তোমাকে খোঁজে !!

ছাড়ুন আজ আমার বিয়ে। প্লিজ যেতে দিন আমায়। কথাটি বলে নেহালের কোলে দাঁপাদাঁপি ঝাঁপাঝাঁপি শুরু করে দেয় আদিবা। করতে থাকে নিজেকে নেহালের বাহুডোর থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেস্টা। আর নেহাল আদিবাকে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে এমন ভাবে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে যে চাইলেও আদিবা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছে না।দুজনের মধ্যে অনেক দস্তাদস্তি হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে আদিবা থেমে যায়। দেখে হাত দুটোই অসহনীয় ব্যাথা করছে। কোমড়টা ব্যাথায় অবাস হয়ে আসছে। তাই নেহালের দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আস্তে করে বলে। আমার কোমড়ে প্রচন্ড ব্যাথা করছে নেহাল। প্লিজ ছেড়ে দিন না আমায়! কথাটা শুনে নেহাল আদিবাকে কোল থেকে নামিয়ে নিজের পাশে সোফাতে বসায়। তারপর আদিবার এলোমেলো চুলগুলো কাঁধ থেকে সরিয়ে ঘাড়ে একটা ঠোঁঠের আলতো স্পর্শ ছুঁইয়ে দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে যায়।

নেহাল চলে যাওয়ার পর আদিবা বসে বসে ভাবে কোন ঝামেলায় ফেসে গেলো সে। আর কিভাবেই বা এই ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে! কেন যে নেহালের কথাটা বিশ্বাস করে এখানে আসতে গেল! ওদিকে হয়তো এতোক্ষণে পাত্র পক্ষ এসেও পড়েছে! না যানি বাবা-মা কি করছে! সবকিছু ঠিক আছে কিনা সেসব ভেবেই চলেছে আদিবা।

চৌধুরী মহলে,,
সকল জমজমাট আর খুশীর আমেজ এখন সর্ব শান্ত হয়ে পরেছে।চারিদিকে কানাঘুঁষা চলছে চৌধুরী বাড়ির মেয়ে আজ বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছে।আবির চৌধুরীর কাউকে মুখ দেখানোর কোনও উপায় নেই।পাত্র পক্ষের সামনে নিজের উঁচু মাথাটা নিচু করে রেখেছে।আর নিজেকেই নিজে ধিক্কার জানাচ্ছে।

কিছুক্ষণ থেকে পাত্র পক্ষ আবির চৌধুরীকে অনেক অপমান, অপদস্ত করছে।যেই আবির চৌধুরীকে সারা শহরের মানুষ সম্মাণ করে আজকে তারই মেয়েকে নিয়ে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখানো হচ্ছে।নামিদামি বিজনেসম্যানরাও আজ কানাঘুঁষা করা থেকে বিরত যায় নি।আত্নীয়-স্বজন কেউ কেউ তো ঠ্যাস দিয়ে বলছে বড়লোকের মেয়েদের চরিত্র এমনই হয়।চৌধুরীর মেয়ের চাল-চলনের যা শ্রী।তাতে বিয়ের আগে হাজার-বত্রিশটা প্রেম করা কোনো ব্যাপার না। ওই মেয়ের চরিত্রের ঠিক আছে নাকি?

মানুষের এতো কানাঘুঁষা আর নিতে পারছে না আবির চৌধুরী।মনে হচ্ছে যেন এতোদিনের অর্জন করা সব সম্মান ধূলোয় মিশে গেছে।লজ্জায়-ঘৃনায় রুমে গিয়ে একান্তে বসে আছে আবির।স্ত্রী আরিয়া স্বামীকে এমন চিন্তিত দেখে মনকে শক্ত করে তার পাশে এসে বসেন।

আচ্ছা আরিয়া আমার শিক্ষা কি এতোই ঠুনকো ছিলো যে মেয়েটা এমন ভাবে মুখে চুলকানি লাগিয়ে চলে গেল?

এভাবে কেন বলছো তুমি?

তো কিভাবে বলবো? তোমার, আমার দেওয়া শিক্ষা ভুলে গিয়েছে মেয়েটা।আমি তো চেয়েছিলাম আদিবা তোমার মতোন হোক।কিন্তু ও কি করল এটা?

না গো।তোমার কোনো দোষ না।তুমি তো তোমার মতোন করে চেস্টা করেছো।আমিই মা হয়ে পারি নি আমার দায়িত্ব পালন করতে।আমার উচিৎ ছিলো মেয়েটার মনের খবর নেওয়া। তাহলে আজ এইদিনটা দেখতে হতো না।

এদিকে নেহাল উপরে চলে গেলে আদিবা বাড়ির মেইন দরজাটার কাছে আসে। দেখে দরজাটা ভেতর থেকে লক করা।অনেক খুঁজেও দরজার চাবিটা নিচে কোথাও পাইনা।তারপর উপরে নেহালের রুমে আসে। এখানে এসে রুমটা ফাঁকা পেয়ে আদিবা ঝটপট করে চাবি খুঁজতে শুরু করে।তারাহুরা করতে গিয়ে হাতের নারা লেগে ফুলদানিটা নিচে পরে গিয়ে ভেঙে যায়। রুমের মধ্যে হঠাৎ ফুলদানি ভাঙার আওয়াজ পেয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে নেহাল।

কিছু কি ভাংলে জান?

কথা শুনে আদিবা পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে নেহাল দাড়ানো ।নেহালকে দেখে আদিবা ছিঃ বলে নিজের চোখদুটো অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
নেহালেরও ধ্যান ফেরে।নিজের দিকে চেয়ে দেখে বলে।

ছরি জান সাওয়ার নিচ্ছিলাম তাই না বুঝেই এভাবে চলে এসেছি।
তারপর আবার ওয়াশরুমে দৌড় দেয় নেহাল।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত