লিভ টুগেদার

লিভ টুগেদার

বহুদিনের প্রেমিকা মিতু ফোন দিয়ে বাবুনি ডাকার আগেই শুরু করলো উচ্চবংশীয় গালাগালি৷ আমি মিনিট খানেক তব্দা খাইলাম৷ তারপর মিনিট তিনেক গালি শুনলাম৷ প্রেমিকার মুখে গালি শুনিনা অনেকদিন৷ তাই মন ভরে গালি শুনে প্রাণ জুড়ানোর পর বললাম,

-কী হয়েছে বাবুনি?” বাবুনি আবার রাগলো৷ গজগজ করে বলল,
-তুই আমার প্রেমিক না৷ ফোন দিবি না৷” আমি বললাম,
-দিলাম না!”

-দিলাম না মানে?

-ফোন দিলাম না৷”

-তুই আসলেই খারাপ মানুষ৷” “হ তাতে কী” বলবো ভাবলাম৷ কিন্তু থামলাম৷ আর ছ্যাতানো ঠিক হবে না৷ গলার নামিয়ে বললাম,
-ব্যাপার কী?

-কিসের ব্যাপার?

-ছ্যাতার৷”

-তুই আমার লগে প্রেম করে অন্যের প্রেমিকার লগে……”

আমি আবার ঠাসকি খাইলাম৷ আধা মিনিট কথা বন্ধ থাকলো৷ আধামিনিটে বহুত কিছু হয়৷” টুপ করে লাইনটা কেটে গেল৷ মাঝরাস্তায় প্রেমিকার রাগ না ভাঙিয়ে ভাবলাম, বাসায় গিয়ে ফোন দিয়ে রাগ ভাঙাবো৷” মোড়ের দোকানে বসতেই মানুষজন কেমনে তাকাইলো৷ আমি মাথা ঘামালাম না৷” পাড়ার ছোট পোলাপান মিটিমিটি হাসলো৷ আমি মাথা ঘামালাম না৷” ঘরের দরজায় দেখি আব্বা বসে আছে লাঠি নিয়ে৷ আম্মার দিকে তাকাইলাম৷ উনার চাহনিও সুবিধার না৷ “আব্বা সাইড দেন৷ ঘরে ঢুকবো৷” বলতে গিয়ে থামলাম৷ লাঠি নিয়ে বই আছে৷ নিশ্চয় আমার লাইগা৷”

জানালার দিকে তাকাইলাম৷ ছোট বোন হাতের ঈশারা দিয়া বুঝাইলো, আজকা খবর আছে৷” তার পাশে ছোট ভাইয়ের দিকে তাকাইলাম৷ সে বহুত মজায় আছে৷ গত পরশু বিড়ি টানার অপরাধে দু গা দিছিলাম৷ দুইদিন কথা বলে নাই৷” এখন সেও ভাবে আছে৷” আব্বার কাছে গিয়ে কইলাম, আব্বা আর কিছু কওয়ার আগেই লাঠি নিয়া ছুটলেন৷ আমিও ছুটলাম৷ মাঠ ঘাট পেরিয়ে আব্বারে পেছন ফালাইলাম৷” হাঁপাইতে হাঁপাইতে গাছের নিচে বসিলাম৷ পাড়ার ছোটভাইরে কাছে ডাকলাম হাতের ঈশারায়৷ সে আসবোনা আসবোনা করেও আসলো৷” বললাম, তোর ঘরে থাকমু৷” সে মুখটারে বাংলার ৫বানিয়ে বলল,

-না ভাই আপনারে রাখা যাবে না!
-ক্যান?
-ভাই আপনার বিয়ে করার শখ হইলে চাচারে বলতেন৷ কিন্তু…
-কিন্তু?
-মেয়েদের লগে লিভ টুগেদার করেন কেন?
-এই কথা কে কইলো তোরে?”
-মিন্টু!”

আমি আবার তব্দা খাইলাম৷ সেদিন মিন্টুর দোকানে সাত সকালে চা পান করতে গেছিলাম৷ জিগাইলো, ভাই লিভ টুগেদার মানে কী?” আমি পরলাম মানুষের সামনে শরমে৷ তবুও কইলাম,

-এক লগে থাকে৷
-এক লগে থাকা মানে?
-ঐ যে এক লগে ঘুরাঘুরি৷
-তারপর?
-আড্ডাবাজি৷
-তারপর?
-ফুচকা! বিড়ি, ইত্যাদি৷”

ব্যাটায় আর পাল্টা প্রশ্ন করে নাই৷ আমিও বলিনাই কিছু৷ দু’দিন বাদে আমারে আইসা কইলো, ভাই আমার প্রেমিকার লগে ঝামেলা হইছে৷ একটু বুঝান তারে৷” আমি গেলাম তার প্রেমিকারে বুঝাইতে৷ মাঝেমধ্যে তার দোকানে বন্ধু নিয়া আসতাম৷ চা, বিড়ি, আড্ডা ফাড্ডা দিতাম৷” বান্ধবী নিয়াও আসতাম৷ আড্ডা-ফাড্ডা-চা খাইতাম৷ মিন্টুরে বান্ধবীদের গল্প শুনাইতাম৷” এসবই আমার কাল হইলো৷” আমার মাথা গরম হইলো৷ প্রেমিকা,বাপ সবার রাগ মিন্টুর উপরে ঝাড়বো ভাবলাম৷ হনহন করে মিন্টুর দোকানের দিকে আগাইলাম৷ আশেপাশে বহুত মানুষ৷ ভরা মজলিশে চড়-থাপ্পর মারা যাইবোনা৷”

হাতের ঈশারায় বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে ডাকলাম৷ মিন্টু তাড়াহুড়া করে বাইর হইলো দোকান থেইকা৷ সিঙ্গারার জন্য লাইনে দাঁড়ানো পোলাপাইনরে কইলো, খাড়াও৷ ভাইয়ের লগে লিভ টুগেদার কইরা আসি!” মিন্টু আসার আগেই আমি দৌঁড়াচ্ছি৷ পুরো পাড়ার মানুষ আমারে দৌঁড় খাওয়াচ্ছে৷ আমার বাঁচতে হবে৷ আগে জান বাঁচাই৷ একদিন সময় করে তাদের “লিভ-টুগেদার”কাহিনী শোনাবো৷”

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত