ক্রিং ক্রিং ক্রি,,,,,,!!!!
এলার্মটা বেজেই চলছে।
উফ! শান্তিতে একটু ঘুমাবো, সে জো নেই। কানের কাছে এলার্ম দিয়ে রেখেছে। তানিয়া মেয়েটা যেন আমার পিছু লেগেই আছে। কে যে বিয়ে করতে বলেছিলো!!!
মানুষে খাল কেটে কুমির আনে, আর আমি বিয়ে করে বউ এনেছি!!!
আমার সাধের ঘুম ভাঙ্গানোর মজা বুঝাবো।
চিত্কার করে ডাকতে লাগলাম,
-তানিয়া,,,,। এই, কোথায় তুমি?
-কেন? কি হয়েছে? (কিচেন থেকে)
-আরে আমার সেল ফোন ত পাচ্ছি না। খোঁজে দাও।
-একটু খোঁজে নাও। নাস্তা বানাচ্ছি ত।
-তুমি আসো। পাচ্ছি না,,,,,।
আতঃপর মহারাণীর আগমন। হাতে পরোটা উল্টানোর খুন্তি।
-হয়েছেটা কি? চোখ কি কপালে লাগানো তোমার? ফোন ত চার্জ হচ্ছে।
-ওহ তাই ত। চোখে পড়ে নাই।
-এবার ধরো তোমার ফোন।
ফোন হাতে ধরিয়েই চলে যাচ্ছিলো। আচমকা ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলাম।
-উফ! ছাড়ো ত। নাস্তা বানাতে হবে।
-আজ না হয় নাস্তা না হলো? কাছে আসো না, এই।(আরো জোরে জড়িয়ে ধরলাম)
-ধুর! সকাল বেলা কি শুরু করলে! যাও। এখন একদম দুষ্টুমি না।
-এখন না ত কখন?
-যানি না। ছাড়ো,,,,,। বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিচেনে দৌড়। লজ্জ্বা পেয়েছে মেয়েটা।
আসলে সবচেয়ে সাহসী মেয়েটাও স্বামীর স্পর্শে হয়তো লজ্জ্বাবতী হয়ে যায়!!!
কিচেন থেকে একটু পর তানিয়ার ডাক,
-এই, তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
-ওকে, আসছি।
এলার্ম ঘড়িটার দিয়ে তাকিয়ে সত্যি এবার চোখ কপালে উঠে গেল। আটটা বাজে! নয়টায় অফিস। টাওয়েল টা নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।
.
নাস্তা করে ড্রেস পরছিলাম। আর তানিয়া আমার অফিসের ফাইলগুলো গুছিয়ে দিচ্ছিলো। কতো যে কাজ করতে পারে মেয়েটা!!!
ফাইল রেডি করে টাই টা নিয়ে দাঁড়ালো সামনে।
-দেখি, সোজা হও।
আমি ওর কথামতো সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। অত্যন্ত নিপুনভাবে টাই বাঁধে ও। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর মুখের দিকে। আমার চোখে চোখ পড়তেই,
-কি দেখো, হুম।
-আমার বউটাকে দেখি।
-ওমা! আজ বুঝি প্রথম দেখছো?
-তুমি ত আমার কাছে প্রতিদিনই প্রথম।
-তাই! জানা থাকলো। এবার চলো, বের হবে। একদম টাইম নাই।
-হুম, চলো।
.
বাসার দরজার বাইরে এসে কথাটা মনে পরে গেল।
-আর শোন, তোমাকে কতো করে বললাম, একটা কাজের মানুষ নিয়ে নাও। এতো কাজ একটা মানুষ কেমনে করে?
-তোমাকে না বলেছি, এসব নিয়ে টেনশন না করতে? আমার সংসার। কিভাবে সামলাবো, সেটা আমি ভালো করেই জানি।
-কিন্তু তোমার বাবা আর ভাই আমাকে ছাড়বে? হাজার হোক, তাদের আদরের দুলালী বলে কথা!
– হা হা হা,,,,,!!! (আমার কথা শুনে তানিয়া হেসে উঠলো)
-কেন? ভয় পাও নাকি, হুম?
-ভয় আমি পাই না। কিন্তু তোমাকে কাজ করতে দেখলে ভালো লাগে না।
-আমার কাজ আমি অন্যকে দিয়ে করাতে চাই না। আর যখন কাজের লোক দরকার, তখন আমিই নিয়ে নেব। এখন অফিসে যাও ত। দেরী হয়ে যাচ্ছে তোমার।
-ওকে যাচ্ছি।
-আর হ্যাঁ, লাঞ্চ আওয়ারে ফোন দিবে কিন্তু। অপেক্ষায় থাকবো।
-ওকে, বাই।
-বাই।
.
অফিসে এসে একদম কাজের মাঝে ডুবে গেলাম। কখন যে লাঞ্চ আওয়ার পেরিয়ে গেছে, টেরই পাই নি। সামনে একগাদা ফাইল। চারটার আগেই রেডি করতে হবে। না হলে বড় একটা বিজনেস ডিল হাতছাড়া হবে। তাই বস ও বেছে বেছে কাজগুলো আমার ঘাড়েই চাপিয়েছে।
আড়াইটার দিয়ে তানিয়ার ফোন পেয়ে চমকে উঠলাম। তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরলাম,
-হ্যালো,
-হুম, কি করো?
-কাজ করি, কাজ।
-আরে আমি ত জানি, তুমি কাজ পাগল। তো লাঞ্চ হয়েছে?
-লাঞ্চ এই এখন করে নিবো। তুমি করেছ তো?
-হুম, না খেয়ে থাকার মতো বোকা মেয় ত আমি না। তাই না?
– গুড গার্ল। কি করছো?
-শুয়ে আছি। আর তোমাকে না বলেছিলাম, ফোন দিতে?
-কাজের চাপে একদম মনে ছিল না।
-তা মনে থাকবে কেন? তুমি ত আছো তোমার কাজ আর বসকে নিয়ে।
– তুমি ত জানোই, বস আমাকে সবচেয়ে বেশিই লাইক করে।
-হুম। এবার যাও লাঞ্চ করে নাও
-ওকে। আর তুমিও,,,,,,
-আচ্ছা, বাই।
.
অফিস শেষে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ এক পুরোনো বন্ধু এসে হাজির। বন্ধু আবার দেশের বাইরে থাকে। অনেক দিন পর দেশে এসেছে। সুতরাং বন্ধুর সাথে বেড়িয়ে পরলাম।
অবশেষে বাসায় পৌছাতে রাত ১০টা বেজে গেল। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই নাকি রাত হয়। আজ কপালে যে কি আছে?
দরজায় নক করছি তো করছিই। দরজা খোলার কোন লক্ষণই নাই।
-তানিয়া, এই তানিয়া,,,,,।
খুট করে দরজাটা খুলে গেল। রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে ও।
-কি হয়েছে? রাত ১০টায় বাসায় আসছো কেন? অফিসে থাকলেই ত পারতে।
-আসলে হয়েছে কি,,,,,,।
-থাক, আর কিছু শুনতে চায় না। (হাত দিয়ে থামিয়ে দিল ও)
আর কিছু বলারও প্রয়োজন হবে না।
রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করলাম। ডাইনিং থেকে তানিয়ার ডাক,
-এই, খাবার দিচ্ছি। খেতে এসো।
-ওকে, ফ্রেশ হয়ে আসছি।
রাতের খাবার খাচ্ছি আমরা। পাশে তানিয়া বসে। কিন্তু ও কিছু খাচ্ছে না।
-কি হয়েছে? খাচ্ছো না কেন?
-আঙ্গুল কেটে গেছে।(ডান হাতটা উঠিয়ে দেখালো)
এবার আমার ঝাড়ি দেবার পালা।
-কি যে করো না, তুমি! কতো করে বলি, একটা কাজের লোক নিয়ে নাও।
-উফ! আবার শুরু করলে? কাজের লোকের রান্না তুমি খেতে পারলেও আমি পারবো না। ওকে?
– হুম, ওকে। এবার খেয়ে নাও।
– খাইয়ে দাও।
অতঃপর মহারাণীকে কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিলাম।
খাবার মাত্র শেষ করেছি। অমনি ফোনটা বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি বস এর ফোন।
বসের সাথে কথা বলতে বলতে আধ ঘন্টা কেটে গেল। কোন রকম বসকে গুড নাইট বলে ফোন রাখলাম।
আসলে বস খুব একা থাকে। উনার ওয়াইফ কয়েক বছর আগে মারা গেছে। ছেলে-মেয়ে দুটাই দেশের বাইরে থাকে। বেচারার গল্প করার কেউ নাই। তাই মাঝে মাঝে আমাকেই সঙ্গ দিতে হয়। এদিকে আমার বাজে বারোটা।
আরে আমার বউ কই? তানিয়া,,,, এই, কোথায় তুমি?
কোন রুমেই ত নেই! তাহলে কোথায়?
হঠাৎ মনে পড়তেই ছাদের দিকে দৌড়ালাম।
অবশেষে দেখা পেলাম। ছাদের এক কোণে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। পা টিপে টিপে পেছন থেকে ওর চোখ দুটি চেপে ধরলাম।
-উম, যাও তোমার বসকে নিয়েই থাকো
-সরি বাবু। এই দেখো, কান ধরেছি।
– তোমাকে কান ধরতে বলেছি?
-ওকে, আর হবে না। রাগ করো না, জান।
-ঠি আছে। মনে থাকে যেন।
আমি আলতো করে পেছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে নিলাম ওকে। আর ও আমার বুকে ওর মাথাটা এলিয়ে দিল। এখন আমি ওর চুলের শ্যাম্পুর ঘ্রাণ নিচ্ছি। আহ! এভাবে হাজার বছর কেটে গেলে যাক!
-এই, অনেক ভালোবাসো আমায়, না?
-হুম, তোমাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ।
-আর তোমার বুকে মাথা রেখে আমি মরতেও পারবো,,,,,
ওর ঠোটে আঙ্গুল চাপা দিয়ে থামিয়ে দিলাম।
-এভাবে আর বলবে না। তুমি মারা গেলে, আমি বেঁচে কি করবো, হুম।
-ওকে, আর বলবো না। আজকে আকাশে অনেক তারা, দেখেছো?
-হুম, পরকালে কোন একটা তারায় গিয়ে আমরা আবার বাসা বানাবো। ওকে?
বলেই ওর কানের লতিতে একটা চুমো বসিয়ে দিলাম।
-হুম, উফ! দুষ্টুমি করো না, প্লিজ।
কিন্তু কে শুনবে কার কথা। আমার দুষ্টুমি তখন বেড়েই চলছে,,,,,,,,,।
…………………………………………….সমাপ্ত………………………………………………