অন্তরালে ভালোবাসা
“হুট করে এসেই, আমার শরীর থেকে লাল বেনারসি শাড়িটা একটানে খুলে ফেললো।” “গহনাগুলো সব টেনে টেনে খুললো।”
“এতো ব্যাথা করছিলো যে কানের দুলটা টানার সময় কানের কিছুটা অংশ কেটে গিয়েছিলো।” “আমি চিৎকার করতে পারছিলাম না লজ্জায়।এটা ভেবে যে নতুন বউ এভাবে চিৎকার করলে লোকে খারাপ বলবে।আমি আমার মুখ টিপে নিজের কস্টগুলোকে দমিয়ে রাখি।”
“শ্বাশুড়ি আম্মা আমার মুখের উপর একটা ছেঁড়া শাড়ি ছুড়ে মারে।”
আর ধাক্কা দিয়ে বলে,
—এটা পড়ে নে।আর শোন,,,তোর মতোন ফকিন্নির মেয়ে এবাড়িতে বউ হয়ে এসেছিস এটাই অনেক।এর থেকে বেশি কিছু আশা করিস না।
“কথাটা বলে আমাকে সজোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে খাটের পায়াই কপালটা লেগে কিছুটা কেটে গিয়ে কপাল থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। আমি রক্তাক্ত কপালটা হাঁটুতে নুইয়ে বসে বসে কাঁদছি।হঠাৎ এক শিতল পরস অনুভব করি আমার কাঁধে। আমি কেঁপে উঠি।আর মুখ তুলে চেয়ে দেখি মানুষটা আমার সামনে।সে আমার শরীরে একটা শাড়ি জড়িয়ে দিয়ে বলে,”
—ছরি! আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিবেন।আমি আসলেই বুঝতে পারিনি আপনার আমাকে পছন্দ হবে না।আর হবেই বা কি করে আপনার মতোন এতো সুন্দরী একটা মেয়ে কি আমার মতো এমন কালো একটা ছেলের জন্য কাম্য? তবে, বিশ্বাস করুন আমি শুধু আপনার বাবার অবস্থা দেখে আপনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।শুধু আপনার বাবার সম্মানের কথা ভেবে।তিনি আমার কাছে ছুটি নিতে এসে বিয়ের কার্ডটা দিয়ে বলেছিলো খুব ধুমধাম করে আপনার বিয়ে দিতে চায়। তার জীবনের সব জমানো পুঁজি ব্যয় করেছে এই বিয়েতে।তাই..
“তাকে আমি আর কিছু বলতে দিলাম না।আমি তার পাঞ্জাবির কলারটা ধরে উঠিয়ে দাড় করালাম।”তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
—কেন করলেন আমাকে আপনি বিয়ে? এখন তো মনে হচ্ছে আপনার সাথে বিয়ে না হয়ে সারাটা জীবন কুমারী হয়ে কাটিয়ে দেওয়াটাই আমার জন্য ভালো ছিলো।
“এরই মধ্যে আমার শ্বাশুড়ি আম্মা দরজার কাছে দাড়িয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে।”
—ওলো কে কোথায় আছিস রে! তোরা জলদি আয়! এই মেয়ে আমার ছেলের কলার চেপে ধরেছে।ওরে মেরে ফেললো গো তোরা আয় সবাই।
তার চিৎকার শুনে আমার ননদ ছুটে আসে।
—কি হয়েছে গো মা, ওভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?
—দ্যাখ না দ্যাখ! নতুন বউয়ের কান্ড কারখানা দ্যাখ!
উনি এগিয়ে গিয়ে তার মাকে বললো,
—তোমার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে মা।
—কি বুঝতে ভুল হবে? একটু আগে তোকে আমি যেই কথাগুলো বললাম ভুলে গেলি?
—না মা ভুলি নি! প্লিজ আমাদেরকে একটু কথা বলতে দাও।
“কথাটা বলে উনি উনার মাকে রুম থেকে বেড়িয়ে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ায়।”
—ইশানি আমার মায়ের সাথে আপনি আর খারাপ বিহেব করবেন না।ভুল তো আমার। আপনার যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দিন। তবুও আমার মাকে অপমান করবেন না প্লিজ অনুরোধ থাকলো আপনার কাছে।
—আমি আপনার মাকে অপমান করেছি? কিভাবে করলাম?
উনি চুপ করে আছে কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে না।আমি উনাকে ঝাঁকিয়ে বলি,
—কি হলো বলুন?
উনি পকেট থেকে একটা নেকলেস বের করে আমার সামনে ধরে বলে,
—মা আপনাকে এই নেকলেসটা পরিয়ে দিতে এসেছিলো।পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার্থে বংশের বড় ছেলের বউ এই নেকলেসটা পায়।মা পেয়েছিলো দাদি মার কাছ থেকে। আর আপনি পাবেন মায়ের কাছ থেকে।তাই মা ভালোবেসেই এটা পরিয়ে দিতে এসেছিলো।কিন্তু আপনি নিজের শাড়ি, গহনা খুলে মায়ের মুখের উপর ছুড়ে মেরে দিলেন?
—ছিঃ এসব বলেছে আপনার মা? এতোটা নিচ উনি ছিঃ
—আপনি কিন্তু আবারও আমার মাকে অপমান করছেন!
—বেশ করেছি বলেছি! আরও বলবো। আপনার মা একটা মিথ্যাবাদী।তখন ভুল করেছিলাম।কিন্তু আর না…
“ওদিকে আমার শ্বাশুড়ি আম্মা আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার ফন্দি আঁটতে থাকেন।”
—নিশি, তপু তোদের সৎ ভাই তো বিয়ে করে বউ নিয়ে আসলো।এখন ওর সন্তান হলে তো সব সম্পত্তি ওর বংশই পাবে।
তপু বলল,
—নাহ নাহ এটা হতে দেওয়া যাবে না মা।আমি তোমার একমাত্র ছেলে না? ভাইয়াকে বলো না মা সব সম্পত্তি আমার নামে করে দিতে।
পাশ থেকে নিশি বলে,
—না মা আমার নামে করতে বলবা ভাইয়াকে।আমি তোমার কত্ত কাজ করে দিয় ভুলে গেলে?তোমার মাথার পাকা চুল তুলে দিই, তোমার সাথে শপিং এ গেলে দামি দামি শাড়ি পছন্দ করে দিই, গহনা কোনটার দাম বেশি সেটা দোকানদারের কাছ থেকে শুনে তোমাকে দেখিয়ে দিই।কত্ত কাজ করি মা।বললে আমার কথায় বলবে।
“এই নিয়ে নিশি আর তপুর মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে।আমার শ্বাশুড়ি আম্মা এক ঝাড়ি দিয়ে দু’জনকেই চুপ করায়।”