ভালোবাসা আদায়ের টেকনিক

ভালোবাসা আদায়ের টেকনিক

বৌ প্রত্যেকদিন বাজার থেকে ‘এইটা আনো, ঐটা আনো’ বলে চিল্লাচিল্লি করে। আজ বৌকে কইলাম,
-শুনো, আমার তো এতোকিছু মনে থাকে না, আজ তুমি আমার সঙ্গে বাজারে চলো, যা যা লাগবে নিয়ে আসতে পারবে।
.
আমার কথা শুইনা বৌ তো মহাখুশি! সাজগোজ কইরা বৌ আমার রুমে হাজির। ঢঙ্গী এক্কান হাসি নিয়ে আমার কাছে এসে নরম ও মধুর কণ্ঠে বলা শুরু করল,
-অনেকদিন পর তোমার সাথে বাজারে যাচ্ছি। আজ অনেক কিছু কিনব, কি কিনে দিবা না?
-হুম তোমারে দিমু নাতো কারে দিমু কও? আমার কি আর কেউ আছে কও? আমার একটা মাত্র বৌ তুমি। আমার সেই বউ, যেই বউ আর কারো কপালে জীবনে জুটে নাই এমনকি ভবিষ্যৎকালেও জুটবে না।
-শুনো, তাড়াতাড়ি বের হও, আর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।
বৌয়ের এমন তাড়াহুড়ো দেখে আমিও বললাম,
-চল।
মনে মনে কইলাম, ‘আয় আইজকা বাজারে!’
.
বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠলাম। বাহিরে এতো রোধ যে রিক্সার হুট উঠাতে হলো। রিক্সার হুট উঠালে অামার মিষ্টি বৌটার আবার মাথা ঘুরায়। বৌ আবার মিষ্টি হয় ক্যামনে ক্যামতে কমু? যাইহোক ‘মিষ্টি’ কইয়া হুদাই ডাকি। না হয় আবার কয় আমি নাকি আদর করতে জানি না। আমার মধ্যে নাকি কিচ্ছু নাই। কিচ্ছু নাই বলতে কী নাই তা আমি নিজেও জানি না। আর জিজ্ঞেসও করিনা।
.
রিক্সার হুট উঠাতে দেখে বৌ নাক বাঁকা কইরা কইল,
-এই হুট নামাও। তুমি জানো না, আমার মাথা ঘুরায়?
-আচ্ছা নামিয়ে দিচ্ছি।
.
মনে মনে একটা প্রশ্ন জাগলো, মানুষের মাথা আদৌ কি ঘুরে? বৌকে জিজ্ঞেস করমু কিনা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। হটাৎ দোয়াদরুদ পইড়া বউকে কইলাম,

-আচ্ছা তোমার মাথা তো ঘুরতে দেখি না, তুমি যে কও মাথা ঘুরায় এইটা কি মজা কইরা কও? নাকি আসলেই মাথা ঘুরে?
-উফ, কার সাথে সংসার করছি? এতো বাড়তি কথা বলো কেন? একটু চুপচাপ বসে থাকো না?
-আরে বাবা মজা করাও যাবে না? আচ্ছা আজ তোমার কেনাকাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটা কথাও বলব না।
.
আমি চুপচাপ থাকবো শুনে বৌ আমার মহাখুশি। আর খুশি না হয়ে কি থাকা যায়; কারণ আমার বৌ কেনাকাটা করার সময় দামী কোনো কিছু চয়েজ করলে আমি দাম বেশি দেখে বলতাম, ‘এটা কেমন চয়েজ তোমার, যা ফালতু লাগছে তোমায়?’
.
-সত্যি! একটা কথাও বলবা না?
-হুম, তোমার যা ইচ্ছে করবে কিনে নিও, আমাকে কিছু বলতে হবে না, আমি শুধু তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো।
-সত্যি তো?
-হুম তিন সত্যি!
-আমার বাবুটাকে অনেক লাভ ইউ!
.
বৌ যখন আমাকে ‘লাভ ইউ’ বলে তখন আমি মনে মনে বললাম,
-আজকে তোমাকে এমন করে কেনাকাটা শিখাবো যে ৬ মাসের মধ্যেও এমন নকল মার্কা লাভ ইউ শুনতে হবে না।
.
রিক্সায় কিছুদূর যাওয়ার পর বৌ আমার কাঁধে মাথা রেখে একটু রোমান্সমাখা হাসি লইয়া কইল,

-ওগো শুনছো, আমার না একটা জিনিস লাগবে, কিনে দিবা?
-তুমি চাইছো আর আমি কিনে দিব না এটা কী কইলা বৌ?
-সত্যি কইতাছো?
-হুম সত্যি। তবে একটা শর্ত আছে।
-কী শর্ত বলো?
-তুমি তো জানো, গতকাল বাস থেকে নামার সময় ডান হাতে ব্যথা পেয়েছি। আজ তুমি যা যা কিনবা সব তুমি হাতে রাখবা। আমার হাতে কিছু নিতে পারবো না।
-আচ্ছা ঠিক আছে। এটা কোনো সমস্যা হলো? টেনশন করার কিচ্ছু নেই। ড্রাইভারকে বললে সবকিছু বাসায় নিয়ে পৌঁছে দিবে।
-আচ্ছা তুমি যা ভালো মনে কর।
.
রিক্সা থেকে নেমে বৌয়ের পিছুপিছু হাঁটতে থাকলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর আমার বউকে নিয়ে একটা পূর্ব পরিচিত সুপারমার্কেটে গেলাম। সেখানে গিয়ে বাসার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবকিছু বৌয়ের ইচ্ছে মতো কিনলাম। তারপর বিল পরিশোধ করে সবকিছু একটি বড় ব্যাগের মধ্যে নিয়ে মার্কেটে রেখে দিলাম। আর বলে দিলাম, যাওয়ার পথে নিয়ে যাব’।
.
সুপারমার্কেট থেকে কেনাকাটা শেষ করে বৌকে নিয়ে গেলাম একটা শপিংমল-এ। বৌকে কইলাম,
-তোমার যা যা ইচ্ছে কিনে নাও। কেনাকাটা শেষ হলে আমাকে কল দিও। আমার মাথাটা কেমন যেন করতেছে, আমি একটু এখানে বসলাম।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
.
বৌ একদিকে কেনাকাটা করতেছে, অন্যদিকে আমি গেলাম রেস্টুরেন্টে। সকালের নাস্তা খেয়ে আমরা বের হতে হতে টাইম হয়েছিল প্রায় ১২টা, এখন সময় প্রায় দুইটা বেজে চল্লিশ মিনিট। পেট তো পুরাই খাঁখাঁ করতেছে তাই বৌকে ফাঁকি দিয়ে একাএকা খেতে চলে আসলাম। খাওয়া শেষ করে আবার গেলাম শপিংমল-এর দিকে। সেখানে যাওয়ার পথেই বৌ আমায় কল দিল,
-এই কই তুমি, তাড়াতাড়ি আসো।
-কেনাকাটা শেষ তোমার?
-হ্যাঁ শেষ। তুমি কোথায় তাড়াতাড়ি আসো।
-দাঁড়াও আসতেছি।
.
একটু তাড়াহুড়ো করে গেলাম বৌর কাছে। গিয়ে দেখি বৌর হাতে প্রায় ১৫-২০টা ব্যাগ। বৌ আমাকে দেখেই বলতে শুরু করল,
-এই শুনছো, তাড়াতাড়ি ব্যাগগুলো নাও বাসায় যেতে হবে, আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।
-এতো ব্যাগ কেন, কি কিনছো তুমি?
-তুমি তো বলছো যা ইচ্ছে কিনে নিতে, এখন আবার কি বলো? আর এখানে শুধু আমার একার জন্য কেনাকাটা করি নাই। আমার আব্বু-আম্মু, ছোটবোন ইশা, ছোট ভাই রাকিব এবং বড় আপু ও তার বর এবং বড় আপুর মেয়ে রাত্রির জন্য কিনেছি। ওহ এমনকি তোমার জন্যও একটা শার্ট কিনেছি।
-বিল কত আসছে?
-২৪৪০০ টাকা মাত্র।
-কি বলো মাত্র ২৪৪০০?
মনে মনে কইলাম,
-কি বউ আমার এই টাকাগুলো নাকি মাত্র হয়ে গেল!
.
যাইহোক বিলের কথা শুইনা আমার মাথা গেল ঘুইরা। আমার বউ একটা পাগল তা আগেও জানতাম কিন্তু এই লোভেলের পাগল তা জানতাম না। আমি ‘কি বলো’ কথাকান কইতে দেড়ি মাগার ফ্লোরে পড়তে দেড়ি হয় নাই। চোখ বড় করে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলাম। বৌ চিৎকার করে আমার কাছে দৌড়ে আসলো এবং আমাকে জড়িয়ে ধরল। আহা কি কান্না!
-এই কী হয়েছে, কী হয়েছে তোমার?
আমি মনে মনে কইলাম, ‘আলু হইছে!’ grin emoticon:-D
.
-ভাইয়া আমার জামাইকে একটু হসপিটাল নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিন প্লিজ।
-সরি ম্যাম! আমাদের এখানে এমন কোনো সুযোগ নেই, আপনার কেনাকাটার মোট মূল্য ২৪৪০০ টাকা। টাকা দিয়ে তারপর আপনার স্বামিকে নিয়ে এখান থেকে যেতে পারবেন।
-দাঁড়ান আমি টাকা দিচ্ছি।
.
বৌ আমার পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল, মানিব্যাগ থেকে ক্রেডিট কার্ড বের করে লোকটার হাতে দিয়ে দিল। তারপর বললো,
-আপনাদের টাকা রাখেন। আর আমাকে একটা গাড়ি ডেকে দিন।
-জি ম্যাম।
কিছুক্ষণ পর ঐ লোকটা আবার আসলো এবং আমার বৌকে বললো,
-সরি ম্যাম, আপনার কার্ডে টাকা নেই।
-কি বললেন?
-জি ম্যাম।
-এখন আমি টাকা নিব কথা থেকে? আচ্ছা এগুলো রেখে দিন আমি পরে এসে নিয়ে যাব।
-সরি ম্যাম, আমাদের এখানে এমন কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না।
এমন সময় বৌ কোনো উপায় না পেয়ে তড়িঘড়ি করে মোবাইলটা বের করে আমার শ্বশুড় বাবজানরে কল দিল,
-কিরে মা কেমন আছিস?
-আব্বু গো তোমার জামাই তো অজ্ঞান হইয়া গেছে।
-কি বলিস, কোথায় তোরা?
-আব্বু আমরা এখন শপিংমল-এ। তোমার জামাইসহ আসছি কেনাকাটা করতে। সবকিছু কেনাকাটা শেষ তোমার জামাই বিল দিতে আসছে এমন সময় কিছু না বলে পড়ে গেল! তোমার জামাই আগেই বলছিল মাথাটা কেমন যেন করতেছে।
-আচ্ছা হসপিটালে নিয়ে যা, আমি আসতেছি।
-আব্বু সমস্যা তো আরো আছে! তোমার জামাই…….তারপর একদমে পুরো ঘটনা আমার শ্বশুড় বাবজানকে বলে দেয়।
-আচ্ছা আমি টাকা নিয়ে আসতেছি।
.
অতঃপর আমি হসপিটাল ব্যাডে শুয়ে আছি। আমার বউ আমাকে চামচে করে খাবার খাওয়াচ্ছে। কি আদর! কি যত্ন গো আহা! আমার টাকাও বাঁচালাম, বউয়ের আদর যত্নও পেলাম কি জামাই আমি! কি টেকনিক আমার!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত