প্রিয়তমা –
প্রত্যেকদিনের মত আজও বারান্দার একপাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটতে হাঁটতে পড়া মুখস্ত করতে লাগলাম..কপাল কুঁচকে প্রত্যেকটা পড়াকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে পেটের ভিতর গিলতে লাগলাম যেনো লেখার সময় বা পড়ার সময় পেট থেকে পড়া গুলা বের হয়..কারণ একটাই সাদিফ ভাইয়া মানে আমার হোম টিউটর যার সামনে আসলে সব পড়া আমার পেটে আসে কিন্তু মুখে আসে না আর পেতে হয় তাকে কঠিন শাস্তি..এসব শাস্তির কথা ভাবতেই মুখ একদম টমেটোর মত লাল হয়ে যায় রাগে.. সাদিফ ভাইয়া তো অপরিচিত কেউ নয় আমারই আপন বড় খালার ছেলে..তাও যে কেন এই লোকটা আমাকে এত অপমান করে.. উনাকে কি আমি একবারও পড়াতে বলেছি আমি!!!!আর উনারও কি কষ্ট হয় না এতদূর আমাকে পড়াতে আসতে!!উনার মাথায় মাথার স্ক্রু মনে হয় লুজ এসব ভেবেই আনমনে হেসে উঠলো শেফালী…
শেফা ও শেফা সাদিফ আসছে…মায়ের ডাকে নিজ ভাবনা থেকে ফিরে এলো শেফালী… সাদিফ এর নাম শুনে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে আল্লাহ্ এর নাম নিয়ে রুমে এলো বারান্দা থেকে..বেড থেকে ওরনা ফুল দিয়ে বডি পেঁচিয়ে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে আগাচ্ছি আর দোআ করতে লাগলাম আল্লাহ্ যেনো আজকে কোনো মাইর কপালে না রাখেন… একটা আমিন করলাম..
ভাইয়া আসসালামুআলাইকুম!!!!! শেফালীর আওয়াজে মাথা তুলে তাকালো সাদিফ..গ্রিন কালার চোখগুলো দেখলেই আমার মনটা একদম অশান্ত হয়ে উঠে.. কিন্তু কেনো?? তা জানিনা….।।
অসভ্যের মত না তাকিয়ে থেকে বস…. সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে যে একটু ভালোলাগা টা আসছিল মনে তা নিমিষেই ফুশ হয়ে গেলো..মনে মনে একশো টা গালি দিয়ে বসে পড়লাম টেবিলে … ম্যাথ বই যেই মাত্র ওপেন করলাম সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমার আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো…
“বারান্দায় ওরনা ছাড়া দাড়িয়ে কাকে ফিগার দেখাচ্ছিলি??”ছি ছি!! কি লজ্জার কথা!!উনার মুখে কি একটুও লজ্জা শরম নেই!!কিছু না বলে মাথা নিচু করে রাখলাম না বলাই ভালো এই মানুষটার সাথে কথা ..”কি সমস্যা তোর বেআদব কথা বলিস না কেনো!?তুই যে সুন্দর ফর্সা তোর রূপ অনেক এসব মহল্লার সবাইকে দেখাইতে তোর খুব ভালো লাগে তাই না!!” উনার কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারলাম না একটা জবাব দিয়েই দিলাম..”আমার বারান্দা আমার বাড়ি আমি কি করবো না করবো আপনার কি!!আর আপনার এত কাজ থাকতে এত বড় বিজনেস থাকতে আপনি আমাকে কেন পড়ান !!! পড়াতে আসেন ভালো কথা এসব কথা বলার আপনি কে!!?”
গালটা প্রচণ্ড জ্বলছে…কথাগুলা বলে দম নিতে পারলাম না সাদিফ ভাইএর হাতের থাপ্পড় টা আমার হজম করতে হইলো… রাগে দুঃখে গালের ব্যথায় চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে লাগলাম আর মনে মনে উনাকে অভিশাপ দিলাম উনার বউ যেন উনাকে কামড়ে মাংস তুলে ফেলেন…
“ন্যাকামি বাদ দিয়ে ম্যাথ সব করবি তুই আজকে…তুই এত অসভ্য আমার মুখে উত্তর দিচ্ছিস…সময় আসুক সব উত্তর আমি দিবো এখন ম্যাথ কর..না পারলে আজকে বুঝবি মজা”
কি আর করবো মাও সব কাহিনী দেখলো দরজায় দাঁড়িয়ে কিছু বললো না ..কি আর বলবে উনার গুণধর বোনের ছেলে তার রাগ উঠলে সে তার বাপ কেউ মানে না…..
কোনমতে ম্যাথ এর প্রবলেম টা শেষ করলাম যাক মাইর খেলাম না যদিও ৩টা ভুল ছিল তাও কেনো মারলেন না জানিনা আমি…হঠাৎ আমার গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলেন “উল্টা পাল্টা কথা বলবি তো মাইর খাবি…তুই জানিস না মুখে মুখে তর্ক আমি অপছন্দ করি”…কেন জানি আবারো কান্না আসলো.. হয়তো উনার সফ্টলি ব্যাবহার তাই আমি এতক্ষণ চাচ্ছিলাম.. যাক উনার হাত টা সরিয়ে দিবো ভাবার আগেই উনি হাত সরিয়ে নিয়ে গালে বরফ লাগাতে বললেন…আমি হ্যাঁ না কিছুই বললাম না…টেবিলে হাত দিয়ে জোরে বারি দিলেন উনি আর আমি কেঁপে উঠলাম..দ্রুত মাথা নাড়ালাম যার অর্থ হুম আমি লাগাবো…
চোখ তুলে তাকালাম উনার দিকে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন….বুকের মধ্যে কেমন জানি ধুক ধুক করে উঠলো.. হঠাৎ আমার গাল টেনে বললেন..”হুয়াই সো কিউট”!!!!……
উনার এই ব্যাবহারে আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম এই মানুষটার এত রূপ কেমনে!!? হাউ!!!???