর ওর কি হা করে
তাকিয়ে আছে।
ও চোখ কুচঁকে মেহবুবের দিকে
তাকিয়ে মনে মনে বলল
-আসলেই তো ব্যাটার মনে জোড়
আছে, এত কিছু হল তারপরও এত তারাতারি
জ্ঞান এল???ভাবিস্ট দেখি জাতে মাতাল
তালে ঠিক।… ভাবছিল ব্যাটা কিছুদিন থাকুক
বিছানায় শুয়ে।
ও করল কি নার্সকে সিরিয়াস মুখে বলল –
আরও এক ডোজ বেশি পাওয়ার ঘুমের
ঔষুধ দাও ওনাকে, ওনার পুরো বেড
রেস্ট দরকার।
এই বলে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে
হাসতে কেবিন থেকে বেরিয়ে ওর
শাশুড়ির কাছে গেল, গিয়ে পুরো
গম্ভীর মুখে বলল -মা, ওনার মাথার যখম
বেশি,তবে পুরোপুরি আশংকা মুক্ত। ওনার
পুরো বেড রেস্ট চলবে কিছুদিন।
আপনি টেনশন নিবেন না।
-আমি জানতাম মা, তুমি আসলেই ও ঠিক
হবে। তুমি ওর কাছ থেকে কোথাও যাবা
না, তাহলে আমার ছেলে আবার অসুস্থ
হবে।
হাহ্ আপনার ছেলে তো আমাকে
দেখতেই চায় না ভাবল।
রাতের দিকে মেহবুবের কলিগরা আর
ওর কিছু বন্ধুবান্ধব আসল দেখতে।তারা
ওকে দেখবে কি সাবিহাকেই সবাই
দেখতে চায়, কথা বলতে চায়।বিয়ের
সময় সবাই দেখেছিল ওকে, পরে সবাই
ওকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেও
মেহবুব ওকে নেয় নি।
ও ও মনের রাগ ভুলে তাদের সাথে কথা
বলেছে।কাউকে বুঝতেই দিল না
ওদের মধ্যে কোন সমস্যা আছে।
সবাই যাবার পর, ওর শশুড় বাড়ির সবাইকে
বাসায় পাঠিয়ে দিল- -ওনার তো সকালের
আগে জ্ঞান ফিরবে না, আপনারা বাসায়
চলে যান। কোন সমস্যা হলে আমি বাবা
বা ভাইয়াকে ফোন দিব।এই বলে ও
জোড় করে সবাইকে বাসায় পাঠাল। আর
ওর অসহ্যও লাগছিল, তারা থাকলে তাদের
সাথে কথা বলা লাগত আর এখন ওর মন বা
মেজাজ কিছুই ঠিক নেই কোন ফর্মালিটি
পালন করার।তাছাড়া সকাল থেকে তাদের
ছেলে ওর সাথে যা যা করছে এখন
মেহবুবের পাশাপাশি ওর ফ্যামিলির প্রতিও
বিরক্তি এসে গেছে, যেন এখন সবাই
গেলেই বাঁচে।
ডা.লাউঞ্জে ফিরে এল ও,ভাবল মুমুকে
ফোন দিবে। -হ্যালো মুমু আমি না আজ
ফিরব না, তুই চিন্তা করিস না।
-কেন তুই কোথায়?
-হসপিটালে একটা জরুরী কাজ পরে
গেছে রে।
-আমি বললাম না তোকে কাজ দিয়ে ছুটি
নিতে?
-হ্যা নিব তো আর হ্যা শোন আমি
সকালে ডিউটি শেষে আপুর বাসায় যাব।
আন্টিকে বলিস যে মা বাবার সাথে আমিই
কথা বলব সে যেন টেনশন না করে,
পরে কি হয় আমি তোকে জানাব।
-ওকে বাই, টেক কেয়ার।
-বাই।
সাবিহার মনটা খারাপ লাগছিল মেহবুবের
মায়ের জন্য, ছেলেটা যাই হোক ওর
পরিবারপরিজন কখনই ওকে অবহেলা
করে নি বিয়ের পর থেকে।
টেবিলে বসে বসে ভাবতেছিল ও
বিয়ের পরদিন থেকে কি না সহ্য
করছে। ওই তো একসময় ছিল
সবকিছুতে নাক কুঁচকানো, রাগচটা।যে
অন্যের কোন উল্টো কথা শুনতেই
পারত না, চিৎকার চেঁচামেচি করে বাসা মাথায়
নিত। ওর দুলাভাই বলত -আমার শশুরের কষ্ট
আছে এই মেয়ের বিয়ে দিতে।
হ্যা আজ ও কথা শুনে কিন্তু চুপ
করে,মেহবুবের। ছোটবেলা
থেকেই ওর শপিংয়ের খুব ইচ্ছা। প্রতি
সপ্তাহে ওর শপিং করা লাগবেই। মা বাবা
কিছুই বলত না। কি বা বলবে একমাএ ছোট
মেয়ে ও। ও খরচ করবে না তো কে
করবে??? কিন্তু বিয়ের পর এই নিয়ে
কথা শুনতে হবে তা কোনদিন ভাবেই নি।
ভাবল সে দিন যে দিন ওর শাশুড়ি
মেহবুবকে বলল -সাবিহাকে নিয়ে
শপিংয়ে যা। দিনটা ছিল বিয়ের এক সপ্তাহ
পর।ও ভাবছিল মেহবুবের সাথে কিছুটা
সময় কাটাতে পারলে হয়ত ওকে বুঝতে
পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সেজে
গুজে বের হল ওর সাথে। শপিং মলে
গিয়ে ও বাড়ির জন্য সবার জন্য কিছু না কিছু
কিনল। মেহবুব পুরোটা সময় কোন
কথাই বলল না। এক রাশ বিরক্ত নিয়ে ওর
পিছু পিছু হাটতে ছিল।
[6/5, 3:27 PM] Promity: । এক বার একটা
ব্যাগ হাতে নেবার কথা বলেছিল, ওর
দিকে এমন ভাবে কটমট করে তাকিয়ে
ছিল যেন কোন কাজের লোকের
কাজ করে দেয়ার কথা বলছিল তখন ওর
হাতে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বলেছিল –
আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম তুমি কাজ শেষ
করে এসো।
ও তখন সবার জন্য কেনার পাশাপাশি
মেহবুবের জন্যও একটা নীল পাঞ্জাবি
কিনল। কিন্তু নিজের জন্য কিছুই কিনল না
মেহবুবের টাকা দিয়ে কারন ওর ইচ্ছা ছিল
মেহবুব নিজে থেকে যেদিন ওকে
কিছু কিনে দিবে সেইদিনই ওর থেকে
নিবে তার আগে না। শপিং সেরে বাসায়
যাবার পথে মেহবুবকে ওর পাঞ্জাবির
প্যাকেটটি দিল, খুলার পর ওটা দেখেই
ওর দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল -এটা কোন
রং হল?? আমি এসব পড়ি না।আর এত দেরি
কেন আমি কি তোমার পিয়ন??
এরকম লজ্জাকর অবস্থায়ওকোন দিন
পরে নি সাবিহা, না পারছিল কাঁদতে না পারছিল
গাড়ি হতে নেমে যেতে। সারাটা পথ মাথা
নিচু করে বাসায় পৌছাল। বাসায় সবার পোশাক
দিল। সবাই খুবই পছন্দ করল।কিন্তু মন
ভরবে কি???কি লাভ হলো সবাইকে খুশি
করে? যার জন্য করছে, সে ওর সাথে
কি বিহেব করল?
রূমে গিয়ে পা দেয় কি দেয় নি
শুনতেছে মেহবুব কাকে যেন
বলছে ফোনে -এই মেয়ে সংসার
করার মত না, আজ আমার হাজার হাজার টাকা
নস্ট করছে। এমন ভাব করছে যেন
মলে কোনদিন যায় নি,ছোটলোক!!!
সাবিহা ছোটলোক!! যে নিজের হাতে
ইনকাম করে!!! ও কিছুই না বলে ওর ব্যাগটা
নিয়ে বাসা হতে বের হয়ে যায়
হসপিটালে ডিউটি আছে বলে, আসলে
ডিউটি ছিল না, বাসায় থাকবে না ভেবেই
হসপিটালে ওভার টাইম করবে,
পর্ব- ৬
অভিশপ্ত বাসর

রাতে কয়একবার সাবিহা মেহবুবের
কেবিনে গেল, ওকে দেখতে। ও
তখন বেঘোড়ে ঘুমুচ্ছে, মাথায়
ব্যান্ডিজ বাঁধা,মুখটা ব্যাথার যন্ত্রনায়
কুঁচকিয়ে রয়েছে। আজ সাবিহা প্রথম
খেয়াল করল লোকটার মুখে একটা মায়া
আছে, ও আগে শুনত যে ঘুমুলে
মেয়েদের মুখটা মায়াকারা হয় কিন্তু
ছেলেদেরও হয় তা আজ প্রথম জানল।
ভাবল এখন যেন ও ঘুমিয়ে তাই এমন
লাগছে যদি জেগে থাকত তাহলে নিশ্চই
এখন ওকে দেখলে বাজে বিহেব
করত, দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত। একথা
ভাবতেই ওর মনটা বিষিয়ে উঠল। ও রুম
থেকে বেরিয়ে কড়িডোরে হাঁটছে
আর ভাবছে যে বিয়ের পরদিন থেকে
যতই মোহবুবকে ছাড়ার কথা মনে
হয়েছে ততবারই একের পর এক ঘটনা
ঘটেছে। প্রথম ওর মা, সে সুস্থ হবে
হবে করে যখন সুস্থ হল, যখন সব কিছু
শেষ করবে তখন মেহবুব নিজে না জানি
এ নিয়ে কতদিন ঝুলতে হয়।কাল হয়তো
ওর নিজের ফ্যামিলিকেও মেহবুবের
অসুস্থতার কথা জানাতে হবে কারন
যাইহোক চক্ষুলজ্জা তো আছে ওর।
ওর জখম দেখে মনে হচ্ছে
কয়েকদিন হসপিটালে থাকতে হবে, আর
যতদিন থাকবে ওর ফ্যামিলির ইমোশনাল
অত্যাচার চলতেই থাকবে। ভাগ্যেরও কি
লিলা মেহবুব ওরই পেশেন্ট হল শেষ
পর্যন্ত!!! আর কি কেউ ছিল না?কত ডা. ই
তো থাকে ইমারজেন্সীতে। কাল
সকালে যখন মেহবুবের হুশ হবে তখন
ওকে দেখেই তো আবার ভ্রু
কুচঁকাবে। না পারছে অন্য ডা.এর হাতে
পেশেন্ট ট্রান্সফার করতে না পারছে
নিজে দেখতে কারন ওর কলিগরা সবাই
ইতিমধ্যে জেনে গেছে।আর ও
নিজেই এই মেডিকেলের এক্স
স্টুডেন্ট, সবাই চিনে ওকে, ওপাশ
থেকে ওপাশ হলেই সবাই ওর
পারসোনাল জীবন সম্পর্কে জেনে
যাবে,যে ব্যাপারে ও খুবই সেনসিটিভ।
তখন আর মুখ দেখতে পারবে না,
ওকে এখানের চাকরি ছাড়তে হবে। আর
সবথেকে বড় কথা মেহবুবের চাচা
এখানের কলেজের প্রফেসর। যার
কারনেই আজ যত ঝামেলার জন্ম। কাল
সে এখানেও ছিল ওএকবারের জন্যও
তার দিকে তাকায় নি অভিমানে।যে স্যার
ছিল ওর মেডিকেল লাইফের আর্দশ,যার
হাত ধরে পাশ করেছে, যাকে দেখে
ওর মনেও সাধ জাগত যে ও ও একদিন
টিচার হবে, ও ও স্যারের মত করে
পড়িয়ে ওর স্টুডেন্টদের ডা. বানাবে।
আজ তাকে দেখলেই ইচ্ছে করে
জানতে -আপনি জেনে শুনে কেন
আমার সাথে এমনটা করলেন???
কিন্তু ও তো আর মেহবুব না যে সবার
সাথে বেয়াদবি করবে।
পরদিন সকালে ওর ডিউটি শেষ কিন্তু
তারপরও ও হসপিটাল ছাড়তে পারছে না।
ডা.লাউঞ্জে ঢুতেই ওর এক কলিগ বলল –
আহারে নুতন বউয়ের দেখি এক রাতেই
চোখের নিচে কালি তার মেজরের
চিন্তায়।
আরও একজন বলল-ইস্ কি রোমান্টিক না??
জামাই বউয়ের পেশেন্ট। সাবিহা তোমার
হাত কাপে নি ভাইয়াকে দেখার সময়??
-সাবিহা তোমার পেমেন্ট হিসেবে কি কি
নিবা লিস্ট করে নাও।
সেই কথার উওরে আরও একজন বলল-
ইস্ আমার জামাইটা একটু অসুস্থ হতে পারত
না।
এ কথা শুনার পর সবাই হো হো করে হাসা
শুরু করছে,সাবিহার অবশ্য রাগে গা
জলছিল। মনে মনে ভাবছে -আমার
জামাইর মত তোমাদের হলে বুঝতা এই
ভাবতে ভাবতে ওর পারসোনাল ফোনটা
অন করে কাল মুমুর সাথে কথা বলার পর
ফোনটা ওফ করে রাখছিল,বাসায় ফোন
দিবে। মায়ের সাথে আজ ২দিন কথা হয়
নি, ওমিন ও দেখে ওর বোন ফোন
করেছে।
-কি রে কি হয়েছে তোর? ফোন
অফ ক্যান?
-চার্জ ছিল না।
-তুই জানিস তোকে ফোন দিতে দিতে
হয়রান আমরা, আজকে সকালে মা বাবা
আসছে মেহবুবের খবর শুনে।
-কি বল?? তোমরা কিভাবে জানলে?
-মায়ের সাথে কবে কথা বলেছিস মনে
আছে তোর?বাসায় বসে কান্নাকাটি
করছে, তখন বাবা মেহবুবের বাবাকে
তোর খবর জানার জন্য ফোন দিসে
তখন শুনে এসব কাহিনী।
-তাদের টেনশন করতে নিষেধ কর উনি
ঠিক আছে।
-শোন আমরা আসতেছি হসপিটালে। বাই।
যাহ্!! বার বার চেয়েছিল এই লোকটার
কথা নিজের ফ্যামিলিকে জানাবে না ,
ডির্ভোসের টেনশনই কিভাবে দিবে
তাই ভেবে পাচ্ছিল না এখন আবার আগে
এই টেনশন দিতে হচ্ছে। না জানি মা বাবার
অবস্থা কি হয়েছে শুনে? শত হলেও
তারা তো মেহবুবকে জামাই হিসেবে
মানে।
নিচে ওর ফ্যামিলির লোকজন এসে
ওকে ফোন দিল। অনেকদিন পর ওর
মাকে দেখে এত ভাল লাগছিল।
-আহারে আমার ছোট মা, দেখ
শরীরের কি অবস্থা হয়েছে।–মা বলল
-আরে মা ও কিছু না, তুমি জানো না রাতে
ডিউটি করা কত কস্টের??ঘুম হলে সব
ঠিক হয়ে যাবে।
-মেহবুব কোথায়?
-উনি এখনও ঘুমে।
-চল দেখি ওকে।
-না মা। এখনই কেবিনে যাওয়ার দরকার
নেই। উনার এখন সম্পূর্ণ বেড রেস্ট
প্রয়োজন।
-দেখ আমার মেয়ে আমার সাথে কি
রকম ডা. এর মত কথা বলছে। হাহাহা.. খুব
ভাল মা। তুই অল্পতেই নিজ দায়িত্ব বুঝে
নিছিস।
-ধূর মা ও সব কিছুই না, আমি কাল ওনার
ফ্যামিলিকেও দেখা করতে দেই নি।
ওনার মা তো খুব কান্নাকাটি করছে
তারপরও।উনি আস্তে একটু রিকভারি হোক
তখন দিব নইলে ওনার ডিস্টার্ব হবে, মাথায়
জখম তো।
পরক্ষনে ভাবল না থাক দেখা করিয়ে
দেই, মেহবুবের তো কোন হুশ
নেই, বরং হুশ থাকলে মা বাবা তো তার
সাথে কথা বলতে চাইবে তখন মেহবুব
কি না কি বলে!!! তখন মা বাবা ওর বোনটা
খুবই কষ্ট পাবে আর এর জন্যই তো
এতদিন ওদের দূরে রাখছে যাতে ওরা
কষ্ট না পায়। তাই ভেবে ও তাদের
মেহবুবের কেবিনে নিয়ে গেল।
মেহবুব ওর মা বাবার সাথে কোনমতে
দায়সারা কথা বলতে ছিল,সাবিহা বুঝতে
পেরে তাদের বলল-বাবা তোমরা এস,
উনার রেস্ট দরকার।
তারপর তারা মেহবুবরের সাথে বিদায়
নিয়ে কেবিন হতে বের হয়ে এল।ওর
তাদের দিকে তাকানোর কোন সাহসই
হচ্ছিল না উলটো বলল-মা তুমিও না কথা বলা
শুরু করলে আর থামতেই চাও না, কি দরকার
যেচে এত কথা বলার???
-আরে বাবা, যেচে কথা বলার কি
হলো??
-আচ্ছা যাও এখন আমার কাজ আছে।
একরকম জোড় করেই তাদের বিদায়
করল। ওদিকে তারা যাবার পর পরই
মেহবুবের মা বাবা আসল এখনতো আবার
তাদের সাথেও যেতে হবে। অসহ্য
বিরক্তি নিয়ে গেল তাদের মপহবুবের
কাছে, ওর কাজ আছে বলে বের
হতে যাবে ওমনি ওর শাশুড়ি ওকে
আকঁড়ে ধরল, ওকে যেতে দেবে
না তার পাশে বসে থাকতে হবে,সে
যে নাস্তা নিয়ে আসছে তা তার হাতেই
খেতে হবে। এতো মহা মুসিবত!! আবার
এই মহিলাকে কিছু বলতেও পারে না,
অল্প সময়ে খুবই ভাল সম্পর্ক হয়ে
গেছে তার সাথে। অগত্যা বসতে
হল,খেতে হল।
পুরোটা সময় মেহবুব অন্য দিকে ফিরে
ছিল।ভাবটা এমন ছিল- দেখ বাসা থেকে
বের করে দিছি ওদিকে এখন আবার
আমার মায়ের হাতে খাচ্ছে। সাবিহা মনে
মনে ভাবল-ব্যাটা ভাব ধরিস না নইলে আবার
ঘুমের ঔষধ দিব।
ওর শাশুড়ি খাইয়েয়ি ছাড়ল না বলল তার সাথে
বাসায় যেতে হবে এখন। সাথে সাথে
মেহবুব ওর দিকে ফিরল।বাহ্ এতক্ষন
তে আরেকদিকে ফিরে ছিলেন আসল
কথায় আসতেই এখন ওর দিকে তাকাল
ভাবল সাবিহা।
ও ও চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ওর দিকে
তাকিয়ে-না মা আমার কাজ আছে। মা বাবা
ফিরছে আজ ওদের সাথে দেখা
করতে যাব আপুর বাসায়।
-ও হ্যা কাল তোমার বাবাকে ফোন
দিয়েছিল। আচ্ছা তুমি এককাজ কর তাদের
বাসায় নিয়ে আস।
-না মা এখন থাক,ঝামেলার দরকার নেই।বাসার
সবাই এখন উনাকে নিয়ে টেনশনে
আছে এখনি তাদের আনতে হবে না
আমি বরং তাদের সাথে দেখা করে আসি।
ওর শাশুড়ি ওর গাল আদর করে টিপে
দিয়ে বলল-আচ্ছা মা যাও,, তুমি বিকেলের
আগে এস।
-জি মা।
ভাল সমস্যা এরা দেখি ওকে ছাড়তেই
চাইছে না। ওদিকে ছেলে তো
কোলা ব্যাঙের মত মুখ করে আছে।
ওর বোনের বাসায় যাবার পর তাদের সবার
হাসি মুখ দেখে সব কস্ট ভুলে গেল।মা
বাবার সাথে আড্ডা দিল, বোনের সাথে,
তার বাচ্চাদের সাথে খুনসুটি করল ভাবল
আসলে ওর জীবনটা তো খারাপ না। কি
নেই ওর??? নিজে এস্টাবলিস,একটা
সাপোর্টিং ফ্যামিলি আছে, ওর ফ্যামিলির
হাসিমুখ দেখলে ও রকম মেহবুবের মত
সংসার ছাড়তেও রাজি, যার কাছে ওর কোন
দাম নেই।
আজ অনেকদিন পর অনেকক্ষণ ধরে
শাওয়ার নিল,মায়ের হাতে খেল।ভাবছিল
একবার সব কাহিনীগুলো বলি পরক্ষনে
সে চিন্তা বাদ দিল। তাহলে এই আনন্দের
সময়টা শেষ হয়ে যাবে।
ওদিকে ওর শাশুড়ি ফোনের পর ফোন
দিয়েই যাচ্ছে শেষে ওর বোনের
নাম্বারে ফোন দিয়ে বলল ওকে
যেতে হসপিটালে। কি আর করা
মেহবুবের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে
করতে গেল হসপিটালে। গিয়ে
দেখে ওদের আত্নীয়রা,মেহবুব
ের কলিগ আরও অফিসাররা একের পর
এক আসছে দেখা করতে,মেহবুবের
তো দেখা করা,অতিরিক্ত কথা বলা বারন
করেছে সাবিহা অগত্যা ওকেই সবার
ফেস করতে হল, সবার সাথে ভাল
বিহেভিয়ার করল। রাতের দিকে
মেহবুবের বোন,ভাবি আসল।ওকে
আজকে দেখে খুব খুশি হল ওরা। ভাবি
কানে কানে বলল-আমি জানতাম তুমি
আসবে।
তারা যাওয়ার সময় মাকে সাথে করে নিয়ে
যেতে চাইল কিন্তু সে সাবিহার আর
মেহবুবের সাথে থাকবে, শত হোক মা
ই তো।সে সাবিহাকে বলল-মেহবুবের
পাশের বেডে থাকবে। কি আর করা।ও
মেহবুবের সাথে কথা না বলার শর্তে
রাজি হল।পাশের বেডে বসে ওর
মায়ের কত কথা! সাবিহা সব মনোযোগ
দিয়ে শুনছে।পাশাপাশি ও মেহবুবের
দিকে আড় চোখে তাকাত।দেখত সে
এক দৃস্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে
আছে।তাও আবার কোন চ্যানেল?? –
ডিসকভারি!
এই লোকটা যে কোন ধরনের মানুষ
ও বুঝতেই পারতেছিল না।ভাবি তো
একদিন বলছিল ওনার দেবর খুব ভাল
ছেলে, এই তার নমুনা?? কাল যা ব্যবহার
করল ওর সাথে, তার পর ও তাকে ভাল
বলতে নারাজ। পরিস্তিতির চাপে এখন
এখানে বসা।
মাঝে মেহবুব বাথরুমে গেল, পানি
খেল সব কিছুতেই ওকে সাবিহা হেল্প
করল শুধুমাএ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে।
মহিলার সাথে ওর একটা আলাদা ভাল লাগার
সম্পর্ক হয়ে গেছে। পানি খাবার সময়
ওকে মেহবুব বাঁধা দিচ্ছিল, তখন ওর মা
বলল-দেখো সাবিহা আমার ছেলে
লজ্জা পাচ্ছে। আমি না থাকলে বউয়ের
হাতে ঠিকই খেতি।কথাটা শুনে সাবিহার
একটা দীর্ঘ নিঃশাসই পরল কেবল,
মেহবুবের দিকে তাকিয়ে ওর মুখটা
বোঝার চেস্টা করল।কিছুই বুঝল না।
রাতে ও মেহবুবকে ঔষধ খাইয়ে চলে
গেল ডা লাউঞ্জে রেস্ট নিবে। আজ
ইচ্ছা ছিল নিজের মায়ের কোলে মাথা
রেখে ঘুমুবে তা আর হল না। কবে
যে এই দোটানা দিন গুলো শেষ হবে
জানে না একসময় সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে
ঘুমিয়ে পড়ল।
পর্ব- ৭
অভিশপ্ত বাসর

পরেরদিন সাবিহার ডিউটি শুরু হবার পর ও আর
মেহবুবের আলাদা করে খোজঁ নিতে
পারে নি,শুধু রেগুলার ফলোআপে
দেখে এসেছে আর নতুন কিছু ঔষধ
দিয়ে এসেছে, পুরনো কিছু ঔষধ
পাল্টে। দুপুরবেলা ডিউটি শেষে যখন
গেল, বাইরে থেকে শুনতে পেল
হাসির শব্দ। ঢুকে দেখল মেহবুবের
বন্ধুরা। ওকে দেখে তারা হৈ হৈ করে
উঠল।ওকে দেখে মেহবুব আগের
গম্ভীর মুড ধারন করল।ওর বন্ধুরা ওদের
নিয়ে বিভিন্ন মজার মজার মন্তব্য করতে
লাগল, সাবিহার ও দিকে কোন কান নেই,
ও নার্সের প্রতি প্রচণ্ড বিরক্ত। কারন ও
বলেই দিছে বাইরের কারও সাথে যেন
দেখা না করতে দেয়া হয় মেহবুবকে,
ওর মাথার জখম সারতে টাইম লাগবে এখনি
যদি বেশি কথা বলা শুরু করে তাহলে
মেহবুবকে সাফার করতে হতে পারে।
তাদের কাছ থেকে কাজ থাকার অযুহাতে
বিদায় নিয়ে বাইরে নার্সকে বলল,
-তোমাকে না নিষেধ করেছি ওনার
সাথে কাউকে দেখা করতে দিবা না?
-ডা. উনি নিজেই পারমিশন দিসে আমাকে।
একথা শুনার পর সাবিহা আর কথা বাড়ায় নি,
যেহেতু উনিই পারমিশন দিছেন তাহলে
আর কি করা। ওর তো কোন অধিকারই
নেই মেহবুবের উপর জোড় খাটানো
আর একজন ডা. আর পেশেন্ট
সম্পর্কের হিসেবে জোর খাটাবে
তারও কোন ইচ্ছে নেই ওর। অন্য
পেশেন্ট হলেও কথা ছিল।
বিকেলের দিকে ওর মা বাবা আসল, তারা
মেহবুব আর সাবিহার জন্য খাবার রান্না
করে নিয়ে আসছে। সাবিহা ভয়ে
উপরওয়ালাকে ডাকতে থাকল, মেহবুব
যেন কোন প্রকার বাজে বিহেব না
করে তাদের সাথে। তাহলে মা বাবা যে
মুষরে পরবেন তা ও সামাল দিতে পারবে
না। কিন্তু মেহবুব হাসিমুখ না করলেও
একদম খারাপ ব্যবহার ও করে নি।তাদের
আনা খাবার কিছু খেল। অবশ্য নিজে
উঠে খেতে পারে নি, সাবিহাই খাইয়ে
দিয়েছে। বাবার সামনে খুব লজ্জা পাচ্ছিল
ওর।তারপর মুখও মুছে দিয়েছে। মনে
মনে ভাবছে -হায় হায়, বেটাকে দেখি
খাইয়েও দিচ্ছি। এটাকে তো বিষ
খাওয়ানো উচিৎ।
ও একদিকে এইভেবে খুশি যে
মেহবুব মাথার যন্ত্রনায় বেশি কথা বলতে
পারছে না, নাহলে বকা বকি তো
করতোই। মা ওর ফেভারিট খাবার কোনটা
জিজ্ঞাস করল।তার নাকি কোন ফেভারিট
খাবার নেই বলল।
সাবিহা মনে মনে হেসে বলল-আচ্ছা
মেজর সাহেব, ফ্লেভার বলতে
আপনার কিছু আছে??খুব ইচ্ছে করছিল
ওর বলতে মা উনাকে এক বোতল মদ
কিনে দাও, ওটা ওনার ফেভারেট। ওর হাসি
হাসি মুখ দেখে মেহবুব এমন ভাবে
তাকাল যেন ওকে আস্ত পিষে
ফেলবে।
রাতে মা বাবা যাবার পর ও যখন মেহবুবের
ফলোআপ নিচ্ছিল বলল-তুমি তখন
হাসছিলে কেন? সাবিহা একটু অবাক হল
কারন এই প্রথম মেহবুব ওর সাথে নরম
গলায় কথা বলল,ইচ্ছে করছিল বলে আমি
আপনার মতো কোলা ব্যাঙের মত মুখ
করে থাকতে পারি না সব সময় কিন্তু
নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-আপনি
বলছিলেন না তখন যে আপনার কোন
ফেভারিট খাবার নেই তাই হাসছিলাম।
-এতে হাসার কি হলো?
-না এমনি।
-না এমনি না তুমি মনে মনেও কিছু চিন্তা
করছিলা, তোমার মুখ দেখেই বুঝছি। কি
চিন্তা করছিলা?
-কিছু না।
-কিছু তো একটা অবশ্যই এবং তা আমার
ব্যাপারে।এবার বল।
-আরে কিছুই না, আপনার এখন এত কথা বলা
উচিৎ না, ঔষধ খেয়ে ঘুমান।
-আমি যদি এখন সুস্থ থাকতাম তাহলে
তোমার পেট থেকে সব কথা বের
করতাম।
-কিভাবে?
-সেটা তখন দেখতা।ভুলে যেও না
আমার প্রফেশন কি?
-আমি কিছুই ভুলি নি আর আপনার ব্যাপারে
কোনোদিন ভুলবোও না বিশেষ করে
আপনার রূঢ় ব্যবহার।
-তুমি যেটার প্রাপ্য সে ব্যবহারই করেছি
তোমার সাথে।
-কি?
-হ্যা।
এবার আর সাবিহা নিজেকে ঠিক রাখতে
পারে না
-আমি কি করেছিলাম আপনার সাথে?
-তুমি এখন যাও।
এই বলে মেহবুব অন্যদিকে ফিরে
রইল, সাবিহার প্রচণ্ড অপমান বোধ হচ্ছিল
ও আর কিছু না বলে কেবিন হতে
বেরিয়ে এল। নিজেকে অনেক
বুঝিয়েছে যে মেহবুবকে আর
ওকে কথা শুনাতে দিবে না,ওর কথায় আর
কাঁদবে না আজ আবার নতুন করে
অপমানিত হবার পর কাঁদতে লাগল। কি লাভ
হলো এই লোকের জন্য এত কিছু
করে!!! নিজের অন্য পেশেন্টকে
অবহেলা করে, কম সময় দিয়ে বার বার
মেহবুবের কাছে গেছে। আর তার
ফল এই??
পরেরদিন সকালে ও যখন ডিউটি শেষ
করে ওর বোনের বাসায় যাবে তখনি
ওর শাশুড়ির ফোন?
-হ্যালো মা, আমি হসপিটালে এসেছি।তুই
কোথায়?
-মা,আমার এখন ডিউটি শেষ। আমি আপুর
বাসায় যাচ্ছি।
-আচ্ছা, একটু পরে যা। মেহবুব
তোকে ডাকছে।
ভাবল বলে দেয় যে কেন অপমান
করার আর কিছু বাকি আছে??কিন্তু মহিলা
কস্ট পাবে দেখে আর বলে নি। আসছি
বলে ফোন রেখে দিল।
কেবিনে ঢুকে দেখে মেহবুব বিছানায়
একা বসা। ওর মা নেই। তাকে না দেখে
ও ফেরার জন্য পা বারাল ওমনি মেহবুব
পিছন থেকে বলে উঠল
-তোমাকে আমি ডেকেছি মা বলে নি?না
কানে শোন নি?
সাবিহার মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হল।
ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
-বলেছে।
-তাহলে যাচ্ছ কেন?
-বলুন কি কথা?
-বলব, তার আগে বল আমার কথার আগে
পিছে কোন কথা বলবা না,আমি ওসব
পছন্দ করি না।
-আচ্ছা বলব না, বলুন।
-কাল রাতে বাজে বিহেভিয়ারের জন্য
সরি।ওভাবে তোমার সাথে কথা বলা উচিৎ
হয় নি।
সাবিহা তো পুরো অবাক। ব্যাটা বলে কি??
কিছু বলতে যাবে ওমনি মেহবুব বলল-
কোন কথা না, যাও এখন।
ও আর কিছু না বলে ওর বোনের বাসায়
চলে এল,সারাটা পথ ভাবল কি এমন হলো
যে মেহবুব মিয়ার কথার ধরন এক রাতের
মধ্যে চেঞ্জড!! ও মনে মনে আরও
একটা সিদ্ধান্ত নিল আর তা হলো
হসপিটালের আশেপাশেই একটা বাসা
নিবে। এভাবে আর কতদিন চলবে!!?ওর
ফ্যামিলিকে ডির্ভোসের আগ পর্যন্ত
বলবে যে শাশুড় বাড়ি থেকে ও
হসপিটালে আসতে কষ্ট হয়। সেটা
ভেবেই ওর বান্ধবী মুমুকে নিয়ে
বিকালে বাসা খুঁজতে বেরল। দুই রুমের
সুন্দর একটা বাসাও পেল। ওকে এভাবে
মুভ অন করতে দেখে মুমুও খুব খুশি।
ঠিক করল পরের দিন যাবে ফার্নিচার
কিনতে।
অবশ্য ও বাড়ির কাউকে জানানের
প্রয়োজন মনে করল না শুধূ মাএ ওর
শাশুড়িকে জানাল ওর বাসা নেবার কথা। শুনে
মহিলা খুব কাঁদল। বার বার বলতে ছিল –
মেহবুবের ঘরই তোমার ঘর। তুমি ছাড়া
আমার ছেলেকে কেউ দেখে
শুনে রাখতে পারবে না। ও আর প্রতি
উত্তরে কিছু বলে নি,ফোনটা কেটে
দিয়েছিল, পরে ফোনটা হাতে নিয়ে
ভাবতেছিল ও ও কি মেহবুবের মত কঠিন
মনের হলো? পরে ভাবল না তো ঠিকই
আছে, জীবন আজকে যেখানে
এনে ওকে ফেলেছে মনকে কঠিন
না করে উপায় কি। আজ ও মেহবুবের
ফ্যামিলির দিকে তাকিয়ে নরম হবে কাল ও
ই উলটো ওকে রাস্তায় বের করে
দিবে সেদিন যেমনটা করেছিল। তখন
ওর কি হবে?তাছাড়া ও মেডিকেল
প্রফেশন নিয়ে সামনে আগাতে চায়।
নিজেকে আরও ভাল ডা. হিসেবে পরিনত
করতে চায়।
ওদিকে পরে মেহবুবের সাথে দেখা
করে ফলোআপ নিতে গেল ভাবল ওর
নতুন বাসা নেওয়া শুনে কিছু বলবে, নিশ্চই
মার কাছ থেকে শুনেছে কিন্তু ও
কোন কথাই বলল না। এতসব কিছুর
মধ্যেও ও মেহবুবের বউ হিসেবে
সব কিছু করে গেছে, ওর সঠিক সময়ে
খাওয়ানো, গা মুছিয়ে দেয়া, ওয়াশরুমে
নিয়ে যাওয়া। মেহবুবের কাছ থেকে ও
এতটুকু ভাল আচারন পায় নি, উলটো
কোন কাজ এদিক ওদিক হলে ধমক
খেত। তবে উপরি পাওনা হিসেবে ছিল
এটুকু যে ওর ফ্যামিলি আর ওর কলিগ
বন্ধুদের সাথে ভাল আচারন করছে, হাসি
মুখে কথা বলেছে এবং বেশ
ভালভাবেই বলেছে।ওর বোনের
বাচ্চাদুটার সাথে ভাল ব্যবহার করেছে।
এটা নিয়েই ও বরং বেশি ভয়ে ছিল না জানি
ও ওদের সাথে কেমন আচারন করবে।
সাবিহা মনে মনে ভেবেই রেখেছিল
যদি ও বাচ্চাদের সাথে সামান্যতম খারাপ
আচারন করে তাহলে ওকে ছাড়বে না।
নাহ্ তা আর কিছু করতে হয় নি উলটো
সেদিনই মেহবুবকে ও অট্ট হাসি দিতে
দেখেছে। বাচ্চারাও ওকে খুব পছন্দ
করেছে,সাবিহার নামে নালিশ জানিয়েছে।
ও নাকি ওদের চকোলেট খেয়ে
ফেলেছে আরও কত কি। মেহবুবব
আবার কথাও দিল ওদের জন্য ও
চকোলেট কিনে রাখবে এবং সাবিহাকে
একটাও দিবে না। তারা ওকে ওদের
স্কুলের ফাংশনে পর্যন্ত দাওয়াত দিছে।
দেখল মেহবুবও বলল ওর যত কাজই
থাকুক না কেন ও যাবেই যাবে। তখন
আবার মেহবুব সাবিহাকে বলল-শোন
খালামনি, তুমি আমাকে তিতুনের স্কুলের
ফাংশনের ডেট মনে করিয়ে দিও।
ও বলল-আচ্ছা দিব।

প্রায় দের মাস পর মেহবুব পুরোপুরি
সুস্থ হয়ে বাসায় গেল, এদিকে সাবিহা হাফ
ছেড়ে বাচঁল। অবশ্য এর মাঝে
মেহবুবের সাথে সম্পর্কটা একটু
শীতল হলো, আগের মত তিক্ততা
নেই দুজনের কারোরই। প্রায়ই রাতে
হসপিটালের করিডোরে দুজন হাঁটত,মাথায়
ব্যাথার জন্য মেহবুব বেশি হাঁটতে পারত
না, মাথা ঘুরাত। তখন সাবিহা ওকে হুইল
চেয়ারে বসিয়ে দিত আর পেছন
পেছন হাঁটত আর গল্প করত -স্কুলের
গল্প, সাবিহার মেডিকেল লাইফের গল্প,
মেহবুবের ক্যাডেট লাইফের গল্প,
নিজেদের বন্ধুবান্ধবদের গল্প, কে
কোথায় ঘুরতে যেতে পছন্দ
করে,নিজেদের ফ্যামিলি লাইফের গল্প
আরও কত কি।মেহবুব যতই সাবিহার মাকে
বলুক না কেন ওর কোন পছন্দের খাবার
নেই, সাবিহা ঠিকই ওর পছন্দের খাবার ওর
মন থেকে বের করল এবং সে লিস্টটা
বেশ লম্বা চওড়া।সাবিহা তো হেসে
খুন!!
যেদিন খুব পেশেন্টের চাপ থাকত
সাবিহার ,মেহবুব তখন হত ওর কলিগদের
আড্ডার বন্ধু। এরই মধ্যে সাবিহা
হসপিটালেরই কলেজের টিচার হিসেবে
জয়েন করল, হসপিটালের ডিউটি
অফিসারের পাশাপাশি ওর মেডিকেলের
টিচার হওয়ার খুব শখ ছিল।যেহেতু
সংসারের ঝামেলা নেই, খুব
ভালোমতোই সব ম্যানেজ করতে
পারত। আর ও তো সব টেনশন হতে
দূরে রাখতে নিজেকে ব্যস্তই রাখতে
চেয়েছিল।
যেদিন মেহবুব চলে গিয়েছিল ওর শাশুড়ি
ওকেও সাথে করে নিয়ে যেতে
চেয়েছিল। ও বলছিল ওর এখন ডিউটি
আছে এবং এরপরে ওর ইম্পরট্যান্ট
ক্লাস আছে। যখন বলছিল মেহবুব ওর
দিকে শুধু তাকিয়ে ছিল, কিছু বলছিল না কারন
ও জানত ওর এখন ডিউটি নেই। ওর চলে
যাবে দেখেই আসছে।আর
মেহবুবের এ কদিনে সাবিহার ক্লাসের
শিডিউলও জানা হয়ে গিয়েছিল।
মেহবুব চলে যাবার পর সাবিহার খুব মন
খারাপ হয়েছিল।আসলে মেহবুব ওর
অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। পরে নিজেকে
সামলিয়ে নিয়ে ভাবল –থাক! যে চলে
যাবার সে তো যাবেই, আটকিয়ে তো
আর রাখা যাবে না আর মেহবুব তো
সেখানে কোনদিন ওর হয়ই নি কিবা
আটকাবে??
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল, সাবিহা
নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে,
এখন আর আগের মত নিজের জীবন
নিয়ে এতটাও ভাবে না।হসপিটালের ডিউটি
তারপর ক্লাস এর সাথে আবার নিজের
পড়াশুনা।ছুটির দিনে বোনের বাসায় ঘুরে
আসা,তাদের সাথে সময়
কাটানো,মেহবুবের কথা উঠলে বলত
সে ব্যস্ত তাই আসে নি।অল্প অল্প
করে তাদের কিছু সমস্যার আভাসও
দিয়েছে যাতে পরবর্তীতে ওদের
ডির্ভোসটা একটু সহজ ভাবে নিতে
পারে। হ্যা ও বাড়ির সাথে কথা হয় ওর
শাশুড়ি, জা মাঝে মাঝে ননদের সাথে
কিন্তু মেহবুবের সাথে না। মেহবুবের
নাম্বার ছিল ওর কাছে কিন্তু সেদিনের
খারাপ আচারনের পর নিজের কাছেই
প্রতিজ্ঞা করে মেহবুবকে কোন দিন
ফোন দিবে না, তার দরকারও নাই ওর
খোঁজ নেবার।মাঝে যেটুকু ভাল
সম্পর্ক হয়েছিল তা ও শুধু একটা ডা আর
পেশেন্ট সম্পর্ক হিসেবে নিয়েছিল
আর কিছু না।
ওদিকে মেহবুব বাসায় ফিরে, অফিসে
জয়েন করে খুবই ব্যস্ত সময় পার
করছিল। একদিনে অনেক কাজ জমে
গেছে।সাবিহার কথা মনে উঠত, বেশি
মনে করাত মা আর ভাবি। উঠতে বসতে
সবসময়, যতটুকু সময় বাসায় থাকত।একদিন
রাতে মায়ের রুমে গিয়ে দেখে ওর
মা,বোন আর ভাবি ওদের বিয়ের অ্যালবাম
দেখছে, ওকেও দেখতে বলল।-
তোমরা দেখ বলে চলে এল।
রুমে এসে দেখে ওর বোন ওর আর
সাবিহার বিয়ের একটা ছবি অ্যালবামে
বাঁধিয়ে বেডসাইড টেবিলে রেখে
গেছে। ওর মেজাজ খুব খারাপ হলো,
জানে এটা কার বুদ্ধিতে রাখছে ওর
মায়ের। আজকে তো ওকে কানমলা
দিবেই ভাবতে ভাবতে ছবিটা হাতে নিল।
বাহ্ সাবিহা ম্যাডামকে দেখি বিয়ের সাঝে
বেশ ম্যাচিওর লাগছে এমনিতে দেখি
সে ছোট্ট খুকি,তিতুনের ছোট্ট খালা।
ফটোটা রেখে এফবিতে লগ ইন করল,
অনেকদিন পর ঢুকল। বিয়ের পর আর
ঢোকাই হয় নি, একের পর এক সমস্যা
থাকায়। ঢুকে দেখে প্রচুর এস এম এস।
কেউ বিয়ের জন্য উইশ করেছে
কেউবা ওর সুস্থতা জানিয়ে উইশ
করেছে।সব দেখে ভাবল সাবিহাকে
সার্চ দিবে। প্রথমে পেতে একটু
বেগ পেল কারন ও পরিচিত কারও লিস্টে
না থাকায় পরে ঠিকই পেল। ওর পুরো
আইডি খুটিয়ে দেখলো, সাবিহার ছবি, ওর
স্টাটাস সব।
হসপিটাল হতে ফেরার পর মন কেমন
জানো ওর অস্থির থাকে, প্রথম দিকে
পাত্তা দিত না ভাবত অনেকদিন বাসায় না থাকার
কারন কিন্তু না ওর মন থাকত রাতের সেই
সময়গুলোতে যখন ও আর সাবিহা
হসপিটালের কড়িডোরে হাঁটত আর গল্প
করত।মাঝে মাঝে একা একা ঘুরার ভান
করে দেখত সাবিহা কি রকম পেশেন্ট
দেখছে।এই মেয়েটা এমনিতে খুব
অস্থির হলেও তখন কিভাবে যেন সিরিয়াস
হয়ে যেত, যখন বুঝত মেহবুব ওর
দিকে তাকিয়ে আছে তখন ওর দিকে
ফিরে হেসে দিত।
এরই মাঝে একদিন অফিসের কাজে
যাওয়ার পথে সাবিহার হসপিটালের সামনে
দিয়ে যাচ্ছিল তখন না জানি কি মনে করে
ড্রাইভারকে বলল -গাড়ি থামাও। একটু কাজ
আছে, আমি আসছি।
বলে ভিতরে গেল, জানে যে আজ
সপ্তাহের শুরুতে ওর ডে ডিউটি নেই
কিন্তু কি মনে করে গেল।জিজ্ঞাস
করে জানল সত্যি ডিউটি নেই। এরই
মাঝে সাবিহার এক কলিগের সাথে দেখা,
-আরে ভাইয়া আপনি?? রুটিন চেকআপে
আসছেন?
-নারে ভাই। সাবিহাকে খুজছিলাম কিন্তু পাচ্ছি
না।
-ফোন দিন।
এই তো সমস্যায় পরল ওর কাছে তো
সাবিহার নাম্বার নেই পরে বলল-ওর ফোন
বন্ধ পাচ্ছি।
-আচ্ছা ভাইয়া দেখি ক্লাসে আছে কি না।
এই ভেবে ওরা কলেজে যায় খোঁজ
নিয়ে জানে যে সাবিহা ক্লাসে। ওর কলিগ
ওকে বসতে বলল।কি জানো মনে
করে মেহবুব বলল -আচ্ছা রানা তুমি
আমাকে একটু সাবিহার ক্লাসে নিয়ে চল
তো, আমি ঢুকব না শুধু বাইরে থেকে
দেখব যে ম্যাম কেমন ক্লাস নে।
সাবিহার কলিগ তো হেসে অস্থির!!
-ওয়াও ভাইয়া আপনি তো খুবই রোমান্টিক।
প্রথম
ে তো বউয়ের পেশেন্ট হলেন
এখন আবার ক্লাস নেয়া দেখবেন!!?
আচ্ছা চলেন।
তখন রানা মেহবুবকে সাবিহার ক্লাসের
সামনে নিয়ে যায়। ওরা জানালা দিয়ে
দেখছিল সাবিহাকে।চোখে চশমা,পরনে
এপ্রোন।মেহবুব ভাবল এই
মেয়েটাকে তো একেক জায়গায়
একেক রকম লাগে। এরইমধ্যে সাবিহার
ক্লাসও শেষ। আগে ওর স্টুডেন্টসরা
বের হলো পরে সাবিহা।
ওকে দেখেই সাবিহা ভুত দেখার মত
চমকিয়ে বলল-আপনি!!!?
মেহবুব প্রতিউওরে কি বলবে কিছুই
ভেবে পেল না।ওর মুখের দিকে
তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে ছিল আসলে
কেন ও এখানে আসছে?? এমনটাতো
হবার কথা ছিল না।
পর্ব- ৮
অভিশপ্ত বাসর

সাবিহা মেহবুবকে দেখে যতটা অবাক
তারথেকেও বেশি অবাক হলো যখন
মেহবুব হঠাৎ করে বলল -আচ্ছা আজ
আমি আসি। তুমি ভাল থেক।
এরপরই ও আর সাবিহা বা রানার কারো দিকে
আর না ফিরে চলে গেল। রানা বলল-ভাইয়া
বোধহয় লজ্জা পাইছে,বেচারা।
-আরে না, উনি খামাখা লজ্জা পাবেন
কেন?ও সব কিছুই না। বোধহয় ওনার
কোন কাজ ছিল এখানে।
-আচ্ছা, তুই তাড়াতারি বাসায় যা। নাইলে দেখা
যাবে আবার আসছে।
এই বলে ওর কলিগ হা হা করে হাসতে
ছিল।কিন্তু সাবিহা মেহবুবের যাওয়ার
পথের দিকে তাকিয়ে ভাবতে ছিল -ব্যাটা
পাগল টাগল হলো নাকি?? কোন কথা নাই
বার্তা নাই চলে এলো আবার কিছু না
বলেই ফিরে গেল!!!
সাবিহা কলেজ থেকে বেরনোর সময়
বার বার চারদিকে তাকাচ্ছিল হয়তো
মেহবুব যায় নি। নাহ্ পরে নিজেকেই
বুঝাল -নিশ্চই সে কোন কাজে
এসেছিল, হয়তো যাবার পথে এমনিই
দেখা করে গেছে। কিন্তু সাবিহা
নিজেকে যতটা বুঝাক মেহবুবের
সকালের আচরণ বেশ রহস্যজনক
লাগছে ওর কাছে।আসলে ওর জন্য
কোন লোক এভাবে ওকে চমকিয়ে
দেবার জন্য দাঁড়িয়ে আছে এটা শুধু ও
সিনেমা দেখেই ভাবত বাস্তবে
কোনদিন হবে তা ভাবে নি,তাও আবার
কোন লোক?যে কিনা ওকে বিয়ের
রাত থেকেই অস্বীকার করছে।সারাটা
দুপুর আর বকাল এই চিন্তা করে কাটাল।
নিজের পড়ায়ও মনোযোগ দিতে
পারছিল না,ভাবছিল কাল ক্লাসের পড়া ও
নিজে একবার রিভিসন দিবে রাতে
ডিউটিতে যাবার আগে কিন্তু মেহবুবের
চিন্তা এমন ভাবে মাথায় ঘুরছিল শেষে
ভাবল -যাহ্ আমি এমন কেন? যে লোক
আমাকে এত এত খারাপ দিন দেখাল আমি
কেনই বা তার কথা চিন্তা করে নিজের
বারোটা বাজাচ্ছি???
রাতে ডিউটিতে যাবার পর ওর কলিগরা খুব
মজা নিচ্ছিল ওর আর মেহবুবের।
মেহবুবের কথা তারা রানার কাছে
শুনেছে। কিভাবে বেচারা মামুনকে
রিকোয়েস্ট করে ওকে দেখা
করিয়ে দেবার জন্য, কিভাবে ওকে
খুঁজছিল এসব কথা।উলটো সাবিহা লজ্জা
পাবার পরিবর্তে মনে মনে রাগ হাচ্ছিল।
উহ্ এই লোকটা কেন এখানে আসছিল??
কেন নিজেকে চিনিয়ে দিয়ে গেল?
কাল যখন ডির্ভোস হবে তখন এদেরই
বা কি জবাব দিবে???
ওদিকে মেহবুব সারাদিন অফিস করে বাসায়
ফিরে যে সুস্থির হয়ে বসবে তাও
পারছিল না। মা,বাবা,পরিবারের সবাই সাবিহা সাবিহা
করতে করতে অস্থির। এই মেয়েটা
মাএ কিছুদিনের মধ্যে বাসার সবাইকে
কিভাবে আপন করে নিছে ও ভাবতেই
পারে না, ও যতক্ষন দেখত হয় ও ভাবি বা
মায়ের সাথে নাহলে হসপিটালে থাকত।
আর ও অবশ্য ওর কোন খেয়ালই রাখত
না যে সাবিহা কোথায় কি করছে না না
করছে,ও চাইতই সারাক্ষন ওকে তাড়াতে।
যদি সাবিহা কথাও বলতে আসত বকা দিত আর
মেয়েটা মুখটা কালো করে রুম হতে
বের হয়ে যেত। তখন ওর খারাপ লাগে
নাই কিন্তু এখন ওসব চিন্তা করলে খারাপ
লাগে। আসলেই আনেক বাজে আচারন
করা হয়েছে,এতটা না করলেই হতো।।
ও প্রতিটা ক্ষেত্রে সাবিহাকে ভুল
বুঝছে, ভাবছিল প্রতিটা মেয়েই রিতার
মত, সুযোগ খুঁজে। যখন মন ভরবে
তখন রিতার মতো অন্যের হাত ধরে
চলে যাবে।
খাবার সময় মা বলে সাবিহার এটা খেতে
পছন্দ ওটা অপছন্দ,বাবা বা ভাইয়ার সাথে
থাকলে বলে সাবিহা মায়ের অসুস্থতার
সময় কি কি করছে, টিভি দেখার সময়
বোন বা ভাবিও শুরু করে সাবিহার কথা-জানিস
ভাইয়া ছোট ভাবি না এই সিরিয়ালটা দেখতে
খুবই পছন্দ করে। শেষে ও ওর
বোনের চুল টান দিয়ে বলে
-যে মেয়েরা সিরিয়াল দেখতে পছন্দ
করে তাদের আমার সহ্য হয় না।
-আমাকেও পছন্দ না তোর?
-না।
-আচ্ছা ভাবি ফিরুক, আমি নালিশ দেবো
তোর নামে।
কথাটা শুনে মেহবুব কেমন যেনো
ফিল করল,বোনকে কিভাবে বলবে
যে তার ছোট ভাবি আর ফিরবে না
কখনই।ও নিজেই তো সাবিহাকে বাসা
থেকে বের করে দিয়েছে।তখন
তো ওর চলে যাওয়ায় খুশি হয়েছিল কিন্তু
আজ খারাপ লাগছে পরক্ষনে নিজেই
বলল-নাহ্ আমি তো সাবিহাকে মানিই না
নিজের বউ হিসেবে তাহলে কেন
খারাপ লাগবে??ওর চিন্তায় ছেদ পরল
যখন ভাবি পাশ হতে বলে উঠল-কবে
যাচ্ছ সাবিহাকে নিয়ে আসতে?
-জানি না।
-দেখ আরিফ আমি জানি না তোমাদের
মধ্যে সমস্যা কি কিন্তু এটাই বলব দুজনে
মিলে প্রথম থেকে আবার শুরু কর
দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আচ্ছা ভাবি, কাল অফিস আছে,ঘুমুব এখন।
গেলাম।
এই বলে ভাবিকে আর কিছু বলতে না
দিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসল।কিন্তু
রুমে ফিরে কি ঘুমুবে, সোফাটা
দেখেই মনে হলো একটা মেয়ে
বিয়ের সাজে গুটিসুটি মেরে ঘুমুচ্ছে।
যেমনটা দেখেছিল বিয়ের রাতে
সাবিহাকে।তখন ভাবতেই পারে নি যে
আজ এত দিন পর ঐ রাতের কথা মনে
করে আফসোস করতে হবে।শুয়ে
শুয়ে সাবিহা আর ওর বিয়ের ফটোটা
হাতে নিয়ে দেখছিল আর ভাবছিল
মেয়েটাতো সংসার করার জন্যই আসছিল
ওর কাছে,ওর জন্যই মেয়েটার লাইফ
নষ্ট হলো।এসব ভাবতে ভাবতে কখন
ঘুমিয়ে পরছিল ও নিজেই জানে না।
পরের দিন সকালে মেহবুব অফিসে
যাবার সময় ওর বড় ভাইয়ের ছোট
মেয়েটা দেখে কাঁদছে।কাছে গিয়ে
জিজ্ঞাস করল-কি হয়েছে মা? কে
মেরেছে?
-কেউ মারেনি চাচু।
-তাহলে কাঁদ কেন?
-ফুপি আমার সব চকোলেট খেয়ে
ফেলছে। ওকে বক তো।
আচমকা মেহবুবের মনে পরল সাবিহার
বোনের বাচ্চারাও ওর নামে নালিশ করছিল
যে ওদের খালামনি ওদের চকোলেট
চুরি করে খায়।ও ওর বোনকে ডাকল
বলল…
এদিকে সাবিহা সারাটা দিন ব্যস্ত সময় পার
করেছে।সকালে ডিউটি, দুপুরথেকে
তিতুনের স্কুলের জন্য নাচের প্রাকটিস।
বাচ্চাদুটোর খুব ইচ্চা যে ওদের
খালামনিও অন্যান্য অভিভাবকের মতো
স্কুলের ফাংশনে অংশ নিক আর ওর
বোনও জোর করছিল অনেক। ও
প্রথমে না করছিল কারন নাচটা ও অনেক
আগে স্কুল কলেজে থাকতে করত
মেডিকেলে এসে আর হয় নি পড়ার
চাপে।ওদের জোড়াজুরিতেই রাজি
হয়েছে শেষ পর্যন্ত।হঠাৎ আজ এত
বছর পর নাচতে গিয়ে দেখে ও
নাচের স্টেপ সহজে তুলতে পারছিল না,
জড়তা এসে গেছে হাত পায়ের। ওর
ভুল ভাল স্টেপ দেখে তো তিতুন আর
ওর বোন তো হেসে কুটিকুটি।
-খালামনি পারে না, পারে না।
-দাড়াও, আমি তোমাদের থেকেও ভাল
নাচ করে দেখাব। তোমরা সাত দিন
প্রাকটিস করছ আর আমি মাএ কয়েক ঘন্টা।
যখন ও ঠিকমত তুলতে পারছিল তখনই
আবার তাদের তুমুল হাততালি।
বিকেলে যখন ওরা স্কুল অডিটোরিয়াম এ
পৌছাঁল দেখল তিতুনদের বাবাও এসে
গেছে।সে সাবিহাকে বলল
-আজ কিন্তু সব তোমার উপর ফোকাস
থাকবে, বুঝছ??ভাল পারফর্ম করতে
হবে।
-জি ভাইয়া।
সাবিহা তো আর মেহবুবের আসার কথা
জানত না ও ভাবছিল ভাইয়া বিচারকদের কথা
বলছে।যাইহোক সন্ধ্যায় কয়েকজন
অভিভাবক আর বাচ্চাদের পারফর্ম করার পর
ওদেরটা শুরু হলো। সাবিহা প্রথমে
নাচেই ডুবে ছিল পরে নাচের মাঝখানে
হঠাৎ সামনের দিকে তাকাতেই দেখল
মেহবুব ওর দুলাভাইয়ের সাথে বসা।
আক্কেলগুড়ুম অবস্থা তখন ওর।
–আরে এই লোক এখানে কি
করতেছে???ওনার এখানে কি কাজ?হঠাৎ
হঠাৎ কোথা হতে উদায় হয় উনি? তাও
বাচ্চাদের ফাংশনে।মনে হয় উনি অন্য
কোথাও মানুষকে ভয় বা রাগ দেখাতে
পারছে না তাই শেষ মেষ এখানে
ছোট বাচ্চাদের ভয় আর রাগ দেখাতে
আসছে। -এসব কথা ভাবতে ভাবতে সাবিহা
নিজের মনেই হেসে দেয়।
যথাসময়ে নাচও শেষ হলো তারপর
যথারীথি অন্যান্য পর্বগুলোও শেষ
হলো,সাবিহা পারর্ফমার সারিতে বাচ্চাদের
সাথে বসা ছিল, এরই মাঝে মেহবুবের
সাথেও কয়েকবার দূর থেকে
চোখাচুখি হলো। অনুষ্ঠান কি উপভোগ
করবে!!?বারবার ও মেহবুবের দিকে
তাকিয়ে ওর চেহারা বুঝতে চেস্টা
করছিল।
অবশেষে এলো পুরস্কার পর্ব ওরা
নাচে পেলো সেকেন্ড পুরস্কার।
তিতুনের সে কি কান্না অবশ্য সে অন্য
ক্ষেএে পুরস্কার পেয়েছিল।মেহবুব
ওর কান্না দেখে স্টেজ থেকে নামার
পর কোলে তুলে নিল। ওদের
চকোলেট দিল তারপর ওর কান্না থামল।
সাবিহাকে মেহবুবের দিকে তাকাতে
দেখে ওর দুলাভাই বলল,
-কি ডা. অবাক হইছো নিশ্চই??কেন তুমি
জানতে না? মেহবুব কিছু বলে নি?
সাবিহা কিছু বলার আগেই মেহবুব বলে
উঠল -না না। সে ব্যস্ত মানুষ, তার কি এসব
ছোট খাট কথা বলার সময় আছে?
ওর বোন বলল-আমি কিন্তু জানতাম ইচ্ছে
করেই বলি নি। ওর জন্য সারপ্রাইজ।
তিতুনরা দুইভাই বোন তো চকোলেট
পেয়ে খুশিতে আত্নহারা। ওরা সাবিহার
বদলে তাদের আংকেল যে কি পরিমানে
ভাল তা নানা ভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে
যাচ্ছে। সাবিহা শুধু শুনছে আর মনে
মনে খেপছে।
-বাব্বাহ মেহবুব সাহেব আপনার মনে
মনে এত!!!!!
পুরো সময় মেহবুব বা সাবিহা কারও সাথে
কোন কথাই বলল না, ও কথা বলতে
ব্যস্ত ওর বোনের সাথে আর মেহবুব
বাচ্চা আর ওর দুলাভাইয়ের সাথে। কিন্তু
সাবিহার মনে একটা শংকা উকি দিচ্ছিল যে
যখন ওরা ফিরবে তখন তো ও একদিক
আর মেহবুব একদিকে যাবে।তখন
এদের কে কি কি বলবে???ওর সব রাগ
গিয়ে পরল মেহবুবের উপর।
-উহ্ এই লোকটার কি সমস্যা? সব জায়গায়
গিয়ে হাজির হচ্ছে,সবার কাছে ভাল
হচ্ছে । নিজের তো কারো কাছে
কিছু বলতে হবে না, আমাকেই সব ফেস
করতে হবে।তখন তো সবাই বলবে
এত ভাল মানুষ কিভাবে ডির্ভোস দেয়
নিশ্চই তোমার কোন দোষ ছিল।
সাবিহার তো শেষে মেহবুবের হাবভাব
দেখে মনে হতে লাগল মাথার
আঘাতের ফলে ওর সৃতিশক্তি লোপ
পেয়েছে। ওরা যখন গেটের কাছে
গেল ওর মাথাই কাজ করতে ছিল না যে
এখন কি হবে!!? কিন্তু পরক্ষনে ওকে
অবাক করে দিয়ে মেহবুব গাড়ির দরজা
খুলে দিয়ে বলল -আসো সাবিহা।
অনেক রাত হলো, এবার চলো।
আসো আসো।
হ্যা এই লোক কি সব পিছনের কাহিনী
ভুলে বসে আছে?? নিজে বের
করে দিল বাসা হতে আর এখন নিজেই
ওকে নিতে চাচ্ছে- সাবিহা মনে মনে
বলল।ভাবল নিশ্চই এর পিছনে ও বাড়ির
লোকের হাত আছে,বকা খেয়ে
কোন উপায় না পেয়ে ওকে নিতে
আসছে।
ও চুপচাপ কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসল
অবশ্য গাড়িতে ওঠার আগে তিতুনের
গায়ে একটা গাট্টাও মারল।মেহবুবকে ভাল
বলার রাগ!!
গাড়িতে উঠেও দুজন চুপচাপ। কথা বলল
প্রথমে মেহবুবই।
-কি ব্যাপার ডা. তুমি চোখ নাক মুখ কুচঁকিয়ে
আছ যে?
-কৈ না ত।
-আমার সাথে কি ঘুরার ইচ্ছে সারারাত?
-না কেন?
-তুমি যে তোমার ঠিকানা বলছ না??
বাবাহ্ এত কবি?? সাবিহা ওর ঠিকানা দিল।
-আচ্ছা তুমি তিতুনকে আসার সময় ওভাবে
খোঁচা দিলা কেন?
-আমাদের মধ্যে এরকম মার পিট
চলতেই থাকে।
-ওহ্ তুমি কিন্তু আসলে অনেক সুন্দর
নাচ। আই মিন তোমরা।
-আমি ছোট থেকেই নাচ করতাম মাঝে
অবশ্য অনেক বছর হয় নি করা।
-গান পার?
-না। ওটা শেখা হয় নি।
-ও।আচ্ছা তোমার মুখ দেখে মনে
হচ্ছে তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও। কি
বলবা বল।
ধরা খেয়ে সাবিহা চুপসে গেছে আমতা
আমতা করতে করতে বলল-আপনি
আসলে……….
-আমি এখানে আসছি ভাইয়ার ইনভাইটে আর
ওদেরও কথা দিয়েছিলাম, আর ওদের
জন্য কিছু গিফট ও ছিল।তাই ভাবলাম দেখা
করেই দেব।
আসলে মেহবুবের মনে যে অন্য
কথা তা আর প্রকাশ পেল না।
-আপনি বোধহয় বাচ্চাদের অনেক
পছন্দ করেন?
-হ্যা খুব।
-হুম
-আচ্ছা তুমি সেদিন হসপিটালে আমাকে
দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠলা
যে?
-আসলে আপনি যে ওভাবে আসবেন
আমি বুঝি নি। হঠা ৎ দেখেছিলাম তো।
-হাহাহা। কেন এর আগে এরকম কেউ
করে নি?
মেহবুব যে মনে মনে কি জানতে
চাইছে তা ও ঠিকই বুঝতে পারছিল। তাই
ইচ্ছে করে ঘুরিয়ে বলল -হ্যা
করেছে। এরপরে যে আরেকটা
প্রশ্ন আসবে তা ও ঠিকই জানত এবং
মেহবুব করলও -কে????
-আমার আব্বু আম্মু আর বোন।মাঝে
মাঝে হোস্টেলে এসে চমকে দিত।
এখনও দেয়।
উওর শুনে মেহবুব হাহাহা করে হাসতে
লাগল।পরে জানতে চাইল ও কেন
হাসছে উওরে মেহবুব কিছুই বলল না।
সাবিহা বলল-আমি তো আপনাকে ওভাবে
চলে যেতে দেখে ভাবলাম মাথায়
আঘাতের ফলে গন্ডোগোল দেখা
দিয়েছে।
-তাই তাহলে তো বলতে হবে এটা
আমার না তোমার জন্য হইছে।
-বারে!!!কিভাবে আমার জন্য?
-কেন ভুলে গেছো আমার ডা. কিন্তু
তুমি ছিলা?
-হ্যা এখন তো আমারই দোষ।
-সবই তোমারি দোষ। তোমার উপর
রেগে ছিলাম বলে উলটা পালটা গাড়ি
চালিয়েছিলাম আবার এখন পাগলও হলাম
তোমার জন্য।
এভাবে হঠাৎ করে সেই তিক্ত
অভিজ্ঞতাগুলো মেহবুব মনে করিয়ে
দেওয়ায় সাবিহার মন খুব খারাপ হয়ে
গেল। ও অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল।
মেহবুব ওকে অন্য দিকে তাকিয়ে
থাকতে দেখে বুঝছিল যে ও ভুল
করে ফেলছে অন্তত আজ উচিৎ হয় নি
ওকে ওসব কথাগুলো বলা দোষটা তো
মেহবুবেরই।ও ওকে বলল,
-সরি সাবিহা আমি ওসব ভেবে বলি নি
আসলে এখন পর্যন্ত যাই হোক না
কেন সব কিছুর জন্য আমি দায়ি।
-না আপনি না আমার ভাগ্য দায়ি।
এরই মধ্যে ওরা সাবিহার বাসার সামনে চলে
এল।
-আমি আসছি,আপনি সাবধানে যাবেন–
বলে সাবিহা আর কোন কথা না বলেই,
পিছনে আর না ফিরেই গেটের ভিতর
ঢুকে গেল।
সেদিন ওর চোখে ছিল পানি সেটা
কোন ভাবেই ও মেহবুবকে দেখাতে
চাইছিল না। আর পিছনে রইল মেহবুবের
বুকে হাহাকার।
পর্ব- ৯
অভিশপ্ত বাসর

বাসার পথে যাচ্ছিল সারাটা পথ ও সাবিহার কথা
ভাবতে ছিল।কেমন যেন একটা ভাললাগা
কাজ করছিল ওর
মনে। সাবিহার নিষ্পাপ সরলতা বার বার ওর মন
ছুয়ে দিচ্ছিল অথচ এই মেয়েকেই
একদিন ও বাসা হতে বের করে
দিয়েছিল।ভাবতেই ওর অসহ্য
লাগতেছিল।কেমন এমন করছিল???রিতার
জন্য? যে অনেকদিন আগেই ওকে
ছেড়ে অন্যের হাত ধরছিল?ওর মনকে
চুড়মার করতে যার এতটুকু বাধেঁ নি,ঐ
থেকেই ও কেমন জানি
মেয়েজাতকে ঘৃনা করে,ভাবে সবাই
এক।তেমনটি সাবিহাকেও ভাবত এই
মেয়েটাও এমন।এরা কাউকে ভালবাসতে
জানে না।ভাবত একেমন নিলজ্জ মেয়ে,
এত বাজে বিহেব করার পরও যাচচ্ছে না
চলে।আকঁড়ে পড়ে আছে। ওতো
সাবিহাকে বিয়েও করতে চায় নি।কিন্তু
এখন কেমন জানো একটা ঘোড় লাগা
কাজ করছে ওর মধ্যে,যেটা হতে
বরাবর দূরে থাকতে চেয়েছে।
কয়েকবার ভাবল এটা কি সাবিহার প্রতি
আকর্ষন না ওর হাজবেন্ড হিসেবে
একটা পুরুষের সহজাত স্বভাব??
রাতে বাসায় ফিরার পর ফ্রেশ হয়ে
খেতে বসল তখন দেখল মা বেশ
থমথমে মুখ করে আছে।জানত এর
কারন ও ই।তারপরও জিঘাস করল,-কি ব্যাপার
মা?
-কি আর হবে? আমার কথা ভাবার কারও সময়
আছে?
বলেই মেহবুবের মা নিজের রুমের
দিকে চলে গেল,ও পিছন পিছন গেল
মায়ের। খাটের পাশে বসে মায়ের হাত
ধরে বলল-দেখ মা জিদ কর না। আমি জানি
তুমি কেন রাগ?
– তাহলে আমার রাগ ভাঙাস না কেন?
বউকে নিয়ে আয়।
-দেখ মা সেটা সম্ভব না। আমি এই বিয়ে
করতেই চাই নি।তোমরা জোর
করেছো তাই করেছি।কি হলো
বলো?আমরা কি সুখে ছিলাম?
-তুই নিজের সুখ নিজে নষ্ট করেছিস।
সাবিহা কত ভাল মেয়ে।ও তোকে কত
সুখে রাখত।তুই বুঝলি না।
হ্যাঁ মেহবুব জানে সাবিহা অনেক ভাল
কিন্তু ও চায় না নিজের সাথে কাউকে
জরাতে। মা তো আর বুঝবে না তাই আর
কথা না বাড়িয়ে রুম হতে বের হয়ে
এলো।রুমে এসে ফোনটা হাতে
নিয়ে ভাবল সাবিহা ডা. কে একটু জালানো
যাক।আজ সে একটু ভাব দেখাচ্ছিল কিনা
এবার একটু ওর ভাবের পালা কিন্ত নাম্বার
তো ওর কাছে নেই।নিজের কপাল
নিজেরই চাপরাতে ইচ্ছে হলো।
হসপিটালে বসে এত কথা বলত আর তখন
কিনা নাম্বার টাই নেয় নি। আজও পারত তাও
ওর মনে আসে নি।কি করবে চিন্তা
করতে করতে ভাবল মায়ের কাছে
তো আর চাওয়া যায় না, না জানি কি বলতে
কি বলে বসেন আর বোনকে তো
জানানোই যাবে না যে সাবিহার নাম্বার ওর
কাছে নেই এতদিন পরও। বিবিসি টেপ
রেকর্ডার তাহলে বাজঁতেই থাকবে
তখন মনে পরল বড় ভাবির কথা। তার
রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা
আটকানো হয়ত শুয়ে পরেছে। মনটা
ওর খারাপ হয়ে গেল,ফিরে আসবে
তখনি দেখে যে ভাবি রুম হতে বের
হলো।জগ হাতে, পানি নিবে। ওকে
দেখে বলল,-মেহবুব কিছু লাগবে
তোমার?
-না মানে ভাবি আসলে…
-হ্যাঁ বলো।
– সাবিহার নাম্বার টা ডিলেট হয়ে
গেছে,আমার মুখুস্ত না। একটু দাও তো।
এক নিঃশাসে বলল মিথ্যে কথাটা। ভাবি অবাক
হয়ে গিয়ে রুম হতে তার ফোন এনে
সাবিহার নাম্বার টা দিল ওকে।
-শোন কি মনে করছ?আমি বুঝি না?
-না মানে ভাবি…
-একদিন তোমার বউ ও এমনি আমতা আমতা
করতে করতে তোমার নাম্বার চাইছিল
জানো?
ওতো ঠিকই জানে, আর সেদিন তো
ফোনে চরম খারাপ বিহেবও করছিল ওর
সাথে।না জানি মেয়েটার মনের অবস্থা
তখন কেমন হয়েছিল???ভাবির কাছ হতে
বিদায় নিয়ে রুমে এসেই সাবিহাকে
ফোন দিল।ওপাশ হতে দু একবার রিং
হতেই ফোন ধরল সাবিহা।
-হ্যালো।
-হ্যালো আপনি ডা. সাবিহা?
– জি কে বলছেন বলুন?
-আমি আপনার পেশেন্ট ছিলাম একসময়।
-হ্যাঁ তো? এখন কি সমস্যা?
-সমস্যা হলো আমি এখনও সুস্থ হই নি।
-তাহলে আপনি কাল আবার হসপিটালে
আসুন। আমি নতুন করে আপনার হিস্ট্রি
নিয়ে দেখব।
-না ফোনে বলুন।
-এভাবে ফোনে তো বলা যায় না,
আপনি বুঝছেন না কেন?
মেহবুব তো সাবিহাকে বিরক্ত হতে
দেখে বেজায় খুশি।সাবিহা ফোন
কেটে দিল এরই মধ্যে।কাল সকালে
অফিসে যাবার পথে সাবিহা মাড্যামকে আর
একবার চমকিয়ে দেয়ার ইচ্ছে নিয়ে
ঘুমুতে গেল মেহবুব।
ওদিকে সাবিহার অশ্রু জলের সাক্ষি থাকল
বরাবরের মতো ওর বালিস।যতই ও বাইরে
শাক্ত থাকুক না কেন ভিতরে ভিতরে ও
ভেঙে যাচ্ছিল। অল্প কিছু দিনের
মধ্যে কি হতে কি হলো।একটা
ডির্ভোসী হিসেবে কিভাবে পরিচয়
দিবে সমাজে, মা বাবাকে কত কথাই না
শুনতে হবে ওর জন্য।যে মেয়ের
বিয়ে ছয় মাসের মাথায় ভেঙে যায়
নিশ্চই মেয়ের মধ্যে সমস্যা। কি করে
বুঝাবে ও ওর স্বামী একটা নেশাখোর,
বিয়ের আগে অন্য মেয়ের সাথে
সম্পর্ক ছিল,যে কথায় কথায় ওর সাথে
খারাপ আচারন করত।মেহবুব কি চায় ও
নিজেও জানে না।আজও তো সন্ধ্যা
বেলা তিতুনদের প্রোগ্রামে আপু ভাইয়া
এদের সাথে কত ভাল আচারন করল।তারা
তো বুঝছে ওরা কত হ্যাপি!!কেন ও
সাবিহার সব কিছুতে জরাচ্ছে??হসপিটালের
কলিগ এখন আবার ওর পরিবার।তাহলে কি
মেহবুব সবার কাছে ভাল হতে চায় যাতে
সব দোষ সাবিহার হয়। কারন ও জানে যে
মেহবুব ডির্ভোস ফাইল করেছে কিন্তু
আটকে গেছে ওর অ্যাকসিডেন্টের
কারনে।যেকোন সময় পেপার
আসবে। ওর অসুস্থতার সময় একদিন
মেহবুব বলেছিল যে ওদের
ডির্ভোসের পর ও বাইরে যাবে
সেনাবাহিনীর সামরিক কাজে।
এখানের লাইফ নিয়ে ওর কোন আগ্রহ
নেই।এর বেশি আর ও ভাবতে পারছিল না।
শেষে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল আটটায় সাবিহার ডিউটি ছিল,সকাল
যেহেতু রোগীর চাপও কম ছিল
মোটামুটি। এরই মধ্যে দেখে মেহবুব
হসপিটালে। আরে আবার এই লোক??
-হায় ডা.।
-আপনি এখানে?
-তুমিই তো আসতে বললা।
-কখন?
-বললা না যে হিস্ট্রি নিবা?
-ওটা আপনি ছিলেন?
-হুম এত ডা. দেখালাম কিন্তু পেশেন্ট
দেখে তোমাকেই দেখলাম অবাক
হতে।নিজের স্টুডেন্টসদেরও
এগুলো শিখাও নাকি??
-আরে ধূর। আপনি বলবেন না যে ওটা
আপনি?
মনে মনে বিরক্ত হলেও প্রকাশ করল না
সাবিহা।
-আচ্ছা আপনি বলছিলেন না আপনি অসুস্থ।
কই কাল রাতেও তো দেখলাম আপনি
বেশ সুস্থ তাহলে?
-আরে কিছু না এমনিই তোমার নাম্বার নিলাম
ভাবির কাছ থেকে ভাবলাম একটু বিরক্ত
করি।
-হা হা হা আপনি যাই বলুন না কেন আমি
বুঝতে পারতেছি আপনার মাথাটা গেছে
আগোছালো হয়ে।
-হ্যাঁ তা তো পারবেই।
এভাবে আরও কিছুক্ষন কথা বলে
মমেহবুব বলল,–আচ্ছা আমি উঠছি
তাহলে। তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে
চেয়েছিলাম আমি সাকসেস।সি ইউ সুন।
বাই।
-বাই।
মেহবুবের ফিরার পথের দিকে তাকিয়ে
সাবিহা নিজের মনেই বলল-সারপ্রাইজ
তো আপনি সেই বিয়ের রাত থেকেই
দিচ্ছেন।যাই হোক সারাদিন ডিউটির পর
বিকালে আবার মেহবুবের ফোন।ও
নম্বার সেভ করে রাখে নি কিন্তু
আওয়াজে বুঝল।
-এই তুমি ফ্রি আছো বিকেলবেলা?
-না মানে.. হ্যা।
-ওভাবে বলছো কেন আমতা আমতা
করে?আমি বাঘ না ভাল্লুক যে খেয়ে
ফেলব?
-হাহ আমি ওত ভয় পাই না।
-আচ্ছা তাহলে খালামনি বের হও,তোমার
বাসার নিচে আসছি।
-কি কাজ ছিল?ফোনে বলা যায় না?
মেহবুব আগের মত করে ওকে
জোরে বকা দিল।-যা বলছি কর।বলেই
ফোন কেটে দিল।এই শয়তান
মেজরের কত বড় সাহস ওকে বকা দে।
আজ কিছু কথা শুনাবে,কি কি শুনাবে
ভাবতে ভাবতে রেডি হলো।নিচে নামল
যখন মেহবুব এসে ফোন দিল।দেখা
হতেই মেহবুব হেসে গাড়ির দরজা
খুলে দিল।সাবিহার রাগে গা জলে গেল।
মেহবুব ঠিকই ওর রাগ বুঝছিল।গাড়িতে উঠার
পর মেহবুবই কথা বলতে ছিল,সাবিহা চুপচাপ
বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল আর মাঝে
মাঝে হু হা করতে ছিল।
-আমার উপর বিরক্ত?
-না।
-তাহলে কথা বলছো না যে?কখন হতে
বক বক করেই যাচ্ছি।
-আপনি আমাকে বকা দিলেন কেন?
-সরি।
-তাহলে অনেক সরি বলতে হবে কারন
আপনি আমাকে আজ পর্যন্ত অনেক
বকছেন।
-আচ্ছা তাহলে সরি হিসেবে কি চাও?
-কিছুনা।
-ওকে। জানো আমি ভাবছিলাম তুমি শাড়ি
পরবা।তোমাকে শাড়িতে কখনই দেখি নি।
-আপনি আমার কি হন যে শাড়ি পরব?আর
কেন বিয়ের সময় দেখেন নি?
সাবিহার এমন ঝাঁঝালো আচারনে মেহবুব
অনেক আশাহত হলো।অন্য কেউ এমন
করলে ও কি করত নিজেই জানে না।কিন্তু
ও চায় না ওর সাথে আর কোন বাজে
বিহেব করতে।এমনিতেই মেয়েটাকে
অনেক কষ্ট দিছে,অন্তত যে কদিন
একসাথে সময় কাটাতে পারে সেটুকু
ভাল স্মৃতি হয়ে থাকুক।তাই তো ওর শত
ব্যস্ততার মাঝেও ওকে নিয়ে বের
হয়েছে,বার বার দেখা করছে যাতে
একটা ভাল সম্পর্ক থাকে ওদের মাঝে।
অন্যদিকে সাবিহা মনে মনে মেহবুব
সম্পর্কে যে নেগেটিভ ধারনা নিয়েই
এগুলো বলছে তা ও জানেই না।
-বিয়ের সময় ওত ভালোভাবে দেখি নি।
পরে যখন ভালো মত দেখতাম তখন
তো তোমার ঐ সাদা এ্যাপ্রোণ পরা।
-আচ্ছা পরব শাড়ি।
এরকম আরো অনেক খুটিনাটি কথাবার্তা
চললো দুজনের। সাবিহা মেহবুবের
সাথে কোন রেস্টুরেন্টে যেতে
নারাজ।ও ও আর কোন জোর করল না
সত্যি বলতে পারল না। রাস্তায় বসে ফুচকা,
আইসক্রিম খেল।ও যে এত ঝাঁল
খেতে পারে মেহবুব জানতই না।পরে
তো সাবিহার পুরো অস্থির অবস্থা।
চোখ হতে পানি বেরচ্ছিল, মেহবুব
মুছতে চেয়েছিল সাবিহা ছিটকে দূরে
সরে গেল।মেহবুব তো হাসতে
হাসতে খুন।
-তুমি আসলে একটা আহ্লাদী।ভাব কর
অনেক বড় হয়েছ।
-মোটেই না।
-মোটেই হ্যা।তিতুনের থেকেও
ছোট।
তারপরে ওরা আরও কিছুক্ষন ঘুরল
শেষে সাবিহাকে ওর বাসায় নামিয়ে দিল।
-ভিতরে আসুন।আপনার ফেভারেট মশলা
চা বানিয়ে খাওয়াব।
-তুমি জানলে কি করে?
-আমি অন্তত একমাস আপনার সংসার করছি।
তো আপনাকে ভালভাবে চিনি।আসুন।
লিফটে উঠেই দেখল পাশের ফ্লাটের
আন্টি। ওদের দিকে খুব ভাল ভাবে
তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে,সাবিহা
পুরো চুপসে গেল।ওর বাসায় ঢুকে
মেহবুব জিজ্ঞাস করল-কেউ জানে না
যে তুমি ম্যারিড?
-নাহ।
-আমার মনে হয় আসাটা উচিৎ হয় নি
তাহলে।
সাবিহা ভাবল এ তো কিছুই না আমার যে
আরও কত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে
তা আপনি কিভাবে বুঝবেন??ওকে
বসতে দিয়ে সাবিহা কিচেনে গেল।
মেহবুবের মনটা খুব খারাপ লাগছিল না
জানে কিভাবে মেয়েটা দুনিয়াদারি
সম্মুখীন করবে।ডিভোর্সের পর ও
যেন বাইরে যাবে তাছাড়া ওকে তেমন
কেউ কিছু জিজ্ঞাসও করবে না কিন্তু এই
মেয়েটা??আর সাবিহাকে দেখে এখন
পর্যন্ত ওর মনে হয় নি যে ও অন্য
মেয়েদের মত রিলেশন ভেঙে
গেলেও কিছু আসে যায় না,তাহলে
বিয়ের পরপরই চলে যেত।এই ভাবছে
তখন সাবিহা কিচেন হতে জানতে চাইল ও
চায়ের সাথে কি খাবে।ওর মনে পরল
ওর হসপিটালে থাকাকালিন একদিন সাবিহা ওর
জন্য পাকোরা বানিয়ে নিয়েগিয়েছিল
সেটাই বলল।
চা খেতে খেতে মেহবুব খেয়াল
করল সাবিহা কেমন যেন নিষ্প্রাণ হয়ে
আছে।
বুঝেও না বুঝার ভান করে বলল-আবার মুড
অফ হলো কেন ডা তোমার?
-কিছুনা এমনি।অনেক পড়াশুনা জমে আছে
তো তাই টেনশন লাগছে।
মেহবুব মনে মনে হাসল,-জানো তুমি
কিন্তু চা টা বেশ ভালই বানাও।মা বলেছে
রান্নাও নাকি ভাল কর। যে তোমাকে
পাবে সে একজন অলরাউন্ডার বউ
পাবে।
কথাটা শুনে সাবিহা উদাস দৃস্টিতে তাকাল ওর
দিকে, মেহবুবের মনটা আনচান করে
উঠল একি বলল ও। কোথায় ওর মুডটা ভাল
করবে তা না উলটো আরও বার বার খারাপ
করে দিচ্ছে।তারাতারি বলল,
-আচ্ছা তুমি তিতুনকে ফোন দাও ওর
সাথে কথা বলি।
-নাহ এখন ওরা ঘুমিয়ে পরছে হয়ত।
-যত যাই হোক আমি ওদের এখন ওদের
ফেভারেট আংকেল।আমার কথা শুনলে
ওরা ঠিকই জেগে যাবে।
সাবিহা পরল বিপদে ও যতই মেহবুবকে
আটকাতে চায় এইলোক আরও জরায়
নিজেকে। এত কেন ভাল হতে চায় ও?
এমনকি বাচ্চাদের কাছেও।ও তো আর
জানে না মেহবুব ওর মুড ভাল করার জন্যই
অন্য উপায় না পেয়ে বাচ্চাদের সাথে
কথা বলতে চাচ্ছে। কিছু উপায় না পেয়ে
আপুর বাসায় ফোন দিল।কথা বলিয়ে দিল।
তিতুনদের সাথে মেহবুবের মজার
কথাবার্তা শুনে ও তো হেসে খুন!!কত
নালিশ করল ওরা একে অপরকে সাবিহার
নামে।মেহবুবের হাসি দেখে আর
বাচ্চাদের সাথে খুনশুটি শুনে ভাবল
লোকটা এমনি একটু রাফ হতে পারে
কিন্তু মনটা ভাল কারন সহজে বাচ্চাদের
প্রিয় পাএ হওয়া মুখের না।ফোন রেখে
মেহবুব ওকে বলল,
-আবার কি হলো?কি ভাবছ?
-ভাবছি আপনি ভাল বাবা হতে পারবেন।
-কিভাবে হবো? বউই তো নাই আমার।
-নেই তো আপনার দোষে।
-হুম তা ঠিক।আচ্ছা এ নিয়ে আর কথা বারাব
না,তুমি এখন ঝগড়ার মুডে আছ।
-মোটেই না।
-আচ্ছা আমি গেলাম।ডাবিহা ম্যাম।
-কি ডাবিহা????
-হ্যা। তোমার নতুন নাম। তিতুনের দেয়া।
-ওকে আমি পুরো খেয়ে ফেলব।
-খবরদার ওকে কিছু বলবানা নইলে
তোমার স্টুডেন্টসদের শিখিয়ে দিয়ে
আসব তোমাকে ডাবিহা ম্যাম বলে
ডাকতে।
এই বলে মেহবুব আর দাঁড়াল না জানে
সাবিহা এখনই লংকা কান্ড ঘটাবে ঝগড়া
করে।
এরপরে মেহবুব আর সাবিহার মধ্যে
প্রায়ই ফোনে কথা হতো।বেশি
হতো রাতে।ও দিন দিন সাবিহার প্রতি দূর্বল
হচ্ছিল,সাবিহারও মন চাইত ওর সাথে মিশতে
কিন্তু ও তো একটু হলেও মেহবুবের
আসল চেহারা জানে।তাই ওকে এত
আমলে নিত না।দেখা করতে চাইলেও
করত না। ব্যস্ততার অযুহাত দিত।ও তো
আর জানত না যে মেহবুব ওকে পছন্দ
করতে শুরু করছে।মেহবুব তো
ওদিকে অস্থির হয়ে যেত কথা বলতে
পারলে কিন্তু বুঝতে দিত না হয়ত রিতার ভয়
থেকেই।পরবর্তীতে এই না বুঝতে
দেওয়াটাই কাল হলো মেহবুবের জন্য।
একদিন হঠাৎ করে ওর আইনজীবীর
ফোন সকালে।সে জানাল ওদের
সেপারেশন লেটার আর
দেনমোহরের টাকার চেক যা তাকে
মেহবুব দিয়েছিল তা সাবিহার কাছে পাঠিয়ে
দেয়া হয়েছে।সে এতদিন নাকি ওর
সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করছিল।শুনে
তো ওর দিশেহারা অবস্থা। ও ভুলেই
গেছিল যে হসপিটালে বসে একদিন
তাকে বলেছিল ও সুস্থ হোক তারপর
লেটার পাঠাতে।বার বার অফিসে বসে
ভাবতে ছিল না জানি সাবিহা ওকে কি ভাবছে।
অসভ্য?চরিএহীন না মানষিক রোগী?
হ্যা আসলেই তো ও মানষিক রোগী
হয়ে গিয়েছে রিতার জন্য।নাইলে এত
ভাল একটা মেয়ের জীবন নিজ হাতে
নস্ট করে দে??এত দিন এত ভাল একটা
সম্পর্ক হবার পর এত বড় ধোকাঁ।কি
বলবে সাবিহাকে বা ওর পরিবারকে?না জানি
সাবিহার এখন কি অবস্থা!! ফোন দিল ওকে
ওর ফোন সুইচড অফ।কি করবে ভাবতে
গিয়ে ভাবল দেখা করবে ওর সাথে ওর
বাসায় গিয়ে। ও জানে সাবিহার সিডিউল সে
অনুযায়ী আজ ওর ক্লাস নেই আর
রাতে ডিউটি।তাই বাসায় যাবার মন স্থির করল।
অফিস থেকে ছুটি নিল।
ওদিকে সাবিহা সকালে উঠে দরজা খুলে
পেপার নিতে যাবে তখন দেখে বাসার
দারোয়ান এসে হাজির কুরিয়ারের একটা
এনভেলাপ নিয়ে।একটা কাগজ এগিয়ে
দিয়ে জানাল যে -আপু এখানে সাইন করুন
আপনার পার্সেল আছে। নিচে
কুরিয়ারের লোক দাঁড়িয়ে আছে।
ও সাইন করে দারোয়ানকে বিদায় করে
দিয়ে এনভেলাপের গায়ে নাম দেখল –
মেহবুব রহমান।আর কিছু বোঝার দরকার
হলো না যা বোঝার বুঝে নিল যে এটা
কি?খুলে দেখল যে সেপারেশন
লেটার আর একটা টাকার চেক।ও যতই
আগে থেকে জানুক না কেন এই
বিয়ের পরিনতি কি কিন্তু তার পরও হঠাৎ
লেটার পেয়ে খুব ভেঙে পরল।মা
বাবাকে কি বলবে ও?ও যতই স্ট্রং থাকুক
তারা যে ভেঙে পরবে তা ও কিভাবে
সামাল দিবে?ফ্লোরে বসে খুব কাঁদল।
এই ছিল মেহবুবের মনে?এতদিন তার ভাল
সাজার অভিনয় তাহলে ঠিকই ও ধরতে
পারছিল।ও ওতো অবাক যে, যে লোক
ওকে সহ্য করতে পারছিল না সে
কিভাবে এত পালটে গেল হঠাৎ?নিজের
গায়ে কাঁদা লাগতে দিবে না বলেই ভাল
সাজত।এরই মধ্যে দেখে মেহবুবের
মায়ের ফোন। অসহ্য লাগল ওর। রিং
কেটে যাবার পরই ও ফোন অফ করে
রাখে।বারবার নিজেকে বুঝাচ্ছিল যে
কাঁদবে না তাতে ঐ লোকটাই জিতবে
তারপরও বারবার পানি পরছিল চোখ
থেকে।নিজেকে একটু সামলে
নিয়েছে এরই মধ্যে ল্যান্ড লাইনে
ফোন এলো -আপু গেটে এক ভাইয়া
আসছে নাম বলছে মেহবুব রহমান।
উপরে পাঠাব?
একটু চুপ থেকে বলল-আচ্ছা দাও।
মনে মনে ভাবল মেহবুব কেন এখন
আসছে? কি চায় ও?ও যদি দারোয়ানকে
বলত- না আসতে দিও না। তাহলে মেহবুব
নিজেই সোজা চলে আসত উপরে
কারও নিষেধ না শুনেই।এতটুকু ও ওকে
চিনেছে।
ও তরিঘরি করে ওর চুল আর কাপড় ঠিক
করছিল আর বারবার নিজেকে বুঝাচ্ছিল
মেহবুবের কাছে কাঁদবে না। কলিং
বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দিল।
দেখে মেহবুব ওর দিকে অস্থির
ভাবে তাকিয়ে আছে।ভিতরে আসতে
বলল।দরজাটা মেহবুবই আটকাল।চুপচাপ
গিয়ে সোফায় বসল।সাবিহা অন্য
আরেকটি সোফায় বসল।দুজনের ভাব
এমন যেন ককিছুই হয় নি।কথা বলল
প্রথমে মেহবুবই।
-কি ব্যাপার। চোখ নাখ মুখ ফুলে গেছে
কেন?কাঁদতে ছিলা?
-নাহ,মাএ ঘুম থেকে উঠলাম তো তাই।
মেহবুব বেশ ভালভাবেই জানে যে এটা
মিথ্যা।
-ও আচ্ছা। নাস্তা কর নি?
-নাহ।আপনি এখন?কাজ বাজ কি সব ছেড়ে
দিয়েছেন নাকি?
-তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হলো
তাই আসছি।
-তাই?
বলে সেপারেশন লেটারটা টেবিলের
উপর থেকে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে
বলল-এর পরও দেখতে ইচ্ছে হলো?
-আসলে সাবিহা…
-ঠিক কি বলতে চান আপনি? এরপর আর কি
বা বলার থাকতে পারে? আমি কখনই
আপনার কাছে জানতে চাই নি কিন্তু আজ
জানতে চাচ্ছি।কেন এমন অভিনয়
করতেন ভাল হবার?
-আমি তোমার সাথে কোন অভিনয় করি
নি। আমি তো তোমার কাছে প্রথম
হতেই খারাপ তারপরও চাইছিলাম অন্তত
আমাদের মাঝে একটা ভাল বন্ধুক্ততা
থাকুক। কোন তিক্ত অভিজ্ঞাতা না থাকুক।
রিতার ব্যাপারে আমি তোমাকে সব
বলেছি। এর পর আর অন্য মেয়ের
সাথে জরানোর কোন ইচ্ছে ছিল না।
তাই বিয়ের পর ওমন বাজে বিহেব করতাম
পরে আমি আমার ভুল বুঝতে পারছিলাম।
-ও তাই? আসলে কি আমি আপনার সাথে
কোন কথাই বলতে চাই না। আপনার যা
করার আপনি করেছেন এবার আর একটু
কষ্ট করে ডিভোর্স লেটারটা পাঠিয়ে
দিবেন াআমি সাইন করে দিব।
মেহবুব যতই বুঝায় সাবিহা ততই চিৎকার
করে পরে এক সময় কাঁদতে কাঁদতে
বসে পরল।
-আপনি আমাকে এই ছয় মাসে যে
অভিজ্ঞতা দিলেন আমি সারা জীবনেও তা
ভুলবো না। আজ আমি আমার পরিবারের
সামনে যেতেও ভয় পাই শুধু মাএ আপনার
জন্য।
[আমি সব জানি।
আসলে আমি বুঝতে পারি নি তোমাকে।
-আর কোন বুঝাবুঝির দরকারও নাই আপনি
চলে যান এখান থেকে আর কখনও
কোন যোগাযোগ করবেন না।
কথাটা শুনে মেহবুবের খুব খারাপ লাগল,
কিছু বলল না কারন সাবিহা ওর জায়গায় ঠিক।
আজ ওর একটা ফালতু ইমোশনের জন্য
একটা মেয়ে আর তার পরিবার কস্ট
পাচ্ছে। ও প্রায়ই ভাবত যে ওকে নিয়ে
আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করবে।
নিজের মনকে প্রায় স্থির করেও
ফেলেছিল যে সাবিহাকে বলবে সব
কথা। ওর পরিবারও তো চায় সাবিহাকে
মেহবুবের বউ হিসেবে।কিন্তু প্রথম
দিকে ওর একটা ফালতু জেদের বসে
আজ এই বিপওি।এখন সাবিহাকে যতই ও
বুঝাবে ও ভাববে ও ওর প্রতি দয়া
দেখাচ্ছে।
সাবিহা ফ্লোরে বসে কাঁদতে ছিল আর
মেহবুব ওর একদম পাশে গিয়ে বসল।
সাবিহা একটু সরে বসল।
-আচ্ছা কাছেও বসতে দিবা না?
-না।
-আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তোমার মন মেজাজ
ঠিক হোক পরে আমরা না হয় কথা বলব।
-আমি কোন কথাই বলব না আপনার সাথে।
-আচ্ছা বলতে হবে না কিন্তু দরজাটা তো
দাও।
এই বলে ও উঠল।পেছন থেকে সাবিহা
ডাকল।
-শুনুন এটার দরকার নেই।বলে
দেনমোহরের টাকার চেকটা দিল
মেহবুবের হাতে।
-আমি কোন ভিখিরি না যে আপনার টাকা
আমার লাগবে। এটা নিয়ে যান।
-এটা নিয়ম সাবিহা। এটা দেনমোহরের
টাকার চেক। তোমাকে অপমানের জন্য
না।
-এটা আমি রাখব না।
-সেটা তোমার ব্যাপার।
সাবিহা চেকটা ছিড়ে ফেলল।মেহবুব
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল সবটা। সাবিহাকে
ওর এরজন্যই ভাল লাগছিল যে ও কোন
কিছুর ভনিতা করে না, যেটা ওর ঠিক লাগে
ও সেটাই করে।অন্য মেয়েরা হলে
আগে টাকার চেকটা হাতে নিত কিন্তু সাবিহা
তা করে নি।ও বুঝছিল যে এতে ওর
অপমান হচ্ছে। মেহবুবের টাকা ওর
কাছে থাকা মানে ওর নিজের
সংকীর্নতাকে প্রকাশ করা।ধর্ম যতই
বলুক না কেন।একজন স্ত্রী হিসেবে
ওর যতই মেহবুবের উপর
দেনমোহরের অধিকার থাকুক না কেন
নিজের আত্নস মান বোধ থাকায় ও টাকাটা
নিবে না।
মেহবুবের কি হলো ও নিজেও জানে
না হঠাৎ করে গিয়ে ও সাবিহাকে জড়িয়ে
ধরে বলল,
-আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে
কখনই আলাদা করব না। এখন তুমি চাইলেও
সেটা সম্ভব না।আমিই তা হতে দিব না।
তোমার যা করার তুমি কর।
এই বলে সাবিহার কপালে একটা চুমু দিয়ে
ও ওর দিকে একবারও না তাকিয়ে চলে
এলো। পিছনে না তাকিয়েই মনে মনে
দেখল সাবিহা ম্যাম প্রচণ্ড বিরক্তি আর
রাগী চেহারা নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ওর যাবার
পথের দিকে তাকিয়ে আছে।
পর্ব- ১০
অভিশপ্ত বাসর

এই শুনেন।
পিছন থেকে উদগ্রীব হয়ে ডাকল
সাবিহা মেহবুবকে। ও পিছন ফিরে বলল,-
জি বলেন?
ওর এই সম্মোধনে রাগে সাবিহার মাথা
গরম হয়ে গেল।
-আপনি এগুলো কি বলছেন?
-কেন তুমি কানে শুনো নি?
-না।চিৎকার করে বলল সাবিহা।
-আহারে আমার কালা বউ।আমি তো জানতাম
না।এখন তুমি তোমার চিকিৎসা করবা না আমি
তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব?
বলতে বলতে মেহবুব সাবিহার দিকে
আগল।ওর হাত ধরে বলল -আমি একবার
ভুল করছি আর করতে রাজি না,প্লিজ ফিরে
চল।মা বাবা বাকি সবাই তোমাকে খুব পছন্দ
করে।
-তা আমি জানি কিন্তু সংসার তো আমার
আপনার সাথে। আপনিই তো নিজেই
আমাকে বের করে দিয়েছিলেন
ভুলে গেছেন সে কথা?কত অপমান
করেছেন প্রতিনিয়ত। আমি সব মুখ বুঝে
সহ্য করেছি। এখন আপনি আসছেন
আমাকে নিয়ে যেতে।বাহ্।
-আমি কিছুই ভুলি নি। একবার চলো আমার
সাথে অন্তত এই কয়দিনে আমাদের
মধ্যকার ভালো সম্পর্কের জোরে।
-আমি এত মানুষ দেখেছি আপনার মতো
দেখি নি যে প্রতিনিয়ত নিজেকে
বদলায়।
-হ্যা আমি বদলাই নিজ প্রয়োজনে।
যেমন এখন আমার মনে হয়েছে তুমি
আমার জন্য সঠিক তাই তোমার জন্য
নিজেকে বদলালাম কিন্তু তুমি যদি আমার
কথা না শুনো তাহলে আবার বদলাবো
নিজেকে এবং খারাপভাবে। এই কথাটা
মনে রেখ।
সাবিহাও এর উওর ঝাঁঝালো ভাবে দিতে
চাইছিল তারআগেই মেহবুব লিফট এসে
যাওয়ায় লিফটের দিকে হাঁটা দিল, শুনতে
পেল সাবিহা বলছে-আমি এখানের সব কিছু
ছেড়ে দিয়ে মা বাবার কাছে চলে যাব
কিন্তু আপনার সাথে যাব না।
গাড়িতে উঠে ও সাবিহাকে টেক্সট
করল-
“পিচ্চি বউ,
মাথা ঠাণ্ডা কর।চেঁচামেচি তো অনেক
করলা। এনার্জি কমে গেল না?? তাই খাও
কিছু।খেয়ে পড়তে বস।–তোমার
বুড়ো জামাই।
মনে মনে ভাবল অনেক হইছে আর না
আসলে সেপারেশন লেটার পাঠানোর
আগে সাবিহাকে বলা উচিৎ ছিল ওর ভাললাগার
কথাটা। নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য আজ
দুজনের মাঝে আবার দেয়াল হলো।
এখন পরিস্তিতি এমন পর্যায় যে সাবিহা ওর
কোন কথাই শুনতে রাজি না।এতদিনের
ক্ষোভের বশে ও মেহবুবকে না জানি
কেমন ভাবছে।শুরু থেকেই তো
খারাপ আচারন করে আসছে।ভাবল মা
বাবাকে পাঠাবে সাবিহার বাসায় ওকে
বুঝানোর জন্য।অন্তত তাদের দিকে
তাকিয়ে হলেও তো আসবে।তাও যদি না
হয় তাহলে সাবিহার জিদের শেষ ও
নিজেই দেখবে।
কিন্তু ওদিকে কি হচ্ছে তা তো আর
মেহবুব জানে না। সাবিহা ওর শেষ
কথাতেই বুঝছিল যে মেহবুব এত
সহজে ওকে ছাড়বে না ওর জীবন
থেকে, লাগলে যেখান থেকে
পারে জোর করে তুলে নিয়ে যাবে।
সে ক্ষমতা মেহবুবের আছে।ওর মাথায়
চিন্তা আসল তখনই যখন ওর বড় বোন
ফোন দিল।বলল যে তারা বাচ্চাদের
স্কুলের ছুটিতে খুলনায় ওদের বাসায়
বেড়াতে যাচ্ছে।ও আর মেহবুব যদি
পারে তাহলে যেন কয়দিন থেকে
আসে খুলনায়। তখন ও ওর বোনকে
বলল,
-আপু তোরা যা। আজ তো আর সম্ভব না
কারন আমার ডিউটি আছে রাতে। আর
মেজর সাহেবকে ফোন দেবার
দরকার নাই সে ব্যস্ত।আমরা কাল সকালে
রওনা দিব।
ফোন রেখেই সাবিহা ভাবল এই সুযোগ
মেহবুবের হাত থেকে বাচাঁর।ওদের
বাসা থেকে যদি কেউ ফোন না করে
তাহলে মেহবুব জানতেও পারবে না যে
ও ঢাকার বাইরে।তাই বাসায় ফোন করে
ওর আসার খবর দেবার পাশাপাশি মা বাবাকেও
নিষেধ করল মেহবুব কে ফোন না
দেবার।
পরে চিন্তা করল এভাবে আর কয়দিন?
এবার বাসায় গিয়ে মা বাবাকে সব বলবে।
ওর আর মিথ্যে লুকোচুরি ভাল লাগছে
না। পরে ঢাকায় হসপিটালের চাকরি ছেড়ে
খুলনায় জব নিয়ে ওখানে সেটেল
হবে।মা বাবার কাছে থাকলে ও এই বিয়ে,
মেহবুব এসব সমস্যার সামাল দিতে
পারবে। ও যদি মেহবুবের কাছে না
যেতে চায় ও তো আর ওর নিজ বাসা
হতে, মা বাবার কাছ থেকে ওকে তুলে
আনতে পারবে না।আর ডির্ভোস?তা
তো মেহবুব যেদিন ওকে বাসা হতে
বের করে দিছে সেদিনই হয়েছে,
নতুন করে আর কিবা হবে??!!
ওদিকে বিপওি বাজালো ওর দুলাভাই। সে
মেহবুবকে বিকেলে ফোন দিয়ে
জানাল। সে তো সরল মনে তাদের
সাথে ছুটি কাঁটাতে যাবার জন্য ফোন
দিয়েছিল কারন ওর বোন বলেছিল যে
ওরাও যাচ্ছে কিন্তু মেহবুবকে ফোন না
দেবার কথা তাকে বলা হয়নি।ওরা কখন রওনা
দিবে তা জানতে চাইল। তখন তার কাছেই
জানতে পারে যে সাবিহা কাল সকালে
যাবার কথা বলেছে।
কথাগুলো শুনে মেহবুবের রাগ মাথায়
উঠল কিন্তু ও ধরা দিল না কারন তাহলে
ওদিকের খবর ও জানবে না কারন সাবিহা ওর
কাছ থেকে পালাতেই ঢাকা ছাড়ছে তা
ভালোভাবেই বুঝতে পারল। উলটো ও
ভাইয়াকে বলল,
-ভাইয়া আমার তো আজ খুব কাজ অফিসে।
আমি সাবিহার সাথে এ নিয়ে কথা বলি নি
আপনি একটু কষ্ট করে ওকে ফোন
দিয়ে জানুন ও কাল সকালে কখন যাবে।
আর হ্যা ভাইয়া আমার কাজ শেষ হতে
হতে ও হসপিটালে চলে যাবে তো
তখন তো আর কথা বলা সম্ভব না আপনি
যদি বেয়াদবি না নেন জেনে আমাকে
একটা মেসেজ দিবেন।
-আচ্ছা কোন ব্যাপার না। আমি জানাব।
ফোন রাখার পর মেহবুব রাগে ফুঁসে
উঠল।কি এত বড় সাহস!! চিন্তা করল এখন
তো সাবিহা ডিউটিতে চলে গেছে,
হসপিটালে গিয়ে কোন লাভ নেই। তার
থেকে বরং কাল সকালে সাবিহা কখন রওনা
দেয় জেনে লাগলে বাসস্ট্যান্ড
থেকে ধরে নিয়ে আসবে এবং তখন
ওর বাসা নয় ওর নিজের বাসায় নিয়ে
আসবে।
সাবিহার দূলাভাই
একটু পরে ফোন দিয়ে জানাল যে ওরা
কাল সকাল আটটা নাগাত রওনা দিবে গাবতলি
থেকে।
-বাহ্ সাবিহা ম্যাম তুমি নিজে বাঁচতে
পরিবারের সবাইকে বলেছো আমিও
যাচ্ছি তোমার সাথে।দাঁড়াও তোমার
জালে এবার তোমাকেই ফেলব আমি।
পর্ব- ১১
অভিশপ্ত বাসর

মেহবুব বাথরুম থেকে এসে দেখে
সাবিহা রুমে নেই। ড্রেস চেঞ্জ করে
বাইরে এলো। ওকে দেখেই তিতুনরা
দুইভাইবোন কাছে এলো।কত গল্প
তাদের। মেহবুব তো অবাকই হয় ওরা
যে ওরা এত কথা কিভাবে বলতে পারে
তারপরও ওর ওদের ভাল লাগে। ওরা
একসাথেই নাস্তা করল।সারাক্ষন ও
সবখানে সাবিহাকে খুজঁল।খাবার
টেবিলেও ছিল না, ও কোথায় কাউকে
লজ্জায় জিজ্ঞেসও করতে পারছিল না।
তিতলিকে জিজ্ঞেস করে জানলো
সাবিহা রান্নাঘরে। ওর শাশুড়ি একবার ডাকছিল
তখন ও অন্য রুমে বসে জবাব দিল।
সাবিহার এই বিহেভ একদমই ভালো
লাগলো না ওর।পরে যখন রুমে গেল
দেখলো সাবিহা আয়নার সামনে মাথা
আচঁরাচ্ছে।মেহবুব তারাতারি দরজা দিয়ে
ওকে পিছন হতে জরিয়ে ধরল।
-কি করছেন আপনি ছাড়ুন।
-ছাড়বো না আগে বলো তুমি কোথায়
লুকিয়ে ছিলা?
-কিচেনে আমার কাজ ছিল।
-ও তাই?তো কি কাজ করতে ছিলা?সবাই
তো এদিকে ছিল।
-আপনার জন্য বিষ রেডি করছিলাম।
-ও তাই নাকি তারাতারি দাও খেয়ে ফেলি।
-উফ্।ছাড়ুন আমাকে আমি কিন্তু চিৎকার
করব।
কথাটাশুনে মেহবুব হো হো করে
হাসতে ছিল।
-হাসছেন কেন?
-তুমি চিৎকার করলে কি হবে জান?কেউ
তোমাকে বাচাঁতে আসবে না উলটো
তোমাকে নিয়ে আসবে।
প্রথমে সাবিহা বুঝতে পারে নি পরে
যখন পারলো তখন লজ্জায় লাল হয়ে
গেল।
-শোনো আমি তোমার জন্য একটা শাড়ি
এনেছি। পরো তো ওটা।দেখি কেমন
লাগে শাড়িতে।
-আমি পারব না।
-কেন?তুমি শাড়ি পরতে না জানলে আপু বা
মাকে বলো,তারা দিবে।
-আমি শাড়ি পরতে জানি কিন্তু আপনার
দেওয়া শাড়ি পরব না আমি।
সাবিহার এমন রাফ কথায় মেহবুবের মাথা
খারাপ হয়ে গেল।ও সাবিহার হাত জোরে
চেপে ধরে বললো,
-কেন পারবা না?হুম বল।
সাবিহা ব্যাথায় আহ্ করে উঠল,ওর চোখ
দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি টপকিয়ে
পরল।সাথে সাথে মেহবুব ওর হাত
ছেড়ে দিল।আদুরে গলায় বললো –
সরি।
-কেন পরব আপনার দেওয়া জিনিস আমি?
কে আপনি,কি হন আমার? এরই মধ্যে
ভুলে গেছেন যে আমি আপনার জন্য
যখন প্রথম একটা পাঞ্জাবি কিনি আপনি
ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন গাড়ির
ড্রাইভারের সামনে।আমি সেদিন কিছু বলি
নি। তারপরে বাসায় ফিরে আপনার বন্ধুকে
কি বলেছিলেন ভুলে গেছেন?আমি
ছোট লোক,সংসার করার মতো
মেয়ে না আরও কত কিছু।এখন কেন
এত দরদ উঠলো এই ছোটলোকের
উপর।
-সাবিহাআস্তে চিৎকার কর না। তুমি বাসার
সবাইকে জানাতে চাও?ওটা আমার ভুল ছিল,
আমি তো বরাবরই তা বলে আসছি। এখন
শুধু আরও একবার সুযোগ দাও প্লিজ।
-না আমি থামবো না,থামবো কেন?সবারই
জানা উচিৎ আপনার আসল চেহারা। আপনি
আমাকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়েছেন।
আজ আমি সব বলবো সবাইকে।
এই বলে সাবিহা রুম থেকে বের হওয়া
ধরছিল।মেহবুব ওর হাত জোরে ধরে
বিছানার উপরে ফেলল।তারপর ওর উপর
ঝুঁকে বলল,
-অনেক বলছো।আমি এতদিন শুধু শুনছি
আর তোমাকে সময় দিয়ে দেখেছি
তুমি কি কর।তোমাকে সময় এজন্য
দিয়েছিলাম যাতে তুমি আমাকে একটু বুঝ।
এবার আমার ধৈর্য্য শেষ।
-কি বুঝবো আমি আপনাকে? একটা
খারাপ,বেয়াদব, মাতাল, জেদি, যে
কাউকে সম্মান করতে জানে না তাই
বুঝবো।আমার বোঝা হয়ে গেছে
আপনাকে। আপনি চলে যান এখান
থেকে।আমি যাব না আপনার সাথে।
-সাবিহা ভদ্র ভাবে কথা বলো।আজ হঠাৎ
করে এত রাগ উঠলো কেন? এতদিন
তো বেশ ভাল ভাবে মিশছো।হয়ত
নরমাল কাপলের মতো ছিলাম না কিন্তু কম
ছিলাম কোথায় বলো?আমাদের একএে
ঘুরে বেড়নো,ফোনে গল্প
করা,আমার অফিসের কাজের ফাঁকে
তোমার বাসায় যাওয়াআসা এসব স্রৃতি সব
ভুলো যেতে পারলা। হ্যা আমি তো
বলছিই যে আমার সমস্যা ছিল।একবারও
তো তোমাকে মিথ্যা বলি নি।আজ
এভাবে তোমার জন্য এতটা পথ আসার
পর এমন অভদ্রতা করছো?
-কি ভদ্র ভাবে কথা বলবো আপনার
সাথে?হ্যা আমি মিশেছিলাম আপনার সাথে
তার মানে এই না পিছনের কথা সব ভুলে
গেছি আর কোনদিন তা ভুলবোও না।
আপনি এখান থেকে চলে যান।ঢাকা
গিয়ে ডির্ভোস লেটার পাঠিয়ে
দিবেন,আমি সাইন করে দিব।
এই বলে ও রুম থেকে বের হয়ে
আসে।
সাবিহার এমন ব্যবহারে মেহবুব খুব কষ্ট
পেল।কি বলবে বা করবে আসলে যা
করার ও তো তা আগেই করে
ফেলেছে সাবিহাকে ওর জীবন
থেকে চলে যেতে বলে, সব
দোষ তো ওরই।সাবিহাও বা এখন মানবে
কেন!!?
সারাদিন আর সাবিহার দেখা পেল
না,মেহবুবও ওকে দেখার কোন
আগ্রহ দেখালো না।তবে ওর যে মন
খারাপ তা কাউকে বুঝতেও দিল না।
বিকেলে ওরা ঘুরতে বেরোল, সাবিহার
বোন, ওর দুলাভাই। সাবিহাকে ওর বোন
অনেক জোরাজুরি করল কিন্তু সাথে
আনতে পারল না।মেহবুবেরও ঘোরার
ইচ্ছে ছিল না কিন্তু বাসার বাইরে একটু হাপঁ
ছারবে তাই বেরোনো।
সাবিহার বড় বোন আর দুলাভাইয়ের খুনসুটি,
তাদের বাচ্চাদের সাথে খুন সুটি ওর নজর
কারল।ইস্ ও আর সাবিহাও তো চাইলে
পারে এত সুন্দর একটা ফ্যামিলি বানাতে। তা
কি আদৌ হবে।একটা মানুষের ইচ্ছার
বিরুদ্ধে কি আর সংসার করা যায়?!!কিন্তু হ্যা
ও করবে।সাবিহা হ্যা না এখন ওর কাছে
মেটার করে না লাগলে ঢাকা নিয়ে
রুমের মধ্যে আটকিয়ে রাখবে।এখন
দোষ তো সাবিহারই,কোনো ও এত
ভালো হয়েছিল ওর কাছে?কেন ওকে
মুগ্ধ করছে?এখন আর ছাড়তে পারবে
না।
রাতে খাবার সময় টেবিলে ওর পাশের
চেয়ারেই সাবিহা বসে ছিল।ও করলো কি
লবনের বাটি নিয়ে সবার অলক্ষে সাবিহার
প্লেটে লবন ঢেলে দিল।সাবিহা ওর
দিকে আগুনের দৃস্টি নিক্ষেপ করল
কিন্তু এমন ভাব করল যে কিছুই হয় নি। সাবিহা
রাগ করে উঠে চলে গেল।যখন রুমে
গেল দেখে সাবিহা বিছানায় বসা।ওর উপর
বিরক্তি নিয়ে বলল,
-আমার পিচ্চি বউ আমার জন্য বসে
আছে?আহা কষ্ট করার কি দরকার?
-আপনি খুব খুব খারাপ।
-আর তুমি খুব খুব ভাল।হইছে এবার? এখন
বলো ঢাকা কবে ফিরছ?সিরিয়াসলি কথা বলবা
ঢং করে কথা বলবা না।তোমার জন্য আমার
অফিস বন্ধ যাচ্ছে। আমি সিনেমার
নায়কের মতো তোমার পিছনে ঘুরতে
পারব না সে বয়স আমার শেষ।যদি আরও
কম বয়সে পেতাম তোমাকে তাহলে
করতাম।
ওর কথায় ও নিজেই হেসে দিল।
-আমি যাব না।বলেছি না?আর আপনার
নিজের বয়সে কেন অন্য
মেয়েদের সাথে ঢং করতে
গিয়েছিলেন? এখন বুড়ো বয়সে
আমাকে পেয়েছেন না?আমি যাব না।
-আমি তোমার না শুনার জন্য জিজ্ঞাস করছি
না।কখন যাবা টাইমটা জানার জন্য জিজ্ঞেস
করছি।
-আপনি আমাকে জোর করে নিয়ে
যাবেন?
-হ্যা দরকার হলে তাই করব।তুমি কালই আমার
সাথে ঢাকা যাচ্ছ। যদি না যাও আমি তোমার
পারসোনাল লাইফ,ফ্যামিলি আর
প্রফেশনাল লাইফ সব শেষ করে দিব
এবং তুমি তা জানো আমার সে ক্ষমতা
আছে।তোমার ফ্যামিলি তোমার কাছে।
রাতে সাবিহা কাদঁতে কাদঁতে কখন যে
ঘুমিয়ে পরছে নিজেই জানে না।ঘুম
ভাঙল ওর মায়ের ডাকে,
-সাবিহা মা উঠ।
-না মা আরো একটু পরে।
-আরে মেহবুব কখন উঠেছে আর তুই
এখনও শোয়া।তারাতারি উঠ মা।
-সে উঠছে বলে আমাকেও উঠতে
হবে নাকি? আমি কি তার গোলাম?কিনে
রেখেছে নাকি?পাজি লোক একটা।
-ছিঃ মা ওমন করে বলে না।
-আমি পারব না তার সম্পর্কে ভাল কথা
বলতে।তুমি যাও।
এর মধ্যে মেহবুব রুমে ঢুকলো।সাবিহা
ভয় পেল ওকে দেখে যদি ও শুনে
ফেলে।কাল রাতে মেহবুবের ধমক
মনে পরে গেল, সাথে সাথে গলা
শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
-বাবা দেখ তো কখন থেকে ডাকছি
উঠছে না।তোমাদের রওনা দেবার টাইম
হলে গেল, ও কখন উঠবে?নাস্তা
করবে কখন আর রেডিও বা কখন হবে?
-আচ্ছা মা আমি দেখছি।
-আমি উঠবো না।–সাবিহা বললো।
মা রুম হতে বের হয়ে যাবার পর ও সাথে
সাথে বাথরুমে ঢুকলো,দরজা বন্ধ
করতে যাবে তখনই মেহবুবও দরজা
জোরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকল।
-তুমি আমার নামে মাকে কি বলছিলা?আমি
পাজি?
এই রে!! লোকটা শুনে ফেলছে??
সাবিহা ভাবলো।
-পাজির আর দেখছো কি??আমার সাথে
ঢাকা না গেলে এই পাজির আরও অনেক
খারাপ চেহারা দেখবা।
বলেই ও সাবিহার উপর শাওয়ার ছেড়ে
দিল।পরে দরজা চাপিয়ে দিয়ে হাসতে
হাসতে বের হয়ে গেল।সাবিহার মন
প্রচণ্ড খারাপ হলো।এই লোকের
সাথে থাকলে ও মরেই যাবে।
যেভাবেই হোক ঢাকা যাওয়া আটকাতে
হবে আজ।মেহবুবের তিনদিন ছুটি,সে
হিসেবে আজ শেষ দিন।এমনিতেই
সেনাবাহিনীতে ছুটি ছাটা তেমন
নেই,তো কাল ওকে যেভাবেই
হোক অফিসে জয়েন করতে হবে।
ও যদি কোন ভাবে লুকিয়ে পরতে
পারে তাহলে মেহবুব ওকে ছাড়াই চলে
যাবে ফলে ও ও বেঁচে যাবে।যেই
ভাবা সেই কাজ।বাথরুম হতে বের হয়ে
ড্রেস চেঞ্জ করলো,বাইরে এসে
দেখে মেহবুব নাস্তার টেবিলে।
ওকে দেখেই মুচকি হেসে দিল।
সাবিহাও হাসলো।
-দাঁড়া বেটা হাসি বের করছি।আমাকে না
নিয়েই যখন যেতে হবে তখন এই
মুখের বড় বড় কথা বা হাসি থাকবে না।
ও তরিঘড়ি করে সবার অলক্ষে বাসার
বাইরে এলো।বাসার একটু দূরে একটা
খোলা জায়গা ছিল সেখানে পাশের
বিল্ডিংয়ের ইট রাখা ছিল।ওর পিছনেই
লুকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।খুব অসস্তি হচ্ছিল
ওর,না জানি কে দেখে ফেলে আবার।
পাচঁ মিনিট অন্তর অন্তর মোবাইলে ঘড়ি
দেখছিল।মনে হচ্ছিল দীর্ঘ ক্ষণ
দাঁড়িয়ে আছে।একটু পর দেখলো
মেহবুব ফোন দিসে।ও ফোন অফ
করে রাখলো।
-থাক বেটা এখন।
মাঝে ফোন অন করে ঘড়ি দেখল
দেখে সাড়ে আটটা বাজে। তারাতারি
আবার ফোন অফ করলো আবার না জানি
কে ফোন দেয়!!ফোনটা সুইচ অফ
করে যেই পিছনে অবচেতন মনে
ঘুরলো ঠাস্ করে একটা চড় পরলো ওর
গালে।ঘটনার আকস্মিকতায় ও পুরো থ।
ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো,তাকিয়ে
দেখে যে মেহবুব সয়ং ওর সামনে
দাঁড়িয়ে। রাগে থর থর করে কাঁপছে ওর
দিকে তাকিয়ে।জোরে হেচঁকা টান
দিয়ে ওর হাত চেপে ধরল।
-আহ্ লাগছে তো ছাড়ুন।
-এত সহজেই ছাড়বো ভাবছো?আজ
যে অবস্থা করছো এর পর আর
তোমাকে ছাড়বো ভাবছো?ডাইনিং
টেবিলে বসে তোমার আজ হঠাৎ
করে হাসি আমাকে অবাকই
করছে,প্রথমে খুশি হইছিলাম নাহ্ বউ
আমার পেচাঁর মতো মুখের বদলে হাসি
দিছে পরে তোমার ফোন অফ
পেয়ে মনে হইছে যে, যে শয়তান
সে কি এত সহজে শয়তানি ছাড়ে??নিশ্চই
আবার পালাইছে।
-আমি মোটেই শয়তান না শয়তান আপনি।
আপনার জন্যই আজ আমার এই অবস্থা।
-ওই তো পাইছো জীবনে একটা
দোষ তাই তো কিছুই বলতে পারি না।
নইলে আজকে যে কি করতাম চিন্তাও
করতে পারবা না খালামনি।
-আমি যাব না, যাব না।
-আচ্ছা তোমার কি দয়া মায়া নাই কোন?
আমি তোমার জন্য এতকিছু করছি, পিছনে
পিছনে দৌড়াচ্ছি,অফিসের শত কাজ
সত্যেও তোমার জন্য আমি এখানে
আসছি আর তুমি কি করছো?ছোট
বাচ্চাদের মতো জেদ।একবার ফিরে
চলো প্লিজ, পিছনের কথা ভুলে।আমি
হাজবেন্ড হিসেবে ওতটাও খারাপ না সাবিহা।
সময় আমাকে খারাপ করছিল।
-আপনি আমাকে মারছেন।এখনতো আমি
যাবই না।
-তাই না তাহলে শুনো এতদিন যে আমার
খারাপ চেহারা দেখছো তার থেকেও
খারাপ চেহারা দেখার জন্য রেডি থেক।
তোমার আর তোমার ফ্যামিলির সাথে যা
কিছু হবে তার জন্য তুমিই দায়ী আমি না।
এই বলে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে
মেহবুব ফিরে চললো।ও ওর কথায় খুব
ভয় পেল।তখন সাবিহাও ওর পিছন পিছন
চললো।বাসায় ফিরে ওর কাছে হাজারটা
প্রশ্ন। ও কিছুই বললো না।তবে
জানলো এর পিছনে তিতুনের হাত। ও নাকি
ওকে উপর থেকে দেখেছে
কোথায় যাচ্ছে ও।
-তিতুন চামচা দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। মনে মনে
ভাবলো কিন্তু সে গিয়ে তার
আংকেলের কোলে চড়ল।তাই কিছু
বললো না।ঠিক হলো যে রাতের
গাড়িতে ওরা যাবে ঢাকায়।সাবিহা এই
সুযোগে বুদ্ধি করলো যে
সেপারেশন লেটারটা সবাইকে
দেখিয়ে দিবে,অনেক হইছে আর না।
মেহবুবের সত্যি ফাঁস আজ করবেই
করবে।তখন রুমে গেল গিয়ে আলমারি
হতে ব্যাগটা বের করল দেখলো
লেটারটা নেই।সব জায়গায় খুঁজলো
কোথাও নেই।
মেহবুব হঠাৎ বলে উঠলো-লেটারটা
খুজঁছো নাকি?আহারে পাচ্ছ না, না?ইস্
দেখ তো কোনার ঐ ময়লার ঝুড়িতে
নাকি?
সাবিহা দৌড়ে গেল ঝুড়ির কাছে,দেখল
পুরো এনভেলাপটা ছিড়েঁ টুকরো
টুকরো করা।
-আপনি এ কি করেছেন?
-ছিড়েঁ ফেললাম। আলমারিতে কাপড় রাখার
সময় ওটা তোমার ব্যাগে চোখে
পরছিল,তখন পেলাম।তাতেও কিন্তু দোষ
তোমারই কেন তুমি এত ইম্পরট্যান্ট
জিনিস ব্যাগে রেখে ব্যাগটা আবার
খোলা রাখ।এখন দেখ কি অবস্থা।
আহারে তুমি এখন মা বাবাকে কি বলবা?
মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করতে করতে
বললো,
-তুমি চাইলে আমার ল’য়ারের কাছ থেকে
আরেক কপি বানাতে পারি। বলবো?
-চুপ করুন আপনি।একদম চুপ।
হা হা করে হেসে দিল মেহবুব।বলল,
-আমি আমার চাকরি জীবনে অনেক ট্যারা
লোককে ম্যানেজ করছি কিন্তু
তোমার সাথে খেলে যা মজা পেলাম
তা বড় বড় রাঘব বোয়ালকেও হার
মানাইছে।এর জন্যই তোমাকে ছারবো
না কোনদিন বুঝছ আহ্লাদী?আমি ছাড়া
তোমার কোন গতি নেই।যেদিকে
পালাও না কেন,তুলে আনব।
সারাদিনটা যে কেমন কাটলো সাবিহা
নিজেই জানে না,সারাদিন নিজের রুমে
ঘুমিয়েই কাটাল। ওদিকে মেহবুবের দম
ফেলার সময় নেই। সারাদিন সে ঘুরাঘুরি
করলো তিতুনদের নিয়ে, বিকেলে
কিছু আত্নীয়রা এলো তাদের সাথে হাসি
মুখে কথা বলা, অফিসের ফোন
অ্যাটেন্ড করা,কিছু গোছগাছ করা আর
সাবিহার দিকে নজর রাখা তো আছেই।বার
বার গিয়ে ওর রুমে দেখতো ও কি
করছে সাবিহা তখন ঘুম।ডাকত না ভাবতো
কাল রাতে তো কাদঁতে কাদঁতে ঘুমায় নি
এখন একটু ঘুমাক। দেখলো সাবিহা কিছুই
গুছায় নি।তখন ওকে জোর করে
টেনে তুলল,
-এই যে ঘুম কুমারী, তোমার ব্যাগ কে
গুছাবে?
-পারব না আমি।
-তা তুমি কোন কাজ টা ঠিকমত করছো
বলো? এখন কি তোমার ব্যাগটাও
আমাকে দিয়ে গুছাবে?
-হ্যা।
-বাহ্এই না হলে বউ!! বাইরে সবাই
আমাকে সম্মান দিয়ে চলে আর ঘরে
আমার বউ একফোঁটা দামও দিল না।
আফসোস!!
-পারব না দিতে।
-আচ্ছা তোমার কি রোগে পাইছে
আমার প্রতিটা কথায় না বলাটা। হ্যা কবে
বলবা?
-কোনদিন বলবো না।
-লাগবেও না, আপনার হ্যা শুনার জন্য আমার
বয়েই গেছে!!
সাবিহা বুঝল এই লোকের সাথে কড়া কথা
দিয়ে চলবে না,আদুরে কন্ঠে কথা
বলতে হবে।কিন্তু এই কর্কষ বুড়োটার
সাথে কথা বলতেও ওর বাঁধে, তো
রোমান্টিক কথা কেমনে বলবে। যাই
হোক বিছানা থেকে নেমে
মেহবুবের সামনে গিয়ে ওকে
আস্তে জরিয়ে ধরল তারপর ওর
শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলল,
-শুনেন না, আমি না গেলে হয় না??আপনি
যান আমি আমার ছুটি শেষ হবার পরে বরং
আসি?
মেহবুব হঠাৎ ওর এই আচারনের মানে
বুঝল যে এটা ওর নতুন ধান্দা।এই মেয়ে
আবারও ওকে দৌড়ানি খাওয়াবে। ও ওআরই
বেশি আদরের সাথে বলল,
-ওরে আমার পুচঁকি বউ,তোমাকে ছাড়া
তো আমার এখন চলেই না, অনেক
দূরে থাকছি আর না। তুমি বরং তোমার
হাতে যে কয়দিন ছুটি আছে আমার সাথে
আমার অফিসে যেও বরং।আমি ডেস্কে
বসে কাজ করব আর তুমি চেয়ারে বসে
থাকবা।কাজের ফাঁকে ফাকেঁ তোমাকে
দেখব আমি।
সাবিহার ওর এই উলটো রোমান্টিকতায়
আরও খেপলো।তখন ওর বুকের উপর
ধুপ ধাপ কিল দিল কয়েকটা। মেহবুব ওকে
ধরে ফেলল,হাসতে হাসতে বলল,
-আমার প্রেম করার বয়সেও এতটা খাটুনি
খাটি নি বুঝলা?
-তাহলে তো আর রিতার কাছ থেকে
দূরে সরতে হতো না।–অনেক রাফ
ভাবে বলল সাবিহা। এই রে এখন!!উচিৎ
হয়নি এভাবে বলা।মেহবুব ওর ৃুখের উপর
হতে চুল সরাতে সরাতে বলল,
-তুমি যা জানো না তা নিয়ে কথা বলো না।
আমাকে কষ্ট দেবার কোন সুযোগই
তুমি ছাড়বা না,না?
-নাহ মানে আমি…..
-একটা মেয়েকে মন দিয়ে
ভালবেসে তার কাছ হতে অপমানিত হওয়ার
যন্ত্রণা তুমি বুঝবা না সাবিহা।তোমার
লাইফেও যদি এমন কেউ থাকত যাকে তুমি
ভালবাসো আর সে তোমাকে রেখে
চলে গেছে তখন তুমি আমার অনুভূতি
গুলো বুঝতা।তুমি আমার কাছ থেকে শুধূ
কাহিনীই শুনছো আমার কিন্তু আমাকে
বুজবার চেষ্টাও করনি কোনদিন।
মেহবুবের ব্যাথাতুর চোখের দিকে
তাকিয়ে আজ প্রথম ও উপলব্ধি করলো
আসলেই তো, ওতো বুঝতে চায়নি
ওকে।কিসের জন্য ও এমন করত?মনে
পরলো ভাবি একদিন বলেছিল,-আমার
দেবরটা খারাপ না,সময় ওকে খারাপ
বানিয়েছে।
এই লোকটা ওর পিছনে পাগলের মতো
ছুটছে,বারবার দেখা করছে।,হসপিটালে,
কলেজে আসছে বারবার।প্রতিদিন অফিস
শেষে, আবার ছুটির দিনেও ওর ফ্লাটে
যেত মেহবুব।ও তো ওকে দেখেই
বিরক্ত হতো কেবল।আসলে কি জানার
চেষ্টা করছে কেন লোকটা এমন
করে??উলটো ও অভিনয় করে
বুঝতো, ডির্ভোসের কালি ঢাকতে।
সেদিন সেপারেশন লেটারটাই ওর মাথা
খারাপ করে দিছে।ও চিন্তা করে নি যে
ওটা মেহবুব ওদের বিয়ের পর খারাপ
সম্পর্কের সময়ে উকিলের কাছে
গিয়েছিল।ও তো তখনই লেটারটা পেত
শুধূ পায় নি ওর অসুস্থতার জন্য।মেহবুব
ওটা ক্যানসেল করারও সময় বা সুযোগ পায়
নি।তার আগেই ওটা চলে আসে সাবিহার
হাতে আর তখনই মেহবুব সম্পর্কে ওর
নেগেটিভ ধারনা বেড়ে যায়।
এরপরে মেহবুব রুম হতে বের হয়ে
যায়।বিকেলে ওকে সাবিহা চা দিতে
যায়,দেখে বরাবরের মতো তিতুনরা
ওকে জেকে ধরেছে।ভাবছিল হয়ত
ওর মেজাজ খারাপ করার জন্য ভেঙিয়ে
কিছু বলবে মেহবুব। ও ও প্রস্তুতি
নিয়েছিল কথার জবাব দেয়ার।নাহ্ উলটো
ওর হাতে চা দেখে মেহবুব অবাক
হয়ে চায়ের কাপ নিল, কিছু বললো না, চাও
খেল না। টেবিলের উপর রেখে দিল।
বাসস্ট্যান্ডে পৌছানোর জন্য ওরা সন্ধ্যায়
বের হলো।সাবিহার মন খুব খারাপ ছিল,না
পারছিল হাসতে না কাদঁতে।মেহবুব সবার
সাথে হাসি মুখেই কথা বলে বিদায় জানাল।
বাসে উঠে সাবিহার কান্না পাচ্ছিল খুব,ও
অন্য দিকে ফিরে জানালার বাইরে
তাকিয়ে ছিল। মেহবুবকে বুঝাতে চাচ্ছিল
না ওর কান্না না জানি এ নিয়ে কি মশকরা
করে।
-কাঁদছো কেন? তুমি কি ছোট তিতলি? ও
হ্যা তুমি তো আবার পিচ্চি মানুষ।তা কাদঁ মন
ভরে কাঁদ।
-আমি মোটেই কাদঁছি না।
-আচ্ছা বেশ তো।
এই বলে মেহবুব আর কোন কথাই
বললো না।সাবিহা ভাবছিল সারাটা পথ ওকে
পেয়ে মেহবুব জালাতন করবে কিন্তু না
সে কোন কথাই বলছে না উলটো
নিজের ট্যাব খুলে অফিসের কাজে
ব্যস্ত হয়ে পরল।সাবিহা কিছুক্ষন বাইরে
তাকিয়ে ছিল আনমনা হয়ে পরে একসময়
ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙলো খুব
ভোরে মেহবুবের ডাকে,
-উঠ আমরা এসে পরছি।তুমি ধীরে
ধীরে নাম।
বলেই ও বাস থেকে নেমে গেল।
সাবিহা নিজের চুল ঠিকঠাক করলো, কাপড়
ঠিক করে নামলো বাস থেকে।
নেমে দেখে মেহবুবের গাড়ি
আসছে, ও গাড়ির ড্রাইভারের সাথে কথা
বলছে।ওকে আসতে দেখে ওর
দিকে তাকালো। হাসলো তারপরে গাড়ির
দরজা নিজেই খুলে দিল।অবাক হলো
যখন মেহবুব ড্রাইভারকে পাঠিয়ে
নিজেই গাড়ি চালানো শুরু করলো।
গাড়িতে উঠার পর ওকে মেহবুব জিজ্ঞাস
করলো,
-আমি তোমাকে অনেক বিরক্ত করছি না
সাবিহা?আমি বুঝতে পারছি যে জিদ করে
কাউকেই আটকে রাখা যায় না, এতদিন এই
জিদটাই আমার ছিল।কিন্তু বিলিভ মি তোমাকে
আমি অনেক ভালবেসে ফেলেছি।তাই
ভাবলাম যে তুমি আমার কাছে থেকে
খাচাঁর বদ্ধ পাখির মতো থাকবা।এতে আমরা
কেউই খুশি থাকতে পারব না বরং
তোমাকে তোমার মতে করে বাচঁতে
দেই।তোমার জীবনটা তো আমিই
নষ্ট করলাম এখন এর প্রায়চিত্ত করতে
চাই তাই তো কালকের তোমার ওই কথা
গুলো বলার পরেও জোর করে নিয়ে
আসছি ঢাকায়।
-আমি আসতে চাই নি।
-হ্যা জানি তারপরও কেন আনলাম জানো?
এখামে তুমি পড়াশুনা করেছো,এখানের
হসপিটালে জব কর, তোমার ভাল ভাল
কলিগরা বা বন্ধুরা সবাই এখানে।তোমার
টিচার হওয়ার ইচ্ছা তো আমি
জানি,,,,,.

পর্ব-১২
অভিশপ্ত বাসর

মেহবুব গাড়ির লুকিং গ্লাস দিয়ে
সাবিহাকে
দেখছিল যতক্ষন পারছিল।এক সময় মোড়
ঘুরতেই সাবিহা আয়না থেকে হারিয়ে
গেল।দেখতে দেখতে হঠাৎ খেয়াল
করল ওর চোখের কোনা ভিজে
উঠেছে,চোখটা ঝাপসা হয়ে আছে।
চশমাটা খুলে চোখটা মুছল,ওর ইচ্ছা
করছিল চিৎকার করে কাঁদতে। মেয়েরা
কত সহজেই কাঁদতে পারে,নিজের
বুকের মধ্যকার কষ্টগুলো কান্নার
মাধ্যমেই বের করে দিতে পারে আর
ছেলেরা শত ব্যাথা সত্ত্বেও তা পারে
না।ব্যাথাগুলো দলাপাকিয়ে বুকের
মধ্যেই থেকে যায়,সময়ের সাথে
সাথে তা আরও বাড়ে।মেহবুবেরও এখন
সেই অবস্থা। বাসায় বোনকে কথা দিয়ে
আসছে যে ভাবিকে নিয়ে আসবে
এখন গিয়ে কি বলবে?? মা বাবা সাবিহাকে
কত ভালবাসে, ওর জন্য তারা মেহবুবের
সাথেও কথা বলে না ঠিক করে।তাছারা ও
তো সাবিহাকে আস্তে আস্তে
ভালবেসেছিল।ওর কথাবলা,হাসা, খুনসুটি সব
কিছু।,রিতার দেওয়া কষ্টগুলো ভুলতে
চেয়েছিল।কখনই সাবিহাকে তা বলে
উঠতে পারে নি কারন ও ভয় পেত যদি
সাবিহা ওর প্রতি ক্ষোভের বশত ফিরিয়ে
দেয় তখন ও বাঁচতেই পারবে না।আর
যখন বলে উঠল তখন সব শেষ!!!!
মেহবুব অফিসে গেল সোজা, বাসায়
ফিরলো না।চাইল যে অফিসের কাজের
মধ্যে ডুবে থাকলে কিছুটা মন খারাপ
কমবে আর কাজ হতে ফেরার পথে
ওর ল’য়ারের সাথে দেখা করবে।
কিসের কি কাজেই মন ফিরাতে পারছিল না।
সারারাতের এত লম্বা জার্নি তারপরও ইচ্ছা
করে অফিসে থাকল,বারবার মোবাইল
বের করে ওদের একএে ঘুরার
সময়ের সেলফি গুলো দেখছিল।
-আমার লজ্জা লাগে আপনার সাথে ছবি
তুলতে।
-কেন?দেখছো সবাই কত সুন্দর করে
ছবি তুলে আর তুমি একজন নাক কুচঁকানো
বুড়ি,শুধু নাক কুঁচকাও।
-আমি মোটেই বুড়ি না,আপনি নিজে
বুড়ো।
-ওই তো তুমি আমার পুচঁকি বউ খালি ঢং কর।
সাবিহাকে ও কত মজা করে বিভিন্ন ভাবে
ভেঙাত আর ও ঠোট ফুলাত বারবার।আচ্ছা
সাবিহা কি এসব স্মৃতি ভুলে গেছে? হয়ত
ও খারাপ ছিল কিন্তু ওদের এসব স্মৃতি
গুলো তো মেহবুব কোন ভনিতা
করে নি বা ওকে কষ্ট দেয় নি তাহলে
সাবিহা কি পারবে সব ভুলে যেতে?ভাবল
হয়ত সাবিহা পারবে কারন ও তো ওকে
ভালবাসেনি উলটো সবসময় ওর বউ
হিসেবে ওর অবহেলাই
পেয়েছে,বিভিন্ন দিক দিয়ে চোখের
পানি ছাড়া তো মেহবুব ওকে কিছুই দেয়
নি।
নাহ্ এদিকে সাবিহা ঠিকই ভুলতে পারছিল
না
ওকে।এতদিনের একটা সম্পর্ক যার
মধ্যে হাসি কান্না সব পেয়েছে শুধু বাকি
ছিল ভালবাসা শব্দটার।তাও পেয়েছে,এই
একটা শব্দ ছিল ওর কাছে সবচেয়ে দামি
যখন বুঝতে পেরেছে জীবনে
পরিবারের মানুষ ছাড়াও অন্য আরও একজন
মানুষের ভালবাসা দামী। যে হবে ওর
জীবন সগুী।এই প্রকাশ করার মুহূর্তের
জন্য ও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা
করেছে অনেকদিন।কিন্তু আজ যে
ভাবে এই মুহূর্তটা আসল নিজেই ভাবতে
পারে নি যে মেহবুবের মনে এটা জন্ম
নিয়েছে ওরই অজান্তে, যেখানে ও
মেহবুব সম্পর্কে শুধু খারাপ ধারনাই
রেখেছিল।মেহবুবের প্রতিটা সঙ ওর
অসহ্য লাগত, বাধ্য হয়ে চলত এমনকি
খুলনায় ওকে দেখেও কি খারাপ আচারন
করত,ওকি একবারও ভেবেছিল
মেহবুবের মনে এসব ছিল।ওকে
কখনই কিছুই বুঝতে দেয় নি ও।ওর সাথে
কাটানো খারাপ সময়গুলোর স্মৃতিও আজ
মনে পরলো।
ওদিকে মেহবুব বিকেলে কোনমতে
কাজ শেষ করে উকিলের কাছে গেল
তাকে বললো যত তারাতারি সম্ভব
ডির্ভোস পেপার তৈরি করতে।সব কাজ
শেষ করে বাসায় যখন ফিরলো ও
পুরো পুরি বিদ্ধস্ত।কোনমতে
খেয়ে শুয়ে পরলো, বেডসাইট
টেবিলে ওদের ওয়েডিং ছবিটা দেখল।
মনে পরল যখন সাবিহার সাথে রাতে
ফোনে কথা বলত তখন বার বার ছবিটার
দিকে তাকাত, উঠে গিয়ে ছবিটা
আলমারিতে রেখে দিল নইলে ও রাতে
ঘুমুতেই পারবে না কিন্তু তাতেও রেহাই
নেই সোফাটার দিকে তাকিয়ে থাকল
শেষমেষ নিজে উঠে সোফায়
শুলো।কুশনে মাথা এলিয়ে দিয়ে
ভাবতে লাগল ও আসলে সাবিহার সাথে
কতটা খারাপ করছে,একটা মেয়ে কত
সপ্ন নিয়ে আসছিল আর সেখানে ও
দিনের পর দিন মেয়েটাকে বিছানার
বদলে সোফায় থাকতে দিত আর নিজে
বিছানায় মাতালের মতো শুয়ে থাকত।হঠাৎ
টের পেল ওর গা গরম হয়ে যাচ্ছে,
মনে হয় জর আসবে।গরমে
কয়েকদিন দৌড়াদৌড়ির ফল!!
পরদিন সকালে মেহবুবের ঘুম ভাঙল
মায়ের হাতের ছোয়ায়। -কি রে তোর
এত জর আর এখনও ঘুমাচ্ছিস বাবা?তুই
ছোট বাচ্চা?
-টের পাই নি মা।
-তা কেন টের পাবি?মা ছাড়া দেখভালের
আর কে আছে?
মেহবুব বুঝল মায়ের এ নাটক সাবিহা
পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে,হলোও তাই।
অনেক কথা বলার পর সে সাবিহার কথা
উঠাল,
-কত সখ করে বউ আনছিলাম সাবিহার
মতো মেয়ে আমার ছেলের সেই
সুখ সইবে কেন!!?
-মা তুমি না আমাকে ঔষধ দেবার কথা
বলছিলা? তো দাও।
-হ্যা পাঠিয়ে দিচ্ছি।তুই আগে ফ্রেশ হ
তারপর কিছু খ আগে।
ওর বোন ট্রেতে করে ওর জন্য
খাবার আর ঔষধ নিয়ে আসলো। -কিরে
তুই কিভাবে অসুস্থ হলি?ভাবি তোকে
ধোলাই দিছে?
-আমি কি তোর মত শয়তান?
-তা আর বলতে? আচ্ছা ভাবিকে ফোন
দে জিজ্ঞেস কর কি কি ঔষধ খাবি?
-পারবো না তোর ভাবি ভাল ডা. না।সে
আমার ট্রিটমেন্ট ভাল করে করে না আর
তুই যা তো ভাগ এখান হতে।
-তুই না বলেছিলি ভাবি আসবে তা কেন
আসে নি?
-ওর কাজ আছে তাই ব্যস্ত।সে আসবে
না।
-ধূর!! হাহ্ বুঝি না তোর মতিগতি বুঝলি?আমি
মাকে বললাম।
ওর বোন মুখ ঝামটা দিয়ে চলে গেল।
যাক্ ওই বলুক গিয়ে মাকে,ওর ইচ্ছে
নেই।আসলে কোথাও মনের মধ্যে
ওর বলছিল যে সাবিহা আসবে।
মেহবুব নাস্তা আর ঔষধ খেয়ে কোন
মতে অফিসে গেল,দুপুর নাগাত জর
আরও বাড়ল।বুঝলোনা হঠাৎ ওর শরীর
এতটা কেন খারাপ হলো আগে তো
হয় নি।সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে কত
ট্রেনিং করেছে, ওর শরীর সবসময়
ফিট থাকত আজ সামান্য একটু জরে এত
কাহিল অবস্থা!! মা ফোন দিয়ে বাসায়
যেতে বলল ও ওভাবল আসলে ওর
রেস্ট দরকার।
বাসায় যাবার পথে সাবিহার হসপিটাল
সামনে
পরল,ওর মনটা মোচর দিয়ে উঠল।আচ্ছা
সাবিহা কি জয়েন করেছে?একটু দেখে
যাবে?বা ওর বাসা তো হসপিটালের
কাছেই গিয়ে দেখে আসবে ওর ‘ডাবিহা
ম্যাম’ কি করছে?নাহ্ এখন সাবিহার সাথে
দেখা করার মানে নেই,অনেক বিরক্ত
করতো ওকে।তাছাড়া ওরা একজন
আরেকজনকে দেখলে যদি দূর্বল
হয়ে যায়!! সাবিহার হসপিটালের পাশেই
ফুচকা ওয়ালাকে দেখে ওদের ফুচকা
খাওয়ার দৃশ্য মনে পরল।একদিন ওরা খাচ্ছিল
আর বরাবরের..

পর্ব-১৩
অভিশপ্ত বাসর

হঠাৎ দেখে সাবিহার কিছু
স্টুডেন্টস ওদের দিকে তাকিয়ে
আছে,ও তো পুরো পালাই পালাই
অবস্থা। পরে গাড়িতে উঠে সে কি হাসি!!
মোবাইলে ওর ছবি দেখতে দেখতে
বলল-ইস্ সেদিন আর আসবে
রাতে মেহবুব অফিসের কাজ নিয়ে বসল
লেপটপে।ওদিকে গায়ে জর আর
মনটাও অসহ্য লাগছিল।কিন্তু কোন উপায়
নেই। খুলনা যাওয়ায় ছুটিতে অনেক কাজ
জমে গেছে।একবার ভাবলো সাবিহার
কাছে যাবে আবার চিন্তা করলো এত
রাতে যাবে ওর বাসায়, ওরা জানে ওরা
সম্পর্কে কি কিন্তু অন্য সবাই তো
জানে না আর দিন হলেও কথা ছিল।অবশ্য
ইতিমধ্যে আশেপাশের ফ্লাটের
লোকজন ওকে চিনে গেছে।আগে
তো অফিসের কাজ সেরেই সাবিহার বাসা।
মাঝে মাঝে খেতও ওখানে।অবশ্য
এখন বরং চাইলেও পারবে না খুব সহজে
যেতে।ইচ্ছে হয় সাবিহার মনের
বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে এখানে এনে
জোর করে রাখে।কিন্তু ও তা শত
চেস্টা করেও পারবে না এখন,ইচ্ছা
করলেও ওর সাথে খারাপ আচরণ করতে
পারবে না।এসব ভাবছে হঠাৎ করে
দেখলো ওর ইমেইলে অফিস
থেকে মেইল।মেইল টা চেক করল।
ও দেশের বাইরে জন্য এপ্লাই
করেছিল তার সিলেকশনের লিস্ট।
ওকেও সিলেক্ট করা হয়েছে। ভালও
লাগলো আবার খারাপও লাগল।ভাল লাগলো
একারনে যে এখান থেকে গেলেই
ও সাবিহার সব স্মৃতি ভুলে
যাবে,ডির্ভোসের ডিপ্রেশন হতে
মুক্তি পাবে অন্যদিকে সাবিহারও ওদের
এই বিয়েটা থেকে মুক্তি মিলবে,ঢাকায়
দূজন থাকা মানেই নানা অযুহাতে ওদের
দেখা হওয়া।তাতে দুজনের শুধু কষ্টই
বাড়বে আবার খারাপ লাগলো একারনে
যে সাবিহাকে তাহলে চিরদিনের মতো
হারাবে।
এই চিন্তা করলো সকালে নাস্তার
টেবিলে সবাইকে জানাবে, মা বাবা ওকে
কাছে না পেয়ে হয়ত কষ্ট পাবে কিন্তু
ও এখানে থাকলেও তো তারা ওর
বিয়ের বা ডির্ভোসের ব্যাপারে কষ্ট
পাবেন।তারথেকে এই ই ভাল সবাইকে
যে যার মতো থাকতে দিয়ে ও দূরে
কোথাও চলে যাক।কিন্তু সাবিহাকে
কিভাবে জানাবে আবার ভাবল ওকে
জানিয়েও বা কি হবে ওর তো কিছু
আসে যায় না।
পরদিন সকালে,
-মা একটা কথা ছিল আমি অফিসের একটা
স্পেশাল মিশনে যাচ্ছি মিনিমাম এক বছর
লাগবে।
-আচ্ছা সাবিহাকে কি রেখে যাবি?না নিয়ে
যাবি?
-মা তোমরা জানো এর উওর কি।
-তুই এখনও ওকে চাস না? আসলে কি
করতে চাস বলবি কিছু?
-আমি আর সাবিহা ডির্ভোস নিচ্ছি।নোটিশ
ওর কাছে আগেই গেছে আজকে
লেটারে সাইন করে পাঠিয়ে দিব।
ওর এই কথা শুনে মা আর কিছুই বলতে
পারে না,কান্নাকাটি করা শুরু করল।ভাবি
বললো,
তোমরাএতবড় একটা ডিশিসন নিয়ে
ফেলছো কেউই তো বললা
না,কালতো সাবিহাও বলল না কিছু।
-ভাবি এতে বলার কি আছে।তোমরা তো
সেই প্রথম হতেই সব দেখছো
আমাদের মধ্যকার সমস্যাগুলো আমরা
আলাদাও থাকছি মাসের পর মাস।তো
ডির্ভোস ছাড়া উপায় আছে কোন?
-উপায় আছে,তুই চাইলেই উপায় আছে।
তুই সাবিহাকে নিয়ে আয় বাবা।-বাবা বলল।
মেহবুব আর তখন বলল না যে এখন ও
চায় কিন্তু সাবিহা চায় না কারন তখন এরা ঐ
মেয়েটার পিছনে পরবে। ও ভাল
আছে ভাল থাকুক।
এতক্ষনে মা বলল,-সাবিহার মা বাবাকে কে
জবাব দিবে?
-আমিই দিব, বলে মেহবুব অফিসের ব্যাগ
নিয়ে বের হয়ে আসলো।অফিসে
পৌছেই সাবিহাকে ফোন দিল,
-ব্যস্ত আছ?
-না।বলুন।
-এখনও রাগ আমার উপর?
-না।
-আচ্ছা তোমার মন ভাল করার দুটো কারন
বলি।শোনো,আমার ল’য়ার আজ কাগজ
নিয়ে আসবে আমি সাইন করে
তোমাকে পাঠিয়ে দিব তুমিও করে দিও
আর আমি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি
অফিস থেকে সহসা আর ঢাকা ফিরছি না।
সো মেহবুব নামের বিরক্তিকর অধ্যায়
শেষ হলো তোমার জীবন থেকে।
কনগ্রাচুলেশন।
-আপনিও তো এই বিয়ে শাদি বউ এসব
থেকে বাচঁতে চেয়েছেন সো
আপনার আশা পূরণ হলো শেষমেষ।
কনগ্রাচুলেশন।
-থ্যাংকস।আর হ্যা তোমার বাবাকেও আমি
ফোন দিচ্ছি তুমি কোন স্ট্রেস নিও না।
আমার জন্যই সব সমস্যা আমিই সব সামলে
দিয়ে তারপর যাব।তুমি নিজেকে শক্ত
রেখ প্লিজ। মোটেই কাঁদবা না।বল?
-আমি কাদঁলে আপনার কি এসে যায়?
-তুমি যদি কাঁদ আমি এপাশে ভাল থাকতে
পারব না।
-আপনি তো এটাই চাইতেন।
-আবার পুরোনো কথা?বলছি না খারাপ সব
কিছু ভুলে যাবা আর ভাল টুকু মনে রাখবা।
-আপনার এখনও ইচ্ছে হয় আমাকে বকা
দেওয়ার?
-আমি আর তুমি যখন বুড়ো হয়ে যাব যদি
দেখা হয় দেখবা তখনও আমি তোমাকে
বকব ডাবিহা ম্যাম।
মোবাইলে এরপর ওরা অনেকক্ষন চুপ
করে থাকল শেষে সাবিহা বলল,
-আপনি যাবার আগে আমার সাথে দেখা
করে যাবেন না?
-না যাব না। তাহলে আমি যেতে পারব না।
এই বলে মেহবুব ফোন কেটে দিল।
সাবিহা যে ওদিকে কাদঁতে কাদঁতে অস্থির
হয়ে গেছে তা ও জানে।কিছুই করার
নেই। যখন ওর শ্বশুরকে ফোন দিল
বুঝতে পারছিল না কি বলবে তারপরও সব
বলল তাকে।সাবিহার পরিবারের কেউ
বিশ্বাসই করতে পারছিল না ওদের মধ্যে
এত সমস্যা ছিল কারন ওরা তো নরমালি
তাদের সামনে চলত।ওদিকে ওর উকিল
বলে দিয়েছে সে পেপার নিয়ে
আসতেছে ওর অফিসে।এরই মধ্যে
ওর বন্ধুর ফোন,
-কিরে ভাবিকে জোর করে রাখতে
পারছিস?
-না তা আর হলো কৈ?
-তাহলে তোরা সত্যি ডির্ভোস নিবি?
-ও আমার সাথে থাকতে চায় না।
-তাই সে বলল আর ওমনি তুই ও মানলি?তুই
সত্যি করে বল তো ভাবিকে তুই
ভালবাসিস?
-হ্যা
-রিতার থেকেও?
-হ্যা। আমি ফিল করেছি তা।আর সাবিহা খুবই
ভাল মেয়ে।
-তুই যে দূরে যাবি থাকতে পারবি?
-পারব না মনে হয় আর কিবা করার আছে
পারতে হবে।
-শোন তুই এই একটু হলেই দেবদাস
হওয়া বাদ দে। মানুষ প্রেমের জন্য কি না
করে আর তুই? কাজের কাজ কর
তাইলেই দেখবি সব সমস্যা সলভ।আমি
তোর জবাব শুনেই বুঝতে পারছি ভাবি
সম্পর্কে তোর ফিলিংস।আর ভাবি
তোকে চাবে না কেন গাধা? তোরে
বিয়া করছে কি এমনি এমনি?সে তো
তোর গাধামি দেখে আসতে চায় না।
এখন আমি যা বলব তুই তা করবি, নিজের মাথা
খাটাবি না।
-আচ্ছা শুনব কথা, বল কি বলবি।
ওর বন্ধু ওকে কিছু পরামর্শ দিল।মেহবুবও
কথা দিল শেষ উপায় হিসেবে ও সাবিহার
জন্য হলেও তা করবে।
বিকেলে যখন মেহবুবের অফিসে ওর
উকিল আসলো তখন ও ডির্ভোস
পেপারে সাইন করল এবং উকিলকে কিছু
পেপারস দিল আর বললো সাবিহার বাসায়
গিয়ে ওর শিখানো মতে কথা বলতে।
সে কিছুটা আপওি করলেও মেহবুবের
অনুরোধ ফেলতে পারলো না।
যাইহোক সে গেল সাবিহার বাসায়।এদিকে
মেহবুবের গা দিয়ে ঘাম ছুটছে ভয়ে
যদি সাবিহা পেপারস গুলো পড়ে বা অন্য
রিয়েক্ট করে তখন? ও লজ্জায় মরে
যাবে। বন্ধুর কাছে তো বলছে সাবিহা
ওকেও ভালবাসতে শুরু করেছে এখন
যদি তা না হয়!!!?সাবিহার বাবাও ফোন দিচ্ছে,
ও পারছে না ধরতে।কি বলবে?ওর কাছে
তো কোন উওর নেই,থাকত যদি না ও
সাবিহাকে না পেতে চাইত।খারাপ লাগছিল
সাবিহার পরিবারের কথা মনে করে,না জানি
ওকে তারা কতটা খারাপ ভাবছে।
ওদিকে সাবিহা না পারছে নিজেকে
বুঝাতে না পারছে পরিবারকে বুঝাতে।মা
বাবা বোন ভাইয়া এরা বার বার ফোন
দিচ্ছে। মা তো খুব কান্নাকাটি করল,সে
মানতেই পারছে না মেহবুবের মতো
এত ভাল ছেলে এমন করবে।দুদিন
আগেও তো ওরা বেরিয়ে
এলো,মেহবুব তো পুরো ওদের
ফ্যামিলির একজন হয়ে উঠেছিল।তাহলে
কেন এমন করল?নিশ্চই সাবিহা ওকে কষ্ট
দিছে,ওর যে ঘাড়তেড়ামি সভাব!!সাবিহা
জানত যে শেষে এমন কথাই আসবে।
ও বার বার বুঝানোর চেষ্টা করলো
মাকে যে ওদের প্রথম থেকেই
সমস্যা।কিন্তু কে বুঝে কার কথা।
মেহবুবের মা বাবাও ফোন দিল ও
উলটো তাদের বুঝালো-দেখেন মা,
আমাদের তো সেই প্রথম থেকে
সমস্যা ছিল তো আলাদা হয়ে যাওয়াই
ভালো।আর উনি তো এমনিই বাইরে
চলে যাচ্ছে, সে ভালো থাকবে।
-আর তুই?
-মা আমাদের মধ্যে এমন কোন ভালো
সম্পর্ক ছিল না যে আমি কষ্ট পাব।
-কি বলিস তুই? তাহলে মেহবুব যে
তোর কাছে বারবার যেত, অনেক রাত
করে বাসায় আসত,অফিস ছাড়া তো
তোর কাছেই পরে থাকত।ভালো
সম্পর্ক না থাকলে কি এমন হয়?আমিও
এরজন্য তোকে আনার জন্য
জোরাজুরি করতাম না। থাক ওরা ওদের মত।
সাবিহা কি বলবে ভেবে পেল না,পরে
তাদের সাথে দেখা করবে বলে
রেখে দিল।
ও আসলে নিজেই বুঝে নি যে এই
ডির্ভোসটা ওকে এতটা নাড়া দিবে নাহলে
ও তো ঠিকই সব কিছুর জন্য তৈরি
ছিল,কিভাবে সব কিছু ম্যানেজ করবে সব
ভেবে রেখেছিল আর এখন?ও কি
জানত যে মেহবুব ওকে ভালবেসে
ফেলবে আর এভাবে ওর জন্য দরদ
দেখাবে,এখন ও নিজেই তো মনে
মনে ওকে চায়।আজ যদি মেহবুব কঠিন
থাকতো আগের মতো তাহলে
হয়তো ওর মনও কঠিন থাকত।কেন
মেহবুব সেদিন ওকে জোর করে নি?
তাহলে তো আজ একসাথে থাকত।
কেন বুঝে নাই ওই বুড়ো মেজর, যে
সাবিহাও রাগের বশত ওকে দূরে সরিয়ে
দিছে!!
সন্ধ্যায় মেহবুবের উকিল আসলো ওর
বাসায় ডির্ভোসের কাগজ নিয়ে।সাবিহা
ভাবতেই পারছিল না যে এত তারাতারি কাগজ
আসবে।ভাবছিল এখনও হয়ত মেহবুব কিছু
একটা করবে ওকে পাওয়ার জন্য,হয়ত
আরও সময় নিবে তাই তো ওর একটা
ফোনের জন্য দুপুর হতে অপেক্ষা
করছে।কিন্তু ওর সব চিন্তায় পানি পরলো
যখন ওর ল’ইয়ার বলল যে -মেহবুব
সাহেব সাইন করে দিয়েছে,আপনিও
করে দিন।
সাবিহা কথাটা নিজ কানে বিশ্বাসই করতে
পারছিল না। ও কাগজটা হাতে নিয়ে
চোখে অন্ধকার দেখতে ছিল,কাগজটা
পড়বে কি?ওর চোখটা ভিজে
উঠছিল,শরীরও সারাদিন না খাওয়ার পরে
খারাপ লাগছিল খুব।ও তাড়াতারি কাগজে সই
করে দিল,একবারের জন্য পড়েও
দেখলো না পড়েই বা কি হবে জানে
তো ওতে কি লেখা আছে।
কোনমতে তাকে বিদায় দিয়ে এসে
বেডে শুয়ে থাকল।
মেহবুবকে একটা টেক্সট করলো
যে ও সাইন করেছে পেপারে আর ও
যেন ওকে আর ফোন না দেয়। এতে
অবশ্য ওর অভিমানই ছিল বেশি।তারপর
ফোনটাও সুইচ অফ করে রাখল।মেহবুব
ভাবছিল হয়ত সাবিহা ফোনদিয়ে কান্নাকাটি
করবে এই ফাঁকে ও সত্যিটা বলবে কিন্তু
না ওকে হতাশ করে দিয়ে শুধুই বলল ও
সাইন করে দিয়েছে।আর ফোন
দিতেও নিষেধ করেছে, এখন ও কি
করবে? নিজের জালে নিজেই আটকা
পরেছে। তারপরও ও অপেক্ষা করতে
রাজি এরপরও যদি সাবিহা কিছু না বলে তাহলে
ও নিজেই গিয়ে সব সত্যি বলে দিবে
ওকে আর নিয়ে আসবে নিজের কাছে
আপাতত ওর বন্ধুর সাথে এই পরামর্শ করল
যে কিভাবে কি করবে।
পরের দু তিন দিন দুজনের উপর প্রচুর
ঝড় ঝাপটা গেল দু পরিবারকে সামলাতে।
মেহবুবের মা বা ওর উপর নাখোশ হয়ে
কথাই বন্ধ করে দিল, সাবিহার মা অনেক
কান্নাকাটি করল,সাবিহার যদি কোন ভুল হয়
যেন মেহবুব নিজ বুদ্ধিতে ওকে মাফ
করে।কিভাবে বলে যে মা সব ভুল
আমার!! তারপরও কিছু বলল না যে প্লিজ
তোমরা একটু ধৈর্য্য ধরো,আমি
সাবিহাকে আনবো।
ওদিকে সাবিহা নিজেকে সব কিছু থেকে
গুটিয়ে নিয়েছে সবার থেকে
যোগাযোগ অফ রাখছে,মা
বোনকেও বলেছে ওকে যেন
কিছুদিন ডিস্টার্ব না করে, একা থাকতে
চাচ্ছে কিছুদিন , শুধু মাএ হসপিটাল আর ক্লাস
নিয়ে পরে আছে।খাওয়াদাওয়াও করছে
না ঠিকমতো।বারবার ভাবত হয়ত মেহবুব
ওর সাথে কথা না বলতে পেরে বাসায়
ছুটে আসবে নয়ত হসপিটালে আসবে।
হসপিটাল থেকে ফেরার পথে বারবার
চারপাশ দেখত যে মেহবুবের গাড়ি
আছে কিনা।ক্লাসের মধ্যে বসেও বার
বার জানালা দিকে চোখ ফিরাত যদি হঠাৎ
মেহবুবের মুখটা দেখতে পায়!! নাহ
আসে নি ও এতে সাবিহার অভিমান আরও
বেড়ে গেল মেহবুবের প্রতি।
এদিকে মেহবুব সাবিহার খবর জানার জন্য
ব্যাকুল প্রায় ফোনও দিতে পারছে না
আর বাসায়ও যেতে পারছে না শুধু
হসপিটালের বাইরে ওর অফিসের একটা
গাড়ি নিয়ে ওকে দেখে আসলো।
একয়দিনে পুরো শুকিয়ে গেছে ও,
করলো কি ওর ছোট বোনকে সব
বলল,সে তো রেগে মেগে ওকে
মারতে চলে আসলো,পুরো পরিস্তিতি
শুনার পর শান্ত হলো।কথা দিল যে ওকে
হেল্প করবে আর ওর কথা মত কাজও
করবে।পরে মেহবুব ওকে ভালো
মতো বুঝিয়ে সাবিহার বাসায় পাঠাল এটা জানার
জন্য যে ও কি ভাবছে এখন।
সাবিহা তো এদিকে ওর বোনকে
পেয়ে খুব খুশি।খুব গল্প করল তবে
অনেকক্ষন ধরে ও উসখুস করল যে
কিভাবে মেহবুবের একটু খবর পাবে,
ওকি আদৌ চলে গেছে!?একবারও দেখা
করল না ওর সাথে??পরে ওর বোন
নিজেই বলা শুরু করল,
-ভাবি জানো ভাইয়া না ইদানিং অনেক রাত
করে বাড়িতে ফেরে আর খুব
ভোরে বের হয়ে যায়, খায়ও না
ঠিকমতো জানো?আবার মাতলামি করা শুরু
করছে।
শুনে সাবিহার বুকটা ছাঁত করে উঠল।কি!
মেহবুব এসব বাজে কাজ আবার শুরু
করছে?ও জানে এবার ওর জন্যই
লোকটা খুব কষ্ট পাচ্ছে। মুখে কিছু
বলল না অবশ্য। ও ওতো শুনতে চায়
মেহবুবের কথা।
-ভাইয়ার তো ফ্লাইটেরও ডেট ফিক্সড
হয়ে গেছে।কেন তোমাকে বলে
নি?
-নাহ তার সাথে কথা হয়নি
-পরশু যাবে ভোরে।না জানি ওখানে
গিয়ে কি করে।
পর্ব- ১৪…শেষ.
অভিশপ্ত বাসর

পরের দিন বিকেলে সাবিহা হসপিটালের
জন্য তৈরি হচ্ছে এরমধ্যে বেল বাজল।
নিশ্চই পরিচিত কেউ নইলে তো আগে
দারোয়ান ফোন দিত। কে হতে পারে
ভাবতে ভাবতে দরজা খুলল, খুলে তো
পুরো হা হয়ে গেল।
মেহবুব!!একটা বিরাট গোলাপের বুকে
নিয়ে হাজির। ইউনিফর্ম পরা। বুঝল অফিস
শেষ করে সোজা এখানে এসেছে।
হাহ্ কাল খারাপ ব্যবহারের জন্য এখন মাফ
চাইতে আসছে।আবার ওর মনটা ওকে
দেখে যতটা না খুশি হলো তারথেকে
খারাপ হলো এই ভেবে যে আজতো
মেহবুব বিদায় নিতে আসছে।
-কি ব্যাপার? নতুন দেখছ?আসতে বলবা
না?
কথার ধাঁচ শুনে সাবিহার অসহ্য লাগল।
-আসুন।নতুন ভাব তো আপনিই
করছেন,কখনও তো দরজা খুলে আসার
জন্য বলতাম না।
-তখন তুমি অন্য কেউ ছিলা আর আজ
অন্য কেউ।
-তাই? ও হ্যা ভুলে গেছিলাম।
-বেরোচ্ছ না ফিরছ?
-বেরোব।নাইট আছে আজ।
-ক্যানসেল কর।
-সম্ভব না।
-তুমি বললেই হলো?আমি হসপিটালে
ফোন দিচ্ছি, তোমার ডিউটি অন্য
কাউকে দেয়ার।
-না খবরদার। আমার ইম্পরট্যান্ট পেশেন্ট
আছে।
-আমার থেকেও ইম্পরট্যান্ট?
এ উওরে সাবিহা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল
না আসলে ও থাকতে চাচ্ছে না
মেহবুবের সামনে।কখন ভ্যা করে
কেঁদে দে,মনকে বুঝাল যথাসম্ভব
নিজেকে শক্ত রাখতে হবে ওর
সামনে।
-আজ তোমার মুখ থেকে কথা ফুটছে
না কেন খালামনি?এমনি তে তো আমার
মাথা খারাপ করে ফেল।
তখন সাবিহাও পাল্টা বলল,তখন আপনার বউ
ছিলাম আর এখন না।
উওর দিয়ে মেহবুবের দিকে তাকাল, ওর
চেহারা বোঝার চেস্টা করল।
-তা তো ঠিকই তা এরজন্য কি আজ দূরে
গিয়ে বসেছো?
বলেই ওর হাতটা ধরে টান দিয়ে ওর
পাশে এনে বসাল।সাবিহা কি করবে
বুঝতে পারছিল না তখন ওদিকে
মেহবুবের চোখ নাকে মুখে
খেলছিল দুষ্টুমি।তারাতারি বলল,
-আমি আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
-আসলে কি জানো তুমি সিচুয়েশন
চেঞ্জ করতে উস্তাদ। নাস্তা আমি করে
আসছি। তুমি হসপিটালে ফোন দাও, কাল
আমি চলে যাব অন্তত আমার জন্য আজ
ডিউটি ক্যানসেল কর।
-আচ্ছা।
সাবিহা উঠে গিয়ে হসপিটালে ফোন দিল।
কথা বলছিল তখন মেহবুব পিছন থেকে
এসে ওকে জরিয়ে ধরল।কি শুরু করছে
এইলোকটা!! আগে রোমান্টিকতা করত
মানা যেত কিন্তু এখন আলাদা হয়ে যাবার
পর সব রস উঠে আসলো বুড়োর
মনে।জানে যে এখন ছাড়ানোর চেস্টা
করলে মেহবুব আরও জালাতন করবে।
একয়েক মাসে ওকে দেখে এটা
বুঝছে যে ওকে যেটা মানা করা হয় ওটা
ও জেদ দিয়ে আরও বেশি করবে।
পিছন ফিরে বলল,
-আজ আপনি খুবই রোমান্টিক মুডে?
-হ্যা খুব।ব্যাচেলর লাইফ আবার ইনজয়
করছি তো তাই।
-ওহ হো তাই? তা ব্যাচেলর লাইফ ইনজয়
করতে মানুষ পুরাতন বউয়ের কাছে যায়
নতুন দেখলাম।
-আমার অনেক কিছু দেখা তোমার
এখনও বাকি।
-যা দেখেছি তাও বা কম কি?কাল আপনি
আমার সাথে যেমন বিহেব করলেন
কখনই ভুলবো না।
-সরি।আসলে….
কিভাবে বলবে মেহবুব বোনের
কাছে শুনে রাগ করেছিল।
-আসলে কি?থামলেন কেন?বলেন?
কিছুই বলার নেই আপনার।আপনি এই মুখ
থেকে অনেক মিথ্যা কথা শুনিয়েছেন
আমাকে।আমি আর শুনতে চাই না।
বলেই মেহবুবের বাহুডোর থেকে
নিজেকে ছাড়ার চেস্টা করল।
-আমি কখনই তোমাকে এই মুখ থেকে
মিথ্যা শুনাই নি। কোনটা মিথ্যা বলছি বল?
-কেন আপনি বলেছিলেন না যে
আমাকে আপনি ভালবাসেন? আমাকে
কখনই ছাড়বেন না আমি যা কিছুই করি না
কেন?
-তো এতে মিথ্যাটা কোথায় পেলে?
আমার মন থেকেই কথা গুলো বলেছি।
-তাহলে আমাকে ডির্ভোস দিলেন
কেন?এখন তো আবার দেশের
বাইরেও চলে যাচ্ছেন।
-তো আমি কি করব তুমিই বল?তুমিই তো
বলেছ আমার সাথে থাকতে চাও না।আমি
কি কম জোড়াজুড়ি করেছি?কি না করেছি
তোমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য।তারপর
যখন দেখলাম আমার জন্য তোমার
কেরিয়ার শেষ হচ্ছে,তুমি কষ্ট পাচ্ছ।
এখানের লাইফ ছেড়ে চলে যাচ্ছ আমি
বাধ্য হয়ে তোমার থেকে দূরে
সরে এসেছি।কারন আমি চাই না আমার
ভালবাসার মানুষের আমার জন্য ক্ষতি
হোক।
-আপনি কেন আগে তা বলেন নি?কেন
সেপারেশন লেটার পাঠিয়েছেন?
-উহ্ সাবিহা সেটা আগেও বলেছি এখনও
বলছি যে আমি কিছু বলার আগে বা বুঝার
আগেই আমার ল’য়ার আমাকে না জিজ্ঞাস
করে লেটার টা পাঠিয়েছে।আমাকে
পরে ফোন দিয়ে বলেছে।
মেহবুবের কথা শুনবে কি ও যতই বুঝায়
সাবিহা তত চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।
-প্লিজ অন্তত আজ কেদঁ না।আমার দিকে
তাকাও।তোমার এমন অবস্থা হলে আমি
ওখানে গিয়ে কিভাবে থাকব।
-আপনি পারবেন আমি জানি।
-আমি পারব না।
এভাবে মেহবুব ওকে অনেক
বুঝাল,পরে যখন ও শান্ত হয়ে এল
ফ্লোর থেকে উঠতে উঠতে বলল,
-আমি উঠি আজ আমাকে বাসায় যেতে
হবে সাবিহা।গোছগাছ পুরো হয়নি
এখনও।
সাবিহা উওরে শুধূ ওর দিকে ফ্যাল ফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকল বসা থেকে উঠল
না।কাছের মানুষটার এভাবে বিদায় দেবার
সময় ঘনিয়ে আসল!!মেহবুবের হাত
ধরে জিজ্ঞাস করল,
-আর কবে ফিরবেন?
-জানি না হয়তো ছুটি ছাটায় হবে আসা।
-আসলে আমার সাথে দেখা করবেন না?
সাবিহার এই প্রশ্নে ও অবাক হলো।
-তুমি করতে রাজি হবা?
-কেন না?আমাকে ঘুরতে কে নিয়ে
যাবে, ফুচকা কে খাওয়াবে?আমার হাতের
পাকোড়া আর কে খাবে?
মেহবুব ওকে জরিয়ে ধরে বলল,
-সাবিহা তুমি কি আমাকে ভালবাসো?
মেহবুব এখনও অপেক্ষা করছে
মেহবুব এখনও অপেক্ষা করছে ওর হ্যা
এর।
-জানি না।
তারপর ওকে ছেড়ে দিয়ে অনেকটা
অভিমান নিয়েই বলল,-আচ্ছা আমি চলি
ভালো থেক।
এই বলে মেহবুব মনে অনেক
ক্ষোভ নিয়ে ওর বাসা থেকে
বেরিয়ে এল।পিছন ফিরে তাকাচ্ছিল বার
বার হয়ত সাবিহা আসবে, আসলো না।কার
পার্কিং ও গাড়িতে উঠতে যাবে ওমনি সাবিহা
ওকে পিছন দিক হতে এসে জোরে
জরিয়ে ধরল,হঠাৎ এভাবে টাল সামলাতে না
পেরে গাড়ির সাথে মেহবুব জোরে
ধাক্কা খেল।
-আরে করছ কি সাবিহা?
-প্লিজ আপনি যাবেন না, আমি আপনাকে
ছাড়া থাকতে পারব না।আমি আপনাকে
যেতে দিব না যদি যান আমাকেও নিয়ে
চলুন।
বলেই আবার জোরে জোরে কান্না
শুরু করে দিল ও মেহবুবকে জরিয়ে
ধরে।মেহবুব তো এটাই চাইছিল এতক্ষন
ধরে। তখন অনেকটা খুশি মনে বলে,
-আরে কি করছ?আমার ড্রাইভার, দারোয়ান
সবাই দেখছে।শান্ত হও।
সাথে সাথে সাবিহা ওকে ছেড়ে চারপাশ
তাকাতে লাগল,দেখল দারোয়ান আর
ড্রাইভার মজা নিয়ে দেখছে ওদের। ও
লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে
আসলে বেশি ইমোশনে পরে ওর
কিছুই খেয়াল ছিল না।মেহবুব বাসা হতে
বের হবার পর ও বের হয় দেখে ও
লিফটে উঠে গেছে,মেহবুব কে
একটু ঠিকমতো দেখতেও পারল না
শেষ মুহূর্তে!!!তখন আর কিছু না
ভেবে সিড়ি দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে
নামে।এখন নিজের চুল নিজের ছিড়তে
ইচ্ছা হচ্ছে।
দেখল মেহবুব অবাক হয়ে ওর দিকে
তাকিয়ে আছে,
-কি হলো?আমি কি যাব না তাহলে?বলছে
আর মুচকি মুচকি হাসছে।
মনে মনে বলল-ওহ্ আল্লাহ এই
লোকটা কি কিচ্ছু বুঝবে না জীবনে!!
সব মুখ দিয়ে বলতে হবে?সাথে সাথে
দৌড় দিয়ে চলে আসল ও।জানে যে
মেহববু ওর পিছন পিছন ঠিকই আসবে।
ওদিকে মেহবুব ও আসছে,-যাহ্ বাবা যাও
একটু ইগো ভেঙে বলা শুরু করলো
এখন আবার পালিয়ে বেড়ানোর পাগলামি
শুরু করছে।না জানি এর পালানো রোগ
কবে সারবে??
তাড়াতারি ওর পিছন পিছন গেল ও। গিয়ে
দেখে সাবিহার ফ্লাটেরর দরজা খোলা,
ঢুকে নিজেই দরজা লাগিয়ে দিল।ড্রইং
রুমে নেই ও।,খুজেঁ পেল
বেডরুমে,বিছানায় চুপচাপ বসে আছে।
ওকে দেখে আরেকদিকে ফিরে
রাইল,কাছে গিয়ে বলল,
-কি খালামনি নিচে কি যেন বলতে ছিলা?শুনি
নি ঠিকমতো, আবার বল তো।
-পারব না।
-বাবাহ্ বাইরের লোকের সামনে
বলতে পার আর নিজের ঘরের মধ্যে
বলতে পার না?আরে বল লজ্জা
পেয়েও না। তোমার স্বামীই তো।
-মেমরি সব লোপ পেয়েছে আপনার।
আপনি আমার স্বামী না।
-আমার মেমরি কিছুই লোপ পাই নাই। আচ্ছা
তুমি কি দিন দিন অশিক্ষিত হয়ে যাচ্ছ?
আহারে আমার তো তোমার স্টুডেন্টস
আর পেশেন্টদের চিন্তা হচ্ছে।
সাবিহা রাগে লাফিয়ে উঠল,
-কি বললেন?আমি অশিক্ষিত?
-তো আর কি?সামান্য একটা কাগজ পড়তে
পার না তুমি।
-কোন কাগজ পড়তে পারি নি? কি বলছেন
আপনি এসব?
-যাও তো ডির্ভোস পেপার নিয়ে আস,
এনে পড়।
-তা এনে আর কি হবে…. বলতে
বলতে সাবিহা মেহবুবের দিকে
তাকাল,ওর সন্দেহ হল।উঠে গিয়ে
আলমারি খুলে পেপার বের করে
পড়তে লাগল,পড়া শেষ হবার পর
মেহবুবের দিকে কড়া দৃস্টিতে তাকাল,
বিছানায় বসে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে
আর পা নাড়াচ্ছে।
-এগুলো কি? আপনার প্রপার্টি পেপার?
-ওয়াও পড়তে পারছ তা হলে,গুড ভেরি
গুড।এই তো আমার বউ আবার শিক্ষিত
হয়ে উঠেছে।এবার আর কোন ভয়
নেই আমার।
-বাজে কথা ছাড়ুন আর বলুন এর মানে কি?
এই পেপার কোথা থেকে আসলো?
-আসলে আমাদের ডির্ভোসই হয়নি।
আমি আমার উকিলের কাছে নতুন প্রপার্টি
পেপার সাইন করে পাঠিয়েছিলাম,আমি
সিওর ছিলাম যে তোমার যা মনের অবস্থা
তুমি আমার সাইন দেখেই শকের বসে
সাইন করবা।
-এই লুকোছাপার কি মানে?আপনি জানেন
আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি?
সাবিহাকে নিজের পাশে বসিয়ে বলল,
-এর কারন হলো ম্যাম আপনি তো
আপনার মনের খবর জেনেও
বলছিলেন না। আমি তো তোমাকে
বলছি ভালবাসি কিন্তু তুমি নিজে মুখ দিয়ে
বলছিলা না তাই আমিও জেদ করেছি
তোমাকে বলিয়ে ছাড়ব।অবশ্য আমি
সিওর ছিলাম যে আমার পিচ্চি ম্যাম এই
বুড়োর প্রেমে পরেছে।
মন খারাপ করে সাবিহা জিজ্ঞেস করল,
-কি বা হলো তাতে!!আমরা তো আবার
এক হয়েও হলাম না, আপনি তো কাল
চলে যাচ্ছেন।
-কে বললো যাচ্ছি, আমি সেটা
ক্যানসেল করেছি পরদিন অফিসে
গিয়েই,একটু প্রব্লেম হচ্ছিল ক্যানসেল
করায়। এই যে এ কদিন ব্যস্ত ছিলাম তা
বাহিরে যাবার ব্যস্ততা না, এটা ক্যানসেল
করার জন্য বেশ দৌড়াতে হয়েছে
আমার।
-কি তাই?আপনি এ নিয়ো ব্যস্ত থাকায় বাসায়
দেরিতে ফিরতেন?
আরেকটা কথা আপনি যদি এতই ব্যস্ত
তাহলে ড্রিংক্স কিভাবে করতেন?
-আরে বলো না, হয়েছে কি আমি
ছোটুনের হাতে তোমার খবর নেয়ার
জন্য পাঠিয়ে ছিলাম বুঝিয়ে সুঝিয়ে,কারন
তোমার তো ফোন অফ।আমারও
যাওয়ার খবর শুনিয়ে তোমাকে পাগল
করতে চাইছিলাম কিন্তু ওই বলদ বেশি
বলতে গিয়ে এত বলছে যে তুমি রাগ
হয়ে গেছ।আসলে ফোনের রাগটা
তোমার উপর ছিল না, ওর উপর ছিল।
-সোজাসুজি বললেই পারতেন?আমিও
এতটা কস্ট পেতাম না আপনার যাওয়ার খবর
শুনে।আমার মাথাই পুরো খারাপ হয়ে
গিয়েছিল এ কদিনে। অস্থির হয়ে
গেছিলাম আমি,জানেন আমি বারবার
হসপিটালের বাহিরে খুজছি এই ভেবে
যে আপনি আসবেন কিন্তু আসেননি।
– আমি ছিলাম তো।
-কোথায়? আমি তো দেখি নি।
-অন্য গাড়ি ছিল,তাই তুমি চিন নি।
-কোন মানুষ এমন করে? আপনি যে কি?
জানেন আপনার এই পাগলামিতে মা বাবা কত
কষ্ট পেয়েছে।
-আচ্ছা আমি যেকি তা তো আমার সাথে
থাকা শুরু করলেই বুঝবা।আর তাদের এখন
সব খুলে বললেই খুব খুশি হবে।এবার
তুমি একটু বলো তোমার কেমন ফিল
হচ্ছে?
-খুব খারাপ!! ফাইনালি একটা বুড়োর
প্রেমে পরলাম সারাজীবনের জন্য।
-আমি বলছি না আমি ছাড়া তোমার গতি নেই।
বলে দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে
হাসতে লাগল।
-আচ্ছা শোন আমি বাসায় যাব ওদিকে নাজানি
কি অবস্থা মায়ের,কাল আমি তোমাকে
নিতে আসব।রেডি থেক।আর হ্যা আমার
দেয়া শাড়িটা পরো।
-আচ্ছা আর একটু সময় থাকলে হত না?
বলেই সাবিহা লজ্জায় অন্যদিকে ফিরে
রইল।আজ কি হলো ওর?একের পর এক
লজ্জাজনক কাজ করছে!!
মেহবুব হেসে বলল,আজকের রাতটা
থাকো কাল থেকে একা থাকতে
চাইলেও দেব না।ওদিকে বাসার সবাই
আমার যাওয়ার খবরে অস্থির তাদেরও
তো বুঝাতে হবে না কি?আমি ফোন
দিব।এবার অন্তত ফোনটা অন রেখ।
রাতে ও চলে যাবার পর সাবিহার তো ঘুম
পুরো উরে গেছে,সময় মোটে
কাটছেই না ওর। ইচ্ছা করছে দৌড়ে ও
বাড়িতে চলে যায়।ইস্ মেহবুবটা পারত না
ওকে নিয়ে যেতে!!যাইহোক পরদিন
দুপুরবেলা মেহবুব এসে নিয়ে গেল।
মেহবুব ওর দেওয়া পাঞ্জাবিটা পরছে।
দেখে খুব ভাল লাগল ওর।
-এটা তো ছুড়ে ফেলেছিলেন।
আপনার পছন্দ হয়েছিল না।
-হুম আবার কুড়িয়ে নিলাম যেমনটা
তোমাকে খুঁজে নিলাম।তোমাকে
পছন্দ করতে পারি তাহলে তোমার
পছন্দকে কেন না?
সাবিহা ওর দিকে ফিরে হাসল শুধু।মেহবুব
গাড়ি চালানোয় মন দিল।
পৌছে দেখে ওর মা বাবা তিতুনরা সবাই
এসেছে।সারাদিন কাটল বেশ ভালয় ভালয়।
মেহবুব বাসায় যাবার পর যে ব্যস্ত হলো
আর ওর দিকে খেয়াল নেই,অবশ্য ও ও
ব্যস্ত।শাশুড়ি মা যেন ওকে বুকের
মধ্যে নিয়ে রাখে এমন অবস্থা। রাতের
বেলা খাবার পর মেহবুবের দেখা পেল
তাও পাশে বসল না, অন্য সোফায় গিয়ে
বসল।সাবিহা তো ওর সাথে কথা বলার জন্য
মুখিয়ে আছে কিন্তু মেহবুবের কোন
ভ্রুক্ষেপ নেই,সে তিতুনদের নিয়ে
আছে।হঠাৎ ওর ফোনে মেহবুবের
এসএমএস,-“কি ব্যাপার মুখ গোমড়া কেন?
ক্লান্ত নাকি?তাহলে কিন্তু চলবে না
আজ।”
“আপনি সবাইকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন
আমার দরকার নেই।আমি গেলাম আমার
বাসায়।”-ও রিপ্লাই দিল।
“তুমি রুমে না গেলে আমি কিভাবে যাই?
তাহলে সসবাই কি ভাববে বল?আর রাগ কর
কেন?যাও আলমারিতে একটা শাড়ি আছে
ওটা পর।আমি আসছি।”
রুমে এসে সাবিহা শাড়ি নেবার জন্য
আলমারি খুলল,শাড়ি দেখেই ওর মেজাজ
গরম হয়ে গেল।তারপরও ফ্রেশ হয়ে
পরল যাইহোক লোকটার শখ করে ওর
জন্য আনছে।
মেহবুব কিছুক্ষন পর রুমে ঢুকল বেশ
খোশ মেজাজে,ঢুকেই সাবিহার রাগী
মুখ দেখে চুপসে গেল।দরজা
আটকাতে আটকাতে বলল,
-কি হলো মারবা নাকি?দেখ আজ কিন্তু
আমাদের বাসর রাত।খুন টুন করো না
আবার। অনেক ধকল গেছে আমার আর
বিরহের জালা সইতে পারব না।
সাবিহা রাগ ধরে রাখবে কি ওর কথা শুনে
হেসে দিল।
-এখন আবার হাসে।পালানোর প্লান
করছো নাকি?
-মোটেই না। আপনার চয়েস দেখে
রাগ করছি।আপনি এটা কি কালারের শাড়ি
এনেছেন?নতুন বউকে কেউ কালো
রংয়ের শাড়ি দে?
-আসলে দোকানদার বলল….
-চুপ একদম চুপ।আপনার মাথায় যে
এমনিতেই গণ্ডগোল আছে আমি
আগেই বুঝছি।যে লোক দিনরাত
ডিসকভারি চ্যানেল দেখে তাকে দিয়ে
আর কিবা আশা করা যায়!!?
-বাড়ে আজ আর শাড়ির কালার দেখে কি
হবে আজতো দেখব তুমি আমার মনে
কতটুকু কালার ছড়াতে পার।
সাবিহা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল পারল না
মেহবুব ওর ঠোট ইতিমধ্যে পুরোটা
দখল করে নিয়েছে।দীর্ঘ দশমাস পর
মিলন আর কি কথা বলা যায়???
সমাপ্ত।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত