স্ব-ইচ্ছায় নিজের শরীর বিলিয়ে দিতে যাচ্ছে মিশ্মি। অবাক করা বিষয় তাইনা? একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তার ইজ্জত। আর সেটা কি’না নিজের ইচ্ছায় দিবে? এটা কোনো ভালো বা বুঝধার মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা যে বড্ড কঠিন। এই কঠিন বাস্তবতায় দারিদ্র্যতা একেকটা পরিবার একেকটা মেয়ের জন্য অভিশাপস্বরূপ। আর এই অভিশাপেই অভিশপ্ত হবে মিশ্মি।
রাত ১১টা বেজে ১৯ মিনিট। ব্যস্ত শহরে একা একা হাঁটছে মিশ্মি। এতরাতে একটা মেয়ে রাস্তায় একা হাঁটছে বিষয়টা একদমই স্বাভাবিক নয়। আশেপাশে তো মানুষরূপী জানোয়ারদারদের অভাব নেই। কিন্তু নিজের জীবনের ওপর মায়াটাও নেই। অবশ্য গন্তব্যহীন যে হাঁটছে তা কিন্তু নয়। গন্তব্য নুয়াজের বাংলো বাড়ি। এমন একটা দিন যে মিশ্মির জীবনে আসবে এটা কল্পনাতেও কখনো ভাবেনি মিশ্মি।
নভেম্বর মাস হওয়ায় ঠান্ডাটা বেশ পড়েছে। কিন্তু মিশ্মির গায়ে থ্রি-পিছ ব্যতীত একটা পাতলা শালও নেই। একটু পরেই তো শরীরটা বিলিন হয়ে যাবে। কি হবে শীতের ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে এই শরীরটা লুকিয়ে রেখে।! ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজকের পর থেকে মিশ্মির নামের আগে বা পরে হয়তো যোগ হবে প্রস্টিটিউট শব্দ! ভাবতেই গা ঘিনঘিন করে ওঠে। বুক ফেঁটে কান্না আসছে মিশ্মির। গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেই উপায়টাও যে নেই মিশ্মির। ও মরে গেলে যে বাবাকে বাঁচাতে পারবেনা। বাবাকে বাঁচানোর জন্যই তো নিজেকে বিসর্জন দেওয়া।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে অতীতের সব কথা।
মিশ্মি মধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়ে। বেশ রক্ষণশীল সে। বাড়িতে বাবা, সৎ মা, সৎ বোন আর মিশ্মি। মিশ্মির যখন ১ বছর বয়স তখন মিশ্মির মা মারা যায়। বাবার বয়স হয়েছে। টুকটাক যা কাজ করে যে টাকা আয় হয় সেগুলো সংসারের কাজেই ব্যয় হয়ে যায়। সৎ মায়ের চোখের বালি মিশ্মি। কিন্তু এটা নিয়েও কখনো আপত্তি প্রকাশ করেনি মিশ্মি। কলেজ থেকে এসে বিকেলে একটা কেজি স্কুলে কোচিং করায়। যে টাকা পায় তা দিয়ে ওর পড়াশোনার খরচ চলে যায়। সব তো ভালোই চলছিল। হুট করেই মিশ্মির বাবা হামিদুর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থা বেগতিক খারাপ হতে থাকে।
ইংলিশ ক্লাস করছিলো মিশ্মি। তখন মিশ্মির ছোট বোন মোহনা লাগাতার ফোন দিতে থাকে। ফোন ভাইব্রেট থাকায় মিশ্মি বুঝতে পারে। কিন্তু এতবার কল দেওয়ার কারণ কি! মিশ্মি স্যারের অনুমতি নিয়ে বাহিরে যায়। সাথে করে লুকিয়ে ফোনটাও নিয়ে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে কল রিসিভ করে বলে,
“আমি তো কলেজে। এতবার ফোন দিচ্ছিস কেন?”
মোহনা কান্না করে বলে,
“আপু আব্বু….আব্বু……”
কান্নার জন্য মোহনা ঠিক করে কথাও বলতে পারছেনা।
“মোহনা তুই কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? আব্বু ঠিক আছে তো?”
“আপু আব্বুর যেন কি হয়েছে রে। আব্বুকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তুই তাড়াতাড়ি আয় আপু। আমার খুব ভয় করছে।”
“তুই কাঁদিস না মোহু। আমি এখনই আসছি।”
কল কেটে দিয়ে ময়লার মধ্যেই ফ্লোরে বসে পড়ে মিশ্মি। ওর হাত-পা প্রচুর কাঁপছে। কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। কি এমন হলো যে আব্বুকে হাসপাতালে নিতে হলো!
ঘন্টা পড়ে যায়। ক্লাস শেষ। মিশ্মির এই মুহুর্তে হাসপাতালে যাওয়া উচিত। কিন্তু শরীর নড়ছে না। মিশ্মির বান্ধবী ইশা আসে তখন। মিশ্মির কাঁধে হাত রেখে বলে,
“কি হয়েছে? তুই এখানে বসেছিস কেন?”
মিশ্মি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“আম….আমা…র ব্যাগটা এনে দে ইশা।”
“তুই ঠিক আছিস?”
“আমার আব্বুর হাসপাতালে রে। আমাকে যেতে হবে।”
মিশ্মি তাড়াতাড়ি ওঠে ক্লাসে যায়। ব্যাগটা নিয়েই হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামে। এতক্ষণে চোখে পানি এসে পড়েছে। চোখে ঝাপসা লাগায় কয়েকটা সিঁড়ি স্কিপ করে পড়তে পড়তেও পড়েনি। কলেজ থেকে বের হয়ে সোজা হাসপাতালে যায়। মা আর মোহনা মিলে কাঁদছে। ডাক্তার এসে রিপোর্ট দিয়ে গেছে। মিশ্মিকে দেখেই মোহনা দৌঁড়ে আসে। জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। কথা বলার শক্তিটুকুও পাচ্ছেনা। মোহনাকে ছাড়িয়ে বলে,
“সব ঠিক আছে তো মোহু?”
“ঠিক নেই আপু। ডাক্তার বলেছে আব্বুর দুইটা কিডনিই ড্যামেজ।”
মিশ্মির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কিছুতেই নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। মিশ্মির বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ হচ্ছে ওর বাবা! আর সেই বাবা’ই কি’না ওকে ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। মিশ্মির মা কাঁদতে কাঁদতে মিশ্মির বুকে মাথা রেখে বলে,
“মানুষটারে তুই বাঁচা মা। তুই বাঁচা। তোর পায়ে ধরি আমি। ডাক্তার বলছে যা করার ইমার্জেন্সী করতে হবে। আমি কি করমু বল? আমার তো কিছু দেওয়ার উপায় নাই। যেই গয়না আছে ঐগুলা বেঁইচা হাসপাতালে ভর্তি করছি। আমার যে আর কিছু নাই।”
মিশ্মিকে এই মানুষটা একদমই সহ্য করতে পারেনা সেটা মিশ্মি জানে। কিন্তু ওর বাবাকে খুব ভালোবাসে। তাই মিশ্মির ওপর করা হাজারও অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে গেছে। মিশ্মি এতক্ষণ চুপ থাকলেও এখন পাগলের মত কান্না করছে। হাসপাতালের অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছে। ডক্টর এসে মিশ্মির মাথায় হাত রেখে বলে,
“নিজেকে শান্ত করো। এভাবে কান্না করলে কি সমস্যা সমাধান হবে?”
মিশ্মি ডাক্তারের হাত পেঁচিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আমার আব্বুকে বাঁচান ডক্টর প্লিজ। কিডনি আমি দিবো। আমার কিডনি দিয়ে আমার আব্বু কে বাঁচান।”
“তুমি এখনও বাচ্চা। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে এখনো আঠারোও হয়নি তোমার। তোমার কিডনি আমরা নিতে পারবো না। তাছাড়া কিডনি তো বললেই আর নেওয়া যায়না। রক্তের গ্রুপ আর টিস্যুও ম্যাচ করা লাগে। তোমার রক্তের গ্রুপ কি?”
“এ পজিটিভ।”
“তোমার বাবার ও-পজিটিভ। এটা হবেনা। টাকার ব্যবস্থা করো তুমি। টাকা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবোনা। আমাদের কাছে ডোনার আছে। টাকার ব্যবস্থা হলেই আমরা অপারেশন শুরু করতে পারবো।”
ডাক্তার মিশ্মির হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। সবকিছু অন্ধকার দেখছে মিশ্মি। জীবন এত কঠিন কেন? টাকার কাছে সবকিছু কেন হার মানে? মানুষ ডাক্তার হয় মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তার আগে শর্ত হিসেবে রাখে টাকাকে। হায়রে দুনিয়া! হায়রে মানুষ। মিশ্মির নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। কে আছে যে মিশ্মিকে সাহায্য করবে? এই বিপদ থেকে রক্ষা করবে! এতগুলো টাকা কে দিবে। মিশ্মি চিৎকার করে বলে,
“আল্লাহ্ কেউই কি নেই এই বিপদের সময়ে রক্ষা করার?”
হুহু করে কাঁদতে থাকে মিশ্মি।
“হ্যাঁ! নুয়াজ! নুয়াজই পারবে আমাকে সাহায্য করতে।”
মিশ্মি ফোন বের করে নুয়াজকে কল করে। তিন, চারবার রিং হওয়ার পর নুয়াজ কল রিসিভ করে বলে,
“হ্যালো কে?”
মিশ্মি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আমি মিশ্মি!”
“ওহ হো! এতদিন পর মনে হলো?”
“প্লিজ হেল্প মি প্লিজ! আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন। প্লিজ একবার দেখা করেন আমার সাথে।”
“খুব আর্জেন্ট?”
“খুব।”
“ওকে। কোথায় আসবো?”
“আয়েশা হসপিটালে।”
“হসপিটালে!! ওকে আমি আসছি।”
নুয়াজ কল কেটে দিয়ে গার্লফ্রেন্ডকে বলে,
“বেবি আমাকে বের হতে হবে এখন।”
“এখনই? মাত্রই তো কাছাকাছি আসলাম। প্লিজ না এখন না।”
“ইট’স আর্জেন্ট।”
“আমার থেকেও বেশি আর্জেন্ট কি হতে পারে তোমার?”
“নুয়াজ কৈফিয়ত দেওয়া পছন্দ করেনা ডার্লিং। ডোন্ট ওয়ারি, রাতে আদর পুষিয়ে দিবো।”
নুয়াজ শার্ট পড়তে পড়তে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। গার্লফ্রেন্ডের সাথে রুম ডেটিং-এ এসেছিল। এরকম কতশত যে গার্লফ্রেন্ড নুয়াজের আছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। টাকা উড়ালেই নুয়াজের জন্য মেয়ের অভাব হয়না। বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে বলে কথা। অসংখ্য মেয়ের সাথে নুয়াজ রুম ডেটে গিয়েছে। এক সপ্তাহ্ পর পরই গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে। এতকিছুর মাঝে নুয়াজের চোখ একদিন আটকে যায় মিশ্মির দিকে।
মিশ্মির তখন এস.এস.সি পরীক্ষা চলছিল। আইসিটি পরীক্ষার দিন পরীক্ষার কেন্দ্রে যায় নুয়াজ বন্ধুর সাথে। বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডেরও পরীক্ষা ছিল। নুয়াজ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল। তখন বাস থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসে মিশ্মি। ফেব্রুয়ারি মাস। ততটা শীতও ছিল না। কিন্তু সময়টা সকাল হওয়ায় মোটামুটি ঠান্ডা একটা আবহাওয়া ছিল। মিশ্মির পড়নে ছিল স্কুল ড্রেস। গাঢ় নীল ফ্রকের সাথে সাদা লেগিন্স। ফ্রকের ওপর পাতলা গেঞ্জি সোয়েটার। সোয়েটারের হাতা ফোল্ড করা ছিল কনুই পর্যন্ত। ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। পায়ে সাদা কেডস। নুয়াজের কাছে যতই এগিয়ে আসছিল কেমন যেন লাগছিল। নুয়াজের কেমন এক অনুভূতি হচ্ছিল! যখন মিশ্মি নুয়াজকে পাস করে যায় তখন নুয়াজও পিছন ফিরে তাকায়। মিশ্মির লম্বা চুল দেখে গভীর সাগরে তলিয়ে যায় নুয়াজ। পেছন থেকে একটা মেয়ে ‘মিশ্মি’ বলে ডাকতেই মিশ্মি দাঁড়িয়ে যায়। নুয়াজ তখন আনমনেই বলে,
“মেয়েটার মত নামটাও সুন্দর।”
মিশ্মি পিছনে ঘুরে বলে,
“কি?”
“তুই গেটে একটু দাঁড়া। আমি বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে আসি।”
“যা।”
মিশ্মি চোখের আড়াল হতেই যে মেয়েটা ডেকেছিল তার দিকে তাকায়। মেয়েটা নুয়াজের বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড।
“হুম! ওর থেকেই মিশ্মির সব খবর নিতে হবে। আইসিটি পরীক্ষা আজ। মাত্র ত্রিশটা টিক চিহ্ন ভরাট করবে। তাহলে এই ত্রিশ মিনিট ওয়েট করা যেতেই পারে।”
মেয়েটা তখন ওর বন্ধুর সাথে কথা বলছিল। নুয়াজ গিয়ে বলে,
“আমি কি কিছু কথা বলতে পারি?”
মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নুয়াজের বন্ধু অভি বলে,
“এটা আমার বন্ধু নুয়াজ।
আর নুয়াজ এটাই আমার গার্লফ্রেন্ড হাসি।”
“আই সি! আচ্ছা হাসি আমার একটা ইনফরমেশন লাগবে।”
“কি?”
“ঐ মিশ্মির সব ইনফরমেশন আমার চাই।”
“কেন?”
“একটা ছেলে কখন একটা অপরিচিত মেয়ের ইনফরমেশন চাইতে পারে এটা তোমার বোঝা উচিত হাসি।”
“হুম বুঝলাম। কিন্তু ওর সম্পর্কে কোনো ইনফরমেশন নিয়ে লাভ নেই।”
“মানে?”
“মানে আপনার উদ্দেশ্য সফল হওয়ার মত নয়।”
“আমার উদ্দেশ্য বলতে কি বুঝাচ্ছো?”এটা বলে অভির দিকে তাকায় নুয়াজ। নুয়াজের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে অভি বলে,
“তোর সম্পর্কে হাসিকে কিছুই বলিনি আমি।”
হাসি বলে,
“মানে হলো আপনি যদি ওর সাথে রিলেশন করতে চান তাহলে ভুলে যান। ও রিলেশন করবেনা।”
“কেন?”
“এসব ওর পছন্দ নয় তাই।”
“সেটা আমি দেখবো। তুমি শুধু ওর সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দাও।”
“উমমমম! ওকে আমি পরীক্ষা দিয়ে আসি আগে।”
হাসি চলে যাওয়ার পর অভি বলে,
“তুই কি এই ছোট মেয়েটাকেও বিছানায় নেওয়ার কথা ভাবছিস?”
“তুই ছোট মেয়ের সাথে রিলেশন করতে পারিস। আর আমি এমন ভাবলেই দোষ? কিন্তু ওকে দেখে আমার সেই ফিলিংস হয়নি।”
“তাহলে?”
“তাহলে কি সেটা আমিও জানিনা।”
নুয়াজ হাসপাতালের সামনে গিয়ে মিশ্মিকে কল দেয়। মিশ্মি কল রিসিভ করে। নুয়াজ বলে,
“আমি তো হাসপাতালের সামনে। তুমি কোথায়?”
“আসছি।”
মিশ্মি কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতাল থেকে বের হয়। মিশ্মিকে কাঁদতে দেখে অবাক হয় নুয়াজ।
“কাঁদছো কেন মিশ্মি?”
“আমার আব্বু খুব অসুস্থ। দুইটা কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ইমার্জেন্সী অপারেশন করতে হবে। অনেক টাকা লাগবে অনেক। কখনো আমি আপনার কাছে কিচ্ছু চাইনি। কিন্তু এই মুহুর্তে আপনি ছাড়া আর কেউ সাহায্য করতে পারবেনা আমায়। প্লিজ আমায় সাহায্য করুন।”
কাঁদতে কাঁদতেই কথাগুলো বলে মিশ্মি।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নুয়াজ বলে,
“রিলাক্স!”
নুয়াজ মিশ্মিকে নিয়ে হাসপাতালের ক্যান্টিনে যায়। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেলে মিশ্মি। বেশকিছুক্ষণ মিশ্মির দিকে তাকিয়ে থেকে নুয়াজ বলে,
“তোমার প্রয়োজনে তুমি আমায় ডেকেছো। আজ তোমার বাবা অসুস্থ না হলে তুমি যে আমায় ভুলেও কখনো কল করতে না সেটা আমি জানি। অথচ আমার ভালোবাসাকে তুমি প্রতিটাবার ইগনোর করেছো। আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো।”
মিশ্মি হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে,
“আমি আপনার সাথে রিলেশন করতে রাজি আছি। তবুও প্লিজ আমার আব্বুকে বাঁচান।”
“কিন্তু মিশ্মি, তুমি তো বলেছিলে বড়লোকের ছেলেরা নাকি রিলেশন বলতে শুধু ফিজিক্যালই বুঝে। কয়দিন রিলেশন করেই রুমডেটে যেতে বলে। তুমিও মূলত এসব ভয়েই আমার সাথে রিলেশনে জড়াওনি। অথচ এখন বলছো আমার সাথে রিলেশন করতে তুমি রাজি। তো আমি যদি এখন ফিজিক্যাল রিলেশনের কথা বলি?”
এমন বিপদের সময়ও কেউ এমন কিছু বলতে পারে! তাহলে কি নুয়াজের ভালোবাসার আড়ালেও লুকিয়ে ছিল ফিজিক্যালে যাওয়ার উদ্দেশ্য।
মিশ্মিকে চুপ থাকতে দেখে নুয়াজ বলে,
“কি ভাবছো? দেখো যাই ভাবোনা কেন আমার সোজাসুজি কথা। আমার সাথে ফিজিক্যালে যেতে হবে তোমার। যদি রাজি থাকো তাহলে বলো। অবশ্যই ভেবে দিবে উত্তরটা কজ তোমার উত্তরের উপরই ডিপেন্ড করছে তোমার বাবার বাঁচা-মরা।”
সত্যিই বিপদে পড়লেই মানুষের আসল চেহারাগুলো দেখা যায়। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর আর কতটা নিচে নামতে পারে এটাই তার প্রমাণ। যেসব ভয়ে রিলেশনের কথা স্বপ্নেও ভাবতো না আজ সেসব কথাই শুনতে হচ্ছে। ঘৃণায় গায়ে কাঁটা দিচ্ছে মিশ্মির। নিজের বাবার জীবন-মরণের সময় বলে সবটা সহ্য করতে হচ্ছে মিশ্মিকে। এই মুহুর্তে মিশ্মির হাতে আর কোনো অপশন নেই। মিশ্মি বুঝে গেছে, এই দুনিয়ায় কেউ কারো নয়। যতক্ষণ টাকা আছে ততক্ষণ পৃথিবী তোমার হাতের মুঠোয়। আর টাকা নেই মানে তোমার মত সস্তা জিনিসের অভাব নেই। বুক ফেঁটে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি হবে কেঁদে? এই নরখাদক তো শরীরের পূজারি! তার কাছে চোখের পানির কোনো মূল্য নেই।
সবচিন্তা ঝেড়ে ফেলে মিশ্মি উত্তর দেয়,
“আমি রাজি। আপনি শুধু আমার বাবাকে বাঁচান।”
সব ফর্ম ফিলাপ করে টাকা পেমেন্ট করে দেয় নুয়াজ। অপারেশন শুরু হবে সন্ধ্যায়। নুয়াজ যাওয়ার আগে মিশ্মিকে বলে,
“রাতে গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। আমার বাংলো বাড়িতে চলে এসো।”
মিশ্মি শান্ত কন্ঠে বলে,
“গাড়ি লাগবেনা। আমি একাই যেতে পারবো। আপনি এড্রেস দিন।”
“ওকে ফাইন। আমি ফোনে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।”
নুয়াজ চলে যেতেই চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ে মিশ্মি। এত অসহায় কখনোই নিজেকে লাগেনি। এই সমাজে মেয়েরা কেন এত অবহেলিত কেন এত অসহায়!!
নুয়াজের কল আসায় ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে মিশ্মি। গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছে। হাত দিয়ে পানি মুছে ফোন রিসিভ করে।
“কোথায় তুমি মিশ্মি? এতক্ষণ লাগে আসতে? বারবার বললাম গাড়ি পাঠিয়ে দেই। তুমি শুনলেনা। আর কতক্ষণ ওয়েট করাবে আমায়?”
চোখ উপচে পানি পড়ছে মিশ্মির। ধরা গলায় বলে,
“আর পাঁচ মিনিট।”
“ঠিক আছে রাখছি।”
হাঁটতে হাঁটতে বাংলোর কাছে চলে আসে মিশ্মি। রাস্তাটা পার হলেই বাংলো বাড়ি। লাইটের আলোতে গার্ডেনে দেখা যাচ্ছে নুয়াজকে। নিজের সবচেয়ে বড় সম্পদটা বির্সজন দিতে একা পা, দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে মিশ্মি…….