কালো মেয়েটি..
আমাদের পাশের বাসার কালো মেয়েটিকে দেখে আমি সত্যি অবাক হয়ে যাই।।
যেমন পড়াশুনায় ভালো তেমনই তার চরিত্র। মেয়েটির নাম অনামিকা।আমাদের সাথেই পড়ে। একই ভার্সিটিতে পড়ি আমরা যদিও আমাদের বাসা পাশাপাশি তবুও মেয়েটির সাথে আমার তেমন পরিচয় নেই। শুধু চিনি তাকে তবে কখনো কথাও বলেনি।।
মেয়েটি ছেলেদের সাথে একদম কথা কম বলে। মাঝে মাঝে আম্মুর মুখে শুনেছি মেয়েটি নামায পড়ে, কোরআন পড়ে।
আমাদের বাসা অনামিকাদের বাসার সামনাসামনি। আমার রুমের বারান্দায় গেলে অনামিকাদের বাসার সব কথা বার্তা শুনা যায়। জানালা খোলা থাকলে দেখাও যায়।
সেদিন অনামিকার আব্বু রাগারাগি করছিলেন। আমি বারান্দা থেকে শুনছি। অনামিকা দেখতে কালো বিয়ে দিতে পারছে না। সংসারের অমঙ্গল হচ্ছে অনামিকা। ইত্যাদি বলে রাগারাগি করছিল। অনামিকা সহ্য করতে না পেরে ওদের বারান্দায় এলো আর আমি আমাদের বারান্দায় দাড়িয়ে আছি দেখে চলে গেল অনামিকা। আমি যতদূর দেখলাম অনামিকার দু’নয়ন অশ্রুতে ভেজা।।
আমি বারান্দায় বেশিখন দাড়িয়ে থাকলাম না। ড্রয়িং রুমে যেয়ে সোফায় বসে টিভি দেখা শুরু করলাম। আর কিছুখন পর বাংলাদেশ বনাম পাকিস্থানের ক্রিকেট ম্যাচ। আমি আবার অনেক ক্রিকেট প্রিয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের কোন ম্যাচ দেখা মিস করি না। আর সময় পেলে খেলতে যাই।
আমার পরিচয়টা দেওয়া হয়নি। আমি তাহসিন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনিতীতে অনার্স করছি।অনামিকাও আমাদের সাথেই পড়াশুনা করে। আমার জানা মতে ওর কোন ছেলে বন্ধু নেই। আজ অনামিকার সাথে ওর বাবা যে ব্যাবহার করলেন তা দেখে সত্যি আমার কষ্ট লাগছে। আচ্ছা কালো হয়েছে বলে কি এটা ওর দোষ? যদি অনামিকার দোষ না হয় তাহলে সবাই কেন দোষী বলে।
আমি শুধু শুধু ভাবছি। আর না ভেবে আমি ক্রিকেট ম্যাচ দেখা শুরু করলাম।।
কিছুদিন পরের কথা। অনামিকাকে আজ ভার্সিটিতে দেখে অবাক হলাম অনামিকা একটি ছেলের সাথে কথা বলছে আজ। ছেলেটি অনেক হ্যান্ডসাম অনেক স্মার্ট। আমি দূর থেকে দেখছি। যাই হোক ভালোই লাগছে অন্তত একটা ছেলে বন্ধু হলো অনামিকার। কিছুটা হলেও একাকিত্ত কমবে।
সেদিন ক্লাসে সবাই অনামিকাকে নিয়ে ট্রল করেছিল। আমি কিছু বলার আগেই হ্যান্ডসাম ছেলেটি এসে জবাব দিল। আমার ভিষন ভালোই লাগছিল। অনামিকার পাশে দাড়ানোর মতো কেউ একজন আছে এখন।।
ক্যাম্পাসের ছেলেরা যখন সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে ব্যাস্ত ছিল তখন ছেলেটি ব্যাস্ত অনামিকাকে নিয়ে। দু’জনের একসাথে চলাফেরা দেখে সবাই অবাক হয়ে যেত। অনামিকা পড়াশুনায় অনেক বেশি ভালো ছিল। ছেলেটিকেউ অনেক সাহায্য করছিল।।
ছেলেটির সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ হলো। যতদূর জানতে পারলাম ছেলেটির নাম নেহাল। অনেক বড় লোকের ছেলে।।
ছেলেটি অনামিকার সাথে চলাফেরা করে তা দেখে অনেক মেয়ের হিংসা হয়। অনেকে এটা নিয়ে ট্রল করে আমার নিজের চোখে দেখা।
কিছুদিনের মধ্যে অনামিকা ও নেহালের মধ্যে অনেক কঠিন সম্পর্ক গড়ে উঠে। কেউ কাউকে না দেখলে একটি দিন একটি মূহর্ত থাকতে পারে না। কেউ কেউ ভেবেছিল অনামিকা ও নেহালের মধ্যে হয়তো কিছু আছে। তবে সবার ধারনায় ভুল ছিল। অনামিকা ও নেহাল শুধুই বন্ধু ছিল।।
তবে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে কখনোই বন্ধু হগে পারে না। অনামিকা আর নেহালের মধ্যেও তার ব্যাতিক্রম হলো না।।
সেদিন অনামিকা একটু সেজেছিল। সবাই অবাক দৃষ্টিতে অনামিকাকে দেখছিল। অনামিকা ও নেহাল আলাদা ভাবে কথা বলছে। অনামিকা অনেক খুঁশি। তবে সে খুঁশি বেশিখন রইলো না। অনামিকা নেহালকে ভালোবেসে ফেলেছে। অনেক দিন যাবৎ ভালোবাসে। এতদিন বলার সাহস হয়নি। তবে অনামিকা আর দেরি করতে চায় না। যদি নেহালকে অন্যকেউ ভালোবেসে আপন করে নেয়। তাই আজ অনামিকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেহালকে প্রপোজ করার। কিছুখন পর একটা থাপ্পরের শব্দ ক্যাম্পাসের সবার কানে ভেসে উঠলো। নেহাল থাপ্পর দিয়েছে অনামিকাকে। এবং নেহাল বললো…
” কি ভেবেছিস তুই! তর সাথে বন্ধুত্ব করেছি বলে তর আশাটা আরো বেড়ে গিয়েছে। নিজের চেহারা কখনো আয়নায় দেখেছিস। বড় লোকের ছেলে দেখলে হুস থাকেনা তাই না। তর সাহস কি করে হলো আমাকে প্রপোজ করার। আমাকে প্রপোজ করার আগে একটিবার হলেও তর নিজের চেহারা আয়নায় দেখা উচিৎ ছিল। নেক্সট টাইম কখনো আমার সামনে যেন না দেখি”
নেহাল কথাগুলো বলে ক্যাম্পাস থেকে চলে গেল। অনামিকা ভিষন কান্না করছে। সবাই অনামিকাকে নিয়ে ট্রল করছে।অনামিকাকে শান্তনা দেওয়ার মতোও কেউ নেই। তখনও কান্না করছে অনামিকা।।