-সোনা বউ শুনছো?
-কি বলে ডাকছো? বাড়ি ভর্তি লোকজন শুনলে কি ভাববে??
-কি আবার ভাববে?? আমার বউকে আমি ডাকতে পারবনা??
-তাই বলে সবার সামনে সোনা বউ বলবে??
-তো কি বলব?? টুনির মা ডাকবো নাকি আতার মা/?
-সাত সকালে কি শুরু করলে?? যাও অফিস যাও।
-সোনা বউ আমার ফিরতে আজ কিন্তু একটু রাত হবে??
-কত রাত হবে/?
-এই দেখ। ওমনি গাল ফুলিয়ে বসলে?? আরে বাবা দশটায় ঠিক ফিরব।
-সত্যি ফিরবেতো??
-হুম প্রমিজ।তুমি শুধু নীল শাড়িটা আর লাল চুড়ি পরে থাকবে।কপালে থাকে যেন লাল টিপ।ঠোটে রাঙিয়ে রেখ লাল রঙে।খোলা রেখ চুল।কাজল টানা। চোখে পথ চেয়ে থেক।
-কিন্তু আমি নীল শাড়ি কোথায় পাব??
-কেন?? বিয়ের আগে তোমায় প্রথম দেখায় যেটা পরেছিলে সেটা কি করেছ??
-ওটাতো আমার শাড়ি ছিলোনা। ওটাতো আমার বৌদির শাড়ি ছিলো।
-ও আচ্ছা।তবে থাক নীল শাড়ি।তুমি শুধু লাল চুড়িতে থাকলেই হবে।
-লাল চুড়ি?? সেতো তোমার ভাইঝি নিয়ে গেছে।
মনটা আচমকাই খারাপ হয়ে গেল পার্থর।অনেকদিন পর বউটাকে মনের মত একটা সাজে দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু হলোনা।
না আজ বাড়ি ফেরার সময় বউয়ের জন্য একটা নীল শাড়ি আর লাল চুড়ি আনতেই হবে।
ভাবতে ভাবতে বাইরে বের হলো পার্থ।লোকাল বাসে উঠে ভাবছে শাড়িটা কখন কিনবে??
পাশ দিয়ে হেটে চলেছে ১০ /১২ বছরের একটা ছেলে।হাতে অনেকগুলো পুঁথির মালা।
-কাকা একটা মালা নেবেন??
-না। পুঁথির মালা দিয়ে কি করব??যা যা বাবা এখান থেকে যা।
-কাকা নেন না এট্টা মালা।এই মালার পয়সা দিয়ে বুন্ডির ওষোধ কেনবো।
-কেন কি হয়েছে তোর বোনের??
-জানিনে।ডাক্তার কয়চে এই ওষুধ কয়টা খালি ও বালো অয়ে যাবেনে।
পার্থ প্রেসক্রিপশনটা দেখে নিলো।বাস থেকে নেমে বাচ্চাটাকে নিয়ে একটা ফার্মেসীতে ঢুকে সকল ওষুধ এবং একটি হরলিক্স কিনে দেয়।
ওকে সাথে করে অফিস নিয়ে গিয়ে পার্থর সকল কলিগদের কাছে পুঁথির মালাগুলো বিক্রি করে দেয়। নিজেও তার বউয়ের জন্য একটা মালা রেখে দেয়।নাহ্ অফিসে মন বসছেনা।ঘরে নতুন বউ রেখে কোন বীরপুরুষের কাজে মন বসে?? তাছাড়া আজ আর বাণীর জন্য নীল শাড়ি লাল চুড়ি কেনা হলোনা।আগামী দুই দিন সরকারি ছুটি তাই ব্যাংক বন্ধ। তারপরেই ঈদের বন্ধ।সব মিলিয়ে চারদিনের ভিতর নীল শাড়ি লাল চুড়ি কেনা যাবেইনা।আজ যে টাকা ছিলো তা পথশিশুটাকে দেয়া হয়ে গেছে।
রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। বাড়ি ফিরে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে পড়ে পার্থ।
-কি হলো??। শুয়ে পড়লে খাবেনা??
-সোনাবৌ??
– হুম
-বিয়ের পর তোমায় আমি কিছু দেইনি তাইনা??
-তো??.
-কিছু একটা চাও আমার কাছে।
-না কিছু লাগবেনা।
-লজ্জা পেওনা বউ।একটা কিছু চাও।
-আচ্ছা।কাল বাড়ি আসার সময় আমার জন্য অনেকগুলো তেঁতুলের চাটনী নিয়ে আসবে কেমন??
-চাওয়ার জিনিস আর পেলেনা??
-না। আমার তেঁতুলের চাটনী চাই।
-সোনাবৌ??
-হুম।
-বিয়েতো হলো মাত্র তিনমাস।এর মধ্যে তেঁতুলের চাটনী চাও??
-জানিনা যাও।
-লজ্জা পেলে সোনা বউ?? তার মানে সামথিং সামথিং।
সীমাহীন খুশিতে পার্থ বানী দম্পতির মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।না আজ এই খুশির খবরে বউকে কাল নীল শাড়ি পরাতেই হবে।নইলে সব বৃথা।পরদিন যথারীতি অফিস যাবার সময় পার্থ ওর বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে নেয়।ভুল করে মানিব্যাগ পাল্টে অন্য মানিব্যাগ নিয়ে চলে যায় পার্থ।
বানী বাড়ি একাকী বসে রুমালে “ভুলনা আমায়” তুলতে ব্যস্ত।ভরদুপুর। শাশুড়ি গেছে পাশের বাড়ি।
খরতপ্ত জ্যৈষ্ঠের দুপুরবেলা বাড়ির বাকি সদস্যরা বিশ্রাম নিতে যে যার কক্ষে।এই সময় মাঝেসাঝে দুই একজন ভিখারীর আনাগোনা হয়ে থাকে।
– মা সগলেরা কেউ বাড়ি আছেননাকি??
বাণী উঠানের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে শতছিন্ন বস্ত্র পরিহিতা এক মধ্য বয়স্ক মহিলা দাড়িয়ে।
-কিছু বলবেন কাকি??
-হয় মা।আমার স্বামী বেশকয়দিন প্যারালাইজড হয়ে বিছেনে পড়ে রয়চে।কিছু সাহায্য দেবা মা।ডাক্তার কয়চে এই ৩০০০ টাহার ওষোধ খাতি দিলি বালো অবেনে।
বাণী পার্থর মানিব্যাগে ২৫০০ টাকা পায়।আর নিজের লক্ষ্মীঘটটা (মাটির ব্যাংক) মধ্যবয়সী মায়ের হাতে তুলে দেয়।অতিথি তৃপ্ত হয়ে দ্বার থেকে বিদায় নেয়।
আজও ব্যবসার কাজ সামলে ফিরতে দেরী হলো পার্থর।ঘড়ির কাঁটা রাত দশটা পেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে হতে মহাপ্রভু বাড়ি ফিরলেন।
-কিগো এত দেরী করলেযে??
– কাজ ছিলো সোনা বউ।তুমি খেয়েছ??
-তোমায় রেখে আমি কখনও খেয়েছি??
-বাণী! সোনাবৌ তুমিতো এখন আর একা নও।তোমাের গর্ভেযে আমারই অংশ।তাই না খেয়ে থেকে কাজটা ঠিক করোনি।আর কখনই না খেয়ে থাকবেনা। ঠিক আছে??
-হুম।
-হুম না।বলো ঠিক আছে।
-ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে।
-বাবা???????
-না।বাবুর বাবা।
-তা টুনির মা।আমার মানিব্যাগে কিছু টাকা ছিলো সেটা কোথায় তুমি জানো??
-জানিতো।
-কোথায়।
বাণী দুপুরবেলা ঘটে যাওয়া সকল কথা খুলে বলে।
গর্বে বুকটা ভরে ওঠে পার্থ।মনে মনে ভাবে এ তার যোগ্য অর্ধাঙ্গিনী।
আজ বউটাকে বড্ড বেশী সুন্দর লাগছে।এই নিষ্পাপ ও নিষ্কলঙ্ক চেহারার কাছে তুচ্ছ সকল নীল শাড়ি লাল চুড়ি।