ভালোবাসার প্রতারণা
বিয়ে হওয়ার পর বাবার বাড়ি থেকে চোখের জল বিসর্জন দিয়ে স্বামীর হাত ধরে এসেছিলাম। আমার আজ বিয়ে হয়েছে অনেক স্বপ্ন ছিল এই দিনটা নিয়ে আর যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে নিয়েও। আমার ভালোবাসা আকাশকে বিয়ে করতে পেরে আমার যে খুশির কোন সীমা নেই। আমি আজ তাকে পেয়েছি যাকে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ এমন একটা দিন গেল আমি তার মুখটায় দেখলাম না। এখন পর্যন্ত চোখে দেখলাম না। তাও যা দেখেছি তার মুখে সে রুমাল দিয়ে রেখেছিল মনে হচ্ছে সেই বউ। যাক এসব নিয়ে এখন আর কথা ভালোবাসার প্রতারণাবলবোনা।
বাসরঘরে বসে আছি তার অপেক্ষায়। সে এখনো আসছেনা অথচ তার এই দিনটার জন্য কতো ইচ্ছা জমা ছিল তা তো আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি তাকে খুব ভালোবাসি খুব। সেও আমায় খুব ভালোবাসে। দুদিন আগেও সে আভায় ফোন করে বলল
— তারা আমাদের যদি ছেলে বাবু হয় নাম রাখবো ভতা আর মেয়ে বাবু হলে নাম রাখবো ভুতি। কেমন?
তার এই কথা শুনে আমি হাঁসবো না কান্না করবো নাকি অবাক হবো বুঝতেই পারছিনা। এটা কোন নাম হলো শেষে কি না আমার সন্তানের নাভ এতোটাই আজগুবি হবে! জাস্ট ভাবতে পারছিনা। তখন ই তাকে ধমক দিয়ে বললাম
—- এমন আজগুবি নাম রাখলে আমি কিন্তু তোমায় বিয়ে করবোনা।
—– এই না না আর বলবো না। স্যরি । এই তোমার জন্য আমি কম যুদ্ধ করলাম তোমায় পেতে 6 টা বছর আমাকে সাধনা করতে হলো। তার কি হবে?
—– আমি ওতো কিছু বুঝিনা। আমার বাবুদের নাভ খুব সুন্দর হতে হবে যেমন তোমার নাম আকাশ আমার নাম তারা তাদের নামও এমনটাই সুন্দর হবে। ভতা ভুতি কিন্তু একদম চলবেনা।
—– ওকে। কিন্তু আমি খুব শখ করে নামটা,,,,
—-রাখো তোমার শখ
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম এবার হাঁসতে হাঁসতে টোটালি গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। এটা আবার কেমন নাম আকাশটা পারেও বটে মনে করতেই আমার হাঁসি পাচ্ছে।
হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে আমার হুস ফিরে। আর হাথে ভয় আর লজ্জাও কাজ করছে। আজ যে আভার আর আকাশের বাসর রাত। আমি মাথার ঘোমটা টা আরো নিচের দিকে টেনে নিলাম। অনেক্ষণ হয়ে গেল আকাশের কোন সাড়া শব্দ নেই তাই আমি না চাইতেও ঘোমটা টা খুলে সাভনের দিকে তাঁকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। একি উনি এখানে কি করছে উনি তো আকাশের বড় ভাই প্রভাত চৌধূরী। এই লোকটা এই ঘরে কেন! কোন আক্কেল জ্ঞান আছে নিজের ভাইয়ের বাসর রাতের দিন তার ঘরে এসে তারই বউয়ের সামনে বসে আছে। আমার খুব রাগ হলো তাই রেগে গিয়ে খাট থেকে নেমে গিয়ে সে যেই সোফাটায় বসে আছে সেখানে গিয়ে বললাম
—– আপনি এখানে কি করছেন? আকাশ কোথায়!
—— আকাশকে দিয়ে তুমি কি করবে?
——মানে কি ! আমার স্বামীকে দিয়ে আমি কি করবো মানে কি? আপনি জানেন না যে আজ আপনার ভাইয়ের বাসর রাত। আর আপনি কিনা তার বদলে তার ঘরে এসেই তার বউয়ের সামনে বসে আছেন!
——- কার বউ?
—— কার বউ মানে আকাশের বউ।
—— আমি তো এখানে আকাশের বউকে দেখতে পাচ্ছি না।
—— আপনার সামনে একটা জ্যান্ত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে তাকে কি আপনি চোখে দেখতে পারছেন না ?
—— দেখতে তো পাচ্ছি কিন্তু সে তো আকাশের বউ নয় আমার বউ।( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
—— হোয়াট ! দেখুন আপনি এসব ফালতু বকবেন না। ছি কেউ নিজের ভাইয়ে বউকে এইসব বলতে পারে। আকাশ কোথায়! আকাশ কোথাই তুমি দেখ তোমার ভাই এখানে এসে কিসব যা তা বলছে। তুমি কোথায় আকাশ!( জোরে চিল্লিয়ে)
——হেই তোমার কথা কানে যায় না ? তুমি আমার ভাইকে এভাবে ডাকছো কেন সে নেই এখানে।(রেগে)
—-‘ নেই মানে! ও কোথায় একটু আগেই তো আমার আর আকাশের বিয়ে হলো।
—-‘- shut up…আকাশ নয় আমি তোমার স্বামী একটু আগে আকাশের সাথে না আমার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে।
কথাটা শুনেই আমার মাথা ঘুরতে লাগলো এটা উনি কি বলছেন উনি যে মজা করছে তাও নয়। আকাশ আর প্রভাত একই মায়ে পেটের হলেও দুজনের স্বভাবের আকাশ পাতাল পার্থক্য একজনের সাথে আরেকজনের স্বভাবের কোন মিল নেই। আকাশ হাঁসি খুশি তো প্রভাত খুব রাগী আর বদ মেজাজী। উনার মুখের কথা গুলো আর মুখের ভাবটা স্পষ্ট বলে দিচ্ছে উনার একটা কথাও মিথ্যে নয়। তাহলে কি সত্যিই আমি ওনার ,,,,, না এ হতে পারে না আকাশ আমায় চকাতে পারে না। সে যে কথা দিয়েছিল সে আমাকে বিয়ে করবে এমন হতে পারে না পারে না এমন হতে।