তারে আমি চোখে দেখিনি ! সিজনঃ-2 !!

জীবন থেকে আজ ২০ টা বছর চলে গেলো। আর এই ২০টা বছরে সব কিছুরই পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনুভব আপনার মায়াও বদলে গেছে। কিন্তু আপনাকে ভুলতে পারেনি। আজও সেই একই ভাবে আপনাকে আপনার মায়া ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে। আপনি ফিরে আসবেন না যেনেও আপনার জন্য অপেক্ষা করে। আপনার প্রত্যেকটা কথা এখনো মায়ার কানে বাজে। আপনার জন্য মায়া প্রতিটা রাতে কাঁদে।যেই কান্নাগুলো কারও দেখার নয়। আপনার স্মৃতির ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে না শুলে মায়ার ঘুম হয় না। আপনি যে মায়ার ইহকাল, পরকাল সবটা জুড়ে আছেন। পারেনি মায়া স্বার্থপরের মতোন অন্য কারও সাথে ঘড় বাঁধতে। আপনি জেলে যাবার পর অনেক বার মায়া গিয়েছিলো আপনাকে দেখতে কিন্তু আপনি করেন নি দেখা। বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন এই মায়াকে।শেষ দেখাতে বলে ছিলেন অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে।কারণ জীবনের এই দীর্ঘ সময়টা একা কাটানো বড়ই কঠিন। আপনার কি করে মনে হলো,,?? আমি অন্য কারও সাথে সংসার করবো? আমি যে আজও আপনাকেই ভালোবাসি।আপনাকে মিস করতে করতে প্রত্যেকটা দিন আগের দিনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। বাড়ির সকলের সাথে আপনি দেখা করেন শুধু আমি ছাড়া। আপনার কি এখনো মনে হয় আমার বিয়ের বয়স আছে? কিভাবে বোঝাবো আপনাকে আমি বিয়ের যৌবনটা যে এখন আর আমার নেয়। আমাদের মেয়ে আয়াত! এবার ১৯ শে পা রাখলো।এখন তো ওর বিয়ে দিতে হবে।আমি জানি স্নিগ্ধাকে আপনি খুন করেন নি।স্নিগ্ধাকে…

ডায়েরির পাতায় কলমটা থেমে যায় মায়ার।বাইরে থেকে আওয়াজ আসে।মাহির আর মায়ার মেয়ে আয়াত ডাকছে মায়াকে।

আয়াতঃ মাম্মাম কোথায় তুমি? দেরি হয়ে যাবে তো।

মায়াঃ হ্যাঁ, আসছি মা! নিকাবটা বাঁধলে হয়ে যায়।

ডায়েরির পাতাটা বুজিয়ে, চোখ-মুখ মুছে, দ্রুত নিকাবটা বেঁধে নেয় মায়া।তারপর হাতে,পায়ে মোজা পরে বাইরে এসে দাড়ায়। আয়াতও তৈরি। দু’জনের আপাদমস্তক বোরখার আবরণে ঢাকা। আজ আয়াত তার মায়ের সাথে ভার্সিটিতে এ্যাডমিশন নিতে যাচ্ছে।আয়াত জানে না তার বাবা বেঁচে আছে।কারণ মায়া চায় নি আয়াতকে সত্যিটা জানাতে।সত্যিটা জানলে যে আয়াত কস্ট পাবে।

বাইরে গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে সোহাগ মির্জা। হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আয়াতঃ কি হলো দাদু তোমার দেরি হচ্ছে বুঝি?

সোহাগঃ হুমমম।একটা জরুরি মিটিং আছে আমার।

আয়াতঃ ঠিক আছে তুমি অফিসে চলে যাও।মাম্মাম আর আমি রিক্সায় চলে যাচ্ছি।

সোহাগঃ নাহ নাহ সেটা কিভাবে হয়?

আয়াতঃ আরে যাও না দাদু।আমার ভার্সিটি এক রাস্তায় আর তোমার অফিস অন্য রাস্তায়।আমি চায় না আমার জন্য তোমার মিটিং এর ক্ষতি হোক।

সোহাগঃ কিন্তু দাদু ভাই?

আয়াতঃ কোনো কিন্তু না।তুমি যাও তো।
সোহাগকে ঠেলে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় আয়াত।

তারপর টাটা দিয়ে সোহাগকে চলে যেতে বলে।আর বাড়ির সকলকে সালাম দিয়ে আয়াত তার মায়ের সাথে রিক্সায় করে ভার্সিটিতে চলে আসে।ভার্সিটিতে ঢুকে মায়া আর আয়াত ঘুরে ঘুরে দেখছে সবকিছু। বিশাল এড়িয়া।

মায়াঃ আয়াত!

আয়াতঃ জ্বি মাম্মাম!

মায়াঃ এইখানে তুই আর আমি পড়বো?

আয়াতঃ হ্যাঁ, মাম্মাম।সুন্দর না?

মায়াঃ হুমমম।খুব সুন্দর। আজ যদি তুই না থাকতি তাহলে আমি শিক্ষার সুখটা উপলব্ধি করতে পারতাম না।তোর জন্যই সব সম্ভব হয়েছে।

আয়াতঃ কি যে বলো না মাম্মাম! আজ তোমার নিজ যোগ্যতায় তুমি এতোদূর এসেছো।তাছাড়াও তোমার ব্রেন্ড খুব ভালো।

মায়াঃ হয়েছে হয়েছে মাম্মামের আর প্রশংসা করা লাগবে না।চলো….এগোয়।

দুজনে গিয়ে এ্যাডমিশন হলের লাইনে দাঁড়ায়।লম্বা লাইন সে কি ভীষণ ভীর।যাইহোক আগাতে আগাতে আয়াত আর মায়া কিনারায় চলে এসেছে।এরই মধ্যে পেছনে থেকে একজন অফিস কর্মচারি এসে লাইনে দাড়ানো সবাইকে সরে যেতে বলছে।জায়গাটায় স্প্রে মেরে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন কোনো ভিআইপি পার্সোন আসবে। যার জন্য এমন ভরা লাইন ভেঙে তার আসার জায়গা করে দিচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে আসে।পড়নে ছোটখাটো একটা স্কার্ট।দু’পাশ থেকে তার গার্ডরা খানিকটা জায়গা করে রেখেছে যেন কারও স্পর্শ না লাগে।কোমড়টা হেলিয়ে দুলিয়ে মেয়েটা অনেক ভাব নিয়ে সামনে চলে আসে।সব মানুষ দূরে সরে গেছে শুধু মায়া আর আয়াত ছাড়া।কারণ তারা দু’জন কিছুই খেয়াল করেনি।এ্যাডমিশন ফরম পূরণ করতে গিয়ে মায়া খেয়াল করে কলমে কালি পড়ছে না।তাই কলমটা ভালোভাবে ঝাকায়।আর ঠিক তখনই মেয়েটা মায়ার পেছনে এসে দাড়ায়। কলমের কালি ছুটে মেয়েটার সারা মুখে আর বুকে বিস্রি ভাবে লেগে থাকে। যার কারণে মেয়েটা খুব রেগে যায়।

হে ইউ? তোমার এত্তবড় সাহশ আমার গায়ে কালি ছুড়েছো? তুমি জানো আমি কে?

বলেই মায়াকে একটা থাপ্পড় দিতে যায়। আর আয়াত মেয়েটার হাত ধরে বসে।

আয়াতঃ তুমি যেই হও না কেন আমার মাম্মামকে মারার অধিকার তোমার নেয়।

মাম্মাম? ট্যিসু দিয়ে মেয়েটা মুখের কালি মুছে নেয়।তারপর হাহাহা।মেয়েটা সহ তার সকল গার্ড হেসে দেয়। তারপর মেয়েটা হাসতে হাসতে বলে, নিশ্চয় তোমার মাম্মাম অশিক্ষিতা, গেও। কোথা থেকে যে এসব বাবা-মা আসে যারা কোনো মেনার্স জানে না।এদের ছেলে-মেয়ে কি শিখবে।আর পোষাক দেখে তো মনে হচ্ছে একজন দাদি আম্মা আর একজন খালাম্মা।কি ঠিক বলেছি না? মেয়েটা তার গার্ডদের কাছে জানতে চায়। আর গার্ডরা হাসতে হাসতে বলে, হ্যাঁ, হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলছেন ম্যাম।

আয়াত তাকিয়ে দেখে মায়া মাথাটা নিচু করে আছে।মায়ের এই অপমান আয়াত সহ্য করতে পারে না। আয়াত জোড়ে একটা ধমক দেয়।আয়াতের ধমকের শব্দে সকলের হাসি থেমে যায়।

আয়াতঃ চুপপপপ! কিছুক্ষণ থেমে,,ভাইয়েরা আমার এটা আপনারা কি করছেন? একজন মায়ের বয়সী মহিলাকে এই বোন অশিক্ষিত, গেও বলছে আর আপনারা সেটাকে সাপোর্ট করছেন? মজা নিচ্ছেন? আচ্ছা সত্যি কথা বলেন তো আপনাদের সকলের বাবা-মাই কি শিক্ষিত? আজ যদি আমার মায়ের জায়গায় আপনাদের কারও মা হতেন তাহলেও কি আপনারা এমনটা করতেন? আমি জানি আপনাদের সকলের বাবা-মা শিক্ষিত না।তবুও তারা আপনাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন।কিন্তু আপনারা শিখেছেন কি বইয়ের পাতায়? প্লিজ ভাইয়েরা পৃথিবীর প্রতিটা মাকে নিজের মা ভেবে সম্মান করুন দেখবেন আপনার মাকেও কেউ না কেউ সম্মান করেছে।

আয়াতের কথাগুলো শুনে মেয়েটার গার্ডগুলো আয়াত আর মায়াকে ছরি বলে।ছরি বলার পর মায়া মাথাটা উঁচু করে তাকায়।আর মেয়েটা রেগে যায়।

মেয়েটা রেগে তার গার্ডদের বলে, যত্তসব! আজ মমকে বলেই তোমাদের সবকটার চাকরি খাবো।গার্ডগুলো কথাটা শুনে ভয়ে নিরব হয়ে যায়।

তারপর আয়াতের দিকে ঘুরে বলে, তোমার সাহশ দেখে আমি অবাক হচ্ছি। না হলে আমার সামনে দাড়িয়ে এইভাবে কেউ কথা বলে? তুমি জানো আমি কে?

এক্ষুনি আমি চাইলে এখান থেকে তোমার মতো জঙলী আর তোমার মাম্মামের মতোন অশিক্ষিতা জঙলীকে ভার্সিটির বাইরে ছুড়ে ফেলেতে পারি।তাছাড়াও তোমাদের পোষাকের যা শ্রী তাতেই ফ্যামেলি ব্র্যাগরাউন্ড বোঝা যায়।তোমাদের মতোন থার ক্লাস পার্সোনের সাথে আমি কথা বলি না।এতে আমার শরীরের মধ্যে গা ঘিন ঘিন করে।মেয়েটি আয়াতের দিকে সামান্য ঝুঁকে আবার বলে,
অয়াক থু কি গন্ধ! এই গরমে এইভাবে কেউ আটসাট বাঁধা বোরখা পরে? তার উপর হাত, পায়ে মোজা জড়ানো।তোমাদের দেখলেই আমার গরম লাগছে।নেক্সট টাইম আমার সামনে এই পোষাকে যেন আর কেউ না আসে।মনে থাকবে?গার্ডডের সামনে আঙুলটা উঁচিয়ে বলে মেয়েটা।

আয়াত তার মাম্মামের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে।খুব অসহায় দৃষ্টি ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে মায়া।হয়তো মেয়েটার কথাই খুব অপমান বোধ করছে।মাম্মামের হাতটা চেপে ধরে মেয়েটার মুখোমুখি দাড়িয়ে বলে আয়াত,

আয়াতঃ বাহ বোন বাহ। ভালো বলেছেন। আমাদের পোষাকে গন্ধ।আর আপনার পোশাকে পারফিউমের ঘ্রাণ।আমরা বোরখা পড়ি।হাত, পায়ে মোজা পরি।এইজন্য আমরা জঙলী।কারণ আমাদের শরীরে ঘামের গন্ধ।আর আপনার শরীরে পারফিউমের সুগন্ধ। আপরাধ নিবেন না বোন।আমি জানি না আপনি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ নাকি খৃষ্টান। শুধু জানি আমাদের এই সাজ পোষাকটা দেখে অন্তত এটা বুঝুন আমি কোন ধর্মের! আমি পর্দা করি কারণ এই পর্দা আমার অহংকার। এই পর্দা আমার রাসূলের নির্দেশ আর এই পর্দায় আমার রক্ষা কবজ।যা শুধু ইহোকাল নয়, পরকালেও পরম শান্তিময় জীবন উপহার দেয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আর আপনি কি যেন বলছিলেন তখন আমার মাম্মাম অশিক্ষিতা? আপনার ধারণাটা একদম ভুল। আমার মাম্মাম আমার সাথে লেখাপড়া করেছে।এখানে শুধু আমি নই আমার মাম্মামও এ্যাডমিশন নিতে এসেছে।

আয়াতের কথা শুনে মেয়েটা খুব রেগে যায়।
আর বলে, তুমি আবার আমার মুখের উপরে কথা বলেছো? নেহা চৌধুরীর মেয়ে লাবন্য চৌধুরী আমি।আমাকে জ্ঞান দেওয়া? আমার সাথে বেয়াদবি করার শাস্তি এবার তোমরা পাবে।এই ভার্সিটিতে তোমার আর তোমার মাম্মামের এ্যাডমিশন আর হচ্ছে না।

লাবন্যঃ কে কোথায় আছো?
লাবন্যর ডাকে গার্ডগুলো এগিয়ে আসে।

লাবন্যঃ এই মুহূর্তে এই জঙলী দু’টো কে নিয়ে ভার্সিটির বাইরে ফেলে আসো।

লাবন্যর গার্ডগুলো লাবন্যর ভয়ে না চাইতেও আয়াত আর মায়ার দিকে আগায়।তাদের স্পর্শ করার আগেই পেছনের থেকে কেউ একজন উচ্চ কন্ঠস্বরে চিৎকার করে লাবন্যকে ডাকে।লাবন্য ঘুরে তাকিয়ে দেখে মেঘ দাড়ানো।লাবন্য মনে মনে ভাবতে থাকে মেঘ কি সব দেখে ফেললো নাকি? এরই মধ্যে মেঘ এসে লাবন্যর গালে ঠাসসসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। লাবন্য গালে হাত রেখে মেঘের দিকে তাকায়।

লাবন্যঃ মেঘ?

মেঘঃ কিসের মেঘ? এই ভার্সিটির প্রফেসর আমি। সম্মান দিয়ে কথা বলো।

লাবন্যঃ তুমি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলতে পারো না মেঘ।

মেঘঃ কেন পারি না? এতোক্ষণ ধরে তোমার এসব তামাশা দেখার পরেও তোমার মনে হলো আমি তোমায় বিয়ে করবো?

লাবন্যঃ মানে?

মেঘঃ মানেটা পরে তোমার মাকে আমি জানিয়ে দেবো।তোমার মতোন মেয়েকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়।

লাবন্যঃ এটা তুমি বলতে পারো না মেঘ।আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর গতকালই তোমার মা আমার মাকে কথা দিয়েছে তোমার বিয়ে আমার সাথে হবে।তুমিও সম্মতি জানিয়েছো।

মেঘঃ হ্যাঁ জানিয়েছি।কারণ তখন তোমার এই নোংরা রুপটা আমার যানা ছিলো না।যাই হোক! এবার ফাইনাল ইয়ার চলছে না তোমার? ভালোভাবে পড়াশুনা করও! আমার থেকেও অনেক ভালো ছেলে তুমি পেয়ে যাবে।তাছাড়াও আমার যা ফ্যামেলি ব্রাগরাউন্ড।তুমি একদিনও মানিয়ে চলতে পারবে না।শেষে তোমার মায়ের পাওয়ারে আমার যে কি হাল হবে তা আল্লাহই ভালো যানে।

কথাটা বলে আয়াত আর মায়াকে ডেকে মেঘ নিজের সাথে নিয়ে যায়। আর লাবন্য রেগে তার সব গার্ডগুলোর গালে ঠাসসসস ঠাসসস ঠাসস করে একটা করে কষিয়ে থাপ্পড় মারে।

লাবন্যঃ ছাগলগুলো! তোদের জন্য হয়েছে সব।সবাইকে সরিয়েছিস কেন ওই জঙলী মা, মেয়ে দু’টোকে সরাতে পারিস নি? কি বলেছিলাম তোদের? আমার রাস্তায় কেউ থাকবে না।ওই আয়াতকে তো আমি পরে দেখে নেবো।আগে তোদের ব্যাবস্থা করে নিয়।

আমার মেহেহেঘ,,বলে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে আসে লাবন্য।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত