বধুর সাজে অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে আছে বর্ষা। বর্ষার সামনে চেয়ারে বসে বাকা হেসে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ। বাতাসে কিছু চুল উরে এসে পরেছে বর্ষার মুখের ওপর, যার কারনে বর্ষার চেহারাটা আরো বেশি মায়াবী লাগছে। মেঘ আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলতে লাগলো
— কি ভেবেছিলি তুই বর্ষা, এত সহজে আমি তোকে অন্য কারো বউ হতে দিবো? আমি বিদেশ ছিলাম ভেবে এই ফাকে তুই বিয়ে করে নিবি আর এই মেঘ সেটা জানবেও না? জানি তুই আমার ভালবাসাটাকে সব সময় মজাই ভেবে এসেছিস। কখনো বুঝিসনি আমার ভালবাসা। কিন্তু এবার থেকে বুঝবি। খুব বাজে ভাবে বুঝবি তুই আমার ভালবাসা। এতদিন ভালবেসে বোঝানের চেষ্টা করেছি আর তুই আমার সেই ভালবাসাকে শুধু মজা ভেবে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিস। কিন্তু এবার থেকে দেখবি আমার ভিলেন রুপ। হিরো সেজে তোকে জয় করতে না পারলেও এবার ভিলেন হয়ে তোকে জয় করবো আমি। হা হা হা হা
কথাগুলো বলেই হাসতে হাসতে ফেটে পরলো মেঘ। কিন্তু এই হাসিটা আনন্দের হাসি নয়। বরং ভয়ংকর কোনো রাগের এই হাসি। রাগে মেঘের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। কপালের রগগুলোও সব ফুলে উঠেছে। একটু পর পর রাগে দাত গুলো কটমট করছে মেঘ। নিজের রাগটাকে যেনো কিছুতেই কন্ট্রল হচ্ছে না ওর।
বর্ষার সামনে থেকে উঠে হাতের ফোনটা নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেলো মেঘ। তারপর কাউকে একটা ফোন করে বললো
— হ্যালো, আমি যা আনতে বলে ছিলাম তা এনেছো?
— গুড, তাহলে ১৪০ নাম্বার রুমে চলে আসো আমি বর্ষাকে নিয়ে সেখানেই আছি।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো মেঘ। তারপর ডেভিল হেসে কারো জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পর দরজায় শব্দ হতেই মেঘ গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা মুচকি হেসে বললো
— ভাইয়া আপনি যা যা আনতে বলেছিলেন আমি তা নিয়ে আসছি এই নিন।(একটা প্যাকেট মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
— এগুলো আমি নিয়ে কি করবো? আমি চলে যাচ্ছি তুমি এই সব ওকে পরিয়ে দাও। আর ওর পরনের বিয়ের সাজটা পুরোপুরি খুলে ফেলো। যেনো বাসায় গেলে দেখে মনে হয় ও কারো সাথে পালিয়ে বিয়ে করে রাত কাটিয়ে অন্য ড্রেসে বাড়ি ফিরেছে।
— কিন্তু ভাইয়া এসব আপনি কেনো করছেন? এতে তো বর্ষার কলঙ্ক হবে। ও সবার সামনে মুখ দেখাবে কি করে?
— আমি তো এটাই চাই, আমি চাই ওর কলঙ্ক হোক। ও কারো সামনে মুখ দেখাতে না পারুক। তোমায় যা করতে বললাম সেটা করো। আর এই কথাগুলো যেনো আর কেউ জানতে না পারে নইলে আমার চাইতে খারাপ তোমার জন্যে আর কেউ হবে না।তুমি ভালো করেই জানো আমি চাইলে কি কি করতে পারি।
মেঘের কথা শুনে মেয়েটা শুকনো ঢোক গিলে বললো
— সরি ভাইয়া, আমি বর্ষার কাপড় চেঞ্জ করে দিচ্ছি আর আপনাকে কথা দিচ্ছি এই খানের কথা আমি ছারা আর কেউ জানবে না।
— গুড গার্ল, ওকে তুমি তোমার কাজ করো আমি বাকি কাজ গুলো করে আসছি।
কথাটা বলেই চলে গেলো মেঘ। আর মেয়েটি বর্ষার কাছে গিয়ে বর্ষার পাশে বসে বর্ষার দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বললো
— সরি রে বর্ষা, পারলে আমায় ক্ষমা করিস। আমি তোর সাথে এমনটা না করলে যে মেঘ ভাইয়া তুই সহ আমারও হয়তো ক্ষতি করে দিবে। প্লিজ আমায় ক্ষমা করিস বর্ষা।তবে আমি যতটা জানি মেঘ ভাইয়া তোর ক্ষতি করতে পারবেন না। উনি যে তোকে সত্যিকারের ভালবাসেন।
কথাটা বলেই বর্ষার গায়ের গয়না আর জামা কাপড় খুলতে লাগলো মেয়েটা। তারপর দ্রুতো হাতে বর্ষার ড্রেস চেঞ্জ করে বর্ষার বিয়ের জামা কাপড় আর গয়না গুলো নিয়ে চলে গেলো মেঘের কাছে।
একটু পর তিনজন মহিলা রুমে ঢুকলো বর্ষার। তিনজন মহিলাই মুখে মাস্ক পরে মুখ ঢেকে এসেছে। তাদের মাঝে একজন মহিলা বর্ষার মুখে এক জগ পানি ছুরে মারলো। মুখে পানি পরায় জ্ঞান ফিরে মিটিমিটি চোখে মহিলাগুলোর দিকে তাকালো বর্ষা। তারপর বোঝার চেষ্টা করলো ও এখন কোথায় আছে।
বর্ষার জ্ঞান ফিরতে দেখে একজন মহিলা বর্ষাকে উদ্যেশ্য করে বললো
— এই মেয়ে ওঠ জলদি, অনেক ঘুমিয়েছিস এবার উঠে এই কাগজটাতে সই কর।
মহিলাটার কথা শুনে ধিরে ধিরে উঠে বসলো বর্ষা। তারপর অবাক চোখে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিজের দিকে তাকিয়ে বললো
— আ আমি কোথায়? আর আপনারা কারা? আমি এখানে এলাম কি করে? আজতো আমার বিয়ে ছিলো আমি তো বউ সেজে বসে ছিলাম আমার রুমে। তাহলে আমি এখানে কি করে এলাম? কারা আপনারা কি চান আমার কাছে?
— এই শোন তোর এত প্রশ্নের উত্তর দিতে বাদ্ধ নই আমরা। বেশি বকবক না করে এই কাগজটায় সই করে দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যা।
— কিসের কাগজ এটা? আর আপনারা আসলে কারা, আমায় তুলে এনেছেন কেনো? আমি বাসায় যাবো।(কান্না করে দিয়ে বললো বর্ষা)
— এই শোন তোর ঐ ন্যাকা কান্না বন্ধ করে এইটাতে একটা সই কর। এটা তোর কাবিননামার কাগজ। এটাতে সই করলে তোর বিয়ে হয়ে যাবে। বিয়ে টা করে তারপর নিজের বাড়িতে ফিরে যা তোর কিছুই হবে না।
— বিয়ে? এটাতে সই করলে কার সাথে বিয়ে হবে আমার? আর আপনারা কেনো করছেন আমার সাথে এমন। আমি বাসায় যাবো যেতে দিন আমায়।
কথাগুলো বলেই বিছানা ছেরে নেমে দরজার দিকে চলে যেতে নিলো বর্ষা। কিন্তু তার আগেই একজন মহিলা ওর হাত শক্ত করে ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বিছানায় ছুরে ফেলে বললো
— ভালো কথা কানে যায় না তোর তাইনা। এই কাগজে সই না করে এক পা এখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তুই ভাবতে পারবি না তোর সাথে ঠিক কি কি হবে। ভালো চাস তো এটাতে একটা সই কর তারপর নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরে যা।
বর্ষা কি হচ্ছে ওর সাথে কিছুই বুঝতে পারছে না। এই মহিলারাই বা কারা কেনোই বা এমন করছে ওর সাথে কোনো কিছুই মাথায় ঢুকছে না ওর। কিন্তু এতটুকু বুঝে গেছে যে এই কাগজে সই না করলে ওর আর বাড়ি ফেরা হবে না। তাই ভয়ে আর কোনো উপায় না দেখে কাগজটা হাতে নিয়ে কাপা কাপা হাতে ওটাতে সই করে দিলো বর্ষা। সই করার সময় কাগজের লেখাগুলো পড়তে চাইলে সেটাও ওকে পড়তে দিলো না মহিলা গুলো।
কাবিননামায় সই করার সাথে সাথে কাগজটা কেরে নিয়ে মহিলাগুলো বললো
— আজ থেকে তুই বিবাহিত। এই কাগজে সই করার ফলে তুই আমাদের বসের বউ হয়ে গেলি। এখন রাতটা এখানে থাক কালকে সকালে নিজের বাসায় ফিরে যাবি।
— কে আপনাদের বস? কার কথা বলছেন আপনারা। আমার সাথে আপনারা কেনো করছেন এমন। প্লিজ আমায় বাসায় যেতে দিন। আজ আমার বিয়ে বাসা ভর্তি কত লোকজন। আমার বাবা মার মাথা হেট হয়ে যাবে সবার সামনে। তারা কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না। প্লিজ আমায় যেতে দিন।
বর্ষার কথা শুনে কেউ কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে চলে গেলো। বর্ষা দরজার কাছে ছুটে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে লাগলো ওদের কিন্তু বর্ষার ডাক আর কান্না ওদের কাছে পৌছালো না। বর্ষা যখন পাগলের মতো কান্না করে ওদের ডাকছিলো তখন টেবিলের ওপর থাকা ফোনটা বেজে ওঠলো ক্রিংক্রিং শব্দে। ফোনের শব্দ পেয়ে বর্ষা ফোনের কাছে এগিয়ে গিয়ে কাপা কাপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরে। তখনই ফোনের ঐ পাস থেকে কেউ বলে ওঠে
— এভাবে কান্না করে কোনো লাভ হবে না সুইটহার্ট। এই দরজা তো আর সকালের আগে খুলবেনা কেউ। তাই ভালো মেয়ের মতো পাশের রুমে খাবার রাখা আছে সেগুলো খেয়ে ঘুমিয়ে পরো কেমন। সকালে দরজা খুলে দিলে তখন বাসায় চলে যেও।
— কে আপনি? কেনো করছেন আমার সাথে এমন? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার। প্লিজ আমায় বাসায় যেতে দিন। আজ আমার বিয়ে আমি বাড়ি না গেলে আমার বাবা মা কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবে না।
— হা হা হা তোমার বিয়ে তো হয়ে গেছে জানেমান। একটু আগেই তো কাগজে সই করে তুমি বিয়ে করলে আমায়। এখন কথা না বারিয়ে লক্ষি মেয়ের মতো চুপচাপ খাবার খেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরো। আর যদি কথা না শুনো তাহলে আজকে আমাদের বাসর রাত তাইনা? আমি কিন্তু ফুলসজ্জা করতে চলে আসবো। সেটা নিশ্চই তোমার ভালো লাগবে না সোনা।
ফোনের ঐ পাশের ব্যাক্তির কথা শুনে ফোনটা ছুরে মারলো বর্ষা তারপর ফ্লোরে বসে পরে অঝোরে কাঁদতে লাগলো।
এদিকে সিসি ক্যামেরায় সব দেখছে মেঘ। বর্ষাকে এভাবে কাঁদতে দেখে মেঘ বাকা হেসে বললো
— কাদ বর্ষা কাদ। আজ আর তোর কান্না দেখে ক্ষতবিক্ষত হবে না এই মেঘের হৃদয়। তোকে তো এখন শুধু কাঁদতেই হবে। আমার সাথে বেঈমানি করার ফল হারে হারে ভোগ করবি তুই। এবার থেকে বুঝতে পারবি তুই যে আমি তোমার ভিলেন প্রেমিক !!