“শাড়ির আড়ালের পেট আর কোমর দেখিয়ে লোভাতুর দের ইম্প্রেস করতে পারবে, আমাকে নয়। বুঝলে মিস বিভাবরী??”
কথাটা কানে যেতেই বিভাবরীর হাতে থাকা শাড়ির অংশটুকু টুপ করে পড়ে যায়। টলমল করা অবাক চোখ দুটো সামনের মানুষটা কে দেখছে। এই কি সেই ধ্রুব যাকে সে চার-চারটে বছর ধরে ভালোবেসে আসছে, যাকে নিয়ে রূপকথার দেশে পাড়ি জমাতে চাইছে, তার সর্বস্ব দিতে চাইছে…!!
— না মানে, তুমি চোখের পানি মুছতে বারবার শাড়ি ইউজ করছো। যার কারনে তোমার পেট.. এমনকি, পেটের লাল রঙা তিলটাও দেখা যাচ্ছে।
বিভাবরী ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারছে না। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছে। ধ্রুব বক্স থেকে একটা টিস্যু বের করে বিভাবরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
— আমি তাহলে উঠছি। নিজের সিদ্ধান্ত তোমাকে তো জানালাম-ই। এখন বাকিটা তোমার ব্যাপার।
বিভাবরীর হাতে টিসু টা গুঁজে দিয়ে ধ্রুব চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। পেছনে তাকালে সে ঠিক দেখতে পেত, বিভাবরী কতটা মায়াভরা দৃষ্টিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
ধ্রুব চলে গেলে বিভাবরী তার দেওয়া টিসুটা দিয়ে নাক পরিষ্কার করে নেয়। মনে মনে তাকে একটা ভয়ঙ্কর কঠিন গালি দিয়ে সেও বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। বাড়ি গিয়ে বিছানায় গা দিতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় বিভাবরী। আর ঘুম ভাঙে তার মায়ের ডাকে। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে তার মা মুখে বিশাল বড় হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে ঘুম জ্বড়ানো সুরে বলে,
— কটা বাজে মা??
— তিনটে বাজতে চললো।
বিভাবরী ধড়ফড় করে উঠে বসে। সে ধ্রুবর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল দশটার দিকে। সেখান থেকে এসেই ঘুম দিয়েছিল। আর সেই ঘুম ভাঙলো এখন।
তার মা মুচকি হেসে বললেন,
— তুই ফ্রেশ হয়ে আয়, মা। ধ্রুবর মা ফোন করেছিলেন। তারা রওনা দিয়ে দিয়েছে।
কথাটা বলে তার মা হাতের শাড়িটা বিছানায় রেখে নিজের কাজে চলে যান। বিভাবরী শাড়িটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। একটু আগেই ধ্রুব তাকে স্পষ্ট ভাষায় জানালো, সে বিভাবরী কে বিয়ে করতে পারবে না। শাড়ি পড়া নিয়ে কত নোংরা একটা কথা পর্যন্ত শুনিয়ে দিল। অথচ এই ছেলেটার জন্য ফের তাকে শাড়ি পড়তে হবে।
বিভাবরী ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তার বাবা তার রুমে। বিভাবরী কে দেখে তিনি কপাল কুঁচকে বললেন,
— মামণি, তুমি আজ উল্টো জামা পড়েছো। তোমার দুই পায়ে দুই ধরনের জুতো। এমনকি, তোমার ডান কানের দুল নেই। তোমায় বড্ড ছন্নছাড়া লাগছে, মামণি। কেন বলো তো??
বাবার মুখে এই ধরনের কথা শুনে বিভাবরী বেশ লজ্জা পেল। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই তো! সে আজ উল্টো জামা পড়েছে। সে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে ফেললো। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার! ধ্রুব নামক ঝড়টা তার জীবনের সব ছন্দ নিয়ে পালিয়েছে। এলোমেলো করে দিয়েছে তার জীবনটা।
বিভাবরীর বাবা আদনান সাহেব তার মাথায় হাত রেখে বললেন,
— ইউ নিড নট টু ওয়ারি, মাই চাইল্ড! ওরা তো শুধু দেখতে আসছে। বিয়ে তো আর হচ্ছে না। জাস্ট চিনিপান হবে। বিয়ে তোমার ইচ্ছে মত সময়েই হবে।
বিভাবরী কিছুক্ষণ ভেবে স্মিত হেসে উত্তর দেয়,
— পরে কেন?? আমি বিয়ে করতে রেডি বাবা। তুমি চাইলে আজই বিয়ে করতে পারবো।
তার বাবা অত্যন্ত খুশমেজাজে চলে যায় তার রুম থেকে। কিছুক্ষণ পর তার মা এসে তাকে শাড়ি পড়ায়। বেগুনি রঙের শাড়িটা কোমরে গুঁজে দিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে তার মা বললেন,
— বুঝলি বিভু, ধ্রুব হলো হিরের টুকরো রে! তার সাথে তুলনা করতে আরেকটা ধ্রুবই লাগবে। তুই খুব সুখে থাকবি মা।
বিভাবরীর বুক ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু সে কাঁদবে না। চোখ-মুখ শক্ত করে লম্বা ঘুমটা টেনে তাদের সামনে যায়। ধ্রুবর দিকে তাকাতেই তার বুকের বাম পাশে ধ্বক করে উঠলো। ফর্সা গালে হালকা চাপ দাঁড়ির গম্ভীর ছেলেটা বিষন্ন দৃষ্টিতে কফির মগে সীপ দিচ্ছে। বিভাবরী তার সামনে যেতেই সে বিস্ফোরিত তাকায়। ধ্রুবর মা বিভাবরী কে বসতে বললে সে বসার আগেই ধ্রুব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
— বিভাবরী, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল। তুমি কি একটু…
ধ্রুব কে থামিয়ে দিয়ে তার বাবা বলে উঠলেন,
— কথা বলার অনেক সুযোগ পাবে, ধ্রুব। এখনি কেন??
— ইটস্ আর্জেন্ট!
বলেই ধ্রুব হনহন করে উঠে চলে যায়। বিভাবরী তার পিছু গিয়ে দেখে সে ছাদের কার্নিশ ধরে সিগারেট ফুঁকতে ব্যস্ত। বিভাবরীর মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে। ইদানিং একটু টেনশন বা চিন্তায় থাকলেই এমন হয়। খুব করে মাথা ঘুরে…
ধ্রুব পেছন না ফিরেই সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বললো,
— তোমাকে কি বলেছিলাম আমি??
বিভাবরীর মনে হচ্ছে সে এক্ষুণি ফ্লোরে পড়ে যাবে। মাথা ফাটিয়ে ছাড়বে। ভয়ঙ্কর রক্তারক্তি কান্ড ঘটলেও ঘটতে পারে…