েঘলা বিকালে। বিকালে গিটার নিয়ে রাস্তায় বেড়োচ্ছি তখন তার সাথে ধাক্কা লাগে। তারপর কিভাবে যেন কি হয়ে গেল এক বারে বিয়ে করেই ছাড়ল তাসফিয়া শাড়ি পড়তে পছন্দ করে কিন্তু বেচারী শাড়ি পড়তে পারে না। সামনে পহেলা বৈশাখ ভাবছি একটা শাড়ি আর দুহাত ভর্তিচুড়ি দিব।
বিকালে তার সাথে রাস্তার পাশে বসে আসি।
– কাল বৈশাখ তোমার মনে নেই? ভেংচি দিয়ে বললো।
– মনে থাকলেই কি আর না থাকলেই বা কি? বৈশাখ তো আমার জন্য না…
– এটা কিরকম কথা? কালকে একটা দিন! সেদিন তুমি আমাকে কোথাও নিয়ে ঘুরবোনা?
– আলগা পিরিত দেখি ওনা! কিরকম ঘুরবে জানা আছে। যতবারই আমার সাথে তুমি ঘুড়তে যাও সারাক্ষণ ভয়ে থাক তুমি…….
মনটা খারাপ হয়ে গেল মনে হয়! এত ভালবাসার পরেও এমন কথা শুনতে হলো? মেয়েদের আসলেই কিছুতেই হয়না! কিনে আনা চুড়িগুলো ভেবেছিলাম ফেলে দিবো কিন্তু যদি বালিকা জানতে পারে তাহলে আমার খবর আছে! অনেক কষ্ট পাবে। ধ্যাৎ আমি এসব ভাবছি কেন? আরে ভাববোই না কেন? একটা মাত্র বালিকা আমার। আমাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখে বালিকা মানে তাসফিয়া বললো।
– কি চিন্তা করছো এত?
আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম।
– এত শখ করে চুড়িগুলো কিনলাম এখন ফেলে দিতে হবে!
তাসফিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো।
– চুড়িইইই! চুড়ি এনেছ আর আমাকে বলোনি? আমি থাকতে তুমি চুড়ি ফেলে দিবে? চুড়ি কি ফেলে দেবার জিনিষ?
– না ভাবছিলাম চুড়িগুলো তোমাকে দিলে আবার আলগা পিরিত হয়ে যাবে না তো! সেজন্য।
. তাসফিয়া কেঁদেই দিলো। আরে ভান আরকি! মেয়েরা এটা খুব ভাল ভাবে পারে।
– ঐ কথাটা তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিলে? আমি ভাবতে পারিনি!
বলতে বলতে চোখের পানি মুছছে। চোখে পানি থাকলে না মুছবে! শুধু শুধু চোখে হাত বুলাচ্ছে!
– তোমার হাতটা দাও তো।
– না। দিবোনা।
– আহা দাওতো।
– কেন দিবো? হাত দিয়ে কি করবে?
– চুমু দিবো হয়েছে? এত প্রশ্ন করো কেন? দিতে বলছি দাও।
. এবার আর কোন কথা না বাড়িয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
– চোখ বন্ধ করো তো একটু।
– না করবোনা।
– আবারো!
– আবার চোখ কেন বন্ধ করতে হবে?
– এত কথা বলো কেন?
তাসফিয়া চোখ বন্ধ করে বসে আছে। আমি আামর ব্যাগ থেকে চুড়িগুলো এনে তাসফিয়ার হাতে পরিয়ে দিলাম। চুড়ি পরানোর সময় তাসফিয়া মিষ্টি মিষ্টি হাসছিলো। আমি অপলকে দেখছিলাম। আসলে মেয়েরা এটুকুই চায়। তবে সবাই না। সেদিকে না এগুলেই ভাল।
– চোখ খুলো এবার।
তাসফিয়া চোখ খুলে দেখে তার দুহাত ভর্তি নীল চুড়ি। হাত নাড়াচ্ছে। বাচ্চাদের মত চোখেমুখে খুশির ছাপ। আমি বললাম।
– এই নাও তোমার আলগা পিরিত।
– আমার বালকের এখনো রাগ আছে আমার প্রতি?
– হুঁ রাগ থাকলে তো চুড়ি পরিয়ে দেই!
তাসফিয়া আমার কথা শুনে আমার গালগুলো টানছে। নাকে নাক লাগিয়ে।
সকালে মানুষ ঘুমায় আমিও ঘুমুচ্ছি। একটুপর খেয়াল করলাম আমার সামনে কেউ গোমরা মুখ করে বসে আছে। আমি ভাল করে দেখার আগেই বললো।
– দেখো হাসিওনা। যেমন পেরেছি তেমন পরেছি। আমি শাড়ি পরতে পারিনা তুমি ভাল করেই জানো।
আমি সত্যিই হাসছি। এভাবে কেউ শাড়ি পরে? আমার চোখ দেখে তাসফিয়া বুঝতে পেরে গিয়েছে যে আসলেই ভাল করে শাড়ি পরতে পারেনি। তাই কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো।
– পরবোনা আমি শাড়ি, খুলে ফেলবো। ঘুরতে নিয়ে গেলে যাবে নাহলে নাই। এরকমটা বলার কারণ আছে রাতে বলেছিলাম শাড়ি না পরলে ঘুরতে নিয়ে যাবেনা তাই শাড়ি পরার চেষ্টা। আমি মেয়ে মানুষ না। শাড়িও পরিনা। তবে গুগল, ইউটিউব দেখে একটু শিখেছি কিভাবে শাড়ি পরে। আমার জন্য ভাববেন না। আমার তাসফিয়ার জন্য। আমার হাসি দেখে বললো।
– তুমি একটু পরিয়ে দিলেই তো পারো। তুমি তো পারো।
– আমি কি মেয়ে মানুষ? আমি পারবো কিভাবে?
– মনে নেই এর আগেও অনেকবার অনেক অনুষ্টানে যাওয়ার সময় তুমি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলে।
– সে অনেক আগে। আমি এখন ভুলে গিয়েছি।
– এখন কি হবে? আমরা ঘুরতে যাবোনা?
অতঃপর আমাকেই শাড়ি পরিয়ে দিতে হলো। ঘুরতে বেরোলাম। আহা কত বালিকা শাড়ি পরেছে। শাড়িতেই নারী। ছোট ছোট পিচ্চিরাও শাড়ি পরেছে তাদের বেশী অপরুপ লাগছে।
– দেখেছ আজকে নারী জাতী শাড়িময়।
– তুমি এত মেয়েদের দিকে চোখ দিচ্ছো কেন?
– আমি তো মেয়েদের দিকে চোখ দিচ্ছি না শাড়ির দিকে দিচ্ছি।
– ইউ! আমাকে নিয়ে আপনার আর ঘুরা লাগবেনা। বাসায় যাব, বাসায় যাব। বাসায় গিয়ে আগে তোমার চোখ কানা করবো।
– সেটা করিও না। তাহলে আমি তোমাকে দেখবো কিভাবে?
– আমাকে দেখা লাগবেনা।
– আচ্ছা তুমি যদি এমন ভাবে কানা করতে পারো যে শুধু তোমাকে দেখতে পারবো। তাহলে আমার কানা হতে সমস্যা নেই।
– হয়েছে হয়েছে আর আলগা পিরিত দেখাতে হবেনা।
– আবার আলগা! এই রিকশা ঘুরান তো বাসার দিকে।
– এই না…
সমাপ্ত