ফজরের নামাজ পড়ার বেশ কিছুক্ষন পর মেসেঞ্জারে একটা লম্বা মেসেস দেখে তনয়ার খুব হাসি পেলো। তাই একা একা দাড়িয়ে নিজের অজান্তেই হাসছে।
আয়াতঃ ওরকম একা একা হাসছো কেন?
তনয়াঃ এই মেসেসটা দেখো তুমিও হাসবে!
আয়াত তনয়ার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে মেসেসটা পড়ে রাগি চোখে তনয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
আয়াতঃ আজব মেয়েতো তুমি! এটা কোন হাসির বিষয় হলো? ইনফ্যাক্ট এটা যদি সত্যি হয় তাহলে ভয়নক কিছু ঘটতে পারে। ডিড ইউ ইমাজিন দ্যাট?
তনয়াঃ আরে তুমিতো সিরিয়াস হয়ে গেলা আমার মনে হয় কেউ মজা করে পাঠিয়েছে।
আয়াতঃ তনয়া এরকম মেসেস কেউ মজা করে পাঠায়? তাও এরকম সাইকো টাইপ
তনয়াঃ হুমম তাও ঠিক। তবে আমার মনে হচ্ছে মজা করেই পাঠিয়েছে।
আয়াত তনয়ার বিয়ে হয়েছে তিন বছর হলো। পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে ওদের কিন্তু তাতে ভালোবাসার কমতি নেই ওদের মাঝে। আয়াত একজন ডাক্তার, নিজের চেম্বার আছে। আর তনয়া গ্রাজুয়েসন কমপ্লিট করেছে কদিন কগে। বর্তমানে সে গৃহিনী, আয়াত বলেছিলো নিজের পছন্দ মত জব করতে কিন্তু তনয়ার নিজের ঘর সামলাতে বেশি ভালো লাগে। তনয়ার আরেকটা পরিচয় আছে তনয়া টুকিটাকি লেখালেখি করে, এফবিতেও করে আবার রিয়াল লাইফেও দুটো বই বের করেছে। এফবিতে ফ্রেন্ড ফলোয়ার অনেক। তাদের মধ্যেই একজন বোধয় এ মেসেসটা করছে। যেটা দেখে তনয়ার কাছে বিষয়টা হাস্যকর মনে হলেও আয়াতের কাছে বিষয়টা অনেক গভীর মনে হয়েছে।
মেসেসটা ছিলো—-
তনয়া, আমি তোমার গল্পের মধ্যে দিয়ে তোমার জন্য পাগল হয়েছি। হ্যা আমি তোমাকে দেখিনি, তবে কোন একদিন তোমাকে আমার চোখের সামনে বসিয়ে সারা দিন দেখার ইচ্ছা আছে। সে ইচ্ছাটা যেভাবেই হোক পূরন করবোই আমি। আমি জানি তুমি বিবাহিত আর তুমি তোমার স্বামীকে অসম্ভব রকম ভালোবাসো। এমনকি এটাও জানি তোমার বর তোমার জন্য সব কিছু করতে পারে। কিন্তু তুমি কি জানো তোমার জন্য আমিও সব কিছু করতে পারি। তোমার লেখা গল্প পড়তে পড়তে তোমার লেখার ভিতর এতটা ডুবে গেছি যে, তোমাকে নিজের সবচেয়ে কাছের লোক ভাবতে শুরু করছি। তুমি জানো আমার পুরো ঘরের দেয়ালে শুধু তোমার নাম লেখা। তোমার প্রতিটা গল্প এতবার পরেছি যে ভিতরের দাড়ি কমা পর্যন্ত মুখস্ত হয়ে গেছে।
তোমার দুটো বইয়ে প্রতিটা পাতায় আমি নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেছি। তুমি প্লিজ লেখা বন্ধ করে দাও, কারন আমি চাইনা কেউ তোমার মাঝে আমার মত ডুবে যাক। জানো অনেক ভাবে তোমার আর তোমার বরের মধ্যে সন্দেহ তৈরী করতে চেয়েছি কিন্তু সব বারই ব্যার্থ হয়েছি। তারপর তোমাদের সম্পর্কের গভীরতা দেখে বাদ দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তোমাকে পাবার আশা বাদ দিতে পারছি না। আমি জানি এটা আমার স্বপ্ন হয়েই থাকবে, কিন্তু তোমাকে পেতে না পারি একটা পুরো দিন তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে চাই। তোমাকে দেখিনি, কিন্তু আমি জানি তুমি কোথায় থাকো? কোথায় তোমার বাড়ি? এখন ভাববে কি করে জানলাম? সেটা পরে একদিন বলবো কেমন? ভয় পেয়ো না তোমার কোন ক্ষতি নাই বর্তমানে । কিন্তু তোমার আয়াতকে আমার একদমই সহ্য হয় না, তাই তোমার ক্ষতি না করলেও আয়াতের বিষয়ে গ্যারান্টি দিতে পারবো না। কারন তুমিই আমায় শিখিয়োছো যাকে ভালোবাসে তার কখনো ক্ষতি করতে নেই। তাকে সম্মান করতে হয়, তার “না” টাকেও ভালোবাসতে হয়। তাই তোমার “না” টাকে ভালোবাসলেও আয়াতকে ভালোবাসতে পারবো না।
আমার আইডি দিয়ে আমাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করো না। এটা আমার নতুন আইডি তোমাকে মেসেস দিয়েই ডিএকটিভ করে রাখবো। একটা কথা বলি তনয়া তোমায় খুব ভালোবাসি।
ইতি
#অচেনা_আমি
তনয়াঃ আয়াত এটা বোধয় আমার কোন বন্ধু মজা করে দিছে। তুমি ভয় পেয়ো তো।
আয়াতঃ তনয়া সবসময় সবকিছু এত হালকা ভাবে নেয়া উচিৎ না।
তনয়াঃ আচ্ছা আচ্ছা নিবো না। পরে যদি এমন কোন মেসেস আসে তখন সিরিয়াসলি নিবো এখন তুমি যাও তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আয়াতঃ ওকে বাট কেয়ারফুল। বাই!
তনয়াঃ (হালকা কাশি দিয়ে), তোমার মনে হচ্ছে না তুমি কিছু ভুলে যাচ্ছো?
আয়াতঃ ওপস! স্যরি! আয়াত তনয়ার মাথায় ভালোবাসার পরশ দিয়ে বের হয়ে গেলো।
তনয়া ঘরের কাজে লেগে পরলো। তনয়ার শ্বশুর আফজাল হোসেন একজন অবসর প্রাপ্ত সেনাবাহীনির অফিসার। তার বাড়ির সবকিছু সিস্টামেটিক এবং সময় মত হতে হবে। বাড়ির সবাই তার দেয়া নিয়ম অনুযায়ী চলে। তনয়ার শ্বাশুরি গত হয়েছে বছর দু হলো। এখন সকাল সাড়ে দশটা বাজে এসময় তিনি হালকা কিছু নাস্তা করেন। তনয়াকে তিনি নিজের মেয়ের মত অনেক স্নেহ করেন, তনয়াও তাকে বাবার মতই সম্মান শ্রদ্ধা আর ভালোবাসেন।
তনয়াঃ বাবা চলুন নাস্তা করে নিন।
আয়াতের বাবাঃ বৌ মা আয়াত হসপিটালে গেছে?
তনয়াঃ হ্যা বাবা অনেক আগে! আপনি খেয়ে নিন। আমি রান্না বসিয়েছি। আজ আনিকা আপু আসবে তাই একটু তারা আছে। (আনিকা আয়াতের বড় বোন, বিয়ে হয়েছে অনেক আগে তার দুটো ছেলে আছে, রায়ান আর রিমন।)
আয়াতের বাবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তনয়া রান্নার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। অনেক রান্না তার মধ্যে আজ কাজের লোকটাও আসেনি, তার নাকি জ্বর, তাই তনয়া আসতে নিষেধ করেছে। কিছুক্ষন পর তনয়ার ছোট ননদ আস্ফি এসে বললো
আস্ফিঃ আমি হেল্প করি ভাবি?
তনয়াঃ ঠিক আছে তবে সাবধানে।
তনয়া আর আস্ফি কাজে লেগে পরলো। আস্ফি এ বাড়ির ছোট মেয়ে, সবার খুব আদরের। এবার অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। তনয়ার সাথে আস্ফির বেশ মিল। এ বাড়ির সবাই খুব সুখি। আর তনয়া তো এমন পরিবার এমন স্বামী পেয়ে সবসময় উপর ওয়ালার শুকরিয়া আদায় করে। কিন্তু কথায় আছে বেশি সুখ কপালে সয় না। দুপুরের সব কাজ শেষ করে তনয়া গোসল করে বের হয়ে দেখে আয়াত ড্রেস চেঞ্জ করছে।
তনয়াঃ কখন এলে?
আয়াতঃ এই তো কেবল।
তনয়াঃ যাও গোসল করে নাও, তারপর নামাজ পড়তে যাও।
আয়াতঃ তনয়া গোসলের পর মেয়েদের চেহারায় এত স্নিগ্ধতা কোথা থেকে আসে!
তনয়াঃ( আয়াতের টাই খুলতে খুলতে ) ডাক্তার সাহেব যদি আপনার দুষ্টমি করার মুড থাকে তাহলে সেটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে বিদায় করে গোসল করে আসুন। আনিকা আপু আসছে অনেক্ষন আগে, তাদের খেতে দিতে হবে।
আয়াতঃ এত রুগির চিকিৎসা করলাম কিন্তু তোমার এই আনরোমান্টিকতার রোগের কোন চিকিৎসা করতে পারলাম না।
তনয়াঃ তারাতারি নিচে চলো।
দুপুরে সবাই খেয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো। আয়াত চেম্বারে চলে গেছে, তনয়া আসরের নামাজ পড়ে উঠতেই আবার ফোনে টুন করে মেসেস আসার শব্দ হয়! তনয়া ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আবার অন্য একটা আইডি থেকে মেসেস আসছে।
তনয়া,
সকালের মেসেটা দেখে নিশ্চই তুমি হাসিতে উড়িয়ে দিয়েছো! নয়তো ভাবছো তোমার কোন ফ্রেন্ড মজা করে মেসেসটা পাঠিয়েছে তাই না? কিন্তু বিশ্বাস করো তনয়া আমি যা বলছি সব সত্যি! আমি সত্যি তোমায় ভিষন ভালোবাসি, তুমি হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করছো না। আচ্ছা বিশ্বাস করানোর জন্য একটা গেমস খেলি? কি বলো? আমি তোমাকে এখন পর্যন্ত দেখতে পারিনি, তবে সন্ধ্যার পর ঠিক দেখবো! কিভাবে তাই ভাবছো তো? আজ সন্ধ্যায় তোমার হ্যাজবেন্ড মানে আয়াতের একটা একসিডেন্ট হবে। কি অবাক হলে? হ্যা আমি আয়াতকে চিনি! ভালো থেকো। আর হ্যা তোমায় সত্যি বড্ড ভালোবাসি তনয়া!
#অচেনা_আমি
তনয়ার এই মেসেনটা পড়ে সত্যি খুব ভয় করছে। কারন আয়াতের বিষয়ে কোন কিছু নিয়ে তনয়া কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না। তনয়া তারাতারি ফোন নিয়ে আয়াতকে ফোন করলো। কিন্তু আয়াত ফোন ধরছে না। টেনশনে তনয়ার হাত পা কাঁপছে। তনয়া ভাবছে বিষয়টা কাউকে জানাবো কি? আবার ভাবছে এটা যদি মিথ্যা খবর হয়? আবার সত্যিও তো হতে পারে? তনয়া তারাতারি নিচে গিয়ে ওর শ্বশুড়কে খুঁজতে লাগলো কারন তিনিই এসব বিষয় ভালো বুঝবে! কিন্তু নিচে গিয়ে দেখে ওর শ্বশুর নামাজ পড়তে মসজিদে গেছে। আর তিনি আসরের নামাজ পগতে গেলে একেবারে মাগরিবের নামাজ পড়ে তারপর বাড়ি ফেরেন। আনিকা আর আস্ফি ছেলেদের সাথে দুষ্টমি করছে।
তনয়াঃ আনিকা আপু তুমি রায়ান আর রিমন এর সাথে একটু বাড়ি থাকো আমি আস্ফিকে নিয়ে একটু তোমার ভাইয়ের চেম্বারে যাচ্ছি। খুব জরুরি কাজ আছে প্লিজ বাবাকে বলো।
আনিকাঃ হ্যা সব ঠিক আছে কিন্তু জরুরি কাজটা কি?
তনয়াঃ বাড়ি এসে সব বলছি।
তনয়া আর আস্ফি বোরকা পরে মুখ ডেকে গাড়ি নিয়ে বের হলো। ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি চালাতে বলছে। আয়াতের চেম্বারে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখে সেখানে বেশ ভির জমে আছে। তনয়া একজন লোককে জিগেস করলো।
তনয়াঃ ভাইয়া কি হয়েছে?
——-মিটিং রুমে নাকি বেশ কজন ডাক্তার কথা বলছিলো। শর্ট সার্কিট হয়ে কজন ডাক্তারদের অবস্থা খুব খারাপ। সবাই আই সি ইউ তে আছে।
কথাটা শুনে তনয়ার বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠলো। তনয়া, আস্ফি তারাতারি আই সি ইউ এর দিকে যেতে লাগলো। তনয়ার চোখ থেকে অবিরাম ধারায় জল ঝরতে লাগলো।
আই সি ইউ এর ভিতরে কাউকে ডুকতে দিচ্ছে না। তনয়া বাইরে থেকে কাচের জানালা দিয়ে ভিতরে তাকিয়ে দপ করে নিচে বসে পরে।