যদি তুমি জানতে !!

যদি তুমি জানতে !!

যদি তুমি জানতে !!

রাতে ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছে বাইরে কেউ জানালার কাচে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।কালো ছায়া। রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাইরে থেকে আসা আবছা আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ দাড়িয়ে আছে। বিছানা থেকে উঠে “কে কে” করলাম কোনো উত্তর নেই। এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে চিল্লাতে লাগলাম।গলার আওয়াজ পেয়ে সে লাফিয়ে চলে গেল।

বাবা-মা আওয়াজ পেয়ে রুমে আসলে তাদের সবটা জানাই। উনারা বড় আপুর রুমে দোতলায় পাঠিয়ে দিলেন।

সকালে বাবা নামাজের জন্য মসজিদে যেতে নিলে মেইন দরজা কেউ বাইরে থেকে লক করে চলে যায়। অনেক চেষ্টার পরও দরজা খুলতে না পেরে মা এবং দু বোনকে ডাকা হয়। আমরা নামাজের জন্য সবসময়ই উঠি। তাই আজও উঠেছি কিন্তু আজ কেউ আমাদের লক করে চলে যায়।

পরে উপায় না পেয়ে সকাল অবধি অপেক্ষা করে পাশের বাসার দারোয়ান কে কল করে বাইরে থেকে লক খুলানোর ব্যবস্থা করলাম। বাবা আমাদের সাবধান করিয়ে অফিসে চলে যায়। সারাদিন আর তেমন কিছু ঘটেনি। সবাই ভেবেছি কোনো চোর হয়তো এমন করেছে।কিন্তু কিছু চুরি করতে পারেনি।

রাতে বড় আপুর সাথে ঘুমালাম। বাবা, মা আর আমার রুম নিচতলায়। শুধু বড় আপুর রুম উপরে, দোতলায়।

রাতে ঠিক আগের মতো অবস্থা ! মোবাইলের ফ্লাশ লাইট অন করে কেউ একজন জানালার ওপাশে দাড়িয়ে আছে।আমি সাথেসাথে উঠে আপুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললাম। ততক্ষণে সে আবারও চলে যায়। আপু উঠে জানালা খুলে দেখে,, একটা মই জানালার সাথে ঠেস দিয়ে রাখা। বুঝতে আর বাকি রইল না, ওই ব্যক্তি মই বেয়ে উপরে উঠেছে। আপু জানালা লাগিয়ে দেয়।আমাকে নিয়ে পাশের রুমে ঘুমাতে চলে যায়। কিন্তু আমি আর আপু সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।

সকালে বাবাকে সব ঘটনা বলে দেই। বাবা টেনশনে পড়ে গেলেন। একে একে দুইবার কোনো ব্যক্তি এভাবে আসবে না। তাও যখন আসে সে কোনোকিছু চুরি করেনা। এসে জানালার বাইরে দাড়িয়ে থাকে।

ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছি। সবাই কোনো না কোনো উপায় বের করার চেষ্টা করছি,, কেননা আমাদের দেশের যা অবস্থা। কোনো অঘটন ঘটতে সময় লাগে না। যদি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করার মতলব থাকে!! বলা যায় না কখন কি হতে পারে।

বাবা বললেন-
-ফিমা, ফিহা তোরা দুজন আজ বিকেলের দিকে তোর বড় খালামনির বাসায় চলে যাবি। কিছুদিন ওখানে থাকতে হবে। এখানকার মামলা ঠান্ডা না হওয়া পযর্ন্ত তোদের পড়াশোনা সহ যাবতীয় সবকিছুর ব্যবস্থা আমি আফসানার বাসায় করে দিচ্ছি। (যদি তুমি জানতে)

যেই বলা সেই কাজ। বাবার কথা মতো আমি আপু দুজনই ব্যাগ গুছিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে রওনা দেই খালামনির বাসায়। মাকে বিদায় দিয়ে বাবার সাথে আমরা দুবোন বেরিয়ে পড়ি। বাবা আমাদের বড় খালামনির বাসায় রেখে অফিসে চলে যাবেন।

আমি নাবিলা হক ফিহা। ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। বাবা, মা আর বড় আপু সাবিহা হক ফিমার সাথে একটা দোতলা বাসায় থাকি। বড় আপু অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন।

কালরাতে আমি আমার রুমে পড়াশোনা শেষ করে ঘুমিয়ে যাই। মাঝ রাতে কেউ একজন জানালার ওপাশে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিল জানি না। তবে কিছু চুরি করেনি। মেইন গেট বাইরে থেকে লক করা ছিল। যা এই প্রথম ঘটল আমাদের সাথে। দোতলায় আপুর রুমে ঘুমালেও ওই ব্যক্তি মই দিয়ে জানালার ওপাশে ফ্লাশ অন করে দাঁড়িয়ে থাকে। এবারও কিছু চুরি করেনি।

ঘন্টা দুয়েক পর আমরা খালামনির বাসায় পৌছে যাই। বাবা আমাদের গেটের কাছে নামিয়ে দিয়ে ওই সিএনজি দিয়ে চলে যায়। আমরা কলিংবেল বাজাতেই সাথেসাথে খালামনি দরজা খুলে স্বাগত জানান। খালামনি বলেন-

-সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি, তোরা আসবি বলে। তা আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?
-না খালামনি কোনো সমস্যা হয়নি।
-তোরা বস আমি লেবুর শরবত আনি। আর কোনো ভয় পাবি না। আমার বাসায় তোদের কিচ্ছু হতে দিবনা।তোরা বস।

বড় খালামনি ভীষণ রসিকতা প্রিয় মানুষ। মায়ের পর যদি কোনো মানুষ আমাদের আদর করে থাকেন, তা হচ্ছে এই বড় খালামনি। আমাদের দুইটা খালামনি। কোনো মামা নেই। মা সবার ছোট। বড় খালামনির কোনো মেয়ে নেই।এজন্য আমাদের দুবোনকে খালামনি অনেক আদর করেন। উনার একমাত্র ছেলে। নাম জুনায়েদ আহমেদ সাঈদ। ভাইয়া আপুর থেকে এক ইয়ার সিনিয়র। খুবই ভাব নিয়ে চলে।আমরা আসলে আমাদের সাথে তেমন কথা বলেন না। “ভালো আছিস, ভালো আছি” এতটুকুতেই শেষ। {যদি তুমি জানতে }

যদি তুমি জানতে

খালামনি আমাকে আপুর চেয়ে একটু বেশি ভালোবাসেন। কারন, আপু একটু অহংকারী। অবশ্য একটু না বেশিই অহংকারী বলা উচিত। রাতে ডাইনিং টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসলাম।ভাইয়া খাবার নিয়ে রুমে চলে গেলেন। আমাদের সাথে তেমন কথা বললেন না। উনার নাকি প্রজেক্ট করতে হবে।খালু, খালামনি আমাদের দুজনকে ঠেসে ঠেসে খাওয়ালেন। বলা উচিত, সবার ছোট বলে খালু আমাকে একটু বেশি আদর করেন। এজন্য খাতির যত্নে কোনো কমতি রাখেননা।
খাওয়া শেষে আমাদের দুজনকে দুটি রুমে পাঠিয়ে দিলেন। আমি রুমে এসে আমার সব জিনিসপত্র ঠিক করে লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

মাঝরাতে মনে হচ্ছে কেউ আমার মুখের উপর ঝুকে আছে। তার ঘনঘন নেয়া গরম নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে। রুম একদম অন্ধকার কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছেনা। আচমকা আমার মুখ কেউ জোরে চেপে ধরল। ছাড়ানোর জন্য জোর দিয়ে চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু সেই হাতের কাছে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলাম।ভয়ে ইচ্ছামতো ছুটাছুটি করতে লাগলাম কিন্তু কোন শব্দ রুম অবধি বাইরে যাচ্ছেনা। হঠাৎ এলোপাথাড়ি উষ্ণ ছোয়া ,,,

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত